লাইভস্টক
কোয়েল পাখি পালনে দ্বিগুন অর্থ লাভ করুন

কোয়েল পালন খুবই লাভজনক। প্রায় সব ধরণের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযুক্ত | পোল্ট্রির প্রায় ১১ রকম প্রজাতির মধ্যে কোয়েল এক ছোট গৃহপালিত পাখি, যা খুব সহজেই পালন (Quail rearing) করে যায় | স্বল্প মূল্যে, অল্প জায়গায়, অল্প খাদ্যে কোয়েল পালন কৃষকবন্ধুদের জন্য বেশ লাভজনক ব্যবসা | কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং আমিষ বেশি | সর্বোপরি, কোয়েলের মাংস বেশ সুস্বাদু, তাই বাজারে এর চাহিদা সারাবছর বেশ থাকে |
কোয়েল পালনের সুবিধা(Benefits of bater farming)
১) কোয়েল দ্রুত বাড়ে, ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে এবং বছরে ২৫০-২৬০ টি ডিম পাড়ে |
২) ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রোটিনের ভাগ বেশি |
৩) কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশি |
৪) ৮-১০টা কোয়েল একটি মুরগির জায়গায় পালন করা যায় এবং ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় |
৫) কোয়েলের রোগবালাই খুব কম এবং খাবার খুবই কম লাগে |
৬) অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশি লাভ করা যায়।

জাত
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৭-১৮ জাতের কোয়েল আছে। অন্যান্য পোলট্রির মতো কোয়েলের মাংস এবং ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথক পৃথক জাত আছে। কোয়েলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ‘জাপানিজ কোয়েল’ অন্যতম।
প্রজনন(Breeding)
শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখার প্রয়োজন। স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক। আশানুরূপ ডিমের উর্বরতা পেতে হলে ৩টি স্ত্রী কোয়েলের সাথে ১টি পুরুষ কোয়েল রাখার ৪ দিন পর থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করা উচিৎ। স্ত্রী কোয়েল থেকে পুরুষ কোয়েল আলাদা করার পর ৩ দিন পর্যন্ত ফুটানোর ডিম সংগ্রহ করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে। কোয়েলের ডিমের গড় ওজন ১০-১২ গ্রাম।
বাচ্চার যত্ন
সদ্য জন্মানো কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে, ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম। এ সময় যে কোনো রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রভাব স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং বেঁচে থাকার ওপর পড়ে। এঅবস্থায় খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান এবং কাম্য তাপমাত্রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। বাচ্চা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লুকোজ এবং এমবাভিট ডলিউ এস জলের সাথে মিশিয়ে পরপর ৩ দিন খেতে দিতে হবে এবং পরে খাদ্য দিতে হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করতে হবে।
খাঁচায় কোয়েল পালন
খাঁচায় ৬০টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১২০ সেমি. দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি. প্রস্থ এবং ৩০ সেমি. উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচার প্রয়োজন। খাঁচার মেঝের জালিটি হবে ১৬-১৮ গেজি | ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চার খাচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৩ মিলিমিটার এবং বয়স্ক কোয়েলের খাঁচায় মেঝের জালের ফাঁক হবে ৫ মিলিমিটার। খাঁচার দুই পার্শ্বে একদিকে খাবার পাত্র অন্যদিকে জলের পাত্র সংযুক্ত করে দিতে হবে। খাঁচায় ৬০টি কোয়েলের জন্য ৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ২৮ বর্গ সেন্টিমিটার বা ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।

খাদ্য(Food):
ডিম পাড়া কোয়েলের প্রতি কেজি খাবারে ২.৫-৩.০% ক্যালসিয়াম থাকতে হবে। ডিমের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য গরমের সময় ৩.৫% ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার সাপেক্ষে মাথাপিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫-২.৫ সেন্টিমিটার (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে। খাবার জল সবসময় পরিষ্কার দিতে হবে এবং যে পাত্রে দেওয়া হবে সেটিকে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে |
লিটার ব্যবস্থাপনা
তুষ, বালি, ছাই, কাঠের গুড়া প্রভৃতি দ্রব্যাদি কোয়েলের লিটার হিসাবে মেঝেতে ব্যবহার করা যায়। অবস্থাভেদে লিটার পরিবর্তন আবশ্যক যেন কোনো রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। প্রথমেই ৫-৬ ইঞ্চি পুরু তুষ বিছিয়ে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন লিটার ভিজে না যায়। স্বাভাবিকভাবে শীতকালে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করতে হবে, অন্য ঋতুতে লিটার পরিবর্তন এবং স্থাপন করলে লিটারের শতকরা ১-২ ভাগ কলি চুন মিশিয়ে দিতে হবে যেন লিটার শুষ্ক এবং জীবাণুমুক্ত হয়।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
কোয়েল পাখি পালন বাংলাদেশের পশুপালন খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি স্বল্প জায়গা, কম খরচ এবং দ্রুত উৎপাদনের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
কোয়েল পাখি পালনের গুরুত্ব
স্বল্প জায়গায় পালন: কোয়েল পাখি পালনে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। ছোট খামার বা বাড়ির আঙিনায়ও সহজে পালন করা যায়।
খরচ কম: অন্যান্য পোলট্রির তুলনায় কোয়েল পাখি পালনের খরচ অনেক কম। খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ ও সাশ্রয়ী।
দ্রুত উৎপাদন: কোয়েল পাখি মাত্র ৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে। এর বাচ্চাগুলোও দ্রুত বেড়ে ওঠে।
উচ্চ উৎপাদন হার: একটি কোয়েল পাখি বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ টি ডিম পাড়ে।
আয়ের সুযোগ: কোয়েলের মাংস এবং ডিমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, যা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকার ক্ষমতা: কোয়েল পাখি বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

মাংসের পুষ্টিগুণ
প্রোটিনে সমৃদ্ধ: কোয়েল পাখির মাংস উচ্চমানের প্রোটিনের একটি উৎস, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে।
লো ফ্যাট ও ক্যালরি: এর মাংসে ফ্যাট এবং ক্যালরির পরিমাণ কম, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য নিরাপদ।
ভিটামিন ও মিনারেল: কোয়েল পাখির মাংসে ভিটামিন বি৬, বি১২, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে: এর মাংসে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড় মজবুত করে: ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকায় এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি বৃদ্ধি: প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরে শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো: কোয়েলের মাংসের পুষ্টি উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোয়েল পাখি পালন শুধু একটি লাভজনক উদ্যোগ নয়, বরং এর ডিম এবং মাংস মানুষের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
লাইভস্টক
কোয়েল পাখির খাবার তালিকা এবং কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

বর্তমানে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। হাঁস-মুরগির পরিপূরক হিসেবে কোয়েল পাখি বেশ জনপ্রিয়। এই পাখিটির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং ডিমও খুব উপাদেয়। ফলে এটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বেশ ভালোভাবে মেটায়।
সাধারণভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েল দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে। মাত্র ৬ সপ্তাহে বা ৪২ দিনে কোয়েল পাখি ডিম এবং মাংস প্রদানের জন্য দৈহিকভাবে উপযোগী হয়।
স্বল্প জায়গা ও স্বল্প পুঁজিতে কোয়েল পালন করা যায়। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ১টি মুরগির জায়গায় ৮টি কোয়েল পালন করা সম্ভব। ফলে প্রান্তিক চাষীদের কিংবা যারা শখের বসে খামার করে, তাদের কাছে কোয়েল পালনও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে আমরা কোয়েল পাখির খাবার তালিকা এবং কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি জানব।
এখানে আপনি কোয়েল পাখি পালন ও জাপানি কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোয়েল পাখির বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বিভিন্ন বয়সের জাপানি কোয়েলের কোয়েল পাখির খাবার তালিকা তৈরি করতে পারবেন। কোয়েল পাখির খাবার ও পানির ব্যবস্থাপনা এবং কোয়েল পাখি পালনে আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

কোয়েল পাখি পালন
জাপানি কোয়েল পোল্ট্রি শিল্পের নতুন সদস্য। বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েলের অনেকগুলো জাত ও উপজাত রয়েছে, যেমন- ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন, টুক্সেডো ও ব্রাউন কোয়েল।
মুরগির পরে পোল্ট্রি শিল্পে আরও যেসব পোল্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তাদের মধ্যে কোয়েল পাখি পালন, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন অন্যতম। পোল্ট্রি শিল্পে তুলনামূলকভাবে জাপানি কোয়েল বর্তমানে বিকল্প পোল্ট্রি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
জাত ও উপজাতভেদে কয়েল পাখির বিভিন্ন জাত ও উপজাতগুলোর পালকের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার হার ইত্যাদিতে পার্থক্য থাকলেও ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই।

কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানো
জাপানি কোয়েল পালনের প্রথম ধাপই হলো ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো।
- বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য প্যারেন্ট স্টকের বয়স ১০-৩০ সপ্তাহের মধ্যে হওয়া ভালো।
- উর্বর ডিম ফোটানোর জন্য স্ত্রীঃপুরুষ অনুপাত ১ঃ২ হওয়া প্রয়োজন।
- কোয়েলের ডিম অত্যন্ত পাতলা খোসাবিশিষ্ট হওয়ায় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে।
- ডিমের ওজন ৯-১১ গ্রাম হলে ভালো।
- মুরগির ডিমের মতোই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে কোয়েলের ডিম ফোটানো যায়।
- জাপানি কোয়েলের ডিম গড়ে ১৭ দিনে ফোটে।

কোয়েল পাখির বাচ্চা লালন পালন
জাপানি কোয়েলের প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় ৭–৮ গ্রাম।
- ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়েলের বাচ্চাগুলোকে লিটারে রেখে মুরগির বাচ্চার মতো তাপ প্রদান করতে হবে যাকে ব্রুডিং বলে।
- ঘরটিকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
- ব্রুডারের ভিতরের অর্থ্যাৎ চিকগার্ডের মধ্যে প্রতি বাচ্চার জন্য ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২৫-১৪০ বর্গ সেমি জায়গা প্রয়োজন।
- চিকগার্ডের মধ্যে পযার্প্ত বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪-৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ট্রেতে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
কোয়েল পালনে ব্রুডারের নিচে আদর্শ তাপমাত্রা হলো
বয়স | তাপমাত্রা (সেলসিয়াস) |
০–৭ দিন | ৩৫ সে. |
৮–১৪ দিন | ৩২.২০ সে. |
১৫–২১ দিন | ২৯.৫০ সে. |
২২–২৮ দিন | ২৬.৫০ সে. |

কোয়েল পাখির বাসস্থান
জাপানি কোয়েল মেঝে থেকে খাঁচায় পালন অধিকতর ভালো।
- কোয়েলের বাসস্থানটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঐ ঘরে পর্যপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
- ৫০টি কোয়েল পালনের জন্য ১২০ সেমি দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি প্রস্থ ও ৫ সেমি উচ্চতার একটি খাঁচাই যথেষ্ট।
- খাঁচার মেঝেটি তারের জাল দিয়ে তৈরি হতে হবে।
- খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৪ মিমি ৪ মিমি।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েলকে ১২ মাস খাঁচায় এবং মেঝেতে পালনে যথাক্রমে ১৩৫.৩ গ্রাম এবং ১৪০.৩ গ্রাম দৈহিক ওজন হয় এবং মাসিক ডিম উৎপাদন বাড়ে যথাক্রমে ৬০% এবং ৫৮%।

কোয়েল পাখির খাবার ও পানির ব্যবস্থাপনা
জাপানি কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুষম কোয়েল পাখির খাবার প্রয়োজন।
- ০-৩ সপ্তাহ বয়সের পাখির জন্য খাদ্যে আমিষের প্রয়োজন শতকরা ২৭%, ৪-৫ সপ্তাহে ২৪% এবং ৬ সপ্তাহ থেকে বাকি সময়ের জন্য ২২% প্রয়োজন।
- সাধারণত একটি পূর্ণ বয়ষ্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
- প্রতিটি বাচ্চার জন্য ১ মাস পর্যন্ত ১ মিমি পানির জায়গা দিতে হবে। খোলা পানি দেয়া যাবে না। এতে বাচ্চা সহজেই পানিতে পড়ে যাবে এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে মারাও যেতে পারে।
- কোয়েল পাখির খাবার ও পানির পাত্র মুরগির খামারে ব্যবহৃত আকারে একটু ছোট হলে ভাল হয়। তবে কোয়েল খুব ঘন ঘন পানি পান করে। তাই কোয়েলের খাচায় কয়েকটি স্থানে পানির ব্যবস্থা খাকতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্রগুলো যেন খাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে। যাতে পানির পাত্র উপচে বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গা ভিজে না যায়।
প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান (%) | পরিমাণ (%) সূত্র–১ | পরিমাণ (%) সূত্র–২ |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ | ৫০.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৭.০০ | ০৬.০০ |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ২০.০০ | ১৮.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০২.০০ | ০২.৪০ |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বৃদ্ধির (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান (%) | পরিমাণ (%) সূত্র–১ | পরিমাণ (%) সূত্র–২ |
১. গম ভাঙ্গা | ৫৩.০০ | ৫৩.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ | ০৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ১৮.০০ | ১৫.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০৩.৫০ | ০৩.৪০ |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
লেয়ার রেশন (৬ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান | পরিমাণ (%) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ১২.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০৫.০০ |
৬. মাছের তেল | – |
৭. লবণ | ০০.৪০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.৩০ |
কোয়েল পাখির আদর্শ খাবার বা রেশন
খাদ্য উপাদান | ০–৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) | ৪র্থ সপ্তাহ–শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%) |
১. গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৪৮.০০ | ৫০.০০ |
২. চালের কুঁড়া | ৮.০০ | ৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২২.০০ | ২০.০০ |
৪. প্রোটিন কনসেনট্রেট | ৯.০০ | ৮.০০ |
৫. সয়াবিন মিল | ১০.০০ | ১০.০০ |
৬. ঝিনুকের গুঁড়া | ২.৫০ | ৩.৫০ |
৭. লবণ | ০.৫০ | ০.৫০ |
মোট | ১০০.০০ | ১০০.০০ |
কোয়েল পাখির খাবার গ্রহনের আদর্শ গাইড লাইন
বয়স | খাদ্যের পরিমাণ/কোয়েল/দিন |
১ সপ্তাহ | ৩-৪ গ্রাম |
২য় সপ্তাহ | ৭-৯ গ্রাম |
৩য় সপ্তাহ | ১১-১৪ গ্রাম |
৪র্থ সপ্তাহ | ১৫-১৮ গ্রাম |
৫ম সপ্তাহ | ১৮-২০ গ্রাম |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত | ২০-২৪ গ্রাম |
কোয়েল পাখি পালনে আলোর ব্যবস্থাপনা
বয়স | প্রয়োজনীয় আলোক ঘন্টা |
৪র্থ সপ্তাহ | ১২ ঘন্টা |
৫ম সপ্তাহ | ১৩ ঘন্টা |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ | ১৪ ঘন্টা |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত | ১৬ ঘন্টা |
কোয়েল পাখির দানাদার খাবার তৈরিকরণ
কোয়েল পাখির আদর্শ খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ০–৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) | ৪র্থ সপ্তাহ– শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%) |
১. গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৪৮.০০ | ৫০.০০ |
২. চালের কুঁড়া | ৮.০০ | ৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২২.০০ | ২০.০০ |
৪. প্রোটিন কনসেনট্রেট | ৯.০০ | ৮.০০ |
৫. সয়াবিন মিল | ১০.০০ | ১০.০০ |
৬. ঝিনুকের গুঁড়া | ২.৫০ | ৩.৫০ |
৭. লবণ | ০.৫০ | ০.৫০ |
মোট | ১০০.০০ | ১০০.০০ |

বিভিন্ন বয়সের কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ফরমুলা–১: প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) | ফরমুলা–২: প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ % | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৭.০০ % | ০৬.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ % | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ২০.০০ % | ১৮.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০২.০০ % | ০২.৪০ % |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ % | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ % | ০০.৩০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বিভিন্ন গ্রোয়ার বা বৃদ্ধি পর্যায়ের কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ফরমুলা–১: বৃদ্ধি (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) | ফরমুলা–২: বৃদ্ধি (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫৩.০০ % | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ % | ০৮.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ % | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ১৮.০০ % | ১৫.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০৩.৫০ % | ০৩.৪০ % |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ % | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ % | ০০.৩০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বিভিন্ন লেয়ার বা ডিম পাড়া কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | লেয়ার রেশন (৬ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ১২.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০৫.০০ % |
৬. মাছের তেল | – |
৭. লবণ | ০০.৪০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.৩০ % |
কোয়েল একটি সৌখিন পাখি বর্তমানে এর মাংস এবং ডিম খুব জনপ্রিয়। কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো, বাচ্চা লালন পালন, খাদ্য এবং পানি ব্যবস্থাপনা রেশন তৈরি করা এবং আলোক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
অন্যান্য
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
- ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।
গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ
- গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
- উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।

গম চাষ
- গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।

ডালশস্য
- মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।


তৈলবীজ চাষ
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবজি চাষ
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।



ফল চাষ
- আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মৎস্য চাষ
- পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
- মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
- গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।
মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
লাইভস্টক
জেনে নিন কবুতর পালনের সহজ উপায়

অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে কবুতর পালন ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কবুতর পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব।
লাভজনক এই পাখি পালনের জন্য বাড়তি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজনও হয় না। শুধু সামান্য নজরদারি আর সতর্ক হলেই কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করা যায়। কবুতর প্রতি মাসে দুটি করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চার বয়স ২১ দিন হলেই বিক্রির উপযোগী হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অন্যান্য পাখির মতো কবুতর খাদ্যের অপচয় বেশি করে না। বরং বলা যায় অপচয়রোধী পাখি কবুতর।
কবুতরের বিভিন্ন জাত রয়েছে। বলা হয় পৃথিবীতে ৬০০ জাতের কবুতর রয়েছে। ‘জালালি কবুতর’ উন্নত জাতের দেশি কবুতর। এ ছাড়াও মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা ও পক্কা উল্লেখযাগ্য কবুতরের জাত।
আমাদের দেশে শখের বশে সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর বেশি চাষ করা হয়। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় ডিগবাজি খেয়ে মানুষের নজরকাড়ে।

কবুতরের জন্য ঘর তৈরি পদ্ধতি আগে জেনে নিতে হবে। ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি যাতে কবুতরকে খেয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন উঁচু ও শক্ত ঘর তৈরি করতে হবে। হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায় সহজেই।
প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘর হলেই চলে। একই সঙ্গে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে। এক বর্গফুট মাপের ঘরের সামনে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির বারান্দা অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে কবুতর সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি।
ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে ঘর পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডিম পাড়ার সময় যাতে সহজেই খড় সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য কবুতরের ঘরের আশপাশে খড় রেখে দিতে হয়। ঘর রাখতে হবে সবসময় শুকনো। কবুতর সাধারণত জোয়ার, ভুট্টা, ধান, চাল, কলাই, কাউন, মটর, খেসারি, সরিষা, গম কবুতরের পছন্দনীয় খাবার। এসব খাদ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটি কবুতরের জন্য ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন।

এছাড়া বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় কবুতরের খাবার। তবে সেসব খাদ্যে ১৫% থেকে ১৬ % আমিষের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রতি ঘরের সামনে নিয়ম করে খাবার রেখে দিতে হবে সকাল ও বিকালে, সেই সঙ্গে দিতে হবে পর্যাপ্ত পানির জোগানও। ঘরে কবুতরের সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়।
কবুতরের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যে ভুট্টা ভাঙা ৩৫ গ্রাম, গম ভাঙা ২০ গ্রাম, সরিষা দানা ১৫ গ্রাম, ছোলা ভাঙা ২০ গ্রাম, সয়াবিন ভাঙা ৫ গ্রাম, চালের কুঁড়া ৪.৫ গ্রাম, লবণ ০.৫ গ্রাম।
কবুতরের কবুতরের খুব বেশি রোগের প্রকোপ দেখা যায় না। তবে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে বসন্ত, কলেরা, রক্ত আমাশয় যাকে বলা হয়ে থাকে ককসিডিওসিস, আরও আক্রমণ করতে পারে কৃমি।
কবুতরের বসন্ত রোগে পালকবিহীন স্থানে ফোস্কা পড়ে। গলার ভেতর ঘা হয়, খেতে পারে না। রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত কবুতরের গুটিতে টিংচার আয়োডিন বা স্যাভলন লাগানো যেতে পারে। কবুতরের বয়স যখন চার সপ্তাহ তখন পিজিয়ন পক্স টিকা বুকে ও পায়ের পালক তুলে সিরিঞ্জ দিয়ে দিলে বসন্ত রোগ হয় না।
কলেরা রোগ হলে অস্বাভাবিকভবে কবুতরের দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। শ্বাসকষ্ট হয়, পিপাসা বাড়ে, সবুজ বা হলুদ রঙের ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে, কবুতরের ওজন কমে যায়। শেষে কবুতর হঠাৎই মারা যায়। কলেরা রোগে আক্রন্ত কবুতরকে রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেরামাইসিন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে। রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রোগে রক্ত পায়খানা হয়। খাবার প্রতি অরুচি বাড়ে ও শরীরে দুর্বলতা দেখা যায়। শেষে পালক ঝুলে পড়ে।
রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গ বা রোগের আশঙ্কা করলে পানিতে মিশিয়ে ই.এস.বি-৩ আ এমবাজিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে প্যাকেটের নির্দেশনা মতো। কৃমি হলে কবুতর দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডায়রিয়া হয়। পানির পিপাসা বাড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা যায়। ঠিকমতো কবুতরের যত্ন নিলে এটি পালন করে আনন্দ লাভের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
অন্যান্য
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

ফেব্রুয়ারি মাস কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফসলের যত্ন, বপন এবং রোপণ কার্যক্রম চালানো হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- জমিতে পানি সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
- ধানের চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন স্টেম বোরার (Stem Borer) এবং পাতামোড়া পোকার (Leaf Roller) আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধানের জমিতে প্রয়োজনীয় সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।

গম চাষ
- জমি আগাছামুক্ত রাখুন এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দিন।
- পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) এবং ব্রাউন রাস্ট (Brown Rust) রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

ডালশস্য
- মসুর, মুগ, এবং ছোলার ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পরে জমি পরিষ্কার করে পরবর্তী চাষের জন্য প্রস্তুত করুন।




তৈলবীজ চাষ
সরিষা ফসল সংগ্রহ
- সরিষার শুঁটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করুন।
- জমি পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।

সবজি চাষ
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, এবং মূলা সংগ্রহ করুন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, এবং করলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার এবং সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।




ফল চাষ
- আম, কাঁঠাল, এবং লিচু গাছের মুকুল রক্ষায় কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণ করুন।


মৎস্য চাষ
- পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং মাছের খাবার সরবরাহ করুন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় শুষ্ক খড় এবং কাঁচা ঘাস যোগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আয় বাড়ে। প্রতিটি কাজ সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমকে আরও সফল করে তোলা সম্ভব।
লাইভস্টক
কোয়েলেই কোটিপতি শামীম

‘ছেলেবেলায় বই পড়ে কোয়েল পাখির কথা জেনেছি। তখন থেকেই কোয়েল পাখি পোষার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে বেছে নিতে হয় প্রবাস জীবন। এমন সময় বিদেশে বসেই টেলিভিশনে কোয়েল পাখি চাষ করে সফল হয়েছে এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখে আমার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।’ এভাবেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প বলছিলেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের সফল কোয়েল চাষি শামীম আল মামুন।
তিনি বলেন, ‘৩০ শতক জমির ওপর গড়ে তুলি কোয়েলের খামার। ৫শ’ কোয়েলের বাচ্চা দিয়ে শুরু হয় সেই স্বপ্নের যাত্রা। এখন আমার খামারে কোয়েলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। গড়ে তুলেছি কোয়েলের একটি হ্যাচারি।’
সম্প্রতি শামীমের কোয়েলের খামারে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন বগুড়ায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। তাই ছুটে যান সেখানে। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে আসেন। নিজেই যত্ন নিতে থাকেন। আস্তে আস্তে কোয়েল পাখির সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। সেখান থেকে প্রতিমাসে ভালো একটা আয়ও হতে থাকে। তাই কোয়েলের সংখ্যাও বাড়াতে থাকেন তিনি।

শামীম জানান, বর্তমানে কোয়েলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কোয়েল ডিম দিচ্ছে। এতে প্রতিমাসে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে।
শামীম আরো জানান, কোয়েলের খামারে কোনো দুর্গন্ধ নেই। তাই এটি পরিবেশবান্ধব। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য লোকজন আসে। তারা জানতে চান কোয়েল চাষের কলাকৌশল। অনেকেই কোয়েল পালনের আগ্রহ দেখানোয় তিনি বাচ্চা উৎপাদনের জন্য গড়ে তুলেছেন একটি হ্যাচারি। তার হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে অনেক বেকার যুবক সাবলম্বী হচ্ছেন।
তিনি জানান, কোয়েলের নিজস্ব কোনো খাবার না থাকলেও বাজারে যে মুরগির খাবার পাওয়া যায়; তা দিয়েই কোয়েল পালন করা যায়। বাজারে দুই জাতের কোয়েল পাওয়া যায়। একটি লেয়ার জাতের কোয়েল ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেয় এবং টানা ১৮ মাস ডিম দিয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি ব্রয়লার জাতের কোয়েল ২৮ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
কোয়েল পাখিতে দারিদ্র জয় করা শামীম গর্ব করে বলেন, ‘যারা আমার খামারে আসেন আমি তাদের কোয়েল চাষ করার পরামর্শ দিয়ে আনন্দ পাই। কোয়েল চাষ কম পুঁজিতে একটি লাভজনক ব্যবসা। যেকোনো ছোট পরিবার কোয়েল চাষ করে সচ্ছলভাবে চলতে পারে।

কোয়েল পালনের উদ্যোক্তা শামীম জানান, ২০১২ সাল থেকে কোয়েল পালন শুরু করে গত ৫ বছরে সে জেলার শ্রেষ্ঠ খামারি হিসেবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। এখন তার খামারে প্রতিদিন ৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকদের মাসিক বেতন দিচ্ছেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে।
ভবিষ্যতে খামারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি জানান, কোয়েলের ডিম, হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত বাচ্চা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লোকজন কিনে নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রয়লার জাতের কোয়েলের জন্য সিলেট, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর জেলার হোটেল ব্যবসায়ীরা অগ্রীম বুকিং দেন।
এছাড়াও ঢাকার অভিজাত শপিং মলগুলোতে মাংসের জাতের কোয়েল সরবরাহ করে থাকেন। এ জন্য তার রয়েছে নিজস্ব পরিবহন। চাহিদামতো ডিম, বাচ্চা ও মাংসের কোয়েল পাখি পৌঁছে দেন। আর বিকাশে টাকাও চলে আসে দ্রুত।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোয়েলের ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব উপযোগী। কোয়েল চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। মুরগির ভ্যাকসিন দিয়েই এর চিকিৎসা হয়।’
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন