আঙিনা কৃষি
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শাওনের শখের ছাদ বাগান – দা এগ্রো নিউজ

দা এগ্রো নিউজ ঈদ কনটেস্ট বিজয়ী শাওনের কাছ থেকেই জানুন, কীভাবে এবং তিনি এত সুন্দর একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। তার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য রইল শুভকামনা।
আমাদের একটু খানি হাতের ছোঁয়ায়, আামাদের ঘরের ছাদ কিংবা বারান্দা হয়ে উঠে আমাদের নন্দন কানন। এই ভালোবাসার ছোঁয়াকে আর একটু পূর্ণতা দিতেই, দা এগ্রো নিউজ এর পক্ষ থেকে আমাদের ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা ছিল “শখের বাগান ঈদ কনটেস্ট”, যার বিজয়ী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম শাওন। আজ আমরা তার বাগান তিনি কত ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি করেছেন সে সম্পর্কেই জানব।
শাওন এর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়। করোনাকালীন সময়ে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শাওন এর বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ। এই সময়টা তিনি নষ্ট না করে, নানা রকমের ফুল এবং ফলের গাছ দিয়ে গড়ে তুলেছেন তার শখের ছাদ বাগান।
তার বাগানে গোলাপ, এস্টার, পর্তুলিকা, কসমস, সন্ধ্যামালতী, মিলি, থাই লিলি, জাম্বু লিলি, এমারেলিসস লিলি, ক্রিমিনাল লিলি, হলুদ, সাদা, গোলাপি রেইন লিলি, বেলী, নয়ন তারা, অপারাজিতা, টগর, সহ আরও নানা রকমের ফুল গাছ রয়েছে, যা দেখলেই যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে।





শাওন আমাদের সাথে কথা বলার সময় অনেক কিছুই আমাদের জানান। তিনি বলেন, আমরা মনে করি মাটির আর কত ওজন হবে। তবে আপনি যদি একটা বাগান বা বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে যে পরিমাণে মাটি লাগবে তার ওজন নেহায়েত কম নয়। নিয়মিত গাছে পানি দেওয়ার ফলে ভেজা মাটির ওজন আরও বেড়ে যায়।তাই যখন ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা করবেন অবশ্যই জেনে নেবেন ছাদের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু। যেন পরে বাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়। বাড়ির ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের গাছ লাগানো সম্ভব। কোনো কারণে যদি ধারণ ক্ষমতা কম হয় তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করাও সম্ভব।
তার বাগানে আমরা নানা রকমের ফলের গাছও দেখতে পাই, আমের মধ্যে আছে কিং অফ চাকাপাত, বারি ৪, কাটিমন, কিওসাভয়, ব্যানানা ম্যাংগো, আমেরিকান রেড পালমার। থাই সফেদা, থাই জাম্বুরা, বারোমাসি আমড়া, লাল জামরুল। থাই সুপার ১০, থাই ৫, এবং মাধুরি পেয়ারা, থাই মিস্টি কামরাঙ্গা, নাগপুরী কমলা, বারি ১ মাল্টা, ভিয়েতনামী মাল্টা, মালবেরী সহ আরও অনেক ফল। শাওন আশা করছেন তিনি তার পরিবার এর বাৎসরিক ফলের চাহিদা তার বাগান থেকেই সম্পূর্ণ করবেন।
শাওন তার ছাদ বাগানে গাছ লাগানোর জন্য টব, ড্রাম এবং চৌবাচ্চা ব্যবহার করেছেন। আসুন তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই আমরা জেনে নেই কীভাবে আমরা একটি সফল ছাদ বাগান করব।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর টব পদ্ধতি:
টব দরকার মতো সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। এজন্য ছাদে ফুল গাছ লাগানো টব অনেকের মত শাওনেরও পছন্দ। তাছাড়াও টবে সার-মাটি দেওয়াও খুব সহজ। আজকাল অনেকেই মত তিনিও পোড়ামাটি এবং প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করেছেন। আবার টবের গায়ে রং দিয়ে তার সৌন্দর্যও বাড়িয়েছেন। তার মতে, টবে গাছ লাগানোর সময় মনে রাখতে হবে যেন ওই গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টবের অল্প মাটিতেই ওই গাছের খাদ্যপুষ্টিও ঠিক থাকে।




দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় হাফ ড্রাম পদ্ধতি:
শাওন বড় জাতের ফুলের গাছ এবং ফলের গাছের জন্য ড্রাম ব্যবহার করেছেন। তিনি জানান, বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করেও তিনি বড় দুটি টব তৈরি করেছেন। ড্রামগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি টুকরো ইটের ওপর বসিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন ছাদের ওপর হাফ ড্রাম রাখলে ছাদের ক্ষতি হয়, যা আসলে সঠিক নয়।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় চৌবাচ্চা পদ্ধতি:
ছাদে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর পানির ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে ইটের টুকরো এবং সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী চৌবাচ্চা তৈরি করে তিনি ভবিষ্যৎ এ আরও কিছু গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। যাতে করে একই ধরনের চৌবাচ্চায় মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ চাষ করে ছাদের পরিবেশকে আরও সুন্দর রাখাতে পারবেন বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।
দা এগ্রো নিউজ ঈদ প্রতিযোগিতায় ছাদ বাগানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা:
বাগানের মাটি থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত পানি ছাদের কংক্রিটের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও ছাদে আগাছা জন্মে ছাদের মেঝেকে পিচ্ছিল ও ক্ষয় করে ফেলে তাই যে গাছই বোনা হোক না কেনো এবং যে পদ্ধতিতেই বোনা হোক না কেনো পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে জানান শাওন।
তিনি টবের গাছের নিচে আরও একটি মাটির ট্রে রেখেছন। যদিও এটি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু মাটির ট্রে পানি শোষণ করে সেটিকে ছাদের মেঝেতেই পৌঁছে দেয়। তাই তিনি জানান, সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছাদের মেঝেতে পানি নিরোধক কোনো রং, টাইলস বা আলকাতরার একটা স্তর তৈরি করে তার উপরে যথাযথ একটা নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা করা যায়। নালার উপরে একটা ছাঁকনি রাখা যেতে পারে। এতে পানির সঙ্গে ধুয়ে যাওয়া মাটি নিষ্কাশন নালা বা ছাদে না পড়ে ছাঁকনিতে আটকে থাকবে। এভাবে মাটি এবং ছাদ উভয়ের ক্ষয় রোধ করা যাবে।
অনেকেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাদের এক কিনারা সামান্য ঢালু রাখেন এটিও বেশ ভালো উপায়। তবে কিছুতেই ছাদের কোনো কিনারা ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে না। এতে স্থাপনার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
শাওন বাড়িতেই খৈল পচা পানি ও নিম পাতা ব্যবহার করে সার তৈরী করে, সেই সার তার গাছে ব্যাবহার করেন। এভাবে তার শখের বাগানকে তিনি দিন দিন আরো প্রসারিত এবং সুন্দর করে তুলছেন।
শাওন বলেন, ভবিষ্যতে তার ত্বীন ফল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা অনেক বেশি। ভবিষ্যতে মিররীয়/আরবীয় ত্বীন/ডুমুর গাছও লাগাতে চান তিনি। তার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য রইল শুভকামনা।






আঙিনা কৃষি
ধনেপাতা চাষ করুন টবে

সালাদের জন্য ধনেপাতা অন্যতম। খাবার সুস্বাদু করতে ধনেপাতার জুড়ি নেই। তাই যারা শহরে থাকেন তারা টবে করে বাসার ছাদে অথবা বারান্দায় ধনেপাতা চাষ করতে পারেন।
গুণাবলি
ধনেপাতায় ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন পাওয়া যায়। টবে ধনেপাতার চাষ করার সুবিধা হচ্ছে- প্রায় বারো মাসই চাষ করা যায়।
সময়
তবে আশ্বিন থেকে পৌষ অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষ করা যায়।

মাটি
সব
রকমের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটি
ধনেপাতা চাষের জন্য উপযোগী। ধনেপাতা আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা
থাকতে হবে।
বীজ বপণ
বীজ
২৪ ঘণ্টা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে ভিজিয়ে রাখলে তাড়াতাড়ি গজাবে। ধনেপাতার
জন্য চওড়া মুখ বিশিষ্ট টব নির্বাচন করতে হবে। ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ
বুনে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে পানি দেওয়ার
দরকার নেই।
সার
পরিমাণমতো ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি এবং গোবর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পরিচর্যা
মাটিতে
রস না থাকলে ২-১ দিন পরপর পানি সেচ দিতে হবে। পাখি যাতে পাতা না খায়
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ বোনার পর পিঁপড়া যাতে খেয়ে ফেলতে না পারে
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিঁপড়া এলে কীটনাশক ছিটিয়ে পিঁপড়া দমন করতে
হবে।
পাতা তোলা
গাছ খুব ঘন হলে তা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বেশি বড় হওয়ার আগে তুলে খেতে হবে।
আঙিনা কৃষি
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting)
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring)
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management)
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
আঙিনা কৃষি
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার নিয়ম ও উপকারিতা: ঘরে বসেই ফলান সুস্বাদু আম

আজকাল শহুরে পরিবেশে জায়গার অভাবে অনেকেই ছাদে বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। আমের মতো সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ফলও এখন ছাদে চাষ করা সম্ভব। কলমের চারা ব্যবহার করে ছাদে আম চাষ করা সহজ, কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে আপনি ছাদেই ফলাতে পারবেন পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু আম।
আমের কলমের চারা: কেন এটি আদর্শ?
- আমের কলমের চারাগুলো সহজে বেড়ে ওঠে এবং দ্রুত ফল ধরে।
- এটি বীজ থেকে চাষ করা গাছের তুলনায় অধিক ফলনশীল।
- ছোট জায়গায় এবং টবে চাষের জন্য আদর্শ।

ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার ধাপসমূহ
সঠিক জায়গা নির্বাচন
- ছাদের এমন জায়গা বেছে নিন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছায়।
- ছাদটি এমন হতে হবে যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো।
টব বা ড্রামের প্রস্তুতি
- মাটি ধারণক্ষমতা ভালো এমন বড় টব বা ড্রাম ব্যবহার করুন।
- ১৮-২৪ ইঞ্চি গভীর এবং প্রশস্ত টব/ড্রাম বেছে নিন।
- টবের নিচে ছিদ্র রাখুন, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
মাটির মিশ্রণ তৈরি
- মাটির মিশ্রণে ৬০% দোআঁশ মাটি, ২০% জৈব সার (গোবর বা কম্পোস্ট) এবং ২০% বালি ব্যবহার করুন।
- মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য কিছু টিএসপি এবং পটাশ মিশিয়ে নিন।

চারা রোপণ
- ভালো মানের আমের কলমের চারা সংগ্রহ করুন, যেমন আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ইত্যাদি।
- চারার গোড়া শক্তভাবে মাটিতে পুঁতে দিন এবং মাটি চেপে দিন।
- রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
- চারার মাটি সব সময় আর্দ্র রাখুন, তবে পানি জমতে দেবেন না।
- গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন এবং শীতকালে ২-৩ দিন পর পর পানি দিন।
সার প্রয়োগ
- রোপণের এক মাস পর থেকে প্রতি মাসে জৈব সার প্রয়োগ করুন।
- গাছে ফুল আসার সময় পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
ছাঁটাই ও পরিচর্যা
- গাছের শুকনো ডাল এবং পাতাগুলো নিয়মিত ছাঁটাই করুন।
- গাছে রোগবালাই হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
কীটনাশক ব্যবহার
- পোকামাকড় দমনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
ফল সংগ্রহ
- কলমের চারা সাধারণত ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল ধরে।
- ফল পাকার পর সাবধানে সংগ্রহ করুন।

ছাদে আম বাগান করার উপকারিতা
সতেজ এবং বিষমুক্ত ফল
- নিজের বাগানের আম বিষমুক্ত ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
- বাজারের ফলের তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
জায়গার সঠিক ব্যবহার
- শহুরে ছোট জায়গাতেও ছাদে আম চাষ করা সম্ভব।
- এটি ছাদের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং পরিবেশ বান্ধব।
আর্থিক সাশ্রয়
- বাজার থেকে আম কেনার বদলে নিজের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা সাশ্রয়ী।
- দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ।
পরিবেশের জন্য উপকারী
- ছাদে গাছ থাকা মানে তাপমাত্রা কমানো এবং পরিবেশের জন্য কার্যকর।
- এটি বাড়ির বাতাসকে শীতল ও বিশুদ্ধ রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
- বাগান পরিচর্যা করা মানসিক চাপ কমায়।
- এটি একটি দারুণ শখ, যা আপনাকে সুস্থ রাখে।
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করা শুধু সহজ নয়, এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করলে আপনি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বিষমুক্ত আমের ফলন পেতে পারেন। তাই সময় নষ্ট না করে আজই আপনার ছাদে একটি আম বাগান গড়ে তুলুন এবং নিজের ফসলের আনন্দ উপভোগ করুন।
আঙিনা কৃষি
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান

আম বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ফলের নাম । আমকে ফলের রাজা বলা হয় । সারা দেশেই এর চাষ হলেও বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হল এই আম । বাংলাদেশে অনেক জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে । তবে এর মধ্যে ভাল জাতের আমের চাষ রাজশাহী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ । শহরের বাসিন্দারা ছাদে দুচারটা আম গাছ লাগিয়ে শখ মিটাতে পারেন ।
ছাদের উপযোগী জাতঃ সব জাতের আমই ছাদে চাষ করা সম্ভব ।
তবে ফলন বেশী হয় ছাদের জন্য এমন কিছু জাত নির্বাচন করা উচিৎ । এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় বারি আম -৩ জাতটি । গাছ ছোট আকৃতি, ফল মাঝারি এবং খেতে বেশ সুস্বাদু । যার আরেক নাম আম্রপালি । মোটামুটি প্রতিবছরই ফল দেয় বিধায় ছাদে লাগানোর ক্ষেত্রে আম্রপালিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ । তাছাড়াও বাউ আম – ১, ২, ৩, ৬, ৭, লতা বোম্বাই ইত্যাদি বামন জাতের আম ছাদের জন্য বেশ উপযোগী । চাষ পদ্ধতিঃ ছাদে আমের কলমের চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে । ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । এবার ২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার, ১ কেজি কাঠের ছাই, ১কেজি হাড়ের গোড়া ও হাফ কেজি সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১৫ দিন ।

অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে । যখন মাটি কিছুটা ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সুস্থ সবল কলমের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । টবের গাছটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রায় সারাদিন রোদ লাগে ।
আঙিনা কৃষি
রাঙ্গুনিয়ায় ছাদে সাকিবের বাগানে থোকায় থোকায় পাকা আম

রাঙ্গুনিয়ায় সাকিবের ছাদে গড়ে তোলা আম বাগানে সুস্বাদু আমের ঘ্রানে চারদিক মৌ মৌ করছে। আম বাগানে উঁকি দিচ্ছে এলাকার লোকজন। পাকা আমে জানান দিচ্ছে মধুমাস সমাগত। উপজেলার রাঙ্গুনিয়া থানার পার্শ¦স্থ সৈয়দ বাড়ী এলাকায় কলেজ পড়–য়া মো. সাকিব ঘরের ছাদে টবে লাগিয়েছে সারি সারি আম গাছ। আমের মুকুল আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে আম। পাকা আমের মৌ মৌ সুঘ্রানে ছুটে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। সবার মাঝে কৌতুহল জাগছে মৌসুম ছাড়া আম গাছে আম ধরার বিষয়টি। সাকিবের আম বাগান দেখে এলাকার অধিকাংশ যুবক ছাদের টবে আম বাগান করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। দীর্ঘদিন আগে থেকে সাকিব আম গাছের পরিচর্যা করে আসছিল। কয়েকটি গাছে আম পাকতেও শুরু করেছে। সে আম গাছের পাশাপাশি লেবু আনারসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা লাগিয়েছে ফলও ধরেছে আশানরুপ।
অপরদিকে মৌসুম বিহীন আম বাগানে আম আসার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, নির্ধারিত সময়ের আগে উন্নত মানের চারা ও সঠিক পরিচর্যা হওয়ায় ছাদে আম ধরার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু না। ছাদে কেউ বানিজ্যিকভাবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিলে সাকিবের মতো আম বাগান করে সফলতা আসবে।

বিশেষ করে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বেশি। সেই সঙ্গে গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
ছাদে আম বাগান করার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্র সাকিব জানায়, ঘরের ছাদে অল্প জায়গায় উন্নত মানের আমের চারা লাগানো হয়। কৃষি কর্মকর্র্তার পরামর্শে আম বাগানের পরিচর্যা করি। আমের ফলনও ভাল হয়েছে। দুয়েকটি গাছে আম পাকতে শুরু করেছে। ঘরের ছাদে অল্প পরিসরে টবে আম বাগান করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করা যাবে ও পরিবারের পুষ্টির যোগান দেওয়া যাবে। আগামী বছরে ব্যাপক ভাবে আম বাগান করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। আমার দেখাদেখিতে অনেকেই ছাদের টবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফরমালিনমুক্ত আম খাওয়ার জন্য ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ঘরের ছাদে যে কেউ আম বাগান অনায়সে করতে পারে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন