আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

মৎস্য

দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন

দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন
দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন

শিং মাছের চাষ বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও লাভজনক একটি উদ্যোগ। সঠিক পদ্ধতি, যত্ন, এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিং মাছের উৎপাদনকে সহজ ও মুনাফাযোগ্য করে তোলে। যদি আপনি সঠিক নির্দেশনা মেনে এই চাষ শুরু করেন, তবে এটি হতে পারে আপনার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

শিং মাছ চাষের উপকারিতা

  1. উচ্চ বাজারমূল্য: দেশি শিং মাছ সব সময় চাহিদাসম্পন্ন এবং বাজারে ভালো দাম পায়।
  2. অল্প জায়গায় চাষ সম্ভব: কম জায়গাতেই শিং মাছের উৎপাদন করা যায়।
  3. পুষ্টিগুণ: শিং মাছ প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর।
  4. দ্রুত উৎপাদন: সঠিক খাদ্য এবং যত্নে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া সম্ভব।
শিং মাছ চাষের উপকারিতা
শিং মাছ চাষের উপকারিতা

এগ্রিকেয়ার ডেস্ক: মাছের বাজারে দেশি শিং বা জিয়ল মাছের চাহিদা ব্যাপক। সুস্থ-অসুস্থ সব শ্রেণীর মানুষের পছন্দের মাছ শিং। আমাদের খালবিলে এক সময় প্রচুর শিং মাছ পাওয়া যেত। বিভিন্ন কারণে এখন আর শিং মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। আগে শিং মাছ পুকুরে চাষ করা হতো না। সে কারণে শিং মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। আমাদের দেশের মৎস্য খামারিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করে শিং মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলার এলাকার মাছ চাষিরা দেশি শিং মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন। এক শতাংশের ছোট একটি পুকুরে শিং মাছ চাষ করে প্রতি ছয় মাস পর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। তাদের এ সফলতাকে সামনে রেখে আগ্রহী মাছ চাষিদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। বর্তমান সময়ে শিং মাছ চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ মাছ চাষের ব্যাপকতা। মাছ চাষকে কেন্দ্র করে ধলায় গড়ে উঠেছে ৩৫টি মৎস্য হ্যাচারি। অন্তত ৫০০ পরিবার মাছ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হয়েছে;কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোকের। দেশি ছোট ছোট পুকুর বা পরিত্যক্ত পুকুর শিং মাছের চাষের আওতায় আনা গেলে শিং মাছের চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

শিং চাষের সুবিধা : শিং মাছ সুস্বাদু এবং বাজার চাহিদা অনেক বেশি। ডোবা, ছোট ছোট পরিত্যক্ত পুকুর এবং পরিকল্পিত পুকুরে চাষ যোগ্য। অন্যান্য মাছের তুলনায় কম খাদ্যে বাঁচে। সাধারণ প্রতিকূল অবস্থা কাটাতে পারে। হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন করা যায়। সম্পূরক খাবারে সহজে অভ্যস্ত। একক এবং মিশ্র চাষ করা যায়।

শিং মাছের পুকুর প্রস্তুতি
শিং মাছের পুকুর প্রস্তুতি

পুকুর নির্বাচন: শিং মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচনের সময় কয়েকটা দিক লক্ষ্য রাখতে হবে-
১. পুকুর অবশ্যই বন্যামুক্ত হতে হবে। 
২. পুকুরের পাড় মজবুত হতে হবে। কোন প্রকার ছিদ্র থাকলে সমস্ত- শিং মাছ চলে যাবে। 
৩. বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় পানির উচ্চতা ৪ ফুটের বেশি হবে না এই জাতীয় পুকুর নির্বাচন করতে হবে। 
৪. চাষের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, শিং মাছের পুকুর আয়তাকার হলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বর্গাকার একটি পুকুরের চেয়ে আয়তাকার পুকুরে একই হারে খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় কমপক্ষে ১০ ভাগ বেশি উৎপাদন হয়। 
৫. পুকুরের আয়তন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে হতে হবে এবং পুকুরের এক প্রান্ত- অন্য প্রান্তের চেয়ে ১ ফুট ঢালু রাখতে হবে যাতে মাছ ধরার সুবিধাসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা যায়।

পুকুর প্রস্তুতি : সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের পুকুরে শিং চাষ অধিক উপযোগী,তবে এক একরের পুকুরেও চাষ করা যায়। প্রথমে পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে পুকুরের তলদেশে রোদ লাগাতে পারলে ভালো হয়। এ সময় পাড় কাটা পুকুরের ক্ষেত্রে নিজেদের মনের মতো পুকুর প্রস্তুত করা যায়। শুকানো সম্ভব না হলে পানিপূর্ণ পুকুরে প্রথমে রোটেনন ট্যাবলেট ব্যবহার করা যায়। ফসটঙ্নি (ম্যাজিক গোল্ড ট্যাবলেট প্রয়োগে অবাঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ অপসারণ বেশি কার্যকর। পরে প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুর প্রস্তুতির মূল কাজ শুরু করা হয়। প্রয়োগের পর প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম শিং ব্রাইট গোল্ড (দানাদার) প্রয়োগ করলে পানির রং স্থির থাকবে। এরপর প্রতি শতাংশে পাঁচ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০ গ্রাম টিএসপি একত্রে গুলে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পাঁচ থেকে ছয় দিন পর শিং মাছের ২ ইঞ্চি থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের পোনা মজুদ করা যাবে।

দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি
দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

পোনা মজুদ: পুকুর প্রস্তুতের পর গুণগতমানের পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি থেকে প্রায় ২ ইঞ্চি সাইজের পোনা মজুদ করতে হবে। আজকাল পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেক হ্যাচারিই শিং মাছের পোনা উৎপাদন করে। কিন্তু পোনাকে কীভাবে মজুদ করলে পোনার মৃত্যহার কম হবে বা আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থাপনা কি হবে তা অধিকাংশ হ্যাচারিই না জানার কারণে শিং মাছের পোনা মজুদের পর ব্যাপকহারে মড়ক দেখা দেয়। প্রথমে যা করতে হবে তা হল, হ্যাচারিতে পোনা তোলার পর কন্ডিশন করে এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিনে গোসল দিয়ে তারপর পোনা ডেলিভারি দিতে হবে। পোনা পরিবহনের পর এন্টিফাঙ্গাস মেডিসিনে গোসল দিয়ে পুকুরে ছাড়তে হবে। আর তা না হলে পুকুরে ছাড়ার পর পোনা ক্ষতরোগে আক্রান্ত- হতে পারে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ২/৩ দিন পর আবার একই জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। এতে শিং মাছের পোনা মজুদের পর আর কোন রোগবালাই আসবে না।

পোনার পরিমাণ কত হবে : একক চাষে শিং মাছ প্রতি শতাংশে ৫০০ থেকে ১ হাজার পোনা ছাড়া যায়। এক্ষেত্রে পোনা ছাড়ার আগে এবং পরে পুকুরের পানির গুণাগুণ রক্ষা করতে হবে। পানি পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলে পোনা কম ছাড়া ভালো। মিশ্র চাষে মাগুর এবং কৈ মাছের সঙ্গেও শিং মাছ ভালো হয়। এক্ষেত্রে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যবান পোনা অপরিহার্য।

কী খাবার দিতে হবে : শিং মাছের জন্য অধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ ভালো। শিং মাছ পুকুরের তলদেশের জলজ কীট খেয়ে থাকলেও লাভজনক চাষে মানসম্মত সম্পূরক খাবার (কমপক্ষে ৩২ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ) অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কারখানায় প্রস্তুতি মানসম্মত খাবার উত্তম,তবে মানসম্মত ভাসমান খাবার প্রয়োগেরও শিং চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষা করা যায়।

চাষের মেয়াদকাল : মানসম্মত পোনা,সুষম খাবার এবং আদর্শ চাষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে ছয় থেকে সাত মাসে প্রতিটি শিং মাছ ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত পানির গুণাগুণ আদর্শমাত্রায় রক্ষা করা গেলে আরও ভালো ফল প্রত্যাশা করা যায়।

চাষের আদর্শ সময় : এপ্রিল-মে মাস থেকে এ মাছ চাষ শুরু করা যায়। যারা আগের বছরের শেষ দিকে নার্সিংয়ে চাপে পোনা রাখেন,তারা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে পরিকল্পিত চাষ শুরু করতে পারেন। তবে প্রতি বছরে মে-জুন থেকে পোনাপ্রাপ্তি সুবিধা হয়।

দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি
দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

চাষ পরিচর্যা : শিং মাছ চাষে অনেক বেশি পানি দরকার হয় না। পোনা নার্সিংয়ের সময় ২ থেকে ২.৫ ফুট পানিই যথেষ্ট,পরে ৩ থেকে ৩.৫ ফুট পানিতে শিং মাছ চাষ করা যায়। পোনা ছাড়ার পর নিয়মিত ও পরিমিত খাবার দিতে হবে। মোট খাবারকে দুই থেকে তিনবারে ভাগ করে দেয়া ভালো। হ্যাচারি থেকে নেয়া ছোট পোনা সরাসরি চাষে না দিয়ে আলাদা নার্সিং করে ২ ইঞ্চি থেকে ৩ ইঞ্চি হলে চাষ পুকুরে দেয়া উত্তম। পুকুরের পানির গুণাগুণ এবং তলদেশের পরিবেশের ওপর শিং মাছের বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেই পানির গুণাগুণ রক্ষা করা আবশ্যক। প্রতি মাসে একবার শিঙাইট ও প্রোবায়োটিঙ্রে সমন্বয়ে ‘অ্যাকোয়া ম্যাজিক প্লাস’ একবার প্রয়োগ করলে পুকুরের তলদেশ এবং পানির গুণাগুণ রক্ষা করতে সহায়ক হবে।

কখনও কখনও পোনার ত্বক ও ঠোঁটে তুলার মতো সাদা দাগ দেখা দিতে পারে। সেপ্রোলেগনিয়া নামক ছত্রাকের জন্য এমনটি হয়। এক্ষেত্রে প্রতি একরে প্রতি ৩ ফুট পানির জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার ‘পলগার্ড প্লাস’ পরপর দুই দিন দুই ডোজ ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া ফরমালিন বা ম্যালাকাইট গ্রিনের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা যায়। পরজীবী বা প্রোটোজোয়া কর্তৃক শিং মাছ আক্রান্ত হলে ডেলেটিঙ্ প্রয়োগে চমৎকার সুফল পাওয়া যায়। বেশি খাবার প্রয়োগ বা জৈব পদার্থের পচনের মাধ্যমে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, এ অবস্থায় মাছ মারা যেতে পারে খুব দ্রুত। এ সমস্যা দূরীকরণে প্রতি একরে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম গ্যাসোনেঙ্ প্লাস সারা পুকুরে (বালির সঙ্গে মিশিয়ে) ছিটিয়ে দিলে তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পানি পরিবর্তন করে দিতে পারলে ভালো হয়। মূলত অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যাই শিং মাছের চাষে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।

মানসম্মত খাবার ছাড়া শিং চাষ লাভবান হয় না। প্রাণিজ প্রোটিন হিসেবে মিট অ্যান্ড বোন মিলের ব্যবহারের পরিবর্তে ভালো মানের ফিশমিল ব্যবহার করা আবশ্যক। খাবারের সঙ্গে দ্রুত হজমের জন্য ‘বায়োজাইম’ এবং গ্রোথ প্রোমোটর (র‌্যাপিড গ্রো) প্রয়োগ করলে অত্যন্ত ভালো ফল লক্ষ করা যায়।

শিং মাছের পুকুরের মধ্যে বা একপাশে বাঁশের বেষ্টনীর মধ্যে কিছু কচুরিপানা রাখা গেলে পানির পরিবেশ এবং শিং মাছের জন্য উপযোগী হয়।

রোগ প্রতিরোধ করার জন্য চাষকালীন সময়ে দ্বিতীয় মাস থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পলগার্ড প্লাস অথবা পন্ড সেফ,দ্বিতীয় সপ্তাহে গ্যাসোনেঙ্ প্লাস এবং তৃতীয় সপ্তাহে অ্যাকোয়া ম্যাজিক প্লাস প্রয়োগ করলে রোগমুক্ত মাছ চাষ করা সম্ভব। মাঝে মধ্যে মাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক।

শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি
শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি

শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি : অন্যান্য মাছ জাল টেনে ধরা গেলেও শিং মাছ জাল টেনে ধরা যায় না। শিং মাছ ধরতে হলে শেষ রাতের দিকে পুকুর সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। শিং মাছ ধরার উত্তম সময় হল ভোর বেলা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। রোদের সময় মাছ ধরলে মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাছ ধরার পর মাছ থেকে গেলে শ্যালো দিয়ে কমপক্ষে ২ ফুট ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পুকুর ভরে রাখতে হবে। পরের দিন আবার একই নিয়মে মাছ ধরতে হবে। শিং মাছ ধরতে একটা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। একহাতে নুডুল্সের প্লাস্টিক ছাকনী আর অন্য হাতে স্টিলের ছোট গামলা দিয়ে মাছ ধরে প্লাস্টিকের বড় পাত্রে রাখতে হবে। এরপর মাছগুলো হাপায় নিয়ে ছাড়তে হবে। 

আমি আগেই উল্লেখ করেছি, শিং মাছের পুকুর এক পাশে ঢালু রাখা দরকার। এতে পুকুর সেচ দেয়ার পর সমস্ত মাছ একপাশে চলে আসবে। তা না হলে সমস্ত পুকুর জুড়ে মাছ ছড়িয়ে থাকবে। মাছ ধরায় খুব সমস্যা হবে। সাধারণত শিং মাছ ধরার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। 
মাছের কাঁটা বিঁধলে সেখানে খুবই ব্যথা হয়। কাঁটা বিঁধানো জায়গায় ব্যথানাশক মলম লাগিয়ে গরম পানি দিলে সাথে সাথে কিছুটা উপশম হয়। এছাড়া মলম লাগিয়ে গরম বালির ছ্যাক দিলেও আরাম পাওয়া যায়। তাই শিং মাছ ধরার আগে এমন ব্যবস্থা রাখলে মন্দ হয় না। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এসবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না। 

শিং মাছ বাজারের একটি দামি মাছ। ডাক্তাররা বিভিন্ন রোগির পথ্য হিসেবে শিং মাছ খাবার উপদেশ দিয়ে থাকেন। কথায় আছে, শিং মাছে গায়ে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি করে থাকে। 
পুকুরে শিং মাছের কীভাবে চাষ করতে হয় তা আলোচনা করা হল। আলোচিত পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করলে ১০ মাসে এক একরে প্রায় ৪ টন শিং মাছ উৎপাদন সম্ভব যা নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বিলুপ্তির হাত থেকেও রক্ষা পাবে এই শিং মাছ। 

এক হেক্টর আয়তনের পুকুরে শিং-মাগুর চাষের জন্য বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব
(১) পুকুর শুকানো/মাছ মারার ওষুধ ৪,০০০ টাকা, 
(২) চুন ২৫০ কেজি মূল্য ২,০০০ টাকা, 
(৩) জৈব সার ২,০০০ কেজি মূল্য ২,০০০ টাকা, 
(৪) ইউরিয়া ২৫০ কেজি মূল্য ২,০০০ টাকা, 
(৫) টিএসপি ১২৫ কেজি মূল্য ১,৮৭৫ টাকা, 
(৬) এমপি ১০০ কেজি মূল্য ৭০০ টাকা 
(৭) সম্পূরক খাদ্য ৩,৬০০ কেজি মূল্য ৫৪,০০০ টাকা, 
(৮) মাছের পোনা (৪-৬ সে.মি.) ২৫০০০ টি মূল্য ৩৭,০০০ টাকা, 
(৯) ওষুধ ও রাসায়নিক গুচ্ছ মূল্য ১,০০০ টাকা, 
(১০) মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ গুচ্ছ মূল্য ৪,৫০০ টাকা, 
(১১) বিবিধ ১,৪০০ টাকা। মোট ব্যয় ১,১০,৪৭৫ টাকা।
পুকুর ভাড়া এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে চাষ করলে ২৮,০০০ টাকা বেশি ব্যয় হবে।
উত্পাদন ও আয় : উত্পাদন : ১,৮০০ কেজি মাছ। আয় : প্রতি কেজি ১২৫ টাকা হিসেবে ১,৮০০ কেজির মূল্য ২,২৫,০০০ টাকা।
মুনাফা : ২,২৫,০০০ থেকে ১,১০,৪৭৫ টাকা = ১,১৪,৫২৫/- টাকা।
টাকার হিসাব সমূহ সময়ের সাথে সম্বনয় করে নিতে হবে

শিং মাছ চাষ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত লাভজনক একটি উদ্যোগ। দেশের স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি সম্ভাবনাও বেশ ভালো। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যায় এই চাষ আপনার জন্য আর্থিক সাফল্যের দার খুলে দিতে পারে।

দেশি সুস্বাদু শিং মাছের চাষ সঠিক পদ্ধতিতে করলে এটি হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা। সঠিকভাবে যত্ন নিন এবং চাষের সর্বাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার আয়ের পথকে আরও শক্তিশালী করুন।




  • দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন

    দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন

  • শিং মাছ চাষের উপকারিতা

    শিং মাছ চাষের উপকারিতা

  • শিং মাছের পুকুর প্রস্তুতি

    শিং মাছের পুকুর প্রস্তুতি

  • দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

    দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

  • শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি

    শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি

  • দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

    দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

  • দেশি সুস্বাদু ও লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি: সঠিক পদ্ধতিতে অধিক লাভ করুন
  • শিং মাছ চাষের উপকারিতা
  • শিং মাছের পুকুর প্রস্তুতি
  • দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি
  • শিং মাছ আহরণ পদ্ধতি
  • দেশি সুস্বাদু লাভজনক শিং মাছের চাষ পদ্ধতি

মৎস্য

পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়

পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়
পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধিতে করণীয়

আমরা মাছেভাতে বাঙালি। আর পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। তবে মাছটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে মাছটির বংশবৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। তার মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ মাছ রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য কিছু কৌশল জেনে নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নেই কৌশলগুলো-

ব্রুড প্রতিপালন

প্রজনন ঋতুর ৪-৫ মাস আগে থেকেই ব্রুড মাছগুলোকে বিশেষ যত্নের সঙ্গে লালন পালন করা উচিত। এ সময় খাবার হিসেবে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, সয়াবিন মিল, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা এবং ভিটামিনের প্রিমিক্সের মিশ্রণ মাছের মোট ওজনের ৫-৮ ভাগ দিতে হবে। ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা আনার জন্য ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের পর্যাপ্ততার জন্য নিয়মিত গোবর, ইউরিয়া ও টিএসপি পরিমাণ মতো দিতে হবে।

মাছ বাছাই

ব্রুড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছের চেয়ে ছোট হবে। পুরুষ মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট চাপা থাকে এবং পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খাঁজকাটা থাকে। আর স্ত্রী মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে পুরুষ মাছ থেকে বড় হয়। স্ত্রী মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট ফোলা ও নরম থাকে এবং স্ত্রী মাছের বক্ষপাখনা তেমন খাঁজকাটা থাকে না।

টেকসইকরণ

ইনজেকশন দেওয়ার ৮-১০ ঘণ্টা আগে মাছ ধরে সেগুলোকে পুকুরে স্থাপিত গ্লাস নাইলনের হাপাতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য মাছকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দিতে হবে।

ইনজেকশন প্রদান

পাবদা মাছের প্রণোদিত প্রজননের জন্য পিজি এবং এইচসিজি দু’টোই ব্যবহার করা যায়। মাছকে মাত্র একবারই ইনজেকশন দিতে হয়। পিজির জন্য সবচেয়ে ভালো মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ১২.০ মিলিগ্রাম এবং প্রতি কেজি স্ত্রী মাছের জন্য ১৮.০ মিলিগ্রাম। ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভেজা কাপড় দিয়ে মাথা জড়িয়ে পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন দেওয়ার ৯-১২ ঘণ্টার মধ্যে হাপাতেই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে ওই ডিম নিষিক্ত করে।

নিষিক্ত ডিম স্থানান্তর

ডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে এবং ডিমগুলোকে ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ট্রে ও পুকুরের পানির তাপমাত্র যেন প্রায় একই থাকে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে পুকুরের পানি ছেঁকে ট্রেতে দেওয়া যেতে পারে। ডিম স্থানান্তর করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেতে ওপর থেকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ দিয়ে অনবরত পানি সরবরাহ করতে হবে যাতে ডিমগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে ১৬-২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

রেনু পোনার খাবার

ট্রেতে ডিম থেকে ফোটার ২১-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে রেনু পোনাকে প্রাথমিক খাবার দিতে হবে। প্রাথমিক খাবার হিসেবে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম সবচেয়ে ভালো। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিতে হয়। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম না পাওয়া গেলে পুকুর থেকে জুপ্লাংকটন ধরে সুক্ষ্ন ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে।

পোনার পরিচর্যা

পোনার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ২-৩ বার খাবার দিতে হবে। এভাবে ৬-৮ দিন ট্রেতে প্রতিপালন করার পর পোনাগুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করতে হবে। ২.৪, ১.৩, ০.৫ ঘনমিটার সাইজের সিস্টার্নে ৩০০-৫০০টি পোনা লালন করা যাবে। পানির উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হবে। সিস্টার্নে ১০-১৫ দিন প্রতিপালন করার পর পোনার আকার ২-৩ সেন্টিমিটার হলে পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা যাবে।

নার্সারি পুকুরে প্রতিপালন

পুকুরের আয়তন ৩-৬ শতাংশ হবে। পুকুর প্রস্তুতির পর শতাংশে ৩০০-৪০০টি করে পোনা ছাড়া যাবে। পোনা ছাড়ার আগে ভালোভাবে ছোট ফাঁস জাল টেনে পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। পোনা সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন পোনার দেহ ওজনের ১০-২০ ভাগ সম্পূরক খাবার দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

খরচের তুলনায় লাভ ভালো হওয়ায় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাবদা মাছের চাষ। ২০১৬ সালে ২ জন চাষির মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে এখন পাবদা চাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। আর গেল মৌসুমে ১৫০ মেট্রিকটনের বেশি পাবদা উৎপাদিত হয়েছে। সামনের মৌসুমে উৎপাদন আরো বেশি হবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।

জানাগেছে, ময়মনসিংহের বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারীরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন। পরবর্তিতে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। পুকুর পাড় থেকেই গড়ে ৩৩০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। সাথে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ ।

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

পাবদা খামারী আব্বাস জানান, পাবদা মাছের গঠন ঠিক রাখতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় দানাদার খাবার। বিক্রিতেও রয়েছে সুবিধা। দেড় শ’ কিংবা দুই শ’মণ যে পরিমাণই মাছ ধরা হোক না কেন তা পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যান ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বড় বড় পাইকাররা। ফলে লাভ এবং বিক্রয় সুবিধা পাওয়াই পাবদা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

রাজু জানান, লেখা-পড়া শেষ করে বাবার সাথে পাপদা মাছের চাষ করছি। এবছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার পাবদা মাছ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করি। এছাড়া এ পাবদা মাছের সাথে আরো অন্যান মাচের চাষ করতে হয় পানি ঠিক রাখার জন্য। যাকে বলে মিশ্র চাষ।

যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ
যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাবদা মাছের চাষ

অপর এক খামারী জানান, পাবদা মাছ চাষে বর্তমানে মানুষকে বেশি আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এ মাছ বিক্রি করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না । দেড় শ’ কিংবা দুই শ’ মণ মাছ পুকুর পাড় থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আনেক চাষি এখন এ মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। তিনি আরো জানান মৎস্য বিভাগ আমাদের বিভিন্নভাবে ট্রেনিং দিচ্ছে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা এসে পুকুরের পানি পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

মাছ আহরণ
মাছ আহরণ

মহেশপুর, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, কৃষির যে কোন সেক্টরের তুলনায় পাবদা চাষ লাভজনক। এই চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগীতা করছে মৎস্য বিভাগ। তিনি আরো জানান জেলার মহেশপুরে উৎপাদিত এসব পাবদা মাছ ভারতে এলসির মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশিয় বিভিন্ন বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছেন খামারীরা। সাধারণত মার্চ মাসের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা
পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা

পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সেগুলো মৎস্য চাষিদের ভালোভাবে জানতে হবে। আগের দিনে আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিলে ব্যাপকহারে মাছ পাওয়া যেত। পুকুরে অনেকেই এখন পাবদা মাছ চাষ করে থাকেন। আজকের এই লেখাতে আমরা জেনে নিব পাবদা মাছের মিশ্র চাষ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে-

পুকুর প্রস্তুত করা
পুকুর প্রস্তুত করা

পুকুর প্রস্তুত করা

বছরে অন্তত ৭-৮ মাস পানি থাকে এমন সেচকৃত পুকুর নির্বাচন করা ভালো। তবে সারা বছর পানি থাকে অর্থাৎ অন্য মাছের চাষ(পুরোনো পুকুর) হচ্ছে এমন পুকুরে পাবদা মাছ চাষ করা আরো ভালো । নতুন পুকুরের পাড় মেরামত ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে । চুন প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ৫ কেজি হারে গোবর প্রয়োগ করতে হবে । এতে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মাবে । পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থাকলে তা দূর করতে হবে।

মিশ্র চাষের জন্য পোনা মজুদ

পুকুরের পানি ৪ থেকে ৫ ফুট গড় উচ্চতা ও হালকা সবুজাভ হলে পোনা মজুদ করতে হবে । মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা , ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা , ১০টি রুই , ১০টি মৃগেল , ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে।

খাদ্য প্রয়োগ

নিয়মিত সম্পূরক খাদ্য মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৩ থেকে ৮ ভাগ হারে প্রয়োগ করতে হবে । অনুর্বর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৫ কেজি পচা গোবর প্রয়োগ করতে হবে । পানির রং গাড় সবুজ হয়ে গেলে অবশ্যই গোবর প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং পানির পি,এইচ পরীক্ষা করতে হবে । এখানে একটি ব্যাপার উল্ল্যেখ্য যে , পাবদা মাছ পুকুরের তুলনা মূলক ছোট মাছ খেয়ে ফেলবে তাই চাষের অন্যান্য মাছ যাতে পাবদার চাইতে বড় সাইজের হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং পুকুরের আমাছা খেয়ে পুকুর যেমন চাষযোগ্য রাখবে তেমনি পাবদার বৃদ্ধিও দ্রুত হবে।

মাছ আহরণ
মাছ আহরণ

মাছ আহরণ

পাবদা মাছ ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম ওজনের হলে বিক্রির জন্য আহরণ করা যেতে পার। পোনা মজুদের ৭ থেকে ৮ মাস পর সব মাছ আহরণ করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তবে ১ বছরের অধিক সময় পর আহরণ করলে মাছের ওজন দ্বিগুনের চাইতেও বেশি হতে দেখা গেছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মাছের উকুন রোগের কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। অনেকেই বুঝতে পারেন না রোগটি কেমন। আসুন জেনে নেয়ে যাক মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।

মাছের উকুন রোগের কারণ ও লক্ষণ: আরগুলাস নামক বহিঃপরজীবী এর মাধ্যমে এই রোগে মাছ আক্রান্ত হয়। এই পরিজীবি মাছের দেহের রক্ত চুষে ক্ষত সৃষ্টি করে।

মাছের দেহ পৃষ্ঠ ও পাখনায় উকুন লেগে থাকে। শক্ত কিছু পেলে মাছ দেহ ঘষে। মাছ লাফালাফি করে। দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পরজীবী খালি চোখে দেখা যায়। মাছ ক্লান্তহীনভাবে সাঁতার কাটে। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ লালচে বর্ণ হয়।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার: পুকুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন দেয়া। জৈবসার প্রয়োগ কমিয়ে দেয়া। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরানো।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার
মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার

ডিপটারেক্স (ডাইলকস, নেগুভন, টেগুভন) ০.৫ পিপিএম হারে পুকুরে প্রয়োগ করা। সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.৮ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করা। প্রতি সপ্তাহে একবার ও পরপর ৫ বার অথবা ০.২৫ পিপিএম পটাশ দ্রবণে ৫-৬ মিনিট গোসল করাতে হবে।

মাছের উকুন রোগের প্রতিরোধ, লক্ষণ ও প্রতিকার সংবাদটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মৎস্য বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

মৎস্য

যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়

যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়
যে পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়

আমাদের দেশে সুস্বাদু মাছের মধ্যে পাবদা অন্যতম। স্বাদের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাবদা মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে এ মাছ হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ করে বেশ লাভবানও হওয়া যায়।

এ মাছ চাষের জন্য ৭ থেকে ৮ মাস পানি থাকে এরকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর কিংবা জলাশয় নির্বাচন করতে হবে। পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসযুক্ত হতে হবে।

পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করতে হবে।

পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভালো থাকবে।

জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী
জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী

রোটেনন প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর শতকে ৮০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়। পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবে না।

পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এর জন্য ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১ থেকে ২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

সার প্রয়োগের ৪ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে। এককভাবে চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ-সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

মিশ্র চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা, ১০০টি শিং এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা, ১০টি রুই, ১০টি মৃগেল, ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে। তেলাপিয়ার সঙ্গে পাবদা মাছ ভালো হয়ে থাকে এ কারণেই যে তেলাপিয়ার অবাঞ্চিত বাচ্চা পাবদা মাছ খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হয়।

নিজেই চাষ করুন পাবদা মাছ
নিজেই চাষ করুন পাবদা মাছ

৩০ শতাংশ ফিশ মিল, ৩০ শতাংশ সরিষার খৈল, ৩০ শতাংশ অটোকুড়া, ১০ শতাংশ ভূষি ও ভিটামিন প্রিমিক্স সহকারে সম্পূরক খাবার তৈরি করা যায় অথবা বাজারের কৈ মাছের ফিড খাওয়ালেও চলবে। এরা সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তাই উপরে আলোচিত খাবারটি রাতে দুবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে খাবার দিতে হবে। পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১২ শতাংশ থেকে আরম্ভ করে দৈনিক খাবার দিয়ে যেতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার শতকরা ১ শতাংশ করে কমাতে হবে।
পাবদা মাছের ওজন ৩০ গ্রামের বেশি হলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ শতাংশ।

৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে। আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষের শতাংশে ১৪ থেকে ১৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ