চীন
করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি: ডব্লিউএইচও
নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী মহামারির চেহারা নিয়েছে বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস গেব্রেইয়েসুস এক সংবাদ সম্মেলনে একথা ঘোষণা করে বলেছেন, এ ভাইরাসের বিস্তারের ওপর তারা সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছিলেন, এবং এ ব্যাপারে ‘ভীতিকর রকমের নিষ্ক্রিয়তা’ দেখে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চীন থেকে সূচনা হওয়া এই নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড নাইনটিন সংক্রমণে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে ১ লক্ষের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ শব্দটি ব্যবহার না করার পর অবশেষে বুধবার মি. গেব্রেইয়েসুস নিশ্চিত করলেন যে করোনাভাইরাসের বিস্তার এখন প্যানডেমিকের রূপ নিয়েছে।
তবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ এটা দেখাতে পেরেছে যে এই নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তারকে দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মি. গেব্রেইয়েসুস সরকারগুলোর প্রতি জরুরি এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়ে এ সংক্রমণের গতিপথ বদলে দেবার আহ্বান জানান।
যখন কোনো ছোঁয়াচে রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই তাকে বলা হয় প্যানডেমিক বা ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি’।
মি. গেব্রেইয়েসুস বলেন, গত দু’সপ্তাহে চীনের বাইরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ গুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, তার এ ঘোষণায় করোনাইরাসের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের করণীয় সম্পর্কে দেয়া পরামর্শে কোন পরিবর্তন আসবে না।
এগ্রোবিজ
ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি কমিয়েছে চীন
হারিকেন আইডার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় চীন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দেশটি থেকে আমদানি ১৮ শতাংশ কমেছে। মাড়াইস্বল্পতার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এ তথ্য জানিয়েছে।
চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন ক্রেতা দেশ। শুল্ক বিভাগের তথ্য বলছে, গত মাসে দেশটি ব্রাজিল থেকে ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার টন সয়াবিন কেনে। গত বছরের একই সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ৫০ হাজার টন।
শূকর পালন খাতে সয়াবিনের চাহিদা বাড়ায় শীর্ষ সরবরাহকারী ব্রাজিল থেকে গত বছর সয়াবিন ক্রয় শুরু করেন চীনের মাড়াইকারীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শূকরের মাংসের দাম কমে যাওয়ায় সয়াবিন ক্রয় কমিয়ে এনেছেন তারা।
এদিকে হারিকেন আইডায় ক্ষতির পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি কমতে শুরু করে। নিম্নমুখিতা অব্যাহত আছে। গত মাসে দেশটি থেকে চীন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টন সয়াবিন ক্রয় করে।
ইসলাম
চীনে কোরআন মজিদ অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে অ্যাপল
চীনে কর্মকর্তাদের অনুরোধের পর অ্যাপল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কোরআন অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে।
সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ‘কোরআন মজিদ’ অ্যাপ। অ্যাপ স্টোরে এটি পাওয়া যায় এবং এর রিভিউর সংখ্যা দেড় লাখের মতো। সারা বিশ্বে লাখ লাখ মুসলিম এই অ্যাপটি ব্যবহার করে।
বিবিসি জানতে পেরেছে অবৈধ ধর্মীয় টেক্সট থাকার কারণে এই অ্যাপটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এখনও কোন মন্তব্য করেনি।
সারা বিশ্বে অ্যাপ স্টোরের অ্যাপগুলোর ওপর নজর রাখে এরকম একটি ওয়েবসাইট ‘অ্যাপল সেন্সরশিপে’ এই খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
অ্যাপটির নির্মাতা পিডিএমএস কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে, “অ্যাপলের মতে, আমাদের অ্যাপ ‘কোরআন মজিদ’ চীনা অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কারণ তাতে কিছু বিষয় ছিল যা অবৈধ।”
“বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা চীনের সাইবারস্পেস প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।”
কোম্পানিটি বলছে, চীনে তাদের প্রায় ১০ লাখের মতো ব্যবহারকারী রয়েছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ইসলামকে একটি ধর্ম বলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে থাকে।
তবে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, এমনকি গণহত্যার জন্যেও চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
কোরআন অ্যাপটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বিবিসির কাছে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অ্যাপল। তবে তারা মানবাধিকার বিষয়ে তাদের নীতির কথা উল্লেখ করেছে।
অ্যাপলের ওই নীতিতে বলা হয়েছে: “আমাদেরকে স্থানীয় আইন মেনে চলতে হয়, জটিল কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রেও, যে ব্যাপারে আমরা সরকারের সাথে দ্বিমতও পোষণ করে থাকতে পারি।”
তবে চীনা এই অ্যাপটি কোন আইন ভঙ্গ করেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
‘কোরআন মজিদ’ অ্যাপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মুসলিমের এই অ্যাপটির ওপর আস্থা রয়েছে।
গত মাসে অ্যাপল ও গুগল রাশিয়ার কারারুদ্ধ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির পরিকল্পিত একটি ট্যাকটিক্যাল ভোটিং অ্যাপ সরিয়ে নেয়।
এই অ্যাপটি সরিয়ে না নিলে রুশ কর্তৃপক্ষ এই দুটো কোম্পানিকে জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল।
চীন অ্যাপলের জন্য অন্যতম বৃহৎ একটি বাজার। এমনকি এই কোম্পানির বিভিন্ন সামগ্রীর সরবরাহ চীনা কল-কারখানার ওপর নির্ভরশীল।
এসপ্তাহে চীনে আরো একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় অ্যাপ, অলিভ ট্রি’র ‘বাইবেল অ্যাপ’ নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে বিবিসি জানতে পেরেছে কোম্পানিটি নিজেই অ্যাপটি সরিয়ে নিয়েছে।
এবিষয়ে অলিভ ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোন মন্তব্য করেনি।
অ্যাপল সেন্সরশিপের প্রকল্প পরিচালক বেঞ্জামিন ইসমাইল বলেছেন, “সম্প্রতি অ্যাপল বেইজিং-এর সেন্সরশিপ ব্যুরোতে পরিণত হয়েছে।”
“তাদেরকে সঠিক কাজটাই করতে হবে, এবং তার পর চীন সরকারের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার মাইক্রোসফট বলেছে তারা চীনে তাদের লিঙ্কডিন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা বলছে, চীনের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
চীন
করোনাভাইরাস: রোগ জীবাণু নির্মূলে সচল হয়েছে রোবট
“আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান, দরোজা বন্ধ রাখুন। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জীবাণুনাশকের কাজ শুরু হবে।“ ইংরেজিতে এই কথাগুলো বলছে একটা রোবট।
“এটা চীনা ভাষাতেও কথা বলতে পারে,” জানালেন ইউভিডি রোবটস কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন এলিস।
জানালার কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা গেল ঘরের মধ্যে রোবটটি ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে এবং ক্যামেরার ফ্ল্যাশ-বাতির মতো অতিবেগুনি রশ্মি জ্বেলে ঘরের সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করছে।
“আমাদের ব্যবসা এমনিতেই বেশ চড়া ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পর এটা একেবারেই আকাশচুম্বী হয়েছে,” বলছেন ইউভি রোবটস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পের ইউল নিয়েলসেন।
এরই মধ্যে তারা চীনে, বিশেষভাবে উহানে, প্রচুর সংখ্যায় এই রোবট পাঠিয়েছেন।
এশিয়া এবং ইউরোপেও তাদের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি অর্ডার এসেছে ইতালি থেকে”, বলছেন মি. নিয়েলসেন, “তাদের অবস্থা সত্যি শোচনীয়। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করতে।“
স্বাভাবিকভাবেই ইউভিডি রোবটসের উৎপাদন বেড়ে তিনগুণ হয়েছে।
ডেনমার্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেনসে এই কোম্পানির কারখানায় প্রতিদিন একটা করে এধরনের জীবাণুনাশক রোবট নির্মাণ করা হচ্ছে।
যেভাবে কাজ করে এই রোবট
এই জীবাণুনাশক রোবটের রয়েছে আটটা বাল্ব, যেগুলো থেকে তীব্র অতিবেগুনি অর্থাৎ আলট্রা-ভায়োলেট বা ইউভি-সি আলোকরশ্মি বের হয়।
এই আলোকরশ্মি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুর ডিএনএ এবং আরএনএ ধ্বংস করে যাতে এগুলো সংখ্যায় আর বাড়তে না পারে।
তবে এই অতিবেগুনি রশ্মি মানবদেহের জন্যও খুবই ক্ষতিকারক।
তাই এই রোবট কাজ করার সময় ঘরে কোন মানুষ উপস্থিত থাকার নিয়ম নেই।
পুরো ঘরের জীবাণু ধ্বংস করতে রোবটটির ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে।
এই রোবট তৈরিতে সাহায্য করেছে ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ডেনমার্ক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক হান্স ইয়র্ন কলমোস বলছেন, “এমন অনেক খারাপ জীবাণু আছে যেগুলো আপনার দেহে সংক্রমিত হতে পরে।“
“কিন্তু আমাদের দেহে যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মির ডোজ দেয়া যায়, তাহলে এধরনের ক্ষতিকারক জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।“
এই রোবটের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এর দাম ৬৭ হাজার ডলার।
তবে এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে করোনাভাইরাস নির্মূল করতে পারে কিনা, তার জন্য আলাদা করে কোন পরীক্ষা চালানো হয়নি।
কিন্তু মি. নিয়েলসেন বিশ্বাস করেন এই রোবট করোনাভাইরাসকেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
“সার্স এবং মার্স-এর সাথে করোনাভাইরাসের অনেক দিক থেকেই মিল রয়েছে। এবং আমরা জানি যে ইউভি-সি আলোকরশ্মি দিয়ে এগুলো ধ্বংস করা সম্ভব,” বলছেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সহযোগী অধ্যাপক ড. লেনা সিরিচও মনে করেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইউভি রোবট হতে পারে একটি মোক্ষম অস্ত্র।
চীন
করোনাভাইরাস মহামারির উৎস কি চীনে চোরাচালান হওয়া প্যাঙ্গোলিন থেকে?
প্যাঙ্গোলিন নামে একটি প্রাণী যা চোরাই পথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয় – তার দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড নাইনটিনের সাথে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’
প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে – যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সাথে সম্পর্কিত।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মত জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তারা এটাও বলছেন যে , মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।
“যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা আরো নিশ্চিত হবার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী-থেকে-মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত” – বলেন ড. ল্যাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সাথে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরো বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ – যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে – তার সাথে এর মিল নেই।
সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলছেন,”করোনাভাইরাসের সাথে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।”
ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং তার পর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো – তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
খুব সম্ভবত: হর্সশু প্রজাতির বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন – দুধরণের প্রাণীই এতে জড়িত কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা।
ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে – এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল – নাকি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?
প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
চীন অবশ্য কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার কথায়, কোভিড নাইনটিনের উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোন প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসই ছিল, বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোন প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন
চীনের উইগার: দাড়ি, বোরকা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যাদের বন্দী করা হয়
চীনে সংখ্যালঘু উইগার সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মুসলমানের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের নতুন দলিল ফাঁস হয়েছে। সেসব দলিলে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে তিন হাজারের বেশি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
১৩৭ পৃষ্ঠার সে দলিলে প্রতিটি পৃষ্ঠায় ভিন্ন ভিন্ন কলাম এবং ছক কেটে ঐ মানুষেরা কতবার নামাজ পড়েন, কী পোশাক পরেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আচার আচরণের বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
তবে, চীনের সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে এগুলো দেশটির সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপের অংশ।
কিভাবে পাওয়া গেছে এসব দলিল
এসব দলিল অত্যধিক ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত বছর শিনজিয়াং অঞ্চলের যে সূত্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সরকারি নথি পাওয়া গিয়েছিল, এবারও সেই সূত্রের মাধ্যমেই নতুন দলিলপত্র পাওয়া গেছে।
শিনজিয়াংয়ে চীনা নীতির একজন বিশেষজ্ঞ ড. অ্যাড্রিয়ান জেনজ, যিনি ওয়াশিংটনে ভিক্টিমস অব কম্যুনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো, তিনি মনে করেন ফাঁস হওয়া এসব দলিল আসল।
“এসব দলিল আমার দেখা এ পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ যে চীনের সরকার কিভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চার কারণে মানুষকে শাস্তি দিয়ে চলেছে।”
দলিলে পাওয়া ক্যাম্পগুলোর একটি ‘নাম্বার ফোর ট্রেনিং সেন্টার’ যেখানে গত বছরের মে মাসে শিনজিয়াংয়ে চীন সরকার আয়োজিত এক সফরে বিবিসির একটি দল গিয়েছিল।
সেসময় বিবিসির দলটির পাওয়া অনেক তথ্য উপাত্তের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে নতুন এসব দলিলে।
সেখানকার অনেক মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি সেসময় অনেক তথ্য সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছিল।
কী আছে দলিলে
নতুন দলিলে সংখ্যালঘু উইগার সম্প্রদায়ের ৩১১ জন মানুষের ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিক অনুসন্ধানের অর্থাৎ তাদের পূর্ব ইতিহাস, ধর্মীয় আচার পালনের দৈনন্দিন রুটিন, তাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে এসব দলিলে।
রিপোর্টের শেষ কলামে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, ঐ ব্যক্তিদের বন্দীশিবিরে আরো রাখা হবে নাকি তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, অথবা আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এমন কাউকে আবার বন্দি শিবিরে ফিরিয়ে আনতে হবে কিনা।
নতুন এসব দলিলের মাধ্যমে ঐসব ক্যাম্পকে এতদিন সাধারণ স্কুল বলে চীন যে দাবি করে এসেছে তা ভিত্তিহীন হয়ে পড়ছে।
প্রাপ্ত দলিল বিশ্লেষণ করে ড. জেনজ বলছেন, এসবের মাধ্যমে ওখানে চলা সিস্টেমের ব্যাপারে ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি ক্যাম্পে থাকা মানুষের ‘আদর্শিক ও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো’ অনুযায়ী তাদের বিভক্ত করে পর্যালোচনা করার ব্যাপারেও ধারণা পাওয়া যায়।
বোরকা পরা, পাসপোর্ট করতে চাওয়ায় ‘সংশোধন’ শিবিরে
৫৯৮ নম্বর সারিতে একটি কেস রয়েছে, যেখানে হেলচেম নামের ৩৮ বছর বয়সী একজন নারীকে রি-এডুকেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে, কারণ তিনি কয়েক বছর আগে বোরকা পরতেন।
এটি অতীতের ঘটনার কারণে এবং নিয়ম বহির্ভূত শাস্তির একটি উদাহরণ মাত্র।
অন্যদের মধ্যে কেউ আছেন, যারা কেবল পাসপোর্টের আবেদন করার কারণে সংশোধন’ শিবিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, যার মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে কেউ দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে চাইলেও সেটাকে কর্তৃপক্ষ শিনজিয়াংয়ে উগ্রপন্থার লক্ষ্মণ হিসেবে বিবেচনা করে।
৬৬ নম্বর কলামে, মেমেত্তটি নামে ৩৪ বছর বয়সী একজন যুবক ঠিক এই কারণে বন্দি হয়েছেন, যদিও দলিলে উল্লেখ আছে তার কাছ থেকে, ‘বাস্তব কোন ঝুঁকি’ নেই।
আবার ২৩৯ নম্বর সারণিতে দেখা যায়, নুরমেমেট নামে ২৮ বছর বয়সী একজনকে রি-এডুকেশন কার্যক্রমে পাঠানো হয়েছে, কারণ একটি ওয়েব লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে তিনি ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ একটি বিদেশী ওয়েবসাইটে চলে গিয়েছিলেন।
তার আচরণের নিয়েও কোন অভিযোগ নেই বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে ৩১১ জন ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারা সবাই শিনজিয়াংয়ের দক্ষিণে কারাকাক্স কাউন্টি নামে এক শহরের বাসিন্দা, যেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ উইগার সম্প্রদায়ের।
উইগাররা বেশির ভাগই মুসলমান, এবং তাদের মুখাবয়ব, ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী অর্থাৎ যাদের হান চাইনিজ বলা হয়, তাদের চেয়ে বরং মধ্য এশিয়ার সাদৃশ্য বেশি।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে লক্ষ লক্ষ হান চাইনিজ শিনজিয়াংয়ে বসতি গড়ে তুলেছে।
এরপর থেকে ক্রমে সেখানে এক ধরণের জাতিগত উত্তেজনা তৈরি এবং উইগারদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে এমন আশংকা ক্রমে বাড়ছে।
এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই সেখানে বিক্ষোভ সংঘাতের ঘটনা ঘটে, বেইজিং এর পক্ষ থেকে যা কঠোরভাবে দমন করা হয়।
এজন্যই ক্রমে উইগার এবং শিনজিয়াংয়ের অন্য সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ যেমন কাজাখ এবং কিরগিজ সম্প্রদায়ের লোকেরা সরকারের দমননীতির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন, এবং তাদের বন্দি শিবিরে নেয়া হচ্ছে।
নতুন প্রকাশিত দলিলসমূহকে ড. জেনজ নাম দিয়েছেন ‘কারাকাক্স তালিকা’, তিনি বলছেন, এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে চীনের কর্তৃপক্ষ এখন যেকোন ভিন্নমতকেই আনুগত্যহীনতা মনে করছে।
আর সেই ‘আনুগত্যহীনতা’ দূর করার জন্য সরকার উইগারদের বাড়িঘর এবং অন্তরের ভেতরে পরিবর্তন আনতে চায়।
কর্তৃপক্ষ কিভাবে এসব অনুসন্ধান চালায়
২০১৭ সালে উইগার মুসলমানদের জন্য যখন কর্তৃপক্ষ বন্দীশিবির চালু করে করে, সেসময় কম্যুনিস্ট পার্টির কিছু বিশ্বস্ত কর্মী, যারা গ্রামভিত্তিক দলের সদস্য হিসেবে কাজ করত তারা উইগার সমাজের ভেতরকার তথ্য বের করে আনার কাজটি করে।
তারা প্রত্যেকে কয়েকটি করে বাড়ির দায়িত্ব নেয়, ঐসব বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে থাকে, বন্ধুত্ব করে এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে নোট নেয়।
তাদের জীবনাচরণ, ধর্ম বিশ্বাস, বাড়িতে ধর্মচর্চার পরিবেশ অর্থাৎ কী কী আচার পালিত হয়, বাড়িতে কয়টি কোরান শরীফ আছে—এমন সব বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তারা।
দলিলের ১১ নম্বর কলামে প্রত্যেক ব্যক্তির পারিবারিক সম্পর্ক এবং সমাজে কাদের সঙ্গে তারা ওঠাবসা করেন তা লিপিবদ্ধ করা রয়েছে।
এর মাধ্যমে বোঝা যায় চীনা কর্তৃপক্ষ কিভাবে শিনজিয়াংয়ের মানুষজনকে এমনকি বন্ধুর অপরাধের কারণেও দোষী সাব্যস্ত করা এবং পুরো পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের সূত্র ধরে শাস্তি প্রদান করে চলেছে।
চীনের গোপন বন্দীশিবির
দলিলে লিপিবদ্ধ প্রতিজন মানুষের আত্মীয় ও বন্ধুদেরও পূর্ব ইতিহাস অনুসন্ধান করা হয়েছে।
অর্থাৎ তাদেরও ধর্ম বিশ্বাস ও চর্চা, কখনো বিদেশে গেছেন কিনা কিংবা কখনো বন্দীশিবিরে ছিলেন কিনা—এমন খুঁটিনাটি তথ্যও রিপোর্টে যুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে দেখা গেছে তালিকাভুক্ত প্রায় সবারই আত্মীয়স্বজন বিদেশে থাকেন, আর বিদেশে থাকাকে কর্তৃপক্ষ যে কোন নাগরিকের আনুগত্য-হীনতার সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করে।
রিপোর্টের ১৭৯, ৩১৫ এবং ৩৪৫ নম্বর সারণীতে ৬৫ বছর বয়সী ইউসুফ নামের ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার দুই মেয়ে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বোরকা পড়তেন, এবং ছেলের ইসলামি রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এবং এই পুরো পরিবারটির ‘হ্যান বিরোধী মূল্যবোধ’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তার ক্ষেত্রে রিপোর্টে রায় দেয়া হয়েছে, তার ‘সংশোধন’ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে, এবং এটি অন্যতম একটি উদাহরণ যে কেবল নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্যও শাস্তি পেতে হচ্ছে মানুষকে।
গ্রাম পর্যায়ের দল থেকে সংগ্রহ করা তথ্য শিনজিয়াংয়ের মূল তথ্য ভাণ্ডার, যা ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্ল্যাটফর্ম আইজেওপি নামে পরিচিত সেখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এই আইজেওপির কাছে থাকে ঐ অঞ্চলের নজরদারি এবং পুলিশি কর্মকাণ্ডের রেকর্ড।
যা ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত বিস্তৃত এক নেটওয়ার্ক এবং প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে যে মোবাইল স্পাইওয়্যার ডাউনলোড করতে হয় তার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
ড. জেনজ মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আইজেওপি এসব তথ্য যাচাই করে এবং এখান থেকেই গ্রামের অনুসন্ধান দলের কাছে নির্দেশনা পাঠায় কাদের ওপর নজরদারি চালাতে হবে।
ফাঁস হওয়া দলিলে অনেকজনের নামের শেষে ‘অবিশ্বস্ত’ বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে, মোট ৮৮ জন ব্যক্তিকে এজন্য বন্দীশিবিরে রাখার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. জেনজ বলছেন, এ তথ্য প্রমাণ করে যে কর্তৃপক্ষ এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা অপরাধের জন্য নয়, বরং একটি পুরো অঞ্চলের মানুষকে সন্দেহমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সরকার কী বলছে
চীন বলছে, শিনজিয়াংয়ের নীতিতে নাগরিকের প্রতি ‘সম্মান এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চর্চার স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এবং শিনজিয়াংয়ের ভোকেশনাল ট্রেনিং নামে যে প্রকল্প চালু আছে, সেটি ‘সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা’র বিরোধী লড়াই এর অংশ।
যারা সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রপন্থা সংক্রান্ত কোন অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, এসব শিবিরগুলোতে তাদেরই কেবল ‘সংশোধন’ করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রাপ্ত দলিলে দেখা গেছে, কারাকাক্স তালিকায় বন্দীশিবিরে রাখার জন্য বিবিধ কারণ দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে ধর্মীয়, পাসপোর্ট, পরিবার, বিদেশে যোগাযোগ কিংবা অবিশ্বস্ত হবার মত কারণের উল্লেখ রয়েছে।
তবে এর মধ্যে চীনের পরিবার পরিকল্পনা নীতি অমান্য করার কারণে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে বন্দীশিবিরে রাখার কথা বলা হয়েছে।
ঐ তালিকায় সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রপন্থার মত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল এমন ছয় ব্যক্তির নাম রয়েছে, এবং দুইজন আছেন যারা নিষিদ্ধ ভিডিও দেখেছেন।
২০১৮ সালে উইগার মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর থেকে চীন সরকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
দলিলের সত্যতা
নতুন ফাঁস হওয়া এই কারাকাক্স তালিকায় কর্তৃপক্ষের কোন স্ট্যাম্প বা কোন সরকারী চিহ্ন নেই, ফলে কেবল তালিকা দেখে এর সত্যতা নিশ্চিত করা কঠিন।
ধারণা করা হয় গত বছর জুনের শেষ দিকে আরো কিছু স্পর্শকাতর দলিলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সরকারি নথি শিনজিয়াংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
নির্বাসনে থাকা বেনামী একজন উইগার নেতার কাছে পাঠানো হয় সেগুলো।
কেবল এই একটি দলিল, যা এখন ফাঁস হলো সেটি তখন পাঠানো হয়নি।
জুনে সেসব দলিলের প্রথম অংশ প্রকাশিত হবার পর, আমস্টারডামে বাসকারী আরেকজন নির্বাসিত উইগার আসিয়ে আব্দুলাহেবের কাছে সেগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে নতুন প্রকাশিত দলিলটি ‘জেনুইন’ অর্থাৎ আসল।
“কাগজপত্রের ওপর স্ট্যাম্প থাকুক আর না থাকুক, যে মানুষদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তারা সব আসল, বাস্তবের মানুষ। সুতরাং এটি আসল দলিল।”
২০১৮ সালে জানা যায়, শিনজিয়াং প্রদেশে উইগার মুসলমানদের ‘সংশোধনের’ জন্য পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বন্দীশিবির গড়ে তুলেছে চীনের কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে চীন দাবি করে ঐগুলো বন্দীশিবির নয়, কর্মমুখী প্রশিক্ষণকেন্দ্র।
গত বছরের শেষে চীন ঘোষণা দেয় তাদের ঐ ‘কর্মমুখী প্রশিক্ষণকেন্দ্র’গুলোতে থাকা শিক্ষার্থীর সবাই গ্র্যাজুয়েট অর্থাৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
তবে কেউ কেউ ‘স্বেচ্ছায়’ সেখানে আরো কিছুদিন থাকবেন বলেও উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ।
কারাকাক্স তালিকার ৩১১ জনের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষকেই ইতিমধ্যে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই তালিকায় ২৫ জনের বেশি মানুষকে বন্দীশিবির থেকে মুক্তি দিয়ে শিল্প পার্কে কর্ম সংস্থানের জন্য পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে তালিকার দুইটি ক্ষেত্রে বন্দীশিবির থেকে জেলখানায় পাঠানোর কথা উল্লেখ আছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন