পরিবেশ
‘বজ্রপাতের প্রভাব মোকাবিলায় ৩৮ লাখ তালগাছের চারা রোপণ’
২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশে কমপক্ষে ১,৭৬০ জন মানুষ নিহত হন। ২০১৬ সালে মাত্র ৪ দিনে বজ্রপাতে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালে নিহত হন ৩৫৯ জন
বজ্রপাতের প্রভাব হ্রাসে দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্র্যাক আয়োজিত “বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি ও করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, “এ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ-বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলিতেও (এসওডি) বজ্রপাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশে পরীক্ষিত মডেল থাকলেও বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় এখনো তা নেই। এ সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার অবকাঠামোগত ও অ-অবকাঠামোগত দুই ধরনের সমাধানই চায়। দেশে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গবেষণার ওপর। কেননা, বজ্রপাত নিয়ে সব স্তরে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের ভবিষ্যত অগ্রাধিকার হচ্ছে বজ্রপাতের ঝুঁকি ও জীবনহানি বৃদ্ধির কারণ নির্ণয় করে তা হ্রাসে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো, এ বিষয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্য বইয়ে প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তকরণ, বজ্রপাতের আগাম বার্তা দিতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনগণকে অবহিতকরণ।
সেই সাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি ও প্রদর্শন, সচেতনতামূলক গান তৈরি, বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত বিষয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় বজ্রপাত বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করা সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশে কমপক্ষে ১,৭৬০ জন মানুষ নিহত হন। ২০১৬ সালে মাত্র ৪ দিনে বজ্রপাতে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালে নিহত হন ৩৫৯ জন।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ
মাটির অম্লতা বেড়েছে, কমেছে ফসলের উৎপাদন
- ৪৫.৬৭ শতাংশ জমির মাটিরই অম্লতা বেশি
- অম্লতা বেশি হলে মিলবে না কাঙ্ক্ষিত ফলন
- দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে
- সমাধানে ডলোচুন প্রয়োগের সুপারিশ
দেশের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। ফসল উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একদিকে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে না, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বেড়ে হুমকিতে পড়বে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রাক্কালে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
অম্ল মাটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গঙ্গা অববাহিকা ছাড়া দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। অম্লতা যত বাড়বে, ফসলের উৎপাদনও তত কমবে। মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বেশি হলে গম, ভুট্টা, আলু, সবজি, ডালসহ রবি শস্যে কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।’
মাটির গুণগত মান নিয়ে গবেষণা করে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। সংস্থাটির অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আবাদযোগ্য জমিতে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে অধিক অম্ল থেকে অত্যধিক অম্ল জমির পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ, আর ২০২০ সালে অম্লতার পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। মাটিতে অম্লতা বাড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার, ক্যালসিয়ামসহ ক্ষারীয় উপাদান হ্রাস, এক জমিতে অধিক চাষাবাদ, ফসল তোলার পর গাছ খেতের মাটির সঙ্গে মিশতে না দিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
গবেষকদের তথ্যমতে, মাটির অম্লত্ব কিংবা ক্ষারীয় অবস্থার ওপর ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন অনেকাংশে নির্ভর করে। অম্লতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয় মাটির পিএইচ নির্ণয়ের মাধ্যমে। পিএইচ মান ৪ দশমিক ৫ এর নিচে হলে সেই মাটিকে অত্যধিক অম্ল, ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ পর্যন্ত অধিক অম্ল, ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ হলে মৃদু অম্ল এবং ৬ দশমিক ৬ থেকে ৭ দশমিক ৩ এর মধ্যে হলে তাকে নিরপেক্ষ মাটি বলা হয়। ফসলের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ ধরা হয় ৬ দশমিক ৫।
এসআরডিআইয়ের গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মোট ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির মাটি অত্যধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ এর নিচে) এবং প্রায় ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমির মাটি অধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৫.৫)। অর্থাৎ মোট আবাদি জমির প্রায় অর্ধেকের (৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। অধিক অম্ল মাটিতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও মলিবডেনামের স্বল্পতা এবং অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের আধিক্য থাকায় ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং বরেন্দ্র ও মধুপুর গড় অঞ্চলের অধিকাংশ মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। এসব অঞ্চলের কৃষিজমি থেকে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসআরডিআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. নূরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জমিতে দিন দিন অম্লতার পরিমাণ বাড়বে। সার ব্যবহারে কৃষকের খরচ বাড়বে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।
মাটির অম্লতা কমিয়ে আনতে জমিতে ডলোচুন ব্যবহার ভালো সমাধান হতে পারে বলে এই মৃত্তিকাবিজ্ঞানী জানান। তিনি বলেন, এ জন্য সাধারণত প্রতি শতাংশ জমিতে ৪ কেজি থেকে ৮ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে মাটির বুনটের ওপর নির্ভর করে ডলোচুন প্রয়োগের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। তা ছাড়া জমিতে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
পরিবেশ
নওগাঁয় চালকলের দূষিত পানিতে কৃষকের মাথায় হাত
বছরের পর বছর ধরে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা
নওগাঁ সদর উপজেলায় নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের সাহাপুরে কার্লভার্টের মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চালকল স্থাপন করেছেন বেলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। ওই কল স্থাপনের কারণে কার্লভার্ট দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চালকলের দূষিত পানি সরাসরি ফসলের মাঠে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকবাসীর। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে সাহাপুরে “বেলকন চাউল কল” স্থাপন করা হয়। কিন্তু তার আগেই তৈরি করা হয় কার্লভার্ট। কার্লভার্টের মুখ ঘেঁষে চাউল কল স্থাপন করায় পাশ্ববর্তী ধামকুড়ি, সাহাপুর ও বশিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পানি ওই কার্লভার্ট দিয়ে যেতে পারে না। ফলে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালভার্টটি তাদের কোনো কাজেই আসছে না।
এছাড়া চাউল কল থেকে দূষিত কালো কালভার্টের নালা হয়ে পার্শ্ববর্তী ফসলের ক্ষেতে পড়ছে। এতে করে প্রায় শতাধিক কৃষকের ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঠিকমতো ফসল হয় না এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। চাউলকলের দূষিত পানিতে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। স্থানীয়রা বিষয়টি চাউল কল মালিককে জানানো পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দোগাছী গ্রামের হান্নান বলেন, চাল কলের লোকেরা আগে গাড়ি দিয়ে দূষিত পানি বাইরে নিয়ে ফেলতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তারা পানি কালভার্টের নালায়ই ফেলছে। কালভার্টের ভেতর দিয়ে নালা হয়ে পানি সরাসরি যাচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। ফলে মাঠেল ফসল পোকা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সাহাপুর গ্রামের মুঞ্জুর রহমান বাবু বলেন, আগে জমিতে যে পরিমাণ ফসল হতো এখন তার অর্ধেকও হয় না।
বেলকন গ্রুপের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, “ক্ষেতে শুধু আমার একাই চাউল কলের পানি যায় না, অন্যান্য চাউল কলের পানিও যায়।”
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, “দূষিত পানি ফসলি জমিতে পড়লে ফসল নষ্ট হবে। যদি ওই চাউল কলের দূষিত পানি ফসলের মাঠে যায় তাহলে ফসল রক্ষার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
পরিবেশ
পরিবেশ-বান্ধব থেকেও আপনি হতে পারবেন স্টাইল আইকন
আপনি নতুন নতুন ফ্যাশনেবল জামাকাপড় কিনতে এবং পরতে পছন্দ করেন কিন্তু আপনি আবার পরিবেশ রক্ষার বিষয়েও সচেতন। এই দুটোর ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কি একটু ঝামেলার মধ্যে পড়েছেন?
তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি চাইলে পৃথিবীকে রক্ষায় কাজ করার পাশাপাশি নিজের পোশাকি রুচির সঙ্গে আপোষ ছাড়াই ফ্যাশনেবল থাকতে পারবেন। সাহায্য করতে পারবেন ফ্যাশন শিল্পের পরিবর্তনে ।
পৃথিবীর সবুজ রক্ষায় ফ্যাশন সচেতন ভোক্তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ লুসি সিগল।
এরপর থেকে কেনাকাটা করার আগে নীচে উল্লেখিত ১০টি উদ্ভাবন, প্রবণতা এবং টিপস বিবেচনায় রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। যা আপনাকে সবসময় স্টাইলিশ থাকতে সাহায্য করবে।
১. বারবার না কিনে, অদলবদল করুন
আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে আলমারির চকমকে এই পোশাকটি আপনি ইতোমধ্যে অনেকগুলো অনুষ্ঠানে পরে ফেলেছেন।
কিন্তু পোশাকটি এখনও নতুনের মতো আছে এবং আপনার বন্ধু বান্ধবের অনেকেই সুযোগে আছেন পোশাকটি আপনি কবে বাতিল করবেন।
সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পোশাকটি এমনই কারও সঙ্গে অদল বদল করে নিতে পারেন, যার ওয়ারড্রবেও হয়তো এমন কোন পোশাক আছে যেটা কিনা তার কাছে পুরনো হলেও আপনার জন্য নতুন।
এভাবে অদল বদল অথবা গরিব মানুষদের দান করার মাধ্যমে একটি পোশাকের আয়ু বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
ওয়েস্ট অ্যান্ড রিসোর্স অ্যাকশন প্রোগ্রাম-র্যাপ নামে একটি দাতব্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, পুরনো পোশাক অদল বদল বা বিতরণের কারণে যুক্তরাজ্যে পোশাক বর্জ্যের পরিমাণ ২০১২ সালের তুলনায় ৫০ হাজার টন কমে গিয়েছে।
২. তাপমাত্রা কমিয়ে নিন
পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হওয়া মানে এই নয় যে দাগযুক্ত ময়লা কাপড় পরতে হবে। কিন্তু যখনই আপনি কাপড় ধুতে যাবেন তখন পানির তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের পরিবর্তে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে নিন।
এছাড়া ওয়াশিং মেশিনে টাম্বল ড্রায়ারে কাপড় শুকানোর পরিবর্তে বাইরের বাতাসে কাপড় শুকিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে যতোটা সম্ভব আয়রনের ব্যবহার কমিয়ে হালকা কোঁচকানো পোশাকে অভ্যস্ত হওয়ার কথাও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
র্যাপের মতে, শুধুমাত্র বাড়িতে ওয়াশিং মেশিনে পানির তাপমাত্রা কমিয়ে সেইসঙ্গে টাম্বল ড্রাইং ও আয়রনের ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নি:সরণের হার ৭০ লাখ টন কমানো সম্ভব হয়েছে।
৩. লেস ইজ মোর
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা যায়।
২০১৬ সালে শুধু যুক্তরাজ্যেই ১১ লাখ ৩০ হাজার টন পোশাক বিক্রি হয়েছে।
তবে এখনকার ভোক্তাদের মধ্যে যে প্রবণতাটি লক্ষ্য করা যায়, সেটি হল টাকা জমিয়ে দামি ও ভালো মানের টেকসই পোশাক কেনা।
একটি কাপড় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার, নতুন পোশাকের উৎপাদন কমাতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখে।
মনে রাখতে হবে: “সস্তা কিনুন, দু’বার কিনুন!”
৪. ভাগ্যবান জামা তত্ত্ব:
মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ এমন একটি পোশাক ধরে রাখতে চান যেটার কোন প্রতীকী অর্থ রয়েছে।
যদি তিনি বিশ্বাস করেন যে, কোন সফল সাক্ষাতকারের জন্য সেদিনের পরে থাকা জামাটি ভাগ্য-কবজের মতো কাজ করেছে। তাহলে পরের সাক্ষাতকারেরও তিনি এই পোশাকটি পরিধান করতে চাইবেন।
একই বিষয় কাজ করে জন্মদিন বা বিয়ের পোশাকের ক্ষেত্রে।
এভাবেই আমাদের সবার উচিত নিজেদের প্রতিটি পোশাককে ঘিরে একটি ব্যাখ্যা তৈরি করা।
এতে পুরনো পোশাককে ঘিরেও আমাদের ভালোলাগা তৈরি হবে এবং আমরা একে হারাতে চাইব না।
৫. বিনিময় হতে পারে অনলাইনে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে দর কষাকষি করে স্বল্প মূ্ল্যের ব্যবহৃত পোশাক কেনেন।
পুরানো কাপড় ফেলে না দিয়ে এমনই কোন অনলাইন শপে নিজের পোশাকটি বিক্রি করা যেতে পারে।
এছাড়া অনেক চেইন শপ বা ফ্যাশন হাউজ ব্যবহৃত কাপড় রি-কন্ডিশন স্টকে বিক্রি করে থাকে।
এতে পোশাক বিনিময় শিল্পটি যেমন বিস্তার লাভ করবে তেমনি পুরনো পোশাকও পায় নতুনত্বের ছোঁয়া।
৬. থ্রি–ডি মুদ্রণ
তেল আবিব-ভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার দেনিত পেলেগ “ফিলাফ্লেক্স” নামের শক্তিশালী ও নমনীয় ফিলামেন্ট ব্যবহার করে থ্রি-ডি মুদ্রিত পোশাক ডিজাইন করেছেন। যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
চাইলে যে কেউ তার পুরনো পোশাকে থ্রিডি প্রিন্ট করে নতুন রূপ দিতে পারেন।
এ ধরণের একটি প্রিন্টার থাকলে বাড়িতে বসে যে কেউই নিজের কাপড় নিজে ডিজাইন করতে পারবেন।
৭. নতুন কিছু তৈরি করুন
আগেকার মানুষের সেলাইয়ের দক্ষতা থাকার কারণে নিজেদের পোশাকটিকে নিজেরাই মাপ মতো বানাতে পারতেন বা কাটছাঁট করে নতুন রূপ দিতে পারতেন। কিন্তু আজকাল কেউ আর সুঁই সুতা হাতে তোলেননা।
এখনও অনেকেন বোতাম পর্যন্ত জোড়া দিতে সংগ্রাম করতে হয়।
তবে আজকাল সেই মানুষগুলোর সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা ধাঁচের দর্জির দোকান।
আয়োজন করা হচ্ছে সেলাই নিয়ে নানা ধরণের কর্মশালার। এছাড়া অনলাইনে সেলাইয়ের টিউটোরিয়ালগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সামান্য জোড়াতালি, রিফু, বোতাম জুড়ে দেয়া অথবা জিপার প্রতিস্থাপন একটি পোশাককে ডাস্টবিনের পরিবর্তে আপনার ওয়ারড্রবে জায়গা দিতে পারে।
এছাড়া পুরাতন পোশাককে মেরামত বা কাটছাঁট করে নতুন করে তোলা যায়।
যেমন ফুলপ্যান্ট কেটে বানিয়ে নিতে পারেন শর্টস। প্রিয় টপসটা হয়তো রং করে নিতে পারেন। নতুন পকেট জুড়ে, বোতাম লাগিয়ে বা সেলাইয়ের ফোড় দিয়ে বদলে দিতে পারেন পুরো পোশাকটাই।
৮. ফলের তৈরি কাপড়
ফল থেকে তৈরি কাপড় ফ্যাশন শিল্পে নতুন জোয়ার তুলেছে। এখন কমলা, আনারস এমনকি আপেলের শাঁস থেকে তৈরি করা হচ্ছে নানান ধাঁচের কাপড়।
সাধারণত নানা ধরণের ফলের বর্জ্যে পলিইউরেথেন মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই কাপড়।
এ ধরণের কাপড় এবং চামড়া যেমন হালকা এবং টেকসই। তেমনই পরিবেশ-বান্ধব।
কিন্তু এই ফলের তৈরি কাপড় যদি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আপনি “নিউলাইফ”-এর পোশাক পরতে পারেন।
“নিউলাইফ” এক ধরণের সুতা যেটা কিনা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে বানানো হয়।
৯. টেকসই তুলো
তুলার উৎপাদন পরিবেশের ওপর একটি বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে।
এক কেজি তুলা উৎপাদনের জন্য গড়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। একজন মানুষের ২০ বছর সময়ে এই পরিমাণ পানি পান করে থাকে।
অথচ ওই এক কেজি তুলা দিয়ে একটি শার্ট ও দুটি জিনসের চেয়ে বেশি কিছু বানানো সম্ভব না।
তাছাড়া তুলা চাষের জন্য প্রচুর ফাঁকা জমির প্রয়োজন হয়। সেইসঙ্গে দরকার হয় প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর কীটনাশকের।
তবে বর্তমানে কয়েকটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ টেকসই তুলা ব্যবহারের অঙ্গিকার করেছে।
এই টেকসই তুলা উৎপাদনে পানি ও কীটনাশকের ব্যবহার যেমন অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। তেমনি কাজের নিরাপদ পরিবেশও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
১০. সৌর আনুষঙ্গ
ভোক্তাদের খুশি করার লক্ষ্যে এখন বাজারে এসেছে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কাপড়। যেটা ভোক্তারা বারবার পরিধান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তেমনই একটি কাপড় হল “সোলার ফাইবার” বা “সৌর তন্তু”।
মূলত সুতার আকারে উৎপাদিত এই সৌর কোষ দিয়ে কাপড় বোনা হয়।
সেইদিন আর দূরে নয় যেদিন আমরা নিজেদের মাথার সৌর স্কার্ফটিতে ফোন প্লাগ ইন করে পোর্টেবল চার্জার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো।
যেখানে পরনের কাপড়ে পাওয়া যাবে ঘাড় গরম রাখার সুবিধা।
পরিবেশ
জেনে নিন ফ্যাশন কিভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে
পশ্চিমা বিশ্বে শীত, গ্রীষ্ম, শরত সব মৌসুমে নতুন সব ডিজাইনের পোশাক বের হয়।
গত মৌসুমে যে পোশাকটি হাঁটু পর্যন্ত চল ছিল, ঠিক তার কয়েক মাস পরেই পায়ের গোড়ালি ছুঁই অথবা বেশি ঘের, কম ঘেরের কোন গাউন বাজার মাতিয়ে দিলো।
প্রতি মৌসুমে আপনিও ছুটছেন জমকালো শপিং মলে সেটি কিনবেন বলে। হঠাৎ বাজারে নির্দিষ্ট কোন রঙের পোশাকের খুব কাটতি বাড়ল।
যেমন বাংলাদেশে উৎসবের মৌসুমে নির্দিষ্ট কিছু রঙের পোশাক কিনতে মানুষজন বাজারে ছুটতে থাকেন।
কিন্তু বাকি সারা বছর পোশাকটি পরে থাকে। কয়েক মাস পরে তা হয়ে যায় গত মৌসুমের পোশাক।
ডিজাইনার এবং পোশাক বিক্রেতারা আনকোরা কিছু দিতে সবসময় একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় নামেন। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি আমরা সবাই।
নিত্য নতুন পোশাক পরে বাহবা পেতে চাই আমরা অনেকে। কিন্তু এর একটা চরম খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবেশকে।
ফ্যাশন কিভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে?
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর পরিমাণে গ্রিন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে। ব্রিটেনে পোশাক বিক্রেতা এবং হাল ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি করেন এমন ব্যক্তিরা পরিবেশের ক্ষতিতে তাদের ভূমিকার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন।
ব্রিটেনে হাউজ অফ কমন্সের পরিবেশ বিষয়ক একটি কমিটি বলছে প্রতি মৌসুমে না লাগলেও শুধু কেতাদুরস্ত থাকার জন্য নতুন কাপড় কেনা মানেই এক বছর বা মাত্র কয়েক মাসেই প্রচুর কাপড় বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
বাতিল কাপড় গিয়ে জমছে ময়লার ভাগাড়ে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনেই সবচাইতে বেশি নতুন কাপড় কেনার প্রবণতা।
গত এক দশক আগে মানুষজন সেখানে যে পরিমাণ কাপড় ক্রয় করতো এখন তার দ্বিগুণ কিনছে।
এই কমিটির তথ্য অনুযায়ী ব্রিটেনে গত বছর প্রায় ২৫ কোটি জামা কাপড় ময়লার ভাগাড়ে পাঠানো হয়েছে।
এক বছরের মধ্যে সেখানে প্রতি পাঁচটি কাপড়ের তিনটি বাতিল হচ্ছে এবং ল্যান্ডফিল থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
তাতে খরচ হচ্ছে জ্বালানি। ব্রিটেনে ২০১৫ সালে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কারণে একশ বিশ কোটি টন কার্বন উৎপন্ন হয়েছে।
কাপড় প্রস্তুত করতে বা ধুতে পানি ও বিদ্যুৎ লাগে, জ্বালানি লাগে সেটি বিবেচনা করতে হবে।
একটি জিনসের প্যান্ট যতদিন টেকে ততদিন সেটি পরিষ্কার করতে প্রায় চার হাজার লিটার পানি দরকার হয়।
মাত্র একটি জিনস পরিষ্কার করতে যদি এত পানি লাগে তাহলে আপনি বছর জুড়ে জিনস সহ যত কাপড় পড়ছেন তা পরিষ্কার করতে কত পানি লাগে চিন্তা করুন তো।
বা একটা পুরো শহরের কাপড় ধুতে কত পানি লাগে? কাপড় উৎপন্ন করতে বিদ্যুৎ লাগে। মেশিনে কাপড় পরিষ্কার করতে বা তা আয়রন করতেও বিদ্যুৎ লাগে।
হাউজ অফ কমন্সের পরিবেশ বিষয়ক কমিটি আরও বলছে শুধুমাত্র একটি পরিবার মেশিনে একবার কাপড় পরিষ্কার করার পর সত্তর হাজার কাপড়ের তন্তু পানির সাথে পরিবেশে মিশে যাচ্ছে।
যেসব কাপড় আপনি বাতিল করছেন তা এক পর্যায়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। সমুদ্রের মাছ কৃত্রিম কাপড় খাচ্ছে।
এই কমিটির হিসেবে ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রিটেনে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়বে তার তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি দায় হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির।
কিন্তু এর সমাধান কি?
কাপড় ফেলে দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আনার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের পরিবেশ বিষয়ক কমিটি।
তারা বলছে পরিবেশের উপর যে প্রভাব পড়ছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে সরাসরি তার দায়ভার নিতে হবে। দূষণ রোধে তাদের সরাসরি কাজ করতে হবে।
ব্রিটেনে যেসব পোশাক বিক্রি হয়না সেগুলো পুড়িয়ে ফেলছেন অনেক বিক্রেতা। সেটি বন্ধ করার কথা বলছে কমিটি।
ব্যক্তি হিসেবে আপনারও করনিয় আছে। যেমন ফেলে না দিয়ে কাপড় দান করে পারেন।
এতে কাপড় রিসাইক্লিং হবে এবং কিছুটা লাভ হবে। শুধু দরিদ্র নয় আপনি নিজেও রিসাইক্লিং করা কাপড় কিনতে পারেন।
বেশিদিন টেকে এমন কাপড় তৈরি করা যেতে পারে। ইচ্ছেমত কাপড় বাতিল করার বদলে বেশিদিন পড়তে পারেন।
পোশাক বিক্রেতারা কি বলছেন?
ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তা পিটার অ্যান্ড্রুজ বিবিসিকে বলেছেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের কাপড়ের চাহিদার কারণে কাপড়ের পরিমাণ এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাব বাড়ছে।
তিনি বলছেন, তাদের সদস্যরা এখন বেশি টেকে এমন পোশাক ডিজাইন করছেন।
তারা ক্রেতাদেরও কাপড় দান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। ক্রেতাদের বলা হচ্ছে অব্যবহৃত কাপড় দোকানে দিয়ে যেতে।
পরিবেশ
নতুন পোশাক কেনার আসক্তি কিভাবে কমাবেন
কম দামে নতুন পোশাক কিনতে আমরা সবাই ভালোবাসি। বেশিরভাগ সময়ই এগুলো আমরা দ্রুত এবং সস্তায় কিনি এবং একবার পড়ার পরেই তা ছুড়ে ফেলে দেই।
কিন্তু হালের এসব পোশাকই গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরণ, পানি এবং বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য এবং অন্যান্য দেশে এগুলো পাঠানো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা তেমন ব্যবহার উপযোগী থাকে না।
যুক্তরাজ্যের পরিবেশগত অডিট কমিটি দেশটির সরকারের কাছে এই শিল্প বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পরিবেশ এবং শ্রম বিষয়ক ১৮টি সুপারিশ করেছে তারা। সরকার বলছে, এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে তারা।
তবে ক্ষতিকর এমন শপিং করার অভ্যাস কমিয়ে আনতে কি করা যায় সে বিষয়ে টেকসই ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হলো:
১. কম কেনাই বেশি কেনা
পরিবেশবাদী আন্দোলনকারী ও টলি ডলি নামে নৈতিক ফ্যাশন বিষয়ক ব্লগার টলমিয়া গ্রেগরি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, কম কিনতে হবে।”
তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট কোন অনুষ্ঠান যেমন রাতে পরার কিংবা ছুটির দিনে পরার আলাদা আলাদা পোশাক কেনার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।”
“প্রথম দিকে মানুষ একে আক্রমণাত্মক মনে হতে পারে,” তিনি বলেন।
“কিন্তু এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাব্য সব ধরণের চেষ্টা করতে হবে আমাদের। মাথায় রাখতে হবে যে এটা একটা ভালো উদ্যোগ।”
একই কথা বলেছেন সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ফ্যাশনের উপযোগিতা, নকশা এবং ফ্যাশন বিষয়ক অধ্যাপক কেট ফ্লেচার। তিনি বলেন, “কম পোশাক কেনা মোটেও দেহের প্রতি মারাত্মক কোন অবিচার বা বঞ্চনা নয়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “নিজের ওয়্যারড্রোবে যেসব পোশাক আছে সেগুলোই আগে লক্ষ্য করুন। কারণ ওগুলোই আপনার জীবনমান নির্ধারণ করে।”
তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময় এমন পোশাক কিনি যা আমাদের তুষ্ট করার পরিবর্তে অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
“কেনাকাটা করার সময় মানুষ অত্যন্ত তৃপ্তি লাভ করে। কিন্তু পরক্ষণেই ওই কেনা বস্তু বা পোশাকের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে,” তিনি বলেন।
“কেনাকাটা নিয়ে মানুষ কতটা সুখী এমন এক গবেষণায় দেখা যায়, মৌলিক চাহিদা মেটার পরে অন্যসব কেনা কাটা মানুষের কল্যাণে তেমন কোন কাজে আসে না।”
তিনি বলেন, পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব তথ্যকে অগ্রাহ্য করে।
“আমরা আসলে যা দেখি তা হচ্ছে, অতিরিক্ত পাওয়ার বিষয়টি মানুষের কল্যাণের বোধকে কমিয়ে দেয়।”
“এটা একাকীত্ব এবং উচ্চ মাত্রার অবসাদ ডেকে আনে। এটা আমাদের সুখ কেড়ে নিচ্ছে এবং একাকী করে তুলছে,” তিনি বলেন।
২. সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কিনুন
মিস ফ্লেচার-যিনি টেকসই ফ্যাশন নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন তিনি বলেন, “জনপ্রিয় ফ্যাশনের শহরগুলো বা হাই স্ট্রিট কেনা কাটার জন্য খুব সুনির্দিষ্ট পরিসর দিয়ে থাকে যার মধ্য থেকেই মানুষ আগ্রহ নিয়ে কেনাকাটা করে।”
“আপনার রুচি যদি আসলেই নতুনত্ব, আধুনিকতা, পরিবর্তন এবং বৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে, আপনার ওয়্যারড্রোব আর সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনাতেই আপনি এগুলো অনেক বেশি পরিমাণে খুঁজে পাবেন।”
ফ্রান্সেসকা উইলো, ইথিক্যাল ইউনিকর্ন নামে নিজের ফ্যাশন ব্লগের এই লেখিকা বলেন, “প্রথমেই খুঁজে দেখার জন্য সেকেন্ড হ্যান্ডই সবচেয়ে ভালো অপশন। কারণ এটি ইতোমধ্যে অস্তিত্ব রয়েছে এমন জিনিসের উপযোগিতা বাড়িয়ে দেয়।”
তিনি বলেন, “অনেকেই চ্যারিটি শপগুলোকে কৌশলে এড়িয়ে যান। কারণ তারা জানেন যে তারা আসলে কি চাইছেন। কিন্তু ডি-পপ এবং ভিনটেডের মতো সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের অ্যাপগুলো আপনার পোশাক নির্বাচনের জন্য আসলেই সহায়ক।”
৩. প্রাকৃতিক উপাদান বাছাই করুন
টেকসই বিষয়ক ব্লগাররা বলেন, “যেকোন মূল্যে” নতুন সিনথেটিক উপাদান দিয়ে তৈরি পোশাক কেনা বন্ধ করতে হবে।
মিস উইলো বলেন, “আমি হেম্প, লিনেন এবং জৈব সুতি বস্ত্র যা গ্লোবাল অরগানিক টেক্সটাইল স্ট্যান্ডার্ডের অনুমোদনের আওতায় পড়ে এমন পোশাক নিখুঁত না হলেও কিনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের উচিত কাপড়ের দীর্ঘস্থায়ীত্ব বাড়ানো। এটা নির্ভর করে কিভাবে আপনি কাপড়ের যত্ন নিচ্ছেন তার উপর। নির্দেশিকা দেখে এবং সে অনুযায়ী ধৌত করলে কাপড় টেকসই হয়।”
“বেশিরভাগ মানুষই বেশি গরম পানিতে কাপড় ধুয়ে থাকেন। অথচ ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে জ্বালানিও কম ব্যয় করতে হয়।”
তিনি বলেন, “আপনার কাছে থাকা সিনথেটিক কাপড় ধৌত করতে হলে তার সাথে আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে যাতে এর থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র তন্তুগুলো জলজ পরিবেশকে দূষিত না করে।”
ব্যাগ কোন সমাধান নয়। তবে এটি আমাদের সৃষ্ট সমস্যাকে কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. যাচাই করুন
মিস উইলও বলেন, যেকোনো ব্র্যান্ড থেকে নতুন কাপড় কেনার আগে সেগুলো কোথায় এবং কারা বানিয়েছে সে বিষয়ে মানুষের প্রশ্ন করা উচিত।
“ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমোদন পাওয়া ব্র্যান্ডগুলোর কাপড়ই কেনা উচিত। কারণ তারা অন্তত ন্যায্য মজুরীর বিষয়টি নিশ্চিত করে,” তিনি বলেন।
তিনি বলেন, অনেক ব্লগ রয়েছে যেগুলোতে এ ধরণের ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে যা আপনার সহায়ক হতে পারে।
“অনেক ক্রেতার কাছেই ঝামেলার মনে হতে পারে। সত্যি করে বলতে গেলে ভোক্তাদেরকে আসলেই অনেক কাজ করতে হবে এগুলো মানতে হলে। আর এজন্যই আমাদের প্রক্রিয়া এবং নীতিগত পরিবর্তন দরকার।”
“কিন্তু নিজের থেকেই এই পরিবর্তন শুরু করাটা সহজ। দক্ষ হয়ে উঠুন, তাহলে আপনি নিজেই এই অভ্যাস তৈরি করতে পারবেন। যা আপনাকে তৃপ্তি দেবে,” তিনি বলেন।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন