এগ্রোবিজ
‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’
এবারের রস সুমিষ্ট যার মৌ মৌ সুগন্ধ ছড়ায় চারদিকে। সুবাস আর স্বাদ নিতে ভিড় জমায় পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখি, কাঠবিড়ালি। এই রসের নামই নলেন রস যা গাছিদের নৈপুণ্যে তৈরি এক বিস্ময়
আবহমানকাল থেকেই দেশবাসী পরিচিত- “যশোরের যশ, খেজুরের রস” প্রবচনটি সাথে। শীতের শুরুতে খেজুরের রস, গুড় আর পাটালির জন্যে দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে এর স্বাদ-গন্ধ নিতে। আর শহরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সমাগম ঘটে গ্রামের বাড়িতে, স্বজনদের কাছে। শীতের পিঠা-পায়েস খাওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য।
গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, গাছিদের অনাগ্রহ ও ন্যায্যমূল্যের অভাবে কিছুটা ভাটা পড়েছে এই শিল্পে। নানা সংকটের মধ্যেও এই অঞ্চলের খেজুরের পাটালি আর গুড়ের উৎপাদন ও বিকিকিনি চলছে। এখানেই মেলে বিখ্যাত নলেন গুড়।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যশোরের আট উপজেলায় সাত লাখ ৯১ হাজার ৫১৪টি খেজুরগাছ আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি যশোর সদর, মণিরামপুর, শার্শা, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। গত বছর জেলায় চার হাজার ৬৪ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি ও প্রায় দুই হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন রস উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিয়ে এসব গুড়-পাটালি দেশের অন্যান্য জেলায়ও যাচ্ছে।
তবে জেলায় আগের মত খেজুর গাছ নেই, একইসাথে গাছির সংখ্যাও কমছে। অভিজ্ঞ গাছি ছাড়া রস সংগ্রহ করা যায় না। গাছিদের পরবর্তী প্রজন্ম খুব বেশি এই পেশায় আগ্রহী হচ্ছে না। সংকটের আরেকটি কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী গুড়- পাটালির ন্যায্য দাম না পাওয়া।
গাছিদের নৈপুণ্যে তৈরি এক বিস্ময় নলেন গুড়!
যশোরের খাজুরা এলাকার গুড়-পাটালির এমনই সুঘ্রাণ ছড়িয়েছে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তৈরি গুড়-পাটালি এর কাছে একেবারেই নগণ্য।
এই এলাকাতেই পাওয়া যায় দেশসেরা নলেন গুড়। নলেন গুড় আসে এক বিশেষ ধরনের খেজুর রস থেকে। যা এই এলাকার মানুষের কাছে নলেন রস বলে পরিচিত। নলেন গুড় থেকে তৈরি হয় নলেন গুড়ের সন্দেশ, ক্ষীর-পায়েস।
আশ্বিনের শেষের দিকে গাছিরা খেজুরগাছকে প্রস্তুত করতে থাকেন রস আহরণের জন্যে। গাছের বাকল কেটে চেছে “গাছ তোলা” হয়। যেখান থেকে নেমে আসবে অমিয়ধারা-তা সাফ-সুতরো করতে থাকে গাছিরা। এক একজন সুদক্ষ স্বশিক্ষিত গাছি কোমরে মোটা দড়ি বেঁধে ধারাল গাছিদা দিয়ে পরম নৈপূণ্যে তা কাটে!
গাছতোলা শেষে গাছ কাটার পালা, অর্থাৎ রস বেরুনোর পথ তৈরি করা। নিপুণ হাতে গাছের উপরিভাগের নরম অংশকে অপরূপ সৌন্দর্যে কেটে গাছি সেখানে বসিয়ে দেন বাঁশের তৈরি নালা। গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রস এসে নল দিয়ে ফোটায় ফোটায় জমা হয় ঠিলেয় (হাঁড়ি) । প্রথম রস একটু নোনা। গাছি এক কাটের পর বিরতি দেন! কিছুদিন বিরতির পর আবার কাটেন। এবারের রস সুমিষ্ট যার মৌ মৌ সুগন্ধ ছড়ায় চারদিকে। সুবাস আর স্বাদ নিতে ভিড় জমায় পিঁপড়া, মৌমাছি, পাখি, কাঠবিড়ালি। এই রসের নামই নলেন রস যা গাছিদের নৈপুণ্যে তৈরি এক বিস্ময়।
যশোরের নলেন গুড়-পাটালির জন্যে বিখ্যাত খাজুরা এলাকার গাছি আব্দুর জলিল (৫০) বলেন, ঝুঁকি নিয়ে গাছ কাটতে হয়। ভোরে গাছ থেকে রস নামানো খুব কঠিন কাজ। এরপর জ্বালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করে বিক্রি করতে হয়। এতো কষ্ট করার পরও ভাল দাম পাওয়া যায় না। কষ্টের তুলনায় লাভ হয় না। এ জন্য আগের মত যেমন গাছ নেই, তেমনি গাছিও কমছে।
অনলাইনে গুড়-পাটালি বিক্রি
গত বছর থেকে যশোরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে গুড়-পাটালি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বাজার কিছুটা সম্প্রসারণ হচ্ছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কেনারহাটের উদ্যোক্তা নাহিদুল ইসলাম বলেন, “গত বছর বাঘারপাড়ার ৬০ জন গাছির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম। তাদের তৈরি সাত টন গুড় পাটালি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেছি। স্থানীয় বাজারের তুলনায় দাম বেশি দিয়েছি। নির্ভেজাল পণ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেশি ছিল। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এবার বাঘারপাড়ার পাশাপাশি কেশবপুর ও মণিরামপুরের প্রায দুইশ কৃষককে যুক্ত করছি। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ টার্গেট করছি। গুড় পাটালি বাজার সম্প্রসারণ করতে পারলে গাছিরা দাম বেশি পাবে “
কেনারহাট কেজিপ্রতি পাটালি ৩৯০ টাকা এবং গুড় ৩৫০ টাকা। দেশের যেকোনও স্থানে তারা সরবরাহ করছেন।
রসে নিপাহ ভাইরাস
নিপাহ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় কৃষকরা নিজস্ব প্রযুক্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তারা খেজুর গাছের গাছের পাতা ও ফাতা (পাতার গোড়া থেকে বিস্কুট রঙের চওড়া কাগজের মতো) বেঁধে দেন। এতে করে বাদুড়সহ যেকোনও পাখি সেই গাছের রস পানে বাধা পায়।
বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের কৃষক হারুণ মোল্যা বলেন, “শুনিছি বাদুড় রস খাতি আইসে অসুক (রোগ) ছাড়াচ্ছে। এখন যে রস খাওয়ার জন্যি, সেই গাছের বাগলো (পাতা) চিরে নলের পাশতে ঠিলের মুক (মুখ) পর্যন্ত জড়ায়ে বাইন্দে রাখি। তাতে বাদুড় ক্যান, কোনও পাহি (পাখি) বসতি পারে না।”
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের লালা, বিষ্ঠা ও প্রস্রাবের মাধ্যমে। বাদুড় যখন খেজুর গাছের নলিতে বসে রস পান করে, সেই সময় তার লালা, বিষ্ঠা ও প্রস্রাব রসের ভাড়ে যায়। তবে, রস যদি একটু জ্বালিয়ে পান করা যায়, তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সিভিল সার্জন বলেন, এর এন্টিভাইরাল কোনও ওষুধ নেই। আক্রান্ত রোগীদের সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেহেতু স্পেসিফিক ওষুধ নেই, সেক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্তদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মারা যায়। তাই সতর্কতাই বেশি জরুরী।
গুড়-পাটালিতে চিনি
অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে যশোরের বিখ্যাত খেজুরের পাটালির সুনাম হারাতে বসেছে। শীত মৌসুমে শহরের অলি-গলি ও দোকানে যে পাটালি-গুড় পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই ভেজাল। কম দামের চিনি মিশিয়ে খেজুরের পাটালি বলে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেজুরের রস যখন জ্বালানো হয়, সেই সময় আখের গুড়ের “মুচি” (পাটালির মতো শক্ত) ও পুরনো গুড় (উলা গুড়) সঙ্গে মিশিয়ে ঘন করা হয়। এরপর তাতে চিনি মিশিয়ে “বীজ” মেরে পাটালি তৈরি করা হয়। পাটালির গন্ধ করতে তাতে বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে তারা। এরপর সেই পাটালি বা গুড়কে খাঁটি বলে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। ৫০ টাকার কেজি দরের চিনি আর ৭০ টাকা দরের আখের গুড়ের মুচি দিয়ে তৈরি এসব পাটালি দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায়ও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই ভেজাল পাটালি তৈরি করে। তারা কমদামে উলা গুড় কিনে তাতে চিনি, সেন্ট আর পাটালির রঙ ঠিক রাখতে একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করে।
আছেন অনেক সৎ গাছি
প্রায় ৪০ বছর গুড়-পাটালি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের কৃষক হারুণ মোল্যা (৬৮)। তিনি বলেন, “আমার ৭০টি খেজুর গাছ আছে। প্রতিদিন ১০টি করে গাছ কাটি আমি। ৫-৬ খান (ভাড়) রস হয়। এখন বেশিরভাগ দিনই কাঁচারস বিক্রি করি। আজও বেঁচেছি দুই ঠিলে (ভাড়) ২৪০ টাকায়।”
তিনি বলেন, “তিন মেয়ে আর নাতি-পুতি এসেছিল। যাওয়ার সময় তারা ৫ কেজি করে পাটালি নিয়ে গেছে। ছোটমেয়েকে একটু বেশি দিতে হবে, জানিয়ে গেছে।”
জীবনে কখনও হারাম খাইনি জানিয়ে তিনি বলেন, “শুনেছি এখন কেউ কেউ গুড়-পাটালিতে চিনি দিয়ে তা বিক্রি করছে। আমি কখনোই এসব করিনি, করবোও না।”
এক সপ্তাহ গাছ কাটলে যে রস পাওয়া যায়, তা দিয়ে তিনি ২৫ থেকে ৩০ কেজি গুড়-পাটালি তৈরি করতে পারেন বলে জানান। তার পাটালি দুইশ’ টাকা আর গুড় দেড়শ’ টাকায় গ্রামেই বিক্রি হয়ে যায়।
বাঘারপাড়া পৌরসভার মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক শমসের আলী (৬৫) বলেন, ১২০টি গাছ আমার। পাঁচ দিন পর গাছ কাটি। এক ছেলে, অনার্স পড়ে। সে গাছ কাটতে পারে না, কখনো যায়নি আমার সঙ্গে। কাঁচা রস প্রতি ঠিলে দেড়শ’ টাকা দরে বিক্রি করে দেই। ঢাকার থেকে অর্ডার আসে, পাটালি আড়াইশ’ টাকা করে বিক্রি করি। কোনও প্রকার ভেজালের সঙ্গে আমরা নেই।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ইমদাদ হোসেন শেখ বলেন, “যশোরের ঐতিহ্য খেজুর গাছ বেশ কমে গেছে। সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম এই খেজুরগাছের গুড় সংগ্রহের প্রতি বেশি উৎসাহী নয়। এজন্য কিছুটা গাছ কমেছে।”
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, “খেজুরের গুড় উৎপাদনে যশোর বিখ্যাত। এই জেলার গুড়ের সুনাম ও চাহিদা আছে। খেজুর গুড়কে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভেজালমুক্ত গুড় পাটালি যাতে তৈরি হয়, সেই ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। যারা গুড় পাটালি তৈরি করে, তাদের সহায়তায় কাজ করছি। ভেজালমুক্ত পণ্য উৎপাদনে তাদের উৎসাহিত করছি।”
এগ্রোবিজ
বেকারত্ব দূর করতে ফুল চাষ

সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে ফুলের আবেদন চিরন্তন। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েই চলছে। ফলে এখন ফুলেও লেগেছে বাণিজ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বেড়ে চলছে ফুলের চাষ ও ব্যবহার। তাই আপনিও ফুলের চাষ করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন।
চাষের স্থান
সারাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা যায়। গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বিলজুড়ে চাষ করা যায় নানা জাতের ফুল। এছাড়া বাড়ির পাশের জমিতে ফুলের চাষ করা যায়। চাষ করতে পারেন বাড়ির ছাদেও।
যে ধরনের ফুল
লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, রজনীগন্ধা, ভুট্টা ফুল, গাঁদা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরম ফেনিয়া, জারবরা, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টারকলি, ডালিয়া, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল চাষ করা যায়।
পুঁজি
প্রথম খুব বেশি পুঁজির দরকার হয় না। জমির আকারের ওপর নির্ভর করে খরচ কম-বেশি হতে পারে।
চাষ ও পরিচর্যা
ফুলের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। টবসহ চারাও কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। টবের মাটির সঙ্গে জৈব সার বা কম্পোস্ট সার পর্যাপ্ত পরিমাণে মেশাতে হয়। সাবধানতার সঙ্গে চারা রোপণ করে ঝাঁঝর দিয়ে উপর থেকে বৃষ্টির মতো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে গাছ এবং পাতা উভয়ই ভেজে। প্রয়োজনে হেলে পড়া গাছকে লাঠি পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিবিদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
বিক্রয়
শহরে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে ঝামেলা হতে পারে। অনেক সময় ঠিকমতো দামও পাওয়া যায় না। তাই উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য এলাকাতেই ফুলের দোকান গড়ে তুলতে পারেন।
কর্মসংস্থান
অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষে লাভ অনেক বেশি। আর ফুল চাষ করার ফলে বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কারণ ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার, ফুল ছেঁড়া, ফুলের মালা গাঁথাসহ অনেক কাজে পুরুষ এবং নারী সম্পৃক্ত হতে পারে।
এগ্রোবিজ
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
শুধু ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করেন এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার। জেনে নিন সেই যুবক সম্পর্কে।















এগ্রোবিজ
খাগড়াছড়িতে জার্বেরা ফুল চাষের সম্ভাবনা ভালো
জার্বেরা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বিদেশি ফুল হলেও বাংলাদেশের পাহাড়ে এই ফুল চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে। সামাজিক যেকোনো অনুষ্ঠানে দেখা মেলে লাল, কমলা, গোলাপি, হলুদ, সাদা, বেগুনিসহ নানা রঙের জার্বেরার। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ বলেন, গত দুই বছর ধরে এখানে জার্বেরা ফুলের চাষ হচ্ছে। ৭৫টি গাছে ২০০ থেকে ৩০০টির বেশি ফুল আসছে, ভালো ফুল ফুটছে। খাগড়াছড়িতে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে এই ফুল চাষের। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ বাড়ালে কৃষক লাভবান হবেন।

















এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি

বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।



বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।

বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়

বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।

বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।

আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।

সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন