এগ্রোবিজ
দাম কমলো পেঁয়াজ-রসুনের
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ তুলে নেয়ায় এবং দেশে রসুনের সরবরাহ বাড়ায় এ দুটি নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা এবং রসুনের দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের দাম কমে ৮০-৯০ টাকা হয়েছে। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০-১২০ টাকা।
আমদানি করা চীনা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০-২১০ টাকা কেজি। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে। আর দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম কেজিতে কমেছে ৭০ টাকা।
পেঁয়াজ-রসুনের এই দাম কমার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী জাহিদ বলেন, ভারত রফতানি বন্ধ করায় আমাদের এখানে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এখন ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ তুলে নিয়েছে। এ কারণে দাম কমেছে সব ধরনের পেঁয়াজের। আর দেশি রসুনের সরবরাহ বাড়ায় এর দাম কমেছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনা রসুনের দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। সে সময় দেশি রসুনের সরবরাহ কম ছিল। এখন বাজারে প্রচুর নতুন দেশি রসুন আসছে। এ কারণে সব ধরনের রসুনের দাম কমেছে।
মালিবাগের ব্যবসায়ী খায়রুল বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ তুলে নেয়ায় ঘোষণা দেয়ার পরপরই শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। ভারত থেকে রফতানি শুরু হলে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। আর বাজারে দেশি রসুনও আসতে শুরু করায় দাম কমা শুরু হয়েছে। আমাদের ধারণা, সামনে দাম আরও কমবে।
এদিকে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাউ, করলা, টমেটো, শশা, শিম, শালগম, মুলা, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে।
গত সপ্তাহে ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-১০০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা।
গত সপ্তাহে ৩০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম কমে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে গত সপ্তাহের মতো ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৬০ টাকা।
ভালো মানের শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা। শালগম বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি।
দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে বেগুন, মুলা, কাঁচা মরিচও। গত সপ্তাহে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুলার দাম কমে ২০-২৫ টাকা হয়েছে। ৬০-৭০ টাকার বেগুন দাম কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০-৩০ টাকা।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলম বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে যে লাউ ১০০ টাকা বিক্রি করেছি, আজ তা ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। ৬০ টাকার পাকা টমেটো ৪০ টাকা হয়েছে। সবজির দাম এখন যে দামে আছে এর থেকে কমার সম্ভাবনা খুব কম।
রামপুরার বাসিন্দা মামুন বলেন, এবার শীতের ভরা মৌসুমে সবজির দাম বেশি ছিল। তবে হঠাৎ করে এখন লাউয়ের দাম কমেছে। করলা, কচুর লতিতে দাম এখনও অনেক বেশি। পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কিছুটা কমেছে, তবে দাম আরও কমা উচিত। পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার নিচে হওয়া উচিত।
এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, শিং মাছ ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা, নলা ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৫৫০-৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০-৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছ ও মাংসের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।
বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।
বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়
বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ – দা এগ্রো নিউজ
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।
আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
এগ্রোবিজ
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার – দা এগ্রো নিউজ
সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।
তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।
পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।
খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
এগ্রোবিজ
তেজপাতা চাষ করে মাসে লাখ টাকা আয়
গাছের পাতা বিক্রি করেন কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ। এই পাতা বিক্রির টাকায় সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। মাত্র ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে বছরে প্রায় ১২ লাখ টাকার পাতা বিক্রি করেন তিনি। এই পাতা অন্য দশটি গাছের পাতা নয়, এটি মশলা জাতীয় ফসল তেজপাতা, যা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামের কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ।
কৃষক জয়নুদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে তিনি এক বিঘা জমিতে ১০০ গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই চাষ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার চার বিঘায় ৪০০ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া তার এই চাষ দেখে তারই গ্রামের আরো দুই কৃষক বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতার চাষ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক জয়নুদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, ২০০৭ সালে তিনি পাশের রাষ্ট্রের ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে এই তেজপাতার চাষ দেখেন। এই চাষ দেখে তার খুব আগ্রহ হয় তেজপাতা চাষের প্রতি। কিন্তু কোথাও চারা পাচ্ছিলেন না। এমন সময় তার এক বন্ধু খবর দেন এই চারা খুলনার বেজেরডাঙ্গা নামক এলাকায় পাওয়া যায়। সেভাবে ২০০৮ সালে বেজেরডাঙ্গা এলাকা থেকে চারা নিয়ে আসেন। জয়নুদ্দিন খাঁ জানান, ওই বছরে ২০০ টাকা দরে ১০০ চারা ক্রয় করেন। এগুলো বাড়ির পাশে অপেক্ষাকৃত জঙ্গল আকৃতির জমিতে রোপণ করেন। এরপর পরিচর্জা করতে থাকেন। এভাবে চার বছর পেরিয়ে গেলে গাছের ডালে ডালে পাতায় ভরে যায়। তখনই পাতা ভাঙতে শুরু করেন। সেই থেকে তিনি প্রতি বছর দুইবার গাছ থেকে পাতা ভেঙে বিক্রি করেন। পাশাপাশি এটি লাভজনক হওয়ায় আরো গাছ লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার চার বিঘা জমিতে ৪০০ তেজপাতা গাছ রয়েছে। ৪৬ শতাংশে বিঘা হিসেবে প্রতি বিঘায় চারা রোপণ করা যায় ১০০টি। এই চাষ অপেক্ষাকৃত জঙ্গল পেরিয়ে ভালো চাষযোগ্য জমিতেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রতি বছর এই চাষ বৃদ্ধি করছেন বলে জানান।
কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ জানান, তেজপাতা চাষ করতে হলে জমিতে ভালোভাবে চাষ দিয়ে নিতে হয়। এরপর সেখানে জৈব সার ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর সামান্য রাসায়নিক সার দিয়ে চারা লাগাতে হয়। এই গাছ ছাগল-গরুতে খায় না। পাতা গাছের ডালে ডালে থাকায় চুরি হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। তিনি আরো জানান, একটি চারা রোপণের চার বছর পর থেকে পাতা পাওয়া যায়। ৫০ বছর পর্যন্ত পাতা পাওয়া যাবে। বর্তমানে তার প্রতিটি গাছে বছরে ২০ কেজি করে পাতা হয়, যা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। এতে তার ৪০০ গাছে প্রায় ১২ লাখ টাকার পাতা বিক্রি হয়। এই পাতা পেতে বর্তমানে তার খরচ হয় গাছপ্রতি ১০০ টাকা। তিনি বলেন, এই চাষে পরিশ্রম কম, আর একবার রোপণ করলে জীবনের বেশির ভাগ সময় ফলন পাওয়া যায়। তাই তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ করছেন। তিনি জানান, প্রথম বছর তিন মণ পাতা বিক্রি করতে পারলেও বর্তমানে ১২ মণ পর্যন্ত পাতা বিক্রি করছেন। আগামী মৌসুমে ২০ মণ পাতা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন।
জয়নুদ্দিন খাঁ পেশায় কৃষক। মাঠে তার ১৮ বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে।
তিনি জানান, তেজপাতার কোনো ফল হয় না। আবার কলম করেও চারা তৈরি করা যায় না। এর জন্য কাবাব চিনির গাছ প্রয়োজন। কাবাব চিনির ফল থেকে চারা তৈরি হয়। সেই চারায় কলম করে তৈরি হয় তেজপাতা গাছ। এভাবে চারা তৈরি করে তেজপাতার চাষ করতে হয়।
কাদিরকোল গ্রামের আবুল কালাম জানান, জয়নুদ্দিনকে দেখে তিনিও এই তেজপাতা চাষ শুরু করেছেন। প্রথম বছর ৩৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন। ভালো পাতাও পাচ্ছেন। আগামীতে আরো বেশি চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান কৃষক আবুল কালাম। আরেক কৃষক মিজানুর রহমানও বাড়ির আঙ্গিনায় ১০ শতক জমিতে এই তেজপাতা চাষ করেছেন।
যোগাযোগ: এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে ফিস এক্সপার্ট লিমিটেড এর ০১৭১২৭৪২২১৭ নম্বরে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃপাংশু কুমার জানান, এটা খুবই লাভজনক ফসল। এই চাষ এ অঞ্চলের মানুষ বাণিজ্যিকভাবে করেন না, কাদিরকোল গ্রামের কৃষক জয়নুদ্দিন খাঁ করছেন। তারা এটা জেনে তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।
এগ্রোবিজ
যশোরের ঝিকরগাছায় ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে ফুল গবেষণা কেন্দ্র
ফুল চাষের জন্য সরকার বড় পরিসরে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ হিসেবে ‘যশোর জেলার ঝিকরগাছায় ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও যুগোপযোগী ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের করতে যাচ্ছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যেই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ফুল জাতীয় পণ্য সংগ্রহের পর ১৫ শতাংশ ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ৫০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় ১০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফুল বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
যশোর জেলার বির্স্তীর্ণ এলাকায় ফুল চাষে দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও পরিচিত লাভ করেছে। ভবিষ্যতে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপেও ফুল রপ্তানির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কালের কন্ঠকে জানায়, আমাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১০টি ফুলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে এবং ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের চাষ পদ্ধতি, ফুল সংগ্রহ প্রযুক্তি, প্যাকেজিং ইত্যাদি সম্পর্কিত ২০টি কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন