লাইভস্টক
এবার ক্রেতারা জিতলেও ঠকছেন খামারিরা
বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের হায়দার আলী এবং তার আরও দুজন অংশীদার মিলে ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি কোরবানির গরু কিনেছেন। কসাইসহ অভিজ্ঞরা বলছেন, গরুটির নিট মাংস হবে ৬ মণ। তাহলে দেখা যায়, প্রতি মণ মাংসের দাম পড়লো ১৬ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪০০ টাকা। অথচ এখনও বগুড়া শহরসহ বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ৫শ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে ক্রেতারা জিতলেও ঠকছেন গরুর খামারিরা।
হায়দার আলী বলেন, আমরা তিনজন অংশীদার গরু কিনে জিতলাম। কিন্তু যে কৃষক তিন বছর ধরে এই গরুটি লালন-পালন করেছেন তিনি কি জিততে পেরেছেন? এই অবস্থা যদি থাকে ওই কৃষকক আগামীতে গরু লালন-পালনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের মন ভালো না। এর আগে গ্রামের যারা কোরবানি দিতো তাদের অর্ধেক লোক এবার কোরবানি দিচ্ছে না। কারণ করোনা ও সর্বশেষ বন্যায় ঈদ বলতে উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছু নেই। সর্বশেষ বন্যায় কৃষকের লাখ লাখ বিঘা জমির কাঁচা-পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। তারা কোরবানির কথা ভাবতেই পারছে না।
হায়দার আলী বলেন, একা ভালো থেকে লাভ নেই। সবাই মিলে ভালো থাকা এবং সবার মুখে হাসি থাকলে সেই ঈদ হয় আনন্দের।
দিনাজপুরের কাহারোল হাটে দেখা গেছে, প্রচুর বলদ গরু। সাদা ধবধবে বিশালাকৃতির (বৈল) বলদ গরুগুলো বাংলাদেশের না। এদের জন্ম ভারতে। প্রতি বছর যেমন লাখ লাখ ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসে এবং লালন-পালন হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
দিনাজপুর কাহারোল হাটের ব্যাপারী আমজাদ ফকির বলেন, ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা মণ মাংস ধরে যত গাড়ি গরু লাগে দিতে পারবো। শুধু দিনাজপুর বর্ডার বলে নয়, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ যেকোনো জেলার গরুর হাটে লক্ষ্য করলে হাজার হাজার ভারতীয় গরু চোখে পড়বে।
গাবতলী হাটের গরু ব্যবসায়ী রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আপনি শুধু পুরো গাবতলী হাটটি ঘুরে এসে তারপর আমাকে বলুন, কত হাজার ইন্ডিয়ান গরু এই হাটে উঠেছে। ক্রেতারা আড়াই লাখ টাকা দিয়ে বৈল গরু কিনলে ১৪/১৫ মণ মাংসের গরু পায়। তাহলে তারা আমাদের দেশি গরু কিনবে কেন?’
বুধবার (২৯ জুলাই) বগুড়ার মহাস্থান গবাদিপশুর হাটে দেখা গেছে, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই বিশাল হাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শুধু গরু আর গরু। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কিন্তু সে তুলনায় হাটে ক্রেতার আনাগোনা খুব কম। তাই দিন শেষে অনেকটা খুব কম দামে গরু বিক্রি করে হতাশা নিয়ে হাট থেকে ফিরেছেন অনেক কৃষক-খামারি। অন্যদিকে সস্তায় গরু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, হাটের ইজারাদার ও গরুর খামারিরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে এই কোরবানির হাট থেকে শত শত গরু কিনে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আগে বগুড়া ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে অনেকে কোরবানির পশু কিনতে এই হাটে আসতেন। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আগের বছরগুলোর মতো বড় বড় ব্যবসায়ী, ব্যাপারী ও ক্রেতারা আসেননি। তাই এই হাটে গরুর দাম পড়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জের তালগাছি হাটের ব্যাপারী আসমত আলী জানান, যে পরিমাণ গরু হাটে উঠেছে তার অর্ধেকও গ্রাহক নেই। ক্রেতারা যে দাম বলে তাতে লাভের কোনো চিন্তাই আমরা করতে পারছি না। যে দামে গরু কিনেছি তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মাংসের দাম ধরে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
প্রতি বুধবার ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় পশুর হাট বসে। এবারের বুধবারে যে হাট বসেছে তা ঈদের দিন পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যাপারীরা।
এই হাটের ব্যাপারী কোরবান আলী এসেছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে। তিনি বলেন, গরুর বাজার এত মন্দা এর আগে কখনও দেখিনি। ১৩টি গরু নিয়ে এসেছি দুদিন ধরে। একটি গরুও বিক্রি করতে পারছি না। যারা বিক্রি করছে তারা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন। আমাকেও শেষ পর্যন্ত তাই করতে হবে। গত বছর যে গরু ৯০ হাজার টাকা বিকি করেছি সেই ধরনের গরুর এবার বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজারের মধ্যে।
প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু এবার দেশের পরিস্থিতিটা অস্বাভাবিক সে কারণে অন্য বছরগুলোর তুলনায় কোরবানির সংখ্যা কম হবে। এটা আগেই বলেছি। তবে খামারি ও কৃষকরা যে দাম পাওয়ার কথা ছিল তা পাচ্ছেন না। গত ৫ মাসে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকার কথা নয়।
বাংলাদেশ ডেইরি ডেভলপমেন্ট ফোরামের (বিডিডিএফ) সভাপতি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ৬০ হাজার আইনজীবী আছেন। এর মধ্যে ২০ হাজার আইনজীবী কোরবানি দিতে পারবেন। বাকি ৪০ হাজার আইনজীবী কোরবানি দিতে পারবেন না। করোনা তো আছেই তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা। এসব কারণেই এবার পশুর দাম পড়ে গেছে।
বিডিডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক ও সাদিক এগ্রো লিমিটেডের মালিক ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালো না। এর আগে আমি বলেছি, এবার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ মানুষ কোরবানি করতে পারবে না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। বিগত বছরে যারা ১ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিয়েছে তারা
এবার তিনজন মিলে ১ লাখ টাকা বাজেট করেছে। যে কারণে অনেক কৃষক এবং খামারি গরু বিক্রি করতে পারছেন না
লাইভস্টক
জেনে নিন কবুতর পালনের সহজ উপায়

অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে কবুতর পালন ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কবুতর পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব।
লাভজনক এই পাখি পালনের জন্য বাড়তি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজনও হয় না। শুধু সামান্য নজরদারি আর সতর্ক হলেই কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করা যায়। কবুতর প্রতি মাসে দুটি করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চার বয়স ২১ দিন হলেই বিক্রির উপযোগী হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অন্যান্য পাখির মতো কবুতর খাদ্যের অপচয় বেশি করে না। বরং বলা যায় অপচয়রোধী পাখি কবুতর।
কবুতরের বিভিন্ন জাত রয়েছে। বলা হয় পৃথিবীতে ৬০০ জাতের কবুতর রয়েছে। ‘জালালি কবুতর’ উন্নত জাতের দেশি কবুতর। এ ছাড়াও মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা ও পক্কা উল্লেখযাগ্য কবুতরের জাত।
আমাদের দেশে শখের বশে সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর বেশি চাষ করা হয়। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় ডিগবাজি খেয়ে মানুষের নজরকাড়ে।

কবুতরের জন্য ঘর তৈরি পদ্ধতি আগে জেনে নিতে হবে। ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি যাতে কবুতরকে খেয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন উঁচু ও শক্ত ঘর তৈরি করতে হবে। হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায় সহজেই।
প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘর হলেই চলে। একই সঙ্গে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে। এক বর্গফুট মাপের ঘরের সামনে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির বারান্দা অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে কবুতর সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি।
ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে ঘর পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডিম পাড়ার সময় যাতে সহজেই খড় সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য কবুতরের ঘরের আশপাশে খড় রেখে দিতে হয়। ঘর রাখতে হবে সবসময় শুকনো। কবুতর সাধারণত জোয়ার, ভুট্টা, ধান, চাল, কলাই, কাউন, মটর, খেসারি, সরিষা, গম কবুতরের পছন্দনীয় খাবার। এসব খাদ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটি কবুতরের জন্য ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন।

এছাড়া বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় কবুতরের খাবার। তবে সেসব খাদ্যে ১৫% থেকে ১৬ % আমিষের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রতি ঘরের সামনে নিয়ম করে খাবার রেখে দিতে হবে সকাল ও বিকালে, সেই সঙ্গে দিতে হবে পর্যাপ্ত পানির জোগানও। ঘরে কবুতরের সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়।
কবুতরের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যে ভুট্টা ভাঙা ৩৫ গ্রাম, গম ভাঙা ২০ গ্রাম, সরিষা দানা ১৫ গ্রাম, ছোলা ভাঙা ২০ গ্রাম, সয়াবিন ভাঙা ৫ গ্রাম, চালের কুঁড়া ৪.৫ গ্রাম, লবণ ০.৫ গ্রাম।
কবুতরের কবুতরের খুব বেশি রোগের প্রকোপ দেখা যায় না। তবে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে বসন্ত, কলেরা, রক্ত আমাশয় যাকে বলা হয়ে থাকে ককসিডিওসিস, আরও আক্রমণ করতে পারে কৃমি।
কবুতরের বসন্ত রোগে পালকবিহীন স্থানে ফোস্কা পড়ে। গলার ভেতর ঘা হয়, খেতে পারে না। রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত কবুতরের গুটিতে টিংচার আয়োডিন বা স্যাভলন লাগানো যেতে পারে। কবুতরের বয়স যখন চার সপ্তাহ তখন পিজিয়ন পক্স টিকা বুকে ও পায়ের পালক তুলে সিরিঞ্জ দিয়ে দিলে বসন্ত রোগ হয় না।
কলেরা রোগ হলে অস্বাভাবিকভবে কবুতরের দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। শ্বাসকষ্ট হয়, পিপাসা বাড়ে, সবুজ বা হলুদ রঙের ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে, কবুতরের ওজন কমে যায়। শেষে কবুতর হঠাৎই মারা যায়। কলেরা রোগে আক্রন্ত কবুতরকে রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেরামাইসিন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে। রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রোগে রক্ত পায়খানা হয়। খাবার প্রতি অরুচি বাড়ে ও শরীরে দুর্বলতা দেখা যায়। শেষে পালক ঝুলে পড়ে।
রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গ বা রোগের আশঙ্কা করলে পানিতে মিশিয়ে ই.এস.বি-৩ আ এমবাজিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে প্যাকেটের নির্দেশনা মতো। কৃমি হলে কবুতর দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডায়রিয়া হয়। পানির পিপাসা বাড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা যায়। ঠিকমতো কবুতরের যত্ন নিলে এটি পালন করে আনন্দ লাভের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
অন্যান্য
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

ফেব্রুয়ারি মাস কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফসলের যত্ন, বপন এবং রোপণ কার্যক্রম চালানো হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- জমিতে পানি সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
- ধানের চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন স্টেম বোরার (Stem Borer) এবং পাতামোড়া পোকার (Leaf Roller) আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধানের জমিতে প্রয়োজনীয় সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।

গম চাষ
- জমি আগাছামুক্ত রাখুন এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দিন।
- পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) এবং ব্রাউন রাস্ট (Brown Rust) রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

ডালশস্য
- মসুর, মুগ, এবং ছোলার ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পরে জমি পরিষ্কার করে পরবর্তী চাষের জন্য প্রস্তুত করুন।




তৈলবীজ চাষ
সরিষা ফসল সংগ্রহ
- সরিষার শুঁটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করুন।
- জমি পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।

সবজি চাষ
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, এবং মূলা সংগ্রহ করুন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, এবং করলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার এবং সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।




ফল চাষ
- আম, কাঁঠাল, এবং লিচু গাছের মুকুল রক্ষায় কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণ করুন।


মৎস্য চাষ
- পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং মাছের খাবার সরবরাহ করুন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় শুষ্ক খড় এবং কাঁচা ঘাস যোগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আয় বাড়ে। প্রতিটি কাজ সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমকে আরও সফল করে তোলা সম্ভব।
লাইভস্টক
কোয়েলেই কোটিপতি শামীম

‘ছেলেবেলায় বই পড়ে কোয়েল পাখির কথা জেনেছি। তখন থেকেই কোয়েল পাখি পোষার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে বেছে নিতে হয় প্রবাস জীবন। এমন সময় বিদেশে বসেই টেলিভিশনে কোয়েল পাখি চাষ করে সফল হয়েছে এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।’ এভাবেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প বলছিলেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের সফল কোয়েল চাষি শামীম আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘৩০ শতক জমির ওপর গড়ে তুলি কোয়েলের খামার। ৫শ’ কোয়েলের বাচ্চা দিয়ে শুরু হয় সেই স্বপ্নের যাত্রা। এখন আমার খামারে কোয়েলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। গড়ে তুলেছি কোয়েলের একটি হ্যাচারি।’
সম্প্রতি শামীমের কোয়েলের খামারে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন বগুড়ায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। তাই ছুটে যান সেখানে। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে আসেন। নিজেই যত্ন নিতে থাকেন। আস্তে আস্তে কোয়েল পাখির সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। সেখান থেকে প্রতিমাসে ভালো একটা আয়ও হতে থাকে। তাই কোয়েলের সংখ্যাও বাড়াতে থাকেন তিনি।

শামীম জানান, বর্তমানে কোয়েলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কোয়েল ডিম দিচ্ছে। এতে প্রতিমাসে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে।
শামীম আরো জানান, কোয়েলের খামারে কোনো দুর্গন্ধ নেই। তাই এটি পরিবেশবান্ধব। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য লোকজন আসে। তারা জানতে চান কোয়েল চাষের কলাকৌশল। অনেকেই কোয়েল পালনের আগ্রহ দেখানোয় তিনি বাচ্চা উৎপাদনের জন্য গড়ে তুলেছেন একটি হ্যাচারি। তার হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে অনেক বেকার যুবক সাবলম্বী হচ্ছেন।
তিনি জানান, কোয়েলের নিজস্ব কোনো খাবার না থাকলেও বাজারে যে মুরগির খাবার পাওয়া যায়; তা দিয়েই কোয়েল পালন করা যায়। বাজারে দুই জাতের কোয়েল পাওয়া যায়। একটি লেয়ার জাতের কোয়েল ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেয় এবং টানা ১৮ মাস ডিম দিয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি ব্রয়লার জাতের কোয়েল ২৮ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কোয়েল পাখিতে দারিদ্র জয় করা শামীম গর্ব করে বলেন, ‘যারা আমার খামারে আসেন আমি তাদের কোয়েল চাষ করার পরামর্শ দিয়ে আনন্দ পাই। কোয়েল চাষ কম পুঁজিতে একটি লাভজনক ব্যবসা। যেকোনো ছোট পরিবার কোয়েল চাষ করে সচ্ছলভাবে চলতে পারে।

কোয়েল পালনের উদ্যোক্তা শামীম জানান, ২০১২ সাল থেকে কোয়েল পালন শুরু করে গত ৫ বছরে সে জেলার শ্রেষ্ঠ খামারি হিসেবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। এখন তার খামারে প্রতিদিন ৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকদের মাসিক বেতন দিচ্ছেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে।
ভবিষ্যতে খামারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি জানান, কোয়েলের ডিম, হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত বাচ্চা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লোকজন কিনে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রয়লার জাতের কোয়েলের জন্য সিলেট, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর জেলার হোটেল ব্যবসায়ীরা অগ্রীম বুকিং দেন।
এছাড়াও ঢাকার অভিজাত শপিং মলগুলোতে মাংসের জাতের কোয়েল সরবরাহ করে থাকেন। এ জন্য তার রয়েছে নিজস্ব পরিবহন। চাহিদামতো ডিম, বাচ্চা ও মাংসের কোয়েল পাখি পৌঁছে দেন। আর বিকাশে টাকাও চলে আসে দ্রুত।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোয়েলের ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব উপযোগী। কোয়েল চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। মুরগির ভ্যাকসিন দিয়েই এর চিকিৎসা হয়।’
লাইভস্টক
চাকরি ছেড়ে কোয়েলেই সফলতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন আবদুর রহমান। এরপর চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এক সময় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পরে সাহস করে চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু করেন কোয়েলের খামার। তাতেই তিনি সফল হয়েছেন।
জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া কুমিরাঘোনার সিকদারপাড়ার ছেলে আবদুর রহমান। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে চুনতি ইউনিয়নের সিরাত মাঠসংলগ্ন স্থানে গড়ে তোলেন ‘এআরবি কোয়েল ফার্ম’। বগুড়া ও নওগাঁ গিয়ে বিভিন্ন হ্যাচারি পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজে হাত দেন।
আবদুর রহমান জানান, সাত লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন। প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকায় ২০ শতক জায়গা ভাড়া নেন। খামারের জন্য কেনেন দুটি জেনারেটর, ইনকিউবেটর মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ইন্টারনেট ও পত্রিকায় ছাপানো বিভিন্ন খামারের সফলতার গল্প পড়েই উদ্বুদ্ধ হন তিনি।
তিনি জানান, প্রতিটি কোয়েল ৩২ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতি মাসে গড়ে ১৫-১৭ হাজার কোয়েল বিক্রি করেন। তার খামারের কোয়েল বটতলী, চুনতি, কেরানীহাট, চকরিয়া, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরেও বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রতি মাসে তার আয় ৩০ হাজার টাকা।
লাইভস্টক
কোয়েল পালন করবেন কেন?

কোয়েল একটি লাভজনক পোল্ট্রি। পোল্ট্রিতে যে এগারোটি প্রজাতি রয়েছে, তার মধ্যে কোয়েল ছোট আকারের পোষা পাখি। হাঁস-মুররি পালনের মতো ব্যাপক পরিচিত না হলেও কোয়েল পালন বর্তমানে দেশে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কেননা কম মূল্যে, কম জায়গায়, কম খাদ্যে কোয়েল পালন করা যায়।
কেন পালন করবেন: দেশের অনেক জেলায়ই বর্তমানে কোয়েল ফার্ম গড়ে উঠেছে। তাই আপনিও পালন করতে পারেন—
• কোয়েল আকৃতিতে ছোট বলে সহজেই আবদ্ধ অবস্থায় ও কম জায়গায় বেশি সংখ্যক পালন করা যায়।
• খরচ কম হওয়ায় যে কেউ কম পুঁজিতে ছোটখাটো খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
• ৫ সপ্তাহের মধ্যে (জাপানি কোয়েল) এবং ৮ সপ্তাহের মধ্যে (ববহোয়াইট কোয়েল) পূর্ণতা লাভ করে।
• পূর্ণতা পেলেই মাংসের জন্য ব্রয়লার কোয়েল বাজারজাত করার জন্য উপযুক্ত হয়।
• ৬-৭ সপ্তাহ (জাপানি কোয়েল) ও ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে (ববহোয়াইট কোয়েল) ডিম পাড়া শুরু করে।
• প্রতিটি জাপানি ও ববহোয়াইট কোয়েল বছরে যথাক্রমে ২০৫-৩০০ ও ১৫০-২০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
• ১৭-১৮ দিনের মধ্যে কোয়েলের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
• কোয়েলের মাংস ও ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট।
• মুরগির তুলনায় কোয়েলের দেহের মাংসের ওজন আনুপাতিকহারে বেশি হয়।
• কোয়েলের বেঁচে থাকার হার মুরগির তুলনায় বেশি।
• কোয়েলের রোগ খুব কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্য পোল্ট্রির চেয়ে বেশি।
• কোয়েল পালনে খাবার বাবদ খরচ অনেক কম হয়।
• কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি।
• ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি। তাই ডিমের ব্যাপক চাহিদা।
• কম পুঁজিতে সারা বছর কোয়েল পালন করা যায়।
• কোয়েল পালন করে স্বনির্ভর কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূর করা যায়।
• কম জায়গায় পারিবারিক ভাবেও কোয়েল পালন করা যায়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন