দৈনন্দিন
করোনাভাইরাস: প্রথম টিকার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে
করোনাভাইরাসের একটি টিকা তৈরি হয়েছে এবং তা সোমবারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের দেহে পরীক্ষা করা শুরু হবে।
বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে কাইজার পারমানেন্টে গবেষণাকেন্দ্রে ৪৫ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে।
এই টিকার উপাদান হলো, কোভিড-নাইনটিন ভাইরাসের একটি জেনেটিক কোড – যা আসল ভাইরাসটি থেকেই নকল করে তৈরি করা হয়েছে। এই কপিটি বিপদজনক নয়, এবং এটা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতেও পারে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনটি, বা এরকম যে আরো কয়েকটি টিকা এখন গবেষণার পর্যায়ে আছে – তাতে আদৌ কোন কাজ হবে কিনা তা জানতে আরো অনেক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।
বিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবী জুড়েই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন গবেষণার কাজ দ্রুততর করতে।
এমআরএনএ-১২৭৩ নামের এই টিকাটি কোভিড-নাইনটিন সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে তৈরি নয়। বরং সেই ভাইরাসের জেনেটিক সংকেতের একটি অংশ কপি বা নকল করেছেন বিজ্ঞানীরা এবং সেটাই এই টিকাতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, এই টিকা প্রয়োগ করা হলে, মানবদেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলেই ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা করা যাবে।
স্বেচ্ছাসেবকদের বাহুতে ২৮ দিন পর পর দুবার টিকাটি দেয়া হবে।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবককে বিভিন্ন মাত্রায় ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।
পরীক্ষাটি যদি ভালোভাবে এবং নিরাপদে সম্পন্ন হয়, তাহলে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য পাওয়া যেতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষা করার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাদ দিচ্ছে। সেটি হলো, এই টিকাটি প্রাণীর দেহে সংক্রমণ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে কিনা – তার পরীক্ষাটি এ ক্ষেত্রে করা হয়নি।
তবে মডার্না থেরাপিউটিক্স নামে যে বায়োটেকনোলজি কোম্পানি এ কাজটা করছে – তারা বলছে, বহুল-পরীক্ষিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই ভ্যাকসিন বানানো হয়েছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. জন ট্রেগোনিং বলছেন, এই টিকা বিদ্যমান প্রযুক্তিই অনুসরণ করেছে, এবং অত্যন্ত উচ্চ মান রক্ষা করে এটি বানানো হয়েছে।
“এতে যা ব্যবহৃত হয়েছে তা যে মানুষের দেহে ব্যবহার নিরাপদ তা আমাদের আগে থেকেই জানা এবং এই ট্রায়ালে যারা অংশ নেবেন তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মনিটর করা হবে।”
ড. ট্রেগোনিং বলেন, “হ্যাঁ, এটা অত্যন্ত দ্রুত তৈরি হচ্ছে, কিন্তু এখন ভাইরাসটির সংগে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে এব্ং কাজটা করা হচ্ছে মানবতার কল্যাণের জন্য।”
দৈনন্দিন
বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং তাদের উপকারিতা
মাছ পুষ্টির অসাধারণ উৎস এবং সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিটি মাছের আলাদা পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
ইলিশ মাছ
উপকারিতা: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক এবং চুল সুস্থ রাখে। আর্থ্রাইটিস এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
রুই মাছ
উপকারিতা: প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা হাড় মজবুত করে। হজমশক্তি উন্নত করে। রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
কাতলা মাছ
উপকারিতা: ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, যা চোখের জন্য ভালো। মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
পুঁটি মাছ
উপকারিতা: ছোট মাছ হিসেবে ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
তেলাপিয়া মাছ
উপকারিতা: কম ক্যালোরি এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
চিংড়ি মাছ
উপকারিতা: সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
বোয়াল মাছ
উপকারিতা: হজমশক্তি উন্নত করে। পুষ্টিকর প্রোটিন সরবরাহ করে। ত্বক এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
মাগুর মাছ
উপকারিতা: আয়রন সমৃদ্ধ, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পেটের অসুখে উপকারী।
শিং মাছ
উপকারিতা: ক্যালসিয়াম এবং আয়রনে সমৃদ্ধ, যা হাড় মজবুত করে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক।
পাঙ্গাস মাছ
উপকারিতা: প্রোটিন এবং ফ্যাট সরবরাহ করে, যা শরীরের শক্তি বজায় রাখে। হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কৈ মাছ
উপকারিতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। সর্দি-কাশি এবং পেটের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
মাছ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় মাছ রাখলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই, পুষ্টিগুণ অনুযায়ী মাছ বেছে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
দৈনন্দিন
ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও ইলিশ রান্নার মজাদার রেসিপি – দা এগ্রো নিউজ
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। ইলিশ মাছ শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এর অসাধারণ পুষ্টিগুণের জন্যও জনপ্রিয়। নিয়মিত ইলিশ মাছ খাওয়া আমাদের শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। এটি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখা একটি চমৎকার পছন্দ। ইলিশ মাছ শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এই লেখায় ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা এবং এর রান্নার ৩৩টি সহজ রেসিপি দেওয়া হলো।
ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা
ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখযোগ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক থেকে উপকারী। নিচে এর প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎসঃ ইলিশ মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারীঃ ইলিশ মাছ খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু রাখে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ ইলিশে থাকা ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন ই ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে এবং চুল পড়া কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ইলিশে থাকা ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ এবং সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হাড় ও দাঁতের মজবুতিতে সহায়কঃ ইলিশ মাছ ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ, যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণঃ এর প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ আর্থ্রাইটিস ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করেঃ ইলিশ মাছ প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ, যা শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে এবং শক্তি জোগায়।
ইলিশ ভাতুরির রেসিপি
উপকরণঃ বড় ইলিশ মাছ ৬-৮ টুকরা, কাঁচা মরিচকুচি ৫-৬টি, শর্ষের তেল ৩ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, হলুদগুঁড়া সামান্য, মিহি করে কাটা পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, লাউপাতা ৬টি, চাল আধা কেজি,
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমেই ভাতের চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। ইলিশ মাছসহ বাকি উপকরণ (পাতা ছাড়া) একসঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। লাউপাতায় মাখানো মাছের একটি টুকরা রেখে পাতাটি ভাঁজ করে উল্টিয়ে দিন, যাতে খুলে না যায়। এভাবে সব কটি পাতায় মোড়ানো মাছ প্রস্তুত করে নিন।
এবার দেড় গুণ ফুটন্ত পানি দিয়ে ভাত বসিয়ে দিন। নিয়মমাফিক ভাত রান্না করে প্রায় হয়ে এলে হাঁড়ির মাঝখান থেকে কিছু ভাত সরিয়ে লাউপাতায় মোড়ানো মাছের টুকরাগুলো রেখে দিন। ওপরে সরিয়ে রাখা ভাত দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে রাখুন। ১০ মিনিট এভাবে রেখে দিন। ভাত সরিয়ে মাছগুলো সাবধানে তুলে পাতাসহ পরিবেশন করুন গরম ধোঁয়া ওঠা ঐতিহ্যবাহী পদ ইলিশ ভাতুরি।
টক মিষ্টি আচারি ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ১ কেজি, রসুন বাটা এক চা-চামচ, সরিষা বাটা ১ চা-চামচ, আস্ত পাঁচফোড়ন ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, শুকনা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, সরিষার তেল আধা কাপ, তেঁতুলের ক্বাথ ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি প্রয়োজনমতো, চিনি ১ চা-চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ ইলিশ মাছের টুকরোগুলোয় হলুদ ও লবণ মেখে কড়াইয়ে তেল গরম করে ভেজে নিতে হবে। ভাজা মাছগুলো তুলে রেখে ওই তেলের মধ্যে আস্ত পাঁচফোড়ন দিয়ে বাটা মসলাগুলো একে একে সব দিয়ে দিতে হবে। এবার একটু পানি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। তারপর দেড় কাপ পানি দিয়ে মাছের পিসগুলো দিয়ে ওপরে তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে রান্না করতে হবে ১০মিনিট। তারপর চিনি দিয়ে মাখামাখা করে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
পোস্ত ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ আট টুকরো, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, আস্ত কাঁচা মরিচ ৪-৫টি, ঘি ১ চা-চামচ, রান্নার তেল আধা কাপ, চিনি সামান্য, পানি পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে মাছের টুকরোগুলোয় হলুদ ও লবণ মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর কড়াইয়ে তেল গরম করে বাটা ও গুঁড়া মসলাগুলো একে একে দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এককাপ পানি দিয়ে মেখে রাখা মাছগুলো দিয়ে ঢেকে রান্না করুন ১০ মিনিট। তারপর কাঁচা মরিচ দিয়ে আরো ঢেকে রাখুন ৫ মিনিট। ওপরে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন এবং পরিবেশন করুন মজাদার পোস্ত ইলিশ।
ঝাঁজালো সরিষা ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল আধা কাপ, চিনি সামান্য, আস্ত কাঁচা মরিচ ৬টি, পানি আধা কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে ইলিশ মাছ প্রয়োজন অনুযায়ী টুকরো করে নিন। মাছে হলুদ ও লবণ মেখে রেখে দিতে হবে ১০মিনিট। তারপর বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে ওপরে সরিষার তেল দিয়ে এবং পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে ২০ মিনিট। চুলার আঁচ মাঝারি থাকবে। তারপর মাখা মাখা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার সরিষা ইলিশ।
লেবুপাতায় ইলিশ ভুনা
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ছোট করে কাটা ২ কাপ, লেবুপাতা ৫-৬টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচের ফালি ৫-৬টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ চা চামচ ও টমেটো সস ২ টেবিল চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে নিন। এরপর সব মসলা কষিয়ে নিয়ে টমেটো সস দিন। তারপর কিছুক্ষণ ভুনে ১ কাপ পানি দিতে হবে। ঝোল কমে এলে চিনি, লেবুর রস, কাঁচা মরিচ, লেবুপাতা দিয়ে নামিয়ে নিন।
ইলিশের মালাইকারি
উপকরণঃ ইলিশ মাছ মাঝারি আকারের ১টি, টকদই সিঁকি কাপ, নারকেলের দুধ ২ কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঠবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, কিশমিশ বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচের ফালি ৪-৫টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা সিঁকি কাপ, লবণ পরিমাণমতো, চিনি ২ চা চামচ ও তেল পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে সব বাটা ও গুঁড়া মসলা কষিয়ে নিন। এরপর মাছ, টক দই ও লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনে নারকেলের দুধ দিয়ে দিন। ঝোল কমে এলে চিনি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে দিন। তারপর বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে নিন ইলিশের মালাইকারি।
ভাপে সরিষা ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৬ টুকরা, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ১ টেবিল চামচ, লাল মরিচ বাটা ২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচের ফালি ৫-৬টি, লবণ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ সব উপকরণ দিয়ে মাছ মাখিয়ে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন। বাটিতে অথবা সসপ্যানে মসলাসহ মাছ সাজিয়ে আধা কাপ পানি দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিতে হবে। প্রেশার কুকারে অথবা হাঁড়িতে অল্প পানি দিয়ে পানির ওপর মাছের পাত্র রেখে ঢাকনা দিয়ে ভালো করে ঢেকে অল্প আঁচে আধা ঘণ্টা রান্না করুন। ব্যাস তৈরি হয়ে যাবে ভাপে সরিষা ইলিশ।
দই ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ এক কেজি ওজনের (মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে ছয় টুকরা করে কাটা), সরষের তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ (স্লাইস করা) দুটি, ধনিয়া গুঁড়া এক টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া আধা টেবিল চামচ, সরিষা বাটা এক টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, টকদই এক কাপ, লবণ স্বাদমতো।
রান্নার রেসিপিঃ মাছ ধুয়ে লবণ মাখিয়ে রাখুন। সরষের তেলে পেঁয়াজ ভেজে নিন। লবণ, শুকনা মরিচ গুঁড়া ও ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে দিন। তেল ভেসে ওঠা পর্যন্ত নাড়তে হবে। এরপর মাছ আর সরষে বাটা দিন। কিছুক্ষণ পর কাঁচামরিচ ও টক দই দিয়ে ৮-১০ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন।
ইলিশ রোস্ট
উপকরণঃ গোটা ইলিশ মাছ একটি, মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, ময়দা এক টেবিল চামচ, কর্নফ্লাওয়ার এক টেবিল চামচ, লেবুর রস এক টেবিল চামচ, তেল ভাজার জন্য, লবণ স্বাদমতো।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে পুরো ইলিশের মাঝ বরাবর কেটে নিন, যাতে এর ভেতরে মসলা ঢুকতে পারে। এরপর লবণ, মরিচ গুঁড়া ও লেবুর রস মাখিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। পাত্রে তেল গরম করুন। শুকনো ময়দার সঙ্গে কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে নিন। আগে থেকে ম্যারিনেট করে রাখা মাছের দুদিকেই ময়দার মিশ্রণ লাগিয়ে নিন। এবার মাছটিকে গরম তেলে ডিপ ফ্রাই করুন। ধূসর রং হয়ে এলে নামিয়ে রাখুন।
ইলিশ মাছের ডিমে মিষ্টি কুমড়া
উপকরণঃ কাঁচা মিষ্টি কুমড়া ৫০০ গ্রাম, মাছের ডিম ২টা, পেঁয়াজ ২টা, লবণ স্বাদমতো, তেজপাতা ১টা, লাল কাঁচামরিচ স্বাদমতো।
রান্নার রেসিপিঃ মিষ্টি কুমড়া টুকরো (কিউব) করে কেটে নিন। পেঁয়াজ হালকা ভাজুন। তাতে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে লবণ দিতে হবে পরিমাণমতো। এতে আলাদা কোনো বাটা/গুঁড়া মসলা দিতে হবে না। শুধু পেঁয়াজই যথেষ্ট। ১টি তেজপাতা দিতে হবে। এ রান্না করার সময় হাঁড়ি ঢাকতে হবে না। ঢেকে দিলে মিষ্টি কুমড়ার রঙ নষ্ট হয়ে যাবে। কুমড়া সেদ্ধ হয়ে এলে মাছের ডিম দিতে হবে তাতে। ডিমের রং যেন ভালো দেখায় এজন্য হলুদ দিতে হবে আধা চা চামচ পরিমাণ। ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। ডিম আধা সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে কাঁচামরিচ দিয়ে চুলায় আরও ৫ মিনিট রেখে দিন।
ইলিশ কোরমা
উপকরণঃ ইলিশ মাছের টুকরো ৫-৬টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, তেজপাতা ১টি, এলাচ ২টি, দারুচিনি ২টি, গুঁড়া মরিচ দেড় চা-চামচ, টক দই আধা কাপ, কাঁচামরিচ ৮-১০টি, বাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, কিশমিশ ১ চা-চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো ও তেল পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ মাছের টুকরোগুলো সব বাটা মসলা, মরিচ গুঁড়া, টক দই ও লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে প্রায় ১ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল ও ঘি গরম করে মিহি করা পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো ইলিশ মাছ ও এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। যখন তেল ওপরে ভেসে উঠবে, তখন চিনি ও কিশমিশ দিয়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করে নামিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন ভাত, পোলাও কিংবা খিচুড়ির সঙ্গে।
ইলিশ পাতুরি
উপকরণঃ ইলিশ মাছের টুকরো ৬টি, কালো সরিষা ২ টেবিল চামচ, সাদা সরিষা ১ টেবিল চামচ, কুড়ানো নারকেল আধা কাপ, টক দই সিকি কাপ, কাঁচা মরিচ ৮টি, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, হলুদের গুঁড়া ২ চা-চামচ, লবণ ও পানি পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমেই ইলিশ মাছের টুকরোগুলো ধুয়ে নিয়ে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে রাখুন। ব্লেন্ডারে সাদা ও লাল সরিষা, ৪টি কাঁচা মরিচ, লবণ এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার ব্লেন্ডারটাকে ভালো করে ধুয়ে কুড়ানো নারকেল, টক দই, ৪টি কাঁচা মরিচ এবং পরিমাণমতো পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা সব উপকরণ একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। খেয়াল রাখবেন, মিশ্রণটি যেন ঘন হয়। প্রয়োজনে পানি মেশাতে পারেন। মাছের টুকরোগুলো মিশ্রণে ডুবিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এবার কলাপাতা ভালো করে ফোটানো পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। কাঁচি বা ছুড়ির সাহায্য কলাপাতাটা এমনভাবে কাটুন, যাতে সহজেই এটা দিয়ে পকেট বানানো যায়। চুলায় কলাপাতা হালকা ছেঁকে নিন। বেশি সময় রাখলে পাতা পুড়ে যেতে পারে। মাছ মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখার ৩০ মিনিট হয়ে এলে কলাপাতার ওপর দুই চা–চামচ মসলার মিশ্রণ দিয়ে এর ওপর ইলিশ মাছের টুকরো রাখুন। ওপরে আবারও দুই চা–চামচ মিশ্রণ দিন। এবার দুটি কাঁচা মরিচ দিয়ে কলাপাতাটা এমনভাবে প্যাকেট করে নিন, যাতে করে মিশ্রণটি বাইরে না বের হয়ে আসে। চুলায় একটি পাত্র ভালো করে গরম করে তাতে সরিষার তেল ছড়িয়ে দিন। পাত্রের আকার বুঝে চার থেকে পাঁচটি পাতুরি দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিন। ৬ মিনিট পর পাতুরিগুলো উল্টে দিন। পুরো পাতুরি তৈরি হওয়ার জন্য আরও ৬ মিনিট অপেক্ষা করুন।
ইলিশ ভর্তা
উপকরণঃ ইলিশ মাছের পিঠ বা লেজের টুকরো ৩-৪টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ৪-৫টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী ও ভাজার জন্য সরিষার তেল।
রান্নার রেসিপিঃ মাছের টুকরো ভালো করে ধুয়ে এতে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। কড়াইয়ে তেল গরম করে মাছগুলো ভালো করে ভেজে নিন। শুকনো মরিচ মচমচে করে ভেজে নিন। মাছ ঠা-া হলে কাঁটা বেছে নিতে হবে। এর পর পেঁয়াজ, মরিচ ও ধনেপাতা স্বাদমতো লবণ এবং বেছে রাখা মাছ দিয়ে খুব ভালোভাবে মাখিয়ে গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার ইলিশ মাছের ভর্তা।
মচমচে ইলিশ ভাজা
উপকরণঃ পছন্দমতো সাইজের ইলিশ মাছের রিং পিস ৬টি, লবণ স্বাদমতো, শুকনো মরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, হলুদের গুঁড়া সামান্য, পরিবেশনের জন্য ২/৩টি শুকনো মরিচ ভাজা, সরিষার তেল হাফ কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে ইলিশ মাছের টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এরপর সবকিছু দিয়ে ভালো করে মেখে ১০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। এবার কড়াইয়ে সরিষার তেল দিয়ে গরম হলে মাছ অল্প আঁচে সময় নিয়ে কড়কড়ে করে ভেজে নিতে হবে। এরপর গরম ভাতের সঙ্গে আস্ত শুকনো মরিচ ভাজা, মাছ ভাজা তেল আর মাছ ভাজা দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
স্মোকড ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছের টুকরো ৬ থেকে ৮টি, মরিচগুঁড়া আধা চা–চামচ, টমেটো সস ১ চা–চামচ, ভিনেগার ১ চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, তেল এক কাপের চার ভাগের তিন ভাগ, লবণ স্বাদমতো, কয়লা ও ফয়েল পেপার পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ একটি পাত্রে সব উপকরণ দিয়ে ইলিশ মাছের টুকরোগুলো মেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার চুলায় হালকা আঁচে পাত্রটি বসিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন। যখন পোড়া পোড়া গন্ধ বের হবে, তখন চুলা বন্ধ করে দিন। এবার মাছের টুকরোগুলো ফয়েল পেপারে মুড়ে একটি পাত্রে রাখুন। কয়লা গরম করতে দিন। যখন লাল হয়ে আসবে তখন কয়লাগুলো ফয়েল পেপার মোড়ানো মাছের ওপর রাখুন। কয়লার ওপর মাখন ছড়িয়ে দিন। কয়েক মিনিট পর কয়লা ও ফয়েল পেপার খুলে নিন।
ইলিশ বিরিয়ানি
উপকরণঃ বড় সাইজের ইলিশ মাছ থেকে বড় টুকরো নিতে হবে ৬ টুকরো, রিং পিস হলে দেখতে সুন্দর লাগে, বিরিয়ানির মসল্লা ২ টেবিল চামচ যে কোনো ব্র্যান্ডের, চিনি হাফ চা চামচ, পোলাওয়ের চাল (চিনিগুড়া চাল হলে ভালো হয়) ৩ কাপ ম্যাজারমেন্ট কাপে, পেঁয়াজ বেরেস্তা হাফ কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি হাফ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ১/৩ কাপ, আদা বাটা হাফ চা চামচ , রসুন বাটা হাফ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ ৫/৬টি, লবণ স্বাদমতো, ফেটানো টক দই হাফ কাপ, দুধে ভেজানো জাফরান সামান্য একটু, তরল দুধ ৬ কাপ, কিশমিশ ১০/১২টি, সয়াবিন তেল ১/৩ কাপ, ঘি ১/৪ কাপ, মসলা কষানোর জন্য পানি ১/৪ কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে ইলিশ মাছ ভালো করে ধুয়ে লবণ আর টক দই মাখিয়ে ১০ মিনিট রাখতে হবে। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে একটু নেড়ে পেঁয়াজ বাটাসহ সব বাটা মসলা আর ১ টেবিল চামচ বিরিয়ানির মসলা ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে অল্প একটু করে পানি দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষাতে কষাতে যখন তেল ওপরে উঠে আসবে তখন মাছের টুকরোগুলো বিছিয়ে দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ৫ মিনিট। এবার মাছগুলো উল্টিয়ে আবারও ঢেকে রাখতে হবে ৫ মিনিট। তারপর মাছ নামিয়ে নিতে হবে।
এবার অন্য একটা হাড়িতে ঘি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখা পোলাওয়ের চাল আর লবণ দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। মাঝে চিনি আর ১ টেবিল চামচ বিরিয়ানির মসলা দিয়ে আর একটু নেড়ে তরল দুধ দিয়ে বলক আসলে ঢেকে রাখতে হবে ১০ মিনিট মিডিয়াম আঁচে। এবার পোলাওটা সেদ্ধ হয়ে এলে অর্ধেক ভাত তুলে নিতে হবে। প্রথমে রান্না করা পোলাও, তারওপর পেঁয়াজ বেরেস্তা আর রান্না করা মাছ বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বাকি পোলাও দিয়ে দুধে ভেজানো জাফরান ছড়িয়ে দিয়ে কিশমিশ দিয়ে ঢেকে দমে রাখতে হবে ২০ মিনিট। এরপর হয়ে এলে নামিয়ে ওপরে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে দারুণ মজার ইলিশ বিরিয়ানি।
ইলিশ মাছের ডিম ভাজা
উপকরণঃ বড় সাইজের ২টি ইলিশ মাছের ডিম, লবণ স্বাদমতো, মরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, জিড়া গুঁড়া হাফ চা চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ, হলুদের গুঁড়া হাফ চা চামচ, পরিবেশনের জন্য ২টি শুকনো মরিচ ভাজা, সয়াবিন তেল হাফ কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে ইলিশ মাছের ডিম ভালো করে ধুয়ে সব মসলা, লবণ, লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মেখে ঢেকে রাখতে হবে ২০ মিনিট। এরপর পাত্রে সয়াবিন তেল গরম করে ডিমগুলো কম আঁচে একটু সময় নিয়ে ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে এলে গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে। লাল মরিচ ভাজা, মাছের ডিম, যদি সঙ্গে থাকে আম-মসুরের ডাল তাহলে তো আর কথাই নেই।
ইলিশ মাছের স্টু
উপকরণঃ ইলিশ মাছের টুকরো ৪টি, তেজপাতা ১টি, পেঁয়াজ টুকরো ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়া দুই চা–চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৫টি।
রান্নার রেসিপিঃ লবণ ও হলুদ দিয়ে ইলিশ মাছগুলো মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এবার গরম তেলে হালকা করে মাছগুলো ভেজে নিন। মাছে মরিচ দিন। এক কাপ পানিতে এক চিমটি পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে মাছের ওপর দিন। মাছ সেদ্ধ হওয়ার জন্য আধা কাপ পানি দিন। পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ৫ মিনিট রান্না করুন। নামানোর আগে ১ টেবিল চামচ সরিষার তেল ছড়িয়ে দিন।
অরেঞ্জ ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৮ টুকরা, কমলা লেবুর রস ৩ কাপ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, চিনি আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া সামান্য, তেল কোয়ার্টার কাপ, কমলার খোসা (গ্রেট করা) ১ টেবিল-চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ বাটিতে পরিমাণমতো লবণ ও সামান্য হলুদ, মরিচগুঁড়া মাখিয়ে মাছের টুকরোগুলো ১৫ মিনিট রেখে দিন। কড়াইতে তেল গরম করে মাছগুলো হালকা ভেজে তুলে নিন। এবার ভাজা তেলে একে একে সব মসলা দিয়ে একটু ভুনে নিন। এবার কমলার রস ও কমলার খোসা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে মাছ দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর নামিয়ে নিন।
ইলিশ পোলাও
উপকরণঃ পোলাও এর চাল ৫০০ গ্রাম, ইলিশ মাছ ১২ টুকরা, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১/২ চা চামচ, টকদই ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ৪টি, পেঁয়াজ বাটা ৩/৪ কাপ, পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ, পানি ৪ কাপ, কাঁচামরিচ ১০টি, চিনি ১ চা চামচ, তেল আধা কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ দুটি বড় ইলিশ মাছের আঁশ ছাড়িয়ে ধুয়ে মাঝের অংশের টুকরোগুলো নিন। এবার মাছের টুকরোগুলোতে আদা, রসুন, লবণ ও দই মেখে ১৫ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন।
একটি পাত্রে তেল গরম করে দারচিনি, এলাচ দিয়ে নেড়ে বাটা পেঁয়াজ দিয়ে মসলা কষান। মসলা ভালো করে কষানো হলে মাছ দিয়ে কম আঁচে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাঝে চিনি ও ৪টি কাঁচামরিচ দিয়ে একবার মাছ উল্টে দিন। পানি শুকিয়ে তেল ওপর উঠলে নামিয়ে নিন। মাছ মশলা থেকে তুলে নিন।
অন্য পাত্রে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে স্লাইস করা পেঁয়াজ সোনালী করে ভেজে বেরেস্তা করে নিন। বেরেস্তা তুলে নিয়ে চাল দিয়ে নাড়ুন। মাছের মশলা দিয়ে চাল বিছুক্ষণ ভেজে পানি ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ঢাকুন।
পানি শুকিয়ে এলে মৃদু আঁচে ১৫ মিনিট রাখুন। চুলা থেকে নামান। একটি বড় পাত্রে পোলাও এর ওপর মাছ বিছিয়ে বাকি পোলাও দিয়ে মাছ ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন।
পরিবেশন পাত্রে ইলিশ পোলাও নিয়ে ওপরে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
ইলিশ কাবাব
উপকরণঃ ইলিশ মাছ আস্ত ১টি, গোলমরিচগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচকুচি ১ টেবিল-চামচ, টমেটো সস ২ টেবিল-চামচ, আলু ম্যাশড্ ১ কাপ, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল-চামচ, রসুন ২ কোয়া(কুচি), লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, লেবুর খোসা (গ্রেট করা) কোয়ার্টার চা-চামচ, টোস্ট বিস্কুটের গুঁড়া ১ কাপ
রান্নার রেসিপিঃ মাছের মাথা ও লেজ কেটে আলাদা করুন। সামান্য হলুদ, মরিচগুঁড়া ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে মাথা ও লেজ হালকা ভেজে নিন। এবার বাকি মাছ লবণ, লেবুর রস ও সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিন।
কড়াইতে তেল গরম করে রসুন ও পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে মাছের কিমা দিয়ে নাড়তে থাকুন। দু-এক মিনিট পর সেদ্ধ আলু দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে, একে একে গোলমরিচগুঁড়া, কাঁচা মরিচকুচি, স্বাদমতো লবণ, টমেটো সস দিয়ে রান্না করে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। অন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে বিস্কুটের গুঁড়া বাদামী করে ভেজে নিন। এবারে রান্না করা কিমার সঙ্গে ধনেপাতাকুচি, লেবুর খোসা ও বেরেস্তা ভেঙে আলতো করে মেখে নিন।
সার্ভিং ডিশে দুই পাশে ভাজা লেজ ও মাথা রেখে, মাঝখানে মাখানো কিমা সাজিয়ে আস্ত মাছের মতো বানিয়ে নিন। সাজানো কিমার ওপর ভাজা বিস্কুটের গুঁড়া ছড়িয়ে চেপে দিন। কিমার ওপর চা-চামচ দিয়ে মাছের আঁশের মতো বানিয়ে পরিবেশন করুন।
লবণ ইলিশের ভুনা
উপকরণঃ লবণ ইলিশ ২/৪ টুকরা, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, হলুদগুঁড়ো ১/২ চা চামচ, মরিচগুঁড়ো ১ চা চামচ, তেল পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ লবণ ইলিশ ভালো করে বেটে নিন। বাটা ইলিশের সঙ্গে তেল বাদে সব উপকরণ ভালো করে মেখে নিন। প্যানে তেল দিয়ে গরম করে মাখানো উপকরণ ছেড়ে দিন। ভালো করে কষানো হলে সামান্য পানি দিন। কিছুক্ষণ চুলায় বসিয়ে রাখুন। তেল উপরে উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ভাপানো ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৬ টুকরা, সরিষা বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, হলুদগুঁড়ো ১/২ চামচ, মরিচগুঁড়ো ১ চামচ, কাঁচামরিচ ৬/৭টি, তেল ১/২ কাপ, লবণ পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ একটি সসপ্যানে মাছ নিয়ে সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা ম্যারিনেট করুন। একটি বড় কড়াইয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত গরম পানিতে সসপ্যানটি ঢেকে বাসিয়ে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিন। ১০ মিনিট পর আস্তে করে মাছগুলো উল্টে দিন। আবার ১০ মিনিট পর নামিয়ে নিন। সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ইলিশের দোপেঁয়াজা
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৬ টুকরা, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়ো ১ চা চামচ, তেল ১/২ কাপ, লবণ স্বাদমতো, কাঁচামরিচ ৪টি।
রান্নার রেসিপিঃ মাছ ধুয়ে হলুদ, মরিচ ও লবণ মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে মাছগুলো ছেড়ে দিন। কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
কড়াই ইলিশ
উপকরণঃ মাঝারি বা বড় ইলিশ মাছ ১টি, টমেটো ২টি, ক্যাপসিকাম ১টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়ো আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়ো ২ চা-চামচ, ধনে ও জিরাগুঁড়ো ১ চা-চামচ করে, এলাচ ও লবঙ্গ তিনটি করে, তেজপাতা ১টি, গোলমরিচের গুঁড়ো আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল ৫ টেবিল চামচ, কালিজিরা আধা চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি এক চিমটি, কাঁচামরিচ কুচি ২-৩টি, পানি ২ কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ মাছ টুকরা করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। টমেটো ও ক্যাপসিকাম কুচি করে নিন। শুকনা কড়াইয়ে ক্যাপসিকাম কুচি টেলে নিন। কড়াইয়ে ৪ টেবিল চামচ তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি
ভেজে নিন। এতে এলাচ-লবঙ্গ-তেজপাতা দিন। কালিজিরা বাদে একে একে বাকি মসলাগুলোও দিয়ে কষিয়ে নিন। টমেটো ও ক্যাপসিকাম কুচি দিয়ে একটু নাড়–ন। এবার এই মিশ্রণ ব্লেন্ডারে মিহি পেস্ট করে নিন। অন্য কড়াইয়ে বাকি তেল গরম করে কালিজিরা ফোড়ন দিন। এতে মসলার পেস্ট দিয়ে দিন। একটু কষিয়ে ২ কাপ পানি দিন। ঝোল ফুটলে মাছ বিছিয়ে দিয়ে লবণ ছিটিয়ে দিন। এক ঘণ্টা তাওয়ার ওপর দমে রেখে দিন। ঝোল মাখা মাখ হলে নামিয়ে একটু চিনি ছিটিয়ে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
পাতলা ঝোলে ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৮ টুকরা, পেঁয়াজ বাটা ১/২ কাপ, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়ো, ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচামরিচ ৪/৫টি, তেল ৪ টেবিল চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ মাছ ধুয়ে সব উপকরণ মাখিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে (ঝোল পাতলা হবে, সে অনুযায়ী পানি দিতে হবে) চুলায় বসিয়ে দিন। নামানোর আগে কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী পানি খোলা ইলিশ
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৪-৫ টুকরা, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি ১ কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ ইলিশ মাছের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন। সামান্য লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। একটি পাত্রে ১ কাপ পানি, সরিষার তেল, কাঁচামরিচ, লবণ এবং হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফুটিয়ে তুলুন। ফুটানো পানির মধ্যে ম্যারিনেট করা ইলিশ মাছের টুকরাগুলো যোগ করুন। মাঝারি আঁচে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন, মাছ ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। মাছ সিদ্ধ হয়ে গেলে এটি একটি পরিবেশন পাত্রে তুলে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
শাপলা দিয়ে ইলিশের ঝোল
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৮ টুকরো। শাপলা ৭-৮ টি। পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ। রসুন বাটা ১/২ চা চামচ। জিরা বাটা ১ বা ১/২ চা চামচ। মরিচ গুড়া ১/২ চা চামচ। কাঁচা মরিচ ফালি ৫/৬ টি। হলুদ গুড়া ১ চা চামচ। লবণ স্বাদমতো। তেল আধা কাপ।
রান্নার রেসিপিঃ শাপলাগুলোকে প্রথমে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর শাপলাগুলোকে ছোট ছোট আঙুলের আকারে কেটে নিতে হবে। মাছের টুকরোগুলোকে লবণ, হলুদ মাখিয়ে রাখতে হবে। এবার একটা কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করতে হবে। তেল গরম হলে সব মশলা (পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, হলুদ, লবণ, মরিচ) দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। মশলা কষানো হলে আধা কাপ পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে লবণ হলুদ মাখানো মাছগুলো দিয়ে দিতে হবে। মাছগুলো সাবধানে এপিঠ ওপিঠ উল্টে কষিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র মাছগুলোকে একটা পাত্রে তুলে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ের ঐ মশলার ভেতরে কেটে রাখা শাপলাগুলো দিয়ে অল্প লবণ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ৬-৭ মিনিট পরে ঢাকনা তুললে দেখা যাবে শাপলা থেকে অনেকটা পানি বের হয়েছে। যদি পানি খুব বেশি থাকে তাহলে আর পানি দেবার প্রয়োজন নেই আর যদি পানি খুব অল্প থাকে তাহলে প্রয়োজনমতো কিছুটা পানি দিতে হবে। ঝোলটা ভালোভাবে ফুটে উঠলে মাছগুলোকে সুন্দরভাবে ঝোলে সাজিয়ে দিতে হবে। আবার অল্প সময়ের জন্য ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনা তুলে আরো কিছু সময় জ্বাল করে পছন্দমতো ঝোল রেখে নামিয়ে নিতে হবে মজাদার শাপলা ইলিশের ঝোল। পছন্দমতো পরিবেশন করুন।
বেগুন ইলিশের ঝোল
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৭-৮ টুকরো, লম্বা বেগুন চারটা, হলুদ গুড়া ১ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, মরিচ গুড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা দুই টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, তেল ১ কাপ, আস্ত কাঁচামরিচ ৫-৬ টি, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, ভাজা জিরার গুড়া ১/২ চা চামচ।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে বেগুন কেটে ধুয়ে নিয়ে লবণ, হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে। এরপর ইলিশ মাছগুলোকে লবণ হলুদ মাখিয়ে খুব হালকা ভেজে নিতে হবে। এবার কড়াইতে মাছ ভাজার তেলটা দিয়ে একে একে সব মশলাগুলো দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। হাফ কাপ পানি অল্প অল্প করে দিয়ে সময় নিয়ে মশলাটা কষাতে হবে। তেল উঠে এলে দুই কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে একে একে ভাজা মাছ ও ভাজা বেগুন গুলো দিয়ে আবার কিছু সময় ঢেকে দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পরে ঢাকনা তুলে কড়াইয়ের সাইড ধরে নাড়িয়ে দিতে হবে। খুন্তি দিয়ে নাড়া দেবার প্রয়োজন নেই। এরপর আস্ত কাঁচা মরিচ, ভাজা জিরার গুড়া ও ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিয়ে আবার একটু ঢেকে দিতে হবে। তেল উপরে উঠে এলে নামিয়ে নিয়ে পছন্দমতো পরিবেশন করতে হবে।
ইলিশ ডিমের মতি পোলাও
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৪ টুকরা, ইলিশের ডিম ২ টুকরা, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, পুদিনাপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচকুচি ২ টেবিল চামচ, পাউরুটি ২ টুকরা, টোস্ট বিস্কুটের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, ভাজার জন্য তেল পরিমাণমতো, লবণ স্বাদমতো।
আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, তরল দুধ ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৪–৫টি, সয়াবিন তেল সিকি কাপ, টক দই ২ টেবিল চামচ, চিনি আধা চা-চামচ।
পোলাওর চাল ২ কাপ, নারকেলের দুধ ১ কাপ, পানি (ইলিশ সিদ্ধ করার জন্য) ২ কাপ, গুঁড়া দুধ ২ টেবিল চামচ, ঘি সিকি কাপ, এলাচি ২টি, দারুচিনি ২ টুকরা, চিনি ১ চা-চামচ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, লবণ প্রয়োজনমতো।
রান্নার রেসিপিঃ ইলিশ মাছ লবণ ও ৩ কাপ পানি দিয়ে সিদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিন। বাকি পানি পোলাওয়ের জন্য রেখে দিতে হবে। এবার ইলিশের ডিম ভালোভাবে চটকে নিন। কাঁটা বাছা মাছ ও বাকি উপকরণগুলো একসঙ্গে পানি দিয়ে ভেজানো পাউরুটির সঙ্গে মাখাতে হবে। এবার হাতে টোস্টের গুঁড়ো লাগিয়ে ছোট ছোট বলের মতো বানিয়ে ডুবো তেলে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন।
একটি পাত্রে দুধ বাদে সব উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে বেটে চুলায় দিয়ে কষান। মসলায় সুঘ্রাণ এলে দুধ দিয়ে দিন। দুধ ফুটে উঠলে ভাজা মাছের ডিমের মতিগুলো দিতে হবে। একটু পর তেল চকচকে হলে পোলাওর সঙ্গে মিশিয়ে অল্প ঘি ছড়িয়ে ১০ মিনিট দমে রেখে পরিবেশন করুন।
রাইস কুকারে যথারীতি নারকেলের দুধ ও ইলিশ সিদ্ধ পানি দিয়ে পোলাও রান্না করে নিতে হবে। রাইস কুকার ছাড়া চুলাতেও পোলাও রান্না করতে পারবেন।
কচুপাতায় ইলিশের দই মালাই
উপকরণঃ ইলিশ মাছ ৫০০ গ্রাম, কচুপাতা কয়েকটি, টক দই ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ চা-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা সিকি কাপ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, মালাই পরিমাণমতো, তেল পরিমাণমতো, জিরাগুঁড়া সামান্য, গুঁড়া দুধ সিকি কাপ, চিনি সামান্য, লবণ পরিমাণমতো।
রান্নার রেসিপিঃ প্রথমে ইলিশ মাছের সঙ্গে সব মসলা মেখে নিতে হবে। এবার কচুপাতা পানিতে হালকা রান্না করে নিন। এর ওপর মাছ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। মোড়ানো মাছগুলো অল্প তেলে হালকা ভেজে নিন। এখন ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে বাকি মসলাগুলো ভালোভাবে কষাতে হবে। কষানো হলে আধা কাপ গরম দুধ দিয়ে কচুপাতায় ভাজা মাছগুলো বিছিয়ে দিন। অল্প জ্বালে দমে ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিট রান্নার পর মালাই দিয়ে কিছুক্ষণ পর চুলায় রেখে পরিবেশন করুন।
ইলিশ দোলন
উপকরণ: ইলিশ মাছ ৫০০ গ্রাম, আদাবাটা আধা চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, সরিষাবাটা ২ চা-চামচ, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, পানি ঝরানো টক দই আধা কাপ, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ, চিনির শিরা সিকি কাপ, তেঁতুল টক সিকি কাপ, মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ২–৩টি, কলাপাতা ১টি, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: প্রথমে ইলিশ মাছের সঙ্গে আদাবাটা, রসুনবাটা, সরিষাবাটা, জিরাগুঁড়া, টক দই, লবণ, তেল ও মরিচগুঁড়া ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। এবার তেঁতুলের টক ও চিনির শিরা একসঙ্গে মিশিয়ে আরও সুন্দর করে মেখে নিন। এবার ফ্রাই প্যানে একটি কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর মাছগুলো দিয়ে দমে রান্না করুন। রান্না হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল ও চিনির শিরা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
মালটার স্বাদে ইলিশ
উপকরণ: ইলিশ মাছ ৪ টুকরা, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ চা-চামচ, কমলার মণ্ডের জন্য ১টি মালটা, সয়াবিন তেল আধা কাপ, কমলার রস আধা কাপ, লাল কাঁচা মরিচ ৪টি, সবুজ কাঁচা মরিচ ৪টি।
প্রণালি: মাছগুলো ভালোভাবে ধুয়ে সামান্য লবণ মেখে রাখতে হবে। একটি পাত্রে তেল গরম করে সব বাটা মসলা ও সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। একটু পর মালটার মণ্ড ও মালটার রস দিয়ে আবার কষান। এবার বাকি কমলার রস, লাল ও সবুজ কাঁচা মরিচ দিতে হবে। ফুটে উঠলে মাছগুলো ভালোভাবে মসলায় মাখিয়ে টিফিন বাটিতে বিছিয়ে দিন। ডাবল বয়লারে ২০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট বেক করে পরিবেশন করুন।
ইলিশ মাছ কেবল স্বাদে অতুলনীয় নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এই মাছ নিয়মিত খেলে আপনি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।
চীন
করোনাভাইরাস: রোগ জীবাণু নির্মূলে সচল হয়েছে রোবট
“আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান, দরোজা বন্ধ রাখুন। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জীবাণুনাশকের কাজ শুরু হবে।“ ইংরেজিতে এই কথাগুলো বলছে একটা রোবট।
“এটা চীনা ভাষাতেও কথা বলতে পারে,” জানালেন ইউভিডি রোবটস কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন এলিস।
জানালার কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা গেল ঘরের মধ্যে রোবটটি ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে এবং ক্যামেরার ফ্ল্যাশ-বাতির মতো অতিবেগুনি রশ্মি জ্বেলে ঘরের সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করছে।
“আমাদের ব্যবসা এমনিতেই বেশ চড়া ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পর এটা একেবারেই আকাশচুম্বী হয়েছে,” বলছেন ইউভি রোবটস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পের ইউল নিয়েলসেন।
এরই মধ্যে তারা চীনে, বিশেষভাবে উহানে, প্রচুর সংখ্যায় এই রোবট পাঠিয়েছেন।
এশিয়া এবং ইউরোপেও তাদের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
“সবচেয়ে বেশি অর্ডার এসেছে ইতালি থেকে”, বলছেন মি. নিয়েলসেন, “তাদের অবস্থা সত্যি শোচনীয়। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করতে।“
স্বাভাবিকভাবেই ইউভিডি রোবটসের উৎপাদন বেড়ে তিনগুণ হয়েছে।
ডেনমার্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেনসে এই কোম্পানির কারখানায় প্রতিদিন একটা করে এধরনের জীবাণুনাশক রোবট নির্মাণ করা হচ্ছে।
যেভাবে কাজ করে এই রোবট
এই জীবাণুনাশক রোবটের রয়েছে আটটা বাল্ব, যেগুলো থেকে তীব্র অতিবেগুনি অর্থাৎ আলট্রা-ভায়োলেট বা ইউভি-সি আলোকরশ্মি বের হয়।
এই আলোকরশ্মি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুর ডিএনএ এবং আরএনএ ধ্বংস করে যাতে এগুলো সংখ্যায় আর বাড়তে না পারে।
তবে এই অতিবেগুনি রশ্মি মানবদেহের জন্যও খুবই ক্ষতিকারক।
তাই এই রোবট কাজ করার সময় ঘরে কোন মানুষ উপস্থিত থাকার নিয়ম নেই।
পুরো ঘরের জীবাণু ধ্বংস করতে রোবটটির ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে।
এই রোবট তৈরিতে সাহায্য করেছে ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ডেনমার্ক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক হান্স ইয়র্ন কলমোস বলছেন, “এমন অনেক খারাপ জীবাণু আছে যেগুলো আপনার দেহে সংক্রমিত হতে পরে।“
“কিন্তু আমাদের দেহে যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মির ডোজ দেয়া যায়, তাহলে এধরনের ক্ষতিকারক জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।“
এই রোবটের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এর দাম ৬৭ হাজার ডলার।
তবে এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে করোনাভাইরাস নির্মূল করতে পারে কিনা, তার জন্য আলাদা করে কোন পরীক্ষা চালানো হয়নি।
কিন্তু মি. নিয়েলসেন বিশ্বাস করেন এই রোবট করোনাভাইরাসকেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
“সার্স এবং মার্স-এর সাথে করোনাভাইরাসের অনেক দিক থেকেই মিল রয়েছে। এবং আমরা জানি যে ইউভি-সি আলোকরশ্মি দিয়ে এগুলো ধ্বংস করা সম্ভব,” বলছেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সহযোগী অধ্যাপক ড. লেনা সিরিচও মনে করেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইউভি রোবট হতে পারে একটি মোক্ষম অস্ত্র।
দৈনন্দিন
কষ্ট হলেও কেন আমরা ভয়াবহ ঝাল খাবার পছন্দ করি
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন যে, প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে আসা একটি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তার মাথা ব্যথা হচ্ছে, নাক দিয়ে পানি পড়ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারছিলেন না সমস্যাটা কোথায়?
একটি সিটি স্ক্যান, মূত্র পরীক্ষা, রক্তে চিনির মাত্রা এবং শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন- তিনি কোন বিষক্রিয়া আক্রান্ত হননি অথবা রহস্যজনক কোন রোগে আক্রান্ত নন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচগুলোর একটি খেয়েছিলেন।
তিনি যে জাতের মরিচ খেয়েছিলেন, সেটি হচ্ছে ক্যারোলিনা রিপার, যেটি সাধারণ জালাপিনো মরিচের চেয়ে ২৭৫ গুণ বেশি ঝাল। ৩৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একটি প্রতিযোগিতায় নেমে ওই ঝাল মরিচ খেয়েছিলেন।
তবে তিনি ভাগ্যবান যে, তার মস্তিষ্কের চাপা হয়ে যাওয়া রক্তনালী আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এটা হয়তো একটি চরম উদাহরণ।
কিন্তু বিশ্বের নানা কোনে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ, হয়তো কোটি কোটি যখন ঝাল মসলার খাবার খেতে বসেন, হয়তো তাদের জিহ্বায় তীব্র অনুভূতির তৈরি হয়, যখন তারা তাড়াতাড়ি পানি বা কোমল পানিয় খেয়ে ঝাল কমানোর চেষ্টা করেন।
অনেকের পেট খারাপ করে তোলে। তারপরেও মানুষ কেন ঝাল খায়?
এটা আসলে এমন একটা ভালোবাসার গল্প যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এবং সেটির কমতিরও কোন লক্ষণ নেই।
সেটা বুঝতে পারা যায় এই পরিসংখ্যান দেখলে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বের মরিচের উৎপাদন ২৭ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৭ মিলিয়ন টন।
বিবর্তনমূলক প্রবৃত্তি
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের তথ্য অনুযায়ী, গড়ে আমরা প্রত্যেকে গতবছর প্রায় পাঁচ কেজি করে মরিচ খেয়েছি। গড়পড়তা একটি লাল মরিচের ওজন হয়ে থাকে ২০গ্রাম।
অনেক দেশের নাগরিকদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি ঝাল খাওয়ার প্রবণতা থাকে।
তুরস্কের বাসিন্দারা প্রতিদিন গড়ে ৮৬.৫ গ্রাম মরিচ খেয়ে থাকে- যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো, যারা বছরে ৫০.৯৫ গ্রাম মরিচ খায়, যারা বিশেষ করে ঝালমসলাযুক্ত খাবারের জন্য বিখ্যাত।
কিন্তু কেন আমরা ঝাল খাবার এতো বেশি পছন্দ করি?
এর পেছনে লুকিয়ে আছে শিহরিত হয়ে ওঠার মতো মনোবিজ্ঞান ও বিবর্তনের প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি জটিল গল্প।
প্রকৃতির গোপনীয়তা
কোন বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মরিচের ভেতর ঝালের জন্য দায়ী ক্যাপসাইসিনের সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরিচের ঝাল ক্রমেই বেড়েছে এবং উদ্ভিদগুলো এমন একটি ঝাল বা উত্তাপ তৈরি করেছে, যার ফলে স্তন্যপায়ী প্রাণী বা পোকামাকড় এসব উদ্ভিদ খাওয়া থেকে বিরত থাকে।
কিন্তু দেখা গেছে, পাখির এ নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বের করেছেন যে, কেন মরিচের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে কাজ করেছে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীরা মরিচের বিচি পেটের ভেতরে হজম করে ফেলে, ফলে নতুন করে আর গাছের বংশবিস্তার সম্ভব হয় না। পাখির মরিচ খেতে কোন সমস্যা হয় না
কিন্তু পাখির ক্ষেত্রে তা হয় না- বীজ পাখির মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে এবং নতুন উদ্ভিদের জন্ম হতে পারে।
সুতরাং মরিচের গাছ যদি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিজের ফল খাওয়া বন্ধ করতে এই ঝালের ব্যবস্থা তৈরি করে থাকে, তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে কেন সেটি প্রযোজ্য হচ্ছে না?
এটা আরো অবাক করার মতো, কারণ মানুষ সাধারণত তিক্ত স্বাদকে বিষের সঙ্গে যুক্ত করে থাকে, যা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠেছে।
জ্বলে যাওয়ার সতর্কতা
একটি থিওরি হলো যে, মানুষ ঝাল খাবারের স্বাদ পেয়েছে তাদের অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে।
ধারণাটি হলো যে, মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করে য, ঝাল মসলার খাবার পচে যাওয়ার সম্ভাবনা কম- খাবারে উত্তাপ থাকার মানে হলো সেটি নষ্ট হয়ে যায়নি।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জেনিফার বিলিং এবং পল ডব্লিউ.শেরম্যান ১৯৯৮ সালের দিকে প্রথম এই ধারণা নিয়ে সামনে আসেন।
তারা ৩৬টি দেশের মাংস দিয়ে তৈরি কয়েক হাজার ঐতিহ্যগত খাবার বিশ্লেষণ করে দেখেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন, তুলনামূলক উষ্ণ জলবায়ুর অঞ্চলগুলোয় ঝালযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া হয়, যেখানে খাবার সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
”গরমের দেশগুলোয় মাংস দিয়ে তৈরি প্রতিটি খাবারেই অন্তত একটি মসলা থাকবেই, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক মসলা থাকে, ভারী মসলা। আর ঠাণ্ডার দেশগুলোয় বেশিরভাগ খাবার তৈরি করা হয় মসলাবিহীন বা খুব সামান্য মসলা দিয়ে,” তারা উপসংহারে পৌঁছান।
থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, ভারত ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোয় মসলা নির্ভর খাবার বেশি তৈরি করা হয়। অন্যদিকে সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়েতে সবচেয়ে কম মসলা খাওয়া হয়।
”আমার মতে, খাবার রান্নার পদ্ধতি দেখলেই বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরজীবী বা জীবাণুগুলোর সঙ্গে ও আমাদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতার একটি ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। আমরা যেসব খাবার খাই, পরজীবীগুলোও সেই একই খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে।” বলছেন শেরম্যান।
”খাবার নিয়ে যা কিছু আমরা করি, শুকাই, রান্না করি, ভাপে সেদ্ধ করি, লবণ মিশিয়ে রাখি অথবা মসলা মাখি- সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এসব জীবাণু যাতে খাবারটি নষ্ট করে ফেলতে না পারে। ”
কোমলতার প্রতিষেধক?
খাদ্য বিজ্ঞানী কাওরি ও’কনোর আরেকটি সূত্র যোগ করেছেন।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলছেন, আখ এবং আলুর মতো, মরিচ এমন একটি খাদ্যদ্রব্য যা ইউরোপের মানুষদের কাছে বহু বছর অচেনা ছিল। কিন্তু ইউরোপিয়ানরা আমেরিকায় পৌঁছার পর এবং বাণিজ্য পথ চালুর পর, সেটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
”ইউরোপের অভিযাত্রীদের মাধ্যমে মরিচ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে,” বলছেন ও’কনোর।
এগুলোর চমকপ্রদ স্বাদ খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের খাবারে ছড়িয়ে পড়ে। এসব দেশের মধ্যে আছে ভারত, চীন এবং থাইল্যান্ড।
”আমাদের কল্পনা করে নিতে হবে যে, সেই সময় ইউরোপের খাবার খুবই মৃদু ধরণের ছিল। কিন্তু মরিচ সেগুলোয় স্বাদ যোগ করেছে, যেমনটা হয়েছে চিনি আসার পর।”
রোমাঞ্চ ও পেটে ব্যথা
তবে মরিচের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কারণ হিসাবে আরেকটা বিকল্প তত্ত্ব আছে।
মশলাযুক্ত খাবারের প্রতি আমাদের ঝোঁকের কারণ হিসাবে মনে করা হয় ”সীমিত ঝুঁকি” নেয়ার প্রবণতাকে।
এই তত্ত্বে বলা হয় যে, এখন মানুষ যেমন রোমাঞ্চের জন্য রোলারকোস্টার বা স্কাইডাইভিং করতে পছন্দ করে, ঠিক একই রকম রোমাঞ্চের জন্য ঝাল ঝাল মরিচ খেতে শুরু করে।
কষ্টের স্বাদ
এই ধারণাটি প্রথম প্রকাশ করেন পল রোজিন, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার একজন মনোরোগবিদ। তিনি প্রথম এই বিষয়ে আগ্রহ বোধ করেন এটা লক্ষ্য করে যে, বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণী মরিচ খায় না, মানুষ বাদে।
তিনি পরীক্ষার অংশ হিসাবে মানুষজনকে ক্রমেই বেশি ঝালের মরিচ দিতে থাকেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা আর ঝাল খেতে পারে না।
সাক্ষাৎকারের সময় তিনি অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চান, কোন মরিচ তাদের সবচেয়ে ভালো লেগেছে। তারা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি ঝালের মরিচটি।
পল রোজিন ব্যাখ্যা করে বলছেন, ”মানুষ হচ্ছে একমাত্র প্রাণী যারা অতি নেতিবাচক বিষয়কেও উপভোগ করতে পারে।”
”আমাদের শরীর যদি বিপরীত আচরণও করে, তারপরেও আমাদের মন জানে যে, আমরা আসলে খুব বড় কোন বিপদের মধ্যে নেই।”
এটা তুলনা করা যেতে পারে এভাবে যে, মানুষ অতিরিক্ত ঝাল খেতে পছন্দ করে, ঠিক যেমন তারা ভীতিকর ভৌতিক চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করে।
বৈশিষ্ট্য এবং লিঙ্গ
বিজ্ঞানীরা আরো বোঝার চেষ্টা করেছেন, কেন কিছু কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশি ঝাল খেতে পছন্দ করে।
খাদ্য বিজ্ঞানী নাদিয়া বাইর্নেস জানার চেষ্টা করেছেন যে, মানুষের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য কি ঝালমসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব রাখে কিনা।
তিনি দেখতে পেয়েছেন, পুরুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যদের দেখানোর জন্য বেশি ঝালের মরিচ খায়, অন্যদিকে নারীরা কষ্টদায়ক ঝালের অনুভূতি পেতে চায়।
” উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, মেক্সিকোয় মরিচ খাওয়া মানে হলো শক্তি, বেপরোয়া এবং পুরুষত্ব প্রদর্শনের ব্যাপার।”
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার: মরিচ খাওয়ার পেছনে রোমাঞ্চপ্রিয়তা, কষ্ট উপভোগ অথবা প্রাচীন প্রবৃত্তির অনুসরণ করা, কারণ যাই হোক না কেন, বিশ্বে এখন আরো বেশি পরিমাণের মরিচ উৎপাদন করা হচ্ছে এবং মরিচের ঝালও দিনে দিনে বাড়ছে।
চীন
করোনাভাইরাস মহামারির উৎস কি চীনে চোরাচালান হওয়া প্যাঙ্গোলিন থেকে?
প্যাঙ্গোলিন নামে একটি প্রাণী যা চোরাই পথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয় – তার দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড নাইনটিনের সাথে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।’
প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী।
এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে – যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সাথে সম্পর্কিত।
নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মত জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তারা এটাও বলছেন যে , মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।
“যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভুমিকা আরো নিশ্চিত হবার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী-থেকে-মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত” – বলেন ড. ল্যাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সাথে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরো বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ – যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে – তার সাথে এর মিল নেই।
সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলছেন,”করোনাভাইরাসের সাথে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।”
ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং তার পর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো – তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
খুব সম্ভবত: হর্সশু প্রজাতির বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন – দুধরণের প্রাণীই এতে জড়িত কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা।
ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে – এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল – নাকি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?
প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
চীন অবশ্য কোভিড নাইনটিন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে, এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার কথায়, কোভিড নাইনটিনের উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোন প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসই ছিল, বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোন প্রাণী থেকে এসেছিল।
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
কৃত্রিম মাংসের বার্গার, যা থেকে ‘রক্ত’ও ঝরে – আর বেশি দূরে নয় – দা এগ্রো নিউজ
জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন