আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফল

পাহাড়-সমতলে সবজি বিপ্লব, মিশ্র বাগানে ফলছে হরেক সুমিষ্ট ফল

নিউজ ডেস্ক: কঠোর শ্রম-ঘামের বিনিময়ে জমিতে ফল-ফসল, শাক-সবজি চাষাবাদের মাধ্যমে জনগণকে খাদ্য জোগান দেন দেশের কর্মবীর কৃষক। প্রধান ফসল উঠতি আমনের পরিচর্যা চলছে। এর পাশাপাশি বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে হরেক জাতের শীতকালীন শাক-সবজির চাষের ধুম পড়ে গেছে। শীতের সবজি আগাম বাজারে বিকিকিনি শুরু হয়েছে। বেশি দাম হাতে পেয়ে খুশি চাষী। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, টমেটো, বরবটি, ঢেঁড়শ, বেগুন, ঝিঙে, পটল, কাকরোল, শশা, চিচিঙ্গা, গাজর, ক্ষীরা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কচুমুখী, পালং শাক, কপিশাক, সজনে, ডাটা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, ব্রুকলি, লেটুস পাতা প্রভৃতি এখন মিলছে হাট-বাজারে। কৃষিবিদ ও চাষিরা জানান, গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালীন ও শরৎকালীন সবজির সমারোহ থাকতেই শীতকালীন শাক-সবজি বাজারে আগাম এসে গেছে।

পাহাড়ি, টিলাময়, উপত্যকা, ঢালু, উঁচু-নিচু, সমতল, বেলে দো-আঁশ, লবণাক্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্য দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বৈচিত্র্যে ভরা এবং উর্বর। ভূমিরূপ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হরেক ধরনের ফল-ফসল, শাক-সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। সব মিলিয়ে শীতকালীন আগাম সবজি বিপ্লব চলছে এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ পাহাড়-সমতলে। কোথাও পুষ্ট-পরিপক্ক শাক-সবজি ক্ষেত থেকে তুলে এনে হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথাও পানি, সার দেয়া, আগাছামুক্ত করাসহ যত্ন হাতে উঠতি সবজি মাঠের পরিচর্যা করছেন কৃষক। আবার কোথাও বীজ বা চারা রোপণ করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে কৃষকের দম ফেলার ফুরসৎ নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মনজুরুল হুদা গতকাল শুক্রবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভালো বাজারদরের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ ব্যাপক আকারে হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতায় ৫টি জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর) গত বছর ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এবার ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। এতে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি সবজি উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। তিনি জানান, নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে সবজি চাষাবাদ। বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রাঙ্গামাটিস্থ পার্বত্য অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নাসিম জানান, পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) ৯ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। সব মিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ৭ লাখ টন সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার মূল্য কয়েক শ’ কোটি টাকা।
মধ্যপ্রাচ্যে চট্টগ্রামের বিষমুক্ত অর্গানিক তাজা শাক-সবজি, ফল-মূল রফতানি নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বাড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও আছে চাহিদা। মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রফতানিতে আয় আসছে বার্ষিক প্রায় ৩০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবলস অ্যান্ড ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাহবুব রানা জানান, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রেইট চার্জ, ভাড়া-মাসুল হ্রাস এবং কার্গো বিমান সুবিধা বাড়ানো হলে তাজা ফল ও সবজি রফতানির বাজার আরো প্রসারিত হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে চট্টগ্রামের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ, যা জাতীয় প্রবৃদ্ধির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। সবজি উৎপাদনে চট্টগ্রামে বিপ্লব ঘটছে। করোনা মহামারীকালে কারো সাহায্য ছাড়াই কৃষকেরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ^সে বলীয়ান হয়ে বৃদ্ধি-কৌশল-অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ফলমূল, সবজি ফলাচ্ছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় এবং ভেজা ও উর্বর জমিতে বাম্পার ফলনে কৃষি বিভাগ আশাবাদী। পাহাড়-সমতলে মিশ্র বাগানে উৎপাদিত শাক-সবজির পাশাপাশি পেঁপে, কলা, আনারস, সফেদা, বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, জলপাই, লেবু, বারি জাতের মাল্টা, কমলা, আতা, বিদেশি ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি সুমিষ্ট ফল সুবাস ছড়াচ্ছে সারাবছর। ভালো দাম পেয়ে চাষির মুখে হাসি।

তবে অনেক এলাকা থেকে জানা যায়, কৃষক ও ক্রেতার মাঝখানে একটি মধ্যস্বত্ত্বভোগী, ফড়িয়া চক্র যথেচ্ছ মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরফলে কৃষক ও ক্রেতা উভয়ে ন্যায্য দামে বেচাকেনা থেকে বঞ্চিত হয়ে ঠকছেন। আজ শনিবার আশি^ন মাস শেষ হচ্ছে। কার্তিক অর্থাৎ হেমন্ত ঋতু শুরু আগামীকাল রোববার। বিশেষত জুম ফল-ফসলের সঙ্গে শীতের আগাম সবজি তোলার বাড়তি আনন্দে পাহাড়ে পাহাড়ে কৃষক-কিষাণীর মাঝে নবান্নের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

বান্দরবান থেকে মো. সাদাত উল্লাহ জানান, এ বনভূমির কৃষি-খামারে ব্যাপক সফলতা আসছে। কম খরচে স্বল্প সময়ে কৃষিপণ্য আবাদ ও ফলন অধিক লাভজনক হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনের ‘কারখানা’ বলা যায় বান্দরবান জেলাকে। সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীপাড়ের চর ও পলিমাটির উর্বর জমিতে ব্যাপকহারে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হচ্ছে। থানচি, রুমা, আলীকদম, লামা ও বান্দরবান সদরে হরেক জাতের শাক-সবজির চাষ হচ্ছে। ঢালু, উঁচু-নিচু জমিতে এবং পাহাড়ের জুম চাষের সাথেও মিশ্র সবজি চাষ হচ্ছে। বান্দরবান বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল হক জানান, শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে বাজারে না আসার কারণে দাম একটু বেশি। বান্দরবান কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় সবজিসহ কৃষিখাতে বিপ্লব সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী ইনকিলাবকে জানান, বান্দরবান কৃষি বিভাগকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। যাতে বান্দরবান জেলাকে কৃষিতে আধুনিক জেলায় উন্নীত করা যায়।

খাগড়াছড়ি থেকে মো. ইব্রাহিম শেখ জানান, এ জেলার ৯টি উপজেলায় পুরোদমে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। সবজি ক্ষেতের সযত্নে পরিচর্যার সাথে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে হেমন্তের নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করছেন বেশি লাভের আশায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকায়ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাবে। পাহাড়ের বিষমুক্ত সবজি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া, পানছড়ি, তবলছড়ি, তাইদং, মোল্লা বাজার, বেলছড়ি, সুকনাছড়ি, মাইসছড়িসহ কয়েকটিগ্রামে ঘুরে দেখা গেছে দিনমজুরদের সাথে সবজি চাষিরা ক্ষেত পরিচর্যা, রোগ-বালাই দমন করে অধিক ফলনের আশায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন। মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকার জুমচাষি অনন্ত ত্রিপুরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, শিম, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মুর্ত্তুজা আলী জানান, জুমচাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষে উৎসাহিত করছি। সবজি সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ পেলে কৃষকরা আরও বেশি ভূমিকা রাখবেন।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) থেকে কবির হোসেন জানান, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ের উঁচু ও পাহাড়ের ঢালুতে জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চারা, বীজ রোপন ও পরিচার্যায় কৃষক পরিবারগুলো ব্যস্ত। বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে শাক-সবজির। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে কোন ফল-ফসল বা সবজি আগাম চাষাাবাদে ফলন এলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। মুনাফাও আসে বেশি। ওয়াগ্গা এলাকার এনামুল হক বাচ্চু জানান তিনি পাহাড়ি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। সকাল-বিকাল খাটছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা থোয়াইনু চিং মারমা জানান, নভেম্বর মাসে আবহাওয়া ভালো থাকলে সবজির উৎপাদন ভালো হবে।

পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে এস কে এম নুর হোসেন জানান, উপজেলার খরনা, কচুয়াই, হাইদগাঁও, কেলিশহর ইউনিয়নে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি আবাদ চলছে। বাজারে আগাম বিক্রয়ও শুরু হয়ে গেছে। কমলমুন্সির হাট পাইকারি সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলেও চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কচুয়াই এলাকার চাষী আহম্মদ নূর জানান, খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবজি কম দামে কিনে নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত পটিয়ায় শাকসবজির প্রধান পাইকারি আড়ত কমলমুন্সির হাটে ভোর ৬টা থেকে বিকিকিনি শুরু হয়। হাটের ইজারাদার রফিক আহম্মদ জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকার শাক-সবজি এখানে ক্রয়-বিক্রয় হয়। পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, সবজি চাষের উপযোগী এলাকাগুলোতে চাষীদের নতুন উন্নত জাতের সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে আসলাম পারভেজ জানান, আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ ও উৎপাদনে কৃষকদের এখন নাওয়া-খাওয়ার যেন সময় নেই। হালদার নদীপাড়ে ও চরসমূহ শীতের সবজি উৎপাদনের উর্বর এলাকা। হালদার বালুচরের মরিচ, পুতি বেগুন, ঢাউস বড় মুলার সুনাম দেশ জোড়া। উপজেলার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত আগাম সবজি হাটবাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছেন। দেওয়ান নগরের প্রবীণ কৃষক মো. আলতাফ হোসেন জানান তার মোট চার কানি ফসলি জমির মধ্যে দুই কানিতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন।

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী জানান, শীতের আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কারণ বাজারে যত আগে তোলা যায় ততই বেশি টাকা আয় আসছে। এ বছর বৈরি আবহাওয়া, করোনা পরিস্থিতিতেও আগাম সবজি চাষে পিছপা হননি এলাকার কৃষকগণ। উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা ও ধুরুং নদী এবং ফটিকছড়ি, সর্ত্তা ও গজারিয়া খালের দুই কূল জুড়ে বাগানবাজার, নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, কাঞ্চননগর, ফটিকছড়ি পৌর এলাকার চেউঙ্গারকূল, উত্তর ধুরুং, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, কুম্বারপাড়া, চরগাঁপাড়া, রোসাংগিরি, খিরাম, ধর্মপুরসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার মাঠ আগাম শীতের সবজিতে ভরে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এখানকার কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে এগিয়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কেবিএম ওমর ফারুক তুহিন জানান, উপজেলায় এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম থেকে শেখ সালাউদ্দিন জানান, সীতাকুণ্ড দেশের অন্যতম প্রধান সবজি উৎপাদন এলাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এমনকি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। সাপ্তাহিক হাটে শত শত পাইকার আসছেন। পৌর এলাকার মোহন্তের হাটে সবজি ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, শীতকালীন নতুন সবজির দাম একটু বেশি। বড় দারোগারহাট থেকে ভাটিয়ারী, সলিমপুর পর্যন্ত সারি সারি সবজি ক্ষেতের সমারোহ। গুলিয়াখালীর প্রবীণ কৃষক মো. আবু তাহের জানান, চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৬৫০ জন কৃষক শীতকালীন বিভিন্ন রকম সবজির আবাদ করেছেন। সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ হাজার ৯৮০ টন।

মীরসরাই থেকে ইমাম হোসেন জানান, আগাম শীতের সবজি চাষে কৃষক যেমনি লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্রেতারা পাচ্ছেন আগাম স্বাদ। উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদে কৃষক পরিবারগুলোর ভাগ্য খুলে গেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষের দেখা মিলেছে উপজেলার দুর্গাপুর, চৈতন্যহাট, করেরহাট, খৈয়াছরা, কমলদহ, আবুরহাট, আবুতোরাব, মঘাদিয়া, তালবাড়িয়া, মস্তাননগর, আমবাড়িয়া, ওয়াহেদপুর, হিঙ্গুলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। নয়দুয়ারিয়া গ্রামের কৃষক এমরান হোসেন জানান, শীতকালীন সবজির আগাম চাষে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে কীটনাশক তথা বিষমুক্ত সবজি চাষ সম্ভব। উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, শীতের সবজির আগাম চাষাবাদে কৃষক সবচেয়ে বেশি লাভবান হন।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছ লাগানোর পদ্ধতি
টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছ লাগানোর পদ্ধতি

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting)

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছ পরিচর্যা
টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছ পরিচর্যা

পরিচর্যা(Caring)

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছের রোগ দমন
টবে মিষ্টি তেঁতুল গাছের রোগ দমন

রোগ দমন (Disease management)

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
ধান চাষ

ধান চাষ

বোরো ধানের পরিচর্যা

  • ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
  • পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
  • ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।

গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ

  • গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
  • উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।
গম চাষ
গম চাষ

গম চাষ

  • গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
  • ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
ডালশস্য
ডালশস্য

ডালশস্য

  • মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
  • আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।

তৈলবীজ চাষ

সূর্যমুখী এবং সয়াবিন

  • বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
  • সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
সবজি চাষ
সবজি চাষ

সবজি চাষ

গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন

  • লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
  • আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।

শীতকালীন সবজি সংগ্রহ

  • বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।

ফল চাষ

  • আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
মৎস্য চাষ
মৎস্য চাষ

মৎস্য চাষ

  • পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
  • মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
  • পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।
গবাদি পশু পালন
গবাদি পশু পালন

গবাদি পশু পালন

  • গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
  • গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।

মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও দমন ব্যবস্থাপনা: ফলন বাড়িয়ে লাভবান হওয়ার সেরা কৌশল

?আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও দমন ব্যবস্থাপনা: ফলন বাড়িয়ে লাভবান হওয়ার সেরা কৌশল?
আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ও দমন ব্যবস্থাপনা: ফলন বাড়িয়ে লাভবান হওয়ার সেরা কৌশল

আম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল। এর চাষে নানা রকম ক্ষতিকারক পোকামাকড় সমস্যা সৃষ্টি করে, যা ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকাগুলো এবং তাদের দমন ব্যবস্থাপনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

আমের ক্ষতিকারক পোকাসমূহ ও তাদের ক্ষতি

আমের ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer)
আমের ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer)

ফল ছিদ্রকারী পোকা (Fruit Borer)

ক্ষতির ধরন:

  • পোকা আমের ভেতরে ঢুকে ফল নষ্ট করে।
  • আক্রান্ত ফল পচে যায় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করুন।
  • প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডেল্টামেথ্রিন বা সাইপারমেথ্রিন স্প্রে করুন।
  • ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করুন।

মাকড়সা পোকা (Red Spider Mite)

ক্ষতির ধরন:

  • পোকা পাতার রস শোষণ করে এবং পাতায় সাদা দাগ সৃষ্টি হয়।
  • গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন।
  • প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অ্যাবামেকটিন স্প্রে করুন।
  • নিয়মিত সেচ দিয়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখুন।
আমের গুটি ঝরানো পোকা (Mango Hopper)
আমের গুটি ঝরানো পোকা (Mango Hopper)

আমের গুটি ঝরানো পোকা (Mango Hopper)

ক্ষতির ধরন:

  • গাছের ফুলে আক্রমণ করে মুকুল ঝরিয়ে দেয়।
  • ফলে ফলন কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখুন।
  • প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে করুন।
  • বাগানে অতিরিক্ত সেচ এড়িয়ে চলুন।
আম ছিদ্রকারী পোকা (Stem Borer)
আম ছিদ্রকারী পোকা (Stem Borer)

আম ছিদ্রকারী পোকা (Stem Borer)

ক্ষতির ধরন:

  • গাছের কাণ্ডে ছিদ্র করে এবং রস শোষণ করে।
  • গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং ফলন কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • গাছের ছিদ্রযুক্ত অংশে কীটনাশক (মোনোক্রোটোফস) ঢেলে মাটি চাপা দিন।
  • গাছের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf Webber)
পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf Webber)

পাতা মোড়ানো পোকা (Leaf Webber)

ক্ষতির ধরন:

  • পাতা খেয়ে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
  • গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন।
  • বায়োলজিক্যাল কীটনাশক (বিটি) ব্যবহার করুন।

আম ছাতা পোকা (Mealy Bug)

ক্ষতির ধরন:

  • পাতার রস শোষণ করে এবং কালো ফাঙ্গাস সৃষ্টি করে।
  • গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  • গাছের গোড়ায় আঠালো ব্যান্ড লাগান।
  • প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডাইমিথোয়েট স্প্রে করুন।
  • বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে লেডিবার্ড বিটল ব্যবহার করুন।
পোকা দমনের জন্য সাধারণ নির্দেশনা
পোকা দমনের জন্য সাধারণ নির্দেশনা

পোকা দমনের জন্য সাধারণ নির্দেশনা

  • বাগানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল এবং পাতাগুলো সরিয়ে ফেলুন।
  • বায়োলজিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করুন। তবে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডোজ এবং সময়ের প্রতি সতর্ক থাকুন।

আমের ক্ষতিকারক পোকা দমনের উপকারিতা

  • গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ফলের গুণগত মান এবং উৎপাদন বাড়ে।
  • বাজারে আমের চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধি পায়।
  • গাছ দীর্ঘস্থায়ী ও স্বাস্থ্যবান থাকে।

আমের বাগানে ক্ষতিকারক পোকামাকড় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ফলনের পরিমাণ ও গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব। উপরে বর্ণিত দমন ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করে পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর পদ্ধতিতে পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলুন এবং লাভবান হোন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফল

বাড়িতে সহজেই আমের পরিচর্যা: সুস্বাদু ফল পেতে সহজ ও কার্যকর উপায়

বাড়িতে সহজেই আমের পরিচর্যা: সুস্বাদু ফল পেতে সহজ ও কার্যকর উপায় – দা এগ্রো নিউজ
বাড়িতে সহজেই আমের পরিচর্যা: সুস্বাদু ফল পেতে সহজ ও কার্যকর উপায় – দা এগ্রো নিউজ

আসুন জেনে নেই বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে কিভাবে আমের চাষ করতে হবে

আম একটি অতি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। আমকে সাধারণত ফলের রাজা বলা হয়। এই আম আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। আমগাছ সাধারণত খুব বড় হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাড়ির ছাদে অথবা উঠোনেও এই ফলের চাষ করা সম্ভব। আসুন জেনে নেই কিভাবে এই মধুর ফলটি আমাদের বাড়ির ছাদে চাষ করতে পারি।  

আম চাষের জন্য  কিভাবে টব/মাটি তৈরি করবেন
আম চাষের জন্য  কিভাবে টব/মাটি তৈরি করবেন

আম চাষের জন্য  কিভাবে টব/মাটি তৈরি করবেন

আম চাষের জন্য সর্বপ্রথম টবের মাটি তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ড্রামের জন্য সারমাটি তৈরি করতে হবে। টবে আম চাষের জন্য দোআঁশ মাটি সর্বোত্তম। টবের মাটির সাথে গোবর সার, কম্পোস্ট সার, এমওপি সার, টিএসপি সার হাড়ের গুড়া ম্যাগনেসিয়াম সালফেট পরিমাণ মত দিয়ে মিশ্রণ করে দিতে হবে। এসব সারমাটি ড্রামে ভরার আগে ড্রাম থেকে যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে সে জন্য ড্রামের তলায় ছিদ্র করে নিন। ছিদ্রের মুখে তিন দিকে পুরনো মাটির টব ভাঙা টুকরো

এমনভাবে দিন যাতে ছিদ্রের মুখ বন্ধ না হয়। এর ওপর আর একটা টুকরো দিয়ে ঢেকে পাতলা সরি করে খড় বিছিয়ে দিন। তারপর সারমাটি দিয়ে ড্রাম ভরে দিন। 

আম চাষের জন্য কি ধরণের টব / পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন  

বাড়ির ছাদে আম চাষের জন্য মাঝারি বা হাফ ড্রাম হলে ভালো হয়। এছাড়া মাটির বড় টবেও আমের চারা লাগাতে পারেন।   

আমের  জাত বাছাই করা   

আমাদের দেশে অনেক জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশকিছু উন্নত জাতের আম আছে। যেমনঃ আম্রপালি, লতা, কেইট,  বোম্বাই,  সিন্দুরী,  দশেরি, চৌষা, শ্রাবণী, , মলিস্নকা,  নিলম ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে  আম্রপালি জাতের আম খুব মিষ্টি ও বেশ কয়েক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়, গাছে ধরেও প্রচুর। এছাড়াও থাইল্যান্ড থেকে আসা ‘ডক মাই´  জাতটিও ড্রামে লাগাতে পারেন।  

আমের চারা  চাষ / রোপনের সঠিক সময়  
আমের চারা  চাষ / রোপনের সঠিক সময়  

আমের চারা  চাষ / রোপনের সঠিক সময়  

আমের চারা রোপনের ক্ষেত্রে মূলত জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে চারা লাগান উত্তম। এছাড়া আম্রপালির চারা লাগানোর ক্ষেত্রে ভাদ্র-আশ্বিন মাস হলো উপযুক্ত সময়। এছাড়া ড্রামের মাঝখানে সোজা করে জুন-জুলাই মাসে আমের কলম পুঁতে দিন। তবে সেচ সুবিধা থাকলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়। 

কিভাবে আমের বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন 

আমের চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । এবং লাগানোর পর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । চারা রোপন করা হলে চারাটিকে একটি সোজা কাঠি দিয়ে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । চারা গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে। টবের গাছটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রায় সারাদিন রোদ লাগে। 

সঠিক নিয়মে আম চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল 

টবে অথবা ড্রামে আমের চারা কলম লাগানোর পর পানি দেবেন। কলম যদি বেশি লম্বা হয় তাহলে মাটিতে লেগে গেলে আগা কেটে কিছুটা খাটো করে দিতে পারেন। ড্রাম ছাদের ওপর এমনভাবে রাখবেন যাতে ছাদ থেকে ড্রাম কিছুটা উঁচু বা ফাঁকা থাকে। তাহলে ছাদের কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও ড্রামের তলায় চার পাশে চারটি ইট দিয়ে উঁচু করে দিতে পারেন। ড্রামে ছয়-সাত বছর গাছ রাখার পর সেটা সরিয়ে নতুন গাছ লাগালে ভালো হয়। 

সঠিক নিয়মে আম চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল 
সঠিক নিয়মে আম চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল 

আম চাষে সারের পরিমাণ ও সার প্রয়োগ  

আম চাষের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। চারা রোপণের পর প্রতি বছর গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। আমের চারা সঠিক মাপে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের মাত্রা বাড়াতে হবে। নির্ধারিত নিয়মে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব সার দিতে হবে। তাহলেই সঠিক ফলন পাওয়া যাবে।  

আম গাছে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন 

আম গাছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণ ঘটে থাকে। তাঁর মধ্যে সর্বপ্রথম হল আমের মুকুল ঝরা ও গুটি ঝরা। এই রোগ দমন করতে প্লানোফিক্স হরমোন মুকুল বের হওয়ার ঠিক আগে ও ঠিক পরে দু´বার স্প্রে করতে পারেন। এ সময় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশকও ছিটাতে পারেন। এছাড়াও আম গাছে শোষক পোকা, থ্রিপস, ফলের মাছি ও ভোমরা পোকার আক্রমণে  ফলন গুণগত মান হ্রাস পেতে পারে। তাই এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

কিভাবে আমের বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন  

দেখা যায় যে আমের জুন-জুলাইতে লাগানো কলম গাছে সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মুকুল আসবে।  কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথম বছর মুকুল না রেখে সব ভেঙে দেবেন। এবং পরের বছর আসা মুকুল রেখে দেবেন। তাতে দেখা যাবে যে আমের প্রচুর ফলন হয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে ড্রামের মাটিতে গোবর ও অন্যান্য সার দেবেন। বছরে একবার প্রতি ড্রামে চারটি করে ট্যাবলেট সার পুঁতে দিতে পারেন। ট্যাবলেট সার দিলে শুধু গোবর সার দেবেন, অন্য কোনো সার দেয়ার দরকার হবে না।

গাছের ভেতর যাতে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, রোগাক্রান্ত, শুকনা, মরা ও দুর্বল শাখাগুলো কেটে ফেলতে হবে।  

কখন ও কিভাবে  আম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন 
কখন ও কিভাবে  আম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন 

কখন ও কিভাবে  আম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন 

আম হল গ্রীষ্মকালীন ফল। আমাদের দেশে সাধারণত জুন-জুলাইতে আম সংরক্ষন করা হয়। খেয়াল রাখবেন যখন আম তুলবেন তখন দু-তিনটি পাতাসহ বোঁটা কেটে তুলবেন। আম মূলত যখন বোঁটার নিচে ত্বকে  সামান্য হলুদাভ রঙ ধারণ করে অথবা আধাপাকা আম যখন গাছ থেকে পড়া আরম্ভ করে তখই আম সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। পাকা আম খাওয়া ছাড়াও কাচা আম শুকিয়ে সংরক্ষন করা যায়।  

কি পরিমাণ আম পাওয়া যাবে  

একটি আম গাছ হতে বেশ কিছু আম পাওয়া যায়। তবে যদি সঠিকভাবে যত্ন করে গাছ করা যায় তবে একটি মাঝারি আকৃতির গাছ থেকে ১৫৫ থেকে ১৭০টি ফল পাওয়া সম্ভব।  

আমের খাদ্য গুণাগুণ  

আম একটি অতীব রসালো মিষ্টি ফল। এই অতীব সুস্বাদু ফলে অনেক খাদ্যগুনাগুন বিদ্যমান।  

আমের অন্যান্য ব্যবহার   

শুধুমাত্র আমকে পাকা খাওয়া নয় কাচা  আম দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু আচার তৈরি করা হয়। এছাড়া আম দিয়ে জ্যাম জেলী ইত্যাদি তৈরি করা হয়। কাচা আম মাখিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া আম দিয়ে অনেক ধরণের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ছাদকৃষি

ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়

ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়
ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়

এখন গ্রামে ও শহরে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিষমুক্ত ফল ও সবজি পেতে দেশের মানুষ ছাদ বাগানের দিকে ঝুঁকছে। ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। ফল হিসেবে জামরুল আমাদের দেশে জনপ্রিয়। খুব সহজে ছাদে জামরুল চাষ করা যায়। তাই জেনে নিন এ চাষ পদ্ধতি।

কাঁচা-পাকা সব অবস্থাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।

সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।

আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দো-আঁশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে।

সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারও মাটি ভরবেন।

মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমের দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে বছরের যেকোনো সময় জামরুল গাছ লাগানো যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে।

গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়।

ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।

জামরুল গাছ ছাদে লাগানোর পরে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। নিয়তিম পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। তাইলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ