ফুল
নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ গাজীপুরে, চমক দেখালেন দেলোয়ার
তুরস্কের জাতীয় ফুলের নাম টিউলিপ। নেদারল্যান্ডসেও টিউলিপ ফুলের ব্যাপক আবাদ হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছর পালন করে টিউলিপ উৎসব।
শীত আবহাওয়ার দেশ ছাড়া এশিয়া মহাদেশের ভারত, আফগানিস্তান ও আরও কয়েকটি দেশ ছাড়া এমন দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুলের দেখা মেলে না। তবে টিউলিপ ফুলের প্রতি সবার হৃদয়ে রয়েছে অগাধ ভালোবাসা।
ছয় ঋতুর বাংলাদেশে একসময় এই ফুল চাষের কথা কল্পনাও করা যেত না। মনের মাধুরী মেশানো এই ফুলের ছোঁয়া পেত না কেউ। তবে এখন দুয়ার খুলে দিয়েছেন গাজীপুরের এক ফুল চাষি। টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে দেশজুড়ে চাষের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন তিনি।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেনের বাগানে ফুটেছে টিউলিপ ফুল। স্বর্গীয় এক অনুভূতি বিরাজমান দেলোয়ারের ফুল বাগানে। ফুলের রাজ্য যেন এক স্বর্গ উদ্যান। দৃষ্টিনন্দন এই টিউলিপ বাগান দেখতে মানুষের বেড়েছে ভিড়। তার বাগানজুড়ে এখন টিউলিপময় ভালোবাসার গল্প।
ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন তার টিউলিপ ফুল বাগানের নাম দিয়েছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ারস’। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুল চাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান দেলোয়ার। দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন তিনি।
ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে পেয়ে যাই একটির পর একটি সফলতা। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে এবার পেলাম নতুন সফলতা। পরীক্ষামূলককাজ শেষে টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের কাজ করব। টিউলিপ বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। প্রজাতি অনুযায়ী এর উচ্চতাও ভিন্ন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও গত ৮ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডস থেকে এক প্রজাতির চার রঙের এক হাজার টিউলিপ বাল্ব এনে ১৫ ডিসেম্বর বাগানে রোপণ করি। ৪৫ দিন পরিচর্যা শেষে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু হয়। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ২০-২২ দিনেই ফুটে টিউলিপ ফুল।
তার মতে, টিউলিপ ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শীতের গভীরতা। সাধারণত টিউলিপ ফুল চাষে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকে বিধায় সেখানে টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান বলেন, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়ির টবে বা শখের বশে টিউলিপ ফুলের চাষ করেন। তবে ফুল পাওয়া খুবই অস্বাভাবিক। তবে দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনও এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনুকূলে থাকলে টিউলিপ ফুলের চাষ করা যায়। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে এই ফুল চাষ উপযোগী। দেশের কৃষকদের মনে নতুন করে টিউলিপ ফুল চাষের স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন ফুল চাষি দেলোয়ার।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানি করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। সফল ফুল চাষি দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে দারুণ ছোঁয়া লাগবে।
ফুল
গোলাপ গাছের পরিচর্যা

এখানে আমারা টবে গোলাপ গাছের পরিচর্যা, বাগানে গোলাপ গাছের সার প্রয়োগ, গোলাপ গাছের অঙ্গ ছাঁটাইকরণ, গোলাপ গাছের পোকা-মাকড় দমন, গোলাপ গাছের রোগ দমন, গোলাপ গাছের ফুল তোলার সময় বিভিন্ন পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারলাম পারব।
টবে গোলাপ গাছের পরিচর্যা

গোলাপ গাছের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানি। পানি বেশি বা কম হওয়া যাবে না। প্রতিদিন গাছের গোড়ায় পানি দিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে টবে যেন অতিরিক্তি পানি জমে না থাকে এবং গোড়ার মাটি যেন শুকিয়ে না যায়।
শীতকালে সাত-আট ঘণ্টা রোদ পাবে এমন জায়গায় গোলাপ গাছ লাগান। রোদ ভালো না পেলে গাছে ফুলের ফলন ভালো হবে না। গাছ যেন চারদিক থেকে সূর্যের আলো পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখুন, না হলে গাছটি শুধু আলোর দিক দিয়েই বাড়বে। তেমন হলে টবসহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে দেওয়া ভালো।
গোলাপ গাছে ভালো ফুল পাওয়ার জন্য শীতের শুরু থেকে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সারে ভালো ফলন পাবেন। প্রতি মাসে অন্তত দুবার করে জৈব সার প্রয়োগ করুন এবং মাসে একবার সরিষার খৈল পচা পানি দিন। এ ছাড়া হাড়ের গুঁড়াও দিন গাছের গোড়ায়।
বেশি ফুলের জন্য গোলাপ গাছের মাটি অ্যাসিডিক হতে হয়। তাই কিছুদিন পরপর শুকনো চা পাতা গুঁড়া বা ফিটকিরি ভেজানো পানি দিন গাছের গোড়ায়। এতে ফলন বেশি হওয়ার পাশাপাশি ফুলের আকৃতিও বড় হবে। অথবা, প্রতি লিটার পানিতে ১ চামচ গুড়ো চুন পরিস্কার পানিতে ভালোভাবে গুলে পাতলা ন্যাকড়ায় ছেঁকে প্রতি ৩ মাস পর পর দিতে হয়। চুন-পানি দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কোন সার না দিয়ে শুধু পানি দিতে হবে।
গাছের উপযুক্ত আকৃতি দিতে এবং সব ডালে ফুল আসার জন্য বছরে একবার অক্টোবর/নভেম্বর মাসে গোলাপের ডালপালা ছেঁটে দিন। এতে গাছের মৃত ও দুর্বল অংশে শক্তি ক্ষয় হয় না। ফলে নতুন ডালপালা জন্মে ও নতুনভাবে আরও ভালো ফুল উৎপন্ন সম্ভব হয়।

বাগানে গোলাপ গাছের সার প্রয়োগ পরিচর্যা
গাছের প্রয়োজন অনুসারে সময় সময় সার দিতে হয়। তবে অক্টোবওে গাছ ছাঁটাইয়ের সময়ে একবার শীতের শেষে মার্চ মাসে আরেক বার সার দিতে হয়।
ছাঁটাইয়ের সময় সার না দিয়ে ছাঁটাইয়ের ১০-১২ দিন পরে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ছাঁটাইয়ের আগে গাছ প্রতি ২/৩ কেজি শুকনো গোবর সার, ৫০ গ্রাম টি.এস.পি ও ৫০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। বেডের উপরের ১০ সেঃমিঃ পরিমাণ মাটি সরিয়ে নিচের মাটি কিছুটা আলগা করে সার গুলো মাটির সাথে সাবধানে মিশিয়ে দিতে হবে যেন শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়।
গোলাপের জন্য হাঁস-মুরগি বা কবুতরের বিষ্ঠা উত্তম সার।
রাসায়নিক সার গাছ খুব তাড়াতাড়ি গ্রহন করে। শুকনো মাটিতে তরল সার দিলে অতিরিক্ত কড়া হবার দরুন গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই তরল সার দিতে হবে মাটি ভেজা অবস্থায়। তাই সার পানি দিয়ে গুলে ব্যবহার করলে ভেজা মাটিতে দিতে হয়। তরল সার দেবার পর পানি সেচ দিতে হয়।
অনেক সময় দেখা যায় মাটিতে পর্যাপ্ত সার থাকা সত্ত্বেও ছাঁটাইয়ের পর গাছের পাতা সতেজ হচ্ছে না বা গাছ ঠিকমত বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে পাতার মাধ্যমে সার প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়।

গোলাপ গাছের অঙ্গ ছাঁটাইকরণ পরিচর্যা
গোলাপ গাছের পুরানো ডাল বেশি দিন ফুল দিতে চায় না। প্রতি বছরই গাছের গোড়া থেকে বা পুরানো ডাল থেকে নতুন ডাল বের হয়। গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করে এসব নতুন ডালকে সুষ্টুমত বাড়তে দিতে হয়।
ফুলের মৌসুমের আগেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসেই অঙ্গ ছাটাই করার ভাল সময়।
ফুলের আকার বড় করতে, নতুন শাখাকে ভাল করে বিস্তৃত করতে সাহায্য করার জন্য এবং ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দেবার জন্য অঙ্গ ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন।
ধারালো সিকেচার বা বিশেষ এক প্রকার ছুরি দিয়ে অঙ্গ ছাঁটাই করতে হয়।
ডাল কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন থেঁৎলে না যায়। এতে গাছে ছত্রাক রোগের আক্রমণ হতে পারে।
সাধারনত তিন রকমের ছাঁটাই করা হয়, হালকা ছাঁটাই, মাঝারি ছাঁটাই ও কঠোর ছাঁটাই।
লম্বা ডালের এক তৃতীয়াংশ কাটা বা মরা ও অসুস্থ ডাল কেটে ছেঁটে ফেলাকে হালকা ছাঁটাই, মাটির উপরে ৩০-৩৫ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে মাঝারি ছাঁটাই ও মাটির উপরে ডালের উচ্চতা ১৪-২০ সেঃমিঃ রেখে ছাঁটাই করাকে শক্ত ছাটাই বলা হয়। কোন ধরনের ছাঁটাই হবে তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতা, গাছ ও মাটির রকম ভেদের উপর।
বালি প্রধান মাটিতে ক্রমাগত কঠোর ছাঁটাই করলে গাছ মারা যেতে পারে। তবে মাটি যদি ভাল হয় এবং প্রদর্শনীর জন্য বড় ফুল ফোটাতে হয় তাহলে কঠোর ছাঁটাই প্রযোজ্য। অন্য ক্ষেত্রে মাঝারি ছাঁটাই করতে হয়।
মাঝারি ছাঁটাইয়ের ফুল খুব বড় হয় না বটে, তবে বেশী ফুল পাওয়া যায়। ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশে ‘প্রুনিং পেইন্ট’ লাগাতে হবে, নতুবা কাটা অংশ দিয়ে পোকার আক্রমন ও তৎপরে ছত্রাকের আক্রমন ঘটতে পারে।
দেশীয় গোলাপে কাটা স্থানে অবশ্য গোবর লাগানোই উত্তম। প্রুনিং পেইন্ট তৈরির ফরমূলাঃ পাইরিফস বা পাইরিবান ১ ভাগ, কপার কার্বনেট ৪ ভাগ, লাল লেড ৪ ভাগ এবং তিষির তেল ৫ ভাগ।

গোলাপ গাছের পোকা-মাকড় দমন পরিচর্যা
উইপোকা: কাটিং লাগাবার পর নতুন শিকড় বের হবার আগেই পুরান শিকড়গুলোকে নষ্ট করে দেয়।
দমন ব্যবস্থা: মাটিতে উই পোকা থাকার সম্ভাবনা থাকলে পাইরিফস বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করে নিলে উই পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
লাল ক্ষুদে মাকড়সা: এ পোকা পাতার নিচের পিঠে থেকে পাতার রস চুষে খায় বলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পাতর উপরের পিঠে পিন ফোটানো দাগ এবং আক্রান্ত পাতা ও ডালে সুক্ষ্ম জাল দেখা গেলে এদের আক্রমণ সনাক্ত করা যায়। আক্রমণ বেশী হলে সবুজ রং হালকা হয়ে যায় এবং পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। অনেক সময় গাছ মারাও যায়।
দমন ব্যবস্থা: সংখ্যায় কম থাকতেই লাল খুদে মাকড়সা দমন করতে হয়, নতুবা পরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। কেলথেন-৪২, থিওভিট-৮০, ইথিওন-৪৬.৫ ইসি প্রভৃতি কীটনাশকের যে কোন একটি পানির সংগে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশিয়ে পাতার উল্টো পিঠে স্প্রে করে এদের দমন করতে হয়। শুধুমাত্র ঠান্ডা পানি জোরে সেপ্র করেও এদের দমন করা যায়।
শ্যাফার বিটল: এ পোকা বড় ও লালচে রং এর। রাতের বেলা গাছের পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়, ফুলের পাপড়ি ও রেনু খায় এবং চারা গাছের বৃদ্ধিতে বিশেষ ক্ষতি করে। বর্ষাকালেই এ পোকার আক্রমন বেশী হয়। এ পোকা মাটিতে ডিম পাড়ে এবং ক্রীড়া গোলাপের শিকড় খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থা: পাইরিফস, পাইরিবান বা উপযুক্ত কীটনাশক দিয়ে কীটনাশক দিয়ে মাটি শোধন করলে কীড়া মারা যায়। রাতের বেলা হাতে বেছে পোকা ধরে মেরেও এ পোকা দমন করা যায়।
শুঁয়ো পোকা: এরা গাছের পাতা খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থা: পোকা অল্প ও বড় আকারের হলে ধরে মেরে ফেলা সহজ। কিন্তু আকারে ছোট ও সংখ্যায় বেশি হলে রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১.১ মিলি বা যেকোন স্পর্শ বিষ স্প্রে করতে হয়। একবারে দমন না হলে ২/৩ দিন পর আবার স্প্রে করার সময় আশে পাশের গাছ ও ঘাসে স্প্রে করতে হয়।
ডিগার বোলতা: ছাঁটাইয়ের পর অনেক সময় এরা ডালের কাটা অংশ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ভিতরে গিয়ে বাসা বাঁধে। এই ক্ষত দিয়ে গাছ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরে ডাইব্যাক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
দমন ব্যবস্থা: ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাঁটা অংশে প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে এ পোকা প্রতিরোধ করা যায়।
স্কেলপোকা: গাছের পুরানো ডালের ছালের উপর অনেক সময় বাদামী রং এর স্কেল পোকার আক্রমন হয়। এদের উপর শক্ত স্কেল বা আঁশ থাকে। এ পোকার ক্রীড়া নতুন স্থায়ীভাবে বসে রস চুষে খেয়ে গাছকে নিস্তেজ করে দেয়।
দমন ব্যবস্থা: চৈত্রের দিকে যখন ক্রীড়া দেখা দেয় তখন এবং ছাঁটাইয়ের পর কীটনাশক স্প্রে করলে এ পোকা দমন হয়। গাছের সংখ্যা কম হলে মেথিলেটেড স্পিরিটে ব্রাশ ডুবিয়ে আক্রান্ত ডাল ঘষে দিলে পোকা উঠে যায়। আক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে পুড়িয়ে দিলেও এ পোকার বিস্তার কমে।
থ্রিপস পোকা: মার্চ হতে এপ্রিল পর্যন্ত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় থ্রিপসের আক্রমণ হয়। এরা ঝাঁক ধরে এসে আক্রমণ করে এবং অল্প সময়েই ফুলের কুঁড়ি ও অপরিণত ডগার রস চুষে খেয়ে গাছের বিশেষ ক্ষতি করে। ফলে ফুর কুঁচকানো অবস্থায় ফোটে বা ফুটতেই পারে না। কচি ডগার পাতা কুঁকড়ে যায়। আক্রান্ত ডগা ও ফুল পরীক্ষা করলে পরিণত ও অপরিণত থ্রিপস দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা: আক্রান্ত ডগা এবং ফুল কেটে পুড়িয়ে ফেলে এবং মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি নামক কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার করে ২/৩ বার পরে দু সপ্তাহ পর একবার করে নিয়মিত স্প্রে করতে হয়।
জাব পোকা: জাব পোকা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পাতা, কচি ডগা ও ফুলের রস চুষে খেয়ে ক্ষতি করে।
দমন ব্যবস্থা: এ পোকা দমনের জন্য ২মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

গোলাপ গাছের রোগ দমন পরিচর্যা
গোলাপ গাছে ছত্রাকজনিত ও খাদ্যের অভাবজনিত রোগ দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগ ও প্রতিকার নিন্মরূপ-
ডাইব্যাক: রোগাক্রান্ত গাছের ডাল বা কান্ড মাথা থেকে কালো হয়ে মরতে শুরু করে। এ লক্ষণ ক্রমেই কান্ডের মধ্য দিয়ে শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে এবং সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা: ডাইব্যাক শুরু হলে রোগাক্রান্ত বেশ নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে দিয়ে কাটা মাথায় প্রুনিং পেইন্ট লাগিয়ে দিতে হয়, আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে দিতে হয় এবং যে সিকেটিয়ার বা ছুরি দিয়ে আক্রান্ত গাছ কাটা হয় তা স্পিরিট দিয়ে মুচে দিয়ে অন্য গাছ কাটতে হয়।
পাউডারী মিলডিউ: শীতের শেষের দিকে পাতায় সাদা সাদা পাওডারের মত দেখা যায়। এগুলো ছত্রাকের অনুজীব। রোগ বেশী হলে আক্রান্ত গাছের কচি পাতা ও ডগা এসব অনুজীব দ্বারা একেবারে ঢেকে যায়। কুঁড়ি ফোটে না, নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা: রোগাক্রান্ত ডগা ও পাতা তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে এবং হেকোনাজল ৫ ইসি বা ডাইথেন এম-৪৫ অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫ দিয়ে স্প্রে করতে হবে।

গোলাপ গাছের ফুল তোলার সময় পরিচর্যা
সদ্য ব্যবহারের জন্য আধফোটা গোলাপ ফুলের কুড়ি কাটা উচিত। কিন্তু কয়েক দিন পর ব্যবহারের লক্ষ্যে গোলাপ ফুলের কুঁড়ির পর্যায়ে আসার পর কাটা উচিত।
কাটা ফ্লাওয়ার হিসাবে ফুল লম্বা পুষ্প দন্ড কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হয়।
ফুল কাটার কাজটি খুব সকালে অথবা শেষ বিকেলে করা উচিত।
ফুল
গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও অপকারিতা

গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য
গোলাপ ফুলের বৈশিষ্ট্য হলো-
- বর্ণ, গন্ধ, কমনিয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। .
- সৌন্দর্য্য ও লাবন্যের প্রতীক গোলাপ। গোলাপ ফুলগুলোতে মৃদু সুগন্ধ থাকে।
- গোলাপ গাছে একটিমাত্র ফুল আসা দুর্লভ। সাধারণত, চার থেকে পাঁচটি ফুল একসাথে ফোটে।
- গোলাপ ফুল সাধারণত সাদা, লাল ও হলুদ রঙের গোলাপ বেশি দেখা গেলেও গোলাপি, নীল, কমলা, কালো, এমনকি রংধনু রঙের গোলাপও আছে।
- গোলাপের ডালপালা গুলি প্রায়শই তীক্ষ্ণ কাটা দিয়ে সজ্জিত থাকে। এই কাটা গুলি জন্তু এবং কীটপতঙ্গ হাত থেকে ফুল ও ফুলের গাছকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- গোলাপ ফুলের পাতাগুলো দৈর্ঘ্যে ৫ থেকে ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। গোলাপ ফুলের পাতাগুলো প্রায় অনাবৃত এবং এদের উপরিভাগ চকচকে গাঢ় সবুজ রঙের।
- গোলাপ একটি সম্পূর্ণ ফুল অর্থাৎ এতে বৃতি, দল, পুংকেশর, গর্ভকেশর প্রভৃতি ফুলের সবকটি অংশই নির্দিষ্ট সংখ্যায় আছে। বৃতির সংখ্যা ৫ এবং দলের সংখ্যা ৫ বা পাঁচের গুণিতক।
- পৃথিবী জুড়ে গোলাপের অসংখ্য জাত রয়েছে। জাতগুলোর কোনোটির গাছ বড়, কোনোটি ঝোপালো, কোনোটি লতানো। ফুলের রং, আকার এবং আকৃতি প্রজাতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
- গোলাপ গুলি সাধারণত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, তবে কিছু প্রজাতি গাছ হিসেবে বৃদ্ধি পায়। গোলাপ ফুলের গাছ ১–২ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি অত্যন্ত কাঁটাযুক্ত ঘন ঝোপের গাছ।
- এটি একটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল হলেও, গোলাপ ফুল সারা বছরই ফোটে। এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারাবছর কমবেশি গোলাপের চাষ হয়।



গোলাপ ফুলের উপকারিতা
গোলাপের বিভিন্ন অংশ যেমন ফল, ফুল, পাতা এবং বাকল প্রসাধনী, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস সহ বিভিন্ন পণ্যের বিকাশে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গোলাপ ফুল দিয়ে অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। গোলাপের চিকিৎসা সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রদাহ, ডায়াবেটিস, ডিসমেনোরিয়া, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ, খিঁচুনি এবং বার্ধক্যের চিকিৎসা।
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি খাদ্য হিসেবে গোলাপ ফুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্বকের যত্নে গোলাপ ফুলের ফেসপ্যাক খুবই কার্যকরী। এটি ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
ইদানিং গোলাপ ফুলের চা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোলাপ ফুলের উপকারিতা হলো-
স্ট্রেস কমাতে: গোলাপের সৌরভে মন ভালো করে থাকে। যা আয়ুর্বেদ মতে এ সুগন্ধ ভালো কাজ করে অ্যারোমা থেরাপি হিসেবে। গোলাপ ফুল খাওয়ার ফলে আপনার ভিতর থেকে সতেজ করে তুলবে। অতএব আপনি যদি স্ট্রেস মানসিক চাপ অনুভব করে থাকেন, তবে গোলাপের গন্ধ আপনাকে, হালকা করে তুলবে।আপনি অন্যকে গোলাপ ফুল উপহার দেয়ার পাশাপাশি , আপনার ঘরেও রাখতে পারেন এতে সুফল পাবেন।
কোমল ত্বক পেতে: ত্বক কোমল করতে গোলাপের পাপড়ি বেশ কার্যকরী। দুই কাপ পানিতে একটি তাজা গোলাপ ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে উঠে সেই গোলাপ ভিজিয়ে রাখা পানিতে মুখ ধুয়ে নিবেন। এটি ছাড়াও আরেক উপায়ে ত্বক কোমল করতে পারবেন। গোলাপের শুকনা পাপড়ি, ও দুধ মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রনের জায়গায় লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে ধুয়ে নেবেন। এতে ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকও হবে কোমল।
গলা ব্যথা: তুষার তৈরি করে গোলাপ ফুল দিয়ে গার্গাল করলে মুখের ফোলাভাব, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং গলা ব্যথার চিকিৎসা সাহায্য করে। এছাড়া গোলাপ পাতা চিবিয়ে খেলে মুখ ও ঠোঁটের ফোলা ভাব কমে যায়।
মাথায় ফোড়া নিরাময়ে: গোলাপ পাতা পিষে লাগালে মাথার ক্ষত, চক্ষু রোগ বা ছানি, দাঁতের রোগ এবং অশ্ব বা পাইলস রোগে উপকার পাওয়া যায়।
চোখের পাতার প্রদাহ থেকে মুক্তি পেতে: গোলাপ ফুল পিষে লাগালে চোখের পাতার ফোলাভাব কমে যায়। এটি দাঁতে মালিশ করলে দাঁতের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া ২-২ ফোঁটা গোলাপের নির্যাস চোখে লাগালে চোখের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
যক্ষা নিরাময়ে: ফুসফুসের রোগ টিবি নিরাময়ে এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধে গোলাপ ফুল ব্যবহৃত হয়।
পেটের রোগে: গোলাপ ফুলের গুঁড়া ২-৪ গ্রাম মধুর সাথে খেলে কষ্টকাঠিন্য, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ায় উপকার পাওয়া যায়।
লিভারের রোগে: রক্তের ব্যাধি এবং লিভার সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় লাল গোলাপ ফুল ব্যবহার করা হয়।
কুষ্ঠ রোগের: সাদা রঙের গোলাপ ফুল কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সাদা গোলাপ ফুলের গুড়া লাগালে কুষ্ঠ ও অন্যান্য পিত্তজ ব্যাধি নাশ হয়।
জ্বরে: জ্বর নামতে না থাকলে গোলাপের তৈর গুলকন্দ খেলে পিত্তজ্বরে উপকার পাওয়া যায়।
গোলাপ ফুলের চা: গোলাপ ফুলের পাপড়ি গরম পানিতে সেদ্ধ করে চা তৈরি করা যায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ চায়ের গুড়ার সাথে শুকনো পাপড়ি যোগে চা বানানো যায়।
গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নাই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

গোলাপ ফুলের অপকারিতা
গোলাপের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। গোলাপের অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার অপকারিতাও আছে। অনেকের গোলাপের সংস্পর্শে আসলে অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই তাদেরকে গোলাপের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।
গোলাপ ফুলের অপকারিতা হলো-
অ্যালার্জি: গোলাপ ফুলের পরাগ ও সুগন্ধে কিছু লোকের অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চোখ ও নাক চুলকানি। হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও ত্বকে ফুসকুড়ি।
ত্বকের সমস্যা: গোলাপ ফুলের তেল ও নির্যাস ত্বকের জন্য কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলি ত্বকে অ্যালার্জি চুলকানি ফুসকুড়ি ও জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
চোখের সমস্যা: গোলাপ ফুলের পাপড়ি বা তেল চোখে গেলে চোখ জ্বালা করতে পারে। এছাড়াও গোলাপ ফুলের সুগন্ধ চোখের জালা ও পানি পড়ার কারণ হতে পারে।
খাদ্যে অ্যালার্জি: গোলাপ ফুলের নির্যাস বা তেল যুক্ত খাবার খেলে কিছু লোকের অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট।
ফুল
গোলাপের জাতের নাম, ফোটার সময় ও চাষ পদ্ধতি

বর্তমানে বাংলাদেশে ফুল ও সুদৃশ্য গাছ বাণিজ্যিক উৎপাদন বিশেষ ভাবে গোলাপ চোখে পড়ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সুগন্ধি প্রস্তুতি ফুলের নির্যাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়ে থাকে। এর কোমলতা, বর্ণ, সুগন্ধ এমন কেউ নেই যাকে আকৃষ্ট করে না। সাজ সজ্জায় কাটা ফুল হিসেবে কদর রয়েছে। এছাড়া সুগন্ধি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

গোলাপের জাতের নাম
যতদূর জানা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্দর গোলাপ এসেছে প্রায় পাঁচশ বছর আগে বসরা থেকে। মোগল সম্রাট বাবর প্রথম ‘বসরা’ নামের এক গোলাপ নিয়ে এসেছিলেন। সুগন্ধি গোলাপি রঙের এ গোলাপ এখনও বাংলাদেশে ‘বসরা’ নামে পরিচিত। কোনো কোনো পুরানো বাগানে এখনও এটির চাষ হয়। দুর্বল প্রকৃতির লম্বাটে গাছগুলিতে ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ফুল ফোটে।
পৃথিবী জুড়ে গোলাপের অসংখ্য জাত রয়েছে। জাতগুলোর কোনোটির গাছ বড়, কোনোটি ঝোপালো, কোনোটি লতানো। জাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপ সাদা, লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।
গোলাপের কয়েকটি জাতের নাম হলোঃ
- রানী এলিজাবেথ = গোলাপী
- ব্ল্যাক প্রিন্স = কালো
- ইরানি = গোলাপী
- মিরিন্ডা = লাল
বাংলাদেশে চাষ হয় এমন কতকগুলো গোলাপ ফুলের জাত হলো- মিরান্ডা, পাপা মেলান্ড, ডাবল ডিলাইট, তাজমহল, প্যারাডাইস, ব্লু-মুন, মন্টেজুমা, টাটা সেন্টার, সিটি অব বেলফাষ্ট ইত্যাদি।
যাহোক গোলাপ ফুলকে অনেক শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তবে উল্লেখযোগ্য শ্রেণিগুলো হলো-
১। হাইব্রিড (Hybrideas): ফুলগুলো বেশ বড়, সুগঠিত ও অনেক পাপড়ি বিশিষ্ট। কাটা ফুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ক্রিমশন গোরি, পাপা মিল্যান্ড, টিপটিপ ইত্যাদি এ শ্রেণির জাত।
২। পলিয়েন্থা (Polyanha): ফুলগুলো আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড় বড় থোকায় ধরে। যেমন: জর্জ এলগার, ক্যামিও, আইডিয়াল ইত্যাদি।
৩। ফ্লোরিবান্দা (Floribunda): ফুলগুলো আকারে ছোট এবং থোকায় ধরে। কাটা ফুলের জন্য চাষ করা হয়। যেমন: হানিমুন, সানসিল্ক ইত্যাদি।
৪। মিনিয়েচার (Miniaure): গাছ ছোট, পাতা ছোট এবং ফুল ছোট হয়। যেমন: রাজিনা, গোল্ডেন, ইয়ালো ডল ইত্যাদি।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে যে সব জাতের গোলাপ উদ্ভব হয়েছে তার মধ্যে ‘ফাতেমা ছাত্তার’, ‘শিবলী’, ‘রাহেলা হামিদ’, ‘পিয়ারী’, ‘ভাসানী’, ‘শের-এ-বাংলা’, ‘১৯৫২’, ‘জয়ন্তি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে উপযুক্ত বাগান এবং উদ্যোগের অভাবে এগুলি কতদিন টিকে থাকবে তা বলা যায় না।

গোলাপ ফুল কখন ফোটে?
গোলাপ ফুল কখন ফোটে: গোলাপ সার বছরই ফোটে। গোলাপ মূলত শীতকালীন ফুল। তবে বর্তমানে এর চাহিদা ও সৌন্দর্য্যের কারণে সারা বছরই গোলাপ চাষ করা হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি সারাবছর গোলাপের চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জেলাতে গোলাপের চাষ করা হচ্ছে। গোলাপের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় গোলাপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সিজনে গোলাপ ফুলের সাইজ বড় হয়। অফ সিজনে গোলাপ ফুলের সাইজটা ছোট হয়। বর্ষাকালে শেষে গোলাপ ফুলের মাটি চেঞ্জ করতে হয়।

গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি
মাটি, জলবায়ু ও জমি নির্বাচন
- বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
- গোলাপ চাষের জন্য ৬.০-৬.৫ pH মানযুক্ত সুনিষ্কাশিত এবং উর্বর দোঁ-আশ মাটি উত্তম।
- গোলাপের জন্য রৌদ্যজ্জল, সুনিষ্কশিত ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উত্তম।
- পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে এ ধরনের স্থান পরিত্যাগ করা উচিত।
- গোলাপ শীত ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের ফুল। অধিক উষ্ণ ও আর্দ্রতায় গোলাপ ভাল হয়না। ২২-৩০ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা, ৮৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং ১০০-১২৫ সেমি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী।
- ফুলের গুনগতমান সূর্যালোকের উপস্থিতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
- প্রচুর রোদ ও খোলা বাতাসপূর্ণ উঁচু সমতল স্থানে গোলাপ চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। জমিকে গভীরভাবে কুপিয়ে বা লাংগল দিয়ে এর মাটি ওলট-পালট করে দিতে হয়।
- জমি থেকে আগাছা, ইটের টুকরা ইত্যাদি বেছে ফেলে বার বার চাষ দিয়ে মাটিকে বেশ ঝুরঝুরা, নরম ও সমতল করে নিতে হয়।
- উন্নতমানের বড় বাগান করতে হলে বর্ষার ঠিক আগে মে-জুন মাসে বেড তৈরি করতে হয় যাতে বেডের খৈল ও অন্যান্য উপাদান ভালভাবে পচে অক্টোবর গাছ লাগানোর উপযোগী হয়। বেডের আশে পাশে যাতে পানি না জমে সে জন্য জল নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
- ছোট বাগানের জন্য গাছ রোপণের অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে বেড তৈরি করলেই চলে। আবহাওয়া শুকনো থাকলে বেড তৈরীর পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলে খৈল ও জৈব সার পচে যাবে এবং বেড গাছ লাগানোর উপযোগী হবে।
- সাধারণত রোপণের পূর্বে ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে জমি ভালভাবে চাষ করতে হবে এবং এরপর মই দিয়ে সমান করে ৬ মিটার x ১.২ বা ১.৫ মিটার আকারের বেড তৈরি করতে হবে।
- বেড তৈরির পর চারা রোপণের জন্য বিভিন্ন জাতের জন্য বিভিন্ন দূরত্বে গর্ত করতে হয়, যেমন- ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থা ০.৫ মিটার, ফ্লোরিবান্ডা ও চায়না ০.৬৫ মিটার, হাইব্রিড টি ১ মিটার, হাইব্রিড পারপেচুয়েল, মন ও দামাস্ক ও টি ১.৫০ মিটার, নয়সেট-২.০ মিটার ও লতা গোলাপ ২.৫০ মিটার। বিভিন্ন জাতের গাছ সারিতে লাগাতে হয়, এতে সার প্রয়োগ, পানি সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যার কাজের সুবিধা হয়।
- বেডটি ৫০-৬০ সে.মি. গভীর করে খুড়ে উপরের ২০ সে.মি.গভীরতার মাটি ও মধ্য স্তরের ২০ সে.মি.গভীরতার মাটি গর্তের দুপাশে রাখতে হবে।
- শেষের ২০ সে.মি. গভীরতার মাটি না তুলে ভালো করে কুপিয়ে প্রতি বর্গমিটারে ২০ কেজি গোবর সার, ৫০ গ্রাম টি.এস.পি এবং ৫০ গ্রাম মিউরিয়েট অব পটাশ সার মেশাতে হয়।
- এর উপরে স্তরের মাটির সাথে প্রতি বর্গমিটার ২০ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম টি.এস.পি, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০০ গ্রাম এম.পি. সার মিশিয়ে গর্তে দিতে হবে।
- মধ্য স্তরের মাটির সাথে বর্গমিটারে ২০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০ গ্রাম এম.পি সার মিশিয়ে উপরের স্তর ভরাট করতে হবে।
- বেডগুলো সমতল থেকে যেন ২০ সে.মি. উপরে হওয়া উচিত। মাদায় করলে ৬০ সে.মি. x ৬০ সে.মি. গর্ত তৈরি করে তাতে ১০ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম হাঁড়ের গুড়া, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০ গ্রাম এম.পি সার মিশিয়ে উপরের ২০ সি.মি. স্তর ভরাট করে দিতে হবে।
- যদি বেড তৈরি দু’একদিনের মধ্যে গাছ লাগানো প্রয়োজন হয়, তাহলে কম্পোস্ট বা পচা গোবর সার বেশি করে দিয়ে গাছ লাগানো উচিত। গাছ লেগে যাবার পর খৈল ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। গোবর সার বেশি ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার না দিলেও চলবে। এ ক্ষেত্রে খৈল ৪/৫ দিন ভিজিয়ে জলের সাথে মিশিয়ে গোড়ার চারপাশে দিয়ে ৩/৪ দিন হালকা করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

গোলাপের বংশ বিস্তার
বীজ, শাখা কলম, দাবা কলম এবং চোখ কলম এর মাধ্যমে গোলাপের বংশ বিস্তার করা হয়। তবে সংকর জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ মাধ্যমে বেছে নেয়া হয়।
সাধারণতঃ উন্নত জাতের গোলাপ এর নতুন গাছ উৎপন্নের প্রধান পদ্ধতি মাধ্যম হিসেবে বাডিং বা চোখ কলম বংশ বিস্তার করানো হয়। বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় এ চোখ কলম করা হয়।
যে জাতটির বংশবৃদ্ধি করা হয় তার চোখ অপর একটি সুবিধামত আদিজোড় বা (rootstock) এর উপর স্থাপন করা হয়। আদিজোড় গাছের সজীবতা, উৎপাদনশীলতা, ফুলের গুনাবলী, ঝোপের স্থায়ীত্ব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাটি ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আদিজোড়ের কাটিং সমূহ (পেন্সিল আকৃতি) গ্রীষ্মের শেষে তৈরী করা হয়ে থাকে এবং নার্সারীতে সারি করে ২৫ -৩০ সেঃ মিঃ দুরত্বে রোপন করা হয়। প্রায় ৬ মাস পর এইসব কাটিংসমূহ বাডিং এর জন্য উপযুক্ত আকৃতির কান্ড তৈরী করে থাকে। গোলাপে প্রধানতঃ T-কাডিং করা হয়।
জংলি গোলাপের কান্ডে বিভিন্ন উচ্চতায় ‘চোখ কলম’ জুড়ে দিয়ে সুন্দর সুন্দর গোলাপের ঝাড় বানানো যায় যেগুলিকে ‘স্ট্যান্ডার্ড রোজ’ বলে। বাগান সাজাতে পিছনে উঁচু, তারপর ক্রমান্বয়ে নিচু মাপের গাছ লাগালে দেখতে মানানসই হয়।
অনুকূল পরিবেশে পিঁপড়া, প্রজাপতি, মৌমাছি ইত্যাদির সাহায্যে পরাগায়িত হলে পরিণতিতে গোলাপ গাছে ফল ও বীজ উৎপন্ন হয়। এসব বীজ থেকে উৎপন্ন চারাগুলিতে প্রকারভেদ দেখা দেয়। এভাবেই গোলাপের নতুন জাত সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও এক রঙের গোলাপ ফুলের গাছে হঠাৎ মিউটেশনের ফলে অন্য একটি ডালে ভিন্ন প্রকার ফুল ফোটে। আবার মিউটেশনের ফলে ঝাড় গোলাপের গাছ থেকে লতা গোলাপের গাছও জন্মায়। কোনোও কোনোও গোলাপ গাছের একটু পরিণত বয়সের ডালের কিছুটা অংশ কেটে মাটিতে লাগিয়ে দিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিকড় গজিয়ে নতুন পাতা ছাড়ে। এ পদ্ধতিতে চারা তৈরী করাকে কাটিং বা কলম বলে।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গোলাপের চারা উৎপাদনের জন্য জংলি বা বুনো গোলাপের গাছে ‘চোখ কলম’ বসিয়ে বহু চারা বানানো যায়। এক্ষেত্রে গাছের নিচের অংশে থাকে বুনো গোলাপ, উপরের অংশটি নির্বাচিত গাছের ‘চোখ’ থেকে উৎপন্ন মূল গোলাপ। এভাবে বাংলাদেশেও এখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নামিদামি গোলাপ পাওয়া যায়। যেমন- Papa Meilland, Double Delight, Dutch Gold, Queen Elizabeth, Monte Zuma ইত্যাদি। ইদানিং টিস্যু-কালচার বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতিতেও গোলাপের চারা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে, তবে তা এখনও ততটা প্রসার লাভ করে নি।
বিদেশি গোলাপের মধ্যে তাজমহল (Tajmahal), পাপা মিলল্যান্ড (Papa Meilland) প্রভৃতি গোলাপের ডাল থেকে কাটিং করা যায়, তবে ডালের নিচে কাটা মাথায় উপযুক্ত হরমোন দিলে শিকড় গজাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

চারা রোপণ পদ্ধতি
- অক্টোবর থেকে র্ফেরুয়ারী মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উত্তম সময়, চারা লাগানোর পূর্বে শুকনো ডাল কেটে ফেলে বেডে বা টবে লাগাতে হবে।
- চারা এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কলমের জোড়ার স্থানটি ঠিক মাটির উপর যায়।
- গোলাপের চারা লাগানোর হাইব্রিডটি এর জন্য ৭৫-১০০ সে.মি. বা খর্বাকৃতি জাত এর জন্য ৪৫-৫০ সে.মি. দূরত্ব বাঞ্ছনীয়।
- সাধারণত গোলাপের চারা পলিথিনের ব্যাগে থাকে বলে চারা রোপণের সময় ব্যাগটি ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়। তারপর গর্তের মধ্যে গাছটি এমনভাবে ঢুকাতে হবে যাতে চারাটির গোড়া আগে যতটুকু মাটির নীচে ছিল, গর্তে লাগানোর পরও যেন ঠিক ততটুকুই মাটির নীচে থাকে।
- চারা গাছ গর্তের মধ্যে বসানোর পর কিছু পচা গোবর ও ভিটির বালি বা দো-আঁশ মাটি ভাল করে মিশিয়ে শিকড়ের চারিপাশে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভাল করে চেপে দিয়ে পানি দিতে হয়।
- চারা লাগানোর পর প্রথম রোদ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
- গাছ লেগে গেলে মাটি বুঝে পানি দিতে হয়। বেলে মাটির বেলায় ঘন ঘন আর এঁটেল মাটি বা ভারি মাটির বেলায় ২/৩ দিন পর পর পানি দেয়া দরকার। তবে কোনক্রমেই যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- গোলাপের শিকড়ে যদি শক্ত মাটি থাকে, তাহলে গাছ লাগানোর আগে পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাটি নরম করে নিতে হয় যাতে শিকড় ঠিকমত বাড়তে পারে।
- যেসব চারার গোড়ায় মাটি থাকে না, সেসব চারা মাটিতে লাগানোর আগে ২/৩ ঘন্টা পানি ভিজিয়ে তারপর লাগাতে হয়।
- পুরানো গাছ জায়গা বদল করে লাগাতে হলে প্রথমত কচি ডগা, মরা ডাল ইত্যাদি ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে ভাল করে ছেঁটে নিতে হয়। তারপর শিকড়ের চারপাশে বেশ জায়গা নিয়ে খুঁড়ে গাছটিকে এমন ভাবে উঠাতে হবে যাতে খুব কম সংখ্যক শিকড় কাটে। গাছটিকে একই পদ্ধতিতে গর্তে লাগিয়ে প্রচুর পানি দিতে হবে এবং অন্তত ২/৩ দিন ছায়া দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে গরমের দিনে পুরানো গাছের জায়গা বদল না করাই ভাল।

আগাছা দমন ও শাখা ছাঁটাই (প্রুনিং)
সব সময় গোলাপ এর বেড আগাছা মুক্ত রাখা হবে। উত্তম ফুল পাওয়ার জন্য সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাস এর মধ্যে প্রুনিং করতে হবে। শুকনো বা রোগাক্রান্ত ডালপালা কেটে দেয়া হয়। নতুন শাখা বের হলে ফুল ফোটা শুরু হয়।
পানি সেচ
প্রুনিং এর পর গাছের গোড়ার চারদিক হতে ২০ সে.মি. মাটি সরিয়ে এক পার্শ্বে রেখে দিয়ে রৌদ্র ও বাতাসে উম্মুক্ত রাখতে হবে। এর ৮-১০ দিন পরে গাছ প্রতি ৫ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫ গ্রাম এমপি সার মিশিয়ে দিয়ে গাছের গোড়ায় ভালোভাবে সেচ দিতে হবে।
রোগ দমন
- গোলাপের শিকড় পঁচা রোগ দেখা যায়। এ রোগ হলে চারা গাছের গোড়ায় কালো দাগ পড়ে, পরিশেষে চারা মারা যায়। বীজতলার মাটি ক্যাপটান দ্বারা শোধন করলে এ রোগ অনেকটা দমন হয়।
- পাউডারি মিলডিউ রোগ গোলাপ গাছে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত গাছের পাতার নিচে এবং শাখায় ছাই রং এর পাউডারের প্রলেপ দেখা যায়। সাফলার জাতীয় ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করা হয়।
পোকামাকড় দমন
- গোলাপের মিলিবাগের আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকা আক্রমণ করলে মোমের ন্যায় গুড়া লেগে থাকে। পাতার তলদেশে চুনের মত পদার্থ দেখা যায়। এরা পাতার রস শোষণ করে। ম্যালথিয়ন স্প্রে করলে মিলিবাগ ধ্বংস হয়।
- জাব পোকা গোলাপের পাতা, ফুল এর রস শোষণ করে খায়। এ পোকা দমনের জন্য ম্যালথিয়ন স্প্রে করতে হবে।

ফুলসংগ্রহ
- ফুল আধা ফোটা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হবে। তবে দুর-দুরান্তে বা কয়েকদিন পর ব্যবহারের জন্য হলে গোলাপের ফুলের কুঁড়ি যখন সম্পূর্ণ রং ধারণ করে কিন্তু ফোটেনি এমন সময় ফুল সংগ্রহ করা উচিত।
- কাট ফ্লাওয়ার বা কাটা ফুল হিসেবে ফুল লম্বা শাখা পাতাসহ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হয়।
- ফুল চয়নের কাজটি হয় খুব সকালে বা শেষ বিকেলে করা উচিত।
- ফুল সংগ্রহের পর শাখা পানিতে ডুবিয়ে নিম্নতাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
- ফুলদানীর পানিতে ৩% চিনি ও ৬০০ পিপি এম 8-hydroxyquinoline (HQC) এর দ্ররণে ফুল রেখে গোলাপকে তাজা রাখা বা আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ফলন
- গোলাপের ফলন প্রধানতঃ আবহাওয়া ও জাতের উপর নির্ভরশীল। আদর্শ উৎপাদন পরিবেশে লম্বা কান্ডযুক্ত জাত প্রতি বছর গাছ প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ৩০ টি ফুল উৎপন্ন করে।
- গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিশেষ করে যখন ফুলের মান এবং বাজার দর কমে যায়, তখন কুঁড়ি ছাঁটাই করে গাছের দৈহিক গঠন ও বৃদ্ধি ঠিক রাখতে হয়।
বাজারের চাহিদার উপর ফুলের প্যাকেজিং নির্ভরশীল। অনেক উৎপাদনকারী নিকটস্থ স্থানীয় বাজারের জন্য প্যাকেজিং ছাড়াই ফুলের আঁটি বা গোছা বাজারে সরবরাহ করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আঁটিসমূহ খবরের কাগজ দ্বারা আবৃত থাকে।
ফুল
আলু থেকে জন্ম নেবে গোলাপ গাছ

ফুল গাছের চারা পাওয়া না গেলে কলম করা যায়। যেমন আপনার কাছে যদি গোলাপের চারা না থাকে। তাহলে একটি ডাল এনে আলুর মধ্যে বসিয়ে কলম করে নিতে পারেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। চেষ্টা করেই দেখুন। আলু থেকেই পেয়ে যাবেন পুরো একটি গোলাপ গাছ।
প্রথমে গোলাপ গাছের একটি ডাল নিন। যেটা কিছুদিন বেঁচে থাকবে। এরপর গোল আলু, প্লাস্টিকের বোতল, মাটি, ছুরি এবং ছোট একটি পাত্র বা টব নিন। এরপর শুরু হয়ে যাক আপনার গোলাপ চাষের কার্যক্রম।
ছুরি দিয়ে কাণ্ডের বাড়তি পাতাগুলো সাবধানে কেটে ফেলুন। যাতে মূল কাণ্ডের কোনও ক্ষতি না হয়। এরপর আলুর মাঝ বরাবর একটি ছোট্ট ছিদ্র করুন। সেই গর্তে গোলাপের ডালটি বসিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন ডালটি যেন আলুর মধ্যে শক্তভাবে আটকে থাকে। যাতে কাণ্ড বেঁকে বা ভেঙে না যায়।

মাটিতে গর্ত করে সেখানে গোলাপের ডালসহ আলুটি রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। অথবা টব সাজিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাত্রের এক চতুর্থাংশ মাটি দিয়ে ভরে নিন। প্রয়োজনে খুরপি দিয়ে ভালোভাবে মাটি ভরুন। এবার আলুটিকে পাত্রের মধ্যে বসিয়ে দিন। আরও কিছু মাটি আলুর ওপরে দিয়ে পাত্রটি ভরিয়ে ফেলুন।
রোপণের জন্য খোলা জায়গা না পেলে সেক্ষেত্রে বোতলটিকে কেটে দু’ভাগ করে নিন। এখন কাটা বোতলের নিচের অংশকে ব্যবহার করতে পারেন। এরপর ডালটির উপরের দিকে বোতলের উপরের অংশ দিয়ে ঢেকে দিন। খেয়াল রাখবেন যেন বোতলের মুখ খোলা থাকে।

রোপণের পর থেকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন। দেখবেন আপনার গোলাপ গাছটি দ্রুত বড় হচ্ছে। এভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই নিজের গোলাপের কাণ্ডে নতুন গোলাপ ফোটাতে পারেন।
এগ্রোবিজ
আলু থেকেই পাবেন গোলাপ ফুল
গোলাপ ফুল পছন্দ করেন না এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। গোলাপ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকে গোলাপ চাষ করতে চান। তাদের জন্য রয়েছে আলু থেকে সহজে গোলাপ চাষের পদ্ধতি।

































অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন