পরিবেশ
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় ক্রমশ জনপ্রিয় হওয়া প্লগিং আসলে কী?
শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে দৌড়ানোর সময় রাস্তাঘাট থেকে ময়লা আবর্জনা জড়ো করছে মানুষ, এই বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রতি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
দৌড়ানো বা জগিং করার সময় স্বেচ্ছায় পরিবেশের আবর্জনা জড়ো করার এই ধারণাকেই বলা হচ্ছে প্লগিং।
স্টকহোমের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা শহরের পথেঘাটে জগিং করার জন্য তৈরী হচ্ছিলেন। শুধু জগিং নয়, তারা একসাথে প্লগিং করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
দলবেঁধে প্লগিং করার এই চলটা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সম্প্রতি।
জগিংয়ের পোশাকের সাথে একটি ব্যাগও বহন করবেন তারা যেন দৌড়ানোর সময় রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা তুলে ব্যগে নিতে পারেন।
প্লগিংয়ের উদ্ভাবন সুইডেনে হলেও এটি বর্তমানে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ধারণাটির উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার আলস্ট্রং বলছিলেন কীভাবে তিনি প্লগিং শুরু করলেন।
“ফিনল্যান্ডের একটি স্কি রিসোর্টে থাকার সময় আমি প্রথম সেখানকার রাস্তাঘাটের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা শুরু করি। তখন হেঁটে হেঁটেই ময়লা কুড়াতাম।”
এর কিছুদিন পর স্টকহোম এসে তিনি দেখেন যে সেখানেও রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে যা কেউ পরিষ্কার করে না। তখন নিজের শহর পরিষ্কার করার লক্ষ্যে একদিন নিজেই রাস্তা থেকে আবর্জনা তুলতে শুরু করেন তিনি।
মি. আলস্ট্রঙ বলেন, “একদিন জগিংয়ের সময় আমি একাই রাস্তায় ময়লা কুড়ানো শুরু করি। কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষজন বিষয়টি লক্ষ্য করে ও উৎসাহী হয়ে ওঠে।”
প্লগিংয়ের ধারণাটি জনপ্রিয়তা পায় খুবই দ্রুত। বর্তমানে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে প্লগিং গ্রুপ রয়েছে যারা জগিংয়ের সময় পথঘাটের আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
স্বাস্থ্যসচেতনদের মতে, এটি ব্যায়াম হিসেবেও ভাল কারণ এখানে একঘেয়েমির সুযোগ নেই।
সুইডেনের একজন পরিবেশবিদ এরিক হুস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো পরিবেশবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর তিনি যেখানেই যান, সেখানকার চারপাশ থেকে আবর্জনা তুলে পরিষ্কার করা শুরু করে দেন।
তিনি যেখানে যান সেখানেই ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা শুরু করেন। মানুষজন যদিও তার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তবে তিনি সেগুলো পাত্তা দেন না।
মি.হুস বলেন, পথেঘাটে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকার সমস্যাটা যতটা ছোট মনে হয় আসলে বিষয়টি ততটা ছোট নয়। গবেষণা অনুযায়ী সমুদ্রের তলদেশের ৮৫ ভাগ আবর্জনাই ভূপৃষ্ঠ থেকে তৈরি হয় আর এই আবর্জনার সিংহভাগই প্লাস্টিক।
এর মধ্যে অতি ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীদের মাধ্যমে অনেক সময় আমাদের দেহে ফেরত আসে এবং বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
তাই মি.হুসের মতে এই আবর্জনা সমুদ্রে পৌঁছোতে দেয়ার আগেই পরিষ্কার করলে তা বেশি কার্যকর হবে।
প্লগিংয়ের আবিষ্কারক মি. আলস্ট্রংয়ের মতে, “সভ্য সমাজে আবর্জনার কোনো জায়গা নেই। আর সভ্য সমাজের সদস্য হিসেবে, আমাদের তৈরি করা জঞ্জাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদেরই।”
পরিবেশ
মাটির অম্লতা বেড়েছে, কমেছে ফসলের উৎপাদন
- ৪৫.৬৭ শতাংশ জমির মাটিরই অম্লতা বেশি
- অম্লতা বেশি হলে মিলবে না কাঙ্ক্ষিত ফলন
- দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে
- সমাধানে ডলোচুন প্রয়োগের সুপারিশ
দেশের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। ফসল উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একদিকে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে না, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বেড়ে হুমকিতে পড়বে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রাক্কালে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
অম্ল মাটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গঙ্গা অববাহিকা ছাড়া দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। অম্লতা যত বাড়বে, ফসলের উৎপাদনও তত কমবে। মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বেশি হলে গম, ভুট্টা, আলু, সবজি, ডালসহ রবি শস্যে কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।’
মাটির গুণগত মান নিয়ে গবেষণা করে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। সংস্থাটির অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আবাদযোগ্য জমিতে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে অধিক অম্ল থেকে অত্যধিক অম্ল জমির পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ, আর ২০২০ সালে অম্লতার পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। মাটিতে অম্লতা বাড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার, ক্যালসিয়ামসহ ক্ষারীয় উপাদান হ্রাস, এক জমিতে অধিক চাষাবাদ, ফসল তোলার পর গাছ খেতের মাটির সঙ্গে মিশতে না দিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
গবেষকদের তথ্যমতে, মাটির অম্লত্ব কিংবা ক্ষারীয় অবস্থার ওপর ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন অনেকাংশে নির্ভর করে। অম্লতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয় মাটির পিএইচ নির্ণয়ের মাধ্যমে। পিএইচ মান ৪ দশমিক ৫ এর নিচে হলে সেই মাটিকে অত্যধিক অম্ল, ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ পর্যন্ত অধিক অম্ল, ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ হলে মৃদু অম্ল এবং ৬ দশমিক ৬ থেকে ৭ দশমিক ৩ এর মধ্যে হলে তাকে নিরপেক্ষ মাটি বলা হয়। ফসলের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ ধরা হয় ৬ দশমিক ৫।
এসআরডিআইয়ের গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মোট ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির মাটি অত্যধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ এর নিচে) এবং প্রায় ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমির মাটি অধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৫.৫)। অর্থাৎ মোট আবাদি জমির প্রায় অর্ধেকের (৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। অধিক অম্ল মাটিতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও মলিবডেনামের স্বল্পতা এবং অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের আধিক্য থাকায় ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং বরেন্দ্র ও মধুপুর গড় অঞ্চলের অধিকাংশ মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। এসব অঞ্চলের কৃষিজমি থেকে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসআরডিআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. নূরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জমিতে দিন দিন অম্লতার পরিমাণ বাড়বে। সার ব্যবহারে কৃষকের খরচ বাড়বে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।
মাটির অম্লতা কমিয়ে আনতে জমিতে ডলোচুন ব্যবহার ভালো সমাধান হতে পারে বলে এই মৃত্তিকাবিজ্ঞানী জানান। তিনি বলেন, এ জন্য সাধারণত প্রতি শতাংশ জমিতে ৪ কেজি থেকে ৮ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে মাটির বুনটের ওপর নির্ভর করে ডলোচুন প্রয়োগের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। তা ছাড়া জমিতে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
পরিবেশ
ইতিহাসে প্রথমবার অ্যান্টার্কটিকায় ২০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা
পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে বরফাচ্ছাদিত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সম্প্রতি অঞ্চলটির একেবারে উত্তর প্রান্তে সেমোর দ্বীপে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
বৃহস্পতিবার ব্রাজিলিয়ান গবেষক কার্লোস শায়েফার বার্তা সংস্থা এএফপি’কে জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মহাদেশটিতে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর রেকর্ড করা হয়েছে। ওই দিন সেখানে তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ২০ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, আমরা আগে কখনোই অ্যান্টার্কটিকায় এত বেশি তাপমাত্রা দেখিনি। এর আগে সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে এটিকে এখনই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব বলতে রাজি নন এ গবেষক। কারণ, এটি খুবই স্বল্প সময়ের তাপমাত্রা ছিল, স্থায়ী নয়। কার্লোসের মতে, ওই এলাকায় ব্যতিক্রম কিছু ঘটছিল, এটা তার সংকেত মাত্র।
এর মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই আর্জেন্টিনার জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছিল, তারা আর্জেন্টাইন অ্যান্টার্কটিকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। এর আগে ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পাওয়া গিয়েছিল ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ।
গত মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত এক দশক ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম সময়। এরমধ্যে ২০১৬ সালের তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি, এরপরেই উষ্ণতম বছর ছিল ২০১৯। ২০২০ সালেও সেই ধারা চলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, গত মাস এযাবৎকালের সবচেয়ে উষ্ণতম জানুয়ারি হিসেবে রেকর্ড গড়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর দুই প্রান্তের বরফ গলে যাচ্ছে। এতে উপকূলীয় দেশগুলোর বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাবে, বিপন্ন হবে প্রাকৃতিক পরিবেশ। ঘরছাড়া হবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
পরিবেশ
ধূমপান ছাড়লে ‘বিস্ময়করভাবে’ সেরে ওঠে ফুসফুস
ধূমপানের ফলে ফুসফুসের পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেই অবস্থা থেকে আবারো সুস্থ পরিস্থিতিতে যেতে ফুসফুসের প্রায় ‘জাদুকরী’ ক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে শুধুমাত্র ধূমপান ছাড়ার পরই ফুসফুসের সেই ক্ষমতা কাজ করে।
ধূমপানের কারণে ফুসফুসের যেসব পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি করে, সেসব পরিবর্তনকে স্থায়ী মনে করা হতো এবং ধারণা করা হতো যে ধূমপান ছাড়ার পরও সেসব পরিবর্তন টিকে থাকবে।
কিন্তু নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া ফুসফুসের কয়েকটি কোষই পরবর্তীতে ফুসফুসকে আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখে।
টানা ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন এক প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার পর যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তাদের ফুসফুসের ক্ষেত্রেও এই বিষয় দেখা গেছে।
সিগারেটে থাকা হাজার ধরণের রাসায়নিক ফুসফুসের কোষের ডিএনএকে পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে সুস্থ থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে পরিবর্তন করে।
সাম্প্রতিক গবেষণাটিতে প্রকাশিত হয়েছে যে ধূমপায়ীদের ফুসফুসে ক্যান্সারের উপস্থিতি পাওয়ার আগে থেকেই ফুসফুসের কোষ ব্যাপকহারে পরিবর্তিত হতে থাকে।
ধূমপায়ীদের শ্বাসনালী থেকে নেয়া কোষের অধিকাংশই ধূমপানের ফলে পরিবর্তিত হয়েছে বলে দেখা গেছে। কোনো কোনো কোষে ১০ হাজার পর্যন্ত জিনগত পরিবর্তনও লক্ষ করা গেছে।
“এই পরিবর্তনগুলোকে ছোট আকারের টাইম বোমার সাথে তুলনা করতে পারেন। পরবর্তী আঘাতের সাথে সাথেই হয়তো এটি ক্যান্সারে রুপান্তরিত হবে”, ডক্টর কেট গাওয়ার্স নামের একজন গবেষক বলেন।
তবে এরকম ক্ষেত্রেও অল্প কিছু সংখ্যক কোষ অপরিবর্তিত থেকে যায়।
ধূমপানের কারণে হওয়া জিনগত পরিবর্তন ঐ কোষগুলো কীভাবে এড়িয়ে গেলো, তা পরিস্কার নয়।
কেউ যখন ধূমপান ছেড়ে দেয়, তখন ঐ অপরিবর্তিত কোষগুলো সংখ্যায় বাড়তে থাকে এবং ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলোকে প্রতিস্থাপিত করতে থাকে।
যেসব মানুষ ধূমপান ত্যাগ করে, তাদের ৪০% পর্যন্ত কোষের গঠন কখনো ধূমপান না করা মানুষের কোষের গঠনের মত হয়ে যায়।
স্যাঙ্গার ইন্সটিটিউটের ডক্টর পিটার ক্যাম্পবেল বিবিসিকে বলেন, “আমরা এই অবিষ্কারের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।”
“কিছু কোষ থাকে যেগুলো, অনেকটা জাদুকরীভাবেই, শ্বাসনালীর প্রান্তগুলোকে পুনর্গঠণ করে।”
“সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ৪০ বছর ধূমপান করার পরও যারা ধূমপান ছেড়েছে তাদের ক্ষেত্রেও অপরিবর্তিত কোষের মাধ্যমে সুস্থ কোষ পুনঃনির্মাণের ঘটনা ঘটেছে।”
ধূমপান ছাড়ার অনুপ্রেরণা
ধূমপান ছাড়লে ফুসফুসের কতটুকু অংশ আসলে আগের মত অবস্থায় ফেরত যায়, তা জানতে পরীক্ষা করতে হবে বিজ্ঞানীদের। গবেষণাটিতে মূলত মূল শ্বাসনালীগুলোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। অ্যালভেওলি নামক ফুসফুসের ক্ষুদ্র পথগুলোর বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি, যেগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের গ্রহণ করা বাতাসের অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে।
প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে ৪৭ হাজার ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী পাওয়া যায়। এই ক্যান্সার আক্রান্তের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ধূমপানের কারণে ঘটে।
গবেষণায় এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, ধূমপান ছাড়ার দিন থেকেই ফুসফুস ক্যান্সারের ঝূঁকি কমতে শুরু করে।
এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় যে, ধূমপান ছাড়ার সাথে সাথেই ফুসফুসের কোষে ক্ষতিকর পরিবর্তন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার রিসার্চ কেন্দ্রের ডক্টর রাচেল ওরিট বলেন, “ধূমপান ছাড়লে সুফল আসলে দ্বিগুণ, এটি খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক একটি বিষয়। প্রথমত, ফুসফুসের কোষে ধূমপান সংম্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমে যাবে, এবং দ্বিতীয়ত ফুসফুস নিজেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুস্থ কোষ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কোষের প্রতিস্থাপন শুরু করবে।”
পরিবেশ
সামুদ্রিক মাছ রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়া হলে বঙ্গোপসাগর মাছশূন্য হতে পারে, আশঙ্কা গবেষকদের
মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এবং ইলিশ রক্ষায় সফলতা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ কমছে এবং কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি অনেকটা নিঃশেষ হতে চলেছে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা।
নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর মৎস্যশূন্য হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে এ মূল্যায়ন করছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসেব নেই আর কী পরিমান মাছ ধরা যাবে তারও সীমা পরিসীমা নির্ধারিত নেই। কারণ সাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ গবেষণা বন্ধ ছিল প্রায় দুই দশক।
২০১৬ সালে নতুন জাহাজ আর. ভি মীন সন্ধানী কেনার পর জরিপ শুরু হয়েছে।
সাগরে ১০-২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মহীসোপান এলাকায় এই জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়।
গত তিন বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সামুদ্রিক মাছ নিয়ে একটি প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন ফিশারিজ সার্ভে ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরিফ উদ্দীন বলেন, “২০০০ সালের পর থেকে আমাদের ভেসেল বেইজড যে গবেষণা সেটা পুরাপুরি বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের মাধ্যমে এটা আবার শুরু করা হয়েছে।”
“মূলত ২০১৬ সাল থেকে এটা আমরা শুরু করেছি। তিন বছরের প্রাথমিক তথ্যে আমরা দেখছি যে আমাদের সমুদ্রের সার্বিক মজুদ ঠিক থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু মাছের মনে হচ্ছে অতিরিক্ত আহরণ হয়েছে।”
সামুদ্রিক মৎস সম্পদের অবস্থা নিয়ে গবেষণায় যুক্ত সমুদ্র বিজ্ঞানী সাইদুর রহমান চৌধুরী – যিনি মৎস্য সম্পদ জরিপ জাহাজ আর ভি মীন সন্ধানীর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের সঙ্গেও যুক্ত আছেন – বলেন, “এটা আমাদের সায়েন্টিফিক কমিউনিটির জন্য খুবই উদ্বেগের। মাছের বংশ বিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রেখে দেয়া যেটা দরকার সেটা যদি আমরা না রাখি তাহলে পরবর্তী সিজনে বংশবৃদ্ধি হবে না।”
“পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্রের যেমন গালফ অফ থাইল্যান্ড অনেকটা মৎসশূন্য হয়ে গেছে। আমরা চাইনা আমাদের বে অফ বেঙ্গল সেরকম মৎসশূণ্য হয়ে যাক।”
মাছের যেসব প্রজাতি হুমকিতে:
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে লাক্ষা, সার্ডিন, পোয়া, লটিয়া, ফলি চান্দা, হরিণা চিংড়ি ও কাটা প্রজাতির মাছের মজুদ এবং পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
গবেষকরা বলছেন এসব সামুদ্রিক মাছ অতিরিক্ত আহরণ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে অতিরিক্ত আহরণের কারণে যে কোনো মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করা না হলে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে যায়।
সমুদ্র বিজ্ঞানী সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, “লাক্ষ্যা, তাইল্যা, রুপচান্দা টাইপের বেশকিছু মাছ বস্তাপোয়া টাইপের বিশেষ করে দামি এবং বড় আকৃতির মাছ এখন খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে।”
“বাজার পর্যবেক্ষণ থেকেই আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে বেশকিছু মাছের ধারাবাহিক আমরা বছরের পর বছর ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। এটা নির্দেশ করে যে সমুদ্রে তাদের পরিমাণ কমে গিয়েছে বলেই বাজারে তাদের জোগান কমে গিয়েছে।”
জেলেদের অভিজ্ঞতা:
সামুদ্রিক মৎস আহরণে বাংলাদেশে কাঠের তৈরি ট্রলার, মাঝারি ট্রলার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ব্যবহৃত হয়।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের হিসেবে নিবন্ধিত কাঠের নৌযানের সংখ্যা ১১,৭১৫টি। তবে ধারণা করা হয় অগভীর সাগরে মাছ ধরায় যুক্ত আছে ৬০-৬৫ হাজার নৌযান।
এছাড়া রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার যেগুলো সাগরে ৪০ মিটার গভীরতার পরে মাছ শিকার করে।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের হিসেবে ২৫১টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযান সমুদ্রে মাছ আহরণ করছে।
চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে মাছ নিয়ে আসা বেশ কয়েকজন জেলে এবং মাঝির বক্তব্যেও সামুদ্রিক মাছের সংকটের কথা শোনা গেল।
৩৫ বছর ধরে সমুদ্রে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জসীম মাঝির পরিস্কার জবাব, এখন আর আগের মতো মাছ নেই। আগে যেখানে দুই তিন ঘণ্টা নৌকা চালিয়ে গিয়ে মাছ ধরতে পারতেন এখন সেই মাছ ধরতে ১৮-২০ ঘণ্টা চালিয়ে সাগরের গভীরে যেতে হয়।
“মাছের যত জাত আছে, আইল্যা মাছ টাছ সব মাছ কইম্যা গেছে। আগে পাইতাম এহন পাওয়া যায় না। এখন ইলিশ ছাড়া আর কোনো মাছ সেরকম পাওয়া যায় না।”
ছোট ট্রলারের জেলেদের অভিযোগ বড় ট্রলার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও কমে গেছে।
এক্ষেত্রে মাছ ধরার পদ্ধতি নিয়েও উদ্বেগ জানান তারা।
জেলেদের অভিযোগ, বড় নৌযানগুলোর জালে ছোট বড় নির্বিশেষে সব মাছই আটকা পড়ে অনেক মাছের অকাল মৃত্যু ঘটে।
আরেকজন মাঝি বলছিলেন, “যেসব মাছ বাজারে বেঁচা যাইবো না বা আনা সম্ভব হইবো না সেগুলা আনে না। বড়গুলা আনে আর সব সাগরে ফালায় দেয়”।
মাঝারি আকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযানে মৎস্য শিকারের সঙ্গে যুক্তরা আবার অত্যাধুনিক মাছধরা জাহাজের শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
ছোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জেনে নির্বিচারে মাছ শিকার করা হয় বলেই তাদের অভিযোগ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযানে মাছ শিকারের যে জাল সেটিরও নির্ধারিত মাপ আছে কিন্তু সেটি কতটা মানা হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে।
সামুদ্রিক সাদা বা বড় মাছ এবং চিংড়ি মাছ ধরার জন্য জালের ম্যাশ সাইজ যথাক্রমে ৬০ মিলিমিটার ও ৪৫ মিলিমিটার নির্ধারিত থাকলেও অনেকেই এটি মেনে চলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাছ ধরা নৌযানের নিবন্ধিত সংখ্যা ২৫১টি। গত ৫ বছরে ৩৯টি নতুন মাছ ধরা আধুনিক নৌযান মাছ শিকারে যুক্ত হয়েছে।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাগরে মাছের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নৌযানের সংখ্যা বাড়ানো বিপক্ষে তারা।
“যতদিন পর্যন্ত মাছের মজুদ এবং পরিমাণ সম্পর্কে রিপোর্ট না পাচ্ছি আমাদেরকে নৌযানের এ সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ। তা নাহলে আমাদের এই ফিশিং সেক্টর এবং আমাদের যে চারটা ফিশিং গ্রাউন্ড আছে সেগুলো মাছশূণ্য হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।”
প্রতিবেশি দেশের নৌযানের অনুপ্রবেশ:
বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় মৎস্য আহরণে প্রতিবেশি দুটি দেশের নৌযানের অবৈধ অনুপ্রবেশ একটা নিয়মিত সমস্যা বলে জানান স্থানীয় জেলেরা।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং নৌ বাহিনীর প্রতিবেশি দেশের মাছধরা নৌযান আটকের বহু নজির রয়েছে।
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বলেন, বাংলাদেশি সমুদ্রসীমায় প্রায়ই ভারত ও মিয়ানমারের মাছ ধরা ট্রলার ঢুকে পড়ছে। এমনকি বাংলাদেশের সীমানায় মাছধরা নিষিদ্ধ থাকাকালীন সময়েও তাদের উপস্থিতি বেড়ে যায় বলেই অনেকে বলেছেন।
বাংলাদেশি নৌযানের মৎসজীবীদের অভিযোগ, যে হারে বিদেশি নৌযান বাংলাদেশের সীমানায় অবৈধ মাছ শিকার করে সে তুলনায় বিদেশি জাহাজ আটক হয় খুবই কম।
সাগরে ৩০ বছর মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত হুমায়ুন কবীর বলেন, দক্ষিণ দিকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ অংশে মিয়ানমার এবং পশ্চিমে চালনার দিকে ভারতীয় জাহাজ প্রায়ই অবৈধ মাছ শিকার করে।
অনেক সময় একাধিক জাহাজ নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতীয় জাহাজ সাগরে মাছ ধরতে আসে বলেও তাদের নজরে পড়ে।
“লাক্ষা মাছ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ও মূল্যবান মাছ এবং এই মাছটি মারাত্মকভাবে আহরিত হয়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এছাড়া চিংড়ি মাছের বহু প্রজাতিও হুমকির মুখে। আমরা গবেষণা করছি কিন্তু আরো বিস্তারিত গবেষণা ছাড়া চূড়ান্ত মূল্যায়ণ সম্ভব নয়। তাই পূর্ণাঙ্গ গবেষণা এবং মজুদ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করার জন্য মাছ ধরা ট্রলার ও নৌযান সীমিত করা এবং ক্যাচ কন্ট্রোল পদ্ধতি প্রয়োগ করা জরুরী।”
দেশের মৎস্য বিভাগ দীর্ঘমেয়াদে সাগরে মাছের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংরক্ষণ কার্যক্রম নিয়েছে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুম, মেরিন রিজার্ভ এলাকা ও সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, ইলিশকে টার্গেট করে যেভাবে সাফল্য এসেছে সামুদ্রিক অন্যান্য মূল্যবান অর্থকরী মাছের ক্ষেত্রেও আলাদা করে সুনির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা দরকার।
পরিবেশ
ইলিশ ধরা পড়ছে বিস্ময়কর হারে, এটা কি নতুন মৌসুম?
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ ধরা বেড়েছে। মেঘনা নদীতে গত এক সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে।
অথচ একটা সাধারণ ধারণ রয়েছে যে, বর্ষা হলো ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময়ই ধরা পড়বে ইলিশের বড় অংশটি।
লক্ষ্মীপরের মৎস্য কার্যালয় বলছে, ২০১৯ সালে একই সময়ে সপ্তাহে বড়জোর ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন মাছ ধরা পড়েছিল। অথচ এবার ধরা পড়ছে আট গুন বেশি মাছ।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৫-২০ বছরে এমন ঘটনা দেখা যায়নি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, “এটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। আমি গত ১৫-২০ বছরেও এমন ঘটনা দেখিনি। মনে হচ্ছে এটা ইলিশের নতুন মৌসুম হতে পারে, কিন্তু আমরা চাই বারো মাসই মৌসুম চলুক।”
পৃথিবীর মোট ইলিশের প্রায় ৬০% উৎপাদন হয় বাংলাদেশে।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ।
ইলিশ বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে, পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় যে ইলিশের বাস স্বাদের জন্য তারা সবচেয়ে বিখ্যাত।
কোথা থেকে আসছে এত ইলিশ?
মৎস্য কর্মকর্তা মি. হোসেন বলেছেন, যে ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে এগুলো মূলতঃ সাগর থেকে নদীর মোহনায় আসা ইলিশ।
আগে কেবল ডিম ছাড়ার সময় নদীর মোহনায় আসত ইলিশ।
“কিন্তু এই সময়টাতে ইলিশ সাধারণত ডিম ছাড়ে না, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা অনেকটাই আগের জীবনচক্রে ফেরত গেছে। এর মানে হচ্ছে, আগে ইলিশ কমবেশি বারো মাসই ডিম ছাড়ত, কিন্তু সেই জীবনচক্র অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল, যা ইদানীং আবার ফেরত আসছে।”
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিন গুন হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, নদী এবং নদীর মোহনা দুই জায়গাতেই ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তা সত্ত্বেও সাধারণত বাংলাদেশে শীত মৌসুমে ইলিশ প্রায় পাওয়াই যায় না।
মি. হোসেন বলছেন, “কিন্তু গত এক সপ্তাহে এখানে জেলেরা ৪০০ মেট্রিক টনের মত ইলিশ ধরেছে। আর মাছের আকার দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, এটা এখনই শেষ হয়ে যাবে না, আরো অন্তত দেড় থেকে দুই মাস চলবে।”
মি. হোসেন বলছিলেন, এই সময়ে এত ইলিশ ধরা পড়ার সাথে অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময়ের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
“কারণ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা শুরুর আগের দুইদিন এবং পরের তিনদিন এই সময়ে নদীতে ও নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে, যে কারণে সে সময়ে সাগর থেকে মাছ বেশি আসে এবং মাছের চলাচলও এ সময় বেশি থাকে।”
এত ইলিশ ধরা পড়ছে কেন?
সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইলিশের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, সেটা একটা কারণ।
“ইলিশ মাছ রক্ষার জন্য আগে কেবল জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকতো, কিন্তু গত মৌসুমে জাটকা ইলিশের সাথে সাথে মা ইলিশ ধরার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন ইলিশ তার জীবনচক্র পূর্ণ করতে পারছে। এর ফলে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
ইলিশ রক্ষায় সরকার কয়েক দফা জাটকা ও মা-ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
২০শে মে থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন সাগরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।
সেই সঙ্গে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস এবং অক্টোবরে ২২দিন নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল।
“এই সময়ে সাগর থেকে মাছ নদীতে এসে ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যেতে পারে। এই সময়ে একটি ইলিশের জীবনচক্র পূর্ণ হয়, আগে জীবনচক্র পূর্ণ হবার আগেই তারা ধরা পড়ে যেত।”
তবে সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়াও গত কয়েকদিনের কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বেশি মাছ ধরা পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্রেতারা খুশী
অসময়ে বহু পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার কারণে বাজারে ইলিশের দাম কমেছে। আর এর ফলে ক্রেতারা খুশী।
লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের একজন কলেজ শিক্ষক সাবিহা ইয়াসমিন বলছিলেন, গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বাজারে আগের চেয়ে অর্ধেক দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
“পাঁচ থেকে ছয়শো গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ এক হালি এগারোশ টাকায় কিনেছি। মাসের শুরুতে আমাদের পরিবারের এক অনুষ্ঠানের জন্য এই ওজনের ইলিশ মাছ জোড়া (দুইটা) কিনেছি এক হাজার টাকায়।”
তবে, লক্ষ্মীপুরের বাজারের আঁচ এখনো ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষক ফাতেমা শারমীন বলেছেন, “ইলিশের দাম কমার খবর শুনে বাজারে গিয়ে দেখি এখনো ওখানকার মত কমে নাই, অল্প কমেছে। কিন্তু মাছ যদি এ হারে ধরা পড়তে থাকে, তাহলে আমরা আশাবাদী হতে পারবো।”
বাঙালির ইলিশপ্রীতি অতুলনীয়। কেবল খাবার খাবার পাতে নয়, সাহিত্যে এমনকি কূটনীতিতেও ইলিশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে অনেকবারই।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্তব্য করেছিলেন যে, ভারত তিস্তার পানি না দেয়ায় পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।
এমনকি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে ইলিশ মাছ স্বীকৃতি পেয়েছে।
ফলে বাঙ্গালীর ইলিশ প্রীতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন