করোনা মহামারীর কারণে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোয় চালের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল কম্বোডিয়া। তবে বাস্তবে সেসব উদ্যোগের সুফল মেলেনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটি থেকে চাল রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশের বেশি কমেছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে মন্দা ভাব বজায় থাকার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) মন্দার মধ্য দিয়ে কাটাবে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি খাত। খবর রয়টার্স ও খেমারটাইমসডটকম। চাল উত্পাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় কম্বোডিয়ার অবস্থান ১৩তম। তবে কম্বোডিয়া বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। প্রতি বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ১০-১২ লাখ টনের বেশি চাল রফতানি হয়। কম্বোডিয়া রাইস ফেডারেশনের (সিআরএফ) প্রেসিডেন্ট সং সারান বলেন, চলতি বছরটা মন্দা ভাবের মধ্য দিয়ে শুরু করেছে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি খাত। এ মন্দা ভাব জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকজুড়ে বজায় থাকতে পারে। সিআরএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কম্বোডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ২৭৩ টন চাল রফতানি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমেছে ৩২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ সময় মোট ২৮টি দেশে চাল রফতানি করেছে কম্বোডিয়া। চাল রফতানি করে গত জানুয়ারিতে কম্বোডিয়ার রফতানিকারকরা মোট ৩ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার আয় করেছে। খাদ্যপণ্যটির রফতানি কমার বিষয়ে সং সারান বলেন, জানুয়ারিতে কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে বছরের প্রথম প্রান্তিকে কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে পতন বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ আমরা রফতানি বৃদ্ধির আশা নিয়ে ২০২১ সাল শুরু করেছিলাম। সে আশা পূরণ হয়নি। চলতি বছরের প্রথম মাসে চীনের বাজারে কম্বোডিয়া থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাল রফতানি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআরএফ। তবে একই সময়ে দেশটি থেকে ইউরোপের বাজারে খাদ্যপণ্যটি রফতানিতে ৬০ শতাংশ পতন দেখা দিয়েছে। জানুয়ারিতে কম্বোডিয়া থেকে রফতানি হওয়া চালের ৪৭ শতাংশ গেছে চীনে। ইউরোপের বাজারে গেছে রফতানি হওয়া চালের ২৩ শতাংশ। ১০ শতাংশ চাল রফতানি হয়েছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোয়। এ সময় কম্বোডিয়া থেকে বাকি ২০ শতাংশ চাল রফতানি হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশে। এ পরিস্থিতির পেছনে পণ্যবাহী কার্গো সংকটকে দায়ী করছেন কম্বোডিয়ার চাল রফতানিকারকরা। তাদের মতে, করোনা মহামারীর কারণে সময়মতো পণ্যবাহী কার্গো পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে। কমে এসেছে খাদ্যপণ্যটির রফতানি। এ বিষয়ে সিআরএফের প্রেসিডেন্ট সং সারান আরো বলেন, পণ্যবাহী কার্গো সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এতে কম্বোডিয়ার একক হাত নেই। তবে এর শিকার হয়েছে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি খাত। আগামী মাসগুলোয় এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে রফতানিমুখী এ খাতকে। সং সারান বলেন, আমাদের কাছে চালের নতুন রফতানি অর্ডার আসছে। তবে ক্রেতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা চাল সরবরাহ করতে পারছি না। বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চলমান কার্গো সংকট। এদিকে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি খাত স্থবিরতা কাটিয়ে গত বছর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কম্বোডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালেও কম্বোডিয়া থেকে একই পরিমাণ চাল রফতানি হয়েছিল। তবে করোনা মহামারীর মধ্যে গত বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ টনে। কম্বোডিয়ার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি চাল রফতানির রেকর্ড। এর পর পরই মন্দা ভাবের মধ্য দিয়ে ২০২১ সাল শুরু করেছে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি খাত।
ইউক্রেনের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে গমের রফতানি মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এ সময় বেড়েছে ভুট্টার রফতানি মূল্য। দেশটির কৃষিপণ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এপিকে-ইনফর্ম এ তথ্য জানিয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিজনেস রেকর্ডার। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ সপ্তাহে ইউক্রেনের বাজারে ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তিতে রফতানিযোগ্য সাড়ে ১২ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ প্রতি টন ব্ল্যাক সি গমের রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭৮-২৮৫ ডলার। এ সময় সাড়ে ১১ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ গমের রফতানি মূল্য ছিল টনপ্রতি ২৭৬-২৮৪ ডলার। আগের সপ্তাহেও ইউক্রেনে গমের রফতানি মূল্য প্রায় একই রকম ছিল। তবে গমের অপরিবর্তিত থাকলেও সর্বশেষ সপ্তাহে ইউক্রেনে ভুট্টার রফতানি মূল্য আগের সপ্তাহের তুলনায় টনপ্রতি ২ ডলার বেড়েছে। এপিকে-ইনফর্ম জানিয়েছে, এ সময় ইউক্রেনের বাজারে এফওবি চুক্তিতে ভুট্টার রফতানি মূল্য টনপ্রতি ২৭৮-২৮৫ ডলারের মধ্যে অবস্থান করেছে। অন্যদিকে দেশটির বাজারে একই সময়ে এফওবি চুক্তিতে প্রতি টন যবের রফতানি মূল্য ছিল ২৫৩-২৬১ ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় টনে সর্বোচ্চ ৬ ডলার বেশি। ইউক্রেন বিশ্বের শস্য রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ৩ কোটি ৯ লাখ টন শস্য রফতানি হয়েছে, যা গত মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ কম। এর মধ্যে ইউক্রেন থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ টন গম, ১ কোটি ৩১ লাখ টন ভুট্টা ও ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টন যব রফতানি হয়েছে।
দেখতে প্রায় জিরার মতো। নাম ক্যারাওয়ে সিড। ভারত, মিসর, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদন হয় মসলাজাতীয় পণ্যটি। তবে দেশের বাজারে এটি এখন জিরার সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। বৈধ পথে মসলা আমদানির ঘোষণা দিয়ে ক্যারাওয়ে সিড আনার কারণে জিরার বাজার দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল। ভারত, আফগানিস্তান থেকে আমদানি হওয়া প্রকৃত জিরার মূল্যের চেয়েও বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ক্যারাওয়ে মিশ্রিত জিরা। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একশ্রেণীর আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগসাজশে ব্যবসায়ীরা ক্যারাওয়ে জিরার সঙ্গে সিড মিশিয়ে বিক্রি করছে। দেখতে হুবহু একই রকমের হওয়ায় সাধারণ চোখে এটির পার্থক্য ধরতে পারেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে সাধারণ ভোক্তারা জিরা মনে করে তুলনামূলক কম দামে ক্যারাওয়ে সিড কিনছেন। ক্যারাওয়ে সিডের নিজস্ব কোনো ঘ্রাণ না থাকলেও প্রকৃত জিরার সঙ্গে মেশানোর ফলে আলাদা করা কষ্টসাধ্য। যার কারণে প্রতি এক বস্তা জিরার সঙ্গে এক বস্তা ক্যারাওয়ে সিড মিশিয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ক্লোন জিরা। সাধারণ জিরার তুলনায় দাম কম হওয়ায় কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী নতুন এ জিরা কিনে খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন। এতে করে দেশে জিরা আমদানি করে গত দুই বছর ধরে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন এ খাতের প্রকৃত আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। কাস্টমসের তথ্যে জানা গেছে, ক্যারাওয়ে সিডের এইচএস কোড ০৯০৯৬১৯০। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়ে ক্যারাওয়ে সিড আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫২১ দশমিক ২৬ টন। এ সময়ে আমদানি হওয়া ক্যারাওয়ে সিডের কেজিপ্রতি আমদানি মূল্য ৭১ টাকা। ১৫ শতাংশ শুল্কসহ সর্বমোট আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৮২ টাকা। আবার ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হওয়া ৩ হাজার ৫৩৩ দশমিক ৭৪ টন ক্যারাওয়ে সিডের আমদানি মূল্য হিসেবে কেজিপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ৬৬ টাকা। শুল্ক হিসাব করলে কেজিপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ৭৬ টাকা। অথচ একই সময়ে দেশে আমদানি হওয়া জিরার শুল্কসহ আমদানি মূল্য প্রায় ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ফলে জিরার সঙ্গে মিশ্রণ করে পাইকারি বাজারে ক্যারাওয়ে সিড বিক্রি ও জিরার সঙ্গে মিশ্রিত করে বড় ধরনের মুনাফা করছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। কাস্টমসের মাসভিত্তিক নিত্যপণ্য আমদানি চিত্রে দেখা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে দেশে জিরা আমদানি হয় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টন। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে আমদানি হওয়া ১ হাজার ৩৩৫ টন জিরার টনপ্রতি গড় মূল্য ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৮ দশমিক ১৭ টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি জিরা আমদানি হয়েছে ১৫৭ টাকায়। এর মধ্যে ছয় ধরনের শুল্ক পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৪৬ শতাংশ। এ হিসেবে প্রতিকেজি জিরার আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ২৩০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ যুক্ত করলে প্রতিকেজি জিরার প্রকৃত আমদানি মূল্য হয় প্রায় ২৫০ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ জিরা আমদানিতে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা হারে লোকসান দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। মূলত ক্যারাওয়ে সিড মেশানোর কারণে নকল ক্লোন জিরার দাম কম থাকায় প্রকৃত জিরা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক বণিক বার্তাকে বলেন, ক্যারাওয়ে সিড জিরার বিকল্প হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে অনৈতিক হলেও ক্রেতাদের চাহিদার চাপে ক্যারাওয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। জিরার সঙ্গে মিশ্রিত করে বিক্রি করা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় জিরা হিসেবে বিক্রি করে অতি মুনাফায় ঝুঁকেছে খাতুনগঞ্জ, মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকদের কাছ থেকে স্বাভাবিক দামে ক্রয় করলেও মিশ্রণ কিংবা জিরার বিকল্প হিসেবে বিক্রি করলে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা হওয়ায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ক্যারাওয়ে সিড মিশ্রণে ঝুঁকছে বলে দাবি করেছেন তিনি। খাতুনগঞ্জের মসলা পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স অসীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অসীম কুমার দাশ বণিক বার্তাকে বলেন, ক্যারাওয়ে সিড বাংলাদেশে ব্যবহারযোগ্য মসলা পণ্য নয়। তবে অনেক ব্যবসায়ী জিরার সঙ্গে মিশিয়ে ক্যারাওয়ে বিক্রি করে। সবাই আমদানি না করলেও অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী ক্যারাওয়ে আমদানির সঙ্গে যুক্ত। গরম মসলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জিরার আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ক্যারাওয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে পড়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে প্রশাসনিক ব্যবসা নেয়া ছাড়া এ ধরনের ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার মেসার্স মোল্লা অ্যান্ড কোম্পানিতে অভিযান চালিয়ে নকল জিরা হিসেবে পরিচিত ক্যারাওয়ে সিড উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হাসানের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ টন ক্যারাওয়ে সিড উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪১ ধারায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত কয়েক দিনে খাতুনগঞ্জের চাক্তাই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি পাইকারি মসলার দোকানেই ক্যারাওয়ে সিড মেশানো জিরা পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। চাক্তাইয়ের একটি মসলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্যারাওয়ে সিডের একটি বস্তা পাওয়া যায়। ওই বস্তায় ক্যারাওয়ে সিড উৎপাদক দেশ লেখা রয়েছে মিসর। ২৫ কেজির প্রতিটি বস্তার উৎপাদন সাল লেখা রয়েছে ২০২০ ও মেয়াদোত্তীর্ণের সাল দেয়া রয়েছে ২০২২। আছদগঞ্জ এলাকার জাফর মার্কেটের মেসার্স রিফাত এন্টারপ্রাইজ এ ক্যারাওয়ে সিড আমদানি করেছে। যার টিন নাম্বার হচ্ছে—৬৯২৫২৭৮০২০৫০ এবং বিন নাম্বার হচ্ছে ০০০৫২৪৫৪৩-০৫০৩। তবে জাফর মার্কেটের রিফাত এন্টারপ্রাইজে খোঁজ নেয়া হলে সেখানকার ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন ক্যারাওয়ে সিড আমদানির বিষয়টি অস্বীকার করেন। মসলা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের গরম মসলার বাজারে প্রধান পণ্য জিরা। মূলত জিরা ও দারচিনি সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকায় এ দুটি পণ্যই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এছাড়াও এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ গরম মসলা হিসেবে বাংলাদেশে সর্বাধিক জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকা জিরার চাহিদা বেশি থাকায় ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। অপরদিকে দীর্ঘদিন মসলা আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা ক্যারাওয়ে সিডের কারণে জিরার ব্যবসায়ী গত কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স দরবার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন বণিক বার্তাকে অভিযোগ করে বলেন, একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামের জিরা হিসেবে ক্যারাওয়ে সিড মেশানো জিরা বিক্রি করছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী জিরা কিনেও লোকসানের কারণে বিক্রি করতে পারছে না। রোজাকে সামনে রেখে বাজারে মজুদ বাড়ালেও দাম কমে যাওয়ায় লোকসান দেয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনের উচিত কাস্টমসের মাধ্যমে ক্যারাওয়ে সিড আমদানি বন্ধ করা। না হলে নকল জিরার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াও জিরা আমদানি কমে দেশের মসলা বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়ামের কোনো বিকল্প নেই- একথা আমরা সবাই জানি। করোনার প্রকোপ বাড়ার পর থেকেই ফুসফুস ভালো রাখতে ও মানসিক চাপ...
এক দশক আগেও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে কয়লা। তখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেসরকারি খাতের একের পর এক বিনিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও জ্বালানি হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে কয়লা। অন্যদিকে অনেকটাই গুরুত্বহীন ছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি। পরিকল্পনার দিক থেকেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লবিস্টদের দাপটে অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিলেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির সমর্থকরা। এক পর্যায়ে দেখা গেল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে যেতে পারছে না। এ কারণে অনেক বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। অন্যদিকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের তাগিদে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কমানোরও জোর দাবি উঠছে বিশ্বব্যাপী। জ্বালানিটি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোও। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের। এ কারণে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমর্থকরাও এখন আর এর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে পারছেন না। সরকারের কাছেও জ্বালানি হিসেবে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে কয়লা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে জানিয়েছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কীভাবে সরে আসা যায়, সরকার এখন সে বিষয় বিবেচনা করে দেখছে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেও। ব্যক্তি খাতের হেভিওয়েট উদ্যোক্তারাও এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে সৌরশক্তিতেই (সোলার) তাদের মনোযোগ বেশি। সরকারের পরিকল্পনায়ও এখন পরিচ্ছন্ন জ্বালানির পাশাপাশি গুরুত্ব পাচ্ছে সৌর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সৌরশক্তি নিয়ে নতুন করে রোডম্যাপ তৈরি করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। পরিকল্পনার খসড়া এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ হাজার ৭৪৩ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর স্থাপিত সোলার থেকে আসবে ৩ হাজার মেগাওয়াট। রুফটপ সোলার, মিনিগ্রিড, সোলার হোম সিস্টেমসহ অন্যান্য উৎস থেকে আসবে আরো সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে সোলার থেকেই ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়ে স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, সোলার নিয়ে আলাদাভাবে পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ সোলার প্রযুক্তির খরচ কমে এসেছে। খরচ কম হওয়ায় অনেকে এ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি আসবে। জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমে যাবে। বিশ্ব যেদিকে যাবে আমাদেরও তো সেদিকে যেতে হবে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ পতিত জমি রয়েছে, সেসব জায়গায় সোলার স্থাপন করে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এরই মধ্যে সোলার নিয়ে মহাপরিকল্পনার খসড়া আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এরই মধ্যে জাতীয় গ্রিডে সৌরবিদ্যুৎ যুক্ত হওয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় গ্রিডে সৌরবিদ্যুৎ যুক্ত হওয়া শুরু হয়েছে। টেকনাফে নাফ নদীর তীরে ১১৬ একর জমিতে কার্যক্রম শুরু করেছে টেকনাফ সোলারটেক...
সুস্থভাবে জীবনযাপন করার জন্য হলিস্টিক লাইফস্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন সচেতনরা। হলিস্টিক লাইফস্টাইল বলতে মূলত সামগ্রিক জীবনচর্চাকে বোঝায়, যেখানে শরীরের সঙ্গে মন ও আত্মার সমন্বয় রয়েছে। অর্গানিক ও...
মালয়েশিয়ার বাজারে একদিনে পাম অয়েলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বাড়তির পথে রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মালয়েশীয় পাম অয়েলের বাজারে। বাড়তে শুরু করেছে দাম। খবর স্টার অনলাইন। বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গতকাল পাম অয়েলের দাম আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। দিন শেষে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬১৮ রিঙ্গিত (মালয়েশীয় মুদ্রা) বা ৮৯৫ ডলার ৭৭ সেন্টে। একদিনের ব্যবধানে মালয়েশিয়ার বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে টনে ৯৬ রিঙ্গিত। এ নিয়ে টানা দুদিন ধরে মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের দামে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। গতকাল চীনের ডালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সয়াবিন তেলের দাম আগের দিনের তুলনায় ২ দশকি ৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) পণ্যটির দাম বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এর প্রভাব পড়েছে মালয়েশীয় পাম অয়েলের দামে। পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রফতানিতে চাঙ্গা ভাব প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। অ্যামস্পেক এগ্রি মালয়েশিয়া জানিয়েছে, ১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশটি থেকে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৪ টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে। আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০২০-২১ মৌসুমে ভারতে ক্যাস্টরবীজ উৎপাদন হতে পারে ১৯ লাখ ২ হাজার টন। গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৫২ হাজার টন। দেশটির কৃষি জরিপ প্রতিষ্ঠান এগ্রিওয়াচ জানায়, চলতি বছর মোট জমির পরিমাণ ১৫ শতাংশ কমলেও তা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে গত বছরের কাছাকাছি থাকবে। এগ্রিওয়াচের তথ্যমতে ভারতে এবার আনুমানিক ৮ লাখ ২৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ক্যাস্টরবীজ বপন করা হয়েছে। খবর হিন্দু বিজনেস লাইন। চলতি মৌসুমে অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৫৮৯ কেজি, যা গত বছর ছিল ৫৯৩ কেজি। রাজস্থানে ক্যাস্টর উৎপাদনের জন্য ১৯ শতাংশ জমি কমলেও উৎপাদন লক্ষ্য প্রতি হেক্টরে ১৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৮৭৬ কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। জরিপ অনুসারে রাজস্থানের ক্যাস্টর উৎপাদন ৪ শতাংশ কমে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ টন হবে। গুজরাটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ২৯ হাজার টন। গকুল অ্যাগ্রো রিসোর্সের কর্মকর্তা দিপক থাক্কার বলেন, রিপোর্ট অনুসারে আমরা বলতে পারি, এ বছর ১৫-১৬ লাখ টন শস্য উৎপাদন হতে পারে। একই ধরনের মতামত দিয়ে থাই ক্যাস্টর অয়েল ইন্ডাস্ট্রি জানায়, গত বছরের চেয়ে এবার ১০ শতাংশ শস্য কম উৎপাদন হবে।
বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড ১৯) প্রাদুর্ভাব ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। একদিকে প্রাণের ভয়, অন্যদিকে কর্মহীনতায় সৃষ্ট অনাহারের শঙ্কায় দিন পার করতে হয়েছে অনেককেই। ধারাবাহিক লকডাউনে শিল্প, কৃষিসহ প্রায় সবখানেই প্রভাব পড়েছে, যা অন্য ১০ জনের মতোই কফিচাষী ও ব্যবসায়ীদেরও দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়িয়েছিল। কারণ কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে নেয়া লকডাউনে বিশ্বব্যাপী ক্যাফে, অফিস ক্যান্টিন সবই বন্ধ ছিল। তাই কফি উৎপাদন এবং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভয় ছিল যে, ২০২০ সাল তাদের দুর্দশায় কাটতে পারে। তবে ভোক্তা চাহিদা চাঙ্গা থাকায় তাদের সে শঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। খবর এএফপি। লকডাউনের কারণে অধিক সময় বাসায় অবস্থানে ঘরে কফি গ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া, ভালো দামে বিক্রি হওয়া এবং কিছু দেশে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উৎপাদন কফি খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। করোনার লকডাউনে অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাসা বা অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই অফিস করতে হয়েছে অনেককেই। বাসায় থেকে থেকে একঘেয়েমি, অবসাদ, ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চা-কফি পান করে থাকেন অনেকেই। এভাবেই লাখ লাখ মানুষের গ্রহণের মাধ্যমে বাসা বা বাড়িতে কফির ব্যবহার ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে কফি নিয়ে যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, মূলত তার থেকেও ভালো হয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়াও করোনার কারণে অনেক দেশেই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানি-রফতানি এবং ফসল তোলার ক্ষেত্রেও বেগ পেতে হয়েছে কফিচাষীদের। তবে ব্যবসায় যতটা ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তারা করেছিলেন, ততটা ক্ষতির মধ্যে তাদের পড়তে হয়নি। বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে কফি খাতের বৈশ্বিক বিক্রয়ের মোট পরিমাণ ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাসায় কফির ব্যবহারের কারণে তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে। লন্ডনের আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার (আইওসি) তথ্য অনুসারে, ‘কফিবর্ষে’ (অক্টোবর ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০) ১৬ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যাগ কফি উৎপাদন হয়েছে। গত বছরে (পূর্ণ এক বছরের হিসাবে) উৎপাদিত মোট কফির পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ব্যাগ, যা ঠিক তার আগের সমপরিমাণ সময়ের চেয়েও অনেকটা বেশি। এর ফলে তিন বছরের ধারাবাহিকতায় কফি উৎপাদন বেড়েছে। আইওসি বলছে, মহামারীর কারণে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কম কফি উৎপাদন হতে পারে, তাই ২০২০-২১ সালে বৈশ্বিক কফি উৎপাদন আগের তুলনায় ৫২ লাখ ৭০ হাজার ব্যাগের কিছুটা বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ কফি সরবরাহ করা এর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। বিশ্বব্যাপী মহামারীসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে ক্রয় ও রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কফি উৎপাদক দেশগুলোর আয়ে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন এসেছিল। কারণ মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে দেশভেদে ডলারের দাম ওঠানামা করে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ‘এরাবিকা কফি’ ২০২০ সালে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ১ দশমিক ১০ ডলার (প্রতি পাউন্ড) হারে বাণিজ্য করে। যদিও ২০১৯ সালে এর মূল্য ছিল ১ ডলারেরও নিচে। অন্যদিকে, উৎপাদনের উচ্চমাত্রার কারণে বিশ্বে শীর্ষ কফি রফতানিকারী দেশ ব্রাজিলের ক্ষেত্রে মূল্য অবমূল্যায়ন ঘটেছে। একই অবস্থা কলম্বিয়ার ক্ষেত্রেও। ব্রাজিল প্রকৃত চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন করায় ২৯ শতাংশ মুদ্রা অবমূল্যায়ন ঘটে। কলম্বিয়ার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মূল্য অবমূল্যায়ন হয়। লন্ডনের র্যাবোব্যাংকের বিশেষজ্ঞ কার্লোস মিরার রবাত দিয়ে এএফপি বলছে, কফি উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোর থেকেও ২০২০ সালটি ব্রাজিলের জন্য ছিল খুবই ভালো একটি বছর। দেশটির কফি উৎপাদন ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করে। যার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ব্যাগ। প্রতি ব্যাগের ওজন ছিল ৬০ কেজি।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও দাম কমছে না, বরং প্রতিদিন বেড়ে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চালের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ করেছিল সরকার। এতে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তাতে চালের মূল্য বেড়ে লাগামহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন আমদানিকারককে সাত লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি শুল্কও ৬২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ফলে দেড় বছর পর গত ৯ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়, দামও কমতে শুরু করে। যদিও সম্প্রতি নানা অজুহাতে চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে স্বর্ণা চাল পাইকারিতে ৪০ থেকে বেড়ে ৪২ টাকা, আটাশ চাল ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৭ ও শম্পা ৫৪ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে; খুচরায় যা আরো ১-২ টাকা বাড়তি দাম বেক্রি হচ্ছে। হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আশা করছিলাম ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ার পর দাম কমে আসবে। আমরা গরিব মানুষ কম দামে চাল কিনতে পারব। কিন্তু বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও চালের দাম কমবে কি, আরো বাড়ছে। আমরা খুব কষ্টেই আছি। হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা তপন কুমার ও সুব্রত কুণ্ডু বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হওয়ার পর চালের বাজার কমতির দিকে ছিল। কিন্তু বন্দর দিয়ে চাহিদামতো চাল আমদানি না হওয়ায় সম্প্রতি আবারো দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক কমিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানির সুযোগ দিতে হবে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, সরকারি অনুমোদনের পর আমদানিকারকরা ব্যাপক পরিমাণে চালের এলসি খুলেছেন, যার বিপরীতে বেশকিছু চালবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরে তীব্র যানজটের কারণে সঠিক সময়ে চালগুলো দেশে প্রবেশ করতে পারছে না। আবার আমরা চাহিদামতো চাল আমদানি করতে পারছি না। যদিও আমরা রফতানিকারকদের ওপর চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন উপায়ে চাল আমদানির চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল রয়েছে। এক লাখ টনের অধিক চালের এলসি দেয়া রয়েছে। আশা করছি, যানজটসহ অন্য সমস্যা কেটে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি হবে, তখন দাম কমবে। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে, আমরা শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। মিলার ও আড়তদারদের কাছে যে চাল মজুদ রয়েছে তারা সেগুলো বাজারে ছাড়ছেন না। তারা যদি জমাকৃত চালগুলো ছেড়ে দেন তাহলে অবশ্যই দাম কমে আসবে। আর আমরা যেহেতু শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, তাই সুযোগ বুঝে ভারতীয় রফতানিকারকরাও চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে আগে ৩০-৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হলেও সরকারের নির্দেশনা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এখন তা বেড়ে ৪৫-৫০ ট্রাক হচ্ছে। বন্দর দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি শুরু করে এ পর্যন্ত ৩৫৪টি ট্রাকে ১৪ হাজার ৫০০ টনের মতো চাল এসেছে। বন্দরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চাল খালাসের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে চাল খালাস করে যেন দ্রুত দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারে সে লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।