এগ্রোবিজ
বারি মাল্টা-১ বদলে দিয়েছে দেশে ফল আমদানির চিত্র
বর্তমানে এ জাতীয় মাল্টা চাষে দেশে চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। মাল্টা চাষ সম্প্রসারণে বিদেশি মাল্টা আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। দেশীয় জাতের মাল্টাকে যথাযথ ব্রান্ডিং করতে পারলে একদিকে ফল উৎপাদন বাড়ার মাধ্যমে জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণ অন্যদিকে বিদেশি মাল্টার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা, ব্যাপক প্রচার প্রচারণা এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ বাংলাদেশকে মাল্টা আমদানিকারক দেশ হতে রপ্তানিকারক দেশের কাতারে উন্নীত করতে পারে।
আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি জাতের মাল্টার চাষ সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়ে রংপুরের তারাগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. রাসেল সরকার আরও বলেন, ২০০৪ সালে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বারি মাল্টা-১ নামে দেশীয় মাল্টার একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ও সিলেট অঞ্চল ছাড়াও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, বরেন্দ্রভূমি, উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় সারা দেশে মাল্টার চাষাবাদ হচ্ছে। চারা রোপণের ১ থেকে ২ বছরের মধ্যেই মাল্টা গাছে ফুল ও ফল আসে এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে একাধারে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত একেকটি গাছ থেকে পূর্ণমাত্রায় ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। এ দেশের প্রায় সব অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বারি মাল্টা-১ চাষের অনুকূল এবং খুব অল্প সময়ের মাঝেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছোট বড় নানা আকারের মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। এসব ফলবাগান আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মাঝেই পূর্ণ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিদেশি মাল্টা ও কমলার আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং দেশের মাটি ও জলবায়ু উপযোগী নতুন উদ্ভাবিত মাল্টার জাতের অধিক ফলনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সারাদেশে লেবুজাতীয় ফসলের (মাল্টা, কমলা, লেবু প্রভৃতি) চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০২৩ সালে শেষ হতে যাওয়া ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩০ টি জেলার ১২৩টি উপজেলায় ৫৯ হাজার ১০০টি বিভিন্ন আয়তনের বাগান স্থাপিত হবে এবং প্রায় ৫০০০ পুরাতন মাল্টাবাগানের ব্যবস্থাপনা হবে। প্রকল্প শেষে দেশে মাল্টা ও কমলার উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে।
অতিরিক্ত প্রায় ৪০ হাজার টন মাল্টা ও কমলা উৎপাদিত হবে যাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়াও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রকল্পের মাধ্যমেও সাইট্রাস জাতীয় ফলের চাষাবাদ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ডিএইর তথ্য মতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে কমলা ও মাল্টার উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৪০,৩১৭ টন ও ২৮,০৪১ টন। দেশে চাষকরা কমলার বার্ষিক উৎপাদন বাড়ার হার ৫ শতাংশ যেখানে মাল্টার ক্ষেত্রে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন সুত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এই কৃষিবিদ জানান, মাল্টা অত্যন্ত সুস্বাদু, রসালো ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। ভিটামিন ‘সি’ সম্মৃদ্ধ ফলগুলোর মধ্যে মাল্টা অন্যতম। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের কাছে এটি সমান জনপ্রিয়। কথায় বলে, ফল খাই, বল পাই। ফল যত তাজা খাওয়া যায় ততই ভালো, এতে ফলের পুষ্টিমান অটুট থাকে। তাজা ফল ভক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন ফলের পরিপূর্ণ আস্বাদ গ্রহণ করা যায়, অন্যদিকে সঠিক পুষ্টিগুণও পাওয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে দেশে আমদানিকরা বিদেশি ফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাল্টা। বিদেশি মাল্টা আমদানিতে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে, অধিকন্তু দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকায় এসব ফলের স্বাদ ও পুষ্টিমান ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিগত কয়েকবছরে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে।
বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল তথা মধ্য মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মধুমাস ধরা হয় এবং এসময়ই নানান দেশীয় ফলের প্রাচুর্য থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ে এত বেশি দেশীয় ফল পাওয়া যায় না। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত কুল ও পেয়ারা বাদে অন্য দেশীয় ফল বাজারে তেমন থাকে না। এসময় ফলের চাহিদা পূরণে বিদেশি ফলই একমাত্র ভরসা। একটি হিসেব মতে, দেশি জাতের ফলের মাধ্যমে দেশের মোট ফলের চাহিদার মাত্র ৩৫ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ৬৫ শতাংশ ফল বাহিরে থেকে আমদানি করতে হয়। মূলত ৬ ধরনের বিদেশি ফল (আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি) সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়।
দেশে কিছু কিছু বিদেশি ফলের উৎপাদন শুরু হয়েছে তবু এখনো বিদেশি জাতের ফল আমদানি নির্ভরতা প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি। দেশে আমদানিকরা ফলের ৮৫ শতাংশ আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর-এই ৪ ধরনের ফল। পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সমুন্ডি এর তথ্য অনুযায়ী মাল্টা ফল আমদানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর ফলের শুল্ককরসহ আমদানি ব্যয় ৯৪৬ কোটি টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮০২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কাস্টমস এর তথ্যানুযায়ী দেশে ২০১৭-১৮ সালে শুধু মাল্টা ও কমলা আমদানি করা হয় ১,১৭,১৭০ মেট্রিক টন যাতে প্রায় ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
মূলত ৪৬টি দেশ থেকে উল্লিখিত ৬ ধরনের বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। আমদানিকরা বিদেশি ফলের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশে আসে। অল্পকিছু স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর এর হিসাব অনুযায়ী, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে মোট ৪.৫৮ লাখ টন বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল আমদানি হয়েছে। শুল্ককরসহ যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৪২২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট বিদেশি ফল আমদানি হয়েছে ৪.৬১ লাখ টন। পাঁচ বছরে আমদানি বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার টন এবং মোট আমদানির প্রায় ৭৭ শতাংশই হচ্ছে আপেল ও মাল্টা।
দেশীয় মাল্টায় অনীহার কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, যদিও বিগত কয়েকবছরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে তথাপি দেশীয় জাতের মাল্টার ক্ষেত্রে সিংহভাগ ভোক্তার অনীহা লক্ষ করা যায়। দেশীয় মাল্টার প্রতি অনীহার প্রধান কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ১. কথায় বলে, ‘আগে দর্শনধারী, তারপর গুণ বিচারী’, একথা দেশি জাতের মাল্টার ক্ষেত্রে প্রায় পুরোপুরি খাটে। দেশি জাতের মাল্টা পরিপক্ব অবস্থায়ও সাধারণত হলুদাভ সবুজ থাকে। ২. সাধারণভাবে মনে করা হয় বিদেশি ফলের পুষ্টিমান অধিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকে।
এজন্য বিদেশি ফলের প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বলতা এবং দেশীয় ফলের ক্ষেত্রে অজ্ঞতাজনিত অনীহা কাজ করে। ৩. মাল্টা নন-ক্লাইমেকটেরিক ফল হওযায় গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর তা আর পাকে না। অসাধু অনেক ব্যবসায়ী ও চাষি মাল্টা পরিপক্ব হওয়ার আগেই উচ্চমূল্য পাওয়ার জন্য গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করে। এর ফলে মাল্টার পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না এবং ভোক্তার মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। ৪. দেশীয় মাল্টার পুষ্টিগুণ ও স্বাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় ভোক্তাদের দেশি জাতের মাল্টার প্রতি অনীহা দেখা যায়।
বিদেশি মাল্টার আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশি জাতের মাল্টার বাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভোক্তার কাছে একে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। এই যুগপৎ বিষয়ের সম্মিলন ঘটিয়ে ভোক্তা এবং নতুন মাল্টা চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য কতিপয় সুপারিশ করা হয়েছে।
এগুলো হলো: ১. গবেষণার মাধ্যমে ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণের নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং উজ্জ্বল কমলা বর্ণের উচ্চফলনশীল আগাম ও নাবী জাত উদ্ভাবন করা। ২. সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার ও বেসরকারি নার্সারিগুলোতে বেশি সংখ্যক চারা উৎপাদনের মাধ্যমে চারার সহজলভ্যতা বাড়ানো। ৩. বসতবাড়িতে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচুসহ অন্যান্য ফলের সঙ্গে মাল্টার চারা রোপণের জন্য জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো। ৪. বিদেশি মাল্টা আমদানিতে শুল্কহার বাড়িয়ে দেশীয় জাতের মাল্টার বাজারজাতকরণের সুযোগ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। ৫. জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের ফল, সবজি কিংবা কৃষি প্রযুক্তি মেলা, প্রদর্শনী, মাঠ দিবসসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে দেশি জাতের মাল্টা ও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক আলোচনা ও লিফলেট বিতরণ করা।
৬. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্যান্য সকল অন্তর্জাতিক মাধ্যমে দেশীয় মাল্টার পরিচিতি, পুষ্টিগুণ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন বা ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা। ৭. দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও কৃষকের নিজস্ব উদ্যোগে বিগত কয়েক বছরে ছোট বড় যেসব মাল্টাবাগান গড়ে উঠেছে সেসব কৃষি উদ্যোক্তার সফলতার গল্প তুলে ধরা।
৮. জেলা, অঞ্চল বা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ফল চাষিকে পুরস্কৃত করা। ৯. উৎপাদিত ফলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের পাশাপাশি উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি করা। ফল উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের রপ্তানিযোগ্য ও মানসম্মত আধুনিক ফল উৎপাদন প্রযুক্তি, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ প্রভৃতি বিষয়ে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
এগ্রোবিজ
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
শুধু ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করেন এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার। জেনে নিন সেই যুবক সম্পর্কে।















এগ্রোবিজ
খাগড়াছড়িতে জার্বেরা ফুল চাষের সম্ভাবনা ভালো
জার্বেরা এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বিদেশি ফুল হলেও বাংলাদেশের পাহাড়ে এই ফুল চাষের সম্ভাবনা বাড়ছে। সামাজিক যেকোনো অনুষ্ঠানে দেখা মেলে লাল, কমলা, গোলাপি, হলুদ, সাদা, বেগুনিসহ নানা রঙের জার্বেরার। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ বলেন, গত দুই বছর ধরে এখানে জার্বেরা ফুলের চাষ হচ্ছে। ৭৫টি গাছে ২০০ থেকে ৩০০টির বেশি ফুল আসছে, ভালো ফুল ফুটছে। খাগড়াছড়িতে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে এই ফুল চাষের। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ বাড়ালে কৃষক লাভবান হবেন।

















এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি

বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।



বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।

বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়

বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।

বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।

আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।

সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
এগ্রোবিজ
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।

রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।

তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।
পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।

খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন