মৎস্য
বরিশালের বাজার ইলিশে সয়লাব
বরিশালে ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার (মোকাম) নগরের পোর্ট রোড। সেই বাজারের চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। প্রতিবছর শীতের এ সময়ে এই মোকামে সামুদ্রিক মাছের দাপট থাকত, সেখানে পুরো বাজার দখল করে আছে তাজা ইলিশ। শ্রমিকদের ব্যস্ততা, ক্রেতাদের ভিড়, মহাজনদের হাসিমুখ। ঘাটে নোঙর করা ট্রলারগুলোর খোল ভরে আছে রুপালি ইলিশে।
শীতে বরিশালের বাজার ইলিশে ঠাসা। গড়নে উজ্জ্বল এই রুপালি ইলিশ ওজন-আকৃতিতেও বড়। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে ইলিশের এমন প্রাচুর্য অবাক করেছে ব্যবসায়ী, জেলে, ক্রেতাসহ সবাইকে। কারণ, বিগত দিনে এই মৌসুমে এমন ঘটনা আর ঘটেনি।
দেশের ইলিশ বিশেষজ্ঞরা শীত মৌসুমে ইলিশের এমন প্রাচুর্যকে অস্বাভাবিক মনে না করে বরং ইতিবাচক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম নিয়ামুল নাসের প্রথম আলোকে বলেন, এ সময়ে ইলিশের প্রজনন পর্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। শীতের শেষ দিকটায় এমনটা হয়। সংরক্ষণ ভালো হওয়ায় এবার ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে এবং আকার বড় হয়েছে।
বরিশালের পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী জহির উদ্দীন বললেন, ‘কোনো দিন শীতে এত বড় আর এত ইলিশের আমদানি দেখিনি। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে ছিটেফোঁটা ইলিশ আসত। তা-ও আকারে ছোট, সেসব ইলিশ তেমন পরিপুষ্ট ছিল না; কিন্তু এবার আমদানি যেমন ব্যাপক, তেমনি ইলিশের আকার বড় এবং পরিপুষ্ট। মনে হয় আমাদের সুদিন ফিরবে ইলিশে।’
ব্যবসায়ীরা বললেন, গত শনিবার এই মোকামে ৫৫০ মণ ইলিশ এসেছে। রোববারও একই পরিমাণ ইলিশ এসেছে। আজ সোমবার কিছুটা কমে গেলেও ৪৫০ মণের মতো এসেছে। এই সময়ে এটা অবিশ্বাস্য।
পোর্ট রোডের মৎস্য আড়দার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌসুমে এবার ইলিশ তেমন মেলেনি। এ জন্য জেলে-ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখেননি। কিন্তু শীত মৌসুমে অসময়ে ইলিশের আমদানি আমাদের সব কষ্ট ধুয়ে দিয়েছে। দামও কম। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২৫ হাজার টাকা। আর এক কেজির ওপরে ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। আর ৪৫০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ১২ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে।’
ইলিশের আকার-আকৃতি ও ওজন বাড়ছে
ইলিশের আকার-আকৃতি,
ওজন, প্রজনন ও দাম নিয়ে নিয়মিত জরিপ করে মৎস্য অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক
সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকো ফিশ প্রকল্প। তাদের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত
তিন বছরে দেশের ইলিশের গড় আকৃতি ও ওজন বেড়েছে। ২০১৪ সালে ধরা পড়া ইলিশের গড়
ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৮০ গ্রাম। একই সময়ে ধরা পড়া
মাঝারি আকৃতির (আধা কেজি থেকে ১ কেজি) ইলিশ ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৭ শতাংশ
হয়েছে। আর জাটকা ধরার পরিমাণ ৬০ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এতে
ইলিশের গড় দামও গত এক বছরে ২০ শতাংশ কমেছে। অসময়ে আকারে বড় ইলিশ ধরা পড়ার
বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের সেই ধারণার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উৎপাদন বাড়ছে, বড় অবদান বরিশালের
ইলিশ আহরণে বরিশাল
বিভাগের ঐশ্বর্য ক্রমেই বাড়ছে। গত ১০ বছরে এই বিভাগে ইলিশ আহরণের পরিমাণ
দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরেই দেশের মোট ইলিশের ৬৬
ভাগের বেশি আহরিত হচ্ছে এই বিভাগ থেকে। চলতি অর্থবছরেও তা আরও বাড়বে বলে
মনে করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে
দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে
অনুযায়ী বরিশালেও তা প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পায়।
মৎস্য
বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ইলিশ আহরিত হয় ৫ লাখ ১৭
হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগ থেকেই আহরিত হয়েছিল ৩ লাখ ৩২
হাজার ২৫ মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে দেশে আহরিত মোট ইলিশের পরিমাণ ছিল ৪
লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বরিশাল থেকে আহরিত হয়েছিল ৩ লাখ ২৪
হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন, যা দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ৬৬ শতাংশ।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলিশের জোগান দেয় ভোলা ও বরগুনা। ভোলায় গত অর্থবছরে ইলিশ আহরিত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন ও বরগুনায় আহরিত হয় ৭০ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন।
ইলিশ রক্ষায় প্রকল্প
উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ও
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের আট জেলায় ‘ইকো ফিশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন
করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো ইলিশের বংশবিস্তার,
প্রজননকাল নির্ধারণসহ নানা দিক নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের মার্চে
শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প
বাস্তবায়িত হচ্ছে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, শরীয়তপুর,
চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায়। এতে মৎস্য অধিদপ্তরকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা
দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০০১ সাল থেকে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করে। এরপর নানামুখী উদ্যোগে ইলিশ আহরণ কিছুটা বাড়ে। তবে ২০১৪ সালের পর এর পরিমাণ অনেকটা বাড়ে। ২০১৬ সালে যেখানে দেশে ইলিশ আহরণের হার ছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে তার পরের বছর থেকে তিন বছরে ধরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টনে। এটা সম্ভব হয়েছে ইলিশ নিয়ে পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম হাতে নেওয়ায়।
ইকো ফিশ প্রকল্পের দলনেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুল ওহাব গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলের ইলিশ মাছ অতিমাত্রায় আহরণ থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং তা বড় হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদন অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে। এতে ইলিশ মাছের পাশাপাশি অন্য মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পেয়ে সেসবের উৎপাদনও আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে।
মৎস্য
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাছের উকুন রোগের কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। অনেকেই বুঝতে পারেন না রোগটি কেমন। আসুন জেনে নেয়ে যাক মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।
মাছের উকুন রোগের কারণ ও লক্ষণ: আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী এর মাধ্যমে এই রোগে মাছ আক্রান্ত হয়। এই পরিজীবি মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে।
মাছের দেহ পৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার: পুকুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো।

ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫ পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার সংবাদটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মৎস্য বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে।
মৎস্য
যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়

আমাদের দেশে সুস্বাদু মাছের মধ্যে পাবদা অন্যতম। স্বাদের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাবদা মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে এ মাছ হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ করে বেশ লাভবানও হওয়া যায়।
এ মাছ চাষের জন্য ৭ থেকে ৮ মাস পানি থাকে এরকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর কিংবা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে। পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসযুক্ত হতে হবে।
পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করতে হবে।
পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভালো থাকবে।

রোটেনন প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর শতকে ৮০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়। পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবে না।
পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এর জন্য ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১ থেকে ২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
সার প্রয়োগের ৪ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে। এককভাবে চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ-সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
মিশ্র চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা, ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা, ১০টি রুই, ১০টি মৃগেল, ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে। তেলাপিয়ার সঙ্গে পাবদা মাছ ভালো হয়ে থাকে এ কারণেই যে তেলাপিয়ার অবাঞ্চিত বাচ্চা পাবদা মাছ খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়।

৩০ শতাংশ ফিশ মিল, ৩০ শতাংশ সরিষার খৈল, ৩০ শতাংশ অটোকুড়া, ১০ শতাংশ ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায় অথবা বাজারের কৈ মাছের ফিড খাওয়ালেও চলবে। এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই উপরে আলোচিত খাবারটি রাতে দুবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে খাবার দিতে হবে। পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১২ শতাংশ থেকে আরম্ভ করে দৈনিক খাবার দিয়ে যেতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার শতকরা ১ শতাংশ করে কমাতে হবে।
পাবদা মাছের ওজন ৩০ গ্রামের বেশি হলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ শতাংশ।
৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে। আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষের শতাংশে ১৪ থেকে ১৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে।
মৎস্য
খাঁচায় মাছ চাষ

আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে খাঁচায় মাছ চাষ নতুন আঙ্গিকে শুরু হলেও বিশ্ব অ্যাকুয়াকালচারে খাঁচায় মাছ চাষের ইতিহাস অনেক পুরোনো। খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয় চীনের ইয়াংঝি নদীতে আনুমানিক ৭৫০ বছর আগে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে আধুনিক কালে খাঁচায় মাছ চাষ ক্রমাগতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ উপযোগী আকারের খাঁচা স্থাপন করে অধিক ঘনত্বে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তি হলো খাঁচায় মাছ চাষ।
বাংলাদেশে খাঁচায় মাছ চাষের সূচনাঃ
অতীতে আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে থাইল্যান্ডের প্রযুক্তি অনুকরণে খাঁচায় মাছ চাষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ উদ্যোগের অগ্রপথিক হলেন কুমিল্লার শিল্প নগরী এলাকায় (বিসিক) অবস্থিত জাল ও সুতা ফ্যাক্টরী “ফরিদ ফাইবার এন্ড উইভিং লিমিটেড” এর সত্বাধিকারী জনাব মো: বেল্লাল হোসেন। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে বর্তমানে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী ও লক্ষীপুর জেলায় মেঘনা নদীর রহমতখালী চ্যানেলে যথাক্রমে সাড়ে চারশত এবং পাঁচশত খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া করা হচ্ছে; যা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বছরে ৭০০ মেঃ টন রপ্তানিযোগ্য তেলাপিয়া। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সাথে খাঁচায় মাছ চাষের এ অধ্যায় শুরু হয় চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে। এজন্য এখানকার ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন মডেলকে “ডাকাতিয়া মডেল” নামে অভিহিত করা হয়।
খাঁচায় মাছ চাষে সুবিধা:
- ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করলে পুকুরের ন্যায় জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না।
- প্রবাহমান নদীর পানিকে যথাযথ ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন বাড়ানো যায়।
- মাছের বর্জ্য প্রবাহমান পানির সাথে অপসারিত হয় বিধায় পানিকে দূষিত করতে পারে না।
- মাছের উচ্ছিষ্ট খাদ্য খেয়ে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজাতির প্রাচুর্য্য বৃদ্ধি পায়।
- প্রবাহমান থাকায় প্রতিনিয়ত খাঁচার অভ্যন্তরের পানি পরিবর্তন হতে থাকে ফলে পুকুরের চেয়ে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়।
খাঁচা স্থাপনের উপযোগী স্থানঃ
- খাঁচা স্থাপনের জন্য উপযোগী, নদীর এমন অংশ যেখানে একমূখী প্রবাহ কিংবা জোয়ার ভাটার শান্ত প্রবাহ বিদ্যমান। নদীর মূল প্রবাহ যেখানে অত্যধিক তীব্র স্রোত বিদ্যমান সে অঞ্চলে খাঁচা স্থাপন না করায় ভাল। নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ৪-৮ ইঞ্চি মাত্রার পানি প্রবাহে খাঁচা স্থাপন মাছের জন্য উপযোগী, তবে প্রবাহের এ মাত্রা সর্বোচ্চ সেকেন্ডে ১৬ ইঞ্চি এর বেশী না হওয়া উচিত।
- মূল খাঁচা পানিতে ঝুলন্ত রাখার জন্য নূন্যতম ১০ ফুট গভীরতা থাকা প্রয়োজন। যদিও প্রবাহমান পানিতে তলদেশে বর্জ্য জমে গ্যাস দ্বারা খাঁচার মাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম তথাপি খাঁচার তলদেশ নীচের কাদা থেকে নূন্যতম ৩ ফুট ব্যবধান থাকা আবশ্যক।
- স্থানটি লোকালয়ের নিকটে হতে হবে যাতে সহজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
- খাঁচা স্থাপনের স্থান থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুন্দর হতে হবে যাতে সহজে উৎপাদিত মাছ বাজারজাত করা যায়।
- খাঁচা স্থাপনের কারণে যাতে কোনভাবেই নৌ চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে এমন স্থান হতে হবে।
- সর্বোপরি খাঁচা স্থাপনের জায়গাটি এমন হতে হবে যাতে শিল্প বা কলকারখানার বর্জ্য কিংবা পয়ঃনিষ্কাশন পানি অথবা কৃষিজমি থেকে বন্যা বা বৃষ্টি বিধৌত কীটনাশক প্রভাবিত পানি নদীতে পতিত হয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে খাঁচার মাছ মারা যেতে না পারে।
ভাসমান খাঁচা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
খাঁচা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এখন আমাদের দেশেই পাওয়া যায়। উপকরণ সমূহের তালিকা হলোঃ
- খাঁচা তৈরীর মূল পলিইথিলিন জাল (৩/৪ ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি মেসের)
- রাসেল নেট (খাদ্য আটকানোর বেড়া তৈরীতে)
- নাইলনের দড়ি ও কাছি
- কভার নেট বা ঢাকনা জাল (পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য)
- ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ (৭০ ফুট প্রতিটি খাঁচার জন্য)
- ফ্রেম ভাসমান রাখার জন্য শূন্য ব্যারেল/ড্রাম (২০০ লিটারের পিভিসি ড্রাম, ওজন ৯ কেজি’র উর্ধ্বে)
- খাঁচা স্থির রাখার জন্য গেরাপি (অ্যাঙ্কর)
- ফ্রেমের সাথে বাঁধার জন্য মাঝারী আকারের সোজা বাঁশ (প্রয়োজনীয় সংখ্যক)
খাঁচার আকারঃ
খাঁচা তৈরির জন্য এমন জাল ব্যবহার করতে হবে যেন কাঁকড়া, গুইসাপ, কচ্ছপ ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রাণী জালগুলো কাটতে না পারে। ডাকাতিয়া মডেলের খাঁচার জন্য সাধারণতঃ দুই আকারের জাল তৈরি করা হয়, যেমনঃ ২০ ফুটx ১০ ফুটx ৬ ফুট এবং ১০ ফুটx ১০ ফুটx ৬ ফুট। খাঁচা তৈরির জন্য জালগুলো মেস ৩/৪ ইঞ্চি থেকে ১১/৪ ইঞ্চির মধ্যে হওয়া ভাল। এতে সহজে নদীর পরিস্কার পানি প্রতিনিয়ত খাঁচার ভিতরে সঞ্চালিত হতে পারে।
ফ্রেম তৈরি ও স্থাপনঃ
খাঁচাগুলোর ফ্রেম তৈরী করতে প্রথমতঃ ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ দ্বারা আয়তকার ২০ ফুটx ১০ ফুট ফ্রেম তৈরি করা হয়। আর মাঝে ১০ ফুট আরেকটি পাইপ বসিয়ে ঝালাই করে ফ্রেম তৈরি করা হয়। এতে একটি ফ্রেমে সরাসরি ২০ ফুটx ১০ ফুট আকারের খাঁচা বসানো যায় আবার প্রয়োজনবোধে ১০ ফুটx ১০ ফুট আকারের দু’টি খাঁচাও বসানো যায়। প্রতি দুই ফ্রেমের মাঝে ৩টি ড্রাম স্থাপন করে সারিবদ্ধভাবে ফ্রেমগুলো স্থাপন করা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেরাপী বা নোঙর দিয়ে খাঁচা নদীর নির্দিষ্ট স্থানে শক্তভাবে বসানো হয়। এরপর প্রতিটি ফ্রেমের সাথে পৃথক পৃথক জাল সেট করা হয়।
খাঁচায় মাছের মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণঃ
পানির স্রোত, জালের ফাঁসের আকার, পানির গভীরতা, প্রত্যাশিত আকারের মাছ উৎপাদন, খাদ্যের গুণগতমান এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করেই মজুদ ঘনত্ব নির্ধরণ করা হয়। স্থাপিত খাঁচায় মাছের প্রজাতি ভেদে যেমন প্রতি ঘনমিটারে ৩০ থেকে ৪০টি পর্যন্ত মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা মজুত করা যাবে। মজুদকালে পোনার আকার এমন হতে হবে যাতে জালের মেসের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। নূন্যতম ২৫-৩০ গ্রাম আকারের পোনা মজুত করতে হবে।
খাঁচায় সম্পূরক খাদ্য প্রদানঃ
বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায় মাছ চাষ পরিচালনার জন্য প্রবাহমান পানিতে ভাসমান খাদ্যের বিকল্প নেই। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার জন্য বহু খাদ্য কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি পিলেট আকারের পানিতে ভাসমান সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে থাকে।
মাছ খাঁচায় মজুদের পর হতে বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত দৈহিক ওজনের বিবেচনায় খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা ৮ শতাংশ হতে ৩ শতাংশ এর মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। মাছের ওজন ৩০০-৫০০ গ্রাম হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক খাদ্য প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে কারখানায় তৈরি ভাসমান খাবার ব্যবহার করে দেখা গেছে যে, মজুদ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত ৭৫০-১০০০ গ্রাম ওজনের মাছ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ ১.৫ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
খাঁচায় মাছ বাছাইকরণঃ
সাধারণত প্রত্যাশিত উৎপাদনের জন্য খাঁচায় পোনা মজুদের তিন সপ্তাহ পর প্রথম বার খাঁচার মাছ বাছাই করতে হবে (তবে জাত ভেদে ভিন্ন সময় হতে পারে । দিনের তাপমাত্রার দিকে লক্ষ্য রেখে সকাল বেলা কিংবা পড়ন্ত বিকেলে খাঁচার মাছ বাছাই করা উচিত। যখন নদীর পানি বেশি প্রবাহমান থাকে তখন খাঁচার পানি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। এ সময় খাঁচার মাছ বাছাই করা অধিক উপযোগী। বাজারজাত করার পূর্বে প্রয়োজন অনুসারে দুই তিনবার বাছাই করতে হবে।
বর্তমান বাজারমূল্যে ৫০টি খাঁচা স্থাপনের জন্য স্থায়ী খরচঃ
ক্রম উপকরণের নাম পরিমাণ/সংখ্যা একক মূল্য (টাকা) মোট মূল্য (টাকা)
১. সেলাই করা জাল ৫০টি ৩৫০০.০০ ১৭৫০০০.০০
২. খালি বা শূন্য ড্রাম/ব্যারেল ১৫৩টি ১৪৫০.০০ ২২১৮৫০.০০
৩. ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ ৩৬০০ ফুট ৮০.০০ ২৮৮০০০.০০
৪. ফ্রেমের সংযোগ লৌহ ৩৫০টি ১০০.০০ ৩৫০০০.০০
৫. গেরাপী (অ্যাঙ্কর) ১২টি (২০ কেজি প্রতিটি) ২৪০০.০০ ২৮৮০০.০০
৬. গেরাপী বাঁধার কাছি ৫ কয়েল ৫০০০.০০ ২৫০০০.০০
৭. বাঁশ ১০০ টি ২০০.০০ ২০০০০.০০
৮. নাইলনের সুতা ও রাশি ৫০০০.০০
৫০ টি খাঁচার এক ফসলের উৎপাদন খরচঃ
ক্রম উপকরণের নাম পরিমাণ/সংখ্যা একক মূল্য (টাকা) মোট মূল্য (টাকা)
১. মাছের পোনা সংগ্রহ ৬০০০০ ২.০০ ১২০০০০.০০
২. মাছের খাদ্য ২৪৫০০ কেজি ২৮.০০ ৬৮৬০০০.০০
৩. শ্রমিক খরচ ছয় মাসের জন্য ৩ জন (১৮ শ্রম মাস) ৩০০০.০০ ৫৪০০০.০০
মোট ৮৬০০০০.০০
মাছের উৎপাদন (যেমন মনোসেক্স তেলাটিয়ার ক্ষেত্রে):
প্রতিটি খাঁচায় একটি ফসলে সর্বনিম্ন উৎপদন = ৩৫০ কেজি
৫০টি খাঁচায় (৩৫০x ৫০) = ১৭৫০০ কেজি
প্রতি কেজি মাছের পাইকারী বাজারমূল্য = ১০০ টাকা
মোট মাছ বিক্রয় = ১৭৫০০০০ টাকা
নিট লাভ = (১৭৫০০০০-৮৬০০০০) = ৮৯০০০০.০০ টাকা
(এখানে এককালীন স্থায়ী স্থাপনা খরচ হিসাব করা হয়নি)
উপসংহার
আমাদের দেশে প্রচুর উপযোগী নদী রয়েছে। সারা বছর খাঁচায় মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে এবং বিদেশেও তেলাপিয়া মাছের প্রচুর চাহিদা আছে। আমাদের দেশের নদী কিনারায় বসবাসরত জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র জেলেগোষ্ঠি শুধুমাত্র নদী থেকে প্রাকৃতিক মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব মৎসজীবীকে সংগঠিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, সে সাথে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে নদীর প্রাকৃতিক মৎস প্রজাতিগুলোর প্রজনন মৌসুমে তাদের নিবৃত্ত করে নদীর প্রাকৃতিক মাছের মজুদ বাড়ানো ও বিভিন্ন মাছের প্রজাতি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এশিয়ার অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও খাঁচায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন তেলাপিয়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তেলাপিয়া বাজারে প্রবেশের জন্য নীতিনির্ধারণী মহলসহ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ঠ সকলের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।
মৎস্য
মৎস্য হ্যাচারি ও নার্সারিতে রোগ সংক্রমণে করণীয়

অধুনা বাংলাদেশে আশাতীত দ্রুত গতিতে উন্নত প্রযুক্তির মৎস্য চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে। পাশাপাশি মাছ চাষের জন্য মানসম্পন্ন পোনা প্রাপ্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মর্তব্য যে, নব্বই দশকের শুরু থেকে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে বিপুল সংখ্যক মৎস্য হ্যাচারি গড়ে উঠে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭৬টি সরকারি ও ৮৪৫টি বেসরকারিসহ মোট ৯২১টি মৎস্য হ্যাচারি এবং ১০,৪০২টি নার্সারি রয়েছে। লক্ষণীয় যে, এসব হ্যাচারি ও নার্সারিতে রোগ সংক্রমণ এখন প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে এবং নানা রোগে আক্রান্ত পোনার মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে, যা নিয়ে খামারি ও পোনা চাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অন্যান্য প্রাণির মতোই শরীরের ইমিউনসিস্টেম মাছের রোগ প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ইমিউনসিস্টেম পানিতে বিরাজমান রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ করে মাছকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
হ্যাচারি ও নার্সারিতে পোনা স্বভাবতই নাজুক অবস্থায় থাকে, ফলে অপরিপক্ব ইমিউনসিস্টেমের কারণে তারা অতিসহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া, রোগাক্রান্ত হ্যাচারি থেকে যেসমস্ত পোনা চাষের পুকুরে স্থানান্তর করা হয় তারা সেখানে রোগজীবাণু বহন করে নিয়ে আসে, যা পুকুরে মজুদকৃত মাছের পোনার অনিবার্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মাছের হ্যাচারি ও নার্সারিতে সাধারণত (১) ছত্রাকজনিত রোগ (২) ভাইরাসজনিত রোগ (৩) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ (৪) পরিবেশজনিত রোগ (৫) পরজীবী ঘটিত রোগ (৬) মিক্সো সম্পরিডিয়াসিস (৭) উকুনজনিত রোগ (৮) ট্রাইকোডিনিয়াসিস ও (৯) কৃমিজাতীয় রোগ সংক্রমণ হয়ে থাকে।

ছত্রাকজনিত রোগ : ছত্রাক জনিত রোগে প্রধানত মাছের ডিম ও রেণু আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হ্যাচারিতে ডিম স্ফুটনের সময় ছত্রাকের সংক্রমণ জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমে ছত্রাকগুলো মৃত ও অনিষিক্ত ডিমগুলোর শরীরে পাকা পোক্ত স্থান করে নেয় এবং ধীরে ধীরে সুস্থ সবল ডিমগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে সমুদয় ডিমই ধ্বংস করে দেয়।
ডিম ধৌত করে, নষ্ট ও অনিষিক্ত ডিমগুলো সরিয়ে পানির প্রবাহ বাড়িয়ে এবং ডিমের ঘনত্ব হ্রাস করে হ্যাচারিতে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অ্যালাকাইট গ্রিন হচ্ছে ছত্রাক জনিত রোগের সর্বোত্তম ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা।
হ্যাচারিতে লালনকৃত ডিমগুলোকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দিয়ে ধুয়ে অথবা আক্রান্ত মাছগুলোকে শতকরা ৩-৫ ভাগ ফরমালিন দিয়ে ২-৩ মিনিট গোসল দেয়া যেতে পারে। এছাড়া অ্যালাকাইট গ্রিন ০.১৫-০.২০ পিপি এম হারে পুকুরে প্রতি সপ্তাহে একবার করে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োগ করা হলে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যায়।
ভাইরাসজনিত রোগ : গ্রাস কার্প হেমোরেজিক ভাইরাস চাইনিজ কার্পের পোনার মৃত্যুর জন্য দায়ী এ বিষয়ে নানা সূত্রে নির্ভরশীল তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, টক হারপিস ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাস কমনকার্প ও কৈ কার্পের রোগ সৃষ্টি করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সূত্র থেকে জানা গেছে, ভাইরাস জনিত রোগের মূলত কোনো চিকিৎসা নেই। একমাত্র পরিচ্ছন্নতা ও জৈব নিরাপত্তা পদ্ধতির নিয়মিত অনুসরণই হচ্ছে ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া যেমন, Motile, Aeromonas ও Vibrio প্রায়শ মাছের হ্যাচারি ও নার্সারির পোনার মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু অথবা সুবিধাবোগী অনুপ্রবেশকারী জীবাণু হিসেবে রোগ সৃষ্টি করে। লেজ পচা ও পাখনাপচা জাতীয় রোগগুলো সাধারণত উল্লিখিত বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। কার্পজাতীয় মাছের পোনার জন্য Aeromonas hydrophila ঘটিত ব্যাকটেরিয়াল হেমোরেজিক সেপটি সেমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা।
পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়া, তাপমাত্রার তারতম্য, জৈব দূষণ এবং অধিক মজুদ ঘনত্ব মাছের পোনায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে পোনার পেটফোলা রোগের জন্য আক্রান্ত পুকুরে ৫ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের সাথে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৫০-৬০ মি.গ্রা/ প্রতি কেজি মাছের ওজনের জন্য ১০দিন পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। এ ওষুধ ব্যবহারের ২৫ দিনের মধ্যে মাছ আহরণ করা মোটেই সমীচীন নয়।
পরিবেশজনিত রোগ : পুকুরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের মাত্রাতিরিক্ত দ্রবণ এবং পুকুরের তলায় অধিক জৈব পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাছের পোনা গ্যাস বাবল রোগের কবলে পড়তে পারে। নার্সারি পুকুরে মাঝে মধ্যে হাঁস পোকার আক্রমণ এবং হ্যাচারিতে অজ্ঞাত কারণে ব্যাপক হারে রেণু ও পোনার মৃত্যুর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এছাড়া কোনো কোনো সময় অত্যধিক ঠাণ্ডা ও অক্সিজেন স্বল্পতায় আকস্মিকভাবে রেণু মৃত্যুর সিকার হতে পারে।
পরজীবী ঘটিত রোগ : ইকবায়োপথিরিয়াসিস নামক এককোষী পরজীবী এ রোগ সৃষ্টি করে। এটিকে সাদা দাগ রোগও বলা হয়। কার্পজাতীয় মাছের পোনার ক্ষেত্রে ও রোগ সংক্রমণের তীব্রতা অধিক। এ রোগের ফলে মাছের পাখনা, ত্বক ও ফুলকায় সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পুকুরে অতিরিক্ত পোনা মজুদ এ রোগের অন্যতম সহায়ক কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত পুকুরে পোনা না ছাড়াই উত্তম। পরজীবী আক্রান্ত পুকুরে ম্যালরাকাইট গ্রিণ, পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্বারা এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। আক্রান্ত মাছকে ম্যালাকাইট গ্রিণের ০.১৫-০.২০ পিপিএম দ্রবণে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে ২/৩ দিন গোসল করালে সুফল পাওয়া যায়।
মিক্সোসম্পারিডিয়াসিস : মিক্সোবোলাস গণের কয়েকটি প্রজাতির সংক্রমণের কারণে এ রোগের উৎপত্তি হয়। পরজীবীগুলোর পূর্ণবয়স্ক স্পোর এ রোগের মূল কারণ হিসেবে মৎস্য বিজ্ঞানীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সাধারণত কার্পজাতীয় মাছের পোনা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা এবং পুকুর জীবাণু মুক্তকরণ এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ফলপ্রসূ পন্থা। মহুয়া খৈল দ্বারা চিকিৎসা করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগে পানির অম্লত্ব দূরীভূত হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক পর্যায়ে পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় এবং মাছে সুস্থতা ফিরে পায়।
উকুনজনিত রোগ : এ জাতীয় পরজীবী আঙ্গুলে ও বড় মাছসহ সব ধরনের মাছেরই ক্ষতিসাধন করে। নার্সারি পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুরে এ পরজীবীগুলোর ব্যাপক সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। এ জাতীয় বহুকোষী পরজীবী দ্বারা সংঘটিত একটি প্রধান রোগের নাম আরগুলোসিস। এ পরজীবীকে মাছের উকুনও বলা হয়। এ রোগ প্রতিরোধে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পুকুরে পরজীবীটিকে ঢুকতে না দেয়া। এছাড়া আক্রান্ত পুকুরে বাঁশের খুঁটি পুতে রাখা যেতে পারে। যেখানে এরা ডিম নিঃসরণ করবে। কিছু দিন পর পর ডিমগুলো তুলে এনে ধ্বংস করে আরগুলোসিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আক্রান্ত পুকুরে ০.৫ পিপিএস হারে ডিপটারেক্স সপ্তাহে একবার করে পাঁচ সপ্তাহ অথবা সুমিথিয়ন ০.৮ পিপিএস হারে একই মেয়াদে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ট্রাইকোডিনিয়াসিস : এটি একটি এককোষী পরজীবী দ্বারা সংঘটিত রোগ। ধানী পোনা ও আঙ্গুলে পোনার ক্ষেত্রে এ রোগের প্রয়োগ অত্যধিক। অপেক্ষাকৃত ছোট ও অগভীর জলাশয়ে এবং দূষিত পানিবাহিত পুকুরে এ রোগের দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। নার্সারি পুকুরে অধিক সংখ্যক পোনার মজুদ এ রোগের একটি অন্যতম সহায়ক কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে পানির গুণাগুণ সমুন্নত রাখার পাশাপাশি পোনার ঘনত্ব হ্রাস করা অত্যাবশ্যক। এছাড়া আক্রান্ত মাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিনে ৩-৫ মিনিট গোসল দেয়া অথবা পুকুরে ৪ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। উপরন্ত মাছকে শতকরা ২-৩ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য গোসল করালে এ রোগে প্রতিকার আশা করা যায়।
কৃমিজাতীয় রোগ : এই পরজীবীগুলো মূলত মাছের পাখনা, ফুলকা ও ত্বকে আক্রমণ করে। নার্সারি পুকুরে এ রোগ অতিদ্রুত বৃদ্ধি পায়।
অপরপক্ষে কৃমির আক্রমণে ত্বক ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ত্বকে বিন্দু বিন্দু রক্তক্ষরণ হয়। কার্পজাতীয় মাছের ৪-৫ গ্রাম ওজনের পোনায় এ রোগের আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যায়।
কৃমিজাতীয় পরজীবী ঘটিত রোগের চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত গাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে গোসল করালে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আক্রান্ত পুকুরে ১০-২০ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মাছের হ্যাচারি ও নার্সারিতে মাছের পোনার রোগ প্রতিরোধে করণীয়
(১) উৎপাদনের শুরুতে এবং চলমান সময়ে সব হ্যাচারি ইউনিট এবং সরঞ্জামাদি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করণ।
(২) নার্সারি পুকুর ও ব্রুড রাখার পুকুর নিয়মিত জীবাণূ মুক্ত করণ।
(৩) নিষিক্ত ডিম ও পোনাগুলোকে জীবাণুমুক্ত করণ।
(৪) গুণগতমান সম্পন্ন, দূষণ ও রোগজীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
(৫) সুষম ও জীবাণুমুক্ত খাদ্য সরবরাহ করা।
(৬) রোগের চিকিৎসার জন্য যথেচ্ছ-ড্রাগ ব্যবহার না করা।
(৭) মৃত ও অসুস্থ মাছ যথাশিগগিরর সরিয়ে ফেলা।
(৮) মাছ খাদক রাক্ষুসে প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করা।
উল্লেখ্য যে, রেণু উৎপাদনের প্রায় ৯৯% আসে হ্যাচারি থেকে, পাশাপাশি নার্সারিতে উৎপাদিত হচ্ছে ৮২ হাজার লাখেরও অধিক পোণা। এরই প্রেক্ষাপটে নির্দ্বিধায় আশা করা যায়, হ্যাচারি ও নার্সারিতে উৎপাদিত রেণুও পোণা রোগমুক্ত রাখা সম্ভব হলে মাছের সার্বিক উৎপাদনও বেড়ে যাবে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে।
পরিশেষে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মাছ ও পোনার রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়, সমাজে বহুল প্রচলিত এ প্রবাদ সর্বদাই চাষিদের মন মানসিকতায় লালন করতে হবে।
মৎস্য
মাগুর মাছ চাষ করে বিপুল অর্থ উপার্জন করুন

দেশি মাগুর মাছ সুস্বাদু ও উপাদেয়। দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের পছন্দের মাছ। এছাড়া পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও সর্বত্র দেশি মাগুরের চাহিদা রয়েছে। সর্বোপরি, মাগুর একটি জিওল মাছ | অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের উপস্থিতির ফলে এই মাছ জলের বাইরে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। তাই এই ধরণের মাছগুলিকে জিওল মাছ বলা হয়। এই মাছগুলির বাজারে মূল্য এবং চাহিদাও বেশি | তাই, মাগুর চাষ করে কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়ে থাকেন |

পুকুর নির্মাণ(Pond preparation)
মাছ চাষের প্রথমেই সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচন করতে হবে | পুকুরের আয়তন ১০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ এবং গভীরতা ৮০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার (৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট) হতে হবে। অধিক গভীরতা উৎপাদনের জন্য অসুবিধাজনক। কারণ মাগুর মাছকে শ্বাস নেওয়ার জন্য সবসময় উপরে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত শক্তিক্ষয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
তবে, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাড়ের ঊর্ধ্বসীমা অবশ্যই সর্বোচ্চ বন্যার লেভেল থেকে ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) উপরে রাখতে হবে। এতে বৃষ্টির সময় মাছ বুকে হেঁটে বাইরে যেতে পারে না। আবার বাইরে থেকে সাপ-ব্যাঙ ইত্যাদি মৎস্যভুক প্রাণিও পুকুরে প্রবেশের সুযোগ পায় না। এছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড়ের ওপর ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু নেটের বেড়া দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

চুন প্রয়োগ
পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে হাল্কাভাবে চাষ দিয়ে তলার মাটির পিএইচ পরীক্ষা করে প্রতি শতাংশে ১ থেকে দেড় কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের পর পুকুরে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) পরিমাণ জল ঢুকিয়ে সপ্তাহ খানিক ধরে রাখা প্রয়োজন।

সার প্রয়োগ(Fertilizer)
জৈব সার প্রয়োগের ৭ দিন পর জলের উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বজায় থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশ ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমপিও সার ব্যবহার করতে হবে। জলের রং বাদামি সবুজ, লালচে বাদামি, হাল্কা সবুজ, লালচে সবুজ অথবা সবুজ থাকাকালীন অজৈব সার প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই।

পোনা মজুদ
পুকুরে ৫-৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের সুস্থ-সবল পোনা প্রতি বর্গমিটারে ৫০ থেকে ৮০টি ছাড়া যেতে পারে। মে-জুন মাসে মাগুরের পোনা ছাড়ার যথার্থ সময়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা(Food)
মাগুর মূলত জলাশয়ের তলদেশের খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রাকৃতিক এই খাদ্যগুলো হচ্ছে জলাশয়ের তলায় আমিষ জাতীয় পচনশীল দ্রব্যাদি। প্রাণি প্লাঙ্কটন ও কেঁচো জাতীয় ক্ষুদ্রাকার প্রাণি ইত্যাদি।

খাদ্য সরবরাহ
অধিক ঘনত্বে চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। সহজলভ্য দেশীয় উপকরণের মাধ্যমে সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত করা যায়। এ ক্ষেত্রে চালের কুড়া ৪০ শতাংশ, তৈলবীজের খোল ৩০ শতাংশ ও শুঁটকি ৩০ শতাংশ মিশিয়ে গোলাকার বল তৈরি করে মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে। তাছাড়া শামুক ও ঝিনুকের মাংস মাগুরের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৫-১০ শতাংশ হারে দৈনিক খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ সকালে এবং বাকি তিন-চতুর্থাংশ সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন