মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে (১-১০ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল রফতানি আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে চার লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। পণ্যবাহী কার্গো পরিবহন তদারককারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারটেকের বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর স্টার অনলাইন ও রয়টার্স। পাম অয়েল উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ইন্দোনেশিয়ার পর মালয়েশিয়া দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ইন্টারটেক জানিয়েছে, ১-১০ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩৭৫ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। আগের মাসের একই সমরে তুলনায় দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত ১-১০ জানুয়ারি সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮০ টন পাম অয়েল রফতানি করেছিল মালয়েশিয়া। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে পাম অয়েল রফতানি বেড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৯৫ টন। চলতি বছরের ১-১০ ফেব্রুয়ারি সময়ে মালয়েশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। পরিমাণের হিসাবে তা ৯৬ হাজার ৮১০ টন। ১-১০ জানুয়ারি সময়ে ইইউর বাজারে সব মিলিয়ে ৮৪ হাজার ২৩০ টন পাম অয়েল রফতানি করেছিল মালয়েশিয়া। একইভাবে ১-১০ ফেব্রুয়ারি সময়ে মালয়েশিয়া থেকে চীনে সব মিলিয়ে ৫৪ হাজার ৪৬০ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। আগের মাসের একই সময়ে চীনে সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫০ টন পাম অয়েল রফতানি করেছিল মালয়েশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশের বাজারে ১-১০ ফেব্রুয়ারি সময়ে মালয়েশিয়া থেকে সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার ১৭৫ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। আগের মাসের একই সময়ে এ অঞ্চলে মালয়েশীয় পাম অয়েল রফতানির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৩৪০ টন। এদিকে মাসভিত্তিক হিসাবে চলতি বছরের প্রথম মাসে মন্দার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানি। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ২২৫ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি কমেছে ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ। পরিমাণের হিসাবে তা ৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৩৩ টন। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫৮ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছিল, যা আগের মাসের তুলনায় ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ টন বেশি। নভেম্বরে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১৪ লাখ ৯ হাজার ৭৫১ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছিল, যা আগের মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। এ কারণে শীতে পণ্যটির বেচাকেনা ও রফতানি কমে আসে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীত জেঁকে বসলেও মালয়েশীয় পাম অয়েলের রফতানি তুলনামূলক বেশি হয়েছে। সেই তুলনায় জানুয়ারিতে পণ্যটির রফতানি কমতির দিকে ছিল। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, ফেব্রুয়ারিতে গতি ফিরে পেতে পারে মালয়েশীয় পাম অয়েল রফতানি।
বাজারে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যটির দামে। বাড়তি সরবরাহের জের ধরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম দুদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আরো ১০ টাকা কমে গেছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোয় পেঁয়াজের দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে আসতে পারে। গতকাল হিলির পাইকারি বাজার ঘুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ২০-২৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দুদিন আগেও এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে হিলির পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা কমেছে। হিলির পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ফিরোজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, পাইকারি বাজারে কয়েকদিন আগেও প্রতি মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝে পণ্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। এর জের ধরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম এক ধাক্কায় মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়। এ কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে বাড়তি ১০ টাকা করে নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এখন স্থানীয় মোকামগুলোয় দেশে উৎপাদিত মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কমে এসেছে দাম। দুদিনের ব্যবধানে হিলির পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কমেছে। বর্তমানে পণ্যটির মণ ফের ৮০০-৯০০ টাকায় নেমে এসেছে। স্থানীয় বিক্রেতা শাকিল খান বণিক বার্তাকে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এজন্য কমতে শুরু করেছে দাম। পাইকারি পর্যায়ে কম দামে কিনতে পারায় খুচরা ব্যবসায়ীরাও তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন। এদিকে বাজারে দেশে উৎপাদিত মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কমে আসার জের ধরে অনেক ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক ভারত থেকে আমদানি করে মোকাম ভরিয়েছেন। এখন দাম কমতে শুরু করায় তারা মজুদ করা এসব পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ নিয়ে বিদ্যমান সংকট কেটেছে। এ বিষয়ে শাকিল খান বণিক বার্তাকে বলেন, এ পরিস্থিতি পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দেয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে হিলির পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম দীর্ঘমেয়াদে কমতির দিকে থাকতে পারে। এমনকি পণ্যটির দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে কেজিপ্রতি ২০ টাকার নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বছরব্যাপী মহামারীতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কৃষি খাত। তবে গমের বাম্পার ফলনে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের আশা করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে তিন কোটি টনেরও বেশি গম উৎপাদন করতে যাচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি। খবর ব্লুমবার্গ। গমের বাম্পার ফলন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর বড় আকারের চাহিদায় ভর করে রেকর্ড গম রফতানি করতে পারে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নভিত্তিক থমাস এল্ডার মার্কেটসের কৃষি বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু হোয়াইটলো মনে করেন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে সর্বোচ্চ গম রফতানি হতে পারে। হোয়াইটলো বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গমের যে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে আমরা তা পূরণ করতে পারছি না। শুধু ভালো গমই নয়, কিছুটা দুর্বল মানের গমেরও বাজার আছে সেখানে। এছাড়া উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যেও অস্ট্রেলিয়ার গমের ভালো চাহিদা রয়েছে। কারণ পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই রুটি, পাস্তা, কেক থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রধান খাদ্য বানাতে গম ব্যবহূত হচ্ছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার গম খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে চীনের মুখ ফিরিয়ে নেয়া। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন গত নভেম্বরে মাত্র ৮৮৮ টন গম আমদানি করেছে, যা অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০১১-পরবর্তী চীনের সর্বনিম্ন আমদানি। গমের বাম্পার ফলন হলেও চীনের বাজারে সুযোগ সংকোচনে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। এক্ষেত্রে হয়তো অন্য বাজারগুলোর দিকে মনোযোগ বাড়াবে অস্ট্রেলিয়া।
চলতি ফসলি বছর ব্রাজিলের ভুট্টা উৎপাদন আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ২০ লাখ টন কমতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস (এফএএস) গতকাল এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায়। প্রথম দফায় রোপণ করা ভুট্টার উৎপাদন কমায় এবং দ্বিতীয় দফায় রোপণে বিলম্বের ফলে চলতি ফসলি মৌসুমে ব্রাজিলের মোট ভুট্টা উৎপাদন হতে যাচ্ছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টন। আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কম হলেও ভুট্টা উৎপাদন ২০১৯-২০২০ ফসলি বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি হতে যাচ্ছে। এমনটা হলে ভুট্টা উৎপাদনে রেকর্ড করবে ব্রাজিল। এফএএস বলছে, ব্রাজিলের আবাদি জমির পরিমাণ ১০ লাখ হেক্টর বেড়ে ১ কোটি ৯৫ লাখ হেক্টরে দাঁড়াচ্ছে, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ কৃষিজমি আবাদের রেকর্ড। এফএএস আরো জানায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভুট্টার মূল্যবৃদ্ধির জেরে অধিক জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন ব্রাজিলের কৃষকরা। তবে চাষাবাদ গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়ায় উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গত মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে মরিয়া কৃষি অধিদপ্তর। গত মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ প্রায় সাড়ে নয় হাজার হেক্টরের কম হলেও চলতি মৌসুমে আবাদ বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ। এজন্য বোরো আবাদের বীজতলা বাড়ানো, কৃষকদের প্রণোদনা বৃদ্ধি ও মাঠ পর্যায়ে মনিটরিংসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বোরো ধানের আবাদ হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৬২ হেক্টর। ২০১৯ সালে আবাদ হয়েছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৪ হেক্টর। অর্থাৎ গত বছর আবাদ কমেছে ৯ হাজার ১৮২ হেক্টর। তবে চলতি মৌসুমে যেকোনোভাবে বোরো ধানের আবাদ বাড়তে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে আবাদ বাড়ানোর জন্য বোরো ধানের বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৯৪০ হেক্টর হলেও তৈরি করা হয়েছে ১৪ হাজার ২০৪ হেক্টর। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বোরো ধানের আবাদ সার্বিকভাবে ৮২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় পুরোপুরি আবাদ শেষ হয়েছে। নোয়াখালী জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৯৫০ হেক্টরের বিপরীতে সম্পন্ন হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬০ হেক্টর। এ জেলায় আরো বোরো ধানের আবাদের সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টরের বিপরীতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে ৩২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর। এ দুই জেলায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় ৫৭ হাজার হেক্টরের বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ২০০ হেক্টর, কক্সবাজারে সাড়ে ৫২ হাজার হেক্টরের বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ৪৪০ হাজার হেক্টর এবং ফেনীতে ৩০ হাজার ৭৫ হেক্টরের বিপরীতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে সরকারের দেয়া লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কোনোভাবেই যেন বোরো অবাদ কম না হয়, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ মৌসুমে আড়াই লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনজুরুল হুদা বণিক বার্তাকে বলেন, গত মৌসুমে বোরো আবাদ কম হলেও কৃষক তার জমিতে সবজি চাষ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম চাষ হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কারণ বাকি জমিতে পর্যাপ্ত সবজি চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ বাড়ানোর পাশাপাশি সবজি চাষ বাড়ানোর জন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ এবং প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে
বিভিন্ন দিবস ঘিরে জমে ওঠে যশোরের গদখালীতে ফুলের কেনাবেচা। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ভাটা চলছে ফুল ব্যবসায়। পরবর্তী সময় আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্পান, যা ধুঁকতে থাকা এ ব্যবসাকে আরো তলানিতে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় চলতি বছরের শুরু থেকেই নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধেছেন ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা। আশা করছেন আসন্ন বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার। বাণ্যিজিকভাবে যশোর জেলার গদখালীতে ফুল উৎপাদন শুরু করা হয় আশির দশকে। দেশে ফুলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার এখানে। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা গদখালীতে আসেন ফুল কিনতে। ফুল উৎপাদন ও কেনাবেচায় শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয় বছরে। যশোর শহর থেকে পশ্চিমের উপজেলা ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৭৫টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় নানা রকম ফুল। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুই পাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখা যায়। প্রতিদিন ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারার শত শত ফুলচাষীর আনাগোনা শুরু হয় গদখালীর বাজারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় পাইকাররাও সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুল ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও। যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ফুলের আবাদ হয়েছিল ৬৩২ হেক্টর, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৬৩৩ হেক্টর, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৬৩৬ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬০০ হেক্টর এবং চলতি মৌসুমেও আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। ফুল উৎপাদন হয় গড়ে ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ পিস। হেক্টরপ্রতি ফুল উৎপাদন হয় ৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ পিস। এছাড়া গোলাপ ফুল উৎপাদন হয় ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৬ পিস। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউবা, ফুলিয়া আর শার্শার নাভারন, উলাশি, গদখালী ও শ্যামলাগাছি গ্রামের প্রায় প্রতিটি মাঠ এখনো ভরা ফুলে। শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ রয়েছে এখানে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এবার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলচাষীদের ভরা মৌসুম। করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফুল সেক্টরের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে ওই ক্ষতি কিছুটা কেটে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০০ পিস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, রজনীগন্ধা ৫০০, গ্লাডিওলাস মানভেদে ৩০০ থেকে ৮০০, জারবেরা ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং গাঁদা ফুল প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। আশা করছি দিবসের আগে দাম আরো বাড়বে। কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা আমাদের। পানিসারা গ্রামের ইউনুস আলী জানান, প্রতি একর জারবেরা ফুল চাষ করতে ৩৬ লাখ টাকা, রজনীগন্ধা চাষে একরপ্রতি খরচ আড়াই লাখ, গোলাপ সাড়ে ৪ লাখ, গ্লাডিওলাস ৪ লাখ, গাঁদা চাষে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। করোনাকালে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি, আগামী তিনটি দিবসে এ ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাবে। গদখালী হাড়িয়া গ্রামের ফুলচাষী রহমত গাজী বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। গতকাল বাজারে ১০০ ফুল বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়। ঝিকরগাছার পটুয়াপাড়া এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করেছি। আশা করছি, ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে দাম ভালো পাওয়া যাবে। যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গদখালীতে এবার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। করোনাকালে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ধানজুড়ি। এ গ্রামের বিশেষত্ব হচ্ছে অধিকাংশ ঘরই মাটি দিয়ে তৈরি। রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই গ্রামে ভিড় করছেন উত্সুক জনতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামে ১১৫টি ঘরে বসবাস করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের ৪২৫ জন সদস্য। প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা তৈরি করে দেয়া হয়েছে ভিন্নরূপ। ধানজুড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা কেরোবিন হেমব্রম ও রুপলাল তির্কি বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আমরা সেই পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এখানে মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি। অন্যান্য এলাকায় মাটির বাড়ি তেমন দেখা না গেলেও আমাদের এ গ্রামে প্রথম থেকেই মাটির বাড়ি আছে। পরিবারের নারীরা প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা তৈরি করে আরো সুন্দর করে তোলেন। দেওয়াল থেকে শুরু করে জানালা, দরজা সুন্দর আল্পনা আঁকেন তারা। বছরে দুবার আল্পনা আঁকা হয়। গ্রামের পাশেই ঐতিহ্যবাহী ধানজুড়ি মিশন ও কুষ্ঠ হাসপাতালের অবস্থান। তাই এ এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য রোগী আসেন প্রতিদিন। অনেকে হাসপাতালের কাজ শেষ করে আমাদের বাড়িগুলো দেখে যান। তাছাড়া বাড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও এখন মানুষ আসছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বাসন্তি রানী বলেন, মাটির বাড়ির বিশেষ সুবিধা হলো আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই সাজাতে পারি। বিতিয়া মুর্মু বলেন, আমাদের তো সেই আদিকাল থেকেই মাটির বাড়ি আছে। এ রকম বাড়িতে বসবাসে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমরা। ইটের বাড়ির তুলনায় মাটির বাড়িগুলোয় ঠাণ্ডা-গরম অনুভূত হয় কম। এ গ্রামে ভ্রমণে আসা শরিফুল ইসলাম ও ইয়াসমিন সরকার বলেন, বিরামপুর উপজেলার ধানজুড়ি গ্রামটি জেলার অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় ভিন্ন। এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ অত্যন্ত পরিপাটি করে গ্রামটিকে সাজিয়েছেন। সড়কের দুই পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তারা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সাধারণত গ্রামগঞ্জে এখন আর মাটির বাড়ি চোখে পড়ে না। কিন্তু এখানকার প্রত্যেকটি বাড়িরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, গ্রামের সৌন্দর্য বর্ধনে রাস্তার দুই পাশে ফুলের গাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ওই গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।
দেশী জাতের হাঁস-মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করতে নগরীর খামার এলাকায় ১৯৫৭ সালে স্থাপন করা হয় সরকারি হাঁস-মুরগির খামার। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬৪ বছর পেরিয়ে গেলেও খামারের শেডসহ অন্যান্য...
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পাকিস্তানের বাসমতী চাল রফতানিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীর আঘাত, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রতিযোগী ভারত থেকে কম মূল্যে চাল রফতানির কারণে এ সময় পাকিস্তানের বাসমতী রফতানি কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। খবর ডন। পাকিস্তানের বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে, এ ছয় মাসে দেশটির সার্বিক চাল রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানীকৃত চালের মূল্য ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। এর মধ্যে দেশটি থেকে বাসমতী চালের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭২ টনে। এ বাসমতী রফতানি করে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের মোট আয় হয়েছে ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। অন্যদিকে বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চালের রফতানি ৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টনে। রফতানীকৃত চালের মূল্য ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৭০ কোটি ডলারে। এ বিষয়ে দেশটির চাল রফতানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের (আরইএপি) আবদুল কাইয়ুম পারাচা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা মূলত চীনে বাসমতীবহির্ভূত চাল রফতানি নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। তবে অর্থবছরের চলমান শেষার্ধ্বে (জানুয়ারি-জুন) পণ্যটির রফতানি পরিস্থিতিতে উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গম রফতানিতে আরোপ করা শুল্কের বিষয়টি ফর্মুলাভিত্তিক শুল্কে পরিবর্তন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। ফর্মুলাভিত্তিক শুল্কের আওতায় দাম বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্কও বেড়ে যাবে। এটি মহামারীতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিতে শুল্কারোপ করে দেশীয় খাবারের দাম কমানোর চেষ্টারই একটি অংশ। খবর ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম। রাশিয়া এর আগে রফতানিতে একাধিক স্থির শুল্ক আরোপ করেছিল। এ শুল্ক ১৫ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে আগামী ১ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। পরিবর্তে ফর্মুলাভিত্তিক শুল্ক এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগামী ২ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেতনিকভ রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা আশা করি, এ ব্যবস্থাগুলো বাজার স্থিতিশীল করতে এবং গমের দাম কমানোর জন্য যথেষ্ট হবে। ১ এপ্রিল থেকে রাশিয়ার শস্য রফতানিকারকদের তাদের চুক্তির দাম মস্কো এক্সচেঞ্জকে জানাতে হবে। এরপর ফর্মুলার জন্য মূল্য সূচক গণনা করা হবে। ওই সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শুল্ক পুনরায় গণনা করে প্রকাশ করা হবে এবং প্রকাশের পর তৃতীয় কার্যদিবস থেকে এ শুল্ক কার্যকর করা হবে।