এগ্রোবিজ
শ্যাওলা বা জলজ উদ্ভিদই কী ভবিষ্যতের সুপারফুড? নাকি অস্বাভাবিক খাদ্য ফ্যাশন?
বাজার গবেষকরা বলছেন বহু মানুষ সুপারফুডের জন্য অগ্রিম অর্থ দিতে আগ্রহী…কিন্তু আপনি কি আসলেই শ্যাওলা খাবেন?
তবে চিন্তার কারণ নেই, আপনাকে নিজে পুকুর বা বদ্ধ পানি থেকে শ্যাওলা তুলে আনতে হবেনা।
বরং এটি আপনার কাছে আসবে উজ্জ্বল সবুজ কাপ কেক বা স্মুদি হিসেবে, যেখানে অবশ্যই ডিপ ওশ্যান ব্লু শেড থাকবে।
মনে রাখতে হবে এসব যখন ঘটবে তখন বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে আটশ কোটিতে।
কিন্তু ক্ষুদে শ্যাওলার কি বাড়ন্ত জনসংখ্যার খাবার সরবরাহে সহায়তা করতে পারবে অথবা এটি কী আরেকটি অস্বাভাবিক খাদ্য ফ্যাশনে পরিণত হবে।
মাইক্রো অ্যালজি ও সায়ানো ব্যাকটেরিয়া কী?
মাইক্রো অ্যালজি ও সায়ানো ব্যাকটেরিয়া আসলে জলজ উদ্ভিদ ও এক ধরনের ক্ষুধে শ্যাওলা।
মাইক্রো অ্যালজি এক কোষী, যা লবণাক্ত বা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয় এবং সূর্যের আলো থেকে সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে যা তাদের জীবনীশক্তি তৈরি করে।
অন্যদিকে সায়ানোব্যাকটেরিয়াও জলজ এবং সবুজ এই চারাগুলোও সূর্যের আলো থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে।
তবে মাইক্রো অ্যালজি ও সায়ানোব্যাকটেরিয়ার এই আলোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন।
বিশ্বজুড়ে মাইক্রো অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জগুলোর অনেক প্রজাতি আছে, কিন্তু ক্লোরেলা ও স্পিরুলিনা এখনি উৎপাদন হয় এবং খাদ্যে ব্যবহৃত হয়।
ইনস্টাগ্রাম সেনসেশন
কয়েক বছর আগে #স্পিরুলিনা সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশনে পরিণত হয়েছিলো।
লাখ লাখ মানুষ ‘মারমেইড স্মুদি’ এবং ‘ওশ্যান বোলস’ এর ছবি শেয়ার করেছিলো।
কারো কারো কাছে এটা ছিলো নতুন সুপারফুড।
স্পিরুলিনার ট্যাবলেট ও পাউডার এবং ক্লোরেলা ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও প্রোটিন সহকারে প্যাকেট জাত করে বাজারজাত করা হচ্ছিলো।
লন্ডনের প্যাডিংটনের কাছ ইয়েটাউন কিচেনে স্পিরুলিনা ও ক্লোরেলা রান্নায় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেখানেই আপনি পেতে পারেন গ্রিন স্পিরুলিনা পালেও কুকি, দুগ্ধজাত দ্রব্যমুক্ত আইসক্রিম, গ্রিন স্পিরুলিনা এনার্জি বলস এবং ব্লু স্পিরুলিনা চিজকেক।
তবে এগুলো দেয়া হয় স্টার্টার হিসেবে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট সায়েন্সেসের প্রফেসর আলিসন স্মিথ। তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জ বিষয়ক বিজ্ঞানী।
তিনি বলছিলেন কীভাবে আগে থেকেই জলজ উদ্ভিদ খাওয়ার প্রচলন হয়েছে।
“মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নীল সবুজ শ্যাওলা খাচ্ছে। কয়েক শত বছর আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ তাদের পুকুর থেকে নিয়ে স্পিরুলিনাকে খাবারে সংযোজন করে আসছে।”
তাহলে লাভটা কোথায়?
মাইক্রো অ্যালজিতে উঁচু মাত্রার প্রোটিন আছে যা মাংসের বিকল্প হতে পারে।
এ মূহুর্তে এখন অল্প পরিসরে খাদ্যে সংযোজন করা হলেও এর একটি স্বাস্থ্যগত কৌশল আছে।
তবে অ্যান্ড্রু স্পাইসার, সিইও অফ আলজেনুইটি, ক্লোরেলা ভালগারিস ডিমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে চান, বিশেষ করে কেক ও পাস্তায়।
স্পিরুলিনা ব্যবহৃত হতে পারে ম্যায়োনিজের বদলে, কারণ এটি অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো।
অসুবিধাগুলো কোথায়
স্পিরুলিনার গন্ধ ও স্বাদটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
শেফ সাইমন পেরেজের মতে এটায় মাছ ও লোহার মিশ্রণের মতো একটি গন্ধ আছে।
আর এটার রংয়েও কিছুটা সমস্যা আছে।
তবে মাইক্রো অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জের স্বাস্থ্য সুবিধা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে।
স্পিরুলিনা ও ক্লোরেলায় উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন আছে।
তবে তাদের পুষ্টিগুণ নিয়ে যে দাবি করার হয় তা বিজ্ঞান দ্বারা এখনো সমর্থিত নয়।
পুষ্টিবিদ রিয়ানন ল্যামবার্ট বলছেন, “স্পিরুলিনায় ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এটা উদ্ভিদ ভিত্তিক খাবারের চেয়ে ভালো অ্যামিনো অ্যাসিড প্রোফাইল আছে।”
জলজ উদ্ভিদে ওমেগা-৩ আছে। মাছের চেয়ে এ উৎসটি অনেক বেশি সহজলভ্য।
এতে আছ ভিটামিন বি১২ যা এনার্জি মেটাবোলিজম এবং আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের জন্য খুবই দরকারি।
তবে এই বি১২ কতটা কাজ করে তা নিয়ে সংশয় আছে রিয়ানন ল্যামবার্টের।
এটি হজম হয় কিনা বা অন্য সূত্র থেকে পাওয়া বি১২ এর মতো কাজ করে কি-না তা নিয়েও সংশয় আছে।
মাইক্রো অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জই ভবিষ্যৎ খাবার
কিছু নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও এর অনেক ইতিবাচক দিক আছে।
জনসংখ্যা যেহেতু বাড়ছে এবং কৃষিজমি কমছে তাই উৎপাদন বাড়ানোর নতুন দিক উন্মোচন করতে হবে।
প্রোটিনের অন্য সব উৎসগুলোর মতো জলজ উদ্ভিজ্জের জন্য বেশি কৃষি জমির দরকার হবেনা।
“এগুলো সব জায়গায় হতে পারে। পানি, সাগর, পুকুর, লেক..যে কোনো জায়গায়।”
এগুলো হতে পারে শহর ও বন্দরে।
এমনকি এটি হতে পারে মহাকাশেও, দীর্ঘ মেয়াদে মঙ্গল অভিযাত্রায় যাওয়া নভোচারীদের খাদ্য হিসেবেও এটি দেয়া যেতে পারে।
পুকুরের শ্যাওলা হতে পারে স্বাদের খাবার
আলজেনুইটি অবশ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দুর করার চেষ্টা করছে যাতে করে সুন্দর রং ও স্বাদের খাবার হয় শ্যাওলা বা জলজ উদ্ভিজ্জ থেকে।
এর সিইও অ্যান্ড্রু বলছেন খাদ্যের নতুন সুযোগের দিকে দৃষ্টি দেয়ার এটাই সময়।”
এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি

বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।



বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।

বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়

বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।

বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।

আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।

সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
এগ্রোবিজ
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।

রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।

তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।
পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।

খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

এগ্রোবিজ
পাঁচ লাখ টন মজুদ থাকার পরও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন
দুই সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কাঁপুনি ধরিয়েছে ক্রেতার পকেটে। গত মাসের শেষ দিকে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা থাকা নিত্যপণ্যটি দাম বেড়ে এখন ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ক্রেতা। খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন দেশে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী তিন মাস চাহিদা মেটানো যাবে।
পেঁয়াজই নয় শুধু, দাম বৃদ্ধির দৌড়ে আছে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ আরও কয়েকটি নিত্যপণ্য। অল্প দিনের ব্যবধানেই দফায় দফায় বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি এক প্রতিবেদনে বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একমাসে প্রায় ১৯.৬৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। একমাসের ভেতর দ্রব্যমূল্যের দাম এর আগে কখনোই এতটা বাড়তে দেখা যায়নি বলেও দাবি সংস্থাটির।
প্রশ্ন উঠেছে, তিন মাসের পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও কেন বাড়ছে দাম? যেখানে মধ্য সেপ্টেম্বরেও সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ছিল পেঁয়াজের কেজি সেখানে গত দুই সপ্তাহ ধরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা ছাড়া মিলছে না নিত্যপণ্যটি। অবশ্য পেঁয়াজের দাম আপাতত আর বাড়বে না বলেই অভয় দিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারে অনুরোধও জানানো হয়েছে।
সোমবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এক সভায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে এই মুহূর্তে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে।’
পেঁয়াজসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি যাতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যতদিন পর্যন্ত আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ না হবো, ততদিন পর্যন্ত কখনো কখনো আমাদের মূল্য নিয়ে ক্রাইসিসে পড়তে হবে।’
যদিও পেঁয়াজের দাম কবে নাগাদ সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিব বলতে পারেননি। অবশ্য আরেক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম সত্যিই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। তাই কথা বলার চেয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা যায় সেদিকে মন দিতে হবে দায়িত্বশীলদের।’
দুদকের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আমরা বারবার বলে আসছি। বিশেষ করে পেঁয়াজ নিয়ে এমন কিছু হবে এটা অনেকেই আশঙ্কা করেছিল। উচিত ছিল ভারত ছাড়া অন্য উৎসগুলো থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ আমদানি নিশ্চিত করা।’
পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস প্রতি বছরই ওঠে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। দফায় দফায় বেড়ে তখন পণ্যটির দাম কেজি প্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছয়। তবে বিকল্প উৎস থেকে সরকারি ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আমদানি করে সেবার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
দুই সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কারণ নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর ভাষ্য, পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে সেই এপ্রিল মাসে, এত দিন পর্যন্ত পেঁয়াজ থাকে না। তাই কৃষকেরা সব বিক্রি করে দেন। পেঁয়াজ পচনশীল ও মজুদ রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আর একারণে মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে দাম কমার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসার পরপরই আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কিছুটা ভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ না হবো, ততদিন পর্যন্ত কখনো কখনো আমাদের মূল্য নিয়ে ক্রাইসিসে পড়তে হবে। এছাড়া বৃষ্টিজনিত কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে সব ধরণের চেষ্টার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ছাড়া মিয়ানমার থেকে যদি পেঁয়াজ আনা যায়, তাহলে কিন্তু এত প্রেশার (চাপ) পড়ার কথা না। গত বছরের তুলনায় এবছর অন্তত এক লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়েছে।’ শুধু পেঁয়াজ নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ১৭টি পণ্য রয়েছে সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি মনিটর করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয় জানিয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে সেখানকার বাজারে দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, সেটার প্রভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিছু ভারতের দাম বাড়ার জন্য এবং কিছু আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিন মাসের পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, মন্ত্রী হয়তো ধারণা করে বলেছেন। যে পেঁয়াজ আছে সেটা তো কৃষকের ঘরে। এখন কৃষক কয় টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করবে সেটা তার বিষয়। এজন্য বিপদের আগেই স্বল্প মেয়াদে একাধিক উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনশীলতাও বাড়াতে হবে।
এগ্রোবিজ
ভোজ্যতেলের দাম ফের বাড়ছে
প্রতি লিটার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি, আমদানি ও দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ওনাদের (তেল ব্যবসায়ী) প্রস্তাব ছিল বোতলজাত লিটারপ্রতি তেল ১৬৮ টাকা করার। ট্যারিফ কমিশন একাধিকবার বসে অ্যানালাইসিস করে ১৬২ টাকা প্রস্তাব করেছে। এটা ছিল সেপ্টেম্বর মাসের অ্যাভারেজ রিপোর্ট। আজ দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ঠিক করা হয়েছে ১৬০ টাকা, যেটার আগে দাম ছিল ১৫৩ টাকা।
বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১২৯ টাকা। ৭ টাকা দাম বাড়িয়ে ১৩৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ৫ লিটারের বোতল ৭২৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬০ এবং পাম তেল ১১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৯ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রস্তাব বাণিজ্য সচিবের কাছে উপস্থাপন করা হবে উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দাম চূড়ান্ত করে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে তেল ব্যবসায়ীরা তাদের প্যাডে এটি ঘোষণা করবেন।
পেঁয়াজের বাজার অস্থির ছিল উল্লেখ করে অতিরিক্ত সচিব বলেন, গত এক সপ্তাহে আমরা স্পেশাল ফোকাস দিয়েছি। আল্লাহ রহম করেছেন, পেঁয়াজের বাজারটা মোটামুটি ভালো পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি।
চিনির রেগুলেটরি ডিউটি কবে থেকে কার্যকর হচ্ছে তা এসেসমেন্ট করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন