আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

দৈনন্দিন

অদ্ভুত গোলাপ বাগান

ফ্রান্সের মেন্টন শহরের উপকণ্ঠে আছে সুন্দর ছোট্ট ছিমছাম একটা পাহাড়ি গ্রাম, নাম গোর্বিও। এই গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে থাকে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক।
পরিত্যক্ত বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল। গ্রামের সবাই জানতো, গত বিশ বছর ধরে কেউ থাকে না বাড়িটিতে।
বাড়ির মালিক মারা গেছেন প্রায় ২২ বছর। তারপর তার ছেলে দুই বছর একজন পাহারাদার রেখেছিল।
পাহারাদার একবার জ্বরে ভুগেছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ।
এরপর বাড়ি চলে যায়। আর এর মধ্যে বাড়ির মালিকের ছেলেকেও কেউ আসতে দেখেনি।
তারপর থেকে পরিত্যক্তই ছিল বাড়িটি।

এক সকালে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক এসে ওঠে বাড়িতে। তারা সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গোছাতে শুরু করে বাড়িটি। দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য এঁটে দিয়েছে। আছে অনেকেগুলো বড় বড় ফুলদানি আর মনোরোম সব বাহারি রঙের পর্দা। কিন্তু আলো একেবারেই অপ্রতুল। ম্যারি আর ডিউক কেউই আলো তেমন পছন্দ করে না। গ্রামের অতি উৎসাহী যে দুয়েকজন ম্যারি আর ডিউকের সাথে দেখা করতে গেছে, তাদের ডিউক জানিয়ে দিয়েছে তারা বাড়ির মালিকের যে ছেলে আমেরিকায় থাকে তার অনুমতি নিয়েই থাকতে এসেছে। এরপর আর গ্রামবাসী তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

ম্যারি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে। বয়স ষোলো-সতেরো বছরের মতো হবে। কৃষ্ণাঙ্গ হলেও ম্যারির গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। তার চুলগুলো ঘন কালো আর কোঁকড়া, নাক তেমন মোটা না। বড় কালো চোখ খুব সহজেই আকর্ষণ করে। ম্যারি গোর্বিও গ্রামে আসার দুইদিন পর থেকেই মেন্টন শহরে একটা বারে কাজ নিয়েছে। সুন্দরভাবে সেজেগুজে, সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরেই ম্যারি কাজে যায়। সবার সাথেই ম্যারি হেসে হেসে কথা বলে, কিন্তু ২২-২৫ বছরের যেসব শেতাঙ্গ যুবক তার সাথে বা কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের সাথে ইভটিজিং করে, তাদের সাথেই ম্যারির আরও সখ্য তৈরি হয়। ম্যারি তার বাড়িতে তাদের কফি খাওয়ার দাওয়াত দেয়।

ইদানীং ম্যারি বাড়ির পেছনে তৈরি করছে একটা গোলাপ বাগান। মাত্র তিনটি গাছ লাগিয়েছে এ যাবৎ। একটি গাছে একটাই বড় গোলাপ, আর কোনো শাখা নেই। আর গাছে কোনো কাঁটাও নেই।

গোর্বিও গ্রামে ঘটে গেছে একটা অদ্ভুত দুর্ঘটনা। একটা পরিবারে বেড়াতে এসেছিল ২৩ বছরের যুবক হ্যারিস। ম্যারি একদিন বেশ আকর্ষণীয় শর্ট স্কার্ট আর স্লিভলেস পরে কাজে যাওয়ার সময় হ্যারিস ম্যারিকে টিজ করছিল। গ্রামের দুয়েকজন যুবক সেটা দেখেছে। উত্তরে ম্যারি চটে না গিয়ে হ্যারিসকে তারপর দিন তাদের বাড়িতে কফির দাওয়াত দিয়েছে। এরপর দিন সন্ধ্যা থেকে হ্যারিসকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ম্যারির দাদু ডিউক আর ম্যারি দুজনই ফিশ ফ্রাই, জুস আর বিয়ার খেতে পছন্দ করে। রান্না করা খাবার তারা কখনোই খায় না। কিন্তু অতিথিদের জন্য কেক, কফি, চকলেট সবই প্রস্তুত থাকে। সপ্তাহান্তে কেউ না কেউ আসেই ম্যারির বন্ধুরা। ম্যারি সাধারণত একজন অতিথি আসা পছন্দ করে। কিন্তু একই সাথে একদিন আসে ফ্লয়েড আর ফ্রাংক। ম্যারি ডিউককে বলেছে, দাদু দুজনই আমার খুব স্পেশাল অতিথি। ভালো করে কেক, ফল, বিয়ার এসব দাও। ডিউক ম্যারিকে সহাস্যে শুধায়, দুজনই সমান বিশেষ দাদু? ম্যারি বলেছে, হ্যাঁ দাদু। ফ্লয়েডকে দাদুর সাথে গল্পে বসিয়ে রেখে ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে।
তার দেড় ঘণ্টা পর ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে। খুব মুগ্ধ হয় ফ্রাংক। বাগানে এখন ২৫টি গাছ আছে, তার ভেতর একটি গাছ কালো। সেদিন রাতে ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করেছে, দাদু ভাই কতদিন কাজে যাবে না। একজন অতিথি আসলেই তিনদিন কাজে যাও না। আজ তো দুজন এসেছে। আজ খুব ধকল গেছে। ম্যারি জানিয়েছে, পাঁচদিন যাবে না।

এভাবেই কাজ, বন্ধুত্ব আর বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে অতিথি আপ্যায়নে চলে যাচ্ছে সময়। একদিন ডিউক বলে, তুমি কি আগের বারেই আছ দাদু ভাই? ম্যারি জানায়, না দাদু আমি আরেকটা বারে কাজ নিয়েছি এখন। ডিউক বলে, তোমার বাগানে দেখলাম ষাটটি গাছ লাগানো হয়েছে এখন। আর কতটা গাছ লাগাবে? ম্যারি হেসে জানায়, কেন তুমি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে গেছ? ডিউক হেসে বলে, আরে না সেরকম কিছু না। ম্যারি যেতে তো হবে আমাকেও তাই না? একশ গাছ হয়ে গেলেই এই গ্রামের সবাইকে ডেকে বাগান উন্মুক্ত করে দিয়ে তুমি আর আমি একরাতে চলে যাব। ডিউক জিজ্ঞেস করে, মাকে আর ছোট ভাইকে দেখতে গিয়েছিলে? ছলছল চোখে ম্যারি জানায়, মা আরও অসুস্থ হয়ে গেছে। আর মরিসকে (ম্যারির ছোট ভাই) হয়তো কোনো মিশনারিজ বা অর্ফান সেন্টারে দিয়ে দিতে হবে। ডিউক বলে, ঠিকানা দিও। আমি একদিন পথচারী হয়ে অনেক কিছু কিনে দিয়ে আসব। ম্যারির চোখেমুখে আনন্দ খেলে যায়।

একদিন কাজ করে ফিরছিল ম্যারি। এরই মধ্যে দুজন শেতাঙ্গ যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ম্যারির ওপর চড়াও হয়। এগিয়ে আসে শেরন নামের এক যুবক। শেরন তাদের কাছ থেকে ম্যারিকে নিরাপত্তা দিয়ে বাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যেতে যেতে শেরন শুধু জানতে চেয়েছে, তুমি একা যেতে পারবে তো? ম্যারি মিষ্টি হেসে জবাব দিয়েছে, নিশ্চয়ই। এরপর ম্যারি আর শেরন পরস্পরের ভিজিটিং কার্ড বিনিময় করে।

ম্যারি যে বারে কাজ করে তার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব্লু অ্যাঞ্জেল নামের একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ম্যানেজার হিসেবে শেরন কর্মরত। একদিন শেরন আসে ম্যারির সাথে দেখা করতে। ম্যারি খুব খুশি হয়। ম্যারি শেরনকে ভদকা অফার করে কিন্তু শেরন মৃদু হেসে জানিয়েছে অনলি বিয়ার। শেরন ম্যারিকে একদিন কফির দাওয়াত দেয়। এভাবেই কয়েকবার দেখা হয়ে যায় ম্যারি আর শেরনের। শেরনের অমায়িক ব্যবহার, বিনয়, ম্যারির খোঁজ-খবর নেওয়া সবই ম্যারির ভালো লাগে।

আগের মতো মদ্যপ, ইভটিজিং করা শেতাঙ্গ যুবকদের সাথে বন্ধুত্ব করা, বাসায় তাদের কফির নিমন্ত্রণ দেওয়া এসবে ম্যারির আগ্রহ কেমন মিইয়ে গেছে। বরং আরও কমনীয় সাজগোজ, শালীন পোশাক পরা, সুন্দর করে চোখে কাজল পরা এসবে কেমন যেন ম্যারি মনযোগী হয়ে উঠেছে। একদিন ডিউক টিপ্পনী কাটে, কি দাদুভাই? ফিরে যাবে নাকি! ম্যারি খুব রেগে যায়; বলে, শুধু ফিরে যাবার কথা বল না তো দাদু। আমি এখন এসব কিছুই ভাবছি না।

হাসপাতাল থেকে ফিরে লুসি শেরনের সব পছন্দের রান্না করতে লেগে যায়। রিটেলস, গৌগেরেস, এসকার্গটস, রাতাতোলে রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে লুসি। ছেলের জন্য এনে রেখেছে পোলো শার্ট, ওয়ালেট, ঘড়ি। আজ শেরনের চব্বিশ বছর পূর্ণ হলো।

চাকরি থেকে ফিরেই শেরন মাকে কোলে তুলে ফেলে।
লুসি আনন্দে কপট রাগ করে বলে, এই তুমি বড় হয়েছ না? লুসি শেরনকে বলে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও; খাবে চল। খেতে খেতে মা-ছেলে সারা সপ্তাহের গল্প বলে। লুসির হসপিটালে কোন পেশেন্টের কী অবস্থা? তারপর লুসির কলিগ ব্রাউনিয়া সিস্টারের অসুস্থ ছেলেটা এখন কেমন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম গল্প বলতে বলতেই শেরন ম্যারির কথা মা লুসিকে বলে। লুসি ম্যারির ছবি দেখতে চায়। কিন্তু শেরন কোনো ছবি দেখাতে পারে না।

এরপরও দুজন অতিথিকে নিয়ে আসে এবং গোলাপ বাগানও দেখিয়েছে। তারপর থেকে দশদিন যাবৎ বসে আছে ঘরে। কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় না ম্যারির। কী যেন এক অসহায়ত্ব পেয়ে বসেছে তাকে। দুদিন শেরন গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসেছে ম্যারির বারে। বার থেকে জানিয়েছে, ম্যারি দশদিন আসে না।

ম্যারির অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে এক সন্ধ্যায় শেরন আসে ম্যারির বাসায়। শেরনকে দেখে ম্যারি খুব খুশি হয়ে যায়। ম্যারি দৌড়ে গিয়ে শেরনকে জড়িয়ে ধরে। ডিউক ম্যারির কাণ্ডকীর্তি দেখে মুখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসে। ম্যারি শেরনের হাত ধরে ডিউকের কাছে নিয়ে যায়। বলে দাদু ওর নাম শেরন, ও আমার খুব ভালো বন্ধু, খুব ভালো ছেলে শেরন। ডিউক জিজ্ঞেস করে, ভালো বন্ধু নাকি স্পেশাল বন্ধু? ম্যারি জানায়, ভালো এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। ওর জন্য কেক, ফল, চকলেট, ফিশ ফ্রাই, ভালো বিয়ার সব দাও। ডিউক বলে, নিশ্চয়ই দেব। তোমার বন্ধুকে তোমার গোলাপ বাগান দেখাবে না? ম্যারি বলে, আমি না। তুমি দেখিয়ে নিয়ে আসবে।

এরপর শেরনের আর ম্যারির দেখা হয় বারবার কারণে-অকারণে। শেরন প্রায়ই ম্যারিকে নিয়ে কফিশপে যায়, ছোট ছোট উপহার দেয়। ম্যারিও শেরনকে উপহার দেয় মাঝে মাঝেই ওয়ালেট, পারফিউম, সুন্দর সুন্দর কলম। প্রায়ই শেরন আর ম্যারি ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন পার্ক, নদীর পাড়। শেরন একদিন বলে, চল, মায়ের হাসপাতালে গিয়ে মাকে চমকে দেই। ম্যারি বলে, আমি আজকে ভালো কাপড় পরে আসিনি। অন্যদিন লং স্কার্ট আর ফুল স্লিভ টপস পরে আসব, সেদিন যাব।

ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, দাদুভাই তুমি এসব কী করছ? এরপর যদি শেরন তোমাকে বিয়ে করতে চায়? তখন কী করবে! ম্যারি বলে, আগে সেরকম কিছু ঘটুক তারপর চিন্তা করব। এখন শেরন আমার খুব ভালো বন্ধু।

ম্যারির সাথে প্রতিদিন দেখা করাটা শেরনের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বিভিন্ন লেক, পার্ক, নদীর পাড় সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় দুজন। শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমাকে তোমার কেমন লাগে? ম্যারি দুষ্টুমি করে; কী হিসেবে? ছোট বোনের বর হিসেবে? শেরন ফের বলে, ছোট বোন শব্দটা কেটে দিয়ে উত্তর দাও। ম্যারি বলে, তুমি নিঃসন্দেহে খুব ভালো ছেলে। কিন্তু বলে ম্যারির চোখ ছলছল করে জলে। শেরন বলে, কী হলো ম্যারি? আমি কি তোমাকে আঘাত দিলাম? ম্যারি বলে, হ্যাঁ ভালোবাসার আঘাত দিয়েছ। শেরন ম্যারির হাত ধরে বলে, আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেব না কথা দিচ্ছি। ম্যারি শেরনের কাঁধে মাথা রাখে।

এরপর দুদিন ম্যারি তার কার্যালয়ে যায় না। শেরন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। কী হলো? আমি ম্যারিকে বুঝতে পারছি না। তৃতীয় দিন ম্যারি যায় শেরনের সাথে দেখা করতে। শেরন জিজ্ঞেস করে, তাকে এত টেনশনে রাখার কারণ কী? ম্যারি বলে, আমি একটু অসুস্থ ছিলাম। শেরন তাকে বলে, ফোনে তো জানাতে পারতে! শেরন ম্যারিকে বলে, আজ ডিনার করে আমি তোমাকে গোর্বিও পৌঁছে দিয়ে আসব।

দুজন মিলে একটা ছোট রেস্তোরাঁর একপাশে বসে। শেরন ম্যারিকে খাবার অর্ডার করতে বলে। আজ তারা গাজরের স্যুপ, ফিশ ফ্রাই, বিয়ার, আর পটেটো ফ্রাই অর্ডার করেছে। খাবার এলে শেরন ম্যারিকে বলে, আজ আমি তোমার সাথে আমার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে। আমার বাবা ছিলেন মদ্যপ এবং জুয়াড়ি। মা বাবাকে অনেক পছন্দ করতেন। তাই বাবার সবকিছু মেনে নিয়েও মা চেয়েছিলেন বাবার সাথে থাকতে। কিন্তু আমার যখন দশ বছর বয়স; তখন বাবা অন্য একজন নারীকে বিয়ে করে চলে যান। বাবা খুব সুদর্শন পুরুষ আর কথাও বলতেন অনেক সুন্দরভাবে। তাই নারীরা তাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু মায়ের সাথে বাবা চরম দুর্ব্যবহার করতেন। সবকিছুর পরেও মা মনে করতেন, আমি বড় হলে হয়তো বা বাবা পরিবর্তন হবেন আর সেদিনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু বাবা যখন মাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন; তখন মা খুব ভেঙে পড়েন। তখন মায়ের এক বন্ধু জিম কাকা মাকে খুব সাহায্য করেন এবং মনোবল জুগিয়ে যান। একসময় জিম কাকা মায়ের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। কিন্তু জিম কাকার ছিল দুই বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে।

মা নিজের জীবনের কষ্ট অন্য একজনের জীবনে আসতে দিতে চাননি। তাই জিম কাকাকে বিয়ে করতে রিফিউজ করেন। জিম কাকা তখন মায়ের সাথে লিভিং করতে চাইতেন। কিন্তু মা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বিয়ে না করে অন্য নারীর স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্কে একদমই বিশ্বাসী না। সেই থেকে মা আমাকে নিয়েই বেঁচে আছেন। আর আমার যখন আঠারো বছর বয়স হয়ে যায়, তখন মা আমাকে প্রতিজ্ঞা করান; আমি কোন মেয়ের সাথে যেন বিয়ে বন্ধন বা ফাদারের সামনে গিয়ে সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করি। তাই আজ অব্দি তোমার ঠোঁটে চুমু খাওয়া ছাড়া তোমার বুকেও হাত দেইনি। আমি মায়ের মৃত্যু অব্দি তোমাকে নিয়ে মায়ের সাথে থাকতে চাই। আর মা যেমন সুন্দর; তেমনই অমায়িক তার ব্যবহার। আমার মা বলে বলছি না, তুমি গেলেও দেখতে পাবে। আর হ্যাঁ, আগামী পরশু মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ম্যারি এতক্ষণ নিবিষ্ট মনে শুনে উত্তর দেয়, কিন্তু আমি তো কালো (কৃষ্ণাঙ্গ), তোমার মা আমাকে ছেলের বউ করে নেবেন কেন? শেরন উত্তর দেয়, আমি তো তোমার কথা মাকে বলেছি। আর তুমি যে কৃষ্ণাঙ্গ সেটাও বলেছি। মা বলেছেন, বর্ণবাদের কালো শাপ তোমাকে যেন ছোবল না দেয়। ম্যারি ছলছলে চোখ নিয়ে বলে, পৃথিবীটা তোমাদের মতো কেন না!

সেদিন বাসায় ফিরে ম্যারি ডিউকের সাথে একটা কথাও বলেনি। ম্যারি অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে পরে সিদ্ধান্ত নেয়; যা হওয়ার হবে আমি শেরনের মায়ের সাথে দেখা করব। উনাকে আমার ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছে।

নির্দিষ্ট দিনে ম্যারি লং স্কার্ট, ফুল স্লিভ টপস, কানে টপ, চোখে কাজল পরে যায় শেরনের মা লুসির সাথে দেখা করতে। ডাইনিং টেবিলে এসে ম্যারির চোখ কপালে। অন্তত পঁচিশ রকম খাবার প্রস্তুত করেছেন লুসি। ম্যারি শুধু জুস আর ফিশ ফ্রাই খায়। খাওয়া শেষ করে লুসি বলে, তোমার বাসায় আর কে কে আছেন মা? ম্যারি উত্তর দেয়, আমি আর দাদু। লুসি জিজ্ঞেস করে, আমার ছেলে তার জীবনের বিস্তীর্ণ পথে তোমাকে পাশে নিয়ে হাঁটতে চায় তুমি কি রাজি? ম্যারি বলে, শেরনের এই চাওয়া আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের। শেরন একজন আলোকিত মানুষ এবং যোগ্য পুরুষ। লুসি হেসে বলে, তুমিও খুব মিষ্টি মেয়ে। তারপর লুসি ম্যারির আঙুলে পরিয়ে দেয় একটা পার্পল রঙের হীরার আংটি। লুসি বলে, এতদিনে আমি ভারমুক্ত হলাম। আমার মাদার ইন ল আমাকে দিয়েছিলেন। আর আজ আমি তোমাকে দিলাম। তুমি দেবে তোমার ছেলের বউকে।

এবার ম্যারি আরও চিন্তায় নিমগ্ন হয়। কী করবে সে? সে কি ফিরে যাবে শেরনকে কিচ্ছু না জানিয়ে? তাহলে তো শেরন আমৃত্যু হয়তো বা কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের প্রতারক ভেবে ঘৃণা করতে থাকবে। নাকি সে শেরনের মনে নিজের জন্য ঘৃণার উদ্রেক করবে? আবার ভাবে, নাহ তা হয় না। এবার সে ডিউকের শরণাপন্ন হয়; বলে, দাদু আমাকে বলে দাও আমি কী করব? ডিউক বলে, তুমি সত্যের মুখোমুখি হবে। সত্যেই মুক্তি।

শেরন খুবই উল্লসিত। প্রতিদিনই কিছু না শপিং করছে ম্যারির জন্য। ম্যারির সাথে দেখা করে বলে, আগামীকাল তোমার জন্য গাউন অর্ডার করতে যাব। তুমি আমার সাথে যাবে। ম্যারি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলে, আচ্ছা যাব। গাউন বানাতে দিয়ে আসে শেরন আর ম্যারি। সাথে পার্লের মালা আর গোল্ড ব্রেসলেট।

‘নাহ আমি আর পারছি না! এভাবে হয় না। আমি বরং আমার মিশন শেষ করব। আজ যে কোনো একটা বারে গিয়ে বিকিনি আর শর্ট প্যান্ট পরে নাচানাচি করব। যদি শেরন এসে এ অবস্থায় আমাকে দেখে ফেলে আরও ভালো।’ এভাবেই নিজের সাথে কথপোকথন করছিল ম্যারি। আজ মেন্টনের সবচেয়ে ব্যস্ত ক্যাসিনো, যেখানে জুয়াড়িরা মেতে ওঠে ভয়ানক জুয়া খেলায়; সেখানে নাচতে চলে যায়। লাল বিকিনি, লাল লিপস্টিক, কালো শর্ট প্যান্ট পরে নেচে যাচ্ছে ম্যারি। ইতোমধ্যে জুটেছে কয়েকজন জুয়াড়ি। এরই মধ্যে মরিস রবার্ট এসে দিয়েছে খোঁচা; কিরে কালা বিল্লি এক রাত কত? ম্যারি ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বলে, ফ্রি সাথে কফি, বিয়ার, কেক যা খেতে চাও। আমার সাদা পুরুষের সাথে শুতে খুব লোভ হয়। একদিন আসো আমার আমার বাড়ি। রবার্ট এসে ম্যারির স্তনে হাত দিতে নেয়।
এই, এখানে না ডিয়ার। বলে ম্যারি পিছিয়ে যায়।

শেরন হন্যে হয়ে খুঁজছে ম্যারিকে। খুঁজতে খুঁজতে শেরন আসে ম্যারির অফিসে। ম্যারি রবার্টকে সাথে নিয়ে আসে নিজের বারে। শেরন ফিরে যাচ্ছিল নিজের কর্মক্ষেত্রে। এমন সময় রবার্টকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে ম্যারির অফিসে। ম্যারির সাজ-পোশাক শেরনকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। শেরন এসে ম্যারির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যারি আমি তোমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছি।
আর তোমার এই অবস্থা কেন? তেড়ে আসে রবার্ট; বলে, আমার গার্লফ্রেন্ড যা ইচ্ছে পরবে। তাতে তোমার কী? নিজের রাস্তা মাপো। শেরন বলে, তাই, তোমার গার্লফ্রেন্ড? তাহলে ওর হাতের পার্পল কালারের আংটিটাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস কর। রবার্ট এবার ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। শেরনের শার্টের কলার ধরে বলে, আংটির কিছু বলা লাগবে না। তুমি বল চান্দু। ম্যারি রবার্টের হাত সরিয়ে দিয়ে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, শেরনের মা আমাকে এ আংটি দিয়েছেন। তুমি যাও রবার্ট। তোমার সাথে পরে কথা হবে। রবার্ট বলে, আমি তোমাকে দেখে নেব কালা বিল্লি। ম্যারি চোখে হিংস্র চাহনিতে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

রবার্ট চলে যাওয়ার পর শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি কোথাও ভুল হচ্ছে? ম্যারি বলে, আগামীকাল বিকেলে পার্কে আমি তোমাকে সব বলব। এখন চল কোথাও গিয়ে ফিশ ফ্রাই আর জুস খাব।

সারারাত শেরন ছটফট করতে থাকে। ম্যারি কি তবে অন্য কাউকে ভালোবাসে? এমন প্রতারণা আমার সাথে কেন করল? এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেরন অল্পকিছু সময়ের জন্য শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে ম্যারির কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে। লুসি তার পাশে হাসিমুখে বসে আছে। হঠাৎ কপালে কারো স্পর্শ। ঘুম ভেঙে দেখে লুসি। মা বলে শেরন লুসির হাত জড়িয়ে ধরে। লুসি বলে, কিরে পাগলা কাজে যাবি না? শেরন বলে, যাব মা। খাবার দাও। লুসি খাবার টেবিলে দিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে যায়।

শেরন বিকেলে পার্কে এসে অপেক্ষা করে ম্যারির জন্য। ম্যারি আসে খুব স্নিগ্ধ সুন্দর সাজে। এসে দেখে শেরনের চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। ম্যারি বেশ বুঝতে পারছে কী ঝড় বইছে শেরনের ভেতরে। ম্যারি পাশে এসে বসে শেরনের হাত মুঠোয় পুরে নিয়ে বলে, শেরন আমি এখন যা বলব তার সবটুকু সত্য।

সেদিন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বাসায় ফিরতে। রাত এগারোটায় একা সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলাম। চার্চের কিছু দূরে যেতেই ছয়জন শেতাঙ্গ যুবক আমার পথ আটকায় আর আমার চারপাশে শিষ বাজাতে থাকে। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকে। বলে, বুক দেখ একেবারে কচি, কামড়ে কামড়ে খেতে বেশ মজা হবে। কালা মাগীর ঠোঁটগুলোও বেশ মাংসল। হিপটা দেখ, ডগি স্টাইলে দারুণ মজা হবে! এরপর শুরু করে ওরা টানা-হেঁচড়া। আমার কাপড় ছিঁড়তে থাকে ওরা। আমি প্রথমে ওদের খুব অনুরোধ করি, দয়াকরে আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার। আমার ভাইটার বয়স কেবল সাত বছর। ওরা আমাকে মারতে মারতে বলে, চুপ কর কালি মাগী! ছয় ছয় জন সাদা পুরুষ তোকে ভোগ করবে, এতেই তো তোর আনন্দ হওয়া উচিত। তোরা কালোরা এই সুন্দর পৃথিবীটাকে নোংরা করেছিস। এরপর ওরা ছয়জন আমাকে ধর্ষণ করে। আর এতে ওদের সাধ মেটেনি, ওরা আমাকে কণ্ঠরোধ করে হত্যা করে রেখে যায়।

পরদিন খুব সকালে চার্চের এক সিস্টার ওইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই ফুজি সিস্টার, আমার অফিসের আইডি কার্ডের মাধ্যমে আমার অফিসে যোগাযোগ করেন। এরপর আমি যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করতাম; তারা মাকে আর ভাইকে খবর দেয়। চার্চের ফাদারের সহযোগিতায় আমাকে সমাহিত করা হয়। আমার অফিস থেকে মাকে বলা হয়, আপনি কোনো কেস করবেন কিনা? আমার মা বলেন, আমি কাকে সন্দেহ করব? আর এসব করে কি আমি আমার মেয়েকে ফিরে পাব? সেদিন আমার ভাইটি সারারাত চিৎকার করতে থাকে; বলে, আমাকে কে চকলেট কিনে দেবে? ও ম্যারি দি ফিরে আস। বাবাও চলে গেলেন, তুমিও চলে গেলে আমার কী হবে! মা চিৎকার করেও কাঁদতে পারেনি। ভাইকে বুকে নিয়ে নীরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে আর বলেছে, ঈশ্বর আছেন। তিনি আমাদের দেখবেন।

ওই কান্না আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি ঈশ্বরকে বললাম, আমাকে কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে যাওয়ার অনুমতি দাও আর বিশেষ ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর জানতে চাইলেন, বেশ! কী ক্ষমতা চাও বলো। আমি বললাম, আমি বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবকদের ওপর প্রতিশোধ নেব।

ওরা যেই আমাকে ধর্ষণ করতে আসবে, আমি সাপ হয়ে পেচিয়ে ধরে ওদের গোলাপ গাছ করে দেব। আমাকে সেই ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর একজন দেবদূতকে বলেন, ম্যারির যোনিতে ঢুকে লক্ষ-কোটি সাপের ভ্রুণ পুতে দিয়ে আসো। দেবদূত এক প্রকাণ্ড সাপ হয়ে আমার যোনিতে ঢুকে যায় আর কোটি কোটি সাপের ভ্রুণ রেখে আসে আমার জরায়ুতে। আমি বারে কাজ নেই এ কারণেই। যখনই কোনো বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবক পেয়েছি নিয়ে গেছি বাড়ি অব্দি। আর বাড়ির পেছনে গিয়ে আমিই প্রলুব্ধ করেছি। যখনই আমার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে; তখনই ছোট ছোট অসংখ্য সাপ বের হয়েছে। তারপর ভয় পেয়ে যেই পালাতে চেয়েছে, আমিই মস্ত সাপ হয়ে সমস্ত শরীর জড়িয়ে ধরে কানে যেই কামড়ে দিয়েছি; অমনই গোলাপ গাছ হয়ে গেছে।

শেরন চোখভরা জল নিয়ে জিজ্ঞেস করছে, যারা তোমাকে রেপ করেছিল; তাদের কাউকে পেয়েছিলে? ম্যারি বলে, তুমি তো দাদুর সাথে গোলাপ বাগানে গিয়েছো। দুটো কালো গোলাপ দেখেছো না? শেরন বলে, হ্যাঁ। ম্যারি জানায়, ওই দুজন আমাকে রেপ করেছিল।

তারপর ম্যারি এবং শেরন কিছুক্ষণ চুপ থাকে। ম্যারি শেরনের কাছে ঘেঁষে বসে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি আমাকে ভয় বা ঘৃণা হচ্ছে? শেরন বলে, এসব কিছু হচ্ছে না। তবে একটি বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ম্যারি বলে, জানি; বলছি।

তারপর ম্যারি শেরনকে বলে যায় চোখের জল ফেলতে ফেলতে, শেরন তোমার সাথে পরিচয়ের আগ অব্দি আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, অধিকাংশ শেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গদের ঘৃণা করে। তারপর তোমার বিনয়, আমার প্রতি সম্মান এবং সর্বোপরি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে করতে চাওয়া এসব কিছুই তোমাকে ভালোবাসতে আমাকে বাধ্য করেছে। আর আমি কেবল আত্মা হলেও আমার বয়স সতেরো। প্রেম, ঘর-সংসার এসবের কিছুর সাথেই জীবদ্দশায় আমার পরিচিতি ঘটেনি। তাই এসব পেতে আমার ভীষণ লোভ হচ্ছিল। দু-একবার ভেবেছি, তোমাকে না বলেই স্বর্গে ফিরে যাব। কিন্তু তাতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মাতো আর তোমার সাথে প্রতারণাও করা হতো। আমি তোমার ক্ষতি চাই না কখনো। তুমি অনেক কষ্ট পাবে। তাই সেটা করতে পারিনি। আবার এও ভেবেছি যে, আমি উধাও হয়ে যাব আর তুমি যাকে বিয়ে করবে তার ভেতরে আমি প্রবেশ করে তোমার কাছে থেকে যাব। কিন্তু আবার ভেবেছি, তোমার সন্তানের মা তো হতে পারব না। আর তাছাড়া আমি তো ঈশ্বরকে কথা দিয়েছি যে, আমি ফিরে যাব। শেরন বলে, তোমার ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব আমার আর যতদিন বেঁচে আছেন, তোমার মাকেও আমি দেখব। তুমি কী করতে চাও? ম্যারি শেরনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও থেকে যেতে চাই; গাছ, ফুল, নদী, পাহাড় যে কোনো কিছু হয়ে। তুমি তোমার বাচ্চা এবং স্ত্রী নিয়ে সেখানে যাবে, আমি তোমাদের দেখব দুচোখ ভরে।

শেরন তারপর যায় চার্চে ফাদারের সাথে কথা বলতে। সাথে করে নিয়ে যায় ম্যারিকেও। ফাদার সবকিছু শুনে ডাকেন ম্যারিকে চার্চের ভেতরে। ফাদার বলে, কাম অন মাই চাইল্ড। অনেক কষ্ট পাচ্ছ তুমি! বল, আমি তোমার জন্য কী করতে পারি? শেরন বলে, ফাদার আপনি ঈশ্বরকে বলুন আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। আমাকে বরং রোজমেরি পার্কের সাথে একটা সুপেয় পানির হ্রদ করে দিন। যে পানি পান করলে যুগলদের ভেতর সৃষ্টি হবে প্রেম এবং সঙ্গম তৃষ্ণা। তারপর পৃথিবীতে জন্ম নেবে বিশুদ্ধ মানব প্রাণ; যাদের ভেতর থাকবে না কোনো বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা। তারা নিঃশঙ্ক চিত্তে ভালোবাসবে সব মানুষকে, সব শিশু, বৃদ্ধ, ফুল, পাখি সবাইকে। সব শুনে ফাদার বলেন, তোমরা দুজন আগামীকাল আসো। আজ গভীর রাত অব্দি আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব।

পরদিন শেরন আর ম্যারি আসে চার্চে। ফাদার দুজনকে দেখেই বুকের দুপাশে চেপে ধরে দুজনের কপালে চুমু দেন আর বলেন, মাই সুইট চিলড্রেন! ম্যারি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ফাদার বলুন ঈশ্বরের ইচ্ছা। ফাদার জানান, আমি স্বপ্নে দেখেছি; ঈশ্বর তোমার ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্দোষ ব্যক্তিদের তোমার গোলাপ বাগান থেকে অবমুক্ত করতে হবে। ম্যারি জিজ্ঞেস করে, নির্দোষ বুঝব কীভাবে? ফাদার বলেন, আমি বুঝতে পারব গোলাপের গন্ধ শুকে। আমাকে তোমার গোলাপ বাগানে নিয়ে চলো।

ফাদার, ম্যারি এবং শেরন আসে গোলাপ বাগানে। ফাদার গন্ধ শুকে দেখেন কালো গোলাপ দুটিতে অদ্ভুত দুর্গন্ধ। আর একটা আছে কমলা রঙের গোলাপ, সেটা থেকেও গন্ধ আসছে। কিন্তু বাকিগুলো থেকে গন্ধ আসছে না। ফাদার ম্যারিকে আর শেরনকে বলেন, শেরন তুমি ম্যারিকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। তখন ম্যারির চোখে যে জল আসবে, সেটা ছুঁয়ে দিলেই ওরা আবার মানুষ হয়ে যাবে। দুটি দুর্গন্ধযুক্ত কালো গোলাপ রয়ে যায়; পৃথিবীতে বর্ণবাদে খুনের চিহ্ন হিসেবে আর একটা কমলা গোলাপ থেকে যায় বর্ণবিদ্বেষের চিহ্ন হিসেবে।

এরপর ম্যারি আর শেরনকে নিয়ে ফাদার যান রোজমেরি পার্কের ভেতর। এক কোণে গিয়ে ফাদার শেরনকে বলেন, তুমি ম্যারিকে জড়িয়ে ধরে প্রগাঢ় আলিঙ্গন করে ওর ঠোঁটে গভীর চুমু দেবে আর আমি ম্যারির হাত দিয়ে আশীর্বাদ করব। অত্যন্ত আনন্দের সাথে ম্যারির প্রস্থান হবে আর গজিয়ে উঠবে সুপেয় পানির হ্রদ। আলিঙ্গনের আগে ম্যারি পার্পল কালার আংটি খুলে শেরনের হাতে দেয় আর বলে, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে কৃতজ্ঞ চিত্তে চলে যাচ্ছি কিংবা জন্ম নিচ্ছি ঝরনা হিসেবে। তুমি একটুও কষ্ট পেয়ো না শেরন। শেরন ফাদারের দিকে তাকায়। ফাদার হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেন আংটি নেওয়ার জন্য।

পরের রোববার শহরের সব মানুষ উপচে পড়ে নতুন সৃষ্টি হওয়া ঝরনা দেখার জন্য। মেন্টনের মেয়র ফাদারকে নিমন্ত্রণ জানান ঝরনাটি সবার জন্য অবমুক্ত করার জন্য। ফাদার বলেন, এই ঝরনা ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা। এই কিছুদিন আগেই আমরা ম্যারি নামের একটা প্রাণবন্ত কিশোরীকে হারিয়েছি। তার নামে ঝরনাটির নাম হোক ম্যারি। আর ঝরনার পাশে বানানো হবে ম্যারির একটা মূর্তি। কিছুদিন পর দেখা যায়, ম্যারির হাস্যোজ্জ্বল মূর্তি। ডানহাতের অনামিকায় শোভা পায় একটা পার্পল রঙের আংটি।

দৈনন্দিন

খাঁটি ঘি চেনার উপায় এবং উপকারিতা

খাঁটি ঘি চেনার উপায় এবং উপকারিতা
খাঁটি ঘি চেনার উপায় এবং উপকারিতা

ঘি একটি উৎকৃষ্ট এবং পুষ্টিকর খাবার। তাই আমাদের প্রাত্যহিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আমাদের সকলের খাদ্যতালিকায় ঘি প্রাধান্য দেয়া উচিত। আজকাল সকলের পছন্দের কথা বিবেচনা করা অনেক কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট আইটেম হিসেবে বাজারে এনেছে ঘি।

একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা অনেকে বাসায় নিয়ে আসি সেই ঘি। কিন্তু আমরা কি কখনো যাচাই করি আমরা যে ঘি বাজার থেকে নিয়ে আসছি সে ঘি কতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ বা খাঁটি। তাই চলুন জেনে নেই সঠিক উপায়

খাঁটি ঘি চেনার উপায় কি এবং ঘি নির্বাচন পদ্ধতি

আসল কিংবা নকল ঘি চেনার জন্য রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি। চলুন জেনে নেই ঘি নির্বাচনের পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে

হাতের তালুতে নিয়ে খাঁটি ঘি শনাক্তকরণ 

আপনি যদি ঘি শনাক্তকরণের প্রাথমিক ভাবে কোন একটি উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে-অবলম্বন করতে পারেন এই পদ্ধতি। প্রথমে এক চামচ ঘি আপনার হাতের তালুতে রাখুন। আপনার শরীরের উষ্ণতায় যদি ঘি গলে যায় তাহলে বুঝে নিতে পারেন যে আপনার ব্যবহৃত ঘি খাঁটি। 

ল্যাবে টেস্ট করার মাধ্যমে ভেজাল ঘি চেনার উপায় 

ঘি শনাক্তকরণের আরেকটি পদ্ধতির নাম হল ল্যাব টেস্ট। ল্যাবে ঘি টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজে আপনি আসল কিংবা নকল ঘি শনাক্ত করতে পারবেন। দেশের যে কোনো অনুমোদিত সরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করতে পারেন। 

চুলায় গরম করে ঘি শনাক্তকরণ পদ্ধতি

আপনি যদি খাঁটি ঘি শনাক্ত করতে চান তাহলে চুলায় শনাক্ত করতে পারেন। প্রথমে একটি কড়াইয়ে আপনি ঘি নিয়ে চুলার উপর বসিয়ে নিন। চুলায় বসানো পর যদি দেখেন ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে তখন  বুঝে নিতে হবে আপনাকে নকল ঘি দেওয়া হয়েছে। 

কোলটার ডাই শনাক্তকরনের মাদ্ধমে খাঁটি ঘি চেনার উপায়

ঘি শনাক্তকরণের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি উপায় হল কোলটার ডাই শনাক্তকরণ পদ্ধতি। এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে আপনার ব্যবহৃত ১ চামচ ঘি নিয়ে ৫ মিঃলিঃ হাইড্রোক্লোরিক এসিড যুক্ত করতে হবে। ভালোভাবে মেশানোর কিছুক্ষণ পর যদি মিশ্রণটির রং লাল হয়ে যায় তাহলে আপনি বুঝতে হবে যে, আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন যে ঘি খাঁটি নয়। এটি তৈরির ক্ষেত্রে কোলটার ডাই ব্যবহার করা হয়েছে। 

সিদ্ধ আলু ব্যবহার করে শনাক্তকরণ

ঘি এর মধ্যে আলু সিদ্ধ ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটা যদি শনাক্ত করতে চান তার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিতে হবে। সেই ঘি এর সাথে আপনি সামান্য পরিমাণ আয়োডিন মেশাতে হবে। কিছুক্ষনের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখবেন যদি ঘি এর মিশ্রণের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হয় তাহলে বুঝে নিবেন যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে সিদ্ধ আলু ব্যবহার করা হয়েছে। 

ঘি থেকে ডালডা শনাক্তকরনের মাদ্ধমে ভেজাল ঘি চেনার উপায় 

প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিয়ে তার মধ্যে আপনাকে যুক্ত করতে হবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড। যদি কিছুক্ষন পর দেখন যে, ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে তা বেশ লালচে কিংবা বাদামি লালচে রং ধারণ করেছে তাহলে বুঝতে হবে যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে ডালডা ব্যবহার করা হয়েছে। 

তিলের তেল ব্যবহার করে খাঁটি ঘি চেনার উপায়

ঘি থেকে তিলের তেল শনাক্তকরণের জন্য প্রথমে আপনি একটি পাত্রে অল্পকিছু ঘি নিয়ে নিন । ঘি এর সাথে আপনি পরিমাণ অনুযায়ী ফারফিউরাল এসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। যদি আপনার মিশ্রণটিতে রং পরিবর্তন হয় এবং তা লালচে রং ধারণ করে তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন সে ঘি তৈরি করার জন্য তিলের তেল ব্যবহার করা হয়েছে। 

ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি?
ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি?

ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি?

ঘি এমন একটি খাবার যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের অনেক উপকার করে । খাঁটি ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে বললে অনেক কথাই বলা যায় তবে এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো: 

– চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

– মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

– শরীরে হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে।

– হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

– ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে।

– স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।

ঘি খাওয়ার অপকারিতা কি?
ঘি খাওয়ার অপকারিতা কি?

ঘি খাওয়ার অপকারিতা কি?

প্রতি জিনিসেরই ভালো মন্দ ২ টা দিকই থাকে । অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় ।  ঘি এর বেলাতেও এটি ব্যতিক্রম নয় । উপকারিতার পাশাপাশি বেশি ঘি খাওয়ার কারণে বেশ কিছু ঘি এর অপকারিতা রয়েছে যেমন –
– অতিরিক্ত ঘি খেলে আমাদের হজমে সমস্যা হতে পারে। 
– অতিরিক্ত ঘি গ্যাস্ট্রিকের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে। 
– অতিরিক্ত ঘি খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা জন্ম দিতে পারে। 

আমাদের সকলের পছন্দ এর একটি খাদ্য হল ঘি। উপকারী একটি খাবার হলেও কখনো প্ৰয়োজনের বেশি ঘি খাওয়া উচিত নয়, ঘি এর ব্যবহার ঠিক মত না করলে তখন হিতে-বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে কি ওজন কমে?

লেখক

সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে কি ওজন কমে?
সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে কি ওজন কমে?

অনেকেই রান্নার জন্য ভিন্ন ভিন্ন তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহারের কথা বলছেন। শুধু তাই নয়, একদম নন রিফাইন্ড সরিষার তেল খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঘানি থেকে আনা সরিষার তেল স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্যেও ভালো।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল করোনারি হার্ট ডিজিজ । রান্নার তেলগুলি এই হার্টের রোগের চিকিৎসা ও ঝুঁকি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। সেই সঙ্গে হৃদরোগজনিত নানা ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

সরিষার তেল যেভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে

সরিষার তেলের রান্না হৃৎপিণ্ড, হাড়, হজম এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর। এতে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি রয়েছে। এই তেল ডিপ ফ্রাই, খাবার গরম এবং খাবারে অনন্য স্বাদ আনতে অসাধারণ কার্যকর। যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন বা যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিনের রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করা উচিত। এই তেল হজ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সরিষার তেল লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে। আর খাবার দ্রুত হজম হলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে,ঝাঁঝালো স্বাদের সরিষার তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই তেলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডে কেবল খাবারের স্বাদই উন্নত করে না, রক্তে চর্বির মাত্রাও হ্রাস করে।

​যেভাবে ব্যবহার করবেন সরিষার তেল

অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় । অতএব, যতটা সম্ভব সরিষার তেলে ভাজা জিনিস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সবজি রান্না করার সরিষার বীজ ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল আগে ভালো করে গরম করতে হবে। তেল অপরিশোধিত হলে ব্যবহার করবেন না।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি

ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি
ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি

ঘি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতনরা প্রতিদিনই পাতে রাখেন ঘি। আগে অনেকেরই ধারণা ছিল, ঘি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। তবে এ ধারণা একেবারেই ভুল।

কারণ ঘি’তে থাকা ভালো চর্বি শরীরে জমে থাকা খারাপ চর্বিকে ধ্বংস করে। এছাড়াও ঘি’র অনেক উপকারিতা আছে। তবে বাজার থেকে কেনা খাঁটি ঘি আর ঘরে তৈরি ঘি’র মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।

বাজারে অনেক ভেজাল ঘি’র মোড়কে খাঁটি লেখা স্টিকার থাকে। যা খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ঘরেই খুব সহজে তৈরি করতে পারেন খাঁটি ঘি।

অনেকেই ভাবেন ঘরে ঘি তৈরি করা খুবই কষ্টকর। তবে জানলে অবাক হবেন মাত্র ২ উপাদান দিয়েই ঘরে তৈরি করতে পারবেন খাঁটি ঘি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি
ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি

উপকরণ

১. দুধের সর ১ কেজি ও
২. ঠাণ্ডা পানি পরিমাণমতো।

পদ্ধতি

প্রথমে দুধের সর খুব মিহি করে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে পরিষ্কার শিল-পাটায় বেটেও নিতে পারেন। এবার সর বাটা মাটির পাত্রে নিয়ে কাঠের পরিষ্কার ডাল ঘুটনি দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঘুটতে থাকুন।

ডিম ফেটানোর বিটার দিয়েও এটি করতে পারেন। দেখবেন সর থেকে একসময় মাখন আলাদা হয়ে গেছে। বাটার আলাদা হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে আবার বিট করলে দেখবেন পানি ও মাখন আলাদা হয়ে যাবে।

যখন মাখন সবটুকু পরিষ্কার হয়ে পানির উপরে উঠে আসবে তখন পানি থেকে মাখন ছেঁকে তুলুন। আর পানি আলাদা করে রাখুন। এই পানিই হলো বাটার মিল্ক। যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এই বাটার মিল্ক পরে রুটি, পিঠা ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারেন।

ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি
ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি

এবার মাখন থেকে পানি পুরোপুরি বের করতে একটি পাতলা মসলিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া মাখন বেঁধে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখুন ৪-৫ ঘণ্টা। এরপর একটি পরিষ্কার লোহার কড়াইয়ে মাখন অল্প আঁচে অনবরত নাড়তে থাকুন।

বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পরে মাখন থকে থেকে ঘি বের হতে থাকবে। এটাই হলো খাঁটি গাওয়া ঘি। সবটুকু মাখন যখন পুড়ে কালো হয়ে যাবে তখন দেখবেন ঘি গাঢ় সোনালি রং ধারণ করেছে ও সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। আর তখনই বুঝতে হবে আসল ঘি তৈরি হয়ে গেছে।

এরপর ঘি নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। দেখবেন পোড়া অংশ ঘি’র সঙ্গে যেন মিশে না যায়। তারপর শুকনো কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল খাঁটি ঘি।

মনে রাখবেন, মাখন আলাদা করার জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করবেন। স্টিল বা অন্যান্য তৈজসপত্র ব্যবহার করলে মাখন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

রক্তশূন্যতা দূর করতে উপকারী যেসব পানীয়

লেখক

রক্তশূন্যতা দূর করতে উপকারী যেসব পানীয়
রক্তশূন্যতা দূর করতে উপকারী যেসব পানীয়

যে কারও রক্তশূন্যতা হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই সমস্যা প্রবল। মূলত শরীরে আয়রনের অভাব থেকেই এই সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বা ভারসাম্য ঠিক রাখা প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার।

রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে নীচে নেমে গেলে সেটাকেই রক্তশূন্যতা বলে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার গণনা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাপ সম্ভব।

মাংস, মাছ, পালং শাক, বিট, মটরের মতো খাবার শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। যাদের রক্তশূন্যতা আছে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় তারা কিছু পানীয় যোগ করতে পারেন। যেমন-

বিটের জুস: যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম, চিকিৎসকরা প্রায়ই তাদের বিটের রস পান করার পরামর্শ দেন। এতে ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন, বেটাইন এবং ভিটামিন সিসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিটের জুস পান করলে লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করতে সাহায্য করে।

তৈরির পদ্ধতি
: বিটের রস তৈরি করতে ২টি মাঝারি বিট, ১টি শসা এবং ১ ইঞ্চি আদা পাতলা টুকরো করে কেটে নিন। প্রথমে লেবুর হলুদ খোসা কেটে নিন। টুকরো টুকরো করে কেটে রেখে দিন। লেবুর বীজগুলো ফেলে দিন। এবার এটিকে জুসারে রেখে ফিল্টার করে পান করুন।


​পালং ও পুদিনার রস:
রক্তশূন্যতা দূর করতে শাক দারুন উপকারী।  এতে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন বি টুয়েলভ, ফলিক অ্যাসিডের মত পুষ্টি রয়েছে। আধা কাপ পালং শাকে প্রায় ৩৫ শতাংশ আয়রন এবং ৩৩ শতাংশ ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। পালং এর স্যুপও রক্তাশূন্যতা দূর করার একটি অন্যতম উপাদান। এ ছাড়া এক গ্লাস তাজা পালং শাকের রসে দুই চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তৈরির পদ্ধতি: ১ কাপ সুক্ষ্ম করে কাটা পুদিনা এবং আধ কাপ পানিতে ২ কাপ মোটা করে কাটা পালং শাক কেটে রেখে দিন। এর পর দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ভালো করে মিশে গেলে ছেঁকে নিন। স্বাদ বাড়াতে চাইলে এতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১চা চামচ জিরা গুঁড়ো যোগ করতে পারেন। চাইলে এতে বরফ কিউবও যোগ করতে পারেন।

ডালিমের রস: রক্তশূন্যতা দূর করতে ডালিম বা বেদানার রসের তুলনা নেই। এক কাপ ডালিমের রসে এক চতুর্থাংশ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো এবং দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালের নাস্তার সঙ্গে এই মিশ্রণটি খেতে পারেন। এক গ্লাস গরম দুধে দু’চামচ শুকনো ডালিমের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে একবার বা দু’বার পান করলেও উপকার মিলবে।

মিক্সড ভেজিটেবল জুস: ভেজি মিক্স স্যুপ হল বিভিন্ন রকমের সবজির মিশ্রণ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ,আয়রন, ভিটামিন সি এবং ফাইবার পাওয়া যায়। আয়রন সমৃদ্ধ এই রস পান করতে খুবই সুস্বাদু।

তৈরির পদ্ধতি: ১ কাপ কলা, ১ কাপ কাটা লাউ, ১/৪ কাপ আমলকি এবং এক টেবিল চামচ মধু, দু’কাপ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে মিক্সারে ব্লেন্ড করুন। সম্পূর্ণ ব্লেন্ড হয়ে গেলে এটি ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করুন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

বড় মাছের এক পদ

সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ক্রিসপি জিনজার হানি ফিশ
সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ক্রিসপি জিনজার হানি ফিশ

সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ক্রিসপি জিনজার হানি ফিশ

উপকরণ ১

রুই মাছের ফিলে ২৫০ গ্রাম, আদার রস ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ১ টেবিল চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ ও গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ।

উপকরণ ২

ময়দা ৩ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ৩ টেবিল চামচ ও লবণ সামান্য।

উপকরণ ৩

আদা (জুলিয়ান কাট) ২ টেবিল চামচ, রসুন মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ১ টেবিল চামচ, লাইট সয়াসস ১ টেবিল চামচ, অয়েস্টার সস ১ টেবিল চামচ, মধু ২ টেবিল চামচ, পাপরিকা ১ চা–চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ সামান্য ও তেল ৫ টেবিল চামচ।

প্রণালি

প্রথমে মাছ পছন্দমতো টুকরা করে উপকরণ–১–এর সব দিয়ে মেখে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর উপকরণ–২–এর সবকিছুতে পরিমাণমতো পানি দিয়ে মেখে মাছগুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে ডুবো তেলে বাদামি রং করে ভেজে ওঠাতে হবে।

এরপর পাঁচ টেবিল চামচ তেল গরম করে আদা ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলে রসুন ও পেঁয়াজ ভেজে আধা কাপ পানি দিয়ে পর্যায়ক্রমে উপকরণ–৩–এর সব দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামাতে হবে।

পরিবেশন পাত্রে ঢেলে মাছের ওপরে ভাজা আদাকুচি দিয়ে পছন্দমতো সাজিয়ে ফ্রায়েড রাইস, পোলাও বা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ