মৌসুমি ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতি রয়েছে দীর্ঘকাল ধরেই। গত কয়েক দশকে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ও অন্যান্য ফলনের পাশাপাশি কুল চাষ করছেন তিন পাহাড়ি জেলার চাষীরা। ন্যায্যমূল্য পাওয়া, অনুকূল আবহাওয়া ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় খরচ এবং রোগবালাই কম হওয়ায় পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে কুল চাষ দিন দিন বাড়ছে। অনেকে মৌসুমি চাষাবাদের পরিবর্তে স্থায়ীভাবে নিজের জমিতে কুল চাষ করছেন। পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুল চাষ হচ্ছে বান্দরবানে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বাউ কুল, আপেল কুল, নারকেল কুল, বল সুন্দরী এবং কাশ্মীরী কুল আবাদ হচ্ছে। তবে খেতে টক হওয়ায় দেশী জাতের কুলের চাহিদা কম। এক্ষেত্রে মিষ্টি জাতের কুলের চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। আকার ও মান অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে এক কেজি কুল ৫০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমি পাঁচ বছর আগে তিন একর জমিতে আপেল কুল, বল সুন্দরী ও স্থানীয় দেশী জাতের কুল চাষ করি। গত কয়েক বছরে ফলের ভালো দাম পেয়েছি। তাই নতুন করে চাষের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ বছর আমি ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। বাগানে অবশিষ্ট যে কুল আছে, তা থেকে আরো লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর গ্রামে নিজ জমিতে কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন হেমো কুমার চাকমা। তিনি বলেন, এ বছর আমি ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারব। গত বছরও আমি ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। একই ইউনিয়নের বৃদ্ধা গুরিমিলা চাকমা জানান, আমি ১০ বিঘা জমিতে দুটি বাগান করেছি। এরই মধ্যে ৫০-১০০ টাকা দরে খুচরা কুল বিক্রয় করেছি। আমি আশাবাদী এ বছর ৩০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করতে পারব। রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বনরূপা বাজারের ফল ব্যবসায়ী সোনামনি চাকমা জানান, ক্রেতাদের কুলের প্রতি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা মূলত চাষীদের বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করি এবং শহরে এনে বিক্রি করি। অনেকেই অনলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুল পাঠাচ্ছেন। অনলাইনের মাধ্যমে পাহাড়ের মৌসুমি ফল বিক্রি করে থাকেন অনন্ত চাকমা। অনন্ত জানান, আমি অনলাইনের মাধ্যমে মৌসুমি ফল বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের চাহিদা অনুপাতে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিই। এখন মূলত পাহাড়ে উৎপাদিত আনারসের পাশাপাশি কুলের চাহিদা রয়েছে। কুলের মধ্যে মিষ্টি জাতের বল সুন্দরী কুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, যা আমরা খুচরা দামে ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের মৌসুমি ফলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এ তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমিতে কুল আবাদ হয়েছে, এর মধ্যে উৎপাদিত ফলের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮৮৬ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে ৩৪ হাজার ৮৭৬ টন উৎপাদন হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৮১ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ৩৯৯ টন উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমিতে ২২ হাজার ৮২০ টন উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন ও আবাদ হয় বান্দরবানে। সবচেয়ে কম উৎপাদন ও আবাদ হচ্ছে খাগড়াছড়িতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাঙ্গামাটিতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ টন। পাহাড়ের কৃষকরা কুলের ভালো দাম পাওয়ায় চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। দিন দিন চাষীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা মূলত কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পবন কুমার চাকমা বণিক বার্তাকে জানান, পাহাড়ে আগে থেকেই কুল আবাদ হচ্ছে। তিন জেলার মধ্যে বেশি আবাদ হয় বান্দরবানে। উৎপাদিত এসব কুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই যাচ্ছে। এখন তো ডিজিটাল যুগ। অনেকে অনলাইনের মাধ্যমে মৌসুমি ফলের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে কুলও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
বরিশালের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চলতি মৌসুমে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে চাষীরা তরমুজ বিক্রি করতে শুরু করেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় অনেকে ক্ষেত থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন পাকা তরমুজ। ফলন ভালো হওয়ায় এবার চাষীরা ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশাবাদী। উৎপাদন বেশি হওয়ায় এসব তরমুজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতেও পাঠানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় করোনা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন চাষীরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় এ বছর তিন হাজার হেক্টর তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরেই প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চাষীরা উৎপাদিত তরমুজ থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করতে পারবেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তরমুজের ক্ষেতে কাজ করছেন চাষী ও শ্রমিকরা। কেউ তরমুজ কাটছেন, কেউ স্তূপ করছেন। কেউ আবার বিক্রির উদ্দেশে তরমুজ ট্রলি-ট্রাকে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাইকারি ক্রেতারা মাঠে এসেই কিনছেন তরমুজ। তারা দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে যাবেন এসব তরমুজ। কেউ কেউ আবার আগাম ক্ষেত কিনে নিতে আসছেন। স্থানীয় তরমুজচাষীরা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছর প্রতি হেক্টর থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে। আগাম তরমুজ আবাদের মধ্য দিয়ে গত বছরের করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। মহামারী চলাকালীন নানা সংকট ও ঋণের বোঝা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. মনির হাওলাদার বলেন, প্রায় চার মাস আগে ১৫ একর তরমুজ চাষ শুরু করি। ক্ষেতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। পুরো ক্ষেতের তরমুজ ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। কৃষক মো. রাজ্জাক মুসল্লী বলেন, এ বছর আগাম তরমুজ চাষে ভালো ফলন হয়েছে। আড়াই একর তরমুজ চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। তরমুজ বিক্রি করে আমার প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। স্থানীয় বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী মো. কালাম বলেন, গত বছর করোনার প্রভাবে তরমুজ বাজারে বিক্রি করতে পারিনি। এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া মহামারী পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। এখন তরমুজের বাজারদর চড়া। আমরা চাষীদের কাছ থেকে গড়ে প্রতিটি তরমুজ ২০০-২৫০ টাকায় কিনছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, উপজেলায় এ বছর তিন হাজার হেক্টর তরমুজের চাষ হয়েছে। চাষীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্যে তরমুজ বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য কৃষকদের পাশে থেকে কৃষি কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন।
দিনাজপুরের হিলিতে চলতি বোরো মৌসুমে বাড়তি দামের আশায় জিরা সাইল ধানের আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু সে আসায় গুড়ে বালি। সম্প্রতি উপজেলায় আবাদকৃত ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ধানগাছে পচন দেখা দিয়েছে। ধানগাছগুলোর পাতা হলুদ হয়ে গোড়া পচে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা নানা ওষুধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও পচন ঠেকাতে পারছেন না। অজানা এ রোগের উপদ্রব কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ধানের বাজারে অস্থিতিশীলতা, বাড়তি আমদানি ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে কৃষকরা প্রায়ই ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বেশি লাভের আশায় উপজেলার কৃষকরা এবার উন্নত জাতের জিরা সাইল ধানের আবাদ করেন। কিন্তু ধানগাছে পচন দেখা দেয়ায় ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে উপজেলার অনেক কৃষক বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হবেন। অন্যদিকে এ জাতের ধান দেশে অনুমোদিত না হওয়ায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছেন না। তাই তারা এ ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালদার ও খট্টা মাধবপুর ইউনিয়নে পাতা ও গোড়া পচে ধানগাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ বেশি। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, জিরা সাইল ধান উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ব্যয় হয় ৮ থেকে সাড়ে ৮, ক্ষেত্র বিশেষে ৯ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ মণ ধান উৎপাদিত হয়। প্রতি বিঘা থেকে ফলন অনুপাতে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় উঠিয়ে আনাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। হিলির চেংগ্রাম গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, গত আমন মৌসুমে জিরা সাইল ধানের দাম বেশ ভালো ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই বাড়তি লাভের আশায় এবার তিন বিঘা জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ করি। কিন্তু সে ধানের গাছে অজানা এক রোগ দেখা দিয়েছে। ধানগাছের পাতা লাল বর্ণের হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ধানগাছ বাড়ছে না, শিকড়ও ছড়াচ্ছে না। ফলে দুশ্চিন্তায় আছি। একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ করেছি। কিন্তু ধান যেমন লাগিয়েছি ঠিক তেমনি রয়েছে, একটুও বাড়েনি। গাছের পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সার বিক্রেতাদের পরামর্শ নিয়ে জমিতে সার ও ওষুধ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কৃষক সাইদুল হোসেন বলেন, বাধ্য হয়ে জমির যেসব ধান গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে এবং মরে যাচ্ছে, সেগুলো শ্রমিকদের দিয়ে উঠিয়ে ফেলছি। লাভ তো দূরের কথা, আমরা যে খরচ করেছি তা উঠবে কিনা সে দুশ্চিন্তায় আছি। হিলির সাতকুড়ি বাজারের বীজ বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো আমরা কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছি। তবে এবারের বীজের সমস্যা ছিল। বিষয়টি কৃষি অফিসকে জানিয়েছি। তারা মাঠ পরিদর্শন করে ধানের গাছগুলো দেখে আবহাওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে। তাদের পরামর্শ মেনে আমরা কৃষকদের ওষুধ দিচ্ছি। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, এ উপজেলায় বেশকিছু অঞ্চলের কৃষক বিক্ষিপ্তভাবে এ জাতের ধান আবাদ করছেন। এ ধান রোপণের পর তারা অধিক পরিমাণ আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে ধানগাছের পাতা লালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। আমরা ধানগাছের নমুনা সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠাই। তাদের পরামর্শ মোতাবেক কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। বর্তমানে এসব জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, পাঁচ কেজি পটাশ ছিটানোর কথা বলছি। একই সঙ্গে জমিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে, তাহলে পানি সরিয়ে মাটি নিংড়ে দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কম ও দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানি বাড়ায় একদিনের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। পেঁয়াজ আমদানির এমন ধারা অব্যাহত থাকলে আসন্ন রমজান মাসে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে ভারত। সম্প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ায় ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে সাড়ে তিন মাস বন্ধের পর গত ২ জানুয়ারি পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপ ও দেশী পেয়াজের দাম কমের কারণে পড়তা না থাকায় ২৭ জানুয়ারি থেকে আবারো পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি আবারো দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কম ও দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ৪ মার্চ আমদানি শুরু হয়। বর্তমানে বন্দরে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ পাইকারিতে (ট্রাকসেল) ৩০-৩১ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ২৫-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, এছাড়া নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৬-৩৭ থেকে কমে ৩২-৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাউথের নতুন জাতের পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, দেশী কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের মূল্য নিশ্চিতে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ ও আমদানির আইপি প্রদান স্থগিত রাখা এবং পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসানের কারণে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। সম্প্রতি মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশের বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়ার কারণে মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আগের আইপির বিপরীতে আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন। দেশের বাজারে চাহিধার কথা বিবেচনা করে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা কমে গেছে। তবে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি প্রদানের বিষয়টি শিথিল ও সহজ করা হলে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি আরো বাড়বে। এতে আসন্ন রমজানে দেশে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলেও জানান তিনি। হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। আগে যেখানে দু-তিন ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হতো সেখানে গত বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে সাদ ট্রাকে ১৭৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। শনিবার ২৫ ট্রাকে ৬৮৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ১২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
নিষিদ্ধ মাদক মরফিন, আফিম ও হেরোইনের ব্যবহার কমাতে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই পপি সিড বা পোস্তদানার উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশেও কয়েক দশক ধরে পোস্তদানার আমদানি, ক্রয় ও বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের বীজ ঘোষণা দিয়ে প্রায় সময়েই দেশের কাস্টমস পার হয়ে আমদানি হচ্ছে পোস্তদানা। তাছাড়া মসলাজাতীয় পণ্য হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা পার্বত্য অঞ্চলেও পোস্তদানার চাষ হয় প্রকাশ্যে। নানামুখী বিধিনিষেধ সত্ত্বেও শীত মৌসুমের উৎসব-অনুষ্ঠান সামনে রেখে অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে পোস্তদানা। বাংলাদেশে পোস্তদানা ব্যবহার মসলা হিসেবে। মাংস রান্না কিংবা নিরামিষ সবজি রান্নায় পোস্তদানার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে রোজার মাস কিংবা শীত মৌসুমে বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির সময় পোস্তদানার চাহিদা বেড়ে যায়। কয়েক মাস আগেও পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পোস্তদানা ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সর্বশেষ এক মাসে পোস্তদানার দাম বেড়ে ৪ হাজার টাকায় ঠেকেছে, যা বর্তমান সময়ে জাফরানের পর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া মসলা পণ্য। মূলত আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় চোরাই পথে আমদানি ও মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি হওয়ায় পোস্তদানা ব্যবসায় অস্বাভাবিক লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত দুই দশক ধরে দেশে পপি সিড বা পোস্তদানা আমদানি নিষিদ্ধ। এর পরও সরিষা, তিসি কিংবা অন্যান্য শস্যবীজের ঘোষণায় দেশে পোস্তদানা আমদানি হয়। আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় পণ্যটি লুকিয়ে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে তিল কিংবা তিসির মতো বীজের সঙ্গে মিল থাকায় এটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের আড়ালে থেকে যায়। আবার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দেখতে একই রকম বীজ মিশিয়ে পোস্তদানা বিক্রি হচ্ছে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোয়। মসলা ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মরফিনের উপস্থিতি থাকায় সিঙ্গাপুরে আফিম গাছ থেকে প্রাপ্ত পোস্তদানা বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। পোস্তদানা দিয়ে সরাসরি মরফিন, আফিম কিংবা হেরোইন উৎপাদন না হলেও বীজ রোপণের মাধ্যমে আফিম তৈরির সুযোগ না দিতে পপি সিডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বে অনেক দেশেই এটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স সাতকানিয়া ট্রেডার্েসর স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, মসলাজাতীয় পণ্য হিসেবেই ব্যবসায়ীরা পোস্তদানা বিক্রি করেন। আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় পোস্তদানার দাম সবসময়ই বেশি থাকে। তবে শীত মৌসুমে বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি থাকায় চাহিদা ও দাম দুটোই অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের অভিযানের সময় কিছু প্রতিষ্ঠানে পোস্তদানা উদ্ধার হলেও অনেকটা প্রকাশ্যেই পোস্তদানার ব্যবসা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত বেশ কয়েকটি ত্রিবার্ষিক আমদানি নীতি আদেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য হিসেবে পোস্তদানার নাম রয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে ২১টি ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ‘আমদানি নীতি ২০১৮-২১’ অনুমোদন করে সরকার। সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি নীতি ২০১৮-২১ তিন বছর মেয়াদি এ আমদানি নীতি উপস্থাপন করা হলে তা পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দেয়া হয়। আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে মিথ্যা ঘোষণা ও সীমান্তপথ দিয়ে চোরাই পথে আসা ছাড়া দেশে পোস্তদানা প্রবেশের সুযোগ নেই। গত এক দশকে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও মোংলা পোর্ট দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পোস্তদানা আমদানি হলে সেটি কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় কাস্টমসের হেফাজতে রাখার পর সেগুলো ধ্বংস করা হয়। ২০০৮ সালে মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ২৪০ টন পোস্তদানা আমদানির সময় কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে। প্রায় চার বছর ধরে সেগুলো আটক থাকার পর ২০১২ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ওই পোস্তদানা ধ্বংস করে পোর্ট কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১১ সালে এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৬ টন পোস্তদানা সরিষা ঘোষণা দিয়ে আমদানির সময় চট্টগ্রাম কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে। ৪০০ টন সরিষার সঙ্গে ১৬ হাজার কেজি পোস্তদানা আমদানি হলে আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় সেগুলো আটকে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ঢাকার সোয়ারি ঘাটের মেসার্স তাজ ট্রেডার্স ও ইসলামপুরের মেসার্স আয়সা ট্রেডার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠান টেনিসবল ও ফোম স্প্রে ঘোষণা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আমদানি নিষিদ্ধ ৭২ টন নিয়ে পোস্তদানা আসার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়লেও অধিকাংশ সময়ই ফাঁকি দিয়ে পোস্তদানা আমদানি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে আমদানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও মসলা পণ্য হিসেবে পপি চাষ হচ্ছে। দেশের পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম এলাকায় পপি চাষ হচ্ছে পোস্তদানা হিসেবে বিক্রির জন্য। অধিক মুনাফার লোভে চাষীরাও পপি চাষ করছেন। বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী এসব পপি চাষ ধ্বংস করছে। সম্প্রতি জয়পুরহাটে পপি চাষের অভিযোগে পাঁচ কৃষককে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ৭ মার্চ সদর উপজেলার চারটি গ্রামে অবৈধভাবে চাষ করা পাঁচ একর জমিতে পপি চাষ করার অভিযোগ পাঁচ কৃষককে আটক করা হয়। আটকের পর অভিযুক্ত মসলা হিসেবে লাভজনক হওয়ায় পপি চাষ করেছে বলে দাবি করেছেন। এ সময় চাষকৃত জমির পপি গাছ ধ্বংস করে দেয়া হয়। ওই পাঁচ একর জমিতে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ পপি গাছ ধ্বংস এবং ১৬ লাখ ৯৪ হাজার আফিমবীজ জব্দ করে র্যাব। খাতুনগঞ্জে অনেকটা প্রকাশ্যে পোস্তদানা বিক্রি হলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আমদানিকারক একাধিক মসলা ব্যবসায়ী। তাদের দাবি, কিছু মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পোস্তদানা আমদানি ও বিক্রি করে। অন্যদিকে কিছু ব্যবসায়ী পোস্তদানার সঙ্গে অন্যান্য দেশীয় বীজ মিশ্রিত করে চড়া দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করেন। কাস্টমস ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানই পোস্তদানা আমদানি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত দুই মাসে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি হয়েছে ৮৭ হাজার টন। গত মঙ্গলবার সংসদে এ তথ্য উপস্থাপন করেন ভারতের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তমার। খবর ইকোনমিক টাইমস। খরিপ ও খরিপ-পরবর্তী শস্যের ভালো ফলনের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে গত ১ জানুয়ারি রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত সরকার। গতকাল লোকসভায় এক লিখিত জবাবে ভারতের কৃষিমন্ত্রী জানান, পেঁয়াজ রফতানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে ৫৬ হাজার ও ৩১ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে মাসে গড়ে ২ লাখ ১৮ হাজার টন করে পেঁয়াজ রফতানি করত ভারত। গত ডিসেম্বরে ভারতব্যাপী পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪৪ দশমিক ৩৩ রুপি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দাম কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৫৯ ও ৪৪ দশমিক শূন্য ৮ রুপি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানি করে ভারত। এর মাধ্যমে দেশটির আয় হয় ২ হাজার ৩২০ কোটি রুপি। চলতি মৌসুমে প্রাইস স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (পিএসএফ) আওতায় দুই লাখ টন পেঁয়াজ মজুদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। চলতি মাসে পেঁয়াজ তোলা শুরু হলে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে পিএসএফ। গত খরিপ মৌসুমেও এক লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ করেছিল এ তহবিলটি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত সেপ্টেম্বরে রফতানি নিষিদ্ধের পাশাপাশি এ পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধও শিথিল করছে ভারত সরকার। পেঁয়াজ আমদানি তদারকির জন্য ভারত সরকার ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনএএফইডি) নামে একটি সংস্থা গঠন করে। ভারতের কৃষিমন্ত্রী তমার জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর নাগাদ ৬৫ হাজার ৫৪৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে এবং ডিসেম্বর নাগাদ মান্ডিগুলোতে পেঁয়াজের দাম তলানিতে গিয়ে ঠেকে। খুচরা বাজারেও পেয়াজের দাম অনেক কমে যায় বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। এছাড়া ভারতের পেঁয়াজের অন্যতম বাজার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ এতে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভালো ফলনের ফলে বিদেশী পেঁয়াজের চাহিদা কমে যায় এবং বেশি দামে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসানের ঝুঁকি নেননি আমদানিকারকরা।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চাহিদা বৃদ্ধি ও আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে বাড়ছে চিনির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১২০ টাকা। রোজার মধ্যে চাহিদা বেড়ে গেলে দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের দেয়া তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশে চিনির দাম প্রতি মণে ৫০০ টাকা বেড়েছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদিন আগেও মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৭০ টাকায়। গতকাল একই মানের চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৯০ টাকায়। ডিলারদের নিষ্ক্রিয়তা, টিসিবির মাধ্যমে চিনি বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ডিলার-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারি চিনি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি মিলগুলো চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আসন্ন রমজান সামনে রেখে বেসরকারি মিলগুলোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে চিনির দাম। রমজান উপলক্ষে অসাধু ব্যবসায়ীরা চিনি মজুদ করে রাখছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যে দেখা গেছে, সর্বশেষ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) দেশে বেসরকারি খাতে চিনি আমদানি হয়েছে ৬০ হাজার ৩৩১ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার ৬৩৫ টন বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৫৭ হাজার ৬৯৫ টন চিনি আমদানি হয়েছিল ২২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। অথচ চলতি অর্থ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৬০ হাজার ৩৩১ টন চিনি আমদানিতে ২২৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সে হিসেবে গত এক বছরে দেশে চিনির দাম মণপ্রতি বেড়ে গেছে প্রায় ৫০০ টাকা। সরকারি চিনির দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা হলেও বর্তমানে বেসরকারি চিনির কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ৬৪ টাকা। মূলত সরকারি চিনির দাম কম থাকলেও বেসরকারি চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিএসএফআইসির বিক্রয় বিভাগ ডিলার-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অন্যায্যভাবে চিনি বিক্রি করে সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ডিলার ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে, সরকার চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ১ মার্চ পর্যন্ত বাকি নয়টি চিনিকলে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৬০ টন চিনি। এছাড়া আগের মজুদ ছিল ৫৬ হাজার ৩০ দশমিক ৯১ টন। ১ মার্চ পর্যন্ত ফ্রি সেল, ডিলার ও সরকারি সংস্থার কাছে চিনি বিক্রি করা হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৮৮৩ টন। সব মিলিয়ে সংস্থাটির কাছে বর্তমানে চিনির মজুদ আছে মাত্র ৪৮ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৪৯ টন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও মিলস রেশনের জন্য সংরক্ষিত আছে ১০ হাজার ৭৯৮ টন চিনি। সব মিলিয়ে চিনি শিল্প করপোরেশনের বিক্রয়যোগ্য চিনির মজুদ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৯৮ টনে, যা সার্বিকভাবে দেশে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বিএসএফআইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা গড়ে ১৫-১৭ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি মিল ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানীকৃত চিনিসহ দেড়-আড়াই লাখ টন চিনি সরবরাহ করে বিএসএফআইসি। কিন্তু ছয়টি সরকারি মিল বন্ধ থাকার পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় দেশে চিনির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া বিএসএফআইসির নিজস্ব প্রায় চার হাজার ডিলারের কাছে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খোলাবাজারে দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে কয়েক হাজার ডিলার থাকলেও তারা চাহিদামতো চিনি পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ডিলাররা লোকসানে থাকলেও বর্তমানে দেশে চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি চিনি মিলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়া, চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব ছাড়াও ডিলার-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের কাছে চিনি বিক্রির কারণে দেশে চিনির দাম নিয়ে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
দুগ্ধপণ্যের দাম অব্যাহত বেড়েই চলছে। সর্বশেষ গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড (জিডিটি) নিলামে দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ, যা সাত বছরের সর্বোচ্চ। খবর নিউজহাব। সর্বশেষ নিলামে টনপ্রতি দুগ্ধপণ্যের দাম ছিল ৪ হাজার ২৩১ ডলার। নিউজিল্যান্ডের খামারিদের উৎপাদিত ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের দাম সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩৬৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মাখনের দাম ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৫ হাজার ৮২৬ ডলার। অন্যদিকে ঘির দাম ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৫ হাজার ৯২৯ ডলার। ল্যাকটোজের দাম ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ১ হাজার ২৭৮ ডলার। ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩০২ ডলার। চেডার পনিরের দাম ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮০ ডলার। দুগ্ধপণ্যের মধ্যে একমাত্র বাটার মিল্ক পাউডারের দাম কমেছে। গত নিলামে পণ্যটির দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪৪ ডলার। সর্বশেষ নিলামে মোট ২৫ হাজার ৫৫৪ টন দুগ্ধপণ্য রফতানি হয়েছে। এ নিয়ে টানা আট মাসের মতো দুগ্ধপণ্যের দাম বাড়ল।
দেশের বাজারে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে তেঁতুলের বিচি আমদানি হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে এক চালানে ভারত থেকে ৯০...
বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীল থাকার পরে সরবরাহ কমার অজুহাতে আবারো দিনাজপুরের হিলিতে দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুদিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। দুদিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৪-২৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৩৫-৩৬ টাকা হয়েছে। তবে দু-একটি দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা, দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম ও সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজের দাম ২০-২৫ টাকার মধ্যে ছিল। তবে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছে। দুদিন আগেও যেখানে পেঁয়াজ কিনেছি ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে, সেই পেঁয়াজ আজ কিনতে এসে শুনি ৩৫-৩৬ টাকা হয়ে গেছে। হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা ফিরোজ হোসেন ও শেরেগুল ইসলাম জানান, পাবনা অঞ্চলে কৃষকরা যে তোরা পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন, সেটির উৎপাদন কম হওয়ার কারণে মোকামে পেঁয়াজ সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদামতো পেঁয়াজ না পাওয়ায় পাবনার মোকামে দুদিন আগে যে পেঁয়াজ প্রতি মণ ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছিল, এখন সেটি বেড়ে ১ হাজার ৪০০-৫০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হওয়ায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশী জাতের পেঁয়াজ ৩৫-৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমতে পারে বলেও জানান তারা। হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারত রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে সাড়ে তিন মাস বন্ধের পর গত ২ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। তবে দেশের বাজারে দেশী পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম কম হওয়ায় পেঁয়াজ আমদানি করে লোকসান হচ্ছিল। এ কারণে ২৭ জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। সম্প্রতি দেশের বাজারে দরবৃদ্ধি পাওয়ায় ৩৬ দিন বন্ধের পর ৪ মার্চ বন্দর দিয়ে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। তিনি জানান, ওইদিন বন্দর দিয়ে এক ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। এরপর ৭ মার্চ দুই ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়, যা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। চাহিদা থাকায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। তবে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়াতে এবং আসন্ন রমজানকে ঘিরে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া উচিত বলেও জানান তিনি।