উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের একটি জায়গা ককোরী। পরাধীন ভারতে সশস্ত্র বিপ্লবের অন্যতম জায়গাও এটি। এই স্থানেই ব্রিটিশদের ট্রেনে অভিযান চালিয়ে স্বাধীনতার লড়াইয়ের অস্ত্র কেনার টাকা আদায় করতে চেয়েছিলেন বিপ্লবীরা। তবে শুধু বিপ্লবই নয়, এই জেলার সঙ্গে অওয়ধি রান্নার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নরম মাংসের সুগন্ধী কাবাব হল ককোরী। স্থান মাহাত্ম্যের কারণেই এই কাবাবের নাম রাখা হয়েছে ককোরী। এই ককোরী কাবাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি গল্প।
নবাব সৈয়দ মহম্মদ হায়দার কাজমি ছিলেন কাকোরীর স্থানীয় শাসক। ব্রিটিশ সঙ্গীদের জন্য নৈশভোজে পেল্লাই খানাপিনার আয়োজন করেছিলেন নাকি তিনি। কিন্তু তাঁর খাতিরদারি ভাল লাগেনি ব্রিটিশ ‘বন্ধু’-দের। শুকনো শিক কাবাবের নিন্দাই নাকি করেছিল ব্রিটিশরা। খেতে নাকি কষ্ট, চিবিয়ে খেতে হয়, শক্ত।
নবাবের মাথায় আগুন জ্বলছে তখন। রাঁধুনিদের নির্দেশ দিলেন, কাবাবই বানাতে হবে তবে তুলোর মতো নরম। কয়েক রাত ধরে রাঁধুনিরা পড়ে রইলেন রান্নাঘরে। প্রায় ১০ দিনের চেষ্টায় তৈরি হল তুলতুলে মাংসের কাবাব। সেই ককোরী কাবাব বানাতেই শেখালেন মার্কো পোলোর একজিকিউটিভ শেফ অমিতাভ চক্রবর্তী। রেসিপি রইল আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠকদের জন্য।
উপকরণ
মাটন ১ কেজি ৭০০ গ্রাম (হাড়বিহীন)
চর্বি ২০০ গ্রাম
কাঁচা পেঁপে বাটা ৫০ গ্রাম
ছোলা তাওয়ায় রোস্ট করে নিয়ে গুঁড়ো ৬০ গ্রাম
জাফরান ১ গ্রাম
সবুজ এলাচ ৩ গ্রাম
ঘি ৫০ গ্রাম
কাশ্মীরি লঙ্কা বাটা ৫ গ্রাম
নুন ২০ গ্রাম
পিঁয়াজ কুচি ১০০ গ্রাম
জৈত্রী ৫০ গ্রাম
কালো এলাচ ১০ গ্রাম
জায়ফল ১ গ্রাম
দারচিনি ৫০ গ্রাম
শাহি জিরা ৫ গ্রাম
কাবাব চিনি ২ গ্রাম
লবঙ্গ ৫টি
ভেজে নেওয়া পিঁয়াজ বা বিরিস্তা ৫০ গ্রাম
কাজু ৫০ গ্রাম
কাঠবাদাম ৩০ গ্রাম
চিরঞ্জি ৫০ গ্রাম
শুকনো নারকেল ১০ গ্রাম
গোলাপ পাপড়ি ১০ গ্রাম
রোজ ওয়াটার ৫ ফোঁটা
কেওড়া জল ১ ফোঁটা
প্রণালী:
ককোরী মশলা
কাজু, চিরঞ্জি, কাঠবাদাম ভেজে নিতে হবে প্রথমে। তারপর শুকনো নারকেল তাওয়ায় রোস্ট করে আলাদা করে রেখে দিতে হবে। জৈত্রী, জায়ফল, কালো এলাচ, শাহি জিরা, কাবাব চিনি-সহ মশলাগুলি রোস্ট করতে হবে শুকনো তাওয়ায়। এরপর সব মিশিয়ে যোগ করতে হবে ভেজে নেওয়া পিঁয়াজ বা বিরিস্তা যার রং বাদামি। একটা নরম পেস্ট তৈরি করতে হবে এই গোটা মিশ্রণটার। তৈরি হল ককোরী মশলা।
হাড় ছাড়ানো মাংসের কিমা করতে হবে অর্থাৎ মাংসগুলিকে মিহি করে নিতে হবে অন্তত পাঁচ বার যাতে একেবারে তুলতুলে হয়ে যায় মাংসটি। এর মধ্যে তিন বার মেশাতে হবে চর্বি।
এর পর পিঁয়াজ কুচি, রোস্ট করা ছোলার গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কা বাটা, সবুজ এলাচ গুঁড়ো, কাঁচা পেঁপে বাটা ও ককোরী মশলা ভাল করে মেশাতে হবে হাতের তালু দিয়ে চেপে চেপে। হাত দিয়ে চেপে চেপে মেশাতে হবে গোটা মিশ্রণটা। এর পর রোজ ওয়াটার বা গোলাপ জলে মেশাতে হবে জাফরান, দিতে হবে ঘি। ভাল করে মেশাতে হবে এর সঙ্গে। এর পর শিকের মধ্যে এই মিশ্রণটা শিক কাবাবের আকারে দিতে হবে। এ বার শিক-সহ আগুনের আঁচে (গ্যাস বা বার কিউতে, মাইক্রো ওভেনে নয়) এই মিশ্রণ পোড়াতে হবে। যাতে আগুনের সমান্তরাল থাকে শিকটা সেই ভাবে দেখে নিতে হবে। গোটা অংশটাই যাতে রান্না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। দেড় থেকে দু মিনিট দুই দিকই আগুনের সংস্পর্শে আসবে। এ বার তৈরি ককোরী কাবাব। নবাবি এই খানা পাতে পড়লে প্রিয় জনের সঙ্গে আপনারও মেজাজ খুশ।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন