পরিবেশ
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জীবনযাপন করে কীভাবে এই পৃথিবী রক্ষায় অবদান রাখতে পারেন?
আমাদের এই পৃথিবীতে প্রায় শতাব্দী ধরে বহু শহর বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
পঞ্চাশের দশকে লন্ডনে ধোঁয়ায় নিহত হয়েছিলো হাজার হাজার মানুষ।
এরপর থেকে বাতাসকে মানুষের নি:শ্বাস উপযোগী করতে অনেক কিছু করা হয়েছে তারপরেও ব্রিটেনের এই শহরের বাতাস এখনো ইউরোপের অনেক শহরের তুলনায় বেশী দূষিত।
যুক্তরাজ্য সরকার বলছে বায়ু দূষণ এখনো একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়। এমনকি বলা হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ক্যান্সার, স্থূলতা ও হৃদরোগের পরই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এই দূষণ।
কিন্তু কি করা যেতে পারে বাতাসের মান উন্নীত করতে, তা আপনি যেখানেই বাস করুন না কেন।
এখানে তেমন কয়েকটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে।
১. ভ্রমণের বিকল্প পথ
নিজের গাড়িটা বাড়িতে রেখে আপনি কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।
লন্ডনের মেয়র লোকজনকে উৎসাহিত করছেন গণ পরিবহন ব্যবহারে বা দু মাইলের কম রাস্তা বাইক বা হেটেই পার হতে। লন্ডনে নতুন টক্সিটি চার্জও নির্ধারিত হয়েছে দশ পাউন্ড করে। যা প্রয়োগ করা হবে ২০০৬ সালের আগে রেজিস্ট্রেশন করা ডিজেল ও পেট্রোল চালিত গাড়ীর ক্ষেত্রে।
২.কার্বন নি:সরণ পরীক্ষা করে দেখুন
নতুন গাড়ি কেনার সময় বা গাড়ীর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো যখন দেখবেন তখন দেখুন নিঃসরণ হার কেমন। সবচেয়ে কম নিঃসরণ হয় এমন গাড়িই পরিবেশের জন্য ভালো। যুক্তরাজ্যে ডিজেল চালিত গাড়ী কমেছে চল্লিশ ভাগ এবং সরকার বলছে ২০৪০ সাল নাগাদ ডিজেল চালিত কার ও ভ্যান বিক্রয় বন্ধ করে দেয়া হবে।
৩. ইলেকট্রিক কার
সরকার আশা করছে সারাবিশ্বেই সামনে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়বে আগামী দশকে। ২০৪০ সাল থেকে শুধু পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ি আর বিক্রি হবেনা যুক্তরাজ্যে। তারও এক দশক পর সব চলবে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। এ মুহূর্তে সেখানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি চলছে। রাজ্যটির লক্ষ্য হলো ২০২৫ সাল নাগাদ তার রাস্তায় থাকবে প্রায় পনের লাখ গাড়ি রাস্তায় থাকবে যেগুলো থেকে কার্বন নিঃসরণ হবেনা।
৪.রাইড শেয়ারিং
বিশ্বের বহু জায়গায় আপনি এখন আপনার ভ্রমণকে অন্য কারও সাথে শেয়ার করতে পারেন যেটি কার্বন নিঃসরণ কমাবে। বহু প্রযুক্তি কোম্পানি এ ধরনের অফার দিচ্ছে যেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই আপনি অন্যের সাথে যানবাহনে যেতে পারেন। এটায় খরচও তুলনামূলক কম। আর আমেরিকাতে তো রাস্তায় রাইড শেয়ারিং যানবাহনের জন্য আলাদা লেনই আছে মোটরওয়েতে।
৫. নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদন
আপনি কখনো বাসায় সোলার প্যানেল লাগানোর কথা ভেবেছেন?
এটা দীর্ঘমেয়াদে আপনার জ্বালানি খরচ কমাতে পারে।
কেউ দরকারের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সেটি গ্রিডে দিয়ে বোনাসও নিতে পারে।
৬. বাড়িতে ব্যাটারি
ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি থাকলে এটা জ্বালানি জমা রাখার সুযোগও দিয়ে থাকে।
ভবিষ্যতে জ্বালানি কোম্পানি গুলো ভেহিকল টু গ্রিড প্রযুক্তি আনার বিষয়টি খুঁজছে। অর্থাৎ আপনি ব্যাটারিতে জ্বালানি সঞ্চিত রাখতে পারেন এবং পরে গ্রিডে বিক্রয়ও করতে পারেন। ক্যালিফোর্নিয়াতে নতুন বাড়িঘর হচ্ছে সোলার প্যানেলসহ এবং সেখানে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং পয়েন্টও থাকবে।
৭. বাড়িতে জ্বালানি সঞ্চয়
সারাবিশ্বেই জ্বালানি খরচ বাড়ছে ঘরবাড়ির। যুক্তরাজ্যেই এক দশকে এটি দ্বিগুণ হয়েছে।
খরচ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে কাজে দিতে পারে স্মার্ট মিটার যা থেকে ডিজিটালি সঠিক রিডিং পাওয়া যাবে।
এছাড়া আরও ছোটও কিছু পদক্ষেপও খরচ কমিয়ে আনতে পারে। জ্বালানি ব্যবহার হয় এমন সব কিছু সবসময় চালিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। টিভি দেখছেননা যখন সংযোগটিই বন্ধ করে রাখুন। অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে।
পরিবেশ
ছবিতে গ্রাম বাংলার খালে-বিলে মাছ ধরার মুহূর্তগুলো
শীতকালে খাল-বিলের পানি কমে যাওয়ায় গ্রাম-গঞ্জে বেশ ঘটা করে মাছ ধরতে দেখা যায়। বিবিসি প্রবাহ টিভি অনুষ্ঠানের জন্য আপনাদের কাছে এমন ছবি চাওয়া হয়েছিল। বাছাই করা কিছু ছবি নিয়ে আমাদের এই ফটো গ্যালারি।
পরিবেশ
মাটির অম্লতা বেড়েছে, কমেছে ফসলের উৎপাদন
- ৪৫.৬৭ শতাংশ জমির মাটিরই অম্লতা বেশি
- অম্লতা বেশি হলে মিলবে না কাঙ্ক্ষিত ফলন
- দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে
- সমাধানে ডলোচুন প্রয়োগের সুপারিশ
দেশের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। ফসল উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একদিকে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে না, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বেড়ে হুমকিতে পড়বে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রাক্কালে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
অম্ল মাটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গঙ্গা অববাহিকা ছাড়া দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। অম্লতা যত বাড়বে, ফসলের উৎপাদনও তত কমবে। মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বেশি হলে গম, ভুট্টা, আলু, সবজি, ডালসহ রবি শস্যে কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।’
মাটির গুণগত মান নিয়ে গবেষণা করে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। সংস্থাটির অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আবাদযোগ্য জমিতে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে অধিক অম্ল থেকে অত্যধিক অম্ল জমির পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ, আর ২০২০ সালে অম্লতার পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। মাটিতে অম্লতা বাড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার, ক্যালসিয়ামসহ ক্ষারীয় উপাদান হ্রাস, এক জমিতে অধিক চাষাবাদ, ফসল তোলার পর গাছ খেতের মাটির সঙ্গে মিশতে না দিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
গবেষকদের তথ্যমতে, মাটির অম্লত্ব কিংবা ক্ষারীয় অবস্থার ওপর ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন অনেকাংশে নির্ভর করে। অম্লতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয় মাটির পিএইচ নির্ণয়ের মাধ্যমে। পিএইচ মান ৪ দশমিক ৫ এর নিচে হলে সেই মাটিকে অত্যধিক অম্ল, ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ পর্যন্ত অধিক অম্ল, ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ হলে মৃদু অম্ল এবং ৬ দশমিক ৬ থেকে ৭ দশমিক ৩ এর মধ্যে হলে তাকে নিরপেক্ষ মাটি বলা হয়। ফসলের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ ধরা হয় ৬ দশমিক ৫।
এসআরডিআইয়ের গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মোট ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির মাটি অত্যধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ এর নিচে) এবং প্রায় ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমির মাটি অধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৫.৫)। অর্থাৎ মোট আবাদি জমির প্রায় অর্ধেকের (৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। অধিক অম্ল মাটিতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও মলিবডেনামের স্বল্পতা এবং অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের আধিক্য থাকায় ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং বরেন্দ্র ও মধুপুর গড় অঞ্চলের অধিকাংশ মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। এসব অঞ্চলের কৃষিজমি থেকে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসআরডিআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. নূরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জমিতে দিন দিন অম্লতার পরিমাণ বাড়বে। সার ব্যবহারে কৃষকের খরচ বাড়বে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।
মাটির অম্লতা কমিয়ে আনতে জমিতে ডলোচুন ব্যবহার ভালো সমাধান হতে পারে বলে এই মৃত্তিকাবিজ্ঞানী জানান। তিনি বলেন, এ জন্য সাধারণত প্রতি শতাংশ জমিতে ৪ কেজি থেকে ৮ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে মাটির বুনটের ওপর নির্ভর করে ডলোচুন প্রয়োগের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। তা ছাড়া জমিতে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
পরিবেশ
হলুদ রঙের ব্যাঙ দেখেছেন কখনো?
ব্যাঙের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জানি না। তবে প্রকৃতিতে কয়েক ধরনের ব্যাঙ তো দেখেছি। তার মধ্যে কুনো ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ- এরকম কত ব্যাঙের নাম শুনেছি। কিন্তু কখনো হলুদ রঙের ব্যাঙ দেখেছি বলে মনে হয় না। এবার সেই হলুদ রঙের ব্যাঙই সামনে এসেছে।
জানা যায়, এমনই অবাক করা দৃশ্য চোখে পড়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুরে। ইতোমধ্যে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাতে হাতে। সেখানকার বন দফতরের কর্মকর্তা প্রবীন কুমার কাসোয়ান সেই ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি হলুদ ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে পরিচিত স্বরে ডাকছে।
এ ব্যাপারে প্রবীন কুমার কাসোয়ান বলেন, ‘এটি কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বর্ষাকালে এভাবেই রং পরিবর্তন করে পুরুষ ব্যাঙগুলো। এর কারণ হচ্ছে- ওরা এভাবেই নারী ব্যাঙদের আকৃষ্ট করে। বর্ষাকালে প্রথম বৃষ্টির সময় এ ব্যাঙদের হলুদ হতে দেখা যায়। গ্রামের মাঠে এমন দৃশ্য দেখা যায়।’
বন দফতর জানায়, এ ব্যাঙগুলোকে ‘ইন্ডিয়ান বুল ফ্রগ’ বা ‘ইন্দাস ভ্যালি বুল ফ্রগ’ বলা হয়। জেএমই সায়েন্স জানায়, বর্ষাকালে এভাবেই রং পরিবর্তন করে বুল ফ্রগ। এরা যখন সবুজ থেকে হলুদে রং পরিবর্তন করে; তখন এদের ভোকাল স্যাকগুলো নীল রং ধারণ করে। মনে করা হয়, উজ্জ্বল রঙের পুরুষ ব্যাঙ বেশি আকর্ষণীয় নারী ব্যাঙের কাছে।
ভারতের এ বুল ফ্রগ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও দেখা যায়। এরা ভেজা জায়গায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। তবে তা উপকূল নয়। এরা পছন্দ করে পুকুরের মত জলাশয়। তবে স্বাভাবিকভাবেই এমন দৃশ্য অবাক করেছে অনেককে। কিন্তু এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
পরিবেশ
২০ বছরে ২০ লাখ ইঁদুর নিধন
জানা যায়, প্রতিদিন একটি ইঁদুর ২৭ গ্রাম খাবার খায়। এছাড়া, প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাবার নষ্ট করে।
২০ বছরে ২০ লাখ ইঁদুর নিধন করেছেন মাগুরার কাঠমিস্ত্রী আব্দুল হান্নান। আর এর মাধ্যমে তিনি উপকার করে যাচ্ছেন কৃষকদের।
হান্নানের গল্পের শুরুটা এমন- একবার ১৫ মণ ধান কিনে ঘরে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু মাস পাঁচেক পরে মেপে দেখলেন সেখানে চার মণ ধান কম! বাড়িতে ইঁদুরের আনাগোনা দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন তিনি।
এরপর থেকে তার মাথায় ঘুরতে লাগলো ইঁদুর নিধনের পরিকল্পনা। কাঠমিস্ত্রির কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দিন কয়েকের চেষ্টায় একটি ইঁদুর মারার যন্ত্র বানিয়েও ফেলেন হান্নান। যন্ত্রের কার্যকারিতা বোঝা গেল মাত্র একমাসেই। এই ব্যবধানে তার বাড়ি হয়ে গেলো ইঁদুর মুক্ত।
এ সাফল্য হান্নানকে ভাবালো অন্যভাবে। এবার তিনি শুরু করলেন এলাকার বাড়ি ও ফসলের মাঠগুলোর ইঁদুর নিধন। ৬ মাসের মধ্যে তার গ্রাম বড়খড়ি হলো ইঁদুর মুক্ত। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দূর-দূরান্ত থেকে ডাক আসতে শুরু কর হান্নানের। এখন হান্নানের এ সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মাগুরা জেলায়।
হান্নান জানান, ২০১০ সালে সে ১ লাখ ৯০ হাজার ইঁদুর মেরে পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। পরের বছর আবারও তার এ সম্মান মেলে ২ লাখ ১০ হাজার ইঁদুর নিধনের জন্য। গত ২০ বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ ইঁদুর নিধন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
হান্নানের গ্রাম বড়খড়ির বাসিন্দা সাগর হোসেন বলেন, হান্নান একেবারেই নিঃস্বার্থভাবে সমাজের বিশেষ করে কৃষকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুধু নিজ গ্রাম নয়, যখন যেখান থেকে ডাক আসে, ছুটে যান হান্নান।
তিনি আরও বলেন, কোনও অ্যাকাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও কাঠমিস্ত্রী হান্নান সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ। পুরো কাজটাই তিনি করেন কোনও রকম বিনিময় ছাড়া। নিজের বানানো যন্ত্রগুলোও তিনি রেখেছেন সবার জন্য উন্মুক্ত।
এ বিষয়ে হান্নান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, এ কাজ আমার পেশা নয়, নেশা। সমাজের মানুষের জন্য সামান্য উপকারে আসতে পারলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। এভাবেই ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করে মাধ্যমে সমাজের উপকার করতে চাই।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হান্নানের অনেক বড় কাজ করছে। প্রতিদিন একটি ইঁদুর ২৭ গ্রাম খাবার খায়। এছাড়া, প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাবার নষ্ট করে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারাদেশে প্রতিবছর ইঁদুর ৫৪ লাখ মানুষের খাদ্যশস্যের ক্ষতি করে।
তাই হান্নানের এমন উদ্যোগকে উৎসাহিত করে দেশব্যাপী তার উদ্যোগের প্রচারণা প্রয়োজন বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব।
চীন
করোনাভাইরাস মহামারির উৎস কি চীনে চোরাচালান হওয়া প্যাঙ্গোলিন থেকে?
প্যাঙ্গোলিন নামে একটি প্রাণী যা চোরাই পথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয় – তার দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড নাইনটিনের সাথে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’
প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে – যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সাথে সম্পর্কিত।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মত জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তারা এটাও বলছেন যে , মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।
“যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা আরো নিশ্চিত হবার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী-থেকে-মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত” – বলেন ড. ল্যাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সাথে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরো বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ – যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে – তার সাথে এর মিল নেই।
সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলছেন,”করোনাভাইরাসের সাথে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।”
ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং তার পর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো – তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
খুব সম্ভবত: হর্সশু প্রজাতির বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন – দুধরণের প্রাণীই এতে জড়িত কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা।
ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে – এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল – নাকি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?
প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
চীন অবশ্য কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার কথায়, কোভিড নাইনটিনের উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোন প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসই ছিল, বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোন প্রাণী থেকে এসেছিল।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
কৃত্রিম মাংসের বার্গার, যা থেকে ‘রক্ত’ও ঝরে – আর বেশি দূরে নয় – দা এগ্রো নিউজ
ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছ – দা এগ্রো নিউজ
দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন