ফুল
টবে গোলাপ চাষের নিয়ম

শহরে কিংবা গ্রামে বাড়ির ছাদে বা আশেপাশে শখ করে অনেকেই টবে ফুল চাষ করেন। সেই ক্ষেত্রে বেশির ভাগেরই পছন্দ গোলাপ। আপনি যদি টবে গোলাপ চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে গোলাপ চাষ সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে।
চারা রোপণ
নতুন চারা না লাগিয়ে একবছরের পুরনো চারা লাগাতে পারেন। চারাটি সোজাভাবে গর্তের মধ্যে লাগাতে হবে। চারার শেকড় ভালোভাবে মাটি দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে দিতে হবে। জোড় কলমের মাধ্যমে উৎপাদিত চারার জোড়ের স্থানটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সেন্টিমিটার উপরের দিকে রাখতে হবে।
গাছ ছাঁটাই
নতুন শাখা ভালোভাবে বিস্তৃত করার জন্য পুরনো ডাল, ক্ষত ও রোগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দিতে হয়। বড় গোলাপ পেতে হলে গাছ নিয়মিত ছাঁটাই করতে হয়। আশ্বিন মাসকে গাছ ছাঁটাইয়ের উপযুক্ত সময় ধরা হয়।
সার প্রয়োগ
গাছ ছাঁটাইয়ের ১০-১২ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছ প্রতি ২-৩ কেজি পঁচা শুকনো গোবরের সঙ্গে ৫০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। টবের উপর থেকে ১০ সেন্টিমিটার মাটি সরিয়ে নিচের মাটি কিছুটা আলগা করে সারগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এসময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। হাঁস-মুরগি বা কবুতরের বিষ্ঠা সার হিসেবে গোলাপ গাছে দেওয়া যেতে পারে।
পানি
• চারা লাগানোর পরে চারার গোড়ায় প্রথম দিকে ঘন ঘন পানি দিতে হবে।
• টবের মাটিতে ভালোভাবে চারা গজালে এবং নতুন ডালপালা ছাড়ার পরে খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর পর একবার করে সেচের মতো পানি দিতে হবে।
• প্রত্যেকবার পানি সেচের পরে গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ
টবে চাষ করার সময় পোকা আক্রমণ করলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
পরিচর্যা
১. চারার জোড়া জায়গাটির নিচে কোন প্রকার ডালপালা বের হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দিন।
২. বড় আকারে ফুল পেতে হলে প্রথম দিকে বের হওয়া পুষ্পকুড়ি ভেঙে দিন।
৩. মার্চ-এপ্রিল মাসে পঁচা গোবর এবং কম্পোস্টের মালচ গাছের গোড়ায় দিন।
৪. পুরান ডালে ফুল ভালো হয় না। তাই ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে।
৫. ছাঁটাইকৃত ডালের সামনে ছত্রাকনাশক ঘন করে গুলে লাগিয়ে দিন।
৬. গাছের গোড়া থেকে ২০ সেন্টিমিটার দূরে গোল করে মাটি খুঁড়ে শেকড় বের করে দিন।
৭. ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস করতে এভাবে মাটি খুঁড়ে ৮-১০ দিন রাখতে পারেন।
এগ্রোবিজ
বেকারত্ব দূর করতে ফুল চাষ

সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে ফুলের আবেদন চিরন্তন। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েই চলছে। ফলে এখন ফুলেও লেগেছে বাণিজ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বেড়ে চলছে ফুলের চাষ ও ব্যবহার। তাই আপনিও ফুলের চাষ করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন।
চাষের স্থান
সারাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা যায়। গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বিলজুড়ে চাষ করা যায় নানা জাতের ফুল। এছাড়া বাড়ির পাশের জমিতে ফুলের চাষ করা যায়। চাষ করতে পারেন বাড়ির ছাদেও।
যে ধরনের ফুল
লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, রজনীগন্ধা, ভুট্টা ফুল, গাঁদা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরম ফেনিয়া, জারবরা, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টারকলি, ডালিয়া, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবেনা, হেলিক্রিসাম, অ্যান্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, অ্যাস্টার ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল চাষ করা যায়।
পুঁজি
প্রথম খুব বেশি পুঁজির দরকার হয় না। জমির আকারের ওপর নির্ভর করে খরচ কম-বেশি হতে পারে।
চাষ ও পরিচর্যা
ফুলের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর-নভেম্বর মাস। টবসহ চারাও কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। টবের মাটির সঙ্গে জৈব সার বা কম্পোস্ট সার পর্যাপ্ত পরিমাণে মেশাতে হয়। সাবধানতার সঙ্গে চারা রোপণ করে ঝাঁঝর দিয়ে উপর থেকে বৃষ্টির মতো পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে গাছ এবং পাতা উভয়ই ভেজে। প্রয়োজনে হেলে পড়া গাছকে লাঠি পুঁতে তার সঙ্গে বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিবিদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
বিক্রয়
শহরে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে ঝামেলা হতে পারে। অনেক সময় ঠিকমতো দামও পাওয়া যায় না। তাই উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য এলাকাতেই ফুলের দোকান গড়ে তুলতে পারেন।
কর্মসংস্থান
অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষে লাভ অনেক বেশি। আর ফুল চাষ করার ফলে বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কারণ ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার, ফুল ছেঁড়া, ফুলের মালা গাঁথাসহ অনেক কাজে পুরুষ এবং নারী সম্পৃক্ত হতে পারে।
এগ্রোবিজ
ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
শুধু ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করেন এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার। জেনে নিন সেই যুবক সম্পর্কে।















ছাদকৃষি
টবে ফুলের চাষ কেন করবেন

শহরে যারা থাকেন, তাদের জন্য ফুলের বাগান করার সুযোগ কম। কেবল বিল্ডিংয়ের ছাদ, বারান্দা, সিঁড়িঘরই ভরসা। তাই টবে দু-চারটা ফুলগাছ লাগানো যেতে পারে। সব ফুলের গাছ আবার টবে ভালো হয় না। সেজন্য জেনে নিন টবে চাষের উপযোগী ফুলগাছ কোনগুলো।
টবের উপযোগী
বৃক্ষজাতীয় দীর্ঘজীবী ফুলগুলো টবে
রোপণ না করাই ভালো। বিভিন্ন মৌসুমী ফুল টবের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে যে
ফুলগাছই রোপণ করা হোক না কেন, সেগুলো যেন রোদ পায়। একটু পরিকল্পনা করে টবে
ফুলগাছ রোপণ করলে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল পাওয়া যাবে।
টবের ফুলগাছ
গ্রীষ্মকালে গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা,
সূর্যমুখী, জিনিয়া, পিটুনিয়া, মোরগঝুঁটি, দোপাটি, মণিকুন্তলা, বিচিত্রা
ইত্যাদি চাষ করা যায়। বর্ষায় ভালো হবে হাইড্রেঞ্জিয়া, বেলি, জুঁই, চাঁপা,
পত্রলেখা, তুষারমোতি, দোপাটি, জিনিয়া, সূর্যমুখী (ছোট), স্থলপদ্ম,
মালতীলতা প্রভৃতি। শীতকালে গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি,
পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন,
স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া ইত্যাদি। সারা বছর কাঞ্চন (সাদা),
জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা, জয়তী, হাজারপুটিয়া, নয়নতারা,
সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে বেলি, জুঁই,
বাগানবিলাস, গোলাপ, জবা, করবী, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, কুন্দ, চাঁপা, মুসেন্ডা,
কামিনী, অ্যালামন্ডা, স্থলপদ্ম, পোর্টল্যান্ডিয়া, ব্রানফেলসিয়া,
ক্যামেলিয়া, টগর, শিউলি, পয়েনসেটিয়া উল্লেখযোগ্য।

সহজে মরে না
সহজে মরে না বা একটু কম যত্ন নিলেও ফুল
ফোটে এমন গাছ রোপণ করতে চাইলে নয়নতারা, সন্ধ্যামণি, দোলনচাঁপা, কলাবতী,
অ্যালামন্ডা, গাঁদা, বেলি, নাইটকুইন, হাসনাহেনা, রঙ্গন, মুসেন্ডা,
কুঞ্জলতা, টাইমফুল প্রভৃতি পছন্দ করতে পারেন। লাগাতে পারেন ফুল দেওয়া
বিভিন্ন ক্যাকটাস, এগুলো সহজে মরে না।
রোপণের নিয়ম
প্রথমে গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব
সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড়
গাছের জন্য ছোট টব চলবে না। প্রতি টবের জন্য দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের
একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এরসঙ্গে
একমুঠো হাড়ের গুড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু’মুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়।
এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকে।

পরিচর্যা
মৌসুমী ফুলের ক্ষেত্রে মাসখানেক বয়সের
ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার বেলায় অল্পবয়সী ভালো ও তরতাজা,
গাট্টাগোট্টা দেখে চারা বা কলম লাগানো ভালো। চারা লাগানোর পর আস্তে আস্তে
চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। লাগানোর পর গোড়ায় পানি দিতে
হবে। গাছকে খাড়া রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। গাছের চারা অবস্থা
থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সদ্য লাগানো ফুলের চারা কয়েক দিন ছায়ায় রেখে সহনশীল করে নিতে হয়। এ
অবস্থায় সকালে ও বিকেলে রোদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টবে গাছের
গোড়ার মাটি একেবারে গুড়ো না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়া ভালো। এ
ক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ
কাজটি প্রতি ১০ দিনে একবার করে করতে হবে।
সার
কুঁড়ি আসার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ৫০ গ্রাম টিএসপি
(কালো সার), ১০০ গ্রাম ইউরিয়া (সাদা সার) ও ২৫ গ্রাম এমওপি (লাল সার)
একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতি গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর দিতে হবে। তবে এক
মৌসুমে এই রাসায়নিক সার তিনবারের বেশি দেওয়া যাবে না। তবে রাসায়নিক সার
ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার কোনোক্রমেই শেকড়ের ওপর না পড়ে।
ট্যাবলেট সার দিলে এসব সার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

বেশি ফুল চাইলে
বেশিদিন ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে ফুল শুকাতে দিবেন না। ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভালো ফুল পাওয়া যায়। গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছ থেকে বেশি ফুল বেশিদিন পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ি চিমটি দিয়ে ছেঁটে দিতে হয়।
ফুল
ফুল চাষে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

ফুল এখন শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই চাষ হয় না, বাণিজ্যিকভাবেও এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে চাহিদার নিরিখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের ফুল জন্মে।
এ সব ফুলের মধ্যে রয়েছে,- গোলাপ, গাঁদা, চামেলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, শেফালি, দোপাট্টি, হাসনা-হেনা, চন্দ্রমলি্লকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা জবা, মালতি, কামিনী ইত্যাদি। কিছু কিছু ফুল আছে দীর্ঘজীবী এবং কিছু মৌসুমী। সব ফুলেরই বাণিজ্যিকভাবে প্রায় সমান গুরুত্ব রয়েছে।
কিছু কিছু ফুল এমনিতেই জন্মে আবার। কিছু কিছু ফুলের চাষ করতে হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রঙ্গন, গ্লাডিওলাস ইত্যাদি খুলনা ও যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

রোপণের সময়: অধিকাংশ ফুলের বীজ, চারা, কলম বা কন্দ অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত রোপণের উপযুক্ত সময়।
জমি নির্বাচন: এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। উঁচু দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। মনে রাখতে হবে, ফুল চাষের জন্য জমি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগানের আকার-আকৃতি মানানসই হলে ভালো দেখায়।

বেড়া দেয়া: গবাদি পশুর বা অবাঞ্ছিত আক্রমণ থেকে ফুল গাছকে বাঁচাতে হলে শক্ত বাঁশের বা কাঁটাতার বা লোহার বেড়া দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গরু-ছাগল যেন সে বেড়া ভেঙ্গে না ফেলে।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ: জমির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন জাতের ফুলের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ভাগ করে পরিকল্পনা মাফিক চারা রোপণ করতে হবে। কন্দ, চারা বা কলম রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে জমি ভালোভাবে কুপিয়ে উপযুক্ত ও পরিমিত সার দিতে হবে।

এসব সারের মধ্যে রয়েছে,- পচা গোবর, টিএসপি, হাঁড়ের গুঁড়া, এম.পি. ইউরিয়া, খৈল, চায়ের উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি ঝরঝরে করতে হবে। সার প্রয়োগে জৈব সারের প্রাধান্য দেয়া উচিত। সব সময় স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ চারা বা কন্দ লাগাতে হবে। চারা লাগিয়ে উপরে চাপ না দিয়ে পাশের মাটি চাপ দিয়ে শক্তভাবে চেপে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত পানি দিতে হবে। চারাভেদে খুঁটি পুঁতে চারার গায়ে বেঁধে দিতে হবে।
ফুল গাছের বা বীজ যেখানে পাবেন: শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভালো নার্সারিতে উন্নতজাতের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে চারা পাওয়া যাবে।

যেভাবে পরিচর্যা করতে হবে: আগাছা নিড়ানী দিয়ে তুলে ফেলতে হবে এবং গোড়ার মাটি মাঝে-মধ্যে আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষার জন্য হিপ্টেক্লোন-৪০ পরিমাণমতো দেয়া যায়। সাধারণ পোকার জন্য মেলতিয়ন বা ডাইমেক্রন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগ অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সার প্রয়োগের কলাকৌশল জেনে চাহিদামতো কয়েক দফা সুষম সার ও সেচ দিতে হবে। ফুল ধরার বেশ আগে থেকেই বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফুলের পরিমাণ ও মান উভয় দিকেই খেয়াল রাখা দরকার। গাছভেদে পুরানো ও রোগা ডাল-পালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।

ফুল সংগ্রহ: ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগে ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা যায়। ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল সজীব থাকে। মান ভালো রাখার জন্য ডাঁটাসহ ফুল আঁটি বেঁধে পরিপাটি করে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠাতে হবে।
টবে ফুল চাষ: জমির অভাবে দালানের ছাদে, বারান্দার টবে সৌখিন বা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্নজাতের বা রঙের গোলাপ ও গাঁদা। এছাড়া ডালিয়া, রঙ্গন, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন আর্কিড, নানাজাতের আকর্ষণীয় ক্যাকটাস ও বনসাই।
বর্তমানে বাজারে এসবের ভালো চাহিদা রয়েছে। সময় বাঁচানো এবং নির্মল আনন্দের জন্য বর্ষজীবি বা স্থায়ী ফুলের চাষ করা যায়। যেমন- গোলাপ, জবা, চেরি, দোলনচাঁপা, মালতি, কামিনী, রঙ্গন, পাতাবাহার, বিভিন্ন আর্কিড ও নানাজাতের ক্যাকটাস। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য সার খুবই কম লাগে। ফলে ব্যয়ও হয় খুব কম।
ফুল
জেনে নিন সহজ উপায়ে জুঁই ফুলের চাষ পদ্ধতি

মন মাতানো সুগন্ধি এবং বাঙালিদের অত্যন্ত জনপ্রিয় জুঁই ফুল চাষ খুব সহজেই করা যায়। ইদানিং আমাদের দেশে এই ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।
শুধু সৌন্দর্য বর্ধনই নয়, ‘জুঁই’ এখন অর্থকরী ফুল।
মালা তৈরির জন্য, ফুল সজ্জায় এবং উপাসনার ডালা সাজানোর জন্য ব্যবহৃত জুঁই ফুলের চাহিদা থাকায় আর্থিক ভাবে লাভ হচ্ছে চাষিরা।
আজ আমরা এই নিবন্ধে সহজ উপায়ে কিভাবে জুঁই ফুলের চাষ করবেন তা নিয়ে আলোচনা করব।
খুব সহজেই স্বল্প পরিশ্রমে সুগন্ধি জুঁই ফুলের চাষ সম্ভব। জুঁই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল। এই ফুলের অনেকগুলো প্রজাতি পাওয়া যায় ইউরোপ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এই গাছগুলির উচ্চতা ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত হয়। এর পাতা চিরসবুজ যা কিনা আড়াই ইঞ্চি লম্বা, সবুজ ও সরু কান্ডযুক্ত এবং এটি সাদা বর্ণের ফুল ধারণ করে। ফুলগুলি মূলত মার্চ থেকে জুন মাসে ফোটে। এটি মূলত মালা তৈরির জন্য, ফুল সজ্জায় এবং উপাসনার ডালা সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এর দৃঢ় এবং সুগন্ধযুক্ত সুবাসের কারণে এটি আতর তৈরিতে এবং সাবান, ক্রিম, তেল, শ্যাম্পু এবং ওয়াশিং ডিটারজেন্টগুলিতে সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহৃত হয়। সারাবছর এই ফুলের চাহিদা থাকায় এই ফুল বেচে প্রচুর লক্ষ্মীলাভও হয় কৃষকদের৷

মাটি(Soil)
যেকোনও মাটিতে জুঁই গাছের চাষ করা সম্ভব৷ তবে কাঁকরযুক্ত মাটি না হওয়াই শ্রেয়৷ জল সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি থেকে শুরু করে বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালভাবে জন্মাতে পারে। তবে এটি ভাল ফলাফল দেয় যখন সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশযুক্ত মাটিতে জল সুনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে। সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য মাটিতে গোবর সার পর্যাপ্ত পরিমাণে মিশ্রিত করে নিতে হবে। গাছ লাগানোর জন্য, মাটির পিএইচ 6.5 এর বেশি হওয়া উচিত নয়।
জুঁই ফুল গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূলত সাদা রঙের এই ফুল মার্চ-জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফোটে।
প্রায় সব ধরনের মাটিতে জুঁই ফুলের চাষ করা গেলেও, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটিতে জুঁই ফুল গাছ ভালো জন্মে।
জমি তৈরী ও রোপণ পদ্ধতি
- জুঁই ফুলের চাষের জমি বা টবের মাটিতে গোবর সার ভালো ভাবে মিশিয়ে নিলে এই ফুলের চাষ ভালো হয়।
- এছাড়া চাষ শুরু করার আগে জমিকে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।
- এই ফুলের রোপণের গর্তগুলো এক মাস আগে ৩০ সেমি আকারে প্রস্তুত করে সূর্যের আলোতে রাখতে হবে।
- প্রতিটি গর্ত বা টবের মাটি তৈরির সময় ১০ কেজি গোবর সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- মাটিতে গোবর সার প্রয়োগ করলে এই ফুলের চাষাবাদ ভালো হয়।
- জুন-নভেম্বর পর্যন্ত জুঁই ফুলের চারা রোপনের আদর্শ সময়।
- জুঁই ফুল গাছের গোড়ায় পানি যাতে জমতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত সূর্যের আলো এই ফুল গাছের জন্য বিপজ্জনক; সারাদিনে ঘণ্টাখানেক রোদই যথেষ্ট।
- টবে যদি এই গাছ বসানো হয়, তবে তা জানালার পাশে রাখতে পারেন।
- শীতকালে ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় জুঁই ফুল গাছকে।
- শীতকালে সাধারণত ফুল ফোটে কম; তবে এই সময় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
- জুঁই ফুল ফোটলে প্রচুর পানি দিতে হয়; সেই সময় এই গাছের গোড়া ভিজে রাখতে পারলেই ভাল।
ভাল চাষ উপযোগী করার জন্য প্রথমে চারা রোপণের জমিটিকে আগাছামুক্ত করতে হবে। ক্ষেতের আগাছা মুক্ত করার জন্য এক-দু’টি প্রাথমিক চাষ প্রয়োজন। লাঙল করার পরে গর্তগুলি রোপণের এক মাস আগে ৩০ ঘনসেমি আকারে প্রস্তুত করা হয় এবং সূর্যের আলোর নিচে রেখে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় ১০ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশ্রিত করতে হয়।

বপণের সময়(Time of planting)
সাধারণত, জুন থেকে নভেম্বর মাসে বপণ করা হয় | বিভিন্ন ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়। সাধারণত গড়ে ১.৮*১.৮ মিটার ব্যবধান প্রয়োজন।
সার প্রয়োগ
জমি তৈরির সময়, নাইট্রোজেন ৬০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ, পটাশিয়াম ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ এবং ফসফরাস ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ আকারে সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে । এই স্যারের মিশ্রণটি সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে | প্রথম ভাগটি জানুয়ারী মাসে দিতে হবে এবং দ্বিতীয় ভাগটি জুলাই মাসে দিতে হবে। অতিরিক্ত জৈব সার হিসাবে, নিমের খোল, সরিষার খোল ইত্যাদি দেওয়া খুবই ভাল। এদেরকে ১০০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদে দেওয়া হয়। ফুলের ফলন বাড়াতে জিঙ্ক ০.২৫% এবং ম্যাগনেসিয়াম ০.৫% হরে স্প্রে করতে হবে । লৌহের ঘাটতি থেকে রক্ষা পেতে, মাসিক বিরতিতে ফেরাস সালফেটের বড়ি ৫ গ্রাম প্রতি লিটারে স্প্রে করতে হবে |
জুঁই ফুলের চাষ জমি বা টব তৈরির সময় প্রতি গাছের জন্য
- নাইট্রোজেন ৬০ গ্রাম,
- পটাশিয়াম ১২০ গ্রাম,
- এবং ফসফরাস ১২০ গ্রাম সারের মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
এই সার গুলো ২ বারে প্রয়োগ করতে হবে। অতিরিক্ত জৈব সার হিসাবে, নিমের খোল, সরিষার খোল ইত্যাদি প্রয়োগ করা উত্তম। এছাড়া ফুলের ফলন বাড়াতে জিঙ্ক ০.২৫% এবং ম্যাগনেসিয়াম ০.৫% হরে স্প্রে করতে পারেন।
জুঁই ফুল ক্ষেতে বা টবে নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই ফুল গাছের যথাযথ বৃদ্ধি এবং ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে।

আগাছা দমন
ফসলের ভাল বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আগাছা দমন অতি প্রয়োজনীয়। রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পরে প্রথম আগাছা তোলা উচিত এবং তারপরে প্রতি ২-৩ মাসে একবার করে আগাছা পরিষ্কার করা উচিত।
সেচ
ফুলের যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সময়ের ব্যবধানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্ম কালে সেচ সপ্তাহে একবার করা হয়। ফুল আসার পরে, পরবর্তী সার দেওয়া এবং ছাঁটাই পর্যন্ত কোনও সেচের প্রয়োজন হয় না।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
শিকড় পচা রোগ
এই রোগের লক্ষণগুলি হল বাদামি বর্ণের ফুসকুড়ি পাতার নিচের পৃষ্ঠে দেখা যায় এবং কখনও কখনও কান্ড এবং ফুলেও দেখা যেতে পারে।
প্রতিকার
শিকড়ের পচা রোগ থেকে নিরাময় পেতে কপার oxychloride ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হয় |
লাল মাকড়সা পোকার আক্রমণে জুঁই ফুল গাছের পাতার উপরের পৃষ্ঠের বিচিত্র বর্ণালি প্রদর্শন করে। পাতাগুলি তাদের রঙ হারাতে শুরু করে এবং অবশেষে ঝরে পড়ে।
এই পোকার আক্রমণে থেকে মুক্তি পেতে সালফার ৫০% WP ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।

ফুল সংগ্রহ
জুঁই ফুলের চারা রোপনের ১০০-১২০ দিনের মধ্যে ফুল ফোটে। এই ফুল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, গাছের বয়স যত বাড়বে ততই জুঁই ফুলের উৎপাদন বেশি হবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন