বিশ্ব
সিরিয়ার যে শহরে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত কাফর নাবল শহরে মাসের পর মাস সিরিয় এবং রুশ সৈন্যদের বোমাবর্ষণের পর সেখানে এখন মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে।
বিবিসির মাইকেল টমসন গিয়েছিলেন ঐ প্রায় ভুতুড়ে শহরে। তিনি বলছেন, কাফর নাবলের অবশিষ্ট মানুষ এবং বিড়ালেরা কঠিন এই দুঃসময়ে এক অপরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে।
সংবাদদাতা যেদিন সেখানে ছিলেন, সেদিন আরেক দফা বোমা হামলা শুরু হয় ঐ শহরে।
শহরের বাসিন্দা ৩২ বছরের সালাহ জার বাঁচার জন্য তার বাড়ির ইট-পাথরের টুকরো ভর্তি বেজমেন্টের কোনায় একটি টেবিলের নীচে আশ্রয় নেন ।
শুধু তিনিই নন, তার সাথে একই টেবিলের তলে তাকে ঘিরে ছিল ৬/৭টি বিড়াল। সালাহর মতো তারাও ছিল আতঙ্কিত, সন্ত্রস্ত।
সালাহ বললেন, “বিড়ালগুলো সাথে থাকলে কিছুটা ভরসা পাই। বোমা যখন শুরু হয় ভয় যেন একটু কম লাগে।”
সালাহর এই শহর কাফর নাবলে একসময় ৪০ হাজার লোকের বসবাস ছিল। এখন সেই সংখ্যা কমতে কমতে বড় জোর ১০০।
কিন্তু এই শহরে এখন বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। সংখ্যা ধারনা করা কঠিন, তবে অবশ্যই তা কয়েকশ। কয়েক হাজারও হতে পারে।
সালাহ জানালেন এত মানুষ পালিয়ে গেছে যে শহরটি এখন প্রায় জনশূন্য।
“খুবই কম মানুষ এখন এই শহরে। বিড়ালগুলোকে দেখাশোনা করার জন্য তো কিছু মানুষ দরকার। তাদের খাবার দিতে হয়, পানি দিতে হয়। সুতরাং যে সব বাড়িতে এখনও মানুষ রয়েছে, বিড়ালগুলো যেসব বাড়িতে গিয়ে ভিড় করছে।”
সালাহ জানালেন মানুষ আছে এমন প্রতিটি বাড়িতে এখন কমপক্ষে ১৫টি করে বিড়াল রয়েছে।
ফ্রেশ এফএম নামে স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনের রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেন সালাহ।
সম্প্রতি বোমায় রেডিও স্টেশনটির মূল স্টুডিওটি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ট্রান্সমিটারটি তার কদিন আগে কাছের একটি শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই রেডিও স্টেশন থেকে খবর, শ্রোতাদের সাথে ফোন-ইন, কৌতুক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি বিমান হামলার আগাম বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
স্থানীয়দের কাছে এই রেডিও স্টেশনটি যেমন জনপ্রিয়, শহরের বিড়ালদের কাছেও তেমনই প্রিয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই কয়েক ডজন বিড়াল স্টেশনটির ভবনটিকে তাদের ঘর বানিয়েছে।
রেডিও’র প্রতিষ্ঠাতা রায়েদ ফারেসকে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসলামপন্থীরা হত্যা করে। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি এই বিড়ালগুলোকে খাওয়ানোর জন্য কিছু পয়সা রেখে গিয়েছিলেন।
“অনেক বিড়ালের জন্ম হয়েছে এই ভবনে। সেগুলোর মধ্যে সাদা এবং বাদামি ছোপের একটি বিড়ালকে খুবই ভালবাসতেন রায়েদ। তিনি যেখানে যেতেন, বিড়ালটি তার সাথে থাকতো। বিড়ালটিকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন তিনি।”
তার বিধ্বস্ত বাড়িটি থেকে সালাহ যখন বাইরে এলেন, সাথে সাথে তাকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় একগাদা বেড়ালের তারস্বরে মিয়াউ-মিয়াউ ডাক।
সবজায়গাতেই একই ঘটনা ঘটে।
“কখনো কখনো আমরা যখন রাস্তায় হাঁটি, ২০ থেকে ৩০টি বিড়াল আমাদের সাথে হাঁটতে থাকে। তাদের কোনো কোনোটি আমাদের সাথে বাড়িতে ঢুকে পড়ে।”
সন্ধ্যের পর এই শহরের নানা কোনা থেকে শোনা যায় কুকুরের ডাক। এরাও রাস্তাতেই থাকে। তাদের এখন আর ঘর নেই, ক্ষুধার্ত।
ফলে রাতের বেলা শোয়ার জায়গা এবং খাবার নিয়ে শুরু হয়ে যায় রাস্তার বিড়াল এবং কুকুরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, রেষারেষি।
সালাহ বললেন, আকৃতিতে ছোটো হলেও কুকুর ও বিড়ালদের ঐ লড়াইতে শেষ পর্যন্ত বিড়ালরাই জেতে।
“অবশ্যই বিড়ালরাই জেতে। তাদের সংখ্যাতো অনেক বেশি।”
এই বিড়ালগুলো একসময় গৃহপালিতই ছিল। বাড়িতে আয়েশে থাকতো । কিন্তু এপ্রিলে সরকারি সৈন্যরা শহরের দখল নেওয়ার চেষ্টায় বোমাবর্ষণ শুরু করলে মানুষজন পালাতে শুরু করে। পেছনে ফেলে যায় তাদের বিড়ালগুলো।
এখন নতুন প্রভু, নতুন আশ্রয় খুঁজতে হচ্ছে তাদের।
সালাহ যদিও জানেনা যে আগামিকাল তিনি বেঁচে থাকবেন কিনা। কাল তার খাবারের জোগাড় হবে কিনা, কিন্তু ঘরের বিড়ালগুলোর জন্য কিছু না কিছু তাকে জোগাড় করতেই হয়।
“আমি যখনই খাই, ওরাও খায়। সেটা সবজি হোক, নুডলস হোক বা শুকনো রুটি হোক। অমি মনে করি আমাদের উভয়ের জন্য সময়টা অত্যন্ত খারাপ, আমরা উভয়েই দুর্বল হয়ে পড়েছি, সুতরাং আমাদের উচিৎ পরস্পরকে সাহায্য করা।”
বোমায় মানুষের পাশাপাশি বিড়ালগুলোও মাঝে-মধ্যেই জখম হয়। লোকজন তাদের চিকিৎসার সবরকম চেষ্টা করে।
“আমার এক বন্ধুর বাড়িতে একদিন বোমায় একটি বিড়ালের সামনের পায়ের থাবার কিছু অংশ উড়ে যায়। আমরা দ্রুত তাকে ইদলিবে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। এখন সে হাঁটতে পারে।”
প্রেসিডেন্ট আসাদের সৈন্যরা কাফর নাবল থেকে বেশিদূর নয়। যে কোনদিন হয়তো তারা এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। তখন এই বিড়ালগুলোর কি হবে – তা নিয়ে সালাহ উদ্বেগের মধ্যে থাকেন।
“আমরা একসাথে আমাদের সু-সময়, দুঃসময় পার করছি। এক বিছানায় শুই। খাবার ভাগ করে খাচ্ছি। ওরা এখন আমাদের জীবনের অংশীদার হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন যদি তাকে এই শহর থেকে পালাতে হয়, তাহলে চেষ্টা করবেন সাথে করে যতগুলো সম্ভব বিড়াল সাথে নিয়ে যেতে।
যুদ্ধের এই ভয়াবহতা আর বর্বরতার মধ্যে সিরিয়ার এই শহরে মানুষ এবং এই পশুগুলোর মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা সহজে ভাঙ্গার নয়।
দৈনন্দিন
ফিলেট ও সাসিমির সম্ভাবনা

ফিলেট ও সাসিমি বিদেশিদের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। তবে বাংলাদেশেও এর সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটিই জানাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি বিদেশে রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
যে সব মাছের মাংসল অংশে ছোট ছোট, কাটা নেই; সে সব মাছ থেকে তৈরি করা হয় ফিলেট (মাছের মাংসল অংশ)। এর জন্য আমাদের দেশের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, বিভিন্ন ক্যাটফিশ ও সামুদ্রিক মাছ ব্যবহার করা হয়।

সাসিমি তৈরিতেও এ ধরনের মাছ ব্যবহৃত হয়। তবে সাসিমি হলো- তাজা মাছের পাতলা মাংসল অংশ। এর দৈর্ঘ্য ২.৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ দশমিক ৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এটা সস বা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে খাওয়া হয়।

পাঙ্গাস মাছ থেকে প্রথমে ফিলেট তৈরি করে সাসিমি বানাতে হয়। এজন্য প্রথমে মাছটির মাথার কাছে ছুরি রেখে মাছের মেরুদণ্ড বরাবর লেজের দিকে কাটতে হয়। কাটার পর এর উপরের চামড়া সতর্কতার সঙ্গে ছাড়াতে হয়। এরপর ফিলেট অংশটি পাতলা ছোট ছোট অংশে কেটে তৈরি করতে পারেন ফেলিট সাসিমি।

পরিবেশনের জন্য টমেটো, ধনেপাতা, পিঁয়াজ সাসিমির চারিদিকে শৈল্পীক রূপে সাজিয়ে নিতে হয়। আমাদের দেশের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ফিলেট ও সাসিমি তৈরি করে বিদেশে রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ‘প্রায় বিলুপ্তি’র পথে ১০০-এর বেশি দেশীয় মাছ

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কয়েক প্রজাতির পরিচিত দেশীয় মাছ বাজার থেকে ‘প্রায় নেই’ হয়ে গেছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন বলছে, এর মধ্যে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ হবার পথে বাঘাইর, পিপলা শোল বা বাক্কা মাছ, মহাশোল, নান্দিলা মাছ, চান্দা, ভাঙ্গান বাটা, খরকি মাছ, কালো পাবদা, চেনুয়া মাছসহ বেশ কিছু মাছ রয়েছে।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশের একমাত্র মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক মোস্তফা আলী রেজা হোসেন জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে দেশের ১১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
“আইইউসিএন বাংলাদেশের বিপন্ন প্রাণীর তালিকা করার জন্য দুটি জরিপ চালিয়েছিল, ২০০০ সালে প্রথম জরিপে ৫৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে সর্বশেষ জরিপে তাতে আরো ৬৪ প্রজাতির মাছ যুক্ত হয়।”
“এই তালিকায় সেই সব মাছকেই চিহ্নিত করা হয়েছিল যেগুলো গত ১০ বা ২০ বছরে দেখা যায়নি।”
বিলুপ্ত মাছ নেই
বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে ১০০র বেশি দেশীয় মাছ থাকলেও এখনো কোন মাছকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি।

আইইউসিএনের এ সংক্রান্ত নিয়মটি হচ্ছে, সর্বশেষ কোন একটি প্রজাতির মাছের দেখা পাবার পর পরবর্তী ২৫ বছরে যদি সেই প্রজাতির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন বলছিলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে নান্দিল নামে এক সময় একটি মাছ দেখা যেত, কিন্তু গত ২০ বছরে সেটির অস্তিত্বের কোন প্রমাণ দেখা যায়নি।
আবার সিলেট অঞ্চলের পিপলা শোল নামে একটি মাছ দেখা যেত, যা এখন আর দেখা যায় না। গত ১০ বছরে দেখা যায়নি এই মাছ।
“দেখা যায়নি, কিন্তু তবু বিলুপ্ত ঘোষণা করার আগে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।”
“যদি এর মধ্যে বিপন্ন মাছেদের অস্তিত্বের ব্যপারে কোন তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে হয়ত আইইউসিএনের পরবর্তী জরিপে এগুলোর ব্যপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকতে পারে।”

প্রায় বিলুপ্ত কোন কোন প্রজাতি?
আইইউসিএনের ২০১৫ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণীতে মোট ৬৪ প্রজাতির মাছকে রেড লিস্ট বা লাল তালিকাভুক্ত করেছে, এর মানে হচ্ছে এসব প্রজাতির মাছ হয় প্রায় বিলুপ্ত, মহাবিপন্ন ও বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘আপডেটিং স্পেসিস রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের অধীনে এই তালিকা করা হয়।
এ সংক্রান্ত প্রথম জরিপটি হয়েছিল ২০০০ সালে, সে সময় ৫৪টি প্রজাতিকে রেড লিস্টভুক্ত করা হয়েছিল।
জরিপে মূলত স্বাদু পানির এবং আধা লোনা পানির মাছকেই গণনায় ধরা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ঐ ‘রেড লিস্ট’ তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন।
কী কী মাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না?
বাংলাদেশে দেশীয় মাছের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০০।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে আইইউসিএন এর সর্বশেষ মূল্যায়নে ২৫৩ প্রজাতির মাছের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল।
তাতে দেখা গেছে সময়ের বিবর্তনে যেসব মাছ বিলুপ্তপ্রায় তার বেশির ভাগই নদীর মাছ মানে স্বাদু পানির মাছ।
তবে, ৩০০ প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্তত ৪০ প্রজাতির মাছের ব্যাপারে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার কাছে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই।
আইইউসিএন কয়েকটি ভাগে মাছের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছিল।
এর মধ্যে কিছু মাছ ক্রিটিক্যালি এনডেঞ্জারড বা প্রায় বিলুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ এগুলো সন্ধান ও সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে সেগুলো অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এর বাইরে মহা বিপন্ন, বিপন্ন এবং সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বহু প্রজাতি।

বাংলাদেশে বিপন্ন মাছের মধ্যে রয়েছে—পাঙ্গাস, দারি, ককসা, টিলা বা হিরালু, টিলা ককসা, রানি বা বউ মাছ, বেতাঙ্গি, বেটি বা পুতুল মাছ, কালা বাটা, ঘর পোয়া, ঘর পইয়া, ঘোড়া মাছ, এলানগা, কচুয়া পুটি, বোল, চিতল, গজার, টেংরা, রিটা, গাঙ্গিনা বা চাকা মাছ, বট শিং, ঘাউড়া, সাল বাইম।
এছাড়া সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে বাও বাইম, চাপিলা, গুতুম, পুঁইয়া, পিয়াসি, জারুয়া বা উট্টি, ছেপ চেলা, গোফি চেলা, বাটা মাছ, নারু মাছ বা গনিয়া, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা, বেলে, শিং, আইড়, বোয়াল, তেলি, কুইচ্চা মাছ, বামোস মাছ।
কেন এই অবস্থা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা বলছেন, মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে তিনি প্রথমেই জলাশয় কমে যাওয়াকে দায়ী করেন।
“শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও।”

“কেবল দেশী জাত ও স্বাদের মাছই নয়, এর সঙ্গে কচ্ছপসহ নানা ধরণের জলজ প্রাণী ও সরীসৃপের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।”
সেই সঙ্গে রয়েছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি, যা বৃষ্টিতে ধুয়ে খাল বিলসহ জলাশয়গুলোতে পড়ে।
এর ফলে মাছের মৃত্যু ও প্রজনন হার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আছে কলকারখানার বর্জ্য নিকটস্থ জলাশয়ে ফেলা হয়, তার ফলেও মাছ মরে যায়, বলেন মিজ ফাতেমা।
এর সঙ্গে অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন-সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করাকেও কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, বাংলাদেশ মৎস্য জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশী মাছের চাষের কারণেও দেশী প্রজাতির মাছ কমে গেছে।

“ধরুন এখানে তেলাপিয়া, কার্পজাতীয় মাছ আনা হয়েছে, আবার এক সময় আফ্রিকান মাগুর আনা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে আনা হলো পিরানহা–এগুলো দেশী মাছের খাবার ও বাসস্থল দখল করতো। অনেক সময় দেশী মাছ খেয়ে ফেলতো কোন কোন বিদেশী প্রজাতি।”
যদিও পরে আফ্রিকান মাগুরের চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তারপরেও বিদেশী মাছের প্রজাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেক মাছ কমে গেছে।
কৃত্রিম প্রজনন ও চাষ কি সমাধান?
বাংলাদেশে দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছের হার কমে যাবার প্রেক্ষাপটে গত দুই দশকে কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে মাছের সরবারহ বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর সাড়ে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।

এর মধ্যে নদী, বিল ও হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ২৫ শতাংশ, পুকুর, ডোবার মত বদ্ধ জলাশয় থেকে ৫৭ শতাংশ এবং বাকি অংশ সমুদ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশে ৮ লাখ হেক্টর বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষ হয়।
বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের কর্মকর্তা বলরাম মহালদার জানিয়েছেন, কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের মাধ্যমে বাজারে চাহিদা আছে এমন মাছই বেড়েছে।
“কিন্তু বাজারে চাহিদা কম এমন মাছ তো চাষ করছে না কেউ, ফলে সেগুলোর অস্তিত্ব সংকট আগের মতই থাকছে। যেমন খলিশা, চাপিলা, মেনি, ফলি, বাও বাইম, গুতুম, কুইচ্চা মাছ, বামোস ইত্যাদি ধরণের মাছ দেখতে পাবেন না।”
“এখন বাজারে পাবদা বা গুলশা মাছ বা পাঙ্গাস পাবেন আপনি, সেগুলোর চাহিদা আছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হলে, বিপন্ন মাছের ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”
তবে ফসলি জমি নষ্ট করে দেশে মাছ চাষ করা নিয়ে পরিবেশবাদীদের এক ধরণের বিরোধিতাও রয়েছে।
তাদের পরামর্শ বিদ্যমান নদী ও পুকুরগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যদিও এখন কৈ, শিং, পাবদা, মাগুর, সর পুটি, চিতলসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ সহজলভ্য হয়েছে, কিন্তু সেই সব মাছের স্বাদ আগের মত নয়।
বাংলাদেশ
নিরাপদ খাদ্য: দেশি মাছ কাকিলাকে যেভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কিছু ছোট মাছের প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়লেও এসব মাছের মোট উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে।
বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেশ কিছু ছোট মাছের প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়লেও এসব মাছের মোট উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা উন্মুক্ত জলাশয়ের এরকম ৩১টি মাছকে বিলুপ্ত হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করছেন। শুধু তাই নয়, এর ফলে পুষ্টিসমৃদ্ধ এসব মাছ এখন সহজে পুকুরেও চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্বাদু পানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ১৪৩টি মাছই ছোট মাছ। যেসব মাছ আকারে নয় সেন্টিমিটারের ছোট সেগুলোকে ছোট মাছ বা স্মল ইন্ডিজেনাস স্পেসিস কিম্বা এসআইএস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে যে আন্তর্জাতিক সংগঠন আইইউসিএন, তারা বাংলাদেশের ৬৪টি প্রজাতির মাছকে ইতোমধ্যে বিপন্ন বলে উল্লেখ করেছে।
এসব মাছের মধ্যে রয়েছে মহাশোল, খরকি, পিপলা শোল, কালা পাবদা, বাঘ মাছ ইত্যাদি।
এ কারণে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে অস্তিত্বের হুমকির মধ্যে পড়া এসব মাছের বেশ কয়েকটিকে রক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে ৩০টি মাছকে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে।
এসব মাছের মধ্যে রয়েছে শিং, মাগুর, পুঁটি, বাইম, টেংরা, ফলি, বাতাসি, ঢেলা, বৈরালি, গুতুম, খলিসা ইত্যাদি।
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক দশকে ছোট মাছের উৎপাদন চারগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে এই মাছের উৎপাদনের পরিমাণ যেখানে ছিল ৬৭,০০০ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৮ সালের উৎপাদন ছিল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন।

এসব ছোট মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে চাষ করা ৩০টি মাছ।
এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আরো একটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছেন। ৩১তম এই মাছটির নাম কাকিলা। কোথাও কোথাও এটি কাইক্কা এবং কাখলে মাছ নামেও পরিচিত।
শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডেও এই মাছটি পাওয়া যায় কিন্তু এর রঙ ও আকারে কিছু তারতম্য রয়েছে।
সবশেষ যোগ হলো কাকিলা
কাকিলা মাছের দেহ সরু ও লম্বাটে। অনেকটা সিলিন্ডারের মতো। মুখের সামনে ধারালো দাঁতযুক্ত লম্বা ঠোঁট। দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো।
নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, খাল ও বিলের মতো অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে এক সময়ে এই কাকিলা মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। বাজারেও উঠতো এই মাছ। ফলে সাধারণ মানুষ এটা খেতে পারতো।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে এই মাছের বসবাসের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এর প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলাশয় ভরাট করায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে এসব মাছের অবাধ চলাচল।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আউয়াল হোসেন বলেন, “আগে এই মাছটা প্রচুর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন কিছু কিছু অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও তেমন একটা পাওয়া যায় না। এরই প্রেক্ষিতে সরকার এই মাছটিকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়।”
যশোরের স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে প্রায় তিন বছর ধরে নিবিড় গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এবছরের অগাস্ট মাসে এর কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।

কীভাবে বাঁচানো হচ্ছে
কাকিলা মাছটিকে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ধরে প্রথমে সেটিকে পুকুরের মতো বদ্ধ জলাশয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। মাছটিকে ধরা ও পরিবহনের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যাতে এর কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়।
বিজ্ঞানী মি. হোসেন বলেন, “কাকিলা মাছ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটিকে পানিতে রেখে, পানির ট্যাঙ্কে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেনের প্রবাহ দিয়ে, গাড়িতে করে খুব সাবধানে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে এটি পুকুরের পানিতে ছেড়ে দিয়ে কন্ডিশনিং করা হয়েছে।”
তিনি জানান, প্রথমে পুকুরে মাছটির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়: মাছটি স্রোত পছন্দ করে কীনা, জলজ উদ্ভিদের মধ্যে থাকতে ভালোবাসে কীনা- এসব বিষয় মাথায় রেখে মোটামুটি একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।
এভাবে এটিকে এক/দুই বছর ধরে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। অভ্যস্ত করা হয় নতুন পরিবেশে।
এসময় মাছটির আচার আচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর নজর রাখা হয়। হ্যাচারিতে উৎপাদিত কার্প জাতীয় মাছের জীবিত পোনা এবং জলাশয় থেকে সংগৃহীত জীবিত ছোট মাছ খাইয়ে পুকুরের বদ্ধ পরিবেশে তাকে অভ্যস্ত করা হয়।
“পুকুরে জাল টেনে ধরার পর মাছটিকে আবার পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। একসময় জালের উপরে এসব মাছ মরে যেত। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল এটি মাছের গা-সওয়া হয়ে গেছে। অর্থাৎ নতুন পরিবেশে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে,” বলেন মি. হোসেন।
এর পরে এই মাছের প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রজনন করা হয় যেভাবে
কাকিলা মাছ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয়ে, বিশেষ করে নদীতে এবং বর্ষাকালে প্লাবিত এলাকায় প্রজনন করে থাকে। পরিণত মাছেরা ভাসমান জলজ উদ্ভিদ নেই এমন স্থানে বসবাস করলেও জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচে ও ভাসমান শেকড়ে স্ত্রী মাছ ডিম পাড়ে।
বিজ্ঞানীরা দেখলেন জুলাই, অগাস্ট মাসে কাকিলা মাছের ডিমের পরিপক্বতা সবচেয়ে ভাল থাকে। এজন্য তারা এই সময়কালকেই বেছে নেন মাছটির প্রজননের জন্য।

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, “এপ্রিল মাস থেকেই আমরা প্রজননের বিষয়ে পরীক্ষা চালাতে শুরু করি। প্রথমে এর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের ওপর গবেষণা চালানো হয়। যখন দেখা যায় যে মাছটি প্রজননের জন্য তৈরি তখন বিভিন্ন ডোজে বিভিন্ন ধরনের হরমোন প্রয়োগ করা হয়।”
এভাবে বেশ কিছু পরীক্ষা চালানোর পর এক পর্যায়ে দেখা গেল যে নির্দিষ্ট একটি ডোজে মাছটি উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। এসময় মা মাছটি ডিম পাড়ে এবং পুরুষ মাছটিও সেখানে তার শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। তখন সেখানে ডিম নিষিক্ত হয়। তখনই বিজ্ঞানীরা ধরে নেন যে হরমোনের ডোজ প্রজননের জন্য উপযোগী হয়েছে।
এর পর চৌবাচ্চার ভেতরে ঝর্ণার ধারা তৈরি করে সেখান চার জোড়া মাছ ছেড়ে দেওয়া হয়। এই মাছটি সাধারণত কচুরিপানার মতো জলজ উদ্ভিদের গায়ে ডিম পাড়ে। একারণে চৌবাচ্চার ভেতরে সেরকম একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়।
দেখা গেছে হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পরে মা কাকিলা মাছটি ডিম ছাড়ে এবং এর পর বাবা মাছটি সেখানে তার স্পার্ম ছেড়ে দেয়। সেই ডিম যাতে কোনো ধরনের দূষণের কারণে নষ্ট হয়ে না যায়, অথবা বড় মাছ এগুলোকে খেয়ে না ফেলে, সেজন্য ডিমগুলোকে রাখা হয় ইনটেনসিভ কেয়ারে।
“কাকিলা মাছের ডিম আঠালো হয়। সেগুলো কচুরিপানার গায়ে শক্ত হয়ে লেগে থাকে। দেখা যায় যে বাবা কিম্বা মা মাছ এসব ডিম খাচ্ছে না। বরং যেখানে বেশি ডিম সেখানে তারা পাহারা দিচ্ছে। বোঝা গেল যে তাদের প্যারেন্টাল কেয়ার অত্যন্ত শক্তিশালী,” বলেন মি. ইসলাম।
অবশেষে ২৫শে অগাস্ট রাত চারটার সময় ডিম থেকে মাছের পোনা বের হয়।
এই মাছের বিষয়ে বিজ্ঞানীদের এখনও পূর্ণাঙ্গ ধারণা নেই। কারণ এর আগে কখনো কাকিলা মাছ নিয়ে কখনো গবেষণা হয়নি। ফলে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদেরকেই এই প্রথমবারের মতো একাজ করতে হচ্ছে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আউয়াল হোসেন জানান তাদের বর্তমান এই গবেষণা থেকে পাওয়া ধারণা নিয়েই তারা ধাপে ধাপে আরো সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
কাকিলার পুষ্টিগুন
কাকিলা মাছ খেতে যেমন খুব সুস্বাদু, তেমনি অনুপুষ্টিসমৃদ্ধ। এই মাছে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, লিপিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজ পদার্থ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় কাকিলা মাছে এসব উপাদান বেশি থাকে।
মি. ইসলাম বলেন, “সাধারণ মানুষের বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এসব খনিজ পদার্থ খুবই উপকারী। যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তাদের জন্য এবং দেহের রক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এসব খনিজ পদার্থ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়,” বলেন মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
জার্মানি
মাটির নিচে ‘সৌন্দর্যে ঘেরা’ জার্মানি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জার্মানি। তবে এই সৌন্দর্য শুধু পাহাড়-নদীতেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশটির মাটির নিচেও রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।
জালফেল্ড ফেয়ারি গ্রোটোস: ১৯৯৩ সালে জার্মানির এই গ্রোটো গুহার নাম ওঠে গিনেস বুক অফ রেকর্ডসের ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর গ্রোটো গুহা’র তালিকায়। অ্যালাম স্লেট খনন করার ফলে ঠ্যুরিঙ্গেন রাজ্যের এই গুহাটি নানা রঙের স্ট্যালাকটাইটে ভরে ওঠে। এই গুহায় দেখা যায় একশরও বেশি ধরনের বাদামি-হলুদ রঙের খেলা।
লাঙ্গেনস্টাইন গুহা ঘর: বেলেপাথরে খোদাই করে তৈরি এই গুহা-ঘরগুলো দেখতে অবিকল রূপকথায় পড়া রাজকন্যার প্রাসাদের মতো। কিন্তু আদতে হারৎজ পর্বতের শ্যাফারবের্গ অঞ্চলের এই গুহা-ঘরগুলো উনিশ শতকে বানিয়েছিলেন স্থানীয় খামারকর্মীরা। বর্তমানে এই গুহাঘরের ভেতরে চিত্রায়িত করা আছে এই গুহার শেষ বাসিন্দা লুডভিগ শ্মিডটের জীবনকাহিনী।
বাড জেগেবার্গের কালকবের্গ গুহা: উত্তর জার্মানির একমাত্র প্রাকৃতিক গুহার ভেতর রয়েছে বাদুড়দের বিশ্বের সবচেয়ে বড় শীতকালীন বাসস্থান। এই গুহার ভেতরের প্রাণীদের শীতঘুমে ব্যাঘাত না ঘটাতে পর্যটকদের যাওয়ার সুযোগ মার্চ থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে।

আটেনডর্নের আটা গুহা: জার্মানির সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় গুহা নর্থ-রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যের গুহা এটি। হঠাৎ করেই ১৯০৭ সালে আবিষ্কৃত হয় এই গুহা। ছয় হাজার মিটার দীর্ঘ এই গুহায় পাওয়া যায় আটা চিজ নামের একটি বিশেষ ধরনের পনীর।
এনেপেটালের ক্লুটার্ট গুহা: বহু হ্রদ, তিনশটি পথ ও ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুহাকে এক সময় জার্মানির সবচেয়ে বড় গুহা ভাবা হতো। এখন নর্থ-রাইন ভেস্টফ্রালেনের এই গুহার ভেতর পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের রোমাঞ্চকর সফরের সুবিধা রয়েছে। হাঁপানি রোগীদের জন্যেও ভালো এই গুহার ভেতরের পরিবেশ।
হমবুর্গের শ্লসবের্গ গুহা ও দুর্গ: জারলান্ড রাজ্যের এই গুহা প্রকৃতি নয়, তৈরি করেছে মানুষ। লাল বেলেপাথরের খোঁজে খনন করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হয় এই গুহা। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই গুহা সৃষ্টি হতে শুরু করে মধ্য যুগেই। কিন্তু এর পূর্ণ রূপে গড়ে ওঠা শুরু হয় খননের সময় ঘটা বিস্ফোরণের পরেই।
সোফিয়েন গুহা: সোফিয়েন গুহার ভেতর থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৬০ হাজার বছর পুরোনো ভালুকের হাড়। এছাড়া এই গুহার ভেতরে পাওয়া গেছে তুষার যুগের বহু প্রাণীর দেহাবশেষ। এই গুহায় আজকাল বেশ কিছু অনুষ্ঠান বা জলসা দেখতে ভিড় করেন স্থানীয় দর্শক।

সুইফাল্টেনডর্ফের ড্রিপস্টোন গুহা: জার্মানির সবচেয়ে ছোট এই গুহা মাত্র ৮৮ বর্গফুট বড়। ১৯৮২ সালে একটি সুড়ঙ্গ তৈরির সময় খুঁজে পাওয়া যায় গুহাটি। এই গুহার প্রবেশ পথ একটি হোটেল ও পানশালার ভেতর দিয়ে, যার ফলে হোটেলের খদ্দেরদের কাছে এই গুহাটি একটি বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
রিজেন্ডিং গুহা: জার্মানির উন্টার্সবের্গে রয়েছে দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘ গুহা (তিন হাজার ৭৭০ ফুট লম্বা)। ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন নানা আকারের হ্রদ ও একাধিক ঝর্ণা। ২০১৪ সালে একটি দুর্ঘটনার পর থেকে পর্যটকের জন্য বন্ধ রয়েছে গুহাটি। এখন সেখানে কেবল বিজ্ঞানীরাই যেতে পারেন।
শেলেনবের্গ তুষার গুহা: উন্টার্সবের্গেই রয়েছে জার্মানির একমাত্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত তুষার গুহা বা আইসকেভ। ৬০ হাজার ঘনমিটার বরফের আস্তরণ রয়েছে এই গুহায়, যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ প্রায় তিন হাজার বছরের পুরোনো। তবে পুরো গুহায় ঘুরতে পারেন না পর্যটকরা। শুধু ৫০০ মিটার অঞ্চলই রয়েছে উন্মুক্ত, এবং সেটাও শুধু হাইকিং করার জন্যেই।
পরিবেশ
পৃথিবীর সবচেয়ে গোলগাল প্রাণী কি এগুলোই?

পৃথিবীতে অনেক প্রাণী রয়েছে, আর তাদের মধ্যে অনেক প্রাণিই গোলগাল।
সেগুলোকে আপনি গোলাকৃতির আদুরে বল মনে করলেও তাদের এই আকৃতি আসলে প্রকৃতিতে তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করে।
প্রাণীজগতের সবচেয়ে গোলগাল কয়েকটি প্রাণীর তালিকা দেয়া হলো এখানে।

পাফার ফিশ/ পটকা মাছ
আমাদের তালিকার শুরেুতেই রয়েছে পাফার ফিশ পরিবার (টেট্রাওডোনটিডায়ে), যারা পটকা মাছ নামেও পরিচিত।
এই গোলাকার মাছ আত্মরক্ষার্থে বলের মত বৃত্তাকার আকার ধারণ করতে পারে।
নিজেদের ইলাস্টিকের মত পাকস্থলিতে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবেশ করিয়ে তারা এই আকৃতি ধারণ করতে পারে। এর ফলে তাদেরকে খুবই কম আকর্ষণীয় মনে হয়, সেসময় এই মাছের আকৃতি দেখে মনে হয় যে এটি খেতেও কঠিন।
বল আকৃতির এই মাছগুলো দেখতে ভাল লাগেও এটিকে ছোঁয়া একেবারেই উচিত নয়।
দুইশো’রও বেশি জাতের পটকা মাছের অধিকাংশের মধ্যেই টেট্রোডোটক্সিন নামের এক ধরনের বিষ রয়েছে, যা সায়ানাইডের চেয়ে ১২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত।

আরমাডিলো
স্প্যানিশ ভাষায় আরমাডিলো শব্দের অর্থ ‘বর্ম পরিহিত ছোট প্রাণী।’
পৃথিবীতে মোট ২১ ধরণের আরমাডিলো রয়েছে যাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্রটির নাম ‘গোলাপী পরী আরমাডিলো’ (ক্ল্যামিফোরাস ট্রাঙ্ক্যাটাস), যার দৈর্ঘ্য ৯ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মধ্যে হয়।
আরমাডিলোরা দিনে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমায়। এছাড়া প্রাণী হিসেবে তাদের যথেষ্ট ফ্যাশন সচেতনও বলতে পারেন। লাল, হলুদ, কালো, গোলাপী – এমন নানা রঙয়ের আরমাডিলো হয়ে থাকে।

টওনি আওল/পিঙ্গলবর্ণ প্যাঁচা
যুক্তরাজ্যে পাওয়া যাওয়া সাধারণ প্যাঁচাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির প্যাঁচা হলো টওনি আওল বা পিঙ্গলবর্ণ প্যাঁচা।
এই প্যঁচাগুলোর নরম, গোলাকার মাথা থাকে যেটি তারা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাতে পারে।
প্রজননের সময় এই ধরণের পুরুষ প্যাঁচা শুরুতে স্ত্রী প্যাঁচাকে দীর্ঘ ‘হুউউ’ ডাকে ডাক দেয়।
এরপর অপেক্ষাকৃত কম দীর্ঘ ‘হু’ এবং সবশেশে ‘হুহুহোওওওও’ ডাক দিয়ে শেষ করে।
জবাবে স্ত্রী প্যাঁচা ‘কী-উইক’ ডাকে জবাব দেয়।

সিল
সিল সাধারণত একা থাকলেও প্রজননের মৌসুমে একত্রিত হয়।
এই বৃত্তাকার মাছ গড়ে প্রতি ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার সাঁতার কাটতে পারে।
তবে কখনো কখনো তারা ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতেও সাঁতারাতে সক্ষম হয়।
এই ধরণের সিল সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

হেজহগ
হেজহগ অনেকটা সজারুর মত দেখতে একটি প্রাণী, নিজেকে শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করতে এর পিঠে অনেকগুলো কাঁটার মত থাকে।
বৃত্তাকার হওয়ায় শরীরের কাঁটামুক্ত অংশগুলো রক্ষা করতে সুবিধা হয় এর জন্য।
ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় ১৫ ধরণের হেজহগ পাওয়া যায়, যার মধ্যে সবকটিই নিশাচর।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন