চীন
করোনাভাইরাস: শিশুকে যেভাবে রোগটি সম্পর্কে বোঝাবেন
করোনাভাইরাস যেমন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, তেমনি ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের খবর। মানুষজনের উদ্বেগ দিনকে দিন বাড়ছে। এরমধ্যে শিশুরাও রয়েছে যারা সাধারণত বাবা-মায়ের কাছেই কোন কিছু বুঝতে চায়।
কিন্তু শিশুকে কিভাবে বোঝাবেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে? তার মনে ভয় কিভাবে দূর করবেন?
আশ্বস্ত করা
ডা: পুনম কৃষ্ণা যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসক। যার নিজের ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। তিনি বলছেন, “বিষয়টি হল উদ্বেগ লাঘব করা। তাকে বুঝিয়ে বলা যে তোমার যখন ঠাণ্ডা লাগে, পেট খারাপ হয়, বমি হয় এই ভাইরাসটি সেরকম।”
তিনি মনে করেন, অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করা। নতুবা সে স্কুলে বা বন্ধুদের কাছ থেকে ভুল তথ্য পাবে।
তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো গণমাধ্যমের খবর হয়ত সে সঠিকভাবে বুঝবে না। আর এতে তারই ক্ষতি।
ডা: কৃষ্ণা বলছেন, “সরাসরি ও সত্যি কথা বলা, আমি আমার ছেলের সাথে সেটাই করছি। আমার কাছে যারা আসছেন আমি সেসব অভিভাবকদের সেটাই করতে উৎসাহিত করছি।”
শিশুদের মনোবিজ্ঞানী ডা: রিচার্ড উলফসন মনে করেন শিশুদের বয়সের উপর নির্ভর করবে তার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে।
তিনি বলছেন, “ছয়, সাত বছর বয়সী বা তাদের নিচে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা হল তারা যা শুনবে তাতেই বিচলিত হবে। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা তাদের আশ-পাশেই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছে।”
তিনি বলছেন, “এটা তাদের জন্য ভীতিকর হতে পারে। প্রথমত ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে আশ্বস্ত করুন। আপনি হয়ত জানেন না কী হতে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের বলুন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া
ডা: উলফসন স্বীকার করছেন যে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে তার শিশু এতে আক্রান্ত হবে কিনা। কিন্তু অকারণে ঝুঁকি সম্পর্কে দু:শ্চিন্তা না করে আশাবাদী থাকাই ভাল। তিনি বলছেন, “শুধু আস্বস্ত করা নয়, রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে তাদের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।”
তাদের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যাতে করে তারা নিজেদের আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে এবং একই সাথে এমন অনুভব করে যে এর মাধ্যমে সে নিরাপদ এবং বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলছেন, “আমাদের উচিৎ স্বাস্থ্য ভাল রাখার কিছু উপায় আছে যা তুমি করতে পারো। যেমন নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে শুধু এটা বলে বসে না থেকে তারা নিজেরা করতে পারে এমন কিছু তাদের করতে দেয়া ভাল।”
তার সাথে একমত পোষণ করে ডা: কৃষ্ণা বলছেন, “নিজেকে রক্ষা করার প্রতিরোধী কাজগুলো যেমন শিশুর সঙ্গে হাত ধোয়ার মতো বিষয়টি নিয়ে গল্প করা।”
শিশুকে আস্বস্ত করা এবং একই সাথে কিছু বাস্তবসম্মত প্রতিরোধমূলক কৌশল শেখানোই হবে অভিভাবকদের জন্য সবচাইতে ভাল পরামর্শ। শিশুরা অন্যমনস্ক হতে পারে, খেলায় ব্যস্ত হয়ে যেতে পারে বা তার মনোযোগ কম হতে পারে তাই তাকে মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়া।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
তবে পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুদের মনে করিয়ে দেয়ার বিষয়টি শুধু উদ্বেগ প্রশমনের সাথে সম্পর্কিত নয়। ছোট শিশুরা খুব কৌতূহলী হয়। তারা সবকিছু ছুঁয়ে দেখে। স্কুলে বন্ধুদের সাথে খাবার ও পানীয় আদানপ্রদান করে।
ডা: কৃষ্ণা বলছেন, “সাধারণত এটি রোগ জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম কারণ। তাদেরকে পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া মানে চারপাশের মানুষজনকেও নিরাপদে থাকতে সাহায্য করা।”
ভুয়া খবর থেকে সতর্ক থাকুন
শিশুদের উদ্বেগের অন্যতম উৎস হতে পারে তাদের অভিভাবকরাই। তিনি বলছেন, “অপেক্ষাকৃত ছোটরা যদি দেখে তাদের বাবা-মায়েরা নিজেরা উদ্বিগ্ন, তারা তাদের নানা ধরনের আলাপচারিতা শোনে এবং সেখান থেকে নিজেদের তথ্য সংগ্রহ করে।”
তিনি বলছেন, বাবা-মায়েরা শিশুদের আশপাশে কেমন আচরণ করবেন সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ। কিন্তু তারা স্কুলে কী শুনছে সেটির উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব মুশকিল।
ডা: উলফসন বলছেন, “আমার তিনজন নাতি রয়েছে। তাদের বয়স বারো, দশ ও আট বছর। তারা প্রত্যেকে এসে আমাকে বলেছে, আমি শুনেছি আমাদের স্কুলে একজন এসেছে যে অন্য কোথাও গিয়েছিল। তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কারণ ওদের ওটা হয়েছে।”
“এর অর্থ হচ্ছে কত দ্রুত গল্প ছড়ায়। সত্যি কথা বলা শেখানো খুব জরুরী।”
কিশোর বয়সীদের যেভাবে বোঝাতে পারেন
এই বয়সীদের জন্য বিষয়টা বেশ অন্যরকম। তারা খবরের জন্য অভিভাবকদের উপর কম নির্ভরশীল। তারা বন্ধুদের কাছ থেকে বেশি খবর পায়। তথ্য আদান প্রদানে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে।
ডা: উলফসন বলছেন, “তথ্যের ব্যাপারে তারা তাদের বন্ধুদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। সমস্যা হল কিশোর বয়সী কাউকে এটা বলে আস্বস্ত করা যাবে না যে সবকিছু ঠিক হয় যাবে।”
তার মতে, “এই বয়সীরা অভিভাবকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে তর্ক করতে পারে। তারা বাবা-মা বললেই সবকিছু মেনে নেবে না।”
তবে তার মতে বয়স যতই হোক না কেন শিশুরা যাতে পরিবারে সবকিছু আলাপ করতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করাই মঙ্গল।
এগ্রোবিজ
ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি কমিয়েছে চীন
হারিকেন আইডার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় চীন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দেশটি থেকে আমদানি ১৮ শতাংশ কমেছে। মাড়াইস্বল্পতার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এ তথ্য জানিয়েছে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন ক্রেতা দেশ। শুল্ক বিভাগের তথ্য বলছে, গত মাসে দেশটি ব্রাজিল থেকে ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার টন সয়াবিন কেনে। গত বছরের একই সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ৫০ হাজার টন।
শূকর পালন খাতে সয়াবিনের চাহিদা বাড়ায় শীর্ষ সরবরাহকারী ব্রাজিল থেকে গত বছর সয়াবিন ক্রয় শুরু করেন চীনের মাড়াইকারীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শূকরের মাংসের দাম কমে যাওয়ায় সয়াবিন ক্রয় কমিয়ে এনেছেন তারা।
এদিকে হারিকেন আইডায় ক্ষতির পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি কমতে শুরু করে। নিম্নমুখিতা অব্যাহত আছে। গত মাসে দেশটি থেকে চীন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টন সয়াবিন ক্রয় করে।
ইসলাম
চীনে কোরআন মজিদ অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে অ্যাপল
চীনে কর্মকর্তাদের অনুরোধের পর অ্যাপল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কোরআন অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে।
সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ‘কোরআন মজিদ’ অ্যাপ। অ্যাপ স্টোরে এটি পাওয়া যায় এবং এর রিভিউর সংখ্যা দেড় লাখের মতো। সারা বিশ্বে লাখ লাখ মুসলিম এই অ্যাপটি ব্যবহার করে।
বিবিসি জানতে পেরেছে অবৈধ ধর্মীয় টেক্সট থাকার কারণে এই অ্যাপটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এখনও কোন মন্তব্য করেনি।
সারা বিশ্বে অ্যাপ স্টোরের অ্যাপগুলোর ওপর নজর রাখে এরকম একটি ওয়েবসাইট ‘অ্যাপল সেন্সরশিপে’ এই খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
অ্যাপটির নির্মাতা পিডিএমএস কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, “অ্যাপলের মতে, আমাদের অ্যাপ ‘কোরআন মজিদ’ চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কারণ তাতে কিছু বিষয় ছিল যা অবৈধ।”
“বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা চীনের সাইবারস্পেস প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।”
কোম্পানিটি বলছে, চীনে তাদের প্রায় ১০ লাখের মতো ব্যবহারকারী রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ইসলামকে একটি ধর্ম বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে থাকে।
তবে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, এমনকি গণহত্যার জন্যেও চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
কোরআন অ্যাপটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বিবিসির কাছে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অ্যাপল। তবে তারা মানবাধিকার বিষয়ে তাদের নীতির কথা উল্লেখ করেছে।
অ্যাপলের ওই নীতিতে বলা হয়েছে: “আমাদেরকে স্থানীয় আইন মেনে চলতে হয়, জটিল কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রেও, যে ব্যাপারে আমরা সরকারের সাথে দ্বিমতও পোষণ করে থাকতে পারি।”
তবে চীনা এই অ্যাপটি কোন আইন ভঙ্গ করেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
‘কোরআন মজিদ’ অ্যাপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মুসলিমের এই অ্যাপটির ওপর আস্থা রয়েছে।
গত মাসে অ্যাপল ও গুগল রাশিয়ার কারারুদ্ধ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির পরিকল্পিত একটি ট্যাকটিক্যাল ভোটিং অ্যাপ সরিয়ে নেয়।
এই অ্যাপটি সরিয়ে না নিলে রুশ কর্তৃপক্ষ এই দুটো কোম্পানিকে জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল।
চীন অ্যাপলের জন্য অন্যতম বৃহৎ একটি বাজার। এমনকি এই কোম্পানির বিভিন্ন সামগ্রীর সরবরাহ চীনা কল-কারখানার ওপর নির্ভরশীল।
এসপ্তাহে চীনে আরো একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় অ্যাপ, অলিভ ট্রি’র ‘বাইবেল অ্যাপ’ নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে বিবিসি জানতে পেরেছে কোম্পানিটি নিজেই অ্যাপটি সরিয়ে নিয়েছে।
এবিষয়ে অলিভ ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোন মন্তব্য করেনি।
অ্যাপল সেন্সরশিপের প্রকল্প পরিচালক বেঞ্জামিন ইসমাইল বলেছেন, “সম্প্রতি অ্যাপল বেইজিং-এর সেন্সরশিপ ব্যুরোতে পরিণত হয়েছে।”
“তাদেরকে সঠিক কাজটাই করতে হবে, এবং তার পর চীন সরকারের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার মাইক্রোসফট বলেছে তারা চীনে তাদের লিঙ্কডিন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা বলছে, চীনের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
চীন
করোনাভাইরাস: রোগ জীবাণু নির্মূলে সচল হয়েছে রোবট
“আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান, দরোজা বন্ধ রাখুন। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জীবাণুনাশকের কাজ শুরু হবে।“ ইংরেজিতে এই কথাগুলো বলছে একটা রোবট।
“এটা চীনা ভাষাতেও কথা বলতে পারে,” জানালেন ইউভিডি রোবটস কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন এলিস।
জানালার কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা গেল ঘরের মধ্যে রোবটটি ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে এবং ক্যামেরার ফ্ল্যাশ-বাতির মতো অতিবেগুনি রশ্মি জ্বেলে ঘরের সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করছে।
“আমাদের ব্যবসা এমনিতেই বেশ চড়া ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পর এটা একেবারেই আকাশচুম্বী হয়েছে,” বলছেন ইউভি রোবটস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পের ইউল নিয়েলসেন।
এরই মধ্যে তারা চীনে, বিশেষভাবে উহানে, প্রচুর সংখ্যায় এই রোবট পাঠিয়েছেন।
এশিয়া এবং ইউরোপেও তাদের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি অর্ডার এসেছে ইতালি থেকে”, বলছেন মি. নিয়েলসেন, “তাদের অবস্থা সত্যি শোচনীয়। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করতে।“
স্বাভাবিকভাবেই ইউভিডি রোবটসের উৎপাদন বেড়ে তিনগুণ হয়েছে।
ডেনমার্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেনসে এই কোম্পানির কারখানায় প্রতিদিন একটা করে এধরনের জীবাণুনাশক রোবট নির্মাণ করা হচ্ছে।
যেভাবে কাজ করে এই রোবট
এই জীবাণুনাশক রোবটের রয়েছে আটটা বাল্ব, যেগুলো থেকে তীব্র অতিবেগুনি অর্থাৎ আলট্রা-ভায়োলেট বা ইউভি-সি আলোকরশ্মি বের হয়।
এই আলোকরশ্মি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুর ডিএনএ এবং আরএনএ ধ্বংস করে যাতে এগুলো সংখ্যায় আর বাড়তে না পারে।
তবে এই অতিবেগুনি রশ্মি মানবদেহের জন্যও খুবই ক্ষতিকারক।
তাই এই রোবট কাজ করার সময় ঘরে কোন মানুষ উপস্থিত থাকার নিয়ম নেই।
পুরো ঘরের জীবাণু ধ্বংস করতে রোবটটির ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে।
এই রোবট তৈরিতে সাহায্য করেছে ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ডেনমার্ক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক হান্স ইয়র্ন কলমোস বলছেন, “এমন অনেক খারাপ জীবাণু আছে যেগুলো আপনার দেহে সংক্রমিত হতে পরে।“
“কিন্তু আমাদের দেহে যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মির ডোজ দেয়া যায়, তাহলে এধরনের ক্ষতিকারক জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।“
এই রোবটের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এর দাম ৬৭ হাজার ডলার।
তবে এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে করোনাভাইরাস নির্মূল করতে পারে কিনা, তার জন্য আলাদা করে কোন পরীক্ষা চালানো হয়নি।
কিন্তু মি. নিয়েলসেন বিশ্বাস করেন এই রোবট করোনাভাইরাসকেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
“সার্স এবং মার্স-এর সাথে করোনাভাইরাসের অনেক দিক থেকেই মিল রয়েছে। এবং আমরা জানি যে ইউভি-সি আলোকরশ্মি দিয়ে এগুলো ধ্বংস করা সম্ভব,” বলছেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সহযোগী অধ্যাপক ড. লেনা সিরিচও মনে করেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইউভি রোবট হতে পারে একটি মোক্ষম অস্ত্র।
চীন
করোনাভাইরাস মহামারির উৎস কি চীনে চোরাচালান হওয়া প্যাঙ্গোলিন থেকে?
প্যাঙ্গোলিন নামে একটি প্রাণী যা চোরাই পথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয় – তার দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড নাইনটিনের সাথে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’
প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে – যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সাথে সম্পর্কিত।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মত জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তারা এটাও বলছেন যে , মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।
“যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা আরো নিশ্চিত হবার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী-থেকে-মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত” – বলেন ড. ল্যাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সাথে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরো বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ – যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে – তার সাথে এর মিল নেই।
সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলছেন,”করোনাভাইরাসের সাথে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।”
ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং তার পর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো – তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
খুব সম্ভবত: হর্সশু প্রজাতির বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন – দুধরণের প্রাণীই এতে জড়িত কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা।
ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে – এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল – নাকি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?
প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
চীন অবশ্য কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার কথায়, কোভিড নাইনটিনের উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোন প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসই ছিল, বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোন প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন
করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি: ডব্লিউএইচও
নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী মহামারির চেহারা নিয়েছে বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস গেব্রেইয়েসুস এক সংবাদ সম্মেলনে একথা ঘোষণা করে বলেছেন, এ ভাইরাসের বিস্তারের ওপর তারা সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছিলেন, এবং এ ব্যাপারে ‘ভীতিকর রকমের নিষ্ক্রিয়তা’ দেখে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চীন থেকে সূচনা হওয়া এই নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড নাইনটিন সংক্রমণে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে ১ লক্ষের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ শব্দটি ব্যবহার না করার পর অবশেষে বুধবার মি. গেব্রেইয়েসুস নিশ্চিত করলেন যে করোনাভাইরাসের বিস্তার এখন প্যানডেমিকের রূপ নিয়েছে।
তবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ এটা দেখাতে পেরেছে যে এই নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তারকে দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মি. গেব্রেইয়েসুস সরকারগুলোর প্রতি জরুরি এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে এ সংক্রমণের গতিপথ বদলে দেবার আহ্বান জানান।
যখন কোনো ছোঁয়াচে রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই তাকে বলা হয় প্যানডেমিক বা ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি’।
মি. গেব্রেইয়েসুস বলেন, গত দু’সপ্তাহে চীনের বাইরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ গুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, তার এ ঘোষণায় করোনাইরাসের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের করণীয় সম্পর্কে দেয়া পরামর্শে কোন পরিবর্তন আসবে না।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন