জৈব
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ: নিয়ম, উপকারিতা ও গুরুত্ব – দা এগ্রো নিউজ
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ একটি পরিবেশ-বান্ধব ও টেকসই কৃষি পদ্ধতি যা বর্তমানে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং অন্যান্য কৃত্রিম উপাদান ছাড়াই এই পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন করা হয়, যা স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের নিয়ম, এর উপকারিতা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে।
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার নিয়ম
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধাপ এবং নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে পালন করলে উৎপাদন বাড়ে এবং মাছের গুণগত মান উন্নত হয়।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
পুকুরের অবস্থান: বন্যামুক্ত এবং রোদ পড়ে এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন।
পুকুর পরিষ্কার: পুকুরের আগাছা, অপ্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদ এবং অপ্রয়োজনীয় মাছ পরিষ্কার করুন।
পানি পরীক্ষা: পানির pH মান ৬.৫-৮.৫ হওয়া উচিত। পুকুরের গভীরতা ১.৫-২.৫ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
জৈব সার প্রয়োগ: পুকুরের মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য গোবর, মুরগির বিষ্ঠা এবং কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করুন।
প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন
- পুকুরে শেওলা, ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং জুপ্ল্যাংকটন বাড়ানোর জন্য জৈব সার ব্যবহার করুন।
- কচুরিপানা, নেপিয়ার ঘাস এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ পুকুরে রাখুন।
মাছের প্রজাতি নির্বাচন
- দেশীয় মাছের প্রজাতি যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া এবং পুঁটি নির্বাচন করুন।
- বিভিন্ন স্তরের মাছ চাষ করুন, যেমন রুই (উপরের স্তর), কাতলা (মাঝের স্তর) এবং মৃগেল (নিচের স্তর)।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- মাছের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজন হলে ধান ভিজিয়ে রাখা, গমের ভূষি, এবং শাকসবজি থেকে তৈরি জৈব খাদ্য সরবরাহ করুন।
পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণ
- নিয়মিত পুকুরের পানির মান এবং স্তর পরীক্ষা করুন।
- পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য জৈব পদ্ধতিতে তৈরি এয়ারেটর ব্যবহার করুন।
মাছের স্বাস্থ্য রক্ষা
- মাছের রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান যেমন নিমপাতা, রসুন, হলুদ ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত মাছের আচরণ ও বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করুন।
ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ
- নির্ধারিত সময়ে মাছ সংগ্রহ করুন।
- জৈব মাছের উচ্চ চাহিদার কথা মাথায় রেখে সঠিকভাবে বাজারজাত করুন।
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের উপকারিতা
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে শুধুমাত্র পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্য এবং চাষিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্বাস্থ্যকর উৎপাদন: রাসায়নিক মুক্ত এই মাছ মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পুষ্টিকর।
পরিবেশ সংরক্ষণ: এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় না, ফলে মাটি ও পানির গুণমান বজায় থাকে।
কম উৎপাদন খরচ: প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করায় উৎপাদন খরচ কম হয়।
উচ্চ বাজারমূল্য: জৈব মাছের চাহিদা বেশি, ফলে বাজারমূল্যও বেশি।
জলজ জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ: প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের গুরুত্ব
টেকসই মৎস্য উন্নয়ন: জৈব পদ্ধতি মাছ চাষকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই করে তোলে।
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি: এই পদ্ধতি মাটি ও পানির দূষণ প্রতিরোধ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমায়।
খাদ্য নিরাপত্তা: জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: জৈব মাছের উচ্চ বাজারমূল্যের কারণে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: জৈব পদ্ধতির প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়।
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যা পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক নিয়ম মেনে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে এটি চাষিদের জন্য যেমন লাভজনক হবে, তেমনি পরিবেশের জন্যও উপকারী। তাই, আগামী দিনের জন্য জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রসার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জৈব
খামার বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি: পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক কৃষি উদ্যোগ – দা এগ্রো নিউজ
খামার বর্জ্য যেমন গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, পাতা-ঝরা, শস্যের খোসা, এবং অন্যান্য জৈব উপাদান থেকে জৈব সার তৈরি একটি সহজ, পরিবেশবান্ধব এবং লাভজনক পদ্ধতি। সঠিক উপায়ে এই বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি গুণগত মানের জৈব সার উৎপাদন করতে পারেন, যা মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
জৈবসার তৈরির উপকারিতা
খামার বা জৈব বর্জ্য থেকে জৈবসার তৈরি কৃষিক্ষেত্রে একটি পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকরী পদ্ধতি। এটি রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং ফসল উৎপাদনে অনেক সুবিধা প্রদান করে। নিচে জৈবসার তৈরির প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি:
- জৈবসার মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে।
- এটি মাটির পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে মাটিকে দীর্ঘমেয়াদে উর্বর রাখে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই
- রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটি ও পানির দূষণ প্রতিরোধ করে।
- কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নে সহায়ক।
ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
- জৈবসার ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
- এটি গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
খরচ সাশ্রয়
- খামারের সহজলভ্য বর্জ্য ব্যবহার করে জৈবসার তৈরি করা যায়।
- এটি রাসায়নিক সারের চেয়ে অনেক সস্তা।
মাটির গঠন উন্নত করা
- জৈবসার মাটির গঠন মজবুত করে।
- এটি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সঠিকভাবে শিকড়ের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- খামারের বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে এটি পরিবেশ রক্ষা করে।
- বর্জ্য অপচয় না করে জৈবসারে রূপান্তর করা সম্ভব।
মাটির জীববৈচিত্র্য উন্নত করা
- জৈবসার মাটির উপকারী জীবাণু এবং কেঁচোদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
- এটি মাটির স্বাস্থ্য এবং ফসলের গুণগত মান উন্নত করে।
রাসায়নিকের ক্ষতি থেকে মুক্তি
- রাসায়নিক সারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি যেমন—মাটির পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, এড়ানো যায়।
- এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ফসলের জন্য নিরাপদ।
জৈবসার তৈরির মাধ্যমে কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খরচ সাশ্রয় এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খামারের বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে জৈবসার তৈরি করুন এবং আপনার কৃষিকে আরও লাভজনক ও টেকসই করে তুলুন।
জৈবসার তৈরি করার উপকরণ
জৈবসার তৈরি করতে বিভিন্ন প্রকার জৈব ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এগুলো সহজলভ্য, পরিবেশবান্ধব এবং খরচ সাশ্রয়ী। নিচে জৈবসার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো উল্লেখ করা হলো:
জৈব উপাদান
- পশুর মল-মূত্র: গরু, মুরগি বা ভেড়ার মল-মূত্র।
- শস্যের অবশিষ্টাংশ: ধান, গম, ভুট্টা বা অন্যান্য ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ।
- খড় বা শুকনো ঘাস: কার্বন সরবরাহ করে।
খাদ্য বর্জ্য
- বাসি খাবার বা পচা ফল।
- শাকসবজির খোসা, আলুর খোসা, কলার খোসা ইত্যাদি।
পাতা ও গাছের অবশিষ্টাংশ
- নিম পাতা, বকাইন পাতা বা অন্যান্য গাছের শুকনো পাতা।
- গাছের ছাল বা বাকল।
প্রাকৃতিক উপাদান
- চুন: পিএইচ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
- এপসোম লবণ: পচন প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য।
- কেঁচো: ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির জন্য।
মাটির উপাদান
- বালি বা মাটির ছোট স্তর মিশ্রণ।
- টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি)।
পানি
- সারের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পরিষ্কার পানি।
অন্যান্য উপকরণ
- কাঠের গুঁড়া বা করাতের গুঁড়া।
- কাগজ বা কার্ডবোর্ড (যদি প্রয়োজন হয়)।
উপকরণ ব্যবহারের পদ্ধতি
- উপকরণগুলোকে সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে স্তূপ তৈরি করুন।
- কার্বন এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ উপাদান ব্যবহার করুন।
- স্তরের মধ্যে পানি দিন এবং মিশ্রণ ঘুরিয়ে দিন।
জৈব সার তৈরির জন্য এই উপকরণগুলো সহজেই খামার বা স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা যায়। সঠিক উপকরণ ও পদ্ধতি ব্যবহার করলে আপনি পরিবেশবান্ধব এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ জৈব সার তৈরি করতে পারবেন, যা আপনার কৃষিক্ষেত্রে ফলন বাড়াতে সহায়ক হবে।
খামার বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির ধাপসমূহ
খামার বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি একটি সহজ ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এটি মাটির উর্বরতা বাড়াতে এবং ফসলের উৎপাদন খরচ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। নিচে ধাপে ধাপে জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:
স্থান নির্বাচন
- জৈব সার তৈরির জন্য ছায়াযুক্ত ও শুকনো একটি জায়গা নির্বাচন করুন।
- মাটিতে চৌবাচ্চা বা ৩-৫ ফুট গভীর একটি গর্ত তৈরি করুন।
- পানি জমে না এমন উঁচু জায়গা সবচেয়ে ভালো।
উপকরণ সংগ্রহ
- জৈব উপাদান: পশুর মল-মূত্র, শস্যের অবশিষ্টাংশ, পাতা, ঘাস।
- খাদ্য বর্জ্য: বাসি খাবার, শাকসবজির খোসা।
- অন্যান্য উপাদান: খড়, শুকনো পাতা, নিম পাতা, গাছের বাকল।
- বর্জ্যগুলো মিশ্রণের জন্য প্রস্তুত করুন।
স্তর তৈরি করা
- গর্ত বা চৌবাচ্চার নিচে শুকনো উপাদান (যেমন খড় বা শুকনো পাতা) বিছিয়ে নিন।
- এর ওপরে জৈব বর্জ্য ছড়িয়ে দিন।
- একের পর এক স্তর তৈরি করুন। প্রতিটি স্তর প্রায় ৪-৬ ইঞ্চি পুরু হওয়া উচিত।
আর্দ্রতা বজায় রাখা
- স্তরের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি দিন যাতে সারের আর্দ্রতা ৪০-৬০% বজায় থাকে।
- বেশি শুকনো হলে পচন প্রক্রিয়া ধীর হবে।
- আর্দ্রতা পরীক্ষা করার জন্য হাত দিয়ে মিশ্রণ চেপে ধরুন—পানি গড়িয়ে না পড়ে তবে বুঝতে হবে আর্দ্রতা ঠিক আছে।
স্তূপ ঘোরা
- প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর স্তূপ উল্টে দিন।
- এতে বায়ু চলাচল ভালো হয় এবং পচন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
- পচন প্রক্রিয়ার তাপমাত্রা ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বজায় রাখুন।
পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া
- ২-৩ মাসের মধ্যে সারের রং কালচে হয়ে আসবে এবং গন্ধ চলে যাবে।
- পচন সম্পন্ন হলে জৈব সার ব্যবহার উপযোগী হবে।
জৈব সার তৈরির সময় করণীয় ও সতর্কতা
- পচন ত্বরান্বিত করতে নিমপাতা বা এপসোম লবণ যোগ করুন।
- রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণে ব্যবহার করবেন না।
- বৃষ্টির সময় গর্ত ঢেকে রাখুন।
- সঠিক অনুপাতে কার্বন (শুকনো উপাদান) এবং নাইট্রোজেন (তাজা বর্জ্য) উপাদান মিশ্রণ করুন।
খামার বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি আপনার জমির উর্বরতা বাড়িয়ে উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করবে। পরিবেশ রক্ষা এবং খরচ কমাতে এটি একটি কার্যকর উপায়। সঠিক ধাপ অনুসরণ করে জৈব সার তৈরি করুন এবং আপনার কৃষিকে আরও উন্নত ও লাভজনক করে তুলুন।
জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতা
জৈব সার কৃষিক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং পরিবেশবান্ধব উপাদান। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা উন্নত করে। জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব। নিচে জৈব সার ব্যবহারের প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি
- জৈব সার মাটিতে প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ যোগ করে।
- এটি নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
ফসলের ফলন বৃদ্ধি
- জৈব সার ব্যবহারে ফসল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- এটি গাছের শিকড় শক্তিশালী করে এবং ফলন বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই
- জৈব সার ব্যবহার মাটির রাসায়নিক দূষণ রোধ করে।
- এটি পরিবেশবান্ধব, কারণ এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি।
মাটির গঠন উন্নত করা
- জৈব সার মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
- এটি মাটির গঠন মজবুত করে এবং ক্ষয় রোধ করে।
মাটির জীববৈচিত্র্য উন্নয়ন
- জৈব সার মাটিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং কেঁচোদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
- মাটির প্রাকৃতিক পুষ্টি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
রাসায়নিক সারের বিকল্প
- রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি এড়ানো যায়।
- জৈব সার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ফসলের জন্য নিরাপদ।
খরচ সাশ্রয়
- স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে জৈব সার তৈরি সম্ভব।
- এটি রাসায়নিক সারের চেয়ে অনেক সস্তা।
মাটির পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখা
- জৈব সার মাটির অম্লতা বা ক্ষারত্বের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
- এটি মাটির দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
বর্জ্য পুনর্ব্যবহার
- খামারের বর্জ্য জৈব সার তৈরিতে ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমানো যায়।
- এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মিশ্রসারের ব্যবহার কৃষি উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে, ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং খরচ কমায়। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করলে কৃষিক্ষেত্র আরও পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই হয়ে ওঠে। সঠিক পদ্ধতিতে জৈব সার প্রয়োগ করুন এবং আপনার কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
জৈব সার তৈরির টিপস
জৈব সার তৈরি সঠিক পদ্ধতি এবং উপকরণ অনুসরণ করলে এটি কৃষি জমির জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। জৈব সার তৈরির সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখলে পচন প্রক্রিয়া দ্রুত হবে এবং সারের গুণগত মান উন্নত হবে। নিচে জৈব সার তৈরির কিছু কার্যকর টিপস উল্লেখ করা হলো:
সঠিক উপকরণ নির্বাচন করুন
- কার্বন সমৃদ্ধ উপাদান যেমন শুকনো পাতা, খড়, গাছের বাকল ব্যবহার করুন।
- নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ উপাদান যেমন গরুর মল-মূত্র, সবজি ও ফলের খোসা যোগ করুন।
- পচন প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য নিমপাতা, চুন এবং এপসোম লবণ ব্যবহার করতে পারেন।
সঠিক অনুপাত বজায় রাখুন
- কার্বন এবং নাইট্রোজেনের অনুপাত ৩০:১ হওয়া উচিত।
- অত্যধিক নাইট্রোজেন মিশ্রণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে, তাই সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখুন।
স্তর তৈরি করুন
- গর্ত বা চৌবাচ্চার নিচে শুকনো উপাদানের স্তর তৈরি করুন।
- এর ওপর জৈব বর্জ্য ছড়িয়ে দিন এবং এভাবে একের পর এক স্তর তৈরি করুন।
আর্দ্রতা বজায় রাখুন
- মিশ্রণের আর্দ্রতা ৪০-৬০% রাখা জরুরি।
- মিশ্রণ বেশি শুকিয়ে গেলে পানি দিন এবং অতিরিক্ত ভেজা হলে শুকনো উপাদান যোগ করুন।
স্তূপ উল্টে দিন
- প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর মিশ্রণের স্তূপ উল্টে দিন।
- এতে বায়ু চলাচল বাড়ে এবং পচন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
স্থান নির্বাচন করুন
- জৈব সার তৈরির জন্য ছায়াযুক্ত ও শুকনো স্থান নির্বাচন করুন।
- জায়গাটি পানি জমে না এমন উঁচু হতে হবে।
পচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন
- পচন প্রক্রিয়ার তাপমাত্রা ৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া উচিত।
- পচন সম্পন্ন হলে সারের রং কালচে হবে এবং দুর্গন্ধ দূর হবে।
রাসায়নিক উপাদান পরিহার করুন
- মিশ্রসারে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশক যোগ করবেন না।
- এটি সারের প্রাকৃতিক গুণ নষ্ট করতে পারে।
মিশ্রণের সঠিক পরিমাণ তৈরি করুন
- প্রয়োজন অনুসারে সারের পরিমাণ তৈরি করুন।
- অতিরিক্ত সার জমিয়ে রাখলে এর গুণগত মান কমে যেতে পারে।
বৃষ্টির সময় সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন
- বৃষ্টির পানি থেকে সুরক্ষার জন্য মিশ্রণের ওপর পলিথিন বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখুন।
খামার বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। এটি শুধু মাটির উর্বরতা বাড়ায় না, বরং ফসলের ফলন ও গুণগত মান উন্নত করে। সঠিক পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করে আপনার কৃষিকে আরও লাভজনক ও টেকসই করে তুলুন।
জৈব
লাভের মুখ দেখাচ্ছে ‘জলপরী’ – দা এগ্রো নিউজ
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্লক প্রশাসনের তরফে নানা রকম সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি পেলেন।
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তিনশো পরিবার। অধিকাংশই মহিলা। জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তাঁরা এই এক বছরে প্রায় দু’লক্ষ টাকা লাভ করেছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের তরফে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলপরী।’ প্রশাসন সূত্রের খবর, আয়লার পরে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় বড় অংশের জমি অনুর্বর হয়ে যায়। এক বছর আগে হিঙ্গলগঞ্জের গোবিন্দকাটি পঞ্চায়েতের কিছু মানুষ সেই সব জমিতে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ফসলের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিক ভাবে তিরিশটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই মাছচাষ শুরু করেন। এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের যুগ্ম বিডিও সৌগত বিশ্বাস বলেন, ‘‘জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে বহু পরিবার উপকৃত হয়েছে।’’
জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যাপারটা কী?
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক মহিলা জানান, অন্য পদ্ধতিতে সাধারণত ইউরিয়া, পটাশ-সহ নানা রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে মাছের বৃদ্ধি বেশি হয়। কিন্তু জৈব পদ্ধতিতে রাসায়নিক কোনও জিনিসই ব্যবহার করা হয় না। গোবর, খোল, চুন, বেসন, খুদকুঁড়ো এই সব ব্যবহার করা হয় বলে মাছের বৃদ্ধি হয় স্বাভাবিক। এই মাছ স্বাস্থ্যের পক্ষেও নিরাপদ।
সম্প্রতি গোবিন্দকাটির পঞ্চায়েত প্রধান, হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও এবং যুগ্ম বিডিও ‘জলপরী’ প্রকল্পের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে উৎপন্ন মাছ যাতে দ্রুত বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হয়। মহিলারা জানান, প্রশাসন মাছ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করলে তাঁরা বিশেষ উপকৃত হন। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পক্ষে স্বপ্না মাঝি জানান, ‘জলপরী’ প্রকল্পে মাছ চাষ করে আমরা উপকৃত হয়েছি। এখন জরুরি সরকারি ভাবে সাহায্য এবং শহরের নির্দিষ্ট বাজারে মাছ বিক্রির সুবিধা।
ব্লক প্রশাসনের পক্ষে অন্যান্য দফতরের সঙ্গে প্রকল্পটিকে জুড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে মহিলারা যাতে সব রকম সুবিধা পান, ব্লকের তরফে সেই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দকাটির প্রজেক্ট যদি সফল হয় তা হলে বিশপুর, রূপমারি, যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকাতেও ‘জলপরী’ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই প্রকল্পের মাছ যাতে হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‘জলপরী’র মাছের স্বাদ কেমন?
গোবিন্দকাটির বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক বিলাসরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই মাছ খেয়েছি। অত্যন্ত সুস্বাদু। স্বাস্থ্যকরও। তবে জৈব পদ্ধতিতে চাষের কারণে দাম সামান্য বেশি।’’
জৈব
খামার বর্জ্য থেকে মিশ্রসার তৈরি করব কীভাবে? – দা এগ্রো নিউজ
বর্জ্য থেকে প্রস্তুত পচা জৈব উপাদানকে বলা হয় কমপোস্ট সার বা মিশ্র জৈব সার। পেষাই হয়ে যাওয়া আখ, ধানের খড়, আগাছা ও অন্যান্য গাছ ও বর্জ্য থেকে তৈরি সারই হল কমপোস্ট সার। এই সারে গড়ে ০.৫ শতাংশ নাইট্রোজেন, ০.১৫ শতাংশ ফসফরাস, ০.৫ শতাংশ পটাসিয়াম থাকে। সার তৈরির প্রাথমিক স্তরে কমপোস্ট পিটে প্রতি টন কাঁচামালে ১০/১৫ কেজি সুপার ফসফেট বা রক ফসফেট মেশালে সারের গুণমান বাড়ানো যায়। শহরের মল, ডাস্টবিন ও রাস্তার আবর্জনা থেকে তৈরি সারও হল কমপোস্ট সার। এতে থাকে ১.৪ শতাংশ নাইট্রোজেন, ১ শতাংশ ফসফরাস ও ১.৪ শতাংশ পটাসিয়াম।
কমপোস্ট সার তৈরির জন্য খামার বর্জ্যকে সাড়ে চার থেকে ৫ মিটার লম্বা, দেড় থেকে দু’মিটার চওড়া ও ১ থেকে ২ মিটার গভীর গর্ত খুঁড়ে রেখে দেওয়া হয়। গর্তে খামার বর্জ্যকে স্তরে স্তরে রাখা হয়। প্রতিটি স্তর গরুর গোবরের কাই দিয়ে বা জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। জমি থেকে ০.৫ মিটার উপর পর্যন্ত গর্তগুলি ভরাট করে দেওয়া হয়। ৫-৬ মাসের মধ্যে সার ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। কমপোস্ট সার প্রস্তুতি প্রকৃতপক্ষে গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের জৈব অবশেষকে জীবাণু দ্বারা পচানোর প্রক্রিয়া ।
সার তৈরির পদ্ধতি
এখানে তিনটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
ইন্দোর পদ্ধতি
জৈব বর্জ্য গোয়ালে বিছানার মতো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূত্রে ভেজা সেই বর্জ্য এবং গোবর প্রতি দিন সরিয়ে আনা হয় এবং ১৫ সেমি পুরু স্তর তৈরি করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। মূত্রে ভেজা মাটি গোয়াল থেকে সংগ্রহ করে জলে ভেজানো হয় এবং দিনে দু-তিনবার ওই বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয়। এই প্রক্রিয়া প্রায় দিন পনেরো চলে। তার পর খুব ভাল মানের কমপোস্ট সার বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয় এবং গোটা উপাদানটিকে উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। পুরনো সার গোটা উপাদানটিকে পচাতে সাহায্য করে। গোটা উপাদানকে পরবর্তী ১ মাস একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়। তত দিনে এই সার পুরোপুরি আর্দ্র হয়ে যায়। এই সার আরও এক বার উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। আরও এক মাসের মধ্যে নতুন সার ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি
২৫ সেন্টিমিটার পুরু শুকনো বর্জ্য পদার্থ একটি গর্তে ছড়িয়ে রাখা হয়, তার ওপর জলে ভেজা থকথকে গোবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভেজানোর জন্য। ভিজে স্তরের উপর শুকনো বর্জ্যের আরও একটি স্তর চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে শুকনো বর্জ্যের স্তর, তার উপর গরুর গোবরের দ্রবণ, এই ভাবে স্তরে স্তরে গর্তটি মাটির উপর ০.৫ মিটার পর্যন্ত ভরাট করা হয়। এই অবস্থায় কোনও ঢাকা না দিয়ে ১৫ দিন রাখা হয়। এর পর এই উপাদান উল্টেপাল্টে তুলে কাদা মাখিয়ে ৫ মাস বা যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে ,তত দিন একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়।
কোয়েম্বাটোর পদ্ধতি
কী ধরনের বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে তার ভিত্তিতে নানা মাপের গর্তে সার প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে গর্তে বর্জ্য পদার্থের একটি স্তর বানানো হয় , তার উপর আড়াই থেকে ৫ লিটার জলে ৫ থেকে ১০ কিলো গরুর গোবরের দ্রবণ ও ০.৫ থেকে ১ কিলো হাড়ের গুঁড়োর মিশ্রণ সমান ভাবে ছড়ানো হয়। এ ভাবে একের পর এক স্তর তৈরি করা হয়, যতক্ষণ না উপাদানের উচ্চতা মাটির থেকে ০.৭৫ মিটার পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে। এর পর এটিকে কাদামাটি দিয়ে মুড়িয়ে একই ভাবে ৮-১০ সপ্তাহ রেখে দেওয়া হয়। তার পর পুরো পদার্থটি তুলে জলে ভিজিয়ে উল্টেপাল্টে আয়তাকার স্তুপ বানিয়ে , যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে, ছায়ায় রেখে দেওয়া হয়।
কোয়েম্বাটোর পদ্ধতিতে প্রথমে অবাত পচন প্রক্রিয়া তারপর সবাত পচন প্রক্রিয়া চলে। এটি ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতির বিপরীত। কোয়েম্বাটোর বা ইন্দোর পদ্ধতির মতো ব্যাঙ্গালোর প্রক্রিয়ায় সার পচানো হয় না। কিন্তু এটাই সবচেয়ে ভারী।
খামার-বর্জ্যের রক্ষণাবেক্ষণ
যেখানে জন্তু জানোয়ার আছে, সেখানে তাদের বর্জ্যও আছে। পশুপালন শিল্পের চেহারা নেওয়ার পর থেকে পশুপালনের খামার যত বেড়েছে, তার তুলনায় বহু বহু গুণ বেড়েছে খামারে পশুর সংখ্যা। এর ফলে খুব ছোট জায়গাতেও প্রচুর পরিমাণে পশু বর্জ্য পাওয়া যায়। যখন এক জায়গায় প্রচুর পরিমাণে পশু বর্জ্য তৈরি হয়, তখন তাকে নিরাপদে ও কম খরচে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করাও মুশকিল, ফেলে দেওয়াও কঠিন। সরকারি নিয়মনীতি এবং উন্নত মানের বর্জ্য রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে এবং খামারগুলিতে যেন তা প্রয়োগ করা হয়, সে দিকে লক্ষ রাখা উচিত। কিন্তু যত দিন আমরা আমাদের খাদ্যের জন্য ছোট জায়গায় শিল্পের আকারে প্রচুর পশু পালনের ওপর নির্ভর করে থাকব, তত দিন পশু বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যা থেকে যাবে।
যে সব খামারে পশুরা ঘাসের জমিতে চরে বেড়ায়, সেখানে সবটা না হলেও বর্জ্যের অনেকটাই সরাসরি জমিতে যায়, যা সার হিসেবে কাজ করে এবং তার ভেতরে থাকা পরিপোষক পদার্থ চক্রাকারে মাটিতে ফিরে যায়। পশুপালন শিল্প খামারে, পশুরা যেখানে থাকে সেখানেই বর্জ্য ত্যাগ করে। সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে, অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে— প্রতিটি ধাপই পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পশুপালনের জন্য ব্যবহৃত ঘরগুলিকে শুধুমাত্র ধুয়ে পরিষ্কার করতে চাইলে প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। দুগ্ধ শিল্পের ক্ষেত্রে, যেখানে বর্জ্য ধুয়ে পরিষ্কার করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকে, সেখানেও গরু পিছু দিনে ১৫০ গ্যালন জল খরচ হয়।
পশুপালন শিল্পের কারখানায় বিভিন্ন ব্যবস্থায় বাতাস দূষিত হয় এবং ৪০০-রও বেশি গ্যাস নির্গত হয়, বেশির ভাগটাই বিশাল পরিমাণ পশু বর্জ্যের কারণে। প্রধানত যে সব গ্যাস নির্গত হয়, তার মধ্যে রয়েছে, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইড। বায়ূদূষণের ক্ষেত্রে এই গ্যাসগুলি বিপজ্জনক, এগুলি পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য –দু’য়ের পক্ষেই অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বর্জ্যের কারণ শিল্প খামারগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইডও নির্গত হয়। অ্যাসিড বৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হল এই গ্যাস।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন