ফসল
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারীর চাষ করা ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একটি শীষে ধান পাওয়া গেছে এক হাজার এক শর বেশি। দেশে বর্তমান যেসব জাতের ধান চাষ হয় সেসবের চেয়ে এই ধানের ফলন দ্বিগুণ। ফাতেমা বেগমের জমিতে এই ধানের চাষ হওয়ায় এরই মধ্যে তা ‘ফাতেমা ধান’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়।
ফাতেমা ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়, যা বেড়ে ৮-১২টি হয়। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। একেকটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬-৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা এক হাজার থেকে ১২০০টি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম। ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিপ (ছড়ার সঙ্গের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়ায় দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কাণ্ড ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। তাই এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোন আশঙ্কা নেই। ফাতেমা ধান একরপ্রতি ফলন হয় প্রায় ১৩০ মণ। তাই অন্য যে কোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।

গতকাল শুক্রবার চাকুলিয়া গ্রামে ফাতেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছু মানুষের ভিড় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ফাতেমার ধানের বীজ কিনতে এসেছে। কেউ কেউ যে জমিতে ওই ধান ফলেছে, তা ঘুরে দেখে। তবে কয়েক দিন আগেই ওই ধানের বীজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
ফাতেমা বেগম জানান, ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তাঁর বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান তিনি। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর ছেলে লেবুয়াতকে ধান চাষ চাষ করতে বলেন। সে বছর আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। এবার আরো বেশি জমিতে চাষ করার পর ধানে ধানে সয়লাব হয়ে গেছে। সাড়া ফেলেছে তা এলাকার বাইরেও। ওই ধান দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো। লেবুয়াত শেখ জানান, বাড়ির পাশে দেড় বিঘার মৎস্যঘেরের মধ্যে প্রায় ৪২ শতক জমিতে আলাদাভাবে এ বছর ওই ধানের চাষ করেন তাঁরা। অন্য ধানের মতোই সাধারণ পরিচর্চা করেন। জমিতে দুই দফায় ২০ কেজি ইউরিয়া এবং ৩০ কেজি পটাশ সার ব্যবহার করা হয়েছে। পোকামাকড় তাড়াতে দুই দফায় কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। অন্য জাতের ধানগাছের চেয়ে এই ধানগাছ অনেক লম্বা। ধানের শীষও অনেক বড়। প্রতিটি শীষে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ দানা হয়। ওই জমিতে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কেজি ধান ফলেছে। নিজেদের জন্য কিছু পরিমাণ বীজ ধান রাখার পর ৪০০ টাকা কেজিদরে ওই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে আয় হয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা। সিলেট, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ওই ধান ক্রয় করেছে। ফকিরহাটের মাসকাটা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী জানান, ওই ধান রোপণ করার পর তাঁরা তত্ত্বাবধান করেন। চাষি তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ধান চাষ করেছেন।
কৃষক রিয়াজুল ইসলাম জানান, ইউটিউবের মাধ্যমে ফাতেমা ধানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করার পর বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াতের মায়ের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করি। এরপর প্রাথমিকভাবে আমার ৭৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করি। এতে সবকিছু মিলে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশাবাদী এ জমিতে প্রায় ৯৫-১০০ মণ ধান হবে। এই ধান উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, এই ধান চাষ করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। নিজেও স্বাবলম্বী হতে পারব। এ বছর আরও জমিতে আবাদ করব এই ধান।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, বাগেরহাটের কৃষক কর্তৃক উদ্ভাবিত ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান, উপজেলাতে এ ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
অন্যান্য
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
- ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।
গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ
- গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
- উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।

গম চাষ
- গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।

ডালশস্য
- মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।


তৈলবীজ চাষ
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবজি চাষ
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।



ফল চাষ
- আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মৎস্য চাষ
- পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
- মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
- গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।
মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
ফসল
মসুর ডাল চাষের আধুনিক কৌশল

মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। মাছে ভাতে বাঙালী এখন ডালে ভাতে বাঙালী । আর মসুর ডাল হচ্ছে সকলের প্রিয় ডাল। মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে খাদ্যশক্তি ও প্রোটিন রয়েছে।
উপযুক্ত মাটি: সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ মাটি মসুর চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।
জমি তৈরি: জমি ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে সমান করে তৈরি করতে হবে।

বীজ বপন পদ্ধতি: আমাদের দেশে বেশির ভাগ স্থানে ছিটিয়ে বীজ বপন করে থাকে। তবে সারি করে বীজ বপন করলে ভাল হয়। সারিতে বপন করলে আগাছা দমন, পানি সেচ ও নিষ্কাশণ ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সহজ হয়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার রাখলে ভাল হয়। প্রতি হেক্টরে ৩০-৩৫ কেজি বীজের দরকার। ছিটিয়ে বীজ বপন করলে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হয়।
বীজ বপনের সময়: কার্তিক মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর মাসের শেষ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ) পর্যন্ত মসুর বীজ বপন করার উত্তম সময়।
সার ব্যবস্থাপনা: জমিতে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ।
সারের নাম হেক্টর প্রতি
১. ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি
২. টিএসপি ৮০-৯০ কেজি
৩. এমপি/পটাশ ৩০-৪০ কেজি
৪. অনুজীব সুপারিশমত।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: সম্পূর্ণ সার জমি শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। যে জমিতে পূর্বে মসুর চাষ করা হয় নাই প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অনুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পরিচর্যা: বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানী দ্বারা আগাছা দমন করা যেতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই: মসুরের গোড়া পচাঁ রোগ হলে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম (০.২৫%) মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
মসুরের মরিচা রোগ হলে অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী বারি মসুর-৩, বারি মসুর-৪ জাতের চাষ করতে হবে। এছাড়া টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) ১২-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
মসুরের স্টেমফাইলাম ব্লাইটরোগ হলে অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া রোভরাল ডব্লিউপি নামক ছত্রাক নাশক (০.২%) ১০দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ– মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র (মার্চ) মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
বীজ সংরক্ষণ: বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতার পরিমাণ আনুমানিক ১০%এর নিচে রাখতে হবে। তারপর টিনের পাত্র ও পলিথিনের ব্যাগ বা চটের ব্যাগ অথবা আলকাতরার প্রলেফ দেওয়া মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
অন্যান্য
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

ফেব্রুয়ারি মাস কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফসলের যত্ন, বপন এবং রোপণ কার্যক্রম চালানো হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- জমিতে পানি সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
- ধানের চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন স্টেম বোরার (Stem Borer) এবং পাতামোড়া পোকার (Leaf Roller) আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধানের জমিতে প্রয়োজনীয় সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ প্রয়োগ করুন।

গম চাষ
- জমি আগাছামুক্ত রাখুন এবং সঠিক পরিমাণে সেচ দিন।
- পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew) এবং ব্রাউন রাস্ট (Brown Rust) রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।

ডালশস্য
- মসুর, মুগ, এবং ছোলার ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পরে জমি পরিষ্কার করে পরবর্তী চাষের জন্য প্রস্তুত করুন।




তৈলবীজ চাষ
সরিষা ফসল সংগ্রহ
- সরিষার শুঁটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল সংগ্রহ করুন।
- জমি পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।

সবজি চাষ
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, এবং মূলা সংগ্রহ করুন।
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স, এবং করলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার এবং সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন।




ফল চাষ
- আম, কাঁঠাল, এবং লিচু গাছের মুকুল রক্ষায় কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণ করুন।


মৎস্য চাষ
- পুকুরে নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং মাছের খাবার সরবরাহ করুন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় শুষ্ক খড় এবং কাঁচা ঘাস যোগ করুন।
- রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিকাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আয় বাড়ে। প্রতিটি কাজ সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমকে আরও সফল করে তোলা সম্ভব।
ফসল
বোরো ধান চাষের গুরুত্ব

বোরো ধানের চাষ বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বোরো ধান চাষের গুরুত্ব নিচে তুলে ধরা হলো:
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
- বোরো ধান দেশের মোট চাল উৎপাদনের একটি বড় অংশ যোগান দেয়।
- এটি খাদ্য চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
বছরব্যাপী ধান উৎপাদন সম্ভব
- বোরো ধান শীতকালীন মৌসুমে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মের শুরুতে কাটা হয়।
- এর ফলে পুরো বছর ধান উৎপাদনের একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

সেচনির্ভর ধান চাষ
- বোরো ধান চাষ সেচনির্ভর হওয়ায় খরার প্রভাব কম পড়ে।
- সেচ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এটি সারা দেশে চাষযোগ্য।
উচ্চ ফলনশীল ধান
- বোরো ধান উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়ায় এর চাষ থেকে বেশি পরিমাণ চাল পাওয়া যায়।
- প্রতি হেক্টরে ৫-৮ টন ধান উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- বোরো ধানের উৎপাদন কৃষকের আয় বৃদ্ধি করে।
- চাল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়।

শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান
- বোরো ধানের চাষ, পরিচর্যা, সেচ এবং ফসল কাটার সময় বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
- এর ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল জাত
- বোরো ধানের উন্নত জাতগুলো খরা, লবণাক্ততা এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
- এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক।
প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রয়োগ
- বোরো ধান চাষে উন্নত প্রযুক্তি যেমন সেচ যন্ত্র, উচ্চফলনশীল বীজ এবং বালাইনাশক ব্যবহৃত হয়।
- এটি চাষাবাদের আধুনিকীকরণে সহায়ক।
রপ্তানি সম্ভাবনা
- উচ্চমানের বোরো ধান থেকে প্রাপ্ত চাল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা সম্ভব।
- এটি দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার অবদান বাড়ায়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
- বোরো ধানের উৎপাদন খাদ্যের সহজলভ্যতা বাড়িয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
- খাদ্য মজুত থাকায় দেশের দুর্যোগকালীন সময় খাদ্য সংকট কম হয়।

বোরো ধানের চাষ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদনে একটি অনন্য স্থান দখল করে আছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বোরো ধানের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ফসল
বোরো ধানের বৈশিষ্ট্য

বোরো ধান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শস্য, যা শীতকালীন মৌসুমে (রবি মৌসুম) চাষ করা হয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো ধানের চাষ শুরু হয় এবং এপ্রিলে ফসল সংগ্রহ করা হয়। এটি সেচনির্ভর ধান, যা সঠিক জল সরবরাহ ও পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো উৎপাদন দেয়।
বোরো ধান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফসল, যা শীতকালীন মৌসুমে রবি ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। এটি মূলত সেচনির্ভর এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বোরো ধানের বৈশিষ্ট্য
বোরো ধান বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেচনির্ভর শস্য। এটি বিশেষত শীতকালীন মৌসুমে (রবি মৌসুম) চাষ করা হয়। এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
সেচনির্ভর চাষাবাদ
- বোরো ধানের চাষ সম্পূর্ণরূপে সেচের ওপর নির্ভরশীল।
- সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনা ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করে।
উচ্চ ফলনশীলতা
- বোরো ধান সাধারণত উচ্চ ফলনশীল জাত, যা থেকে প্রতি হেক্টরে ৫-৮ টন পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়।
- ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯ এবং হাইব্রিড জাতগুলোর ফলন ক্ষমতা বেশি।
শীতকালীন চাষের উপযোগিতা
- বোরো ধানের চাষ শীতকালীন (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শুরু হয় এবং গরম আবহাওয়ায় (এপ্রিল-মে) ধান কাটা হয়।
- এটি ঠাণ্ডা ও কম বৃষ্টিপাতের আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
উন্নত জাতের ব্যবহার
- বোরো মৌসুমে উচ্চফলনশীল এবং লবণাক্ততা সহনশীল জাত যেমন ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৭৫, এবং ব্রি ধান-৮৮ চাষ করা হয়।
- কিছু জাত খরা বা জলাবদ্ধতাও সহ্য করতে পারে।
দীর্ঘ জীবনকাল
- বোরো ধানের জীবনকাল সাধারণত ১৪০-১৫০ দিন।
- এই দীর্ঘ সময়ে ধানের গুণগত মান ভালো থাকে।
পানির প্রয়োজনীয়তা
- বোরো ধানের জন্য প্রায় ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রয়োজন হয়।
- পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত না হলে ফলন কমে যায়।

রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা
- বোরো ধানের কিছু উন্নত জাত ব্লাস্ট রোগ ও পাতামোড়ানো পোকা প্রতিরোধ করতে পারে।
- রোগ-বালাই কমানোর জন্য নিয়মিত পরিচর্যা এবং সঠিক বালাইনাশক প্রয়োগ প্রয়োজন।
দানার গুণগত মান
- বোরো ধানের দানার মান তুলনামূলক ভালো এবং এটি খাদ্যের জন্য উৎকৃষ্ট।
- দানাগুলো মাঝারি আকৃতির এবং মসৃণ হয়।
খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান
- বোরো ধান দেশের মোট চাল উৎপাদনের একটি বড় অংশ সরবরাহ করে।
- এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চাষের জন্য উপযোগী জমি
- উঁচু এবং মাঝারি নিচু জমি বোরো ধানের চাষের জন্য আদর্শ।
- জলাবদ্ধ জমিতে চাষ না করাই ভালো।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন