আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

মৎস্য

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাছের উকুন রোগের কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। অনেকেই বুঝতে পারেন না রোগটি কেমন। আসুন জেনে নেয়ে যাক মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।

মাছের উকুন রোগের কারণ ও লক্ষণ: আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী এর মাধ্যমে এই রোগে মাছ আক্রান্ত হয়। এই পরিজীবি মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে।

মাছের দেহ পৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার: পুকুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫ পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার সংবাদটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মৎস্য বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে।

মৎস্য

পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়

পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়
পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়

আমরা মাছেভাতে বাঙালি। আর পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। তবে মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে মাছটির বংশবৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। তার মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ মাছ রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য কিছু কৌশল জেনে নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নেই কৌশলগুলো-

ব্রুড প্রতিপালন

প্রজনন ঋতুর ৪-৫ মাস আগে থেকেই ব্রুড মাছগুলোকে বিশেষ যত্নের সঙ্গে লালন পালন করা উচিত। এ সময় খাবার হিসেবে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা এবং ভিটামিনের প্রিমিক্সের মিশ্রণ মাছের মোট ওজনের ৫-৮ ভাগ দিতে হবে। ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা আনার জন্য ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততার জন্য নিয়মিত গোবর, ইউরিয়া ও টিএসপি পরিমাণ মতো দিতে হবে।

মাছ বাছাই

ব্রুড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছের চেয়ে ছোট হবে। পুরুষ মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট চাপা থাকে এবং পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খাঁজকাটা থাকে। আর স্ত্রী মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে পুরুষ মাছ থেকে বড় হয়। স্ত্রী মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট ফোলা ও নরম থাকে এবং স্ত্রী মাছের বক্ষপাখনা তেমন খাঁজকাটা থাকে না।

টেকসইকরণ

ইনজেকশন দেওয়ার ৮-১০ ঘণ্টা আগে মাছ ধরে সেগুলোকে পুকুরে স্থাপিত গ্লাস নাইলনের হাপাতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য মাছকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দিতে হবে।

ইনজেকশন প্রদান

পাবদা মাছের প্রণোদিত প্রজননের জন্য পিজি এবং এইচসিজি দু’টোই ব্যবহার করা যায়। মাছকে মাত্র একবারই ইনজেকশন দিতে হয়। পিজির জন্য সবচেয়ে ভালো মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ১২.০ মিলিগ্রাম এবং প্রতি কেজি স্ত্রী মাছের জন্য ১৮.০ মিলিগ্রাম। ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা জড়িয়ে পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন দেওয়ার ৯-১২ ঘণ্টার মধ্যে হাপাতেই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে ওই ডিম নিষিক্ত করে।

নিষিক্ত ডিম স্থানান্তর

ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে এবং ডিমগুলোকে ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ট্রে ও পুকুরের পানির তাপমাত্র যেন প্রায় একই থাকে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে পুকুরের পানি ছেঁকে ট্রেতে দেওয়া যেতে পারে। ডিম স্থানান্তর করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেতে ওপর থেকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ দিয়ে অনবরত পানি সরবরাহ করতে হবে যাতে ডিমগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে ১৬-২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

রেনু পোনার খাবার

ট্রেতে ডিম থেকে ফোটার ২১-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রেনু পোনাকে প্রাথমিক খাবার দিতে হবে। প্রাথমিক খাবার হিসেবে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম সবচেয়ে ভালো। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিতে হয়। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম না পাওয়া গেলে পুকুর থেকে জুপ্লাংকটন ধরে সুক্ষ্ন ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে।

পোনার পরিচর্যা

পোনার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ২-৩ বার খাবার দিতে হবে। এভাবে ৬-৮ দিন ট্রেতে প্রতিপালন করার পর পোনাগুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করতে হবে। ২.৪, ১.৩, ০.৫ ঘনমিটার সাইজের সিস্টার্নে ৩০০-৫০০টি পোনা লালন করা যাবে। পানির উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হবে। সিস্টার্নে ১০-১৫ দিন প্রতিপালন করার পর পোনার আকার ২-৩ সেন্টিমিটার হলে পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা যাবে।

নার্সারি পুকুরে প্রতিপালন

পুকুরের আয়তন ৩-৬ শতাংশ হবে। পুকুর প্রস্তুতির পর শতাংশে ৩০০-৪০০টি করে পোনা ছাড়া যাবে। পোনা ছাড়ার আগে ভালোভাবে ছোট ফাঁস জাল টেনে পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। পোনা সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন পোনার দেহ ওজনের ১০-২০ ভাগ সম্পূরক খাবার দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

খরচের তুলনায় লাভ ভালো হওয়ায় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাবদা মাছের চাষ। ২০১৬ সালে ২ জন চাষির মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে এখন পাবদা চাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। আর গেল মৌসুমে ১৫০ মেট্রিকটনের বেশি পাবদা উৎপাদিত হয়েছে। সামনের মৌসুমে উৎপাদন আরো বেশি হবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।

জানাগেছে, ময়মনসিংহের বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারীরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন। পরবর্তিতে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। পুকুর পাড় থেকেই গড়ে ৩৩০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। সাথে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ ।

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

পাবদা খামারী আব্বাস জানান, পাবদা মাছের গঠন ঠিক রাখতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় দানাদার খাবার। বিক্রিতেও রয়েছে সুবিধা। দেড় শ’ কিংবা দুই শ’মণ যে পরিমাণই মাছ ধরা হোক না কেন তা পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যান ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বড় বড় পাইকাররা। ফলে লাভ এবং বিক্রয় সুবিধা পাওয়াই পাবদা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

রাজু জানান, লেখা-পড়া শেষ করে বাবার সাথে পাপদা মাছের চাষ করছি। এবছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার পাবদা মাছ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করি। এছাড়া এ পাবদা মাছের সাথে আরো অন্যান মাচের চাষ করতে হয় পানি ঠিক রাখার জন্য। যাকে বলে মিশ্র চাষ।

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

অপর এক খামারী জানান, পাবদা মাছ চাষে বর্তমানে মানুষকে বেশি আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এ মাছ বিক্রি করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না । দেড় শ’ কিংবা দুই শ’ মণ মাছ পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আনেক চাষি এখন এ মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। তিনি আরো জানান মৎস্য বিভাগ আমাদের বিভিন্নভাবে ট্রেনিং দিচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা এসে পুকুরের পানি পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

মাছ আহরণ
মাছ আহরণ

মহেশপুর, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, কৃষির যে কোন সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক। এই চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগীতা করছে মৎস্য বিভাগ। তিনি আরো জানান জেলার মহেশপুরে উৎপাদিত এসব পাবদা মাছ ভারতে এলসির মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশিয় বিভিন্ন বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছেন খামারীরা। সাধারণত মার্চ মাসের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা
পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সেগুলো মৎস্য চাষিদের ভালোভাবে জানতে হবে। আগের দিনে আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে ব্যাপকহারে মাছ পাওয়া যেত। পুকুরে অনেকেই এখন পাবদা মাছ চাষ করে থাকেন। আজকের এই লেখাতে আমরা জেনে নিব পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে-

পুকুর প্রস্তুত করা
পুকুর প্রস্তুত করা

পুকুর প্রস্তুত করা

বছরে অন্তত ৭-৮ মাস পানি থাকে এমন সেচকৃত পুকুর নির্বাচন করা ভালো। তবে সারা বছর পানি থাকে অর্থাৎ অন্য মাছের চাষ(পুরোনো পুকুর) হচ্ছে এমন পুকুরে পাবদা মাছ চাষ করা আরো ভালো । নতুন পুকুরের পাড় মেরামত ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে । চুন প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫ কেজি হারে গোবর প্রয়োগ করতে হবে । এতে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মাবে । পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থাকলে তা দূর করতে হবে।

মিশ্র চাষের জন্য পোনা মজুদ

পুকুরের পানি ৪ থেকে ৫ ফুট গড় উচ্চতা ও হালকা সবুজাভ হলে পোনা মজুদ করতে হবে । মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা , ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা , ১০টি রুই , ১০টি মৃগেল , ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে।

খাদ্য প্রয়োগ

নিয়মিত সম্পূরক খাদ্য মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৩ থেকে ৮ ভাগ হারে প্রয়োগ করতে হবে । অনুর্বর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৫ কেজি পচা গোবর প্রয়োগ করতে হবে । পানির রং গাড় সবুজ হয়ে গেলে অবশ্যই গোবর প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং পানির পি,এইচ পরীক্ষা করতে হবে । এখানে একটি ব্যাপার উল্ল্যেখ্য যে , পাবদা মাছ পুকুরের তুলনা মূলক ছোট মাছ খেয়ে ফেলবে তাই চাষের অন্যান্য মাছ যাতে পাবদার চাইতে বড় সাইজের হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং পুকুরের আমাছা খেয়ে পুকুর যেমন চাষযোগ্য রাখবে তেমনি পাবদার বৃদ্ধিও দ্রুত হবে।

মাছ আহরণ
মাছ আহরণ

মাছ আহরণ

পাবদা মাছ ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম ওজনের হলে বিক্রির জন্য আহরণ করা যেতে পার। পোনা মজুদের ৭ থেকে ৮ মাস পর সব মাছ আহরণ করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তবে ১ বছরের অধিক সময় পর আহরণ করলে মাছের ওজন দ্বিগুনের চাইতেও বেশি হতে দেখা গেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়

যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়
যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়

আমাদের দেশে সুস্বাদু মাছের মধ্যে পাবদা অন্যতম। স্বাদের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাবদা মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে এ মাছ হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ করে বেশ লাভবানও হওয়া যায়।

এ মাছ চাষের জন্য ৭ থেকে ৮ মাস পানি থাকে এরকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর কিংবা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে। পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসযুক্ত হতে হবে।

পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করতে হবে।

পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভালো থাকবে।

জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী
জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী

রোটেনন প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর শতকে ৮০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়। পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবে না।

পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এর জন্য ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১ থেকে ২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

সার প্রয়োগের ৪ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে। এককভাবে চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ-সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

মিশ্র চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা, ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা, ১০টি রুই, ১০টি মৃগেল, ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে। তেলাপিয়ার সঙ্গে পাবদা মাছ ভালো হয়ে থাকে এ কারণেই যে তেলাপিয়ার অবাঞ্চিত বাচ্চা পাবদা মাছ খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়।

নিজেই চাষ করুন পাবদা মাছ
নিজেই চাষ করুন পাবদা মাছ

৩০ শতাংশ ফিশ মিল, ৩০ শতাংশ সরিষার খৈল, ৩০ শতাংশ অটোকুড়া, ১০ শতাংশ ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায় অথবা বাজারের কৈ মাছের ফিড খাওয়ালেও চলবে। এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই উপরে আলোচিত খাবারটি রাতে দুবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে খাবার দিতে হবে। পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১২ শতাংশ থেকে আরম্ভ করে দৈনিক খাবার দিয়ে যেতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার শতকরা ১ শতাংশ করে কমাতে হবে।
পাবদা মাছের ওজন ৩০ গ্রামের বেশি হলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ শতাংশ।

৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে। আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষের শতাংশে ১৪ থেকে ১৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

খাঁচায় মাছ চাষ

খাঁচায় মাছ চাষ
খাঁচায় মাছ চাষ

আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে খাঁচায় মাছ চাষ নতুন আঙ্গিকে শুরু হলেও বিশ্ব অ্যাকুয়াকালচারে খাঁচায় মাছ চাষের ইতিহাস অনেক পুরোনো। খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয় চীনের ইয়াংঝি নদীতে আনুমানিক ৭৫০ বছর আগে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে আধুনিক কালে খাঁচায় মাছ চাষ ক্রমাগতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ উপযোগী আকারের খাঁচা স্থাপন করে অধিক ঘনত্বে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তি হলো খাঁচায় মাছ চাষ।

বাংলাদেশে খাঁচায় মাছ চাষের সূচনাঃ
অতীতে আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে থাইল্যান্ডের প্রযুক্তি অনুকরণে খাঁচায় মাছ চাষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ উদ্যোগের অগ্রপথিক হলেন কুমিল্লার শিল্প নগরী এলাকায় (বিসিক) অবস্থিত জাল ও সুতা ফ্যাক্টরী “ফরিদ ফাইবার এন্ড উইভিং লিমিটেড” এর সত্বাধিকারী জনাব মো: বেল্লাল হোসেন। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে বর্তমানে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী ও লক্ষীপুর জেলায় মেঘনা নদীর রহমতখালী চ্যানেলে যথাক্রমে সাড়ে চারশত এবং পাঁচশত খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া করা হচ্ছে; যা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বছরে ৭০০ মেঃ টন রপ্তানিযোগ্য তেলাপিয়া। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সাথে খাঁচায় মাছ চাষের এ অধ্যায় শুরু হয় চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে। এজন্য এখানকার ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন মডেলকে “ডাকাতিয়া মডেল” নামে অভিহিত করা হয়।  

খাঁচায় মাছ চাষে সুবিধা:

  • ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করলে পুকুরের ন্যায় জলাশয়ের প্রয়োজন হয় না।
  • প্রবাহমান নদীর পানিকে যথাযথ ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন বাড়ানো যায়।
  • মাছের বর্জ্য প্রবাহমান পানির সাথে অপসারিত হয় বিধায় পানিকে দূষিত করতে পারে না।
  • মাছের উচ্ছিষ্ট খাদ্য খেয়ে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজাতির প্রাচুর্য্য বৃদ্ধি পায়।
  • প্রবাহমান থাকায় প্রতিনিয়ত খাঁচার অভ্যন্তরের পানি পরিবর্তন হতে থাকে ফলে পুকুরের চেয়ে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়।


খাঁচা স্থাপনের উপযোগী স্থানঃ

  • খাঁচা স্থাপনের জন্য উপযোগী, নদীর এমন অংশ যেখানে একমূখী প্রবাহ কিংবা জোয়ার ভাটার শান্ত প্রবাহ বিদ্যমান। নদীর মূল প্রবাহ যেখানে অত্যধিক তীব্র স্রোত বিদ্যমান সে অঞ্চলে খাঁচা স্থাপন না করায় ভাল। নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ৪-৮ ইঞ্চি মাত্রার পানি প্রবাহে খাঁচা স্থাপন মাছের জন্য উপযোগী, তবে প্রবাহের এ মাত্রা সর্বোচ্চ সেকেন্ডে ১৬ ইঞ্চি এর বেশী না হওয়া উচিত।
  • মূল খাঁচা পানিতে ঝুলন্ত রাখার জন্য নূন্যতম ১০ ফুট গভীরতা থাকা প্রয়োজন। যদিও প্রবাহমান পানিতে তলদেশে বর্জ্য জমে গ্যাস দ্বারা খাঁচার মাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কম তথাপি খাঁচার তলদেশ নীচের কাদা থেকে নূন্যতম ৩ ফুট ব্যবধান থাকা আবশ্যক।
  • স্থানটি লোকালয়ের নিকটে হতে হবে যাতে সহজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
  • খাঁচা স্থাপনের স্থান থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুন্দর হতে হবে যাতে সহজে উৎপাদিত মাছ বাজারজাত করা যায়।
  • খাঁচা স্থাপনের কারণে যাতে কোনভাবেই নৌ চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে এমন স্থান হতে হবে।
  • সর্বোপরি খাঁচা স্থাপনের জায়গাটি এমন হতে হবে যাতে শিল্প বা কলকারখানার বর্জ্য কিংবা পয়ঃনিষ্কাশন পানি অথবা কৃষিজমি থেকে বন্যা বা বৃষ্টি বিধৌত কীটনাশক প্রভাবিত পানি নদীতে পতিত হয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে খাঁচার মাছ মারা যেতে না পারে।


ভাসমান খাঁচা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

খাঁচা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এখন আমাদের দেশেই পাওয়া যায়। উপকরণ সমূহের তালিকা হলোঃ

  • খাঁচা তৈরীর মূল পলিইথিলিন জাল (৩/৪ ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি মেসের)
  • রাসেল নেট (খাদ্য আটকানোর বেড়া তৈরীতে)
  • নাইলনের দড়ি ও কাছি
  • কভার নেট বা ঢাকনা জাল (পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য)
  • ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ (৭০ ফুট প্রতিটি খাঁচার জন্য)
  • ফ্রেম ভাসমান রাখার জন্য শূন্য ব্যারেল/ড্রাম (২০০ লিটারের পিভিসি ড্রাম, ওজন ৯ কেজি’র উর্ধ্বে)
  • খাঁচা স্থির রাখার জন্য গেরাপি (অ্যাঙ্কর)
  • ফ্রেমের সাথে বাঁধার জন্য মাঝারী আকারের সোজা বাঁশ (প্রয়োজনীয় সংখ্যক)


খাঁচার আকারঃ

খাঁচা তৈরির জন্য এমন জাল ব্যবহার করতে হবে যেন কাঁকড়া, গুইসাপ, কচ্ছপ ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রাণী জালগুলো কাটতে না পারে। ডাকাতিয়া মডেলের খাঁচার জন্য সাধারণতঃ দুই আকারের জাল তৈরি করা হয়, যেমনঃ ২০ ফুটx ১০ ফুটx ৬ ফুট এবং ১০ ফুটx ১০ ফুটx ৬ ফুট। খাঁচা তৈরির জন্য জালগুলো মেস ৩/৪ ইঞ্চি থেকে ১১/৪ ইঞ্চির মধ্যে হওয়া ভাল।  এতে সহজে নদীর পরিস্কার পানি প্রতিনিয়ত খাঁচার ভিতরে সঞ্চালিত হতে পারে।

ফ্রেম তৈরি ও স্থাপনঃ
খাঁচাগুলোর ফ্রেম তৈরী করতে প্রথমতঃ ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ দ্বারা আয়তকার ২০ ফুটx ১০ ফুট ফ্রেম তৈরি করা হয়। আর মাঝে ১০ ফুট আরেকটি পাইপ বসিয়ে ঝালাই করে ফ্রেম তৈরি করা হয়। এতে একটি ফ্রেমে সরাসরি ২০ ফুটx ১০ ফুট আকারের খাঁচা বসানো যায় আবার প্রয়োজনবোধে ১০ ফুটx ১০ ফুট আকারের দু’টি খাঁচাও বসানো যায়। প্রতি দুই ফ্রেমের মাঝে ৩টি ড্রাম স্থাপন করে সারিবদ্ধভাবে ফ্রেমগুলো স্থাপন করা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেরাপী বা নোঙর দিয়ে খাঁচা নদীর নির্দিষ্ট স্থানে শক্তভাবে বসানো হয়। এরপর প্রতিটি ফ্রেমের সাথে পৃথক পৃথক জাল সেট করা হয়।

খাঁচায় মাছের মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণঃ
পানির স্রোত, জালের ফাঁসের আকার, পানির গভীরতা, প্রত্যাশিত আকারের মাছ উৎপাদন, খাদ্যের গুণগতমান এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করেই মজুদ ঘনত্ব নির্ধরণ করা হয়। স্থাপিত খাঁচায় মাছের প্রজাতি ভেদে যেমন প্রতি ঘনমিটারে ৩০ থেকে ৪০টি পর্যন্ত মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা মজুত করা যাবে। মজুদকালে পোনার আকার এমন হতে হবে যাতে জালের মেসের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। নূন্যতম ২৫-৩০ গ্রাম আকারের পোনা মজুত করতে হবে।  

খাঁচায় সম্পূরক খাদ্য প্রদানঃ

বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায় মাছ চাষ পরিচালনার জন্য প্রবাহমান পানিতে ভাসমান খাদ্যের বিকল্প নেই। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার জন্য বহু খাদ্য কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি পিলেট আকারের পানিতে ভাসমান সম্পূরক খাদ্য তৈরি করে থাকে।

মাছ খাঁচায় মজুদের পর হতে বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত দৈহিক ওজনের বিবেচনায় খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা ৮ শতাংশ হতে ৩ শতাংশ এর মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। মাছের ওজন ৩০০-৫০০ গ্রাম হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক খাদ্য প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে কারখানায় তৈরি ভাসমান খাবার ব্যবহার করে দেখা গেছে যে, মজুদ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত ৭৫০-১০০০ গ্রাম ওজনের মাছ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ ১.৫ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

খাঁচায় মাছ বাছাইকরণঃ
সাধারণত প্রত্যাশিত উৎপাদনের জন্য খাঁচায় পোনা মজুদের তিন সপ্তাহ পর প্রথম বার খাঁচার মাছ বাছাই করতে হবে (তবে জাত ভেদে ভিন্ন সময় হতে পারে । দিনের তাপমাত্রার দিকে লক্ষ্য রেখে সকাল বেলা কিংবা পড়ন্ত বিকেলে খাঁচার মাছ বাছাই করা উচিত। যখন নদীর পানি বেশি প্রবাহমান থাকে তখন খাঁচার পানি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। এ সময় খাঁচার মাছ বাছাই করা অধিক উপযোগী। বাজারজাত করার পূর্বে প্রয়োজন অনুসারে দুই তিনবার বাছাই করতে হবে।

বর্তমান বাজারমূল্যে ৫০টি খাঁচা স্থাপনের জন্য স্থায়ী খরচঃ

ক্রম    উপকরণের নাম    পরিমাণ/সংখ্যা    একক মূল্য (টাকা)   মোট মূল্য (টাকা)
১.    সেলাই করা জাল            ৫০টি       ৩৫০০.০০           ১৭৫০০০.০০
২.    খালি বা শূন্য ড্রাম/ব্যারেল  ১৫৩টি      ১৪৫০.০০          ২২১৮৫০.০০
৩.    ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ       ৩৬০০ ফুট   ৮০.০০            ২৮৮০০০.০০
৪.    ফ্রেমের সংযোগ লৌহ       ৩৫০টি        ১০০.০০           ৩৫০০০.০০
৫.    গেরাপী (অ্যাঙ্কর)           ১২টি (২০ কেজি প্রতিটি) ২৪০০.০০  ২৮৮০০.০০
৬.    গেরাপী বাঁধার কাছি       ৫ কয়েল      ৫০০০.০০          ২৫০০০.০০
৭.    বাঁশ                           ১০০ টি        ২০০.০০           ২০০০০.০০
৮.    নাইলনের সুতা ও রাশি     ৫০০০.০০


৫০ টি খাঁচার এক ফসলের উৎপাদন খরচঃ

ক্রম    উপকরণের নাম    পরিমাণ/সংখ্যা    একক মূল্য (টাকা)    মোট মূল্য (টাকা)
১.    মাছের পোনা সংগ্রহ     ৬০০০০    ২.০০    ১২০০০০.০০
২.    মাছের খাদ্য     ২৪৫০০ কেজি    ২৮.০০    ৬৮৬০০০.০০
৩.    শ্রমিক খরচ ছয় মাসের জন্য    ৩ জন (১৮ শ্রম মাস)    ৩০০০.০০    ৫৪০০০.০০
মোট    ৮৬০০০০.০০

মাছের উৎপাদন (যেমন মনোসেক্স তেলাটিয়ার ক্ষেত্রে):

প্রতিটি খাঁচায় একটি ফসলে সর্বনিম্ন উৎপদন = ৩৫০ কেজি
৫০টি খাঁচায় (৩৫০x ৫০)                   = ১৭৫০০ কেজি
প্রতি কেজি মাছের পাইকারী বাজারমূল্য      = ১০০ টাকা
মোট মাছ বিক্রয়                               = ১৭৫০০০০ টাকা
নিট লাভ = (১৭৫০০০০-৮৬০০০০)        = ৮৯০০০০.০০ টাকা
(এখানে এককালীন স্থায়ী স্থাপনা খরচ হিসাব করা হয়নি)

উপসংহার
আমাদের দেশে প্রচুর উপযোগী নদী রয়েছে। সারা বছর খাঁচায় মাছ চাষ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে এবং বিদেশেও তেলাপিয়া মাছের প্রচুর চাহিদা আছে। আমাদের দেশের নদী কিনারায় বসবাসরত জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র জেলেগোষ্ঠি শুধুমাত্র নদী থেকে প্রাকৃতিক মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব মৎসজীবীকে সংগঠিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, সে সাথে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে নদীর প্রাকৃতিক মৎস প্রজাতিগুলোর প্রজনন মৌসুমে তাদের নিবৃত্ত করে নদীর প্রাকৃতিক মাছের মজুদ বাড়ানো ও বিভিন্ন মাছের প্রজাতি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এশিয়ার অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও খাঁচায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন তেলাপিয়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তেলাপিয়া বাজারে প্রবেশের জন্য নীতিনির্ধারণী মহলসহ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ঠ সকলের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ