ফুল
রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি

পরিচিতি ও ব্যবহার
রজনীগন্ধা Amaryllidaceae পরিবারের সদস্য। এর ইংরেজী নাম Tuberose এবং বৈজ্ঞানিক নাম Polianthes tuberosa. এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকো। ফুলদানীতে এ ফুল ৭-১০ দিন সজীব থাকে এবং প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে।বাংলাদেশে এ ফুলের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ট চাষাবাদ হচ্ছে।
সুগন্ধি ফুল হিসেবে রজনীগন্ধা খুবই জনপ্রিয়। এ ফুল সন্ধ্যারাতে ফোঁটে এবং সুগন্ধ ছড়ায় বলে এর রজনীগন্ধা নামকরন হয়েছে। চাহিদার দিক দিয়ে এবং বানিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে এ ফুলের জুড়ি নেই। কাটফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানীর জন্য এটি অনন্য। এ ছাড়া মালা, পুষ্পস্তবক, বেনী ও মুকুট তৈরীতে এ ফুল ব্যবহৃত হয়। এ ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।
জাত/শ্রেণী
ফুলের আকার ও পাঁপড়ির উপর ভিত্তি করে ৩ শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়।
ক) সিংগেল : এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে। ফুল সম্পূর্ন সাদা রং এর হয় এবং ফুল গুলি খুবই সুগন্ধযুক্ত হয়।
খ) সেমি-ডাবল: এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি দুই/তিন সারিতে সাজানো থাকে ।
গ) ডাবল : এ ধরনের জাতের ফুলে তিন-এর অধিক পাপঁড়ির সারি থাকে । পাঁপড়ির কিনারায় হালকা লাল রং এর আভা থাকে এবং ফুল গুলি কম সুগন্ধযুক্ত হয়।
বাংলাদেশে সিংগেল ও ডাবল শ্রেণীর রজনীগন্ধা পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোন জাত উদ্ভাবিত হয়নি।

বংশবিস্তার
রজনীগন্ধা বীজ ও কন্দ উভয় মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত কন্দ দ্বারাই রজনীগন্ধার চাষ হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মত যে বাল্ব পাওয়া যায় তাকে কন্দ বা বাল্ব বলে। পুরাতন গাছের গোড়ায় ঝাড় আকারে অনেক বাল্ব থাকে। মাঝের বাল্বটি বড় হয়। সাধারনত: মাঝারী থেকে বড় আকারের বাল্ব বংশবিস্তারের জন্য ব্যবহার করা হয়। বড় ধরনের বাল্ব থেকে স্বাস্থ্যবান গাছ হয় ও গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে কিন্তু ছোট বাল্ব থেকে দূর্বল প্রকৃতির গাছ হয় ও দেরীতে ফুল আসে। কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছে মা-গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে এবং স্বল্প সময়ে গাছে ফুল আসে। শীতকালে কন্দগুলি সাধারণত মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শীতের শেষে কন্দগুলি লাগানোর জন্য উপযোগী হয়।
জলবায়ু ও মাটি
রজনীগন্ধা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে এজন্য আমাদের দেশে গ্রীষ্ম কালে এ ফুলের চাষ করা হয়। এ ফুলের সফল চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ২০-৩০০ সেন্টিগ্রেড ও আর্দ্র আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। সুনিস্কাশিত, জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি রজনীগন্ধা চাষের জন্য উত্তম।
জমি তৈরী ও সার প্রয়োগ
জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে ভালভাবে তৈরী করতে হয়। শেষ বার চাষের সময় হেক্টর প্রতি উর্বরতা ভেদে ৫-১০ টন গোবর, ২৫০ কেজি ফসফেট ও ২০০ কেজি এম পি সার মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দেয়া উচিত। বাল্ব রোপনের ৩ সপ্তাহ পর যখন নতুন গাছের বৃদ্ধি শুরু হয় তখন হেক্টর প্রতি ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার এর অর্ধেকটা প্রথম উপরি প্রয়োগ এবং বাকী অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত। ভালো মানের ফুলের জন্য হেক্টর প্রতি ১২ কেজি বরিক এসিড এবং ৮ কেজি জিন্ক সালফেট প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বাল্ব রোপন
বাঁছাইকৃত বাল্বগুলি মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে লাগানো উচিত। লাগানোর সময় পুরানো শিকড়গুলি কেটে দিতে হয়। সাধারনভাবে ভাল ফুল পাওয়ার জন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সে: মি: এবং প্রতি লাইনে বাল্ব থেকে বাল্বের দূরত্ব ২০ সে: মি: নির্ধারণ করা যেতে পারে। কন্দগুলি এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে এর অগ্রভাগ ঠিক মাটির নিচে সমতলে অবস্থান করে।প্রতিটি বাল্ব (১.৫ – ৩.০ সে মি.) সোজা করে ৭-১০ সে:মি: মাটির গভীরে লাগানো উচিত। মাটিতে রসের অভাব থাকলে কন্দ লাগানোর পূর্বে সেচ প্রদান করা উচিত। এছাড়া কন্দ রোপণের পর মাটিতে কন্দ বসার জন্য হালকা সেচ দেওয়া ভাল।
অন্তর্বর্তী পরিচর্যা
রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। শুকনো মৌসুমে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি সুনিস্কাশনের জন্য নিস্কাশন নালা তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে শুকনো বা মরা পাতা সরিয়ে ফেলা উচিত। শীতকালে গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ন ভাবে কেটে দেয়া ভাল।এফিড, থ্রিপস পোকা দমনের জন্য ২মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করা ভাল।
রোগের নাম বোট্রাইটিস পাতায় দাগ ও ব্লাইট
রোগের কারণ Botrytis sp.
রোগের লক্ষণ
এই রোগটি বর্ষা ঋতুতে দেখা যায়। প্রথমে আক্রান্ত ফুলে গাড় বাদামী রং এর দাগ পড়ে এবং পড়ে সমস্ত পুষ্পমঞ্জুরী শুকিয়ে যায়। পাতায় এবং কান্ডেও এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।

প্রতিকার
এই রোগ দমনে রোভরাল (ম্যানকোজেব) .২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ফুল কাটা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ

রজনীগন্ধার একই ক্ষেত থেকে পরপর ৩ বছর ফুল উৎপাদন করা যায়। রজনীগন্ধা লম্বা ডাটার মাথায় মঞ্জরী আকারে হয়। রজনীগন্ধার পুষ্পদন্ডের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হয়। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হয়। ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে মাটি থেকে ৪-৬ সেমি উপরে ফুলের ডাঁটি কাটতে হয় যাতে গোড়ার বাড়ন্ত কুঁড়ির ক্ষতি না হয়। প্রস্বেদনের কারণে জলীয় ক্ষতি (Transpiration loss) এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি অপ্রয়োজনীয় পাতা অপসারণ করে সুবিধামত বান্ডিল তৈরি করে প্রথমে বালতিতে চিনি সহ পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরে ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে জড়িয়ে দূরবর্তী বাজারে প্রেরণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ফূলের জীবনকাল (Vase life) দীর্ঘায়িত হয়।
বাল্ব বা কন্দ উত্তোলন ও সংরক্ষণ
ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছের বৃদিধ বন্ধ হয়ে গেলে কন্দগুলি মাটি থেকে তুলে এনে পরিস্কার করে ছায়াযুক্ত শুষ্ক মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হয়। প্রয়োজনমত পরিপক্ক কন্দ বাছাই করে পরবর্তীতে বংশবিস্তারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। রজনীগন্ধার কন্দ বেশ কষ্টসহিষ্ণু এবং সাধারণ অবস্থায় এর কন্দ সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।

রেটুন ফসল
রজনীগন্ধার পূর্ববর্তী বছরের ফসল মাঠে রেখে দিয়ে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে মৌসুমে পুনরায় ফুল উৎপাদন সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় ফুলের পুষ্পদন্ডের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলেও সবদিক দিয়ে ফুলের মান নিম্নতর হয় বিধায় বাজার মূল্য কমে যায়। তবে দ্বিগুণ সার ও যথেষ্ট সেচের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত অন্তর্বর্তী পরিচর্যার মাধ্যমে অমৌসুমে ফুল উৎপাদন করে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়।

টবে চাষ
বড় টবে রজনীগন্ধার চাষ করা যায়। উপযুক্ত টব মিশ্রণ দিয়ে পাশাপাশি কয়েকটি কন্দ লাগিয়ে নিয়মিত সেচ ও মাঝে মাঝে সামান্য খৈল ও গোবর পচানো মিশ্রণ দিলে উন্নত মানের ফুল পাওয়া যায়।

ফলন
রজনীগন্ধার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষতঃ বিদেশে এর রপ্তানি বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। দেখা গেছে যে, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১ লক্ষ কন্দ লাগিয়ে ৩.৫ লক্ষ ফুলের ডাঁটি পাওয়া যায়। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি ডাঁটির খুচরা মূল্য ২-৪ টাকা। তবে ঋতু বিশেষে এর মূল্য বেশ পরিবর্তনশীল। তথাপি এ ফসল উত্তরোত্তর একটি লাভজনক ফসল হিসেবে আমাদের দেশে স্থান করে নিয়েছে। এ কারণে এর চাষ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
আঙিনা কৃষি
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শাওনের শখের ছাদ বাগান – দা এগ্রো নিউজ

দা এগ্রো নিউজ ঈদ কনটেস্ট বিজয়ী শাওনের কাছ থেকেই জানুন, কীভাবে এবং তিনি এত সুন্দর একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। তার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য রইল শুভকামনা।
আমাদের একটু খানি হাতের ছোঁয়ায়, আামাদের ঘরের ছাদ কিংবা বারান্দা হয়ে উঠে আমাদের নন্দন কানন। এই ভালোবাসার ছোঁয়াকে আর একটু পূর্ণতা দিতেই, দা এগ্রো নিউজ এর পক্ষ থেকে আমাদের ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা ছিল “শখের বাগান ঈদ কনটেস্ট”, যার বিজয়ী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম শাওন। আজ আমরা তার বাগান তিনি কত ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি করেছেন সে সম্পর্কেই জানব।
শাওন এর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়। করোনাকালীন সময়ে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শাওন এর বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ। এই সময়টা তিনি নষ্ট না করে, নানা রকমের ফুল এবং ফলের গাছ দিয়ে গড়ে তুলেছেন তার শখের ছাদ বাগান।
তার বাগানে গোলাপ, এস্টার, পর্তুলিকা, কসমস, সন্ধ্যামালতী, মিলি, থাই লিলি, জাম্বু লিলি, এমারেলিসস লিলি, ক্রিমিনাল লিলি, হলুদ, সাদা, গোলাপি রেইন লিলি, বেলী, নয়ন তারা, অপারাজিতা, টগর, সহ আরও নানা রকমের ফুল গাছ রয়েছে, যা দেখলেই যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে।





শাওন আমাদের সাথে কথা বলার সময় অনেক কিছুই আমাদের জানান। তিনি বলেন, আমরা মনে করি মাটির আর কত ওজন হবে। তবে আপনি যদি একটা বাগান বা বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে যে পরিমাণে মাটি লাগবে তার ওজন নেহায়েত কম নয়। নিয়মিত গাছে পানি দেওয়ার ফলে ভেজা মাটির ওজন আরও বেড়ে যায়।তাই যখন ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা করবেন অবশ্যই জেনে নেবেন ছাদের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু। যেন পরে বাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়। বাড়ির ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের গাছ লাগানো সম্ভব। কোনো কারণে যদি ধারণ ক্ষমতা কম হয় তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করাও সম্ভব।
তার বাগানে আমরা নানা রকমের ফলের গাছও দেখতে পাই, আমের মধ্যে আছে কিং অফ চাকাপাত, বারি ৪, কাটিমন, কিওসাভয়, ব্যানানা ম্যাংগো, আমেরিকান রেড পালমার। থাই সফেদা, থাই জাম্বুরা, বারোমাসি আমড়া, লাল জামরুল। থাই সুপার ১০, থাই ৫, এবং মাধুরি পেয়ারা, থাই মিস্টি কামরাঙ্গা, নাগপুরী কমলা, বারি ১ মাল্টা, ভিয়েতনামী মাল্টা, মালবেরী সহ আরও অনেক ফল। শাওন আশা করছেন তিনি তার পরিবার এর বাৎসরিক ফলের চাহিদা তার বাগান থেকেই সম্পূর্ণ করবেন।
শাওন তার ছাদ বাগানে গাছ লাগানোর জন্য টব, ড্রাম এবং চৌবাচ্চা ব্যবহার করেছেন। আসুন তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই আমরা জেনে নেই কীভাবে আমরা একটি সফল ছাদ বাগান করব।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর টব পদ্ধতি:
টব দরকার মতো সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। এজন্য ছাদে ফুল গাছ লাগানো টব অনেকের মত শাওনেরও পছন্দ। তাছাড়াও টবে সার-মাটি দেওয়াও খুব সহজ। আজকাল অনেকেই মত তিনিও পোড়ামাটি এবং প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করেছেন। আবার টবের গায়ে রং দিয়ে তার সৌন্দর্যও বাড়িয়েছেন। তার মতে, টবে গাছ লাগানোর সময় মনে রাখতে হবে যেন ওই গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টবের অল্প মাটিতেই ওই গাছের খাদ্যপুষ্টিও ঠিক থাকে।




দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় হাফ ড্রাম পদ্ধতি:
শাওন বড় জাতের ফুলের গাছ এবং ফলের গাছের জন্য ড্রাম ব্যবহার করেছেন। তিনি জানান, বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করেও তিনি বড় দুটি টব তৈরি করেছেন। ড্রামগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি টুকরো ইটের ওপর বসিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন ছাদের ওপর হাফ ড্রাম রাখলে ছাদের ক্ষতি হয়, যা আসলে সঠিক নয়।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় চৌবাচ্চা পদ্ধতি:
ছাদে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর পানির ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে ইটের টুকরো এবং সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী চৌবাচ্চা তৈরি করে তিনি ভবিষ্যৎ এ আরও কিছু গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। যাতে করে একই ধরনের চৌবাচ্চায় মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ চাষ করে ছাদের পরিবেশকে আরও সুন্দর রাখাতে পারবেন বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় ছাদ বাগানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা:
বাগানের মাটি থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত পানি ছাদের কংক্রিটের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও ছাদে আগাছা জন্মে ছাদের মেঝেকে পিচ্ছিল ও ক্ষয় করে ফেলে তাই যে গাছই বোনা হোক না কেনো এবং যে পদ্ধতিতেই বোনা হোক না কেনো পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে জানান শাওন।
তিনি টবের গাছের নিচে আরও একটি মাটির ট্রে রেখেছন। যদিও এটি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু মাটির ট্রে পানি শোষণ করে সেটিকে ছাদের মেঝেতেই পৌঁছে দেয়। তাই তিনি জানান, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছাদের মেঝেতে পানি নিরোধক কোনো রং, টাইলস বা আলকাতরার একটা স্তর তৈরি করে তার উপরে যথাযথ একটা নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা করা যায়। নালার উপরে একটা ছাঁকনি রাখা যেতে পারে। এতে পানির সঙ্গে ধুয়ে যাওয়া মাটি নিষ্কাশন নালা বা ছাদে না পড়ে ছাঁকনিতে আটকে থাকবে। এভাবে মাটি এবং ছাদ উভয়ের ক্ষয় রোধ করা যাবে।
অনেকেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাদের এক কিনারা সামান্য ঢালু রাখেন এটিও বেশ ভালো উপায়। তবে কিছুতেই ছাদের কোনো কিনারা ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে না। এতে স্থাপনার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
শাওন বাড়িতেই খৈল পচা পানি ও নিম পাতা ব্যবহার করে সার তৈরী করে, সেই সার তার গাছে ব্যাবহার করেন। এভাবে তার শখের বাগানকে তিনি দিন দিন আরো প্রসারিত এবং সুন্দর করে তুলছেন।
শাওন বলেন, ভবিষ্যতে তার ত্বীন ফল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা অনেক বেশি। ভবিষ্যতে মিররীয়/আরবীয় ত্বীন/ডুমুর গাছও লাগাতে চান তিনি। তার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য রইল শুভকামনা।






ফুল
শীতে বাহারি রঙের জিনিয়া ফুল

জিনিয়া মূলত এর বাহারি রঙের ফুলের জন্য সুপরিচিত। মৌসুমী ফুলের মধ্যে এটি বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি ফুল। তবে এর কোন গন্ধ নেই। এর আদি নিবাস মেক্সিকো। জিনিয়া ফুল সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাচ্ছেন মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন-
জিনিয়া গাছ Asteraceae অন্তর্ভুক্ত। জিনিয়া ফুল সাদা, হলুদ, লাল, বাদামি, বেগুণি, কমলা, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। মূলত মেক্সিকোর এই ফুল এখন সারা পৃথিবীতে চাষ করা হয়। অন্তত ২০ প্রজাতির জিনিয়া এ পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে। সবচেয়ে বহুল প্রাপ্ত জিনিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Zinnia elegans।

জিনিয়া শীতকালীন ফুল হলেও সারাবছর চাষ করা যায়। বীজের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা যায়। জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসে এ ফুলের বীজ বপন এবং চারা উত্পাদনের উপযুক্ত সময়। রৌদ্রোজ্জ্বল সুনিষ্কাশিত উর্বর দো-আঁঁশ মাটি এ ফুল উত্পাদনের জন্য বেশি উপযোগী। স্যাঁতসেঁতে জমিতে এর উত্পাদন ভালো হয় না।
জিনিয়া গাছ ৬০-৭০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গাছে ডালের সংখ্যা কম হয়। পাতার আকার ছোট, রং ধূসর সবুজ এবং বেশ রুক্ষ্ম। গাছে ফুটন্ত ফুল বেশ অনেক দিন পর্যন্ত সৌন্দর্য ধরে রাখতে সক্ষম।

প্রায় প্রতি শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে। ফুল ঊর্ধ্বমুখী। নমনীয় কোমল অসংখ্য পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট জিনিয়া ফুলের মাঝখানে পরাগ অবস্থিত। আকার ও রঙের বৈচিত্রে ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকার সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে।
কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানিতে সাজাবার জন্য এবং তোড়া তৈরির জন্য এ ফুল অদ্বিতীয়। জিনিয়ার জনপ্রিয় জাত হচ্ছে ডাবল ফুল। এটি অবিকল চন্দ্রমল্লিকার মতো। আশেপাশের নার্সারিতে খোঁজ নিলেই পেতে পারেন জিনিয়া ফুলের চারা। চাষ করতে পারেন বাড়ির ছাদে এবং বারান্দার টবে।
ফুল
জারবেরা ফুল চাষ পদ্ধতি

পরিচিতি
জারবেরা এ্যাসটারেসী পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক ফুল । জার্র্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বার এর নামানুসারে এ ফুলটির নামকরন করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ফুল বানিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার (Cut flower) হিসেবে উল্লেখযোগ্য ১০টি ফুলের মধ্যে অন্যতম কাট ফ্লাওয়ারের জন্য ও বেশী দিন ফুলদানীতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুড়ি নেই।
জাত
জারবেরা গণের আওতায় ৪০টির মত প্রজাতি আছে।এ গুলির মধ্যে জারবেরা জ্যামেসোনি প্রজাতিটি চাষাবাদ হচেছ সংকরায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে Gerbera jamesonii এর অনেক জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জারবেরা ফুলের বারি জারবেরা-১ ও বারি জারবেরা-২ দুইটি জাত উদ্ভাবন করেছে।
জলবায়ু
জলবায়ু জারবেরা কষ্টসহিষ্ণু গাছ এবং সব ধরনের জলবায়ুতে কমবেশী জন্মায়।গ্রীষ্মমন্ডলীয় (Temperate) অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে পলিসেডে এবং নাতিশীতোষ্ণ (Tropical) অঞ্চলে এ ফুলটিকে গ্রীনহাউজে চাষাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ (Protective condition)
বাংলাদেশে জারবেরা শীতকালীন সময়ে খোলা মাঠে বা উন্মুক্ত স্থানে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন সময়ে পলিসেডে চাষ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদ করলে যদিও খরচের প্রধান্য অধিক পড়ে তথাপিও ফুলের গুনগতমান ও ফলন বৃদ্ধি এবং রোগপোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জারবেরা চাষ করা জরুরী প্রয়োজন ।উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও গুনগতমান সম্পন্ন ফুল উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু গ্রীষ্মকালে উন্নত ফুল উৎপাদনের জন্য হালকা ছায়া (৩০%) প্রদান করতে হয়। জারবেরা চাষে অনুকূল দিবাকালীন তাপমাত্রা ১৬-২০০ সেন্টিগ্রেড এবং রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১০ – ১২০ সেন্টিগ্রেড । উচচ তাপমাত্রায় গাছে ফুল আসে ঠিকই, কিন্তু ফুল ততটা গুনগত মান সম্পন্ন হয় না
মাটি
সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। মাটির পি এইচ মান ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে থাকা উচিত । জারবেরার জমিতে প্রচুর জৈব সার থাকা দরকার এজন্য পরিমিত পরিমানে গোবর সার, পাতাপচা সার, Cocodust ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে ।

বংশবৃদ্ধি
(ক) বীজের মাধ্যমে (By seed)
বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের সকল গুনাবলী বজায় থাকে না, তবে পদ্ধতিটি সহজ। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো বীজের মাধ্যমে রোগ-পোকা আক্রমনের সম্ভাবনা কম থাকে ।
(খ) ডিভিশন (Division of clumps)
মাতৃগাছের ক্লাম্প বিভক্ত করে বংশবৃদ্ধি করা যায়। এজন্য মাঠের সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত গাছগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ধারালো ছুরি দিয়ে ভাগ করা হয়।
উক্ত সাকার (Sucker) গুলির পাতা ও শিকড় হালকা প্রুনিং (Pruning) করে পরবর্তীতে নতুন বেডে (Bed) লাগানো হয়।
(গ) মাইক্রোপ্রোপাগেশন (Micropropagation)
বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতি দুটি খুব উপযোগী নয়। অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যায় রোগমুক্ত জারবেরার চারা পাওয়ার জন্য টিসুকালচার পদ্ধতিটি উত্তম। এ জন্য প্রথমে সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে। পরে ঐ গাছের কান্ডের বর্ধিত অগ্রাংশ (growing shoot tips), ফুল কুড়ি (Flower bud), পাতা (Leaf) ইত্যাদিকে এক্সপ্লান্ট (Explants) হিসাবে নিয়ে বার বার সাব-কালচার (Sub-culture) করে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা সম্ভব।

চাষাবাদ (Cultivation)
(ক) জমি তৈরী (Land preparation)
জমিতে পরিমানমত জৈব সার দিতে হবে। তারপর ৪০-৪৫ সেঃ মিঃ গভীর করে আড়াআড়ি ও লম্বা ভাবে পরপর কয়েকটি চাষ দিয়ে জমিটি ঝুরঝুরা (fine tilth) করে তৈরী করতে হবে। ফলে সকল জৈব সার মাটির সাথে সুন্দরভাবে মিশে যাবে
(খ) বেড তৈরী (Bed preparation)
জারবেরার জন্য বেডের উচ্চতা ২০ সেঃ মিঃ এবং প্রশস্ততা ১.০-১.২ মিঃ হলে ভাল হয়। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য দুই বেডের মধ্যবর্তী ৫০ সেঃ মিঃ পানি নিষ্কাশন নালা থাকতে হবে। সাধারনতঃ একবার লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে ২ বৎসর ফুল আহরন করা হয় বলে জমি ও বেড তৈরীর সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।
(গ) চারা লাগানো (Planting)
বেড (Bed) তৈরী হলে জাত ও এর বৃদ্ধির ধরন বুঝে সাকারগুলি (Sucker) সারি থেকে সারি ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ৪০ সেমি দূরত্ব রেখে রোপন করতে হবে। চারাগুলি এমনভাবে মাটিতে স্থাপন করতে হবে যেন চারার ক্রাউন (Crown or Central growing point) মাটির (Surface level) উপরে থাকে । ক্রাউন মাটির নীচে গেলে গোড়া পচা (Foot rot) রোগ সংক্রমনের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।
(ঘ) লাগানোর সময় (Planting time)
জারবেরা সারা বৎসর লাগানো যায় তবে উন্নত ফুল ও বেশী উৎপাদন পেতে সাধারনতঃ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চারা লাগানো উচিত।
(ঙ) পানি দেয়া (Irrigation)
জারবেরার শিকড় গভীরে প্রবেশ করে বিধায় বার বার হালকা স্প্রিংকলার (Sprinkler) সেচের পরিবর্তে প্লাবন সেচ (Flood Irrigation) দেয়া উত্তম। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। কারণ জারবেরা ক্ষেতে জলাবদ্ধতা মাটিবাহিত রোগ সংক্রমণ ত¦রানি¦ত করে। আবার মাটিতে পানির অভাব হলে গাছ ঢলে (Wilting) পড়ে, সেক্ষেত্রে ফুলের পুষ্পদন্ড ছোট হয়ে যায়। বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য প্রতিবার সেচ দেয়ার পর মাটিতে জো আসলে নিড়ানী দিয়ে উপরের শক্ত আস্তরণ (Hard crust) ভেঙ্গে দিতে হবে।
(চ) সারপ্রয়োগ (Fertilization)
জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল একটি ফুল ফসল।
গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ ও গাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত পরিমান সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর নতুন শিকড় গজানো শুরু হলে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর/কম্পোস্ট, ২ টন কোকোডাষ্ট, ৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫০ কেজি টিএসপি ও ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক এসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে পঁচা গোবর/কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।

রোগ ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
মুল পচা রোগ
মাটি বাহিত এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত হলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়এবং অবশেষে সম্পূর্ণ গাছটি শুকিয়ে যায়। মাটি জীবাণুমুক্ত করে চারা লাগালে এরোগ কম হয়।
গোড়া পঁচা রোগ
এটি মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের ফলে গাছের কেন্দ্রীয় অংশ প্রথমে কালো রং ধারণ করে ও পরে পচে যায়। পরবর্তীতে পাতা ও ফুল মারা যায়।
প্রতিকার
১. রিডোমিল অথবা ডায়থেন এম-৪৫ ছত্রাকনাশক ০.২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২. টপসিন ০.০৫% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করেও এরোগ দমন করা যায়।
পাউডারি মিলডিউ
দুই ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত গাছেরর উপরে সাদা পাউডারের আস্তরণ দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়।
প্রতিকার
১। বেনোমিল ৫০ডব্লিউপি ০.০১% হারে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

পোকামাকড়
মাকড়
শুস্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে পাতা ও ফুলকুঁড়ির বৃদ্ধি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফুলের অস্বাভাবিক আকার ও আকৃতির কারণে বাজার মুল্য থাকেনা।
প্রতিকার
১. আক্রমনের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. যে কোন মাকড় নাশক যেমন ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ইসি ১.৫ মিঃলিঃ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে
হবে।
সাদা মাছি পোকা
সাদা মাছি গাছের বিভিন্ন অংশের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
দমন
১. আঁঠালো হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা ।
২. ৫০ গ্রাম আধা ভাঙা নিমবীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি ছেকে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।
৩. চারা রোপনের ১০-১৫ দিন পর থেকে এসাটাপ ৭৫ (এসপি) ও কুমুলাস ডিএফ এক সঙ্গে ২ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

ফুল তোলা (Harvesting)
পূর্ন বিকশিত জারবেরা ফুলের বাহিরের দু’সারি ডিস্ক ফ্লোরেট (Disc floret) পুষ্প দন্ডের সাথে সমকৌনিক অবস্থানে আসলে ফুল তোলা হয়। কর্তনের সময় পুষ্পদন্ড যথাসম্ভব লম্বা রেখে ফুল সংগ্রহ করা হয়। ধারালো চাকু দ্বারা তেরছা ভাবে খুব সকালে বা বিকালে ফুল তোলা উত্তম। ফুল কাটার পর পুষ্পদন্ড এক ইঞ্চি পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির সাথে অল্প চিনি এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে দিলে ফুল সতেজ থাকে।
ফলন (Yield)
জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে প্রতি গাছে ২০-২৫ টি ফুল বছরে সংগ্রহ করা যায়।
ফুল
গাঁদা ফুল চাষ পদ্ধতি

শীতে গাঁদা ফুলের চাষ
শীতকালের ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসসহ সব অনুষ্ঠানেই গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসাবে গাঁদা পাতার রস খুব উপকারী।
জাত
চাইনিজ , রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি জাতের গাঁদা আমাদের দেশে বেশি চাষ হয়। রঙ ভেদে গাঁদার জাত হচ্ছে হলুদ, লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, লাল হলুদের মিশ্রণ ইত্যাদি। আফ্রিকান জাতের গাছ সোজা ও লম্বা, ৩০-১০০ সেমি লম্বা হয়। ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত হয়। ফরাসি গাঁদার গাছ খাট ও ঝোপালো, ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়। ফুল আকারে ছোট, প্রচুর ধরে ও রঙ লাল। কমলা সুন্দরীর গাছ খুব শক্ত। ফুল গাঢ় কমলা। শাখা প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুল বেশি ধরে। ফুলের আকার ৪.৫ থেকে ৫ সেমি। অনেক দিন পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রতি গাছে ৫৫-৬০ টি ফুল পাওয়া যায়। রোগ সহনশীল।

চারা তৈরি
শাখা কলম ও বীজের মাধ্যমে গাঁদা ফুলের চারা তৈরি করা যায়। নভেম্বরে বীজতলায় বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়। সারা বছর চাষ করা গেলেও শীতকালে ফলন ভাল হয়। শাখা দিয়ে কলম করার জন্য গাঁদা গাছের শাখা ৮-১০ সেমি লম্বা করে কাটতে হবে। বীজতলায় শাখা ডালের টুকরাগুলো দু একটি পর্বসহ রোপন করতে হবে। উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চ মাস। নিয়মিত সেচ দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে পাতা গজায়।
জমি নির্বাচন ও তৈরি
উঁচু, সুনিষ্কাশিত দো আঁশ ও উর্বর মাটি গাঁদা চাষের উপযোগী। চার পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। টবে বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দো আঁশ এঁটেল বা দো আঁশ মাটির সাথে একভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রন তৈরি করতে হবে। এই সার মাটি টবে বা পাত্রে বা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
সার প্রয়োগ
প্রতি শতক জমিতে পঁচা গোবর, ৪০ কেজি ইউরিয়া ২ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি এবং এমওপি ২ কেজি সার প্রয়োজন । এ সারগুলো মাটির সাথে মিশাতে হবে।

চারা রোপন
বীজ থেকে অথবা শাখা থেকে তৈরি একমাস বয়সের চারা রোপন করতে হয়। ডিসেম্বর মাসে চারা রোপন করতে হয় । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত ৩০-৪০ সেমি হওয়া উচিত। চারা উৎপাদন না করে সরাসরি বীজ থেকেও গাঁদা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৫-৬ গ্রাম বীজ জমিতে বপন করতে হবে।

পরিচর্যা
মাটি শুকনোর আগেই সেচ দিতে হয়। গাছের গোড়াই পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জন্মালেই নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাঁদা ফুলে রোগ বালাই তেমন হয়না। তবে জাব পোকা আক্রমণ করলে ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গাছ বড় হলে খুটির সাথে বেধে দিলে গাছ সোজা থাকে। এতে ফুলের গুনগত মান ভাল হয়। গাছে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য ফুল আসার একমাস আগে গাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। একটি শাখায় ঘন হয়ে অনেকগুলো ফুল বা কুঁড়ি ধরলে উপরের একটি বা দুইটি রেখে বাকিগুলো ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে ফুল বড় হয়। চারা রোপনের ১৫ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা মারা গেলে সেখানে চারা রোপন করা উচিত। চারা ঘন হলেও পাতলা করতে হবে।

ফুল সংগ্রহ ও ফলন
ফুল কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে বোটাসহ কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খুব ভোরে ফুল তুলতে হয়। চারা রোপনের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহ করা যায়। গড়ে একটি গাছে জাত ভেদে ১৫-৪০ টি ফুল ধরে।
ফুল
শীতের জনপ্রিয় ফুল কোনগুলো?

ফুলকে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। শীতকালে ফুলের সমারোহ লক্ষ্য করা যায়। তাই তো দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ফুলের বাগান ও নার্সারি। এ ছাড়া স্থান স্বল্পতার কারণে অনেকেই টবে ফুল চাষ করেন। বাসার বারান্দা, ছাদ বা প্রাঙ্গণের অল্প জায়গায়ও অনায়াসে ফুল চাষ করা সম্ভব।
শীতের ফুল
শীতকালীন ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—
১. গাঁদা
২. ডালিয়া
৩. গোলাপ
৪. চন্দ্রমল্লিকা
৫. সূর্যমুখী
৬. কসমস
৭. পপি
৮. গাজানিয়া
৯. স্যালভিয়া
১০. ডায়ান্থাস
১১. ক্যালেন্ডুলা
১২. পিটুনিয়া
১৩. ডেইজি
১৪. ভারবেনা
১৫. হেলিক্রিসাম
১৬. অ্যান্টিরিনাম
১৭. ন্যাস্টারশিয়াম
১৮. লুপিন
১৯. কারনেশন
২০. প্যানজি
২১. অ্যাস্টার
২২. জিনিয়া।
এ ছাড়াও কিছু ফুলের আবার বিভিন্ন ধরনের জাত দেখা যায়।
প্রাপ্তিস্থান
দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা নার্সারিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা বা গাছ পাওয়া যায়। রাজধানীর কার্জন হল, আগারগাঁও, বনানী, শেকৃবি, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, গুদারাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নানা রকম ফুলগাছের নার্সারি বা বিক্রয়কেন্দ্র।
চাষ
শীতকালীন ফুলের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। টবসহ চারাও কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। টবের মাটির সঙ্গে জৈব সার বা কম্পোস্ট সার পর্যাপ্ত পরিমাণে মেশাতে হয়।
পরিচর্যা
সাবধানতার সঙ্গে চারা রোপণ করে ঝাঁঝর দিয়ে উপর থেকে বৃষ্টির মতো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে গাছ এবং পাতা উভয়ই ভেজে। প্রয়োজনে হেলে পড়া গাছকে লাঠি পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ফুলের সময়
রকমভেদে গাছগুলো মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল দেয়। ফুল চাষ করে অনেকেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন। বিদেশেও ফুল রপ্তানি হচ্ছে। যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
তাই এখনই উপযুক্ত সময় ফুলচাষি বা ফুলপ্রেমীদের তৎপর হয়ে ওঠার। শীতের পরিবেশ ভরে উঠুক ফুলে ফুলে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন