লাইভস্টক
চাকরি হারিয়ে কোয়েল চাষ করছেন ঢাবি ছাত্র

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকটা শখের বশেই বাড়িতে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহাবুবুল আলম নাঈম।
মাত্র নয় মাস যেতে না যেতেই তিনি দেখেন লাভের মুখ। এরপর পৌর শহরের সিকদার সড়ক এলাকার নিজবাড়িতে গড়ে তোলেন নূর জাহান লাইভস্টক অ্যান্ড এগ্রো নামের একটি খামার।
শুধু কোয়েল পাখি নয় তার খামারে রয়েছে দেশি হাঁস, মুরগি ও কবুতর। পাশাপাশি নিজের পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করছেন তিনি। তবে কোয়েল পাখি পালন লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলেন খামার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযোগী। কোয়েলের মাংস ও ডিম মুরগির মাংস ও ডিমের মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি গৃহপালিত পাখি। কোয়েল পাখির আদি জন্মস্থান জাপানে। পরবর্তীতে এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
কোয়েল খামারি মাহাবুবুল আলম নাঈম বলেন, মাত্র নয় মাস আগে নরসিংদীর একটি খামার থেকে ৬০০ কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে আনি। তখন অনেকেই বলেছে বাচ্চাগুলো বাঁচবে না, মারা যাবে। তাদের কথা শুনে অনেক কষ্ট হয়েছিল তখন। যখন বাচ্চাগুলো একটু বড় হতে শুরু করেছে তখন খুশিতে মনটা ভরে যায়। ধীরে ধীরে বড় হয় বাচ্চাগুলো সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে বড় হয় আমার স্বপ্নগুলো। একপর্যায়ে বাচ্চাগুলো বড় হয়ে ডিম পাড়া শুরু করে। তখন আমার কষ্ট দূর হয়ে যায়।
মাহাবুবুল আলম নাঈম বলেন, প্রথমে বাচ্চাগুলো কিনতে আমার সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমার খামারে ১২০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ডিম দেয়। ডিমগুলো স্থানীয় বাজারে ২ টাকা পিস বিক্রি করি। সেই হিসাবে আমার প্রতিদিন আয় ১৬০০ টাকা। মাস শেষে দেখা যায়, কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে আমার আয় হয় ৫০ হাজার টাকা।
নাঈম আরও বলেন, দিন দিন কোয়েল পাখির ডিম ও মাংসের চাহিদা বাড়ছে। কম পুঁজি নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়। কোয়েলের আকার ছোট বলে এদের লালন-পালনের জন্য জায়গাও কম লাগে। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০ থেকে ১২টি কোয়েল পাখি পালন করা যায়। এই পাখির রোগব্যাধি নেই বললেই চলে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। এরা ৩৬৫ দিনে ৩২০ ডিম দেয়।

নাঈমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন মাহাবুবুল আলম নাঈম। এরপর একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে প্রজেক্টের আওতায় চাকরি করেন। পরে বেকার হয়ে যান নাঈম। কিছুদিন পর বাজার থেকে শখের বসে দুটি কোয়েল পাখি কিনে লালন-পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথায় আসে, অধিকহারে এই পাখি পালন করলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। সেই থেকেই তার পথ চলা শুরু। এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকানুল ইসলাম বলেন, নাঈমের কোয়েল চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই পাখির ডিম ও মাংস পুষ্টিকর হওয়ায় এলাকার অনেকে খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যান। এছাড়া দামও খুব কম। আমার মতে, কোয়েলের খামার করে বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কোয়েলের ডিম ও মাংসে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। কোয়েলের ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে নাঈম তার খামারের বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে কোয়েল পালন করা যায়। এর মাংস, ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ কারণে দিন দিন কোয়েল পালনে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।
লাইভস্টক
মুরগির এইডস রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ভাইরাসের আক্রমণ। মানুষের অতিপরিচিত ভাইরাস জনিত রোগ এইডস। ঠিক মুরগিরও এরকম একটি রোগ রয়েছে যাকে বলে গামবোরো। এই রোগে আক্রান্ত মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শূন্যে পৌঁছে। ফলে মুরগি মারা যায়। আসুন জেনে নিই মুরগির এইডস গামবোরো রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি।
গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ব্রয়লার, কক, সোনালী ও লেয়ার মুরগি মারা যায়। তাই এ রোগের মুরগির মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত ফ্লক ইম্যুনোসাপ্রেশনে ভোগে। আর তাই এ রোগকে মুরগির এইডস বলা হয়। আর এ ধরনের ফ্লক থেকে কখনই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না।

রোগের লক্ষণ
গামবোরো রোগের কিছু কমন লক্ষণ হলো পানি না খাওয়া, খাদ্য না খাওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা ও প্রতিকার
এন্টিবায়োটিক হিসেবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১০% ব্যবহার করা যায়। এটি রক্তে তাড়াতাড়ি মিশে আর শরীরে থাকেও দীর্ঘক্ষণ। ফলে দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যায়। ১ লিটার পানিতে ১ মিলি পরপর ৩-৫ দিন সবসময়ের জন্য পানিতে দিতে হবে। যে কোনো ভালো অর্গানিক এসিড কোম্পানি নির্দেশিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্গানিক অ্যাসিডগুলো কিডনি হতে ইউরেট দূর করতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।
লাইভস্টক
কম খরচে ছোট আকারে ডেইরী ফার্ম করার কৌশল

অনেকে প্রশ্ন করেন একটা ডেইরী ফার্ম শুরু কিভাবে করা যেতে পারে। পকেটে টাকা থাকলে একটা ফার্ম শুরু করা কোন ব্যাপারই না। কিন্তু ফার্ম শুরু করার আগে ও পরে যে ব্যাপারগুলো বিবেচনা করা দরকার যা খুবই গুরুত্তপুর্ন। উদাহারন স্বরুপ, ফার্ম এর জায়গাটা কোথায়, সেখানে ডাক্তার, গরুর খাবার, দুধের দাম, দুধ বিক্রি খুব সহজে করা যায় কিনা তা জানতে হবে। এসবের পাশাপাশি অনেকে জানতে চান ফার্ম টা কি রকম হবে, কয়টা গরু দিয়ে শুরু করলে ব্যবসাটা লাভবান হতে পারে আজকের এই লেখাতাদের জন্য। এই লিখা তাদের জন্য যারা খুব ছোট আকারে, একেবারে কম খরচে পাইলট প্রোজেক্ট আকারে শুরু করে বুঝতে চান অথবা যাদের বাজেট কম।

পরিকল্পনা এবং কৌশল: বাজেট টাকা ৩৮০,০০০/- এবং কমপক্ষে ১৫ লিটার দুধের গরু (বাছুর সহ) ২ টা। গোয়াল ঘর: ৩০ ফিট বাই ১৫ ফিট, ইলেক্ট্রিক আর পানির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। আসুন এখন হিসেব নিকাশ এ আসা যাক।
এককালীন খরচ: ২ টা দুধের গরুর দাম : ৩০০,০০০/- গোয়াল ঘর : ৬০,০০০/- ইলেক্ট্রিক/ পানি : ২০,০০০/- মাসিক আয়-ব্যায়ের হিসাব: #দুধ বিক্রি থেকে আয়: ২০ লি: x ৫০ = ১০০০ টাকা প্রতিদিনের আয়। তাহলে মাসিক আয়: ১০০০ x ৩০ = ৩০০০০ টাকা। (দুধ ২০ লিটার দেখানো হয়েছে কারন একটা ১৫ লিটার দুধের গরু ৮ মাসই ১৫ লিটার দুধ দেবেনা, ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, তাই গড়পড়তা ১০ লিটার প্রতিদিন দেখানো হয়েছে)

মাসিক ব্যয়: কর্মচারীর মাসিক বেতন: ৭০০০ টাকা, গরু প্রতি খাবার খরচ: ১৫০ টাকা প্রতিদিন, তাহলে মাসিক খরচ: ৯০০০ টাকা। মেডিসিন এবং অন্যন: ২০০০ টাকা। তাহলে মোট ব্যয়: ১৮,০০০ টাকা। (গরু যত বেশি হবে ১ জন করমচারীর বেতন বাবদ গড়পড়তা খরচ অনেক অনেক কম হবে)।

মাসিক লাভ: ৩০০০০-১৮০০০= ১২,০০০ টাকা।এককালীন উপরের ৩৮০,০০০ টাকা খরচগুলো উঠে আসতে সময় লাগবে ৩১ মাস বা ২ বছর ৭ মাস। কৌশলগত ভাবে এই মাসিক আয় কে ধরে রাখতে আপনাকে ৮ মাস পরে আবার ২ টা দুধের গরু কিনতে হবে ২য় পদক্ষেপে। তাহলে আপনি একটা সার্কেল এর মধ্যে পরে যাবেন এবং কখনই আপনাকে পকেট থেকে টাকা খরচ করে খাবার খরচ আর বেতনাদি পরিশোধ করতে হবেনা। আর বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখ যা আমাদের নিয়ন্ত্রিত নয় তা এখানে দেখানো হয়নি।
২.৫ বছর পর আপনার ব্যলান্সসিট কেমন হবে? আপনার সম্পদের পরিমান কত হবে (মানে কতগুলো গরু আছে এবং তার মুল্য কত), এটা বোঝা খুবই গুরুত্তপুর্ন। যদি বের করতে পারেন, ডেইরী ব্যবসা কেমন হবে তা আপনারাই বুঝতে পারবেন, সিধান্ত আপনারাই নিতে পারবেন। আপনারা যারা ডেইরী ব্যবসা শুরু করতে চান, আমার অনুরোধ আপনারা সম্পদের পরিমান হিসেব করে এখানে কমেন্টে লিখে জানাবেন। আপনাদেরই উপকার হবে।
লাইভস্টক
জেনে নিন পুকুরে সহজ উপায়ে হাঁস পালন পদ্ধতি

গ্রামীণ অর্থনীতিতে হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা | প্রথম দিকে ছোট আকারের খামার করা ভালো। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক আকারে খামার করা যেতে পারে। ডিম পাড়ার জন্য লেয়ার হাঁস পালন করতে হয়। এগুলোর মধ্যে খাকি ক্যাম্বল, ইন্ডিয়ান রানার, দেশি পাতি হাঁস উল্লেখযোগ্য। মাংসের জন্য অন্যান্য প্রজাতির হাঁস পালন করতে হয়।
ছোট হাঁসের বাচ্চা দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে দুই বার পানিতে ছাড়তে হবে। হাঁসের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রতি লোভ বেশি থাকায় সব সময় পানিতে থাকতে চায়। বাচ্চা হাঁসকে বেশি সময় পানিতে রাখা যাবে না সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। পূর্ণবয়স্ক হাঁস দিনে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে সাতার কাটাতে পারে |

খাদ্য
খাবার শুকনো অবস্থায় খাওয়ালে অবশ্যই সঙ্গে পানির পাত্র রাখতে হবে। বাচ্চা হাঁস খাবার মুখে পুরেই পানির সাহায্যে গিলে ফেলে। এ সময় বাচ্চা হাঁস সাবলীলভাবে বেড়ে উঠবে। পরবর্তীতে নিজেদের তৈরি করা খাদ্য খাওয়ানো যাবে। তৈরিকৃত খাদ্যে উপাদান সঠিকভাবে থাকায় বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিক মতো হয়। নিজেদের তৈরিকৃত হাঁসের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান থাকা আবশ্যক তা হলো ধান, চাউলের কুড়া, চাউলের খুদ, গম ভাঙা, গমের ভুষি ইত্যাদি।


এসব দ্রব্য ভালোভাবে মিশিয়ে হাঁসকে খেতে দিতে হবে। তাছাড়া শামুক, ঝিনুক ভেঙে খাওয়ানো যায়। ছোট বাচ্চাকে শামুক-ঝিনুক খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়ানো যেতে পারে। উন্নত জাতের হাঁসের খাদ্য চাহিদা কম। এরা সাধারণত ১৬০-১৮০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন খেয়ে থাকে। হাঁসের দিনের খাবার তিন ভাগে ভাগ করে সকাল, দুপুর ও বিকেল বেলা দিতে হবে। গৃহপালিত হাঁসকে নির্দিষ্ট সংকেতে ডাক দিলে তারা খাবার খেতে চলে আসে। আবার প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট সময় খাবার দিলে ঠিক ওই সময় তারা খাবার খেতে চলে আসবে। হাঁসের বাচ্চা পরিপূর্ণ হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে মাছের পোনা ছাড়তে হলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ছোট মাছের পোনা হাঁস ধরে ফেলে বা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মতো পূর্ণবয়স্ক হাঁসকে বদ্ধ অবস্থায় পালন করা যেতে পারে।

ডিম সংগ্রহ
সব জাতের হাঁসি সাধারণত ২২-২৩ সপ্তাহের মধ্যে ডিম পাড়া আরম্ভ করে। ডিম পাড়া শুরুর পূর্বে হাঁসিকে সঠিকভাবে খাদ্য দিতে হবে। যদিও ডিম পাড়ার ১৫ দিন আগে থেকে তাদের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ডিম পাড়া অবস্থায় তাদের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ডিম পাড়া অবস্থায় হাঁসিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের জোগান দিতে পারলে দীর্ঘদিন ধরে ডিম পাওয়া যায়। হাঁসি সাধারণত খুব সকাল বা সকালের দিকে ডিম পাড়ে। এজন্য হাঁসিকে খুব সকালে ঘর থেকে ছাড়া যাবে না। একটু দেরি করে ছাড়তে হবে নতুবা পানির মধ্যে ডিম পাড়ার প্রবণতা দেখা যাবে।
প্রথম অবস্থায় হাঁসির ডিম একটু ছোট আকারের হলেও পরবর্তীতে তা স্বাভাবিক আকারের হয়ে যায়। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে বড় ও ওজন বেশি হয়। সকালের ডিম সংগ্রহ করার সময় খাদ্য খেতে দিতে হবে। ডিম সংগ্রহের পর ওই ডিমে বিষ্ঠা লেগে থাকলে তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কোন হাঁসি ডিম না পাড়ে সে ক্ষেত্রে ওই হাঁসিটি চিহ্নিত করে ঝাঁক থেকে বাদ দিতে হবে।
এজন্য হাঁসির সংখ্যা ও ডিম উৎপাদন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। হাঁসি ডিম পাড়বে কি পাড়বে না তা হাত দিয়ে ডিমের থলি পরীক্ষা করে বোঝা যায়। শুধু ডিমের জন্য হাঁস পালন করলে ওই হাঁসের সঙ্গে কোন পুরুষ হাঁস রাখার দরকার নেই। কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর প্রয়োজন হলে ৭-৮টি হাঁসির জন্য ১টি হাঁসা (পুরুষ হাঁস) পালন করতে হবে।
লাইভস্টক
গরুর দুধ জ্বরের লক্ষণ, করণীয় ও চিকিৎসা

উন্নত জাতের গাভী এবং উচ্চ দুধ উৎপাদনে সক্ষম গাভী বাচ্চা প্রসব করবে অথবা করেছে। এমন অবস্থায় খামারীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন তার গাভী বাচ্চা প্রসব করার পরে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারছে না। মনে হচ্ছে যেন মারা গেছে, হাত পা ছেড়ে দিয়েছে। তখন দ্রুত অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের স্বরনাপন্ন হয়। পরে চিকিৎসায় গাভী সুস্থ হয়ে উঠে। এই রোগের নাম মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধ জ্বর। এটিই কেবল মাত্র একটি রোগ যার নামেই ফিভার (জ্বর) উল্লেখ্য আছে কিন্তু আসলে এই রোগে কোন জ্বর দেখা যায়না। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই রোগ খুবই পরিচিত। বিশেষত যারা উন্নত জাতের এবং ভালো মানের সংকর জাতের গাভী লালন পালন করেন। প্রতিবার বাচ্চা প্রসবের সময় বা আগে পরে না হলেও প্রায়ই ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়। যার কারণে কিছু মানুষ গাভী পালনে ভয় পায়। এই রোগ একটি মেটাবোলিক রোগ, যা সাধারনত ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত কারনেই হয়ে থাকে।
রোগের কারনঃ এটা পুষ্টি উপাদান ঘাটতি জনিত রোগ। শরীরের সঠিক ভাবে কার্য সম্পাদন করতে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন তার অভাব হলে এই রোগ হয় । বাচ্চা প্রসবের সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় অনেক বেশি পরিমাণে। যার কারনে গাভী হঠাৎ পড়ে যায় এবং ঘাড়ের মাথা দিয়ে বসে থাকে।
রোগের কারনঃ
ক) রক্তে ক্যালসিয়াম কমে গেলে এই রোগ হতে পারে। সাধারনত ১০০ সি সি রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান থাকতে হয় ৯ মিলিগ্রামেরও বেশি। কোন কোন বিশেষ কারণে এই মাত্রা উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে যেতে পারে, এমনকি তা ৩/৪ মিলিগ্রামে নেমে আসে। আর তখনই এই রোগের সৃষ্টি হয়।
খ) বাচ্চা প্রসবের সময় জরায়ুতে যদি ফুল আটকে থাকে বা কোন কারনে যদি জরায়ু বাইরের দিকে চলে আসে, কিংবা জরায়ুর কোন স্থানে যদি বাচ্চা আটকে থাকে ,তাহলেও এই মিল্ক ফিভার হতে পারে।
গ) কিছু হরমোনের বৈরি কার্যক্রমের কারনেও হতে পারে। যেমন এড্রেনালিন গ্রন্থির রস নিঃসরণের তারতম্যের কারণেও এই রোগ হতে পারে।
ঘ) গাভীর দেহে বিভিন্ন খনিজের ঘাটতির ফলে স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ার জন্যেও এই রোগ হতে পারে।
ঙ) বাচ্চা প্রসবের পর পালান একবারে খালি করে দুধ দোওয়া হলেও এই রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
গাভী গর্ভকালীন সময়ে নিজের রক্ত থেকে ক্যালসিয়াম বাচ্চার( ফিটাসের ) দেহে পাঠায়। প্রায় প্রতি ঘন্ঠায় ০২৫ বা প্রতিদিন ১০ গ্রাম এবং বাচ্চা প্রসবের ২৪ ঘন্টা মধ্যে প্রতিঘন্ঠায় ১ গ্রাম বা সারাদিনে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রসব কালীন দুধে বের হয়। এই কারণেই গর্ভকালীন এবং প্রসবোত্তর উপযুক্ত পরিমানে ক্যালসিয়ামের সরবরাহ না থাকলেই এই রোগ বেশি হয়।
আরো কিছু কারণে এই ক্যালসিয়াম হ্রাস পায় যথা-
প্রথমত: গাভীর পাকান্ত্র থেকে শোষিত ও অস্থি থেকে বের হয়ে আসা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ফিটাস ও কলোস্ট্রামের চাহিদার পরিমাণ অপেক্ষা অধিক কম হলে এই রোগ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় এবং কলস্ট্রাম পিরিয়ডে পাকান্ত্রে সুষ্টভাবে ক্যালসিয়াম শোষিত না হলে। আর যেসব কারনে সুষ্ট ভাবে হয় না তা হতে পারে-
খাদ্যে ক্যলসিয়ামের অভাব
ক্ষুদ্রান্তে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম অক্সালেটের সৃষ্টি
অন্ত্র প্রদাহ
ক্যালসিয়াম ফসফরাসের অনুপাতের তারতম্য
ভিটামিন ডি এর অভাব ইত্যাদি।

এপিডেমিওলজি
ক) প্রি-ডিসপোজিং ফ্যাক্টরস (pre disposing factors)
বয়সঃ সাধারণত বয়স্ক গাভিতে বেশি দেখা যায়। ৪/৫ বাচ্চা প্রসবের পর এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। কারণ বৃদ্ধ বয়সে একদিকে অস্থি থেকে ক্যালসিয়াম মবিলাইজেশন হ্রাস, অন্যদিনে পাকান্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ হ্রাস পায়। উচ্চ ফসফরাস যুক্ত খাদ্য ভিটামিন ডি কে তার মেটাবলাইটে বাধা প্রদান করে ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ
জাতঃ জার্সি জাতের গাভী এরোগ বেশি আক্রান্ত হয়। আকারে ছোট কিন্তু বেশি দুধ দেয় বলেই এই সমস্যা হতে পারে।
পুষ্টিঃ একটানা ৪৮ ঘন্ঠা অনাহারে বা নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন করলে ক্যালসিয়ামের অভাবে হতে পারে।
সময়কালঃ ঘাস খাওয়ানোর চেয়ে ঘরে বেধে খাওয়ালে এই সমস্যা বেশি হতে পারে।
হরমোনঃ প্রসব ও ইস্ট্রাস পিরিয়ডে ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ক্যালসিয়াম বেটাবলিজমে বাধা পায়।
প্রাদুর্ভাব ও সংবেদনশীলতা (Occurance & susceotibility)
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশেই অধিক দুধ উতপাদনকারী গাভী এবং অনেক সময় ছাগী, ভেড়ী ও মহিষেরও এই রোগ হয়।
দুদ্ধ জ্বর বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির রোগ তবে খামার ভুক্ত গাভীর এই সমস্যা ২৫-৩০ ভাগ হওয়ার ইনিহাস রহিয়াছে।
প্রাদুর্ভাবের পর্যায়ঃ সাধারণত তিন পর্যায়ে রোগটির লক্ষন প্রকাশ পায়-১। গর্ভাবস্থার শেষ কয়েকদিন,২। প্রসবকালীন ও ৩। প্রসবোত্তর ( ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত)।
অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
এই রোগের ফলে গাভীর সাময়িক দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে খামারী অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
দ্রুত চিকিতসা নিলে ভাল হয়ে যায় , তবে যদি বেশি দেরি করা হয় তাহলে যে কোন সমস্যা হতে পারে।
এই রোগে মৃত্যুর হার কম।
রোগের লক্ষণঃ এই রোগের নামে জ্বর থাকলেও আসলে জ্বর হয়না। তবে নিম্নোক্ত সমস্যা পরিলক্ষিত হয়।
গাভীর তাপমাত্রা হ্রাস পায় অনেক সময় স্বাভাবিক থাকে।
দুদ্ধ জ্বরে আক্রান্ত গাভীর উপসর্গ গুলোকে তিন ভাবে ভাগ করা যায়-
প্রথম পর্যায়ঃ
মৃদু উত্তেজনা ও অনৈচ্ছিক পেশী খিঁচুনি।
স্নায়ুবিক দুর্বলতা ,অতিসংবেদনশীলতা, ক্ষুধা মন্দা ও দুর্বলতা।
ভাগীর হাটতে ও খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছা ,পরবর্তীতে পিছনের পা দ্বয় শক্ত হয় এবং টলমল করে হাঁটে।
হ্রদ গতি বৃদ্ধি পায় এবং দেহের তাপমাত্রা সামান্য কিছু বৃদ্ধি পায়।
এসব উপসর্গ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য থাকে এবং অলক্ষিতভাবে চলে যায়।
এপর্যায়ে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে (৭৫ /) নেমে আসে
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
গাভী মাটিতে সুয়ে পড়ে এবং আর উঠে দ্বাড়াতে পারেনা।
গাভী শুয়ে মাথা ও ঘাড় বাকিয়ে ফ্লাঙ্কের উপর রাখে।
আংশিক পক্ষাঘাত() ও অবসাদ প্রকাশ পায় এবং রক্তে ক্যালসিয়াম অধিক মাত্রায় হ্রাস পায়।
সুক্ষ পেশী কম্পন ও ও গভীর ও দ্রুত হ্রদ গতি থাকে।
গাভীর দেহের প্রান্ত বিশেষ করে কান ও নাক ঠান্ডা থাকে এবং দেহের তাপমাত্রা ৯৬-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে।
তৃতীয় পর্যায়ঃ
প্রাণী অবসাদ গ্রস্থ থেকে দেহের এক পাশে মাথা গুজে শুয়ে থাকে। এই বিশেষ ভঙ্গী দুগ্ধ জ্বরের বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য।
পেট ফেঁপে যায়।
চিকিৎসা বিহীন ভাগীর মৃত্যু ঘটে।
রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমান সর্বনিম্নে নেমে যায় (১ mg/dl) ।
প্রসব পুর্ব ও প্রসবকালীনঃ
প্রসবের পুর্বে দুদ্ধজ্বর হলে প্রসব আরম্ভ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
বাচ্চা প্রসবের জন্য কোন কোথ দেয়না।
জরায়ুর নিস্ক্রিয়তার ফলে প্রসবে বিঘ্ন ঘটে।
বাচ্চা প্রসব হলে হাইপোক্যালসেমিয়ায় জরায়ুর নির্গমন ঘটে।
রোগ নির্নয়ঃ সাধারন্ত নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে রোগ নির্নয় করতে হয়।
ক) রোগের ইতিহাস নিয়ে এবং এর উপর ভিত্তি করে-
১. গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের ইতিহাস , প্রাপ্ত বয়স্ক ভাগী বিশেষ করে ৫-৯ বছর বয়সে এই রোগ বেশি হয়।
২. সাধারণত বাচ্চা প্রসবের ১৫ মিনিট পরে গাভী , ৩০ মিনিট পরে বকনা, এবং প্রসববিঘ্ন যুক্ত গাভী ৪০ মিনিট পর দাঁড়ায় । এই সময়ের মধ্যে বাচ্চা প্রসবের পর না দাঁড়ালে মিল্ক ফিভার রোগ সন্দেহ এবং পরিক্ষা করা প্রয়োজন।
৩. রোগের লক্ষনের সাথে প্রকাশিত উপসর্গ মিলিয়ে রোগ নির্নয় করা হয়।
৪. রক্তের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম নির্নয় করেও এরোগ নির্নয় করা হয়।
চিকিৎসাঃ
রোগের লক্ষন প্রকাশের সাথে সাথে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিন। তাহলে দ্রুতই এই রোগের সমাধান করা যাবে। যেমন চিকিৎসা দেয়া হয়-
১। যত দ্রুত সম্ভব ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট সলুশন ইনজেকশন দিতে হবে। প্রা ৪৫০ কেজি দৈহিক ওজনের গাভীকে ৫০০ মিলি ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট যার মধ্যে প্রায় ১০৮ গ্রাম ক্যলসিয়াম থাকে, অর্থেক মাত্রা ত্বকের নিচে এবং বাকী অর্থেক শিরায় ৫-১০ মিনিট ধরে দেয়া হয়।
২। সঠিক ভাবে সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম রক্তে গেলেই গাভী দ্রুত সাড়া প্রদান করে সুস্থ্য হয়ে উঠবে। তবে প্রায় ১৫ গাভীকে আলাদা করে চিকিৎসা বা ছাটায়ের জন্য রাখা হয়।
৩। যদি মাত্রা অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সলুশন দিয়ে চিকিৎসা করলে গাভী সুস্থ্য ও হয়না এবং দাড়াতেও পারেনা। অথবা সাময়িক ভাবে পশু সুস্থ্য হলেও পুনরায় একই সমস্যার সম্মুক্ষীন হয়। অপর দিকে ক্যালসিয়াম সলুশন অতিরিক্ত মাত্রায় এবং দ্রুত শিরায় দিলে প্রানীর মৃত্যুর আশংখ্যা থাকে।
বর্তমানে ক্যালসিয়াম , ফসফরাস এবং ম্যাগনোসিয়াম গ্লুকোজ সমন্বয়ে সলুশন বাজারে পাওয়া যায়। দুদ্ধজ্বরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা হ্রাস পায় কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই দুদ্ধ জ্বরের চিকিৎসার ওষুধ নির্বাচনের জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ এ উত্তম। দুই ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়-
১। খাদ্য সংশোধন(Feed correction)
২। প্রি ডিস্পোজিং ফ্যাক্টরস সংশোধন ( Predisposing factors correction)
প্রথমতঃ খাদ্য সংশোধন , হতে পারে এমন-
গাভী শুষ্ক অবস্থায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করা।
তবে শুধু ক্যালসিয়াম দেয়া যাবেনা ঐ সময়- কারণ
দেহকে সম্পর্ণ পাকান্ত্রের ক্যালসিয়াম শোষনের উপর নির্ভরশীল করে তুলে। অতে অস্থির ক্যালসিয়াম মবিলাইজেশন প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। প্রসব ও কলস্ট্রামের প্রচুর ক্যালসিয়াম প্রয়োজনে অস্থি থেকে দ্রুত ক্যালসিয়াম মবিলাইজেশন হতে পারেনা।
খাদ্যে পরিমাণ মত ফসফরাস সরবরাহ।
গাভীর কনসেন্ট্রেট খাদ্যে শতকরা ১৫ ভাগ মনো সোডিয়াম ফসফেট মিশিয়ে খাও্যালে এই রোগ প্রতিহত হয়।
দ্বিতীয়তঃ প্রি ডিস্পোজিং ফ্যাক্টোরস সংশোধন
বয়সঃ বয়স্ক গাভির প্ররযাপ্ত পরিচর্যা নিতে হবে।
জাতঃ জার্সি জাতের এই রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ যতœ ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
গাভীর শুষ্ক ও প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর সুষম পুষ্টির ব্যবস্থা করা।
একটু সচেতন হয়ে আমরা গাভীর ব্যবস্থাপনা করলেই এই রোগ হতে সহজেই আমাদের প্রানীকে রক্ষা করতে পারবো। আর রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত সুস্থ করা যায়। ফলে আমাদের দুদ্ধ উৎপাদন ও স্বাভাবিক থাকবে আমরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারব।
লাইভস্টক
কোয়েল পাখির জাত

কোয়েল পোল্ট্রির ক্ষুদ্রতম সদস্য। বিশ্বব্যাপী বহু বুনো প্রজাতি/কোয়েল পাখির জাত রয়েছে, যেমন- ‘রেইন কোয়েল’, ‘ক্যালিফোর্নিয়া কোয়েল’, ‘মাউন্টেন কোয়েল’, ‘মন্টেজুমা কোয়েল’, ‘হারলেকুইন কোয়েল’, ‘রঙিলা কোয়েল’ ইত্যাদি।
তবে এসব কোয়েল পাখির জাতের মধ্যে ‘জাপানি কোয়েল’ ও ‘বব হোয়াইট কোয়েল’ ছাড়া অন্য কোন প্রজাতিকে যেমন গৃহপালিত করা হয়নি, তেমনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে পোল্ট্রি হিসেবে এই দু’প্রজাতি ছাড়া অন্য কোন কোয়েল পালন করা হয় না।
জাপানি কোয়েল ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হলেও বব হোয়াইট কোয়েল মূলত মাংসের জন্যই পোষা হয়।
বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েল পাখির জাত বেশ কয়েকটি আছে এবং উপজাতও রয়েছে, যেমন- ‘ফারাও’, ‘ব্রিটিশ রে’, ‘ইংলিশ হোয়াইট’, ‘ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন’, ‘টুক্সেডো’, ‘ফন/ব্রাউন’ কোয়েল ইত্যাদি।
নিম্নে ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা জাপানি কোয়েল পাখির ‘ফারাও’ ও ‘ফন’ উপজাতের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো–

কোয়েল পাখির জাত ‘ফারাও’
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান
এই উপজাতের জাপানি কোয়েলটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এদের উৎপত্তি জাপান, চীনসহ এশিয়া অন্য কয়েকটি দেশে। জাপানে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এর ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোহয়েছে।
বৈশিষ্ট্য
- এরা ছোট ও গাট্টাগোট্টা পাখি।
- পালকের মূল রং বাদামি; এর উপর থাকে গাঢ় চকোলেট বা কালো রঙের ছোঁপ।
- বুকের উপরের অংশের বাদামি রঙের উপর কালো বা খয়েরি গোলাকার ফোঁটা থাকে।
- বুকের নিচের অংশ তামাটে।
- এরা ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিমপাড়া শুরু করে। বার্ষিক ডিম উৎপাদন- ২৭৫-৩০০টি।
- প্রাপ্তবয়ষ্ক কোয়েলের ওজন- ১৫০- ১৭৫ গ্রাম।

কোয়েল পাখির জাত ‘ফন বা ব্রাউন’
উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান: এদের উৎপত্তি ও প্রাপ্তিস্থান ফারাওয়ের মতোই।
বৈশিষ্ট্য:
- এদের পালকের রঙের ধরন ফারাওয়ের মতোই, কিন্তু রং একেবারেই হালকা। কোন কালচে ভাব নেই।
- বাচ্চাগুলোর দেহের কোমল পালকের রং হলদে; এর উপরের ছোপগুলো বেশ হালকা।
- এরা অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির। ফারাওয়ের মতো মারামারি বা ঠোঁকরাঠুকরি করে না।
- বাকি সব বৈশিষ্ট্য ফারাওয়ের মতোই।
- এরা ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিমপাড়া শুরু করে। বার্ষিক ডিম উৎপাদন- ২৭৫-৩০০টি।
- এদের প্রাপ্তবয়ষ্ক কোয়েলের ওজন- ১৫০-১৭৫ গ্রাম।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন