এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটে উত্থান-পতনে পোল্ট্রি শিল্প
জয়পুরহাটের ১০ হাজার মুরগি খামারের অধিকাংশই কখনো লাভে আবার কখনো লোকসানে পড়ে যায়। লাভ-লোকসানের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এ শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে থাকা লক্ষাধিক মানুষের উপার্জনের পথও চলছে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বর্তমানে আড়াই হাজার নিবন্ধিত খামারসহ ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার মুরগির খামার রয়েছে। প্রতিমাসে এ খামারগুলো থেকে গড়ে ১ কোটিরও বেশি ডিম ও ১০ হাজার মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন হয়। এতে জেলার ১০ লাখ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করার পরও প্রতিদিন ট্রাক ও পিক-আপ মিলে ১৫-২০ গাড়ি মুরগি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। জেলায় পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির বাচ্চার চাহিদা পূরণ করতে এখানে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ১টি সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৩৯টি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে। ৪০টি হ্যাচারি থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৪০ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।
জয়পুরহাট পূরবী এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হক, পল্লী ফিড ইন্ডাস্ট্রিজের সত্ত্বাধিকারী মঞ্জুর হোসেন জাহাঙ্গীরসহ মুরগির খাদ্য প্রস্তুতকারকরা জানান, জেলায় বিপুল পরিমাণ পোল্ট্রি খামার গড়ে ওঠার কারণে বর্তমানে মুরগির খাদ্য কারখানা গড়ে উঠেছে ১১টি। যেখান থেকে প্রতিমাসে গড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে। তবে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ সরকারি হাঁস-মুরগি খামারকে কেন্দ্র করে এখানে পোল্ট্রি জোন গড়ে ওঠার পর দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নানা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে এখানকার পোল্ট্রি শিল্প।
পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিক্স লিমিেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক আনু, শেফালী পোল্ট্রি ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলমসহ পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে এ শিল্পের অস্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন। কারণগুলো হলো- কাঁচামালের শতকরা ৮০ ভাগ আমদানি নির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি, মুরগি ও ডিম রফতানি না হওয়া, চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সমন্বয়হীনতা, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকা, খাদ্য-ওষুধ-ভিটামিনের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি, অনেক সময় নিম্নমানের, খাদ্য-ওষুধ-ভিটামিন খাওয়ানোর ফলে রোগ-ব্যাধি মুক্ত না হয়ে বরং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়া বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক ওজন না হওয়া, মধ্যসত্ত্বভোগী ফরিয়া বা দালালদের দৌরাত্ম্য, পাইকারি ও খুচরা বাজার মূল্যের বড় পার্থক্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যোগাযোগ বিঘ্নিত হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুরগি ও ডিম সরবরাহ বন্ধ হওয়া, মুরগির বাচ্চা-খাদ্য-ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণ বাকিতে বেচা-কেনা, দরিদ্রসহ নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশের মধ্যেই মুরগি ও ডিমের বাজার সীমিত হয়ে পরায় স্থানীয় বাজারগুলোতে বাড়তি চাপে মুরগি ও ডিমের বাজার অধিকাংশ সময় অস্থিতিশীল থাকে।
জয়পুরহাট শহরের আদর্শপাড়া এলাকার বাবু হোসেন, জামালগঞ্জ এলাকার সাহাদত হোসেন, পুরানাপৈল এলাকার খোরশেদ আলমসহ মাঝারি ধরনের অনেক খামারি জানান, মাংসের জন্য প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ১২০-১২৫ টাকা খরচ হলেও খামারিরা ২-৪ টাকা কমবেশি পাচ্ছেন, সেখানে খুচরা বাজার মূল্য কেজি প্রতি ১৪৫-১৫০ টাকা পর্যন্ত। সোনালি জাতের মুরগি উৎপাদনে প্রতিকেজি ১৯০-১৯৫ টাকা খরচ হলেও খামারিরা লোকসান দিয়ে পাচ্ছেন ১৫০-১৬০ টাকা, আর খুচরা মূল্য বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়।
বর্তমানে মুরগির বাজারে ধ্স নামায় বিপাকে পড়েছেন হ্যাচারি মালিকরাও। জয়পুরহাট পদ্মা ফিডস অ্যান্ড চিক্স লিমিটেডের পরিচালক রাশেদুজ্জামান জানান, এখন প্রতিটি মুরগি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ১৪-১৫ টাকা হলেও বিক্রি ৬-৭ টাকায়, তা-ও বাকিতে। চাহিদা না থাকায় বিপুলসংখ্যক একদিনের উৎপাদিত বাচ্চা নিয়ে আমাদের মতো অনেক হ্যাচারি মালিকই মহা বিপাকে পড়েছেন।
জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহ-সভাপতি ও কিষাণ পোল্ট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী জিয়াউল হক জিয়া ও পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে পোল্ট্রি শিল্প স্থবির, না হয় ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা হলে পোল্ট্রি শিল্পে কর্মরত জেলায় প্রায় ১ লাখসহ সারা দেশে ৩০ লাখেরও বেশি নারী-পুরুষ বেকার হবে। তাই পোল্ট্রি শিল্পের এ দূরাবস্থা থেকে রক্ষা করতে এখানে মুরগির মাংস প্রসেসিং প্ল্যান্টসহ হিমাগার প্রয়োজন।
এছাড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ভর্তুকিসহ রফতানির জন্য সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালম সোনার কিছু সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে এ সমস্যা সমাধানে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এ শিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
এগ্রোবিজ
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
বীজ হলো কৃষির প্রাণ। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের ফলন নিশ্চিত হয়। তাই উন্নত ফসল উৎপাদনের জন্য বীজের যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করলে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং উৎপাদন খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার ধাপসমূহ
ভালো বীজ নির্বাচন করুন
- বীজ নির্বাচন ফসল উৎপাদনের প্রথম ধাপ।
- রোগমুক্ত, ভালো মানের, এবং আকারে সমান বীজ নির্বাচন করুন।
- প্রত্যয়িত বা পরীক্ষিত বীজ ব্যবহার করুন।
বীজ শোধন প্রক্রিয়া
- শোধন কী? বীজ শোধন হলো বীজ থেকে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতি।
- পদ্ধতি: ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- উদাহরণ: প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করুন।
- জৈব শোধন: জৈব উপাদান যেমন নিম পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।
বীজের সঠিক সঞ্চয়ন
- শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন: বীজ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করুন যেখানে আর্দ্রতা কম এবং বাতাস চলাচল করে।
- আলো ও তাপ থেকে দূরে রাখুন: সরাসরি সূর্যের আলো বা তাপ থেকে বীজকে দূরে রাখুন।
- বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করুন: বীজ রাখার জন্য বায়ুরোধী পাত্র বা প্যাকেট ব্যবহার করুন।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করুন
- বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষা করুন।
- পদ্ধতি: ১. ১০০টি বীজ একটি ভেজা কাপড়ে মোড়ান। ২. কয়েকদিন পর দেখুন কতগুলো বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। ৩. ৮০% বা তার বেশি অঙ্কুরোদগম হলে সেই বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত।
বীজ প্রাক-চাষ পরিচর্যা
- ভিজিয়ে রাখা: বীজ চাষের আগে ১২-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এটি অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
- উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখা: চাষের আগে বীজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন।
বীজ এর পরিচর্যা করার সুবিধাসমূহ
- মাটি ও বীজজাত জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে অঙ্কুরিত বীজ ও চারাগাছ রক্ষা
- বীজের অঙ্কুরোদ্গম করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- দ্রুত এবং সুসংবদ্ধ বৃদ্ধি
- শুঁটি জাতীয় শস্যের দ্রুত শুঁটি বেরোনো
- মাটি ও পাতায় নজর দেওয়ার চেয়ে বীজে বেশি নজর দেওয়া সুবিধাজনক
- খারাপ পরিস্থিতিতেও (অতিরিক্ত বা কম আর্দ্রতায়) শস্যের উৎপাদনে সমতা
বীজ এর পরিচর্যা করার পদ্ধতি
বীজ পরিচর্যা এমন একটা শব্দ, যা একই সঙ্গে পণ্য এবং প্রক্রিয়া দুই-ই বোঝায়। নীচে বর্ণিত যে কোনও একটি পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করা যেতে পারে।
বীজ ড্রেসিং
এটা বীজ পরিচর্যার সবচেয়ে চালু পদ্ধতি। বীজকে শুকনো বা তরল মিশ্রণে অথবা থকথকে কাদার মধ্যে রাখা হয়। বীজের সঙ্গে কীটনাশক মেশানোর জন্য সস্তা মাটির পাত্র ব্যবহার করা যায়। পলিথিন চাদরের উপর বীজ ছড়িয়ে তার উপর উপযুক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। চাষিরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও এই কাজ করতে পারেন। খামার এবং শিল্পক্ষেত্র, দু’জায়গাতেই বীজ ড্রেসিং করা হয়ে থাকে।
বীজ আচ্ছাদন
বীজের ক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ দ্রব্য দিয়ে তাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। এই আচ্ছাদনের জন্য উন্নত বীজ পরিচর্যা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এই পদ্ধতি সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
বীজের বড়ি দেওয়া
এটা সবচেয়ে উন্নত বীজ পরিচর্যা পদ্ধতি। এতে বীজের আকার পাল্টে যায়, স্বাদ বাড়ে এবং বীজ ব্যবহার করাও সুবিধাজনক হয়। এর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দরকার এবং এটা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি।
বীজ এর পরিচর্যা করার পরামর্শ সমূহ
শস্য | কীট/রোগ | বীজ পরিচর্যা |
আখ | শিকড়ে পচন, ধসা রোগ | কার্বেন্ডাজিম(০.১%) ২ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে ট্রাইকোডার্মা এসপিপি ৪-৬ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে |
ধান | শিকড়ে পচন | ট্রাইকোডার্মা ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে (রোপণের আগে) |
অন্যান্য পোকামাকড় | ক্লোরোপাইরিফস ৫-১০ গ্রাম প্রতি কিলো বীজে | |
ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শুকিয়ে যাওয়া | সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ০.৫% ডবলিউ পি ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে | |
শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে ৬ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
অগ্রভাগে রোগ নেমাটোড | ০.২% মোনোক্রোটোফসে বীজ ভিজিয়ে রাখুন | |
লঙ্কা | স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া, অ্যানথ্রাকনোস এসপিপি | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম |
মাটিবাহিত ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম, প্রতি কিলো বীজে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউ এস, এক লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো | |
জাসিদ, আফিদ, থ্রিপস | ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউএস, প্রতি কিলো বীজে ১০-১৫ গ্রাম এআই | |
অড়হর | ধসা, শিকড়ে পচন, শুকিয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা এসপিপি |
মটর | শিকড়ে পচন | ব্যাসিলাস সাবটিলিস বা সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স দিয়ে বীজের পরিচর্যা, ১০০ গ্রাম এফওয়াইএম-এ আড়াই থেকে ৫ গ্রাম মাটিতে প্রয়োগ অথবা প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান প্রয়োগ |
সাদা পচন | প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম থিরাম+কার্বেন্ডাজিম প্রতি কিলো বীজে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা কাপ্তান | |
ঢ্যাঁড়শ | শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম প্যাসিলোমিসেস লিলাসিনাস এবং সিউডোমিনাস ফ্লুরোসেন্স |
টম্যাটো | মাটি বাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়া, ধসা রোগ, শুকিয়ে যাওয়া | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে, কাপ্তান ৭৫ ডব্লিউএস প্রতি লিটার জলে দেড় থেকে ২ গ্রাম এআই মিশিয়ে মাটি ভেজানো, বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স এবং ভি ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম |
ধনে | ধসা | প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে |
বেগুন | ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স |
শুঁটিজাতীয় শস্য | মাটি বাহিত সংক্রমণ | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
নেমাটোড | কাবোর্ফুরান অথবা কার্বোসালফান ৩%(ডব্লিউ/ডব্লিউ) | |
সূর্যমুখী | বীজের পচন | প্রতি কিলো বীজে ৬ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে |
জাসিডস, হোয়াইট ফ্লাই | প্রতি কিলো বীজে ৫-৯ গ্রাম এআই মিডাক্লোরোপিড ৪৮ এফএস, প্রতি কিলো বীজে ৭ গ্রাম এআই ইমিডাক্লোরোপিড ৭০ ডব্লিউএস | |
গম | উই | রোপণের আগে প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোপাইরিফস বা ৭ এমএল এনডোসালফান দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে |
শিষে কালো হয়ে যাওয়া | থিরাম ৭৫ % ডব্লিউপি, কার্বক্সিন ৭৫ % ডব্লিউপি, টেবুকোনাজল ২ ডিএস প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, প্রতি কিলো বীজে ৪ গ্রাম টি ভিরিডে ১.১৫ % ডব্লিউপি | |
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মুলো | মাটি বা বীজ বাহিত রোগ (স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া) | ১০০ গ্রাম বীজে ২ গ্রাম টি ভিরিডে দিয়ে বীজ পরিচর্যা, ১ লিটার জলে দেড় থেকে আড়াই গ্রাম এআই কাপ্তান ৭৫% ডব্লিউএস দিয়ে মাটি ভেজানো |
শিকড়ের গ্রন্থিতে রোগ(নেমাটোড) | বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা ভার্লিসিলিআম ক্ল্যামিডোস্পোরিয়াম | |
ছোলা | ধসা রোগ ও স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাওয়া | প্রতি কিলো বীজে ৯ গ্রাম টি ভিরিডে ১% ডব্লিউপি দিয়ে বীজ পরিচর্যা, কার্বেন্ডাজিম ও কাবোর্সালফিন ২% মিশিয়ে বা কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ও কাবোর্সালফিন ২ % মিশ্রণ প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ১৫-৩০ এমএল এআই ক্লোরোফাইরোফস ২০ ইসি দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
আলু | মাটি ও স্ফীতমূল বাহিত রোগ | এমইএমসি ৩% ডব্লিউএস ০.২৫ % বা বোরিক অ্যাসিড ৩ % দিয়ে সংরক্ষণ করার ২০ মিনিট আগে পরিচর্যা |
বার্লি | কালো হয়ে যাওয়া, উই | প্রতি কিলো বীজে ১.৫ থকে ১.৮৭ গ্রাম এআই, কার্বক্সিন ৭৫% ডব্লিউপি, থিরাম ৭৫% ডব্লিউপি প্রয়োগ, প্রতি কিলো বীজে ৪ এমএল ক্লোরোফাইফস দিয়ে বীজ পরিচর্যা |
ক্যাপসিকাম | শিকড়ের গ্রন্থিতে নেমাটোড | প্রতি কিলো বীজে ১০ গ্রাম সিউডোনোমাস ফ্লুরোসেন্স ১ %, ডব্লিউপি প্যাসিলোমিসেস লিলাকিরাস ও ভার্টিসিলাম ক্ল্যামিডেস্পোরিয়াম ১ % ডব্লিউপি বীজ ড্রেসার হিসেবে প্রয়োগ |
বীজ ড্রেসিং-এর জন্য ধাতব বীজ ড্রেসার /মাটির পাত্র অথবা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়
বীজ পরিচর্যার উপকারিতা
১. উচ্চ অঙ্কুরোদগম হার: পরিচর্যার ফলে বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বীজ শোধনের ফলে রোগ ও কীটপতঙ্গ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
৩. উন্নত ফলন: পরিচর্যায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে, যা ফলন বৃদ্ধি করে।
৪. খরচ সাশ্রয়: বীজের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষি খরচ কমে।
বীজ পরিচর্যার কিছু টিপস
- সংরক্ষণের আগে বীজ পুরোপুরি শুকিয়ে নিন।
- পোকামাকড় প্রতিরোধে নিমতেল বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- পুরনো বীজের পরিবর্তে প্রতি মৌসুমে নতুন বীজ ব্যবহার করুন।
- উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের বীজের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ পরিচর্যা করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি কৃষকের জন্য একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই, উন্নত ফলনের জন্য বীজ পরিচর্যার সঠিক ধাপগুলো অনুসরণ করুন এবং কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করুন।
এগ্রোবিজ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ – দা এগ্রো নিউজ
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।
আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
এগ্রোবিজ
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার – দা এগ্রো নিউজ
সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।
তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।
পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।
খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।
এগ্রোবিজ
মিষ্টি কুমড়া চাষ করে কোটিপতি আব্দুর রশিদ
হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করে দিনমজুর থেকে কোটিপতি হয়েছেন আব্দুর রশিদ। তার বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার রামবাড়ি গ্রামে। তার দেখাদেখি আশপাশের ২০ গ্রামের অনেক চাষি এগিয়ে এসেছেন। ফলে সবজি চাষের এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে সোমেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলের ওই এলাকায়। পাশাপাশি বহু বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছেন সফল এ চাষি। তিনি গত ১৫ বছর সবজি চাষ করে এলাকায় প্রায় ২শ’ কাঠা জমি কিনেছেন।
জানা যায়, আজ থেকে ১৫ বছর আগে জামালপুরের নান্দিনা থেকে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের রামবাড়িতে কাজ করতে আসেন আব্দুর রশিদ। তখন তার বয়স ২৫ বছর। কিছুদিন পর শ্রম বিক্রির ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন পেঁয়াজ, মরিচ ও রসুনের ফেরি ব্যবসা। ব্যবসার আয় থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকায় রামবাড়ির সোমেশ্বরী নদীর বালুচরে পাঁচ কাঠা জমি কেনেন। সে জমিতে ২০১০ সালে মাত্র ৪ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করেন। সে সময় তার আয় হয় ৩৫ হাজার টাকা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। সবজি চাষ করে এখন তিনি কোটিপতি।
মিষ্টি কুমড়া: ১০ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ ও ধনিয়া আবাদ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি কাঠায় গড়ে ৩শ’ করে মোট উৎপাদন হয় ৩৫ হাজার মিষ্টি কুমড়া। প্রতিটি কুমড়ার দাম গড়ে ৩০ টাকা হওয়ায় হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ১৫-২০ টন। হেক্টরে উৎপাদন খরচ বাদে আয় থাকছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কাঠায় গড়ে সাড়ে ১২ মণ করে সাড়ে ১২শ’ মণ অর্থাৎ হেক্টরে ১৯ টন পেঁয়াজ ও ২০ মণ ধনিয়ার ফলন হয়েছে। এ বছর ২২ একর জমিতে আব্দুর রশিদ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, মরিচ ও গোল আলুসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। ফলন ও বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় ১০ একর জমির উৎপাদন খরচ বাদে ৬ লাখ ৯০ হাজার ১শ’ টাকা আয় করেন।
রসুন ও মরিচ : এই ২০ (২ একর) কাঠা জমিতে ফলন হয়েছে ১০ টন রসুন। প্রতি টন ১ হাজার ৮শ’ টাকা বাজারমূল্য হওয়ায় প্রতি হেক্টরে উৎপাদন খরচ বাদে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬শ’ টাকা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে একই পরিমাণ জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছে। কাঠাপ্রতি ১ মণ ১০ কেজি করে প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ কেজি মরিচ। উৎপাদন খরচ বাদে আয় হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
গোল আলু : আড়াই একর জমিতে প্রতি কাঠায় ১৫ মণ করে ৩৭৫ মণ গোল আলুর উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩ লাখ টাকা। ফসল তেমন ভালো না হলেও আলুর ফলন ভালো হয়েছে। এতে হেক্টরে ফলন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ টন গোল আলু। যার বাজারমূল্য ১ লাখ ১১ হাজার ৬শ’ টাকা।
গত কয়েক বছরে আব্দুর রশিদ সবজি চাষের আয় থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ১৭ একর জমি কিনেছেন। বন্ধক রেখেছেন ৬ লাখ টাকার ৬ একর জমি। সেই সাথে ২২ লাখ টাকায় দুটি বাসা-বাড়িও নির্মাণ করেছেন।
রামবাড়ি গ্রামের ইরাজ আলী মেম্বার বলেন, ‘আব্দুর রশিদ প্রথমে আমাদের এলাকায় শ্রমিকের কাম-কাজ করতে আসেন। কাম-কাজের মাত্র কয়েক হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ-রসুনসহ কাঁচামাল ফেরি করা শুরু করে। এখন সে ২শ’ কাঠা ফসলি জমি ও দুটি বাড়ির মালিক।’
রামবাড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, ‘রশিদ চাচার সহায়-সম্পদ কিছুই ছিল না। তিনি ছিলেন হতদরিদ্র মানুষ। ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য স্পৃহা থাকলে কোন প্রতিবন্ধকতাই মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না।’
ঝানজায়াইল গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা, নিশার ভূঁইয়া, রামবাড়ি গ্রামের ইরাজ আলী মেম্বারসহ অনেক কৃষক জানান, সফল চাষি আব্দুর রশিদের দেখাদেখি এবং পরামর্শে এলাকাটি আজ শাক-সবজিরপল্লী। এখানে হাজার হাজার টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করার পেছনে আব্দুর রশিদের মতো সফল চাষিদের অনেক অবদান রয়েছে।’
এগ্রোবিজ
মাছের বিস্কুট ও চানাচুর উদ্ভাবন করলেন শেকৃবির গবেষকরা
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষকরা পাঙাশ ও সিলভার কার্প মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিস্কুট ও চানাচুর উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, আকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একদল গবেষক অনুষদীয় অর্থায়নে কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে গবেষণা চালান। তাদের দাবি, বাংলাদেশে তারাই প্রথম এ উদ্ভাবনে সফলতা অর্জন করলেন।
গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুদ রানা। তত্ত্বাবধান করেন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন আকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ এম সাহাবউদ্দিন এবং ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মহিব্বুল্লাহ।
গবেষক দল জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। পাঙাশ ও সিলভার কার্প মাছের উৎপাদনের হার বেশি। ভোক্তাদের চাহিদা ও বাজারদর দিন দিন কমতে থাকায় চাষিরা পাঙাশ ও সিলভার কার্প মাছ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মাছ দুটির প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধিসহ মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাডেড) পণ্য উৎপাদন করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে মাছ দুটি চাষি পর্যায়ে পাওয়া যাবে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে পাঙাশ ও সিলভার কার্প মাছের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা ও চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কম মূল্যের মাছগুলো প্রক্রিয়াজাত করে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ বিস্কুট এবং চানাচুর উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই খাদ্য মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করবে।
তারা বলেন, উদ্ভাবিত খাদ্য দুটি যেকোনো সময় খাবার উপযোগী মোড়কজাত পণ্য হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব। এতে চাষি পর্যায়ে পাঙাশ ও সিলভার কার্প উৎপাদনে আগ্রহ বাড়বে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং প্রাণীজ আমিষসমৃদ্ধ এই পণ্যগুলো ছোট ছেলেমেয়েদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং গর্ভবতী নারীদের পুষ্টির সংকুলানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রাথমিকভাবে গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের বিস্কুট ও চানাচুরে ৪০-৫০ শতাংশ আমিষ, ২০-৩০ শতাংশ চর্বি, ২০-২৫ শতাংশ শর্করা, ১০-১৫ শতাংশ মিনারেল এবং ১০-১২ শতাংশ ফাইবার বিদ্যমান।
গবেষকদের উদ্ভাবিত বিস্কুট ও চানাচুর শেকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এবং ফিশারিজ, আকুয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
কৃত্রিম মাংসের বার্গার, যা থেকে ‘রক্ত’ও ঝরে – আর বেশি দূরে নয় – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন