মৎস্য
ভোলায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা ইলিশ
ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই ইলিশ ধরতে নামেন জেলেরা। কিন্তু এখনও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ। এর মধ্যে বেশির ভাগই বড় সাইজের ডিমওয়ালা মা ইলিশ বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
জেলেরা জানান, তাদের জালে ধরা পড়া ডিমওয়ালা মা ইলিশগুলো তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ডিম ছেড়ে দিতো। কিন্তু ডিম ছাড়ার আগেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ওইসব মা ইলিশ। প্রতিদিন তাদের জালে যে ইলিশ ধরা পড়ছে তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগই ডিমওয়ালা ইলিশ। ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা শেষে আর কোনো বছরই এত পরিমাণ ডিমওয়ালা ইলিশ তাদের জালে ধরা পড়েনি। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ বলে মনে করছেন তারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার জেলে এবং মৎস্য আড়তদাররা বলেন, প্রতিবছর মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভোলা ও তেঁতুলিয়ার কোনো মৎস্য আড়তদার, ব্যবসায়ী বা জেলেদের মতামত নেওয়া হয় না। এবছরও একইভাবে মতামত না নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করায় এমনটা হয়েছে।
অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানীর দাবি, এ বছর ১৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি হতো।
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও তুলাতুলি মেঘনা নদীর জেলে মো. লোকমান হোসেন মাঝি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত তুলাতুলি মেঘনা নদীতে জাল ফেলে ১১টি বড় সাইজের ইলিশ ও ৮টি ঝাকটা পেয়েছি। ১১টির মধ্যে মাত্র ৩টি ইলিশ ডিম ছেড়েছে। বাকি ইলিশগুলোর পেট ডিমে ভরা।
তুলাতুলি গ্রামের বাসিন্দা ও মেঘনা নদীর জেলে মো. হানিফ মাঝি বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের ৩০টি ইলিশ পেয়েছি। এর মধ্যে মাত্র চারটি ইলিশ ডিম ছেড়েছে। বাকি সবগুলোর পেটে ডিম ছিল। এছাড়াও দুইটি ইলিশ জাল থেকে হাতে ধরে দেখি, ডিম ঝরে পড়ছে।
জেলে মো. আবুল কাশেম বলেন, ৩৫ বছর ধরে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে সংসার চালাই। প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গিয়ে অনেক ডিম ছেড়ে দেওয়া (পাইর) ইলিশ পাই। কিন্তু এ বছর তিন থেকে চারদিনে মাত্র পাঁচটির মতো পাইর ইলিশ পেয়েছি।
জেলে মো. আমির হোসেন মাঝি বলেন, সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রতিবছর সফল হলেও এ বছর নদীতে গিয়ে ডিমওয়ালা মা ইলিশ অনেক বেশি পাচ্ছি। আর পাইর ইলিশ পাচ্ছি খুব কম। আমরা জেলেরা মনে করি, এ বছরের ২২ দিনের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
তুলাতুলি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মঞ্জু ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজারে যে ইলিশ বিক্রি হয় বা দেশের বাইরে যে ইলিশ রপ্তানি হয় তার বেশি ভাগই ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী থেকে শিকার করা। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণে ভোলার কোনো মৎস্য আড়তদার, ব্যবসায়ী বা জেলেদের মতামত নেওয়া হয় না। সঠিক সময় নির্ধারণ না করার কারণে এ বছর ইলিশের ভড়া মৌসুমে নদীতে ইলিশের সংকট ছিল। একই কারণে এ বছর সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরেও জেলেরা নদীতে গিয়ে প্রচুর মা ইলিশ পাচ্ছেন। যদি মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণে মতামত নিতো তাহলে এ বছর এমন অবস্থা হতো না।
ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানী ড. মো. জলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর মেঘনা নদীতে সর্ব্বোচ ২০ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে যদি ১৬ বা ১৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা নির্ধারণ করা হতো তাহলে ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতো।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মেঘনা নদীতে এ বছর মা ইলিশ কি পরিমাণ ডিম ছেড়েছে তার গবেষণা এখনও চলছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা চূড়ান্তভাবে পরিমাণ বলতে পারবো।
মৎস্য
শীতে মাছের খামারের যত্ন নেবেন যেভাবে

শীত এলে মাছ চাষিরা খামারের মাছ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। ঠান্ডায় মাছ খাদ্য গ্রহণ অনেকটা কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে অতিরিক্ত খাদ্য পচে গিয়ে পুকুরে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে পানিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং সর্বোপরি মাছের মৃত্যু ঘটে।
আবদ্ধ পুকুরের ঠান্ডা পানিতে মাছ তাদের চলাচল কমিয়ে দেয়। যার ফলে মাছের মেটাবলিজম কমে যায় এবং ক্ষুধা কমে যায়। অন্যদিকে পানি ঠান্ডা থাকায় বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। দিন ছোট হওয়ায় রোদ অল্প সময় পুকুরের পানিতে পড়ে। ফলে পুকুরের পানির তাপমাত্রা কমে যায়
সাধারণত তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে মাছের মেটাবলিজম বা পরিপাক ভালো হয়। এর কম হলে পরিপাক ক্রিয়া কমে যাওয়ায় বৃদ্ধির হার কমে যায়।
অন্যদিকে সূর্যের আলো কম পাওয়ায় প্রাকৃতিক অক্সিজেন উৎপাদন কমে যায়। ফলে মাছের শ্বাসকার্য চালাতে কষ্ট হয়। মাছ খাবি খেতে শুরু করে। তাই অক্সিজেনের অভাবে মাছের মৃত্যু ঘটে।
তাছাড়া পুকুরের পানিতে অবস্থিত ফাইটোপ্লাঙ্কটন তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলেও মাছের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।
প্রাকৃতিক খাদ্যকণা যেমন ফাইটোপ্লাংটন বা উদ্ভিদকণা ও জুপ্লাংটন বা প্রাণিকণা কমে যাওয়ায় মাছের খাবার স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
শীতকালে পানির পিএইচ স্বাভাবিক থাকে না। মাছের বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক পিএইচের মান ৬-৮ এর মধ্যে থাকা উচিত। যদি ৬ এর থেকে কম হয়, তাহলে পানি বেশি অম্লীয় হয়ে যাবে এবং মাছ খাবার খেতে অনীহা দেখাবে। আবার ৮ এর থেকে বেশি হয়ে গেলে পানি ক্ষারীয় হবে এবং অতিরিক্ত ক্ষারত্বের ফলে মাছ মারা যেতে পারে।
শীত মৌসুমে মাছে বিভিন্ন ধরনের পরজীবীজনিত, ফাঙ্গালজনিত এবং ব্যাকটেরিয়ালজনিত রোগ দেখা যায়।
এসময় সঠিকভাবে মাছের পরিচর্যা না করলে মাছের উঁকুন রোগ, অপুষ্টিজনিত রোগ (চোখ অন্ধ হওয়া, হাড় বাঁকা), ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, ফুলকা পচা রোগ এবং উদর ফোলা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছ মরে যেতে পারে।
শীতকালে মাছের খামারের পরিচর্যা
পুকুরের পাড়ের উঁচু গাছপালা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে। কৃত্রিম উপায়ে পানিতে অক্সিজেনের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে।
জাল টেনে, সাঁতার দিয়ে এবং বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পানিতে অক্সিজেনের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে আর বড় পুকুর বা ঘের হলে কৃত্রিম অক্সিজেন ট্যাবলেট যেমন-এসআই অক্সিট্যাব ৪ থেকে ৫ কেজি প্রতি একরে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর পুকুরে জাল টানলে স্বাস্থ্য, মাছের সংখ্যা ও ওজন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া জাল টানার ফলে পুকুরের তলদেশের বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস বের হয়ে যাবে।
ক্ষতিকর গ্যাস অ্যামোনিয়ার প্রভাবে মাছ মারা গেলে প্রয়োজনে এসআই এমোফ্রি-এল অথবা এসআই এমোফ্রি-পি প্রতি শতাংশে ৫ মিলিলিটারের সাথে ২০ মিলিলিটার করে চিটাগুর প্রয়োগ করতে হবে।
অতিরিক্ত শ্যাওলা, ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা, আগাছাসহ সব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করতে হবে।
পুকুরের পানির পিএইচ ৬-৮ এর মধ্যে রাখতে শীতের শুরুতে ১৫ থেকে ২০ দিন বা একমাস অন্তর অন্তর পুকুরে প্রতি একরে ৬-৭ কেজি এসআই বায়োজিও প্লাস প্রয়োগ করতে হবে।
পিএইচের মান অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে প্রতি একরে ২ লিটার ভিনেগার বা এসিডিন নামের এসিডিফায়ার প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ একেবারে কমে গেলে এসআই রয়েল জিও প্রতি একরে ১৫-২০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরে উদ্ভিদকণা বৃদ্ধির জন্য অজৈব সার বিশেষ করে ইউরিয়া (বিঘা প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি) ও ট্রিপল সুপার ফসফেট (বিঘা প্রতি মাসে ৫-৬ কেজি) ৩ দিন ভিজিয়ে রেখে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও এসআই ফাইটোগ্রো প্রতি একরে ৩-৪ লিটার কড়া রোদের সময় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
শীতের সময় মাছের সুষম বৃদ্ধি বজায় রাখতে মূল খাবারের মাছের হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে উৎকৃষ্টমানের উৎসেচক বা এনজাইম সমৃদ্ধ গ্রোথ প্রমোটর যেমন-এসআই গ্রোফিস প্রয়োগ করা উচিত। এতে মাছের খাবারের চাহিদা বাড়বে। তার সাথে অবশ্যই ভালোমানের ইমিউনোমডুলেটর জেলি যেমন-এসআই রয়েল জেল প্রতিকেজি খাদ্যের সাথে ১০ মিলিলিটার করে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন টানা খাওয়াতে হবে।
শীতে সাধারণত পুকুরের পানি কমে যায়। তাই প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহ করতে হবে। মাছের ঘনত্ব স্বাভাবিক বা কম রাখতে হবে।
পুকুরের পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে পানি দূষণ রোধে ভালো মানের দানাদার সয়েল পোবায়োটিক যেমন-এসআই প্রোক্লিন ৬-৮ গ্রাম করে সরাসরি পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
প্রয়োজনে ভালো মানের জীবাণুনাশক (এসআই ক্লোর-টি) ১টি করে ট্যাবলেট প্রতি শতাংশে এবং কপার সালফেট পেন্টাহাইড্রেট-১০% (এসআই ফাইটোক্লিন) ৩০ মিলিলিটার করে প্রতি শতাংশে প্রয়োগ করতে হবে।
শীতের পুরো সময়ে পানির গুণগত মান ধরে রাখতে ১৫ দিন পরপর প্রতি একর পানিতে একটি উৎকৃষ্ট মানের ওয়াটার প্রোবায়োটিক যেমন-এসআই রয়েল প্রো ৫০০ গ্রামের সাথে ২ কেজি লাল চিনি পরিষ্কার পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
- ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।
গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ
- গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
- উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।

গম চাষ
- গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।

ডালশস্য
- মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।


তৈলবীজ চাষ
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবজি চাষ
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।



ফল চাষ
- আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মৎস্য চাষ
- পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
- মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
- গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।
মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
অন্যান্য
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

ফেব্রুয়ারি মাস কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফসলের যত্ন, বপন এবং রোপণ কার্যক্রম চালানো হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- জমিতে পানি সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
- ধানের চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন স্টেম বোরার (Stem Borer) এবং পাতামোড়া পোকার (Leaf Roller) আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধানের জমিতে প্রয়োজনীয় সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।

গম চাষ
- জমি আগাছামুক্ত রাখুন এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দিন।
- পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) এবং ব্রাউন রাস্ট (Brown Rust) রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

ডালশস্য
- মসুর, মুগ, এবং ছোলার ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পরে জমি পরিষ্কার করে পরবর্তী চাষের জন্য প্রস্তুত করুন।




তৈলবীজ চাষ
সরিষা ফসল সংগ্রহ
- সরিষার শুঁটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করুন।
- জমি পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।

সবজি চাষ
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, এবং মূলা সংগ্রহ করুন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, এবং করলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার এবং সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।




ফল চাষ
- আম, কাঁঠাল, এবং লিচু গাছের মুকুল রক্ষায় কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণ করুন।


মৎস্য চাষ
- পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং মাছের খাবার সরবরাহ করুন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় শুষ্ক খড় এবং কাঁচা ঘাস যোগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আয় বাড়ে। প্রতিটি কাজ সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমকে আরও সফল করে তোলা সম্ভব।
মৎস্য
বাচা মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশের সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাছগুলোর মধ্যে বাচা মাছ একটি পরিচিত নাম। এটি শুধু আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
এখানে আমরা আলোচনা করব বাচা মাছ খাওয়ার উপকারিতা এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত, যা আপনাকে এই মাছের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলবে।

বাচা মাছ খাওয়ার উপকারিতা
বাচা মাছ খাওয়ার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস
- বাচা মাছ উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে, যা শরীরের কোষ পুনর্গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
- এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কার্যকর।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
- বাচা মাছ ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুল মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
হাড় ও দাঁতের গঠন উন্নত করে
- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে এটি হাড়ের গঠন মজবুত করে।
- দাঁতের সুরক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- বাচা মাছ ভিটামিন ডি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বাচা মাছ চাষের উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ
চাষের জন্য উপযুক্ত সময়
- বাচা মাছ চাষের জন্য গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকাল সবচেয়ে উপযুক্ত।
- পানির তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়।
চাষের জন্য পুকুরের আকার
- ৩০-৫০ ডেসিমালের একটি মাঝারি আকারের পুকুর বাচা মাছ চাষের জন্য আদর্শ।
- পুকুরে পর্যাপ্ত রোদ এবং সুষম পানিপ্রবাহ থাকা জরুরি।
পানির গুণগত মান
- পিএইচ মাত্রা: ৬.৫-৮
- দ্রবীভূত অক্সিজেন: ৫-৭ পিপিএম
- অ্যামোনিয়া: ০.২ পিপিএম-এর কম হওয়া উচিত।
পুকুর প্রস্তুতি
- পুকুরে আগাছা ও ক্ষতিকারক পোকামাকড় পরিষ্কার করতে হবে।
- চুন প্রয়োগ (প্রতি ডেসিমালে ১ কেজি) এবং জৈব সার ব্যবহার করে পুকুর প্রস্তুত করা হয়।

বাচা মাছ চাষ পদ্ধতি
পোনা সংগ্রহ
- নির্ভরযোগ্য হ্যাচারি থেকে উচ্চমানের বাচা মাছের পোনা সংগ্রহ করুন।
- পোনার আকার ২-৩ ইঞ্চি হওয়া উচিত।
পোনা মজুদ
- প্রতি ডেসিমালে ৪০০-৫০০ পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
- পোনা মজুদের আগে পানির গুণগত মান যাচাই করে নিতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- পোনার প্রথম ১৫ দিনের জন্য মাইক্রোফিড প্রয়োগ করা হয়।
- মাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
- খাদ্য: ধান ভাঙা, মাছের তেল, এবং সরিষার খোল।
রোগ প্রতিরোধ
- পুকুরে নিয়মিত পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা চুন ব্যবহার করুন।
- পুকুরের পানি প্রতি ১৫-২০ দিন পর পরিবর্তন করুন।
- মাছের কোনো অস্বাভাবিক আচরণ বা রোগ লক্ষ করলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সংগ্রহ ও বিক্রয়
- চাষ শুরু করার ৪-৫ মাস পর বাচা মাছ সংগ্রহ উপযোগী হয়।
- বাজারে বাচা মাছের চাহিদা বেশি, তাই এটি লাভজনকভাবে বিক্রি করা সম্ভব।

বাচা মাছ চাষের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
- বাচা মাছ চাষের খরচ কম এবং লাভ বেশি।
- প্রতি ডেসিমালে ৫০,০০০ টাকা খরচ করলে প্রায় ৮০,০০০-১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
- এটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বাচা মাছ চাষ একটি লাভজনক এবং স্বাস্থ্যসম্মত উদ্যোগ। এটি পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি বাচা মাছ চাষ থেকে প্রচুর লাভবান হতে পারেন।
আপনার এলাকায় বাচা মাছ চাষ শুরু করতে আজই উদ্যোগ নিন এবং এই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাছের প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখুন।
পরিবেশ
ছবিতে গ্রাম বাংলার খালে-বিলে মাছ ধরার মুহূর্তগুলো
শীতকালে খাল-বিলের পানি কমে যাওয়ায় গ্রাম-গঞ্জে বেশ ঘটা করে মাছ ধরতে দেখা যায়। বিবিসি প্রবাহ টিভি অনুষ্ঠানের জন্য আপনাদের কাছে এমন ছবি চাওয়া হয়েছিল। বাছাই করা কিছু ছবি নিয়ে আমাদের এই ফটো গ্যালারি।












অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন