ফসল
লালস্বর্ণের বিকল্প বাছতে শুরু পরীক্ষা
খামারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় দু’বিঘা জমিকে অজস্র ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে নানা ধরনের ধান বীজের চাষ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।
জেলার বেশির ভাগ চাষি দীর্ঘ দিন ধরেই লালস্বর্ণ প্রজাতির ধান চাষ করায় রোগপোকার হামলা বাড়ছে। কমছে ফলন। পাশাপাশি, সময়ে শুরু করা যাচ্ছে না রবি মরসুমে আলু, সর্ষে-সহ নানা ফসলের চাষ। ফলে সেই সব ফসলে রোগ-পোকার হামলা বাড়ে। বাড়ে চাষের খরচ। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে ধানের ২১টি প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করার কথা জানিয়েছে কালনা মহকুমা কৃষি খামার।
খামারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় দু’বিঘা জমিকে অজস্র ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে নানা ধরনের ধান বীজের চাষ করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।
কিন্তু কেন এমন তোড়জোড়?
খামারের ব্যাখ্যা, পুষ্টিগুণ বজায় রেখে ফলন কেমন হয় তা দেখতেই এই উদ্যোগ। চলতি ধান থেকে হওয়া চালের উপরের অংশ বাদ দেওয়ায় এর পুষ্টিগুণ কমে যায় বলে কৃষি দফতর জানায়। ‘পুষ্পা’, ‘কৌশল্যা’, ‘বিপিটি ৫,২০৪’-সহ মোট সাতটি প্রজাতির ভাল পুষ্টিগুণ মেলে। সেগুলির পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। কৃষিকর্তারা জানান, ‘পুষ্পা’ ও ‘কৌশল্যা’ প্রজাতির ধানে ৯৬ শতাংশ আয়রন ও ‘বিপিটি ৫,২০৪’ প্রজাতির ধানে ১৯ শতাংশ জিঙ্ক রয়েছে। ‘পুষ্পা’, ‘কৌশল্যা’, ‘বিপিটি ৫,২০৪’, এই তিনটি প্রজাতির ধান লাল স্বর্ণ প্রজাতির মতোই উচ্চ ফলনশীল। হেক্টর প্রতি জমিতে ফলন মেলে প্রায় সাড়ে পাঁচ টন।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, লাল স্বর্ণ চাষ করতে সময় লাগে ১৩৫-১৪০ দিন। অথচ, ‘মুক্তশ্রী’, ‘সুকুমার’, ‘মনীষা’, ‘ভূপেশ’, ‘অজিত’, ‘পুরুলিয়া ১’-এর মতো আরও কয়েকটি প্রজাতির ধান ঘরে তোলা যায় অন্তত ২০ দিন আগে। ফলে এই ধরনের স্বল্পমেয়াদি ধানের চাষ হলে সময়ে রবি মরসুমের চাষ শুরু করতে পারবেন চাষিরা।
ইতিমধ্যে, পূর্ব ভারতের ‘সবুজ বিপ্লব আনয়ন প্রকল্পে’ ‘অজিত’ ও মন্তেশ্বরে ‘মুক্তশ্রী’ প্রজাতির ধানের চাষ করেছেন বেশ কিছু চাষি, জানায় কৃষি দফতর। এই সব স্বল্পমেয়াদি ধানের প্রজাতি নিয়েও শুরু হয়েছে নানা পরীক্ষা। কালনার কৃষি খামারে ‘রানিধান’ নামে আরও একটি প্রজাতি নিয়েও চলছে গবেষণার কাজ।
কৃষিকর্তারা জানান, লালস্বর্ণ ধানের প্রতি চাষিদের দীর্ঘ দিনের দুর্বলতা রয়েছে। ‘রানিধান’ প্রজাতির ধান দেখতে লালস্বর্ণের মতো। তবে এই প্রজাতির ধান খোলাপচা সহনশীল। ফলনও মেলে ভাল। কালনা ১ ব্লকের কাঁকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় একশো বিঘা জমিতে এই ধানের চাষ করেছেন চাষিরা।
কালনার সহ-কৃষি আধিকারিক (কৃষি গবেষণা) সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে একই প্রজাতির ধান চাষ করলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। লালস্বর্ণ প্রজাতির ক্ষেত্রেও এই সমস্যায় হচ্ছে। চাষিদের বিকল্প হিসেবে নানা ধরনের ধানের প্রজাতি দেওয়ার জন্য কৃষি খামারে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন জাত নিয়ে পরীক্ষা।’’
এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।
বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।
বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়
বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
ফসল
কাউনের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিকর এবং লাভজনক ফসল চাষের সহজ উপায় – দা এগ্রো নিউজ
কাউন হলো এক ধরনের প্রাচীন খাদ্যশস্য, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং চাষাবাদের জন্য সহজ একটি ফসল। এটি মানুষের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে এবং বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। আসুন, কাউনের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
কাউনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
ভেসজ গুন
ব্যবহারঃ ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি এ দেশে গরীবদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
পুষ্টিগুণ: কাউন স্বাস্থ্যকর শস্য হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে:
প্রোটিন: পেশি গঠনে সহায়ক।
ফাইবার: হজমশক্তি উন্নত করে।
মিনারেলস: ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, এবং আয়রন সমৃদ্ধ।
ভিটামিন: বি-কমপ্লেক্স ভিটামিনের ভালো উৎস।
লো ক্যালোরি: কম ক্যালোরি থাকায় এটি ডায়েট উপযোগী।
উপকারিতা
হজম উন্নত করে: ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: কম চর্বিযুক্ত হওয়ায় এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ওজন কমাতে সহায়ক: পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা কমায়।
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে: সহজলভ্য খাদ্য হিসেবে এটি পুষ্টির চাহিদা মেটায়।
কাউনের চাষ পদ্ধতি
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়।
জমি প্রস্তুতি
মাটির ধরন: দোআঁশ মাটি এবং বেলে দোআঁশ মাটি কাউনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। জমির pH মান ৫.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকা উচিত।
জমি প্রস্তুত: ২-৩ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করুন। আগাছা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করুন।
বীজ বপন
বীজ নির্বাচন: উন্নত জাতের বীজ নির্বাচন করুন। প্রতি হেক্টরে ৮-১০ কেজি বীজ প্রয়োজন।
বপনের সময়: কাউনের জন্য আদর্শ বপন সময় হলো বর্ষা মৌসুম (জুন-জুলাই) ।
পদ্ধতি: সারি পদ্ধতিতে বীজ বপন করুন। গাছের মধ্যে ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং সারির মধ্যে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখুন।
কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে। কাউনের এ জাতটি শিবনগর নামে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং দেশী বিদেশী জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়ণের পর ১৯৮৯ সালে তিতাস নামে অনুমোদন করা হয়। তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা, পাতা সবুজ , কান্ড শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী। বীজ মাঝারি আকারের এবং ঘিয়ে রংয়ের । হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম । স্তানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী । জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে । তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন । রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন। খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়।
বপনের সময়
দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়।
বীজের হার
কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সেমি রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না । তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়।
সারের নাম সারের পরিমান/শতকে সারের পরিমান / হেক্টর
ইউরিয়া ৩৮৫-৪২৫ গ্রাম ৯৫-১০৫ কেজি
টি এসপি ২৮৩-৩০৪ গ্রাম ৭০-৭৫ কেজি
এমওপি ১২১-১৬২ গ্রাম ৩০-৪০ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচ বিহীন চাষে সবটুকু সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা
সার: বপনের আগে জৈব সার (কম্পোস্ট) এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করুন। পটাশিয়াম ও ফসফরাস সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন হয়।
সেচ: বর্ষাকালে সেচের প্রয়োজন হয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় ১-২ বার সেচ দিন।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
একটি খরা সহিষ্ণু ফসল । তবে রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী হয়। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
রোগবালাই ও প্রতিকার
কাউনের চাষে সাধারণত রোগবালাই কম দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত রোগ হতে পারে:
পাতার দাগ: পাতা ঝলসে যাওয়া বা দাগ পড়া এড়াতে নিয়মিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করুন।
পোকার আক্রমণ: কীটনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করুন।
ফসল সংগ্রহ
বপনের ৮০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল পরিপক্ক হয়। কাঁচা শস্যের রঙ পরিবর্তন হলে ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ফসল সংগ্রহের পর ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বাজার চাহিদা: স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কাউনের চাহিদা বাড়ছে।
উচ্চ লাভ: উৎপাদন খরচ কম এবং ভালো দাম পাওয়া যায়।
রপ্তানি সম্ভাবনা: স্বাস্থ্যকর শস্য হওয়ায় কাউনের রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ছে।
কাউন একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর, সহজে চাষযোগ্য এবং লাভজনক ফসল। এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে এটি বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হয়ে উঠতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে কাউন চাষ শুরু করে আপনি হতে পারেন সফল কৃষকের উদাহরণ। আজই চাষ শুরু করুন এবং এর সুফল ভোগ করুন।
ফসল
ভুট্টার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণ এবং লাভজনক কৃষি উদ্যোগ – দা এগ্রো নিউজ
ভুট্টা বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য এবং বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। এটি শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত লাভজনক। ভুট্টার ব্যবহার খাদ্য, পশুখাদ্য এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক। আসুন, ভুট্টার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
ভুট্টার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
পুষ্টি মূল্যঃ ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশী। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” থাকে।
ভুট্টা হলো একটি উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ শস্য, যা শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। এতে রয়েছে:
- প্রোটিন: শরীরের গঠন ও পুনর্গঠনে সহায়ক।
- কার্বোহাইড্রেট: শক্তির প্রধান উৎস।
- ভিটামিন: ভিটামিন এ, বি, এবং ই-এর ভালো উৎস।
- মিনারেলস: ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এবং আয়রন।
- ফাইবার: হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
উপকারিতা:
- শক্তি বৃদ্ধি: ভুট্টার কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ: এতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: ভুট্টার ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ভুট্টার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা: ভুট্টার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।
ভেষজ গুনঃ ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে।
ভুট্টার চাষ পদ্ধতি
ভুট্টার চাষ বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে উচ্চ ফলন নিশ্চিত করা যায়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।
মাটি ও আবহাওয়া:
- মাটির ধরন:
- দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ভুট্টার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
- মাটির pH মান ৫.৮ থেকে ৭.০ এর মধ্যে থাকা উচিত।
- আবহাওয়া:
- ভুট্টার জন্য উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন।
- ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটি ভালো জন্মে।
বীজ নির্বাচন ও রোপণ
- বীজ নির্বাচন:
- উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ বেছে নিন।
- প্রত্যেক হেক্টরে ২০-২৫ কেজি বীজ প্রয়োজন।
- রোপণের সময়:
- ভুট্টা সাধারণত রবি মৌসুমে (অক্টোবর-নভেম্বর) রোপণ করা হয়।
- রোপণ পদ্ধতি:
- সারি পদ্ধতিতে রোপণ করুন।
- গাছের মধ্যে ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং সারির মধ্যে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখুন।
জাত পরিচিতি
ভুট্টার জাত সংগ্রহ ও বাছাই করনের মাধ্যমে বিএআরআই আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী ভুট্টা জাতের চাষের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল।
ভুট্টার জাত
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫: আমিষ সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাত যা ২০০৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন ও খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। জাতটির দানা উজ্জ্বল আকর্ষণীয় কমলা রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ২৯০-৩১০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৯-১০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৭-৭.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪১ দিন ও খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ৩৭০-৩৯০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০.৫-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন ও খরিপ মৌসুমে ১০৫-১১০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ডেন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ৩৭০-৩৭৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১১.৫-১২.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বারির নিজস্ব উদ্ভাবিত ইনব্রিড লাইনের সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৯ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন ও খরিপ মৌসুমে ১০০-১১০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৯ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৫০-১৫৫ দিন। জাতটির দানা হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০.৫-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২: স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট ফ্লিন্ট প্রকৃতির জাত। এটি ২০১৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন। খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে (ফল আসার আগে) জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.১-৮.৫ টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০-১১.১ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩: স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট ফ্লিন্ট প্রকৃতির জাত। এটি ২০১৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫২ দিন। খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে (ফল আসার আগে) জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.২-৮.৯ টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০.১-১১.২ টন। মোচা পরিপক্ক হওয়ার পরও জাতটির গাছ ও পাতা সবুজ থাকে যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের উপযোগী।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪: জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু এবং মধ্যম ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন। এটি ২০১৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১১৫ দিন। জাতটি দানা সাদা বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন রবি মৌসুমে ১০.৮৪ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১০.৫২ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫: জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু এবং উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন। এটি ২০১৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৮ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১২১ দিন। জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন রবি মৌসুমে ১২.৭৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১২.০৭ টন। পরিপক্ক অবস্থায় জাতটির বেশির ভাগ পাতা সবুজ থাকে বিধায় গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার উপযোগী।
বারি মিষ্টি ভুট্টা-১: থাইল্যান্ড থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি নির্বাচন করা হয় এবং ২০০২ সালে অনুমোদিত হয়। মিষ্টি ভুট্টা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই দানা যখন নরম থাকে তখনই মোচা সংগ্রহ করতে হয়। সিল্ক বের হবার ২০-২৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বপনের মাত্র ১১৫-১২০ দিনে খাওয়ার উপযোগী মোচা সংগ্রহ করা যায়। এর হলুদ দানা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। জাতটির ফলন রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ১০-১০.৫ টন (খোসা ছাড়ানো কচি মোচা) এবং প্রায় ২৫টন/হেক্টর সবুজ গো-খাদ্য পাওয়া যায়।
বপনের সময়ঃ বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা
- সার:
- জৈব সার এবং রাসায়নিক সার সমানভাবে প্রয়োগ করুন।
- বীজ বপনের সময় এবং রোপণের ৩০ দিন পর সার দিন।
- সেচ:
- মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে ২-৩ বার সেচ দিন।
- ফুল ফোটার সময় এবং দানা আসার সময় পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
সার ব্যবস্থাপনাঃ ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমান নিচে দেওয়া হলোঃ পরিমান/হেক্টর/ কেজি
সারের নাম | কম্পোজিট রবি | কম্পোজিট খরিফ | হাইব্রিড রবি |
ইউরিয়া | ১৭২-৩১২ | ২১৬-২৬৪ | ৫০০-৫৫০ |
টিএসপি | ১৬৮-২১৬ | ১৩২-২১৬ | ২৪০-২৬০ |
এমপি | ৯৬-১৪৪ | ৭২-১২০ | ১৮০-২২০ |
জিপসাম | ১৪৪-১৬৮ | ৯৬-১৪৪ | ২৪০-২৬০ |
জিংকসালফেট | ১০-১৫ | ৭-১২ | ১০-১৫ |
বোরিকএসিড | ৫-৭ | ৫-৭ | ৫-৭ |
গোবর | ৪-৬টন | ৪-৬টন | ৪-৬টন |
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ জমি তৈরীর শেষ পর্যায়ে অনুমোদিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরয়া সমান ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে নিম্নরূপ ৩-৪টি সেচ দেওয়া যায়।
- প্রথম সেচ: বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়)
- দ্বিতীয় সেচ:বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়)
- তৃতীয় সেচ:বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়)
- চতুর্থ সেচ:বীজ বপনের ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পূর্ব পর্যায়)
ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
রোগবালাই ও প্রতিকার
ভুট্টার চাষে রোগবালাই একটি সাধারণ সমস্যা। কিছু সাধারণ রোগ হলো:
- লিফ ব্লাইট: এই রোগে পাতা ঝলসে যায়। দমন করতে তামার ফাংশাইড ব্যবহার করুন।
- স্টেম বোরার: এই পোকার আক্রমণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। কীটনাশক স্প্রে করুন।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ ভুট্টার চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ হলে হাত দিয়ে তা মেরে ফেলতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমনঃ বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। নানা প্রকার বীজ ও মাটি বাহিত ছত্রাক যেমন পিথিয়াম, রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, রোগ ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে। জমিতে রসের পরিমান বেশী হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে বপনকৃত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রকের আক্রমনের মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রতিকার
- সুস্থ্য, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
- উত্তমরূপে জমি তৈরী করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩সে. এর বেশী) বপন করতে হবে।
- থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমনঃ হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে। প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ বেশী হতে দেখা যায়। হেলমিনথোসপরিয়াম টারসকাম দ্বারা আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়। এ রোগের জীবানু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেক দিন বেঁচে থাকে জীবাণুর বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেক দূর পর্যন্ত সুস্থ্য গাছে ছড়াতে পারে। বাতাসের আদ্রতা বেশী হলে এবং ১৮-২৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
- রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) চাষ করতে হবে।
- আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- ভুট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমনঃ মোচা ও দানা পচা রোগ ভুট্টার ফলন, বীজের গুনাগুন ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি এ রোগ ঘটায়। আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হয় না, কুঁচকে অথবা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচাতে বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখেই দেখা যায়। ভুট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশী থাকলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমনে বা কান্ড পচা রোগে গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে। এ রোগের জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। একই জমিতে বার বার ভুট্টার চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
- এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
- জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমন রোধ করতে হবে।
- ভুট্টা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
- কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার কান্ড পচা রোগ দমনঃ বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি-এর কারণে এ রোগ ঘটে থাকে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কান্ড পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশী এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাক জনিত কান্ড পচা রোগ বেশী হয়।
প্রতিকারঃ
- ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
- ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- শিকড় ও কান্ড আক্রমকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চক্চক্ খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।
- ভুট্টার দানা পুরোপুরি পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করুন।
- সংগ্রহের পর ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
- বাজার চাহিদা:
- ভুট্টার চাহিদা সারা বছর থাকে।
- এটি খাদ্যশস্য, পশুখাদ্য এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
- উচ্চ লাভ:
- সঠিক চাষ পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে ৭-১০ টন ফলন পাওয়া যায়।
- রপ্তানি সম্ভাবনা:
- বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভুট্টা আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হয়।
ভুট্টা একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং লাভজনক ফসল, যা সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষকের জন্য আয়ের বড় উৎস হতে পারে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভুট্টা চাষ আপনার জন্য হতে পারে একটি সাফল্যময় উদ্যোগ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আজই ভুট্টা চাষ শুরু করুন।
ফসল
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারীর চাষ করা ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একটি শীষে ধান পাওয়া গেছে এক হাজার এক শর বেশি। দেশে বর্তমান যেসব জাতের ধান চাষ হয় সেসবের চেয়ে এই ধানের ফলন দ্বিগুণ। ফাতেমা বেগমের জমিতে এই ধানের চাষ হওয়ায় এরই মধ্যে তা ‘ফাতেমা ধান’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়।
ফাতেমা ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়, যা বেড়ে ৮-১২টি হয়। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। একেকটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬-৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা এক হাজার থেকে ১২০০টি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম। ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিপ (ছড়ার সঙ্গের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়ায় দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কাণ্ড ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। তাই এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোন আশঙ্কা নেই। ফাতেমা ধান একরপ্রতি ফলন হয় প্রায় ১৩০ মণ। তাই অন্য যে কোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
গতকাল শুক্রবার চাকুলিয়া গ্রামে ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছু মানুষের ভিড় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ফাতেমার ধানের বীজ কিনতে এসেছে। কেউ কেউ যে জমিতে ওই ধান ফলেছে, তা ঘুরে দেখে। তবে কয়েক দিন আগেই ওই ধানের বীজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
ফাতেমা বেগম জানান, ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তাঁর বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান তিনি। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর ছেলে লেবুয়াতকে ধান চাষ চাষ করতে বলেন। সে বছর আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। এবার আরো বেশি জমিতে চাষ করার পর ধানে ধানে সয়লাব হয়ে গেছে। সাড়া ফেলেছে তা এলাকার বাইরেও। ওই ধান দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো। লেবুয়াত শেখ জানান, বাড়ির পাশে দেড় বিঘার মৎস্যঘেরের মধ্যে প্রায় ৪২ শতক জমিতে আলাদাভাবে এ বছর ওই ধানের চাষ করেন তাঁরা। অন্য ধানের মতোই সাধারণ পরিচর্চা করেন। জমিতে দুই দফায় ২০ কেজি ইউরিয়া এবং ৩০ কেজি পটাশ সার ব্যবহার করা হয়েছে। পোকামাকড় তাড়াতে দুই দফায় কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। অন্য জাতের ধানগাছের চেয়ে এই ধানগাছ অনেক লম্বা। ধানের শীষও অনেক বড়। প্রতিটি শীষে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ দানা হয়। ওই জমিতে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কেজি ধান ফলেছে। নিজেদের জন্য কিছু পরিমাণ বীজ ধান রাখার পর ৪০০ টাকা কেজিদরে ওই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে আয় হয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা। সিলেট, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ওই ধান ক্রয় করেছে। ফকিরহাটের মাসকাটা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, ওই ধান রোপণ করার পর তাঁরা তত্ত্বাবধান করেন। চাষি তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ধান চাষ করেছেন।
কৃষক রিয়াজুল ইসলাম জানান, ইউটিউবের মাধ্যমে ফাতেমা ধানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করার পর বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াতের মায়ের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করি। এরপর প্রাথমিকভাবে আমার ৭৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করি। এতে সবকিছু মিলে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশাবাদী এ জমিতে প্রায় ৯৫-১০০ মণ ধান হবে। এই ধান উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, এই ধান চাষ করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। নিজেও স্বাবলম্বী হতে পারব। এ বছর আরও জমিতে আবাদ করব এই ধান।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, বাগেরহাটের কৃষক কর্তৃক উদ্ভাবিত ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান, উপজেলাতে এ ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
ফসল
গোল মরিচের উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং লাভজনক একটি ফসল – দা এগ্রো নিউজ
গোল মরিচ, যা “মসালার রাজা” নামে পরিচিত, শুধু একটি মসলা নয় বরং এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। এর চাহিদা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও অত্যধিক। আসুন, গোল মরিচের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
গোল মরিচের উপকারিতা:
গোল মরিচে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণাবলী।
স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:
- হজম শক্তি বাড়ায়: গোল মরিচে থাকা পাইপারিন হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
- ওজন কমাতে সহায়ক: এটি বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে শরীরের চর্বি দ্রুত কমায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা: গোল মরিচ ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ব্রণ দূর করতে কার্যকর।
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা কমায়: ঠাণ্ডা, কাশি এবং সাইনাসের সমস্যায় এটি অত্যন্ত কার্যকর।
পুষ্টিগুণ:
- ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ।
- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং আয়রনের ভালো উৎস।
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
পুষ্টিমূল্যঃ গোল মরিচে আমিষ, চর্বি এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও লৌহ থাকে।
ভেষজগুণঃ
১. হজমে সহায়তা করে
২. স্নায়ু শক্তি বাড়ায়
৩. দাঁতের ব্যাথা কমানোতে সহায়তা করে
৪. মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়ার ব্যাথা উপশম করে
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ব্যবহারঃ মসলা হিসেবে গোল মরিচের ব্যবহার রয়েছে।
গোল মরিচ চাষের পদ্ধতি:
গোল মরিচের চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ, যা সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালনা করলে ভালো ফলন দেয়।
জমি ও আবহাওয়া:
- মাটির ধরন:
- দোআঁশ মাটি এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি উপযুক্ত।
- মাটির pH মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকা উচিত।
- আবহাওয়া:
- উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে গোল মরিচ ভালো জন্মায়।
- ১০০-২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতপূর্ণ অঞ্চলে এটি ভালো ফলন দেয়।
বীজ এবং রোপণ পদ্ধতি:
- বীজ সংগ্রহ:
- উন্নত জাতের গোল মরিচের বীজ সংগ্রহ করুন।
- রোপণ:
- গোল মরিচ গাছ লতানো প্রকৃতির, তাই পায়ার বা খুঁটির সাহায্যে লতা ওঠানোর ব্যবস্থা করুন।
- গাছের মধ্যে ২-৩ মিটার দূরত্ব রাখুন।
- সময়:
- বর্ষাকালের শুরুতে চারা রোপণ উত্তম।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা:
- সার:
- জৈব সার (কম্পোস্ট) এবং পটাশিয়াম, ফসফরাসযুক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন।
- সেচ:
- নিয়মিত সেচ প্রয়োজন, তবে পানি জমে থাকা এড়িয়ে চলুন।
উপযুক্ত মাটি ও জমিঃ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় ও আর্দ্রতা বেশি এমন এলাকায় গোল মরিচ ভাল জন্মে। এ ফসল 100C-400C পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। পিএইচ ৪.৫-৬.০ পর্যন্ত এ ফসল ফলানো যায়। পাহাড়ি এলাকার মাটি এ ফসল চাষের জন্য খুব উপযোগী।
জাত পরিচিতিঃ স্থানীয় জাত
সার ব্যবস্থাপনাঃ প্রতি গর্তে ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১১০ গ্রাম টিএসপি ও ৪৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হয়। তবে এ পরিমাণ সার তৃতীয় বছর হতে দিতে হবে। এ পরিমাণের ১/৩ ভাগ ১ম বছর এবং ২/৩ ভাগ দ্বিতীয় বছরে দিতে হবে। সার সাধারণতঃ বছরে দু’বারে দিতে হয়। একবার মে-জুন মাসে ও পরের বার আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দিতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর প্রতি গর্তে মে-জুন মাসে ১০ কেজি পঁচা গোবর ও প্রতি ১ বছর অন্তর-অন্তর প্রতি গর্তে ৬০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ আগাছা দেখা দিলে পরিষ্কার করতে হবে ও মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে। ডগা বাড়তে থাকলে ঠেস গাছের সাথে বেঁধে দিতে হবে।
রোগবালাই ও প্রতিকার:
গোল মরিচ গাছে পাতা পুড়ে যাওয়া, গোড়া পচা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। প্রতিরোধের জন্য:
- সময়মতো কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পচন রোধে সঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখুন।
পোকা
পোকার নাম : ফ্লি বিটল
ভূমিকা : এ পোকার আক্রমণে শতকরা ৩০ -৪০ ভাগ ক্ষতি হতে পারে। সে কারনে এ পোকা দেখা মাত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকা চেনার উপায় : পূর্নাঙ্গ বিটল কালো পাখা যুক্ত, মাথা ও ঘাড় হলদে বাদামী বর্ণের।
ক্ষতির নমুনা : পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া উভয় গাছের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে ।
– পূর্ণাঙ্গ বিটল ফল ছিদ্র করে ফলের মধ্যে ঢুকে ভেতরের অংশ খায়।
– আক্রান্ত ফল প্রথমে হলুদ ও পরে কালো হয়।
– কীড়া ফলের বীজ ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায় ।
অনুকুল পরিবেশ : ছায়াযুক্ত স্থান।
জীবন চক্র : স্ত্রী বিটল জুলাই মাসে কচি ফলে ১-২ টি ডিম পাড়ে। প্রতিটি পোকা ১০০ টি করে ডিম পাড়ে। ৫-৮ দিনে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। কীড়া ২০-৩২ দিন পরে পুত্তলিতে পরিণত হয়। ৬-৭ দিন পর পুত্তলি হতে পূর্ণাঙ্গ বিটল বের হয়। পূর্ণাঙ্গ বিটল ৩৯-৫০ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনা : নিয়মিত গাছ ছাঁটাই করে বৃদ্ধি কমাতে হবে।
– অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ।
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
নার্সারী
নার্সারীতে পাতা পচা ও ঢলে পড়া রোগ দেখা যায়। পাতা পচা রোগে পাতায় কাল দাগ পড়ে এবং ঢলে পড়া রোগ হলে কাটিং নেতিয়ে পড়ে।
দমন: ব্যাভিস্টিন বা কপার অক্সি ক্লোরাইড নামক ছত্রাক নাশক প্রতি দশ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার প্রয়োগ করলে এ রোগ দমন করা যায়।
মাঠে হটাৎ ঢলে পড়া রোগ
লক্ষণঃ
১. পাতার উপর কালো দাগ পড়ে এবং পরে দাগ বড় হয়।
২. কচি পাতা ও ডগা আক্রমণে কালো হয়ে যায়। অধিক আক্রমণে গাছ মরে যায়।
৩. গোড়া সহ সকল স্থানে আক্রমণ ছড়াতে পারে।
৪. বর্ষা মৌসুমের শেষে আক্রমণ হলে গাছ হলুদ হয়ে ঢলে পড়তে পারে।
দমনঃ
১. মাটিসহ গাছ তুলে ধ্বংস করা
২. রোগমুক্ত কাটিং ব্যবহার
৩. পরিচর্যার সময় শিকড়ে ক্ষত করা যাবেনা
৪. সাকার (ডগা) মাটিতে বাড়তে দেয়া যাবেনা
৫. ০.২% হারে কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ
ফসল তোলাঃ মে-জুন মাসে ফুল আসে এবং ৬-৮ মাস পর ফল তোলা যায়। থোকায় ২/১টি ফল উজ্জ্বল কমলা বা বেগুণী হলে সংগ্রহ করে ৭-১০ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।
- রোপণের ২-৩ বছরের মধ্যে গোল মরিচ ফল উৎপাদন শুরু করে।
- পাকা মরিচ সংগ্রহের পর রোদে শুকিয়ে প্যাকেজিং করুন।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
- বাজার চাহিদা:
- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গোল মরিচের চাহিদা অত্যধিক।
- রপ্তানি সম্ভাবনা:
- বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বড় পরিমাণে গোল মরিচ রপ্তানি করা হয়।
- লাভজনক ফসল:
- একবার চাষ করে দীর্ঘমেয়াদে ফলন পাওয়া যায়, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক।
গোল মরিচ শুধুমাত্র একটি সুগন্ধি মসলা নয়, এটি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফসল। সঠিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি আপনাকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে পারে। তাই, গোল মরিচ চাষে আগ্রহী হলে আজই শুরু করুন এবং এর মাধ্যমে আপনার কৃষি আয় বৃদ্ধি করুন।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন