ফল
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে আমড়ার ভালো ফলন
পিরোজপুরের নেছারাবাদে এ বছর আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা আর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী ও চাষিদের। ভালো ফলনেও আমড়ার উপযুক্ত দাম দাম না মেলায় বরাবরই লাভের মুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও চাষীরা।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলে আমড়ার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। আমড়ার ভালো ফলনেও এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বা সরকারের চেষ্টায় কোনো হিমাগার গড়ে না ওঠায় মৌসুমে চিন্তিত থাকেন দুই সহস্রাধিক আমড়া চাষি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা।
এলাকাবাসী জানায়, নেছারাবাদের আমড়া দেশব্যাপী বরিশালের আমড়া নামে পরিচিত। আমড়া চাষ এ অঞ্চলের মানুষের অনেক পুরনো পেশা। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের বাড়ির সামনে একটি দুইটি আমড়া গাছ রয়েছে। আশির দশকের মাজামাঝি সময় আটঘর কুড়িয়ানাতে বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ শুরু হয়।
পরে উপজেলা জলাবাড়ী বলদিয়া দৈহারী সমেদাকাঠি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে শুরু হয় আমড়া চাষ। বাংলা ভাদ্র আশ্বিন ও কার্তিক এই তিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন উপজেলার ভিবিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রাকে করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে এই বরিশালের আমড়া বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। চাষিরা আমড়া পেড়ে নৌকায় ভরে ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে আসেন। আবার কোনো চাষী আগাম আমড়া ক্ষেত বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা আমড়া কিনে ক্যারেট ও বস্তায় ভরে নৌ ও স্থলপথে পাঠান দূরদূরান্তে। সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আমড়া কিনে ছড়িয়ে দেন সারা দেশে।
মৌসুমে প্রতিদিন ৪৫-৫০ টন আমড়া যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর আমড়া সংরক্ষনের অভাবে প্রতিটি ব্যবসায়ীর অনেক আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কুড়িআনার আমড়া ব্যবসায়ী তাপষ জানান, এ বছর আমড়ার ফলন মোটামুটি ভালো। তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় আমড়া পাঠান। মৌসুমের শুরুর দিকে আমড়ায় খুব লোকসান হয়েছে। শেষ সময়ে আমড়ার দাম একটু বেশি। তবে গেল বারের তুলনায় এ বছর আমড়ার দাম কম। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ি আমরা পাঠাতে হয়।
তাপষ বলেন, বাজারে চাহিদা কম থাকলে ব্যবসায় তখন লোকসান গুনতে হয়। যদি আমড়া সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যেগে কোন হিমাগার গড়ে উঠত তাহলে আমড়া থেকে সবাই লাভবান হত। তিনি বলেন, তারা বস্তা ও ক্যারেট করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টন আমড়া রাজধানীতে চালান করেন। প্রতিমন আমড়া তারা এক হাজার থেকে চৌদ্দশ টাকা দরে কেনেন। তারপর সেগুলো আকার ও সাইজ অনুযায়ী বস্তা ভোজাই করে ট্রাকযোগে রাজধানীতে চালান করেন। এক মন আমড়া রাজধানীতে পাঠাতে খরচ পড়ে ১৫০ টাকা বলে জানান তিনি।
আটঘর কুড়িয়ানার ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, স্বরূপকাঠি আটঘর কুড়িয়ানার আমড়ার খ্যাতি দেশজুড়ে। এখানকার আমড়া বরিশালের আমড়া নামেই পরিচিত। আমড়া চাষে ইউনিয়নের সহস্রাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা আর হিমাগারের অভাবে আমড়ায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা প্রতিবছরই কম-বেশি লোকসান গুণে থাকেন।
আঙিনা কৃষি
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting)
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring)
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management)
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
অন্যান্য
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
- ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।
গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ
- গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
- উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।

গম চাষ
- গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।

ডালশস্য
- মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।


তৈলবীজ চাষ
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবজি চাষ
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।



ফল চাষ
- আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মৎস্য চাষ
- পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
- মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
- গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।
মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
ফল
আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও দমন ব্যবস্থাপনা: ফলন বাড়িয়ে লাভবান হওয়ার সেরা কৌশল

আম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল। এর চাষে নানা রকম ক্ষতিকারক পোকামাকড় সমস্যা সৃষ্টি করে, যা ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকাগুলো এবং তাদের দমন ব্যবস্থাপনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
আমের ক্ষতিকারক পোকাসমূহ ও তাদের ক্ষতি

ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer)
ক্ষতির ধরন:
- পোকা আমের ভেতরে ঢুকে ফল নষ্ট করে।
- আক্রান্ত ফল পচে যায় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করুন।
- প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডেল্টামেথ্রিন বা সাইপারমেথ্রিন স্প্রে করুন।
- ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করুন।
মাকড়সা পোকা (Red Spider Mite)
ক্ষতির ধরন:
- পোকা পাতার রস শোষণ করে এবং পাতায় সাদা দাগ সৃষ্টি হয়।
- গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন।
- প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অ্যাবামেকটিন স্প্রে করুন।
- নিয়মিত সেচ দিয়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখুন।

আমের গুটি ঝরানো পোকা (Mango Hopper)
ক্ষতির ধরন:
- গাছের ফুলে আক্রমণ করে মুকুল ঝরিয়ে দেয়।
- ফলে ফলন কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখুন।
- প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে করুন।
- বাগানে অতিরিক্ত সেচ এড়িয়ে চলুন।

আম ছিদ্রকারী পোকা (Stem Borer)
ক্ষতির ধরন:
- গাছের কাণ্ডে ছিদ্র করে এবং রস শোষণ করে।
- গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং ফলন কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- গাছের ছিদ্রযুক্ত অংশে কীটনাশক (মোনোক্রোটোফস) ঢেলে মাটি চাপা দিন।
- গাছের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf Webber)
ক্ষতির ধরন:
- পাতা খেয়ে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
- গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন।
- বায়োলজিক্যাল কীটনাশক (বিটি) ব্যবহার করুন।
আম ছাতা পোকা (Mealy Bug)
ক্ষতির ধরন:
- পাতার রস শোষণ করে এবং কালো ফাঙ্গাস সৃষ্টি করে।
- গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- গাছের গোড়ায় আঠালো ব্যান্ড লাগান।
- প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডাইমিথোয়েট স্প্রে করুন।
- বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে লেডিবার্ড বিটল ব্যবহার করুন।

পোকা দমনের জন্য সাধারণ নির্দেশনা
- বাগানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল এবং পাতাগুলো সরিয়ে ফেলুন।
- বায়োলজিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন।
- প্রয়োজন অনুযায়ী রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন। তবে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডোজ এবং সময়ের প্রতি সতর্ক থাকুন।
আমের ক্ষতিকারক পোকা দমনের উপকারিতা
- গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ফলের গুণগত মান এবং উৎপাদন বাড়ে।
- বাজারে আমের চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধি পায়।
- গাছ দীর্ঘস্থায়ী ও স্বাস্থ্যবান থাকে।
আমের বাগানে ক্ষতিকারক পোকামাকড় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ফলনের পরিমাণ ও গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব। উপরে বর্ণিত দমন ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করে পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর পদ্ধতিতে পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলুন এবং লাভবান হোন।
ফল
বাড়িতে সহজেই আমের পরিচর্যা: সুস্বাদু ফল পেতে সহজ ও কার্যকর উপায়

আসুন জেনে নেই বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে কিভাবে আমের চাষ করতে হবে।
আম একটি অতি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। আমকে সাধারণত ফলের রাজা বলা হয়। এই আম আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। আমগাছ সাধারণত খুব বড় হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাড়ির ছাদে অথবা উঠোনেও এই ফলের চাষ করা সম্ভব। আসুন জেনে নেই কিভাবে এই মধুর ফলটি আমাদের বাড়ির ছাদে চাষ করতে পারি।

আম চাষের জন্য কিভাবে টব/মাটি তৈরি করবেন
আম চাষের জন্য সর্বপ্রথম টবের মাটি তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ড্রামের জন্য সারমাটি তৈরি করতে হবে। টবে আম চাষের জন্য দোআঁশ মাটি সর্বোত্তম। টবের মাটির সাথে গোবর সার, কম্পোস্ট সার, এমওপি সার, টিএসপি সার হাড়ের গুড়া ম্যাগনেসিয়াম সালফেট পরিমাণ মত দিয়ে মিশ্রণ করে দিতে হবে। এসব সারমাটি ড্রামে ভরার আগে ড্রাম থেকে যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে সে জন্য ড্রামের তলায় ছিদ্র করে নিন। ছিদ্রের মুখে তিন দিকে পুরনো মাটির টব ভাঙা টুকরো
এমনভাবে দিন যাতে ছিদ্রের মুখ বন্ধ না হয়। এর ওপর আর একটা টুকরো দিয়ে ঢেকে পাতলা সরি করে খড় বিছিয়ে দিন। তারপর সারমাটি দিয়ে ড্রাম ভরে দিন।
আম চাষের জন্য কি ধরণের টব / পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন
বাড়ির ছাদে আম চাষের জন্য মাঝারি বা হাফ ড্রাম হলে ভালো হয়। এছাড়া মাটির বড় টবেও আমের চারা লাগাতে পারেন।
আমের জাত বাছাই করা
আমাদের দেশে অনেক জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশকিছু উন্নত জাতের আম আছে। যেমনঃ আম্রপালি, লতা, কেইট, বোম্বাই, সিন্দুরী, দশেরি, চৌষা, শ্রাবণী, , মলিস্নকা, নিলম ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে আম্রপালি জাতের আম খুব মিষ্টি ও বেশ কয়েক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়, গাছে ধরেও প্রচুর। এছাড়াও থাইল্যান্ড থেকে আসা ‘ডক মাই´ জাতটিও ড্রামে লাগাতে পারেন।

আমের চারা চাষ / রোপনের সঠিক সময়
আমের চারা রোপনের ক্ষেত্রে মূলত জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে চারা লাগান উত্তম। এছাড়া আম্রপালির চারা লাগানোর ক্ষেত্রে ভাদ্র-আশ্বিন মাস হলো উপযুক্ত সময়। এছাড়া ড্রামের মাঝখানে সোজা করে জুন-জুলাই মাসে আমের কলম পুঁতে দিন। তবে সেচ সুবিধা থাকলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।
কিভাবে আমের বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন
আমের চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । এবং লাগানোর পর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । চারা রোপন করা হলে চারাটিকে একটি সোজা কাঠি দিয়ে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । চারা গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে। টবের গাছটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রায় সারাদিন রোদ লাগে।
সঠিক নিয়মে আম চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল
টবে অথবা ড্রামে আমের চারা কলম লাগানোর পর পানি দেবেন। কলম যদি বেশি লম্বা হয় তাহলে মাটিতে লেগে গেলে আগা কেটে কিছুটা খাটো করে দিতে পারেন। ড্রাম ছাদের ওপর এমনভাবে রাখবেন যাতে ছাদ থেকে ড্রাম কিছুটা উঁচু বা ফাঁকা থাকে। তাহলে ছাদের কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও ড্রামের তলায় চার পাশে চারটি ইট দিয়ে উঁচু করে দিতে পারেন। ড্রামে ছয়-সাত বছর গাছ রাখার পর সেটা সরিয়ে নতুন গাছ লাগালে ভালো হয়।

আম চাষে সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ
আম চাষের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। চারা রোপণের পর প্রতি বছর গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। আমের চারা সঠিক মাপে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের মাত্রা বাড়াতে হবে। নির্ধারিত নিয়মে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব সার দিতে হবে। তাহলেই সঠিক ফলন পাওয়া যাবে।
আম গাছে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন
আম গাছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। তাঁর মধ্যে সর্বপ্রথম হল আমের মুকুল ঝরা ও গুটি ঝরা। এই রোগ দমন করতে প্লানোফিক্স হরমোন মুকুল বের হওয়ার ঠিক আগে ও ঠিক পরে দু´বার স্প্রে করতে পারেন। এ সময় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশকও ছিটাতে পারেন। এছাড়াও আম গাছে শোষক পোকা, থ্রিপস, ফলের মাছি ও ভোমরা পোকার আক্রমণে ফলন গুণগত মান হ্রাস পেতে পারে। তাই এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কিভাবে আমের বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন
দেখা যায় যে আমের জুন-জুলাইতে লাগানো কলম গাছে সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মুকুল আসবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথম বছর মুকুল না রেখে সব ভেঙে দেবেন। এবং পরের বছর আসা মুকুল রেখে দেবেন। তাতে দেখা যাবে যে আমের প্রচুর ফলন হয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে ড্রামের মাটিতে গোবর ও অন্যান্য সার দেবেন। বছরে একবার প্রতি ড্রামে চারটি করে ট্যাবলেট সার পুঁতে দিতে পারেন। ট্যাবলেট সার দিলে শুধু গোবর সার দেবেন, অন্য কোনো সার দেয়ার দরকার হবে না।
গাছের ভেতর যাতে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, রোগাক্রান্ত, শুকনা, মরা ও দুর্বল শাখাগুলো কেটে ফেলতে হবে।

কখন ও কিভাবে আম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন
আম হল গ্রীষ্মকালীন ফল। আমাদের দেশে সাধারণত জুন-জুলাইতে আম সংরক্ষন করা হয়। খেয়াল রাখবেন যখন আম তুলবেন তখন দু-তিনটি পাতাসহ বোঁটা কেটে তুলবেন। আম মূলত যখন বোঁটার নিচে ত্বকে সামান্য হলুদাভ রঙ ধারণ করে অথবা আধাপাকা আম যখন গাছ থেকে পড়া আরম্ভ করে তখই আম সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। পাকা আম খাওয়া ছাড়াও কাচা আম শুকিয়ে সংরক্ষন করা যায়।
কি পরিমাণ আম পাওয়া যাবে
একটি আম গাছ হতে বেশ কিছু আম পাওয়া যায়। তবে যদি সঠিকভাবে যত্ন করে গাছ করা যায় তবে একটি মাঝারি আকৃতির গাছ থেকে ১৫৫ থেকে ১৭০টি ফল পাওয়া সম্ভব।
আমের খাদ্য গুণাগুণ
আম একটি অতীব রসালো মিষ্টি ফল। এই অতীব সুস্বাদু ফলে অনেক খাদ্যগুনাগুন বিদ্যমান।
আমের অন্যান্য ব্যবহার
শুধুমাত্র আমকে পাকা খাওয়া নয় কাচা আম দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু আচার তৈরি করা হয়। এছাড়া আম দিয়ে জ্যাম জেলী ইত্যাদি তৈরি করা হয়। কাচা আম মাখিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া আম দিয়ে অনেক ধরণের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়।
ছাদকৃষি
ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়

এখন গ্রামে ও শহরে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিষমুক্ত ফল ও সবজি পেতে দেশের মানুষ ছাদ বাগানের দিকে ঝুঁকছে। ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। ফল হিসেবে জামরুল আমাদের দেশে জনপ্রিয়। খুব সহজে ছাদে জামরুল চাষ করা যায়। তাই জেনে নিন এ চাষ পদ্ধতি।
কাঁচা-পাকা সব অবস্থাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।
সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।
আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দো-আঁশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে।
সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারও মাটি ভরবেন।
মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমের দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে বছরের যেকোনো সময় জামরুল গাছ লাগানো যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে।
গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।
জামরুল গাছ ছাদে লাগানোর পরে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। নিয়তিম পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। তাইলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন