ফল
আম বাগানের আগাম পরিচর্যা: উৎপাদন বাড়ানোর কার্যকরী টিপস

আম একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফল, যা আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হয়। উচ্চ ফলন ও গুণগত মান বজায় রাখতে আম বাগানের আগাম পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিচর্যা সঠিকভাবে করলে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফলন বাড়ে এবং রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আম বাগানের আগাম পরিচর্যার ধাপসমূহ
জমি ও গাছের অবস্থা পর্যবেক্ষণ
- গাছের আশেপাশে জমি পরিষ্কার করুন এবং আগাছা অপসারণ করুন।
- গাছের ডালপালা, পাতা এবং গাছের গোড়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।
- মৃত বা রোগাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করুন।
মাটি পরীক্ষা ও সার প্রয়োগ
- মাটির পিএইচ স্তর পরীক্ষা করুন। আমের জন্য আদর্শ পিএইচ ৫.৫ থেকে ৭।
- মাটির উর্বরতা বাড়াতে জৈব সার (গোবর সার, কম্পোস্ট সার) প্রয়োগ করুন।
- ১৫ কেজি জৈব সার এবং ১ কেজি চুন প্রতি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করুন।
- রাসায়নিক সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সঠিক অনুপাতে প্রয়োগ করুন।
সেচ ব্যবস্থাপনা
- শীতকালে গাছে পানি কম প্রয়োজন হয়, তবে মাটিতে আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি।
- শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন অন্তর গাছে সেচ দিন।
- গাছে ফুল আসার সময় সেচ কমাতে হবে, কারণ অতিরিক্ত সেচ ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

ডালপালা ছাঁটাই
- রোগাক্রান্ত, শুকনো ও মৃত ডাল ছেঁটে ফেলুন।
- ছাঁটাইয়ের পর ক্ষতস্থানে বোর্দো মিশ্রণ (১%) প্রয়োগ করুন।
- ডাল ছাঁটাইয়ের ফলে গাছে নতুন ডাল গজায় এবং ফলনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কীটনাশক ও বালাইনাশক প্রয়োগ
- আমের মুকুল বা ফুল আসার আগে কীটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক সময়ে বালাইনাশক ব্যবহার করুন।
- পাউডারি মিলডিউ, অ্যানথ্রাকনোজ এবং ক্যানোকারপাস রোগের জন্য ১% বোর্দো মিশ্রণ স্প্রে করুন।
- আমের ঝিঁঝি পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে বায়ো-পেস্টিসাইড বা প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ব্যবহার করুন।
মালচিং ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
- গাছের গোড়ার চারপাশে মালচিং করুন, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- গাছের নিচে জমে থাকা আগাছা ও পচা পাতা পরিষ্কার করুন।

ফুল আসার জন্য বিশেষ যত্ন
- ফুল ফোটার সময় নাইট্রোজেন সার কম দিন এবং পটাশিয়াম সার বাড়ান।
- গাছে ফুল আসার সময় অতিরিক্ত পানি বা সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ
- আমের গুটিযুক্ত পোকা বা ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
- পোকা দমনে ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

আম বাগানের আগাম পরিচর্যার উপকারিতা
- গাছের ফুল ঝরে পড়া কমে যায়।
- রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
- গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।
- ফলের আকার, গুণগত মান ও স্বাদ উন্নত হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন সক্ষমতা বজায় থাকে।

আম বাগানের আগাম পরিচর্যা সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে করলে ফলনের পরিমাণ ও গুণগত মান উভয়ই বৃদ্ধি পায়। সঠিক পরিচর্যা আপনাকে শুধু ভালো ফলনই দেবে না, বরং এটি একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগেও রূপ নিতে পারে। কৃষকেরা এই পরামর্শগুলো মেনে চললে তাদের আম বাগান আরও সফল এবং লাভজনক হবে।
আঙিনা কৃষি
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার নিয়ম ও উপকারিতা: ঘরে বসেই ফলান সুস্বাদু আম

আজকাল শহুরে পরিবেশে জায়গার অভাবে অনেকেই ছাদে বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। আমের মতো সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ফলও এখন ছাদে চাষ করা সম্ভব। কলমের চারা ব্যবহার করে ছাদে আম চাষ করা সহজ, কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে আপনি ছাদেই ফলাতে পারবেন পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু আম।
আমের কলমের চারা: কেন এটি আদর্শ?
- আমের কলমের চারাগুলো সহজে বেড়ে ওঠে এবং দ্রুত ফল ধরে।
- এটি বীজ থেকে চাষ করা গাছের তুলনায় অধিক ফলনশীল।
- ছোট জায়গায় এবং টবে চাষের জন্য আদর্শ।

ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার ধাপসমূহ
সঠিক জায়গা নির্বাচন
- ছাদের এমন জায়গা বেছে নিন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছায়।
- ছাদটি এমন হতে হবে যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো।
টব বা ড্রামের প্রস্তুতি
- মাটি ধারণক্ষমতা ভালো এমন বড় টব বা ড্রাম ব্যবহার করুন।
- ১৮-২৪ ইঞ্চি গভীর এবং প্রশস্ত টব/ড্রাম বেছে নিন।
- টবের নিচে ছিদ্র রাখুন, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
মাটির মিশ্রণ তৈরি
- মাটির মিশ্রণে ৬০% দোআঁশ মাটি, ২০% জৈব সার (গোবর বা কম্পোস্ট) এবং ২০% বালি ব্যবহার করুন।
- মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য কিছু টিএসপি এবং পটাশ মিশিয়ে নিন।

চারা রোপণ
- ভালো মানের আমের কলমের চারা সংগ্রহ করুন, যেমন আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ইত্যাদি।
- চারার গোড়া শক্তভাবে মাটিতে পুঁতে দিন এবং মাটি চেপে দিন।
- রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
- চারার মাটি সব সময় আর্দ্র রাখুন, তবে পানি জমতে দেবেন না।
- গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন এবং শীতকালে ২-৩ দিন পর পর পানি দিন।
সার প্রয়োগ
- রোপণের এক মাস পর থেকে প্রতি মাসে জৈব সার প্রয়োগ করুন।
- গাছে ফুল আসার সময় পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
ছাঁটাই ও পরিচর্যা
- গাছের শুকনো ডাল এবং পাতাগুলো নিয়মিত ছাঁটাই করুন।
- গাছে রোগবালাই হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
কীটনাশক ব্যবহার
- পোকামাকড় দমনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
ফল সংগ্রহ
- কলমের চারা সাধারণত ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল ধরে।
- ফল পাকার পর সাবধানে সংগ্রহ করুন।

ছাদে আম বাগান করার উপকারিতা
সতেজ এবং বিষমুক্ত ফল
- নিজের বাগানের আম বিষমুক্ত ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
- বাজারের ফলের তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
জায়গার সঠিক ব্যবহার
- শহুরে ছোট জায়গাতেও ছাদে আম চাষ করা সম্ভব।
- এটি ছাদের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং পরিবেশ বান্ধব।
আর্থিক সাশ্রয়
- বাজার থেকে আম কেনার বদলে নিজের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা সাশ্রয়ী।
- দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ।
পরিবেশের জন্য উপকারী
- ছাদে গাছ থাকা মানে তাপমাত্রা কমানো এবং পরিবেশের জন্য কার্যকর।
- এটি বাড়ির বাতাসকে শীতল ও বিশুদ্ধ রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
- বাগান পরিচর্যা করা মানসিক চাপ কমায়।
- এটি একটি দারুণ শখ, যা আপনাকে সুস্থ রাখে।
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করা শুধু সহজ নয়, এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করলে আপনি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বিষমুক্ত আমের ফলন পেতে পারেন। তাই সময় নষ্ট না করে আজই আপনার ছাদে একটি আম বাগান গড়ে তুলুন এবং নিজের ফসলের আনন্দ উপভোগ করুন।
অন্যান্য
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

ফেব্রুয়ারি মাস কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফসলের যত্ন, বপন এবং রোপণ কার্যক্রম চালানো হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- জমিতে পানি সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
- ধানের চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন স্টেম বোরার (Stem Borer) এবং পাতামোড়া পোকার (Leaf Roller) আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধানের জমিতে প্রয়োজনীয় সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।

গম চাষ
- জমি আগাছামুক্ত রাখুন এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দিন।
- পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) এবং ব্রাউন রাস্ট (Brown Rust) রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

ডালশস্য
- মসুর, মুগ, এবং ছোলার ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পরে জমি পরিষ্কার করে পরবর্তী চাষের জন্য প্রস্তুত করুন।




তৈলবীজ চাষ
সরিষা ফসল সংগ্রহ
- সরিষার শুঁটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করুন।
- জমি পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।

সবজি চাষ
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, এবং মূলা সংগ্রহ করুন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, এবং করলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার এবং সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।




ফল চাষ
- আম, কাঁঠাল, এবং লিচু গাছের মুকুল রক্ষায় কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণ করুন।


মৎস্য চাষ
- পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং মাছের খাবার সরবরাহ করুন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় শুষ্ক খড় এবং কাঁচা ঘাস যোগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আয় বাড়ে। প্রতিটি কাজ সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমকে আরও সফল করে তোলা সম্ভব।
ফল
আম বাগানের আগাম পরিচর্যা

বাংলাদেশে যে ৭০টি ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় তার মধ্যে আম অন্যতম। মোট ফল চাষের ৪০ ভাগ জমিতে আম চাষ হলেও দিনদিন এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে ফলনের তারতম্য দেখা যায়। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে আমের ফলন অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি।
মাঘ মাস। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে মুকুল আসতে এখনো মাসখানেক দেরি। মাঘ শেষ হওয়া মাত্র ফাল্লুনের গরম বাতাসে প্রায় সকল আম গাছে মুকুল আসবে।
কিন্তু এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিদের আগাম আম বাগান পরিচর্যা।
মুকুল আসার আগ মুহূর্তে গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় চাষিরা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে সেচ, সার দিচ্ছেন। পোকা দমনে স্প্রে করছেন কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এতে করে ফলন ভাল আসবে। আর কিছুদিন আগে সামান্য পরিমাণ যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আম চাষিদের উপকার হয়েছে।
আমবাগানে সার প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি গাছে বছরে কি পরিমাণ সার দিতে হবে তা নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের উপর। গাছ বাড়ার সাথে সাথে সারের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বছর অনুযায়ী সারের পরিমাণ দেয়া হল-

গোবর সার দিতে হবে রোপণের ১ বছর পর ২০, রোপণের ২ বছর পর ২৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে ইউরিয়া রোপণের ১ বছর পর ২৫০, রোপণের ২ বছর পর ৩৭৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১২৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২৭৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। এমপি রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ২০০, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ১০০ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ২১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিপসাম রোপণের ১ বছর পর ১০০, রোপণের ২ বছর পর ১৭৫, প্রতিবছর বাড়াতে হবে ৭৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জিংক সালফেট রোপণের ১ বছর পর ১০, রোপণের ২ বছর পর ১৫, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ৫ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ১১০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। বোরিক এসিড রোপণের ১ বছর পর ৫, রোপণের ২ বছর পর ৭, প্রতি বছর বাড়াতে হবে ২ এবং ২০ বছর ও এর উর্ধ্বে ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
সব সার দু’কিস্তিতে প্রয়োগ করা ভাল। প্রথম অর্ধেক বর্ষার আগে এবং বাকিটা আশ্বিন মাসে অর্থাত্ বর্ষার পরে। যদি কোনো আমচাষি প্রথম কিস্তির সার প্রয়োগ না করেন তবে দ্বিতীয় কিস্তির সময় চাহিদার পুরো সারটাই প্রয়োগ করতে হবে। অনেক আমচাষি বাগানের ফজলি ও আশ্বিনা আম সংগ্রহ করার পর সার প্রয়োগ করেন যা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফলন্ত গাছে গুঁড়ি থেকে ২-৩ মিটার দূরত্বে ৩০ সে.মি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সে.মি. গভীর করে চক্রাকার নালা কেটে তার ভেতর রাসায়নিক ও জৈব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অথবা দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় সার ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাধারণত আমগাছে ফল আসার পর গাছগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে গাছের প্রয়োজন হয় খাদ্যের। সার দেয়ার পর বর্ষা শুরু হলে গাছ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য মাটি থেকে নিতে পারে।
আমবাগানে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে মাটিতে রস থাকলে সেচের দরকার হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, আমগাছে পরিবর্তিত বেসিন পদ্ধতিতে অর্থাত্ গাছের গোড়ার চারদিকে এক মিটার জায়গা সামান্য উঁচু রেখে দুপুরবেলা যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গায় একটি থালার মত করে বেসিন তৈরি করে সেচ দিলে পানির পরিমাণ কম লাগে এবং বেশির ভাগ পানি গাছ গ্রহণ করতে পারে। বেসিন পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হল গাছের গোড়া পরিষ্কার থাকে ফলে আগাছা জন্মাতে পারে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা জানান, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া ভাল থাকলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। এ বিষয়ে চাষিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় সে অনুযায়ী কাজ করছেন।
সেচ দেয়ার পর জায়গাটি কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিলে মাটিতে একমাস পর্যন্ত রস থাকবে। তবে আমগাছে ফুল আসার একমাস আগে সেচ না দেয়াই ভাল। এ সময় সেচ দিলে গাছে নতুন পাতা বের হবে এতে মুকুলের সংখ্যা কমে গিয়ে ফলন কমে আসবে।

আমবাগানে জৈব পদার্থের ঘাটতি থাকলে ধৈঞ্চার চাষ করতে হবে। এতে বাগানে জৈব পদার্থসহ অন্যান্য সার যোগ হলে মাটির উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমগাছে ২/৩ ধরনের পরগাছা দেখা যায়। ছোট গাছের চেয়ে বড় গাছে পরগাছার আক্রমণ বেশি হয়। পরগাছার বীজ আমগাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে এবং ডাল থেকে প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্যরস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরগাছার কোনো শেকড় থাকে না। শেকড়ের মত এক ধরনের হস্টোরিয়া তৈরি করে। ডাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বেশি বিস্তার লাভ করে।
আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্থানে রোগের আক্রমণ যাতে না হয় তার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল ফল আসার আগেই এ কাজটি করতে হবে।
আমগাছে শতভাগ মুকুল আসা ভাল না। এতে ফলন ব্যাহত হয়। তাই শতভাগ মুকুলায়িত আমগাছের চারদিক থেকে ৫০% মুকুল ফোটার আগেই ভেঙে দিতে হবে। এতে ভাঙা অংশে নতুন কুশি গজাবে এবং পরবর্তী বছরে ওই সব ডগায় ফুল আসবে, আম আসবে।
এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি

বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।



বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।

বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়

বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।

বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
ফল
কমলা চাষের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ: স্বাস্থ্যসম্মত এবং লাভজনক ফল উৎপাদনের সহজ উপায়

কমলা একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত। এটি কেবল সুস্বাদুই নয়, বরং স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পুষ্টিগুণ, চাহিদা এবং বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক একটি চাষ।
তাই, কমলা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন করলে কমলা চাষ থেকে অধিক ফলন এবং লাভ নিশ্চিত করা যায়।
আজ আমরা জানবো কমলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, ফসল তোলা এবং চাষের মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়।

কমলার পুষ্টিগুণ
কমলা এক ধরনের সাইট্রাস ফল, যা নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ। প্রতিটি কমলায় রয়েছে:
ভিটামিন সি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: দেহের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে।
ফাইবার: হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কম ক্যালোরি: ডায়েটের জন্য উপযুক্ত ফল।
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলায় প্রায়
- ক্যালরি: ৪৭
- কার্বোহাইড্রেট: ১১.৮ গ্রাম
- প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৪ গ্রাম

কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কমলা একটি সুপারফুড হিসেবে কাজ করে এবং এটি নিয়মিত খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কমলায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ঠান্ডা, সর্দি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ত্বক উজ্জ্বল রাখে: কমলায় উপস্থিত ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে।
ওজন কমাতে সহায়ক: কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বাড়ায়: ফাইবার সমৃদ্ধ কমলা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে: কমলায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস দেহে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।

কমলা চাষের উপকারিতা
উচ্চ বাজারমূল্য: কমলার চাহিদা সারাবছর থাকায় এটি বিক্রি করে ভালো আয় করা যায়। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে।
সহজ চাষ পদ্ধতি: কমলা চাষে খুব বেশি জটিলতা নেই এবং তুলনামূলক কম শ্রম প্রয়োজন।
দীর্ঘমেয়াদি আয়: একবার গাছ রোপণ করলে দীর্ঘদিন ধরে ফলন পাওয়া যায়।
উচ্চ ফলন: সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এক হেক্টর জমি থেকে প্রচুর পরিমাণ ফলন পাওয়া সম্ভব।
মাটি ও পরিবেশের উপযোগী: বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
অর্থনৈতিক লাভজনকতা: কমলা চাষের খরচ তুলনামূলক কম এবং লাভ বেশি। কৃষকরা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে যেমন- কমলার জুস, জ্যাম, মারমালেড ইত্যাদি বিক্রি করেও বাড়তি আয় করতে পারেন।

সার ব্যবস্থাপনা
কমলার ভালো ফলনের জন্য সঠিক সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির গুণাগুণ ও গাছের বৃদ্ধির পর্যায় অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
জৈব সার: গাছের গোড়ায় প্রতি বছর গোবর, কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগ করুন। প্রতি গাছের জন্য ১০-১৫ কেজি জৈব সার প্রয়োজন।
রাসায়নিক সার
নাইট্রোজেন (N): গাছের পাতা, ডালপালা বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন সার প্রয়োজন।
ফসফরাস (P): গাছের শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পটাশ (K): ফলের আকার বড় করা ও মিষ্টতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের সময় ও পরিমাণ:
গাছের বয়স | ইউরিয়া (N) | টিএসপি (P) | এমওপি (K) |
১-৩ বছর | ২০০-৩০০ গ্রাম | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম |
৪-৬ বছর | ৪০০-৫০০ গ্রাম | ৩০০-৩৫০ গ্রাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম |
৭ বছর ও তার বেশি | ৬০০-৭০০ গ্রাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম | ৬০০-৭০০ গ্রাম |
সার প্রয়োগের সময়: বর্ষাকালের আগে এবং ফলের মুকুল আসার সময়।
অপপ্রয়োগ এড়িয়ে চলুন: সার বেশি দিলে গাছের ক্ষতি হতে পারে।

সেচ ব্যবস্থাপনা
সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কমলার উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
সেচের সময় ও পরিমাণ: শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে গাছের গোড়ায় বেশি পানি প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সেচ পদ্ধতি: ড্রিপ সেচ পদ্ধতি কমলার চাষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি দেওয়া ভালো। জমিতে পানি জমে থাকা ক্ষতিকর।
পানি সংকটে করণীয়: গাছের গোড়ায় মালচিং করে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখুন।
আগাছা ব্যবস্থাপনা
আগাছা গাছের পুষ্টি ও পানি গ্রহণে বাধা দেয়। ফলে ফলন কমে যায়।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
হাতে তুলে পরিষ্কার: গাছের গোড়া ও চারপাশে আগাছা হাত দিয়ে তুলে ফেলুন।
মালচিং: জৈব মালচ যেমন খড়, পাতা বা কম্পোস্ট দিয়ে গাছের গোড়ায় ঢেকে রাখলে আগাছা কম গজাবে।
যন্ত্রের ব্যবহার: কৃষি যন্ত্র দিয়ে জমি পরিষ্কার করুন।
নির্বাচিত আগাছানাশক ব্যবহার: আগাছা খুব বেশি হলে হালকা মাত্রার আগাছানাশক ব্যবহার করা যায়।
সতর্কতা: আগাছানাশক ব্যবহারের সময় গাছের ক্ষতি যেন না হয় তা নিশ্চিত করুন।

ফসল তোলা
সঠিক সময়ে এবং পদ্ধতিতে কমলা সংগ্রহ করা হলে ফলের মান ভালো থাকে এবং সংরক্ষণে সুবিধা হয়।
ফসল সংগ্রহের সময়: ফুল ফোটার ৭-৮ মাস পর কমলা পরিপক্ক হয়। কমলার রঙ হালকা সবুজ থেকে হলুদ বা কমলা হলে তা সংগ্রহের উপযুক্ত।
ফসল তোলার পদ্ধতি: হাতে অথবা ধারালো কাঁচি দিয়ে কমলা সংগ্রহ করুন। ফলের গায়ে কোনো আঘাত লাগতে দেওয়া যাবে না। ফল সংগ্রহের পর পরিষ্কার করে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।
সংরক্ষণ: ফল ভালোভাবে শুকিয়ে ঠাণ্ডা এবং শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করুন। আধুনিক পদ্ধতিতে হিমাগারে কমলা দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায়।
কমলা চাষ একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ, যা সঠিক সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথ ফসল তোলার মাধ্যমে আরও সফল করা সম্ভব। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং রপ্তানির সম্ভাবনার কারণে এটি কৃষকদের জন্য একটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফসল হতে পারে। এখনই পরিকল্পনা করুন, সঠিক পদ্ধতিতে কমলা চাষ শুরু করুন এবং অধিক লাভের দিকে এগিয়ে যান।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন