ছাদকৃষি
৩০ বছর আগে লাগানো ছাদবাগানে ফুটেছে “নিশিপদ্ম”
মিষ্টি মনোহরিণী সুবাস, সাদা রং, স্নিগ্ধ ও পবিত্র আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই ফুল
যে ফুল কয়েক বছর পর না স্বল্প সময়ের জন্য একবার ফোটে, সেই ফুল নিয়ে কৌতুহল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। “নাইট কুইন” বা “নিশিপদ্ম”। মিষ্টি মনোহরিণী সুবাস, সাদা রং, স্নিগ্ধ ও পবিত্র আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই ফুল।
রাতের আঁধারে নিজের সৌন্দর্য মেলে ধরে সকাল হওয়ার আগেই মিলিয়ে যায়। আর এই একটি ফুলের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের দেশে নাইট কুইনকে দুর্লভ প্রজাতির ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) রাতে এই দুর্লভ নাইট কুইন ফুলের দেখা মিলেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর পাইলট মোড় সংলগ্ন অ্যাডভোকেট রওশন আরা বেগমের বাড়ির ছাদবাগনে।
রওশন আরা পেশায় একজন আইনজীবী। অধিকাংশ সময় তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জাতীয় মহিলা সংস্থা শরীয়তপুর জেলার চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এতো ব্যস্ততার পরেও তিনি ভীষণ সৌখিন একজন মানুষ। তার সখ হলো বাগান করা। তার বাড়ির সেই বাগানেই ওই নাইট কুইন ফুলের দেখা মেলে।
অ্যাডভোকেট রওশন আরা জানান, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ত্রিশ বছর আগে খুলনা থেকে দুটি পাতাওয়ালা গাছের চারা এনেছিলেন। বাসার ছাদে টবে লাগিয়ে দীর্ঘদিন পরিচর্যা করেছেন। প্রায় সাত বছর অপেক্ষার পর প্রথম গাছে ফোটে বহুদিনের কাঙ্খিত নাইট কুইন ফুল। এরপর দু’চার বছর পর পর গাছে ফুল ফুটেছে। তার গাছ থেকে অনেক মানুষকে তিনি চারা দিয়েছেন গাছ লাগানোর জন্য। এখন এই গাছের বয়স প্রায় ত্রিশ বছর পার হয়ে গিয়েছে।
ফুল ফোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গাছ লাগানোর প্রায় সাত বছর পর প্রথম ফুল ফুটেছিল। ফুল ফুটলে ফুলগুলোকে ঘিরে ঘরে এক রকমের উৎসবের আমেজ আসে। আত্মীয় স্বজন ও আশপাশের মানুষজন ফুল দেখতে আসে। ফুলের গন্ধে পুরো ঘর সুবাসিত হয়ে যায়। যতবার ফুল ফোটে প্রতিবারই ফুলের ছবি তুলে রাখা হয়।”
দূর থেকে আসা রওশন আরার এক আত্মীয় বলেন, “আমি এই নাইট কুইন ফুলের গল্প শুনেছি। কিন্তু কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। রাতে শোনামাত্রই আমি এই নাইট কুইন দেখতে এসেছি। অনেক ভালো লাগলো ফুলটি দেখে।”
আঙিনা কৃষি
ধনেপাতা চাষ করুন টবে

সালাদের জন্য ধনেপাতা অন্যতম। খাবার সুস্বাদু করতে ধনেপাতার জুড়ি নেই। তাই যারা শহরে থাকেন তারা টবে করে বাসার ছাদে অথবা বারান্দায় ধনেপাতা চাষ করতে পারেন।
গুণাবলি
ধনেপাতায় ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন পাওয়া যায়। টবে ধনেপাতার চাষ করার সুবিধা হচ্ছে- প্রায় বারো মাসই চাষ করা যায়।
সময়
তবে আশ্বিন থেকে পৌষ অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষ করা যায়।

মাটি
সব
রকমের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটি
ধনেপাতা চাষের জন্য উপযোগী। ধনেপাতা আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা
থাকতে হবে।
বীজ বপণ
বীজ
২৪ ঘণ্টা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে ভিজিয়ে রাখলে তাড়াতাড়ি গজাবে। ধনেপাতার
জন্য চওড়া মুখ বিশিষ্ট টব নির্বাচন করতে হবে। ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ
বুনে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে পানি দেওয়ার
দরকার নেই।
সার
পরিমাণমতো ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি এবং গোবর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পরিচর্যা
মাটিতে
রস না থাকলে ২-১ দিন পরপর পানি সেচ দিতে হবে। পাখি যাতে পাতা না খায়
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ বোনার পর পিঁপড়া যাতে খেয়ে ফেলতে না পারে
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিঁপড়া এলে কীটনাশক ছিটিয়ে পিঁপড়া দমন করতে
হবে।
পাতা তোলা
গাছ খুব ঘন হলে তা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বেশি বড় হওয়ার আগে তুলে খেতে হবে।
ছাদকৃষি
টবে ফুলের চাষ কেন করবেন

শহরে যারা থাকেন, তাদের জন্য ফুলের বাগান করার সুযোগ কম। কেবল বিল্ডিংয়ের ছাদ, বারান্দা, সিঁড়িঘরই ভরসা। তাই টবে দু-চারটা ফুলগাছ লাগানো যেতে পারে। সব ফুলের গাছ আবার টবে ভালো হয় না। সেজন্য জেনে নিন টবে চাষের উপযোগী ফুলগাছ কোনগুলো।
টবের উপযোগী
বৃক্ষজাতীয় দীর্ঘজীবী ফুলগুলো টবে
রোপণ না করাই ভালো। বিভিন্ন মৌসুমী ফুল টবের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে যে
ফুলগাছই রোপণ করা হোক না কেন, সেগুলো যেন রোদ পায়। একটু পরিকল্পনা করে টবে
ফুলগাছ রোপণ করলে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল পাওয়া যাবে।
টবের ফুলগাছ
গ্রীষ্মকালে গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা,
সূর্যমুখী, জিনিয়া, পিটুনিয়া, মোরগঝুঁটি, দোপাটি, মণিকুন্তলা, বিচিত্রা
ইত্যাদি চাষ করা যায়। বর্ষায় ভালো হবে হাইড্রেঞ্জিয়া, বেলি, জুঁই, চাঁপা,
পত্রলেখা, তুষারমোতি, দোপাটি, জিনিয়া, সূর্যমুখী (ছোট), স্থলপদ্ম,
মালতীলতা প্রভৃতি। শীতকালে গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি,
পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন,
স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া ইত্যাদি। সারা বছর কাঞ্চন (সাদা),
জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা, জয়তী, হাজারপুটিয়া, নয়নতারা,
সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে বেলি, জুঁই,
বাগানবিলাস, গোলাপ, জবা, করবী, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, কুন্দ, চাঁপা, মুসেন্ডা,
কামিনী, অ্যালামন্ডা, স্থলপদ্ম, পোর্টল্যান্ডিয়া, ব্রানফেলসিয়া,
ক্যামেলিয়া, টগর, শিউলি, পয়েনসেটিয়া উল্লেখযোগ্য।

সহজে মরে না
সহজে মরে না বা একটু কম যত্ন নিলেও ফুল
ফোটে এমন গাছ রোপণ করতে চাইলে নয়নতারা, সন্ধ্যামণি, দোলনচাঁপা, কলাবতী,
অ্যালামন্ডা, গাঁদা, বেলি, নাইটকুইন, হাসনাহেনা, রঙ্গন, মুসেন্ডা,
কুঞ্জলতা, টাইমফুল প্রভৃতি পছন্দ করতে পারেন। লাগাতে পারেন ফুল দেওয়া
বিভিন্ন ক্যাকটাস, এগুলো সহজে মরে না।
রোপণের নিয়ম
প্রথমে গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব
সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড়
গাছের জন্য ছোট টব চলবে না। প্রতি টবের জন্য দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের
একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এরসঙ্গে
একমুঠো হাড়ের গুড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু’মুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়।
এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকে।

পরিচর্যা
মৌসুমী ফুলের ক্ষেত্রে মাসখানেক বয়সের
ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার বেলায় অল্পবয়সী ভালো ও তরতাজা,
গাট্টাগোট্টা দেখে চারা বা কলম লাগানো ভালো। চারা লাগানোর পর আস্তে আস্তে
চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। লাগানোর পর গোড়ায় পানি দিতে
হবে। গাছকে খাড়া রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। গাছের চারা অবস্থা
থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সদ্য লাগানো ফুলের চারা কয়েক দিন ছায়ায় রেখে সহনশীল করে নিতে হয়। এ
অবস্থায় সকালে ও বিকেলে রোদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টবে গাছের
গোড়ার মাটি একেবারে গুড়ো না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়া ভালো। এ
ক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ
কাজটি প্রতি ১০ দিনে একবার করে করতে হবে।
সার
কুঁড়ি আসার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ৫০ গ্রাম টিএসপি
(কালো সার), ১০০ গ্রাম ইউরিয়া (সাদা সার) ও ২৫ গ্রাম এমওপি (লাল সার)
একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতি গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর দিতে হবে। তবে এক
মৌসুমে এই রাসায়নিক সার তিনবারের বেশি দেওয়া যাবে না। তবে রাসায়নিক সার
ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার কোনোক্রমেই শেকড়ের ওপর না পড়ে।
ট্যাবলেট সার দিলে এসব সার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

বেশি ফুল চাইলে
বেশিদিন ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে ফুল শুকাতে দিবেন না। ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভালো ফুল পাওয়া যায়। গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছ থেকে বেশি ফুল বেশিদিন পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ি চিমটি দিয়ে ছেঁটে দিতে হয়।
আঙিনা কৃষি
টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।
শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।
থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting)
থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring)
চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management)
সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।
ছাদকৃষি
ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়

এখন গ্রামে ও শহরে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিষমুক্ত ফল ও সবজি পেতে দেশের মানুষ ছাদ বাগানের দিকে ঝুঁকছে। ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। ফল হিসেবে জামরুল আমাদের দেশে জনপ্রিয়। খুব সহজে ছাদে জামরুল চাষ করা যায়। তাই জেনে নিন এ চাষ পদ্ধতি।
কাঁচা-পাকা সব অবস্থাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।
সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।
আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দো-আঁশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে।
সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারও মাটি ভরবেন।
মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমের দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে বছরের যেকোনো সময় জামরুল গাছ লাগানো যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে।
গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।
জামরুল গাছ ছাদে লাগানোর পরে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। নিয়তিম পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে। তাইলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
আঙিনা কৃষি
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার নিয়ম ও উপকারিতা: ঘরে বসেই ফলান সুস্বাদু আম

আজকাল শহুরে পরিবেশে জায়গার অভাবে অনেকেই ছাদে বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। আমের মতো সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ফলও এখন ছাদে চাষ করা সম্ভব। কলমের চারা ব্যবহার করে ছাদে আম চাষ করা সহজ, কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব। সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিচর্যার মাধ্যমে আপনি ছাদেই ফলাতে পারবেন পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাদু আম।
আমের কলমের চারা: কেন এটি আদর্শ?
- আমের কলমের চারাগুলো সহজে বেড়ে ওঠে এবং দ্রুত ফল ধরে।
- এটি বীজ থেকে চাষ করা গাছের তুলনায় অধিক ফলনশীল।
- ছোট জায়গায় এবং টবে চাষের জন্য আদর্শ।

ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করার ধাপসমূহ
সঠিক জায়গা নির্বাচন
- ছাদের এমন জায়গা বেছে নিন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছায়।
- ছাদটি এমন হতে হবে যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো।
টব বা ড্রামের প্রস্তুতি
- মাটি ধারণক্ষমতা ভালো এমন বড় টব বা ড্রাম ব্যবহার করুন।
- ১৮-২৪ ইঞ্চি গভীর এবং প্রশস্ত টব/ড্রাম বেছে নিন।
- টবের নিচে ছিদ্র রাখুন, যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
মাটির মিশ্রণ তৈরি
- মাটির মিশ্রণে ৬০% দোআঁশ মাটি, ২০% জৈব সার (গোবর বা কম্পোস্ট) এবং ২০% বালি ব্যবহার করুন।
- মাটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য কিছু টিএসপি এবং পটাশ মিশিয়ে নিন।

চারা রোপণ
- ভালো মানের আমের কলমের চারা সংগ্রহ করুন, যেমন আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ইত্যাদি।
- চারার গোড়া শক্তভাবে মাটিতে পুঁতে দিন এবং মাটি চেপে দিন।
- রোপণের পরপরই হালকা পানি দিন।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
- চারার মাটি সব সময় আর্দ্র রাখুন, তবে পানি জমতে দেবেন না।
- গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন এবং শীতকালে ২-৩ দিন পর পর পানি দিন।
সার প্রয়োগ
- রোপণের এক মাস পর থেকে প্রতি মাসে জৈব সার প্রয়োগ করুন।
- গাছে ফুল আসার সময় পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।
ছাঁটাই ও পরিচর্যা
- গাছের শুকনো ডাল এবং পাতাগুলো নিয়মিত ছাঁটাই করুন।
- গাছে রোগবালাই হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
কীটনাশক ব্যবহার
- পোকামাকড় দমনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
ফল সংগ্রহ
- কলমের চারা সাধারণত ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল ধরে।
- ফল পাকার পর সাবধানে সংগ্রহ করুন।

ছাদে আম বাগান করার উপকারিতা
সতেজ এবং বিষমুক্ত ফল
- নিজের বাগানের আম বিষমুক্ত ও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
- বাজারের ফলের তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
জায়গার সঠিক ব্যবহার
- শহুরে ছোট জায়গাতেও ছাদে আম চাষ করা সম্ভব।
- এটি ছাদের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং পরিবেশ বান্ধব।
আর্থিক সাশ্রয়
- বাজার থেকে আম কেনার বদলে নিজের বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা সাশ্রয়ী।
- দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ।
পরিবেশের জন্য উপকারী
- ছাদে গাছ থাকা মানে তাপমাত্রা কমানো এবং পরিবেশের জন্য কার্যকর।
- এটি বাড়ির বাতাসকে শীতল ও বিশুদ্ধ রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
- বাগান পরিচর্যা করা মানসিক চাপ কমায়।
- এটি একটি দারুণ শখ, যা আপনাকে সুস্থ রাখে।
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান করা শুধু সহজ নয়, এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করলে আপনি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বিষমুক্ত আমের ফলন পেতে পারেন। তাই সময় নষ্ট না করে আজই আপনার ছাদে একটি আম বাগান গড়ে তুলুন এবং নিজের ফসলের আনন্দ উপভোগ করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন