দৈনন্দিন
মানসিক স্বাস্থ্য: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি কেন
আর্থিক এবং পারিবারিক যে চাপ, এমনও অনেক সময় মনে হয় যে কিডনি বেইচা হইলেও সংসারডারে টিকাইয়া রাখি।”
এই কথাগুলো বলছিলেন পয়ত্রিশ বছরের বেশি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরুষ। সপ্তম শ্রেণি থেকে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করছেন তিনি।
বহুদিন ধরে বাবা-মা, দুই বোন, স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দায়িত্বও তাকে বহন করতে হয়। তিনি বলছিলেন, নিজেকে তার প্রায়ই “হালের গরু” বলে মনে হয়।
তিনি বলছেন, “ধরেন আমাদের দেশে মানুষ গরু পালে চারটা কারণে- দুধ, মাংস খাওয়ার জন্য, হাল চাষ করার জন্য, আর বেইচা টাকা পাওয়ার আশায়। আমাদের দেশে ছেলেদেরকেও ওইভাবে পালে যে এরা বড় হইলে কামাই করে খাওয়াবে, দেখাশোনা করবে। কিছু পাওয়ার আশায়, কিছু একটা লাভের আশাতেই বাবা মায়েরা যেন ছেলেদের এইভাবে পালে। যে কারণে ছেলেদের উপরে অনেক চাপ পড়ে।”
এই “চাপের বোঝা” নীরবেই বহন করেন তিনি। চাপ সামাল দেবার জন্য নিজেই খুঁজে নিয়েছেন কিছু পদ্ধতি।
“আমার মানসিক কষ্ট হইলে সেটা আমি কারো কাছে প্রকাশ করি না। মেন্টাল কোন প্রেশার আসলে আমি ওজু করি, দুই রাকাত নামাজ পরি। তারপর একা একা কান্নাকাটি করি। আমি যে কষ্ট পাচ্ছি এটা আমি আজ পর্যন্ত আমার পরিবারের কাউকে বুঝতে দেইনি।”
পুরুষ হয়ে ওঠার সামাজিক শিক্ষা
একজন পুরুষ পরিবারের সবার জন্য অর্থ উপার্জন করবে, সবার দায়িত্ব বহন করবে, জীবনে সফল হবে, সবার জন্য সিদ্ধান্ত নেবে- সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন পুরুষ হয়ে ওঠার এই সামাজিক শিক্ষা জন্ম থেকেই তার ঘাড়ে বিশাল এক বোঝা চাপিয়ে দেয়।
তার কাছ থেকে আশা করা হয় এসব চাপে পুরুষ ভেঙে পড়বে না। পুরুষ দুর্বলতা প্রকাশ করবে না।
সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলছেন, কেন বংশ পরম্পরায় পুরুষ এই শিক্ষা বহন করে চলেছে।
তিনি বলছেন, “এটাকে আমরা বলি জেন্ডার রোল। সমাজ নারী ও পুরুষের জন্য শ্রম বিভাজন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে সমাজ তার কাছ থেকে এটা কেন চায়, তার উত্তর জানতে হলে আমাদের অনেক পেছনের দিকে যেতে হবে।”
“মূলত আমরা দেখেছি যে এর সাথে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার একটা সম্পর্ক আছে। এই যে রোল অ্যসাইনমেন্ট, সেটা সমাজ করেছে নানান কারণে। ফেমিনিস্টরা বলবেন সমাজ এটা করেছে পুরুষের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, অন্যদিকে ফাঙ্কশনালিস্টরা বলবে এটা অর্ডার মেইনটেইন করবার জন্য জরুরী। সেখান থেকেই শুরু।”
“কিন্তু এখনো নানা ফর্মে এই জেন্ডার রোল বহন করে চলেছি। সেটাকে বদলে দেয়া, সাংস্কৃতিক উপাদানকে খুব দ্রুত ফেলে দেয়া সহজ নয়,” বলেন তিনি।
পুরুষ নিজেই কি পিতৃতন্ত্রের শিকার
বিশ্বব্যাপী পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদের মালিকানা এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতা হিসেবে পুরুষের অবস্থান নারীর উপরে।
তাই মনে করা হয় পিতৃতন্ত্র পুরুষকে শুধু সুবিধাই দেয়। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী জোবাইদা নাসরিন মনে করেন নিজের তৈরি পিতৃতন্ত্রের বেড়াজালে পুরুষ নিজেই বন্দী হয়ে রয়েছে।
তার ভাষায়, “পুরুষতান্ত্রিকতার ভিক্টিম কিন্তু পুরুষরাও। তাদের উপর একটা বাড়তি চাপ থাকে যে তাকে চাকরি পেতেই হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে, সে যখন বিয়ে করবে তখন স্ত্রীর খরচ দিতে হবে – এটা একটা বিশাল মনস্তাত্ত্বিক চাপ।”
“কিন্তু চাপের মধ্যে থাকলেও কাউকে কিছু বলা যাবে না। বললে তাকে দুর্বল মনে করা হবে। ছোট বেলা থেকে তাকে যেভাবে তৈরি করা হয়, পুরুষের যে কাঠামো সেটা কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতারই ছকে তৈরি। পুরুষরা যে পুরুষতান্ত্রিকতার ভিকটিম, এই বেড়াজাল থেকে সে কিভাবে বের হবে সেই তরিকাটা খুঁজে বের করা জরুরি,” বলেন তিনি।
উপেক্ষিত পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য
কিন্তু এই বেড়াজাল থেকে বের হতে না পারা, এসব বিষয় নিয়ে কথা না বলা, অথবা বলতে না পারার ফল হলো বিশ্বব্যাপী পুরুষরা বেশি আত্মহত্যা করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষরা দ্বিগুণ সংখ্যায় আত্মহত্যা করে। ব্যাপক মানসিক চাপে নানা ধরনের শারীরিক অসুখে বেশি ভোগেন পুরুষেরা।
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষের গড় আয়ু কম।
‘কান পেতে রই’ বাংলাদেশে মানসিক সহায়তা বিষয়ক একটি হেল্পলাইন। বেসরকারি এই সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এবছরের মে মাস পর্যন্ত তাদের হেল্পলাইনে ফোন করে কাউন্সেলিং চেয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ।
তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এই পুরুষদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি কল করেছেন।
সংস্থাটির সমন্বয়ক অরুণ দাস বলছেন, বেশিরভাগই তাদের মানসিক কষ্টের উৎস হিসেবে উপার্জনের চাপের কথা উল্লেখ করেন।
“তাদের একটা বড় অংশ সম্পর্ক নিয়ে সমস্যার কথা বলেন এবং মূলত মেয়েরাই এবিষয় নিয়ে বেশি কথা বলেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে কাজ বিষয়ক ইস্যু বেশি পাওয়া যায়- কারো হয়ত চাকরি চলে গেছে, অর্থনৈতিক অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে মানসিক চাপ- এসব বিষয় নিয়ে পুরুষরা কল করেন বেশি। আর একটা বিষয়ে পুরুষদের কাছ থেকে আমরা কল পাই সেটা হচ্ছে অ্যাডিকশন।”
ব্যর্থতার গ্লানি
অরুণ দাস বলছেন, যথেষ্ট উপার্জন করতে না পারা এবং পরিবারের জন্য দায়িত্ব পালন করতে না পারার জন্য অনেক পুরুষ ব্যর্থতার গ্লানিও বহন করেন, যা তার জন্য একটি বড় মানসিক চাপ।
মানবসম্পদ নিয়ে কাজ করেন মোহাম্মদ ওমর সিদ্দিক। তার ভেতরে কিভাবে ব্যর্থতার ভয় কাজ করে সেটি বর্ণনা করে তিনি বলছিলেন, “যেকোনো ভাবেই হোক আমাকে উপার্জন করতে হবে, এই চাপ আমার মধ্যে সবসময় ছিল।”
“যাতে আমি আমার পরিবার, আমার উপর যারা পুরোপুরি এবং আংশিকভাবে নির্ভরশীল তাদেরকে যাতে আমি সোসাইটির স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সঠিক সাপোর্ট দিতে পারি। আমার কাছে ফিয়ার অফ ফেইলিউর হলো যথাযথ সাপোর্ট তাদেরকে না দিতে পারা।”
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলছেন, বেশিরভাগ সময় পুরুষদের প্রবণতা হচ্ছে ছোটখাটো মানসিক উদ্বেগকে গুরুত্ব না দেয়া।
অনেক বড় ধরনের মানসিক সমস্যা নিয়ে সবকিছু ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি হলে তখনই পুরুষরা তাদের শরণাপন্ন হন।
তবে তিনি বলছেন, পুরুষ তার ভূমিকা পালন করার জন্য সমাজের যে স্বীকৃতি ও ক্ষমতা পান সে কারণে তিনি নিজেও এসব দায়িত্বকে চাপ মনে করেন না।
তার মতে, “সমাজ তাকে যে দায়িত্ব দেয় সেটাকে সে চাপ হিসেবে দেখে না। কারণ হলো ছোট বেলা থেকেই তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দেয়া হয়েছে।”
“এই যে এত কাজ করছে, টাকা আয় করছে- এটার জন্য সে এক ধরনের পাওয়ার হোল্ড করছে। খুব স্বাভাবিক যে সেই পাওয়ারের জায়গাটা তারা ছাড়তে চাইবেন না। তাই এত দায়িত্বকে সে আর নেগেটিভলি দেখতে পারে না। এটা যে তার প্রতি এক ধরনের অন্যায়ও সে সেটা সেভাবে চিহ্নিতও করতে পারে না,” বলেন তিনি।
দৈনন্দিন
খাঁটি ঘি চেনার উপায় এবং উপকারিতা

ঘি একটি উৎকৃষ্ট এবং পুষ্টিকর খাবার। তাই আমাদের প্রাত্যহিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আমাদের সকলের খাদ্যতালিকায় ঘি প্রাধান্য দেয়া উচিত। আজকাল সকলের পছন্দের কথা বিবেচনা করা অনেক কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট আইটেম হিসেবে বাজারে এনেছে ঘি।
একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে আমরা অনেকে বাসায় নিয়ে আসি সেই ঘি। কিন্তু আমরা কি কখনো যাচাই করি আমরা যে ঘি বাজার থেকে নিয়ে আসছি সে ঘি কতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ বা খাঁটি। তাই চলুন জেনে নেই সঠিক উপায়
খাঁটি ঘি চেনার উপায় কি এবং ঘি নির্বাচন পদ্ধতি
আসল কিংবা নকল ঘি চেনার জন্য রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি। চলুন জেনে নেই ঘি নির্বাচনের পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে
হাতের তালুতে নিয়ে খাঁটি ঘি শনাক্তকরণ
আপনি যদি ঘি শনাক্তকরণের প্রাথমিক ভাবে কোন একটি উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে-অবলম্বন করতে পারেন এই পদ্ধতি। প্রথমে এক চামচ ঘি আপনার হাতের তালুতে রাখুন। আপনার শরীরের উষ্ণতায় যদি ঘি গলে যায় তাহলে বুঝে নিতে পারেন যে আপনার ব্যবহৃত ঘি খাঁটি।
ল্যাবে টেস্ট করার মাধ্যমে ভেজাল ঘি চেনার উপায়
ঘি শনাক্তকরণের আরেকটি পদ্ধতির নাম হল ল্যাব টেস্ট। ল্যাবে ঘি টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজে আপনি আসল কিংবা নকল ঘি শনাক্ত করতে পারবেন। দেশের যে কোনো অনুমোদিত সরকারি ল্যাব থেকে টেস্ট করতে পারেন।
চুলায় গরম করে ঘি শনাক্তকরণ পদ্ধতি
আপনি যদি খাঁটি ঘি শনাক্ত করতে চান তাহলে চুলায় শনাক্ত করতে পারেন। প্রথমে একটি কড়াইয়ে আপনি ঘি নিয়ে চুলার উপর বসিয়ে নিন। চুলায় বসানো পর যদি দেখেন ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে তখন বুঝে নিতে হবে আপনাকে নকল ঘি দেওয়া হয়েছে।
কোলটার ডাই শনাক্তকরনের মাদ্ধমে খাঁটি ঘি চেনার উপায়
ঘি শনাক্তকরণের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি উপায় হল কোলটার ডাই শনাক্তকরণ পদ্ধতি। এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে আপনার ব্যবহৃত ১ চামচ ঘি নিয়ে ৫ মিঃলিঃ হাইড্রোক্লোরিক এসিড যুক্ত করতে হবে। ভালোভাবে মেশানোর কিছুক্ষণ পর যদি মিশ্রণটির রং লাল হয়ে যায় তাহলে আপনি বুঝতে হবে যে, আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন যে ঘি খাঁটি নয়। এটি তৈরির ক্ষেত্রে কোলটার ডাই ব্যবহার করা হয়েছে।
সিদ্ধ আলু ব্যবহার করে শনাক্তকরণ
ঘি এর মধ্যে আলু সিদ্ধ ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটা যদি শনাক্ত করতে চান তার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিতে হবে। সেই ঘি এর সাথে আপনি সামান্য পরিমাণ আয়োডিন মেশাতে হবে। কিছুক্ষনের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখবেন যদি ঘি এর মিশ্রণের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হয় তাহলে বুঝে নিবেন যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে সিদ্ধ আলু ব্যবহার করা হয়েছে।
ঘি থেকে ডালডা শনাক্তকরনের মাদ্ধমে ভেজাল ঘি চেনার উপায়
প্রথমে একটি পাত্রে এক চামচ ঘি নিয়ে তার মধ্যে আপনাকে যুক্ত করতে হবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড। যদি কিছুক্ষন পর দেখন যে, ঘি এর রং পরিবর্তন হয়ে তা বেশ লালচে কিংবা বাদামি লালচে রং ধারণ করেছে তাহলে বুঝতে হবে যে ঘি তৈরি করার ক্ষেত্রে ডালডা ব্যবহার করা হয়েছে।
তিলের তেল ব্যবহার করে খাঁটি ঘি চেনার উপায়
ঘি থেকে তিলের তেল শনাক্তকরণের জন্য প্রথমে আপনি একটি পাত্রে অল্পকিছু ঘি নিয়ে নিন । ঘি এর সাথে আপনি পরিমাণ অনুযায়ী ফারফিউরাল এসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। যদি আপনার মিশ্রণটিতে রং পরিবর্তন হয় এবং তা লালচে রং ধারণ করে তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনি যে ঘি ব্যবহার করেছেন সে ঘি তৈরি করার জন্য তিলের তেল ব্যবহার করা হয়েছে।

ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি?
ঘি এমন একটি খাবার যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমাদের অনেক উপকার করে । খাঁটি ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে বললে অনেক কথাই বলা যায় তবে এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো:
– চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
– মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
– শরীরে হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে।
– হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
– ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে।
– স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।

ঘি খাওয়ার অপকারিতা কি?
প্রতি জিনিসেরই ভালো মন্দ ২ টা দিকই থাকে । অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় । ঘি এর বেলাতেও এটি ব্যতিক্রম নয় । উপকারিতার পাশাপাশি বেশি ঘি খাওয়ার কারণে বেশ কিছু ঘি এর অপকারিতা রয়েছে যেমন –
– অতিরিক্ত ঘি খেলে আমাদের হজমে সমস্যা হতে পারে।
– অতিরিক্ত ঘি গ্যাস্ট্রিকের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
– অতিরিক্ত ঘি খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা জন্ম দিতে পারে।
আমাদের সকলের পছন্দ এর একটি খাদ্য হল ঘি। উপকারী একটি খাবার হলেও কখনো প্ৰয়োজনের বেশি ঘি খাওয়া উচিত নয়, ঘি এর ব্যবহার ঠিক মত না করলে তখন হিতে-বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
দৈনন্দিন
সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে কি ওজন কমে?

অনেকেই রান্নার জন্য ভিন্ন ভিন্ন তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহারের কথা বলছেন। শুধু তাই নয়, একদম নন রিফাইন্ড সরিষার তেল খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঘানি থেকে আনা সরিষার তেল স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্যেও ভালো।
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল করোনারি হার্ট ডিজিজ । রান্নার তেলগুলি এই হার্টের রোগের চিকিৎসা ও ঝুঁকি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। সেই সঙ্গে হৃদরোগজনিত নানা ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
সরিষার তেল যেভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে
সরিষার তেলের রান্না হৃৎপিণ্ড, হাড়, হজম এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর। এতে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি রয়েছে। এই তেল ডিপ ফ্রাই, খাবার গরম এবং খাবারে অনন্য স্বাদ আনতে অসাধারণ কার্যকর। যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন বা যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিনের রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করা উচিত। এই তেল হজ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সরিষার তেল লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে। আর খাবার দ্রুত হজম হলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,ঝাঁঝালো স্বাদের সরিষার তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই তেলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডে কেবল খাবারের স্বাদই উন্নত করে না, রক্তে চর্বির মাত্রাও হ্রাস করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন সরিষার তেল
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় । অতএব, যতটা সম্ভব সরিষার তেলে ভাজা জিনিস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সবজি রান্না করার সরিষার বীজ ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল আগে ভালো করে গরম করতে হবে। তেল অপরিশোধিত হলে ব্যবহার করবেন না।
দৈনন্দিন
ঘরেই ২ উপকরণে তৈরি করুন খাঁটি ঘি

ঘি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতনরা প্রতিদিনই পাতে রাখেন ঘি। আগে অনেকেরই ধারণা ছিল, ঘি খেলে ওজন বেড়ে যাবে। তবে এ ধারণা একেবারেই ভুল।
কারণ ঘি’তে থাকা ভালো চর্বি শরীরে জমে থাকা খারাপ চর্বিকে ধ্বংস করে। এছাড়াও ঘি’র অনেক উপকারিতা আছে। তবে বাজার থেকে কেনা খাঁটি ঘি আর ঘরে তৈরি ঘি’র মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
বাজারে অনেক ভেজাল ঘি’র মোড়কে খাঁটি লেখা স্টিকার থাকে। যা খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ঘরেই খুব সহজে তৈরি করতে পারেন খাঁটি ঘি।
অনেকেই ভাবেন ঘরে ঘি তৈরি করা খুবই কষ্টকর। তবে জানলে অবাক হবেন মাত্র ২ উপাদান দিয়েই ঘরে তৈরি করতে পারবেন খাঁটি ঘি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রেসিপি-

উপকরণ
১. দুধের সর ১ কেজি ও
২. ঠাণ্ডা পানি পরিমাণমতো।
পদ্ধতি
প্রথমে দুধের সর খুব মিহি করে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে পরিষ্কার শিল-পাটায় বেটেও নিতে পারেন। এবার সর বাটা মাটির পাত্রে নিয়ে কাঠের পরিষ্কার ডাল ঘুটনি দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঘুটতে থাকুন।
ডিম ফেটানোর বিটার দিয়েও এটি করতে পারেন। দেখবেন সর থেকে একসময় মাখন আলাদা হয়ে গেছে। বাটার আলাদা হয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে আবার বিট করলে দেখবেন পানি ও মাখন আলাদা হয়ে যাবে।
যখন মাখন সবটুকু পরিষ্কার হয়ে পানির উপরে উঠে আসবে তখন পানি থেকে মাখন ছেঁকে তুলুন। আর পানি আলাদা করে রাখুন। এই পানিই হলো বাটার মিল্ক। যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এই বাটার মিল্ক পরে রুটি, পিঠা ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারেন।

এবার মাখন থেকে পানি পুরোপুরি বের করতে একটি পাতলা মসলিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া মাখন বেঁধে নিয়ে ঝুলিয়ে রাখুন ৪-৫ ঘণ্টা। এরপর একটি পরিষ্কার লোহার কড়াইয়ে মাখন অল্প আঁচে অনবরত নাড়তে থাকুন।
বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পরে মাখন থকে থেকে ঘি বের হতে থাকবে। এটাই হলো খাঁটি গাওয়া ঘি। সবটুকু মাখন যখন পুড়ে কালো হয়ে যাবে তখন দেখবেন ঘি গাঢ় সোনালি রং ধারণ করেছে ও সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। আর তখনই বুঝতে হবে আসল ঘি তৈরি হয়ে গেছে।
এরপর ঘি নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। দেখবেন পোড়া অংশ ঘি’র সঙ্গে যেন মিশে না যায়। তারপর শুকনো কাচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল খাঁটি ঘি।
মনে রাখবেন, মাখন আলাদা করার জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করবেন। স্টিল বা অন্যান্য তৈজসপত্র ব্যবহার করলে মাখন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দৈনন্দিন
রক্তশূন্যতা দূর করতে উপকারী যেসব পানীয়

যে কারও রক্তশূন্যতা হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই সমস্যা প্রবল। মূলত শরীরে আয়রনের অভাব থেকেই এই সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বা ভারসাম্য ঠিক রাখা প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার।
রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে নীচে নেমে গেলে সেটাকেই রক্তশূন্যতা বলে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার গণনা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাপ সম্ভব।
মাংস, মাছ, পালং শাক, বিট, মটরের মতো খাবার শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। যাদের রক্তশূন্যতা আছে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় তারা কিছু পানীয় যোগ করতে পারেন। যেমন-
বিটের জুস: যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম, চিকিৎসকরা প্রায়ই তাদের বিটের রস পান করার পরামর্শ দেন। এতে ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন, বেটাইন এবং ভিটামিন সিসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিটের জুস পান করলে লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করতে সাহায্য করে।
তৈরির পদ্ধতি: বিটের রস তৈরি করতে ২টি মাঝারি বিট, ১টি শসা এবং ১ ইঞ্চি আদা পাতলা টুকরো করে কেটে নিন। প্রথমে লেবুর হলুদ খোসা কেটে নিন। টুকরো টুকরো করে কেটে রেখে দিন। লেবুর বীজগুলো ফেলে দিন। এবার এটিকে জুসারে রেখে ফিল্টার করে পান করুন।
পালং ও পুদিনার রস: রক্তশূন্যতা দূর করতে শাক দারুন উপকারী। এতে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন বি টুয়েলভ, ফলিক অ্যাসিডের মত পুষ্টি রয়েছে। আধা কাপ পালং শাকে প্রায় ৩৫ শতাংশ আয়রন এবং ৩৩ শতাংশ ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। পালং এর স্যুপও রক্তাশূন্যতা দূর করার একটি অন্যতম উপাদান। এ ছাড়া এক গ্লাস তাজা পালং শাকের রসে দুই চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
তৈরির পদ্ধতি: ১ কাপ সুক্ষ্ম করে কাটা পুদিনা এবং আধ কাপ পানিতে ২ কাপ মোটা করে কাটা পালং শাক কেটে রেখে দিন। এর পর দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ভালো করে মিশে গেলে ছেঁকে নিন। স্বাদ বাড়াতে চাইলে এতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১চা চামচ জিরা গুঁড়ো যোগ করতে পারেন। চাইলে এতে বরফ কিউবও যোগ করতে পারেন।
ডালিমের রস: রক্তশূন্যতা দূর করতে ডালিম বা বেদানার রসের তুলনা নেই। এক কাপ ডালিমের রসে এক চতুর্থাংশ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো এবং দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালের নাস্তার সঙ্গে এই মিশ্রণটি খেতে পারেন। এক গ্লাস গরম দুধে দু’চামচ শুকনো ডালিমের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে একবার বা দু’বার পান করলেও উপকার মিলবে।
মিক্সড ভেজিটেবল জুস: ভেজি মিক্স স্যুপ হল বিভিন্ন রকমের সবজির মিশ্রণ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ,আয়রন, ভিটামিন সি এবং ফাইবার পাওয়া যায়। আয়রন সমৃদ্ধ এই রস পান করতে খুবই সুস্বাদু।
তৈরির পদ্ধতি: ১ কাপ কলা, ১ কাপ কাটা লাউ, ১/৪ কাপ আমলকি এবং এক টেবিল চামচ মধু, দু’কাপ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে মিক্সারে ব্লেন্ড করুন। সম্পূর্ণ ব্লেন্ড হয়ে গেলে এটি ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করুন।
দৈনন্দিন
বড় মাছের এক পদ

সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ক্রিসপি জিনজার হানি ফিশ
উপকরণ ১
রুই মাছের ফিলে ২৫০ গ্রাম, আদার রস ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ১ টেবিল চামচ, সয়াসস ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ ও গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ।
উপকরণ ২
ময়দা ৩ টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ৩ টেবিল চামচ ও লবণ সামান্য।
উপকরণ ৩
আদা (জুলিয়ান কাট) ২ টেবিল চামচ, রসুন মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ মিহি কুচি ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ১ টেবিল চামচ, লাইট সয়াসস ১ টেবিল চামচ, অয়েস্টার সস ১ টেবিল চামচ, মধু ২ টেবিল চামচ, পাপরিকা ১ চা–চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ সামান্য ও তেল ৫ টেবিল চামচ।
প্রণালি
প্রথমে মাছ পছন্দমতো টুকরা করে উপকরণ–১–এর সব দিয়ে মেখে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর উপকরণ–২–এর সবকিছুতে পরিমাণমতো পানি দিয়ে মেখে মাছগুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে ডুবো তেলে বাদামি রং করে ভেজে ওঠাতে হবে।
এরপর পাঁচ টেবিল চামচ তেল গরম করে আদা ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলে রসুন ও পেঁয়াজ ভেজে আধা কাপ পানি দিয়ে পর্যায়ক্রমে উপকরণ–৩–এর সব দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামাতে হবে।
পরিবেশন পাত্রে ঢেলে মাছের ওপরে ভাজা আদাকুচি দিয়ে পছন্দমতো সাজিয়ে ফ্রায়েড রাইস, পোলাও বা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।





















অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন