আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

ফসল

পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়

পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়
পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়

পার্চিং পদ্ধতি হলো একটি প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি, যা জমিতে পোকামাকড় দমন ও ফসলের ফলন বাড়াতে সহায়ক। এই পদ্ধতিতে জমির মাঝখানে বা প্রান্তে কাঠি বা বাঁশের টুকরো স্থাপন করে পাখিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এটি সহজ এবং কম খরচে কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপায়।

পার্চিং পদ্ধতির কাজ করার ধরন

কাঠি স্থাপন:

  • জমির বিভিন্ন স্থানে ৪-৫ ফুট লম্বা কাঠি বা বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।
  • প্রতিটি কাঠির মাঝে ১০-১৫ মিটার দূরত্ব রাখা হয়।

পাখিদের বসার ব্যবস্থা:

  • কাঠি বা বাঁশের মাথায় একটি হালকা শাখা বা ক্রসবার লাগানো হয়, যাতে পাখিরা সহজে বসতে পারে।
  • পাখিরা এই কাঠিতে বসে জমিতে থাকা ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে।

ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন:

  • জমিতে থাকা লেদা পোকা, মাজরা পোকা, এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা পাখিরা খেয়ে ফেলে।
  • ফলে রাসায়নিক কীটনাশকের প্রয়োজন কমে যায়।

পরিবেশ সংরক্ষণ:

  • এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব, কারণ এতে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার প্রয়োজন হয় না।

পার্চিং পদ্ধতির উপকারিতা

পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি:

  • রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • মাটি, পানি, এবং পরিবেশ দূষণ কম হয়।

কম খরচে কার্যকর:

  • এই পদ্ধতিতে তেমন খরচ লাগে না। শুধুমাত্র কয়েকটি কাঠি বা বাঁশের প্রয়োজন হয়।

ফসলের ফলন বৃদ্ধি:

  • ক্ষতিকারক পোকামাকড় কমে যাওয়ায় ফসল ভালো হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।

পাখিদের খাদ্য সরবরাহ:

  • জমিতে পার্চিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পাখিরা খাদ্য পায়, যা প্রাকৃতিক খাদ্যচক্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ:

  • জমিতে পাখিদের উপস্থিতি জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সহায়ক।

পার্চিং পদ্ধতি কোথায় প্রযোজ্য?

পার্চিং পদ্ধতি হলো একটি প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, যা ফসলের জমিতে পোকামাকড় দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষভাবে কার্যকর এবং বহুল ব্যবহৃত একটি কৃষি কৌশল। তবে পার্চিং পদ্ধতি সব ধরনের ফসলের জমিতে ব্যবহার করা যায় না। সঠিকভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার জন্য ফসল এবং জমির ধরন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

নিচে পার্চিং পদ্ধতি কোথায় এবং কীভাবে প্রযোজ্য তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি
পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি

পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি

ধান চাষে (Rice Cultivation): পার্চিং পদ্ধতি ধানক্ষেতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশেষত মাজরা পোকা, লেদা পোকা, এবং পাতা কাটার পোকার আক্রমণ দমনে এটি কার্যকর।

অঞ্চল: বোরো, আমন, এবং আউশ মৌসুমে পার্চিং ব্যবহার করা হয়।

কাজ: পাখিদের মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকামাকড় খাওয়ানো হয়, যা ধানের ফলন বাড়ায়।

শাকসবজি চাষে (Vegetable Farming): শাকসবজি, যেমন লাউ, কুমড়ো, টমেটো, এবং বেগুন চাষেও পার্চিং পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর।

কাজ: ফল ছিদ্রকারী পোকা এবং লেদা পোকার আক্রমণ কমায়।

ফলাফল: রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমানো যায় এবং সবজির গুণগত মান ভালো থাকে।

ডাল জাতীয় ফসল (Pulse Crops): মসুর, ছোলা, এবং মুগ ডালের ক্ষেতে পোকামাকড় দমন করার জন্য পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

কাজ: ফসলের দানায় ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ।

ফলাফল: উৎপাদিত ডালের গুণগত মান উন্নত হয়।

তেলজাত ফসল (Oil Seeds): সরিষা, সূর্যমুখী, এবং তিলের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা দমনে পার্চিং ব্যবহার করা হয়।

কাজ: ফুলের ক্ষতি রোধ এবং ফসলের ফলন বৃদ্ধি।

ভুট্টা ও গম চাষ (Maize and Wheat Farming): ভুট্টা ও গম চাষে পাতা ছিদ্রকারী পোকা এবং লেদা পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি কার্যকর।

কাজ: জমিতে বসানো কাঠিতে পাখিদের উপস্থিতি পোকামাকড় খেয়ে ফেলে।

পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগের সঠিক সময়

পোকামাকড়ের আক্রমণ শুরু হলে: ফসলের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই পার্চিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

ফসলের বিভিন্ন স্তরে: চারা রোপণের প্রথম দিক থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যায়।

পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ
পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ

পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ

পার্চিং পদ্ধতি একটি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি কৌশল, যা ক্ষতিকারক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। এটি বাস্তবায়ন করতে খুব বেশি সময় বা খরচের প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরিকল্পনা এবং পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সফলভাবে পার্চিং করা সম্ভব। নিচে পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের ধাপসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

জমি পর্যবেক্ষণ করুন

  • ক্ষতিকারক পোকামাকড় চিহ্নিত করুন: ফসলের ক্ষতি করছে এমন পোকার ধরন এবং সংখ্যা যাচাই করুন।
  • জমির আকার নির্ধারণ করুন: জমির আকার এবং ফসলের ধরণ অনুযায়ী পার্চিং কাঠি স্থাপনের পরিকল্পনা করুন।

কাঠি বা বাঁশ সংগ্রহ করুন

  • ৪-৫ ফুট লম্বা কাঠি, বাঁশ বা লাঠি সংগ্রহ করুন।
  • প্রতিটি কাঠি মজবুত হওয়া উচিত, যাতে এটি হাওয়া বা বৃষ্টিতে পড়ে না যায়।

কাঠি স্থাপন করুন

  • জমির মাঝখানে এবং চারদিকে সমান দূরত্বে কাঠি পুঁতে রাখুন।
  • দূরত্ব বজায় রাখুন: প্রতিটি কাঠির মধ্যে ১০-১৫ মিটার দূরত্ব রাখুন।
  • জমির আকারের উপর ভিত্তি করে কাঠির সংখ্যা নির্ধারণ করুন।

পাখিদের বসার ব্যবস্থা তৈরি করুন

  • কাঠির মাথায় একটি হালকা শাখা বা ক্রসবার স্থাপন করুন, যা পাখিদের বসার জন্য উপযুক্ত।
  • কাঠির উপরে আলকাতরা বা তেল লাগাবেন না, যাতে পাখিদের বসতে সমস্যা না হয়।

পাখিদের আকৃষ্ট করুন

  • জমিতে পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য পরিবেশ শান্ত রাখুন এবং আশেপাশে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ জিনিস এড়িয়ে চলুন।
  • জমিতে কিছু পাখির প্রিয় খাবার যেমন ধান বা শস্য রেখে তাদের উপস্থিতি বাড়ানো যায়।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন

  • প্রতিদিন জমি পর্যবেক্ষণ করে দেখুন কাঠিতে পাখি বসছে কি না।
  • যদি পাখি না আসে, তবে কাঠির অবস্থান বা সংখ্যা পরিবর্তন করুন।

কাঠি স্থাপনের সংখ্যা বাড়ান (প্রয়োজনে)

  • যদি জমিতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়, তবে কাঠির সংখ্যা বাড়িয়ে জমি আরও সুরক্ষিত করতে পারেন।

জমির পরিচর্যা করুন

  • জমি পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং পার্চিং কাঠিগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হলে বুঝবেন পদ্ধতিটি কার্যকর হয়েছে।

ফসল কাটার সময় কাঠি সরিয়ে নিন

  • ফসল কাটার পর কাঠি সরিয়ে সংরক্ষণ করুন, যাতে পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহার করা যায়।

পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • ক্ষতিকারক পোকার সংখ্যা বাড়ার আগেই পার্চিং শুরু করুন।
  • পাখিদের কোনোভাবেই বিরক্ত করবেন না, কারণ তারা পোকামাকড় দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে পাখিদের ভূমিকা বুঝুন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।

পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারিক উদাহরণসমূহ

পার্চিং পদ্ধতি কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় দমন ও ফসলের ফলন বাড়ানোর একটি কার্যকর, পরিবেশবান্ধব এবং সহজ কৌশল। বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং এর সফল উদাহরণ রয়েছে। নিচে বিভিন্ন ক্ষেত্র ও ফসলের উপর ভিত্তি করে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারিক উদাহরণ আলোচনা করা হলো:

ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি
ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি

ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি

অঞ্চল: বাংলাদেশে ধান চাষের প্রধান এলাকা যেমন ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, ও যশোরে পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • আমন ও বোরো মৌসুমে মাজরা পোকা এবং লেদা পোকার আক্রমণ দমনে পার্চিং পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর।
  • পাখিরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, ফলে রাসায়নিক কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি
সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি

সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি

অঞ্চল: সাভার, গাজীপুর, এবং বগুড়ার মতো সবজি উৎপাদনকারী এলাকাগুলো।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • লাউ, কুমড়ো, করলা, টমেটো, এবং বেগুন চাষে ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণে পার্চিং পদ্ধতি কার্যকর।
  • এটি ফসলের গুণগত মান রক্ষা করে এবং রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমায়।
তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং
তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং

তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং

অঞ্চল: পাবনা, সিরাজগঞ্জ, এবং ফরিদপুরে সরিষা চাষের ক্ষেত্রে।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • সরিষা ও সূর্যমুখীর ক্ষেতের ফুলে ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করতে পার্চিং ব্যবহৃত হয়।
  • পোকা নিয়ন্ত্রণের ফলে ফসলের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি
ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

অঞ্চল: ময়মনসিংহ এবং রাজশাহী অঞ্চলে।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • মসুর ডাল এবং মুগ ডালের ক্ষেতে দানা ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্চিং ব্যবহৃত হয়।
  • এটি ফসলের গুণগত মান উন্নত করার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় কমায়।
গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি
গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি

গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি

অঞ্চল: রাজশাহী, নওগাঁ, এবং দিনাজপুরে গম ও ভুট্টা চাষে।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • গমের ক্ষেত্রে পাতা ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • ভুট্টা ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি
ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

অঞ্চল: নাটোর, সাতক্ষীরা, এবং দিনাজপুরে।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • আম, পেঁপে, এবং কলার বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  • পাখিদের মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, যা ফলের মান উন্নত করে।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং

অঞ্চল: বাংলাদেশের অর্গানিক ফার্মিং বা প্রাকৃতিক চাষাবাদ প্রচলিত এলাকাগুলো।

ব্যবহারিক উদাহরণ:

  • রাসায়নিক মুক্ত চাষাবাদে পোকা দমন করতে পার্চিং পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এটি কৃষি জমির প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক।

পার্চিং পদ্ধতির সফলতা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়

পরিবেশবান্ধব: রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই পোকা দমন করা সম্ভব।

সাশ্রয়ী: পদ্ধতিটি কার্যকর করার জন্য খুব কম খরচ হয়।

ফলন বৃদ্ধি: জমিতে ক্ষতিকারক পোকার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ফলন বৃদ্ধি পায়।

পার্চিং পদ্ধতি একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি কৌশল। এটি পোকামাকড় দমনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনি রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমাতে চান এবং ফসলের গুণগত মান উন্নত করতে চান, তবে পার্চিং পদ্ধতি হবে আপনার জন্য সেরা বিকল্প।

আপনার ফসল রক্ষা করতে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পার্চিং পদ্ধতি আজই ব্যবহার করুন!

  • গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি

    গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি

  • তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং

    তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং

  • ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

    ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

  • ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি

    ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি

  • সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি

    সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি

  • প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং

    প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং

  • ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

    ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি

  • পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়

    পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়

  • পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি

    পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি

  • পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ

    পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ

  • গম ও ভুট্টা চাষে পার্চিং পদ্ধতি
  • তেলজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে পার্চিং
  • ডালজাতীয় ফসল চাষে পার্চিং পদ্ধতি
  • ধান চাষে পার্চিং পদ্ধতি
  • সবজি চাষে পার্চিং পদ্ধতি
  • প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে পার্চিং
  • ফল চাষে পার্চিং পদ্ধতি
  • পার্চিং পদ্ধতি: কৃষি জমিতে পোকা দমন এবং ফলন বৃদ্ধি করার কার্যকর উপায়
  • পার্চিং পদ্ধতির উপযুক্ত ফসল ও জমি
  • পার্চিং পদ্ধতি বাস্তবায়নের সহজ ধাপসমূহ

ফসল

কার্তিক মাসের কৃষি

বোরো ধানের বৈশিষ্ট্য
কার্তিক মাসের কৃষি

সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, সবাইকে হৈমন্তীয় শুভেচ্ছা। হেমন্ত বাংলা ঋতুচক্রের এক কাব্যিক উপাখ্যান। সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যে হেমন্ত যেমন সুন্দরের কাব্য শশি তেমনি কৃষি ভুবনের চৌহদ্দিতে হেমন্ত কাজেকর্মে ব্যস্ততায় এক স্বপ্নিল মধুমাখা আবাহনের অবতারণা করে। সোনালি ধানের সম্ভার সুঘ্রাণে ভরে থাকে বাংলার মাঠ প্রান্তর। কৃষক মেতে ওঠে ঘাম ঝরানো সোনালি ফসল কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে গোলা ভরতে। সে সাথে শীতকালীন ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো শুরু করতে হবে এখনই। তাহলে আসুন আমরা জেনে নেই কার্তিক মাসে আমাদের করণীয় কাজগুলো।

ধান চাষ
আমন ধান

আমন ধান
এ মাসে অনেকের আমন ধান পেকে যাবে তাই রোদেলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে প্রথমেই সুস্থ সবল ভালো ফলন দেখে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এরপর কেটে, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর রোদে ভালো মতো শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান আবার ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরিষ্কার ঠাণ্ডা ধান বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ রাখার পাত্রকে মাটি বা মেঝের ওপর না রেখে পাটাতনের ওপর রাখতে হবে। পোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে হলে ধানের সাথে নিম, নিসিন্দা, ল্যান্টানার পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে মিশিয়ে দিতে হবে।

গম চাষ
গম চাষ

গম
কার্তিক মাসের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে গম বীজ বপনের প্রস্তুতি নিতে হয়। দো-আঁশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিক জাত যেমন- আনন্দ, বরকত, কাঞ্চন, সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী, সুফী, বিজয়, বারি গম-২৭, বারি গম-২৮ রোপণ করতে হবে। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় এবং ইউরিয়া তিন কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৩-২১ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ প্রয়োজন এবং এরপর প্রতি ৩০-৩৫ দিন পর ২ বার সেচ দিলে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়।

আখ
আখ

আখ
এখন আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ভালোভাবে জমি তৈরি করে আখের চারা রোপণ করা উচিত। আখ রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০ সেমি. থেকে ১২০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬০ সেমি. রাখতে হবে। এভাবে চারা রোপণ করলে বিঘাপ্রতি ২২০০-২৫০০ চারার প্রয়োজন হয়।

ভুট্টার অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ভুট্টা চাষ

ভুট্টা
ভুট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। ভুট্টার উন্নত জাতগুলো হলো বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১ এসব।

সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল
সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল

সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল
কার্তিক মাস সরিষা চাষেরও উপযুক্ত সময়। সরিষার প্রচলিত জাতগুলোর মধ্যে টরি-৭, রাই-৫, কল্যাণীয়া, সোনালি, সম্পদ, বারি সরিষা-৬, বারি সরিষা-৭, বারি সরিষা-৮ উল্লেখযোগ্য। জাতভেদে সামান্য তারতম্য হলেও বিঘাপ্রতি গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি সরিষার বীজ প্রয়োজন হয়। বিঘাপ্রতি ৩৩-৩৭ কেজি ইউরিয়া, ২২-২৪ কেজি টিএসপি, ১১-১৩ কেজি এমওপি, ২০-২৪ কেজি জিপসাম ও ১ কেজি দস্তা সারের প্রয়োজন হয়। সরিষা ছাড়াও অন্যান্য তেল ফসল যেমন- তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী এ সময় চাষ করা যায়।
আলু

মিষ্টি আলুর চাষ পদ্ধতি
আলু চাষ

আলুর জন্য জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময় এ মাসেই। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ভালো ফলনের জন্য বীজ আলু হিসেবে যে জাতগুলো উপযুক্ত তাহলো ডায়মন্ড, মুল্টা, কার্ডিনাল, প্যাট্রেনিজ, হীরা, মরিণ, অরিগো, আইলশা, ক্লিওপেট্রা, গ্রানোলা, বিনেলা, কুফরীসুন্দরী এসব। প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে ২০০-২৭০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়।

এক বিঘা জমিতে আলু আবাদ করতে ৪৫ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি টিএসপি, ৩৩ কেজি এমওপি, ২০ কেজি জিপসাম এবং ২ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তাছাড়া বিঘাপ্রতি ১.৫ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরিপ্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেয়া, বালাইদমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ। সময়মতো সবগুলো কাজ করতে পারলে খরচ কমে আসে, ফলন বেশি হয়।

মিষ্টি আলুর চাষ করবেন যেভাবে
মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু
নদীর ধারে পলি মাটিযুক্ত জমি এবং বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির মাটিতে মিষ্টি আলু ভালো ফলন দেয়। তৃপ্তি, কমলা সুন্দরী, দৌলতপুরী আধুনিক মিষ্টি আলুর জাত। প্রতি বিঘা জমির জন্য তিন গিঁটযুক্ত ৭৫০-৮০০ খ- লতা প্রয়োজন হয়। বিঘাপ্রতি ১.৫ টন গোবর/জৈবসার, ৫ কেজি ইউরিয়া, ১৫ কেজি টিএসপি, ২০ কেজি এমওপি সার দিতে হবে। আলুর মতো অন্যান্য পরিচর্যা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যাবে।

ডাল ফসল চাষ
ডাল ফসল চাষ

ডাল ফসল
ডালকে বলা হয় গরিবের আমিষ। আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে ডাল ফসল চাষে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মুসুর, মুগ, মাসকলাই, খেসারি, ফেলন, অড়হর, সয়াবিন, ছোলাসহ অন্যান্য ডাল এসময় চাষ করতে পারেন। এজন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন, সময়মতো বীজ বপন, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, সেচ, বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে। সরকার ডাল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করছেন।

শাকসবজি চাষ
শাকসবজি চাষ

শাকসবজি
শীতকালীন শাকসবজি চাষের উপযুক্ত সময় এখন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজতলায় উন্নতজাতের দেশি-বিদেশি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, বাটিশাক, টমাটো, বেগুন এসবের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। আর গত মাসে চারা উৎপাদন করে থাকলে এখন মূল জমিতে চারা রোপণ করতে পারেন। রোপণের পর আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ নিকাশসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে। তাছাড়া লালশাক, মুলাশাক, গাজর, মটরশুঁটির বীজ এ সময় বপন করতে পারেন।

মানিকগঞ্জ জেলায় পেঁয়াজ ক্ষেত পরিচর্যা চলছে। - ফাইল ফটো
অন্যান্য ফসল

অন্যান্য ফসল
অন্যান্য ফসলের মধ্যে এ সময় পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া, কুসুম, জোয়ার এসবের চাষ করা যায়। সাথী বা মিশ্র ফসল হিসেবেও এসবের চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আধুনিক চাষাবাদ কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

মাছ ও গবাদি পশুর যত্ন
প্রাণিসম্পদ

প্রাণিসম্পদ
সামনে শীতকাল আসছে। শীতকালে পোলট্রিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায় এবং রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, বসন্ত রোগ, কলেরা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে হাঁস-মুরগিকে বাঁচাতে হলে এ মাসেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গত মাসে ফুটানো মুরগির বাচ্চার ককসিডিয়া রোগ হতে পারে। রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসা করাতে হবে।
গবাদিপ্রাণীর আবাসস্থল মেরামত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গবাদিপ্রাণীকে খড়ের সাথে তাজা ঘাস খাওয়াতে হবে। ভুট্টা, মাসকালাই, খেসারি রাস্তার ধারে বা পতিত জায়গায় বপন করে গবাদিপ্রাণীকে খাওয়ালে স্বাস্থ্য ও দুধ দুটোই বাড়ে। রাতে অবশ্যই গবাদিপ্রাণীকে বাহিরে না রেখে ঘরের ভেতরে রাখতে হবে। তা নাহলে কুয়াশায় ক্ষতি হবে। গবাদিপ্রাণীকে এ সময় কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া তড়কা, গলাফুলা রোগের বিষয়ে সচেতন থাকলে মারাত্মক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষের গুরুত্ব
মৎস্যসম্পদ

মৎস্যসম্পদ
এ সময় পুকুরে আগাছা পরিষ্কার, সম্পূরক খাবার ও সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও জরুরি। রোগ প্রতিরোধের জন্য একরপ্রতি ৪৫-৬০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে পারেন। অংশীদারিত্বের জন্য যেখানে যৌথ মাছ চাষ সম্ভব নয় সেখানে খুব সহজে খাঁচায় বা প্যানে মাছ চাষ করতে পারেন। এছাড়া মাছ সংক্রান্ত যে কোনো পরামর্শের জন্য উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফসল

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়

প্রায় প্রতি বছরই আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা হয়ে থাকে এর কারণ স্বল্প সময়ে অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা মৌসুমে বন্যা, আকস্মিক বন্যা, উপকূলীয় বন্যা এবং উজানের দেশ ভারত, ভুটান ও চীন হতে ঢল হিসেবে আসা পানি। সুনামগঞ্জ, সিলেট নেত্রকোনা, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম, জামালপুরর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলো এ জলাবদ্ধতা লক্ষণীয় মাত্রায় চোখে পরে।

বন্যা ও জলাবদ্ধতার ব্যাপকতার ওপর ক্ষতির ধরন ও পরিমাণ নির্ভর করে। দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমি আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধগ্রস্ত। দেশের এ জলাবদ্ধ স্থানগুলো বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করে এবং এই সময়টা ভাসমান ফসল চাষের আওতায় এনে দেশে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়

বাংলাদেশের এর বিশাল অঞ্চল সমুদ্র লেবেল প্রায় ২ মি. নিচে অবস্থতি এবং জোয়া-ভাটার প্রতি খবুই স্পর্শকাতর। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় বাংলাদেশের একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জলবায়ু পরিবর্তন এ সমস্যাকে আরও অধিকতর মন্দ করেছে। এর ফল স্বরূপ দেশ শস্য উৎপাদন কমছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে এর সাথে জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী নিজেদের টিকিয়ে রাখতে বয়রা (Baira) ফসল চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

বিভিন্ন এনজিও যেমন, Bangladesh, Centre for Advanced Studies (BCAS) এবং তার সহযোগী স্থানীয় সংগঠন বন্যা কবলিত ও জলাবদ্ধ উপকূল ও লবণাক্ত এলাকায় (Floating vegetable bed cultivation) ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারণ করছেন। যাহা স্থানীয় জনগণ ও সম্পৃক্ত কৃষক পরিবারের কর্মসংস্থান, আয়, খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অধিকন্তু এর মাধ্যমে উপকূলীয় বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে তালমিলিয়ে চলার অভিজোযন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

স্বল্প পরিশরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ অনেক আগে থেকেই কিছু কিছু গ্রামের কৃষকরা করে আসছে। এটা মূলত পানির উপর মাটিবিহীন ভেলা, জলজ উদ্ভিদ যেমন কচুরিপানা, হেলঞ্চা ইত্যাদি, গোবর ও কম্পোস্টের মিশ্রণের ওপর সবজি চাষ যাকে ভাসমান বাগান বলে (Floating gander) স্থানীয়ভাবে এর নাম বয়রা (Baira)
এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত উদ্ভিদ ভেলার উপর কম্পোস্ট ও পানি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে। বন্যা ও জলাবদ্ধ অবস্থায় ক্ষেতের ফসল পানিতে পচে যায় কিন্তু ভাসমান চাষ পদ্ধতিতে ফসল সার্বিকভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম।

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়

এ প্রচলিত পদ্ধতিকে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও গবেষণার সহায়তার আরও উন্নয়ন ও টেকসই করতে হবে। প্রযুক্তির ছোয়া পেলে বেশি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী বেড তৈরি সবজি চাষে বৈচিত্র্য ও শস্য আবর্তন সম্ভব।
ভাসমান বেড (Baira) তৈরির উপকরণ
# কচুরিপানা (Water hyacinth)
# গভীর পানির ধানের খর (Deep water rice straw)
# বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ
◊ kochuripana (Eichhornia crassipes)
◊ Khudipana (Lemna trinulca)
◊ Kutipana (Azolla pinnata)
◊ Shayala (Bluxa japonica)
# কিছু বাঁশের খণ্ড (Pieces of bamboo)
ভাসমান বেড (Baira) তৈরির পদ্ধতি
পানির উপর ভাসমান কচুরিপানার স্তূপ করে বাঁশের ভেলা স্থাপন করতে হবে। এর ওপর জলাবদ্ধতার স্থায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে ঘন করে কচুরিপানার স্তূপ করতে হবে যাতে পুরো জলাবদ্ধতার সময় এটি ভাসমান থাকে। এর ওপর গোবর ও কম্পোস্টের স্তর দিয়ে ১০-১৫ দিন পর সবজির বীজ ছিটিয়ে বা চারা রোপণ করতে হবে। যেহেতু বয়রা (Baira) পানিতে সঞ্চালন সক্ষম সেহেতু সুবিধাজনক ব্যবস্থাপনার স্থানে বয়রাকে স্থাপন করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে স্থায়ী করে দিতে হবে। এভাবে সবজি চাষে কৃষকরা প্রতি বছরে একটি বয়রা (Baira) থেকে ২-৩ বার ফসল সংগ্রহ করতে পারে।

বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়
বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়

ভাসমান বেডের জন্য শস্য ও সবজি নির্বাচন

ফসল চাষ আসলে মৌসুমের ওপর নির্ভর করে তথাপিও দেশে বিভিন্ন স্থানে ২০টিরও বেশি সবজি জাত এ ভাসমান বেডে চাষ করা যায়। দেশে বিভিন্ন স্থানে সবজি যেমন-
লালশাক (Red amaranth)
পুঁইশাক (Jadian spinach)
ধনেপাতা (Coriander leaves)
ফুলকপি (Cauliflower)
বাঁধাকপি (Cabbage)
টমেটো (Tomato)
বরবটি (Lady`s fingure)
শসা (Cucumber)
করলা (Bitter gourd)
লাউ (Bottle gourd)
চিচিঙ্গা (Snake gourd)
চালকুমড়া (Ash gourd)
মিষ্টিকুমড়া (Sweet pumpkin)
শিম (Bean)
ঢেঁড়স (Radish)
বেগুন (Egg plant)
আলু (Potato)

মসলা : মরিচ (Chilli), পিয়াজ (Onion), রসুন (Garlic), আদা (Turmeric) এবং সরিষা (Mustard)
ভাসমান বেডের জন্য শস্য ও সবজি চাষ এর সুবিধা

◊ দেশের নিম্ন অঞ্চল দীর্ঘ সময় ধরে বন্যা ও জলাবদ্ধ থাকার কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মাঠে কোনো ফসল বা সবজি চাষ করা সম্ভব নয় ফলে তারা আর্থিক অসচ্ছলতার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পুষ্টিহীনতায় ভুগেন। এক্ষেত্রে প্রধানত বয়রায় সবজি ও ফসল চাষের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প
লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প

◊ পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর কচুরিপানা ও কম্পোস্ট জৈবসার হিসেবে ফসলের জমিতে ব্যবহার করা যায়।
◊ বন্যার সময় গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

◊ বন্যার সময় অথবা জলাবদ্ধ স্থানে বয়রার ফসল বা সবজি চাষের মাধ্যমে পরিবারে দৈনিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফসল

বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা “জাফরান” চাষ করবেন যেভাবে

বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা “জাফরান” চাষ করবেন যেভাবে
বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা “জাফরান” চাষ করবেন যেভাবে

জাফরান পৃথিবীর অন্যতম দামী মসলা, আদিস্থান গ্রীস। এটা ‘রেড গোল্ড’ নামেও পরিচিত। আসুন আমরা আজ জানব বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা “জাফরান” চাষ সম্পর্কে।

প্রাচীন যুগে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে জাফরানের সুগন্ধ ও উজ্জ্বল রঙের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ জাফরান ব্যবহার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন ছিল। জাফরানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ধীরে ধীরে কান্দাহার, খোরাসান, কাশ্মীরের বনেদী মহলে ব্যবহারের প্রয়োজনে ভারত উপমহাদেশে এর বিস্তার ঘটে।

জাফরানের ইংরেজি নাম ‘সাফরন’, ক্রোকোআইডি (Crocoideae) পরিবার ভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Crocus sativus এ গাছ লম্বায় প্রায় ৩০ সে.মিটার হয়। প্রতি ফুলে ৩টা স্ত্রী অঙ্গ (Stigma) থাকে, তবে তাতে পুরুষ অঙ্গ (Anther) থাকে মাত্র ৩টা। খাবার সু-স্বাদু করার জন্য বিশেষ করে বিরিয়ানী, কাচ্চী, জর্দা ও কালিয়াসহ নানা পদের দামী খাবার তৈরীতে জাফরান ব্যবহার করা হয়।

ইউরোপিও ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশেই জাফরান চাষ প্রচলন আছে। আফগানিস্থান, ইরান, তুরস্ক, গ্রীস, মিশর, চীন এ সব দেশে কম বেশি জাফরানের চাষ হয়ে থাকে। স্পেন ও ভারতের কোন কোন অংশে বিশেষ করে কাশ্মীরে এ ফসলের চাষ অনেক বেশি। তবে অন্য দেশের তুলনায় স্পেনে জাফরান উৎপাদন পরিমাণ অত্যাধিক।

রপ্তানীকারক অন্যতম দেশ হিসাবেও স্পেন সুপরিচিত। বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ জাফরান স্পেন রপ্তানী করে থাকে। যে সব দেশ স্পেন থেকে জাফরান আমদানী করে তাদের মধ্যে জার্মান, ইতালি, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, ইউকে ও ফ্রান্স অন্যতম। ফুটন্ত ফুলের গর্ভদন্ড (স্টিগমা) সংগ্রহ করে তা থেকে জাফরান প্রাপ্তি একটা ব্যয় বহুল ও প্রচুর শ্রম নির্ভর (লেবার ইনটেনসিভ) কাজ।

বংশ বিস্তার: গাছের মোথা বা বালব (অনেকটা পেঁয়াজের মত) সংগ্রহ করে তা বংশ বিস্তারের কাজে ব্যবহার করা হয়। এক বছর বয়স্ক গাছ থেকে রোপন উপযোগী মাত্র দু’টা মোথা (ইঁষন) পাওয়া যায়। তবে ৩-৪ বছর পর একেক গাছ থেকে ৫-৭টা মোথা পাওয়া যেতে পারে। নূতন জমিতে রোপন করতে হলে ৩-৪ বছর বয়স্ক গাছ থেকে মোথা সংগ্রহ করে তা জমিতে রোপন করতে হবে। একই জমিতে ৩-৪ বছরের বেশি ফসল রাখা ঠিক নয়। মোথা বা বালব উঠিয়ে নূতন ভাবে চাষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

জমি নির্বাচন ও তৈরি
জমি নির্বাচন ও তৈরি

জমি নির্বাচন: প্রায় সব ধরনের জমিতে জাফরান ফলানো যায়। তবে বেলে-দোঁআশ মাটি এ ফসল চাষে বেশি উপযোগী। এঁটেল মাটিতে জাফরানের বাড় বাড়ন্ত ভাল হয় না, তবে এ ধরনের মাটিতে কিছু পরিমান বালু ও বেশি পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে এ মাটিকে উপযোগী করা যায়। জলাবদ্ধ সহনশীলতা এ ফসলের একেবারেই নেই।

এ জন্য পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি এ ফসল চাষের জন্য নির্বাচনে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। মাটির পি এইচ ৬-৮ হলে বেশি ভাল হয়। ছায়া বা আধা ছায়ায় এ ফসল ভাল হয় না। পর্যাপ্ত রোদ ও আলো-বাতাস প্রাপ্তি সুবিধা আছে এমন স্থানে এ ফসল আবাদ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিবারিক প্রয়োজন মেটাতে সাধারণত বাগানের বর্ডার এলাকাতে এ ফসল চাষ প্রচলন আছে। অনেকে ছাদে, পটে বা ছোট ‘বেড’ তৈরী করে নিয়েও সেখানে সীমিত আকারে জাফরান চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে থাকে। অনেকে এক মিটার চওড়া ও তিন মিটার লম্বা এবং ১৫ সে.মিটার উঁচু বীজতলা তৈরী করে নিয়ে তাতে জাফরান চাষ করে থাকে। এ ব্যবস্থায় পরিচর্যা গ্রহন ও ফুল থেকে স্টিগমা (গর্ভদন্ড) সংগ্রহ করা সুবিধা হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে বীজতলার আকার লম্বায় ৮-১০ মিটার করা হয়।

জাফরান চাষ পদ্ধতি
জাফরান চাষ পদ্ধতি

চাষ পদ্ধতি: তৈরী বীজ তলা সরেজমিন হতে প্রায় ১৫ সে.মিটার উঁচু হবে। প্রতিটা জাফরানের বালব বা মোথা ১০-১২ সে.মিটার দূরত্বে ছোট গর্ত তৈরী করে তা ১২-১৫ সে.মিটার গভীরতায় রোপন করতে হবে। তাতে এ মাপের বীজ তলার জন্য প্রায় ১৫০টা জাফরানের মোথার প্রয়োজন হয়। বর্ষা শেষ হওয়ার পূর্বক্ষণে জুলাই- আগষ্ট মাসে এ ফসলের মোথা বা বালব (ইঁষন) রোপন করা হয়।

শুরুতে বেশি গভীর ভাবে জমি চাষ করে বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমি আগাছা মুক্ত ও লেবেল করে নেয়া প্রয়োজন। জমি তৈরী কালে প্রতি শতক জমিতে পঁচা গোবর/আবর্জনা পঁচা সার ৩০০ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি এবং এমওপি ৪ কেজি প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটির সাথে সমস্ত সার মিশিয়ে হালকা সেচ দিয়ে রেখে দিয়ে দু’সপ্তাহ পর জাফরান বালব রোপন উপযোগী হবে। বসতবাড়ি এলাকায় এ ফসল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

এ ফসল একবার রোপন করা হলে ৩-৪ বছর পর্যন্ত ফুল দেয়া অব্যাহত থাকে। বর্ষার শেষে আগষ্ট মাসে মাটি থেকে গাছ গজিয়ে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দেয়া অব্যাহত থাকে। মে মাসের মধ্যে গাছের উপরিভাগ হলুদ হয়ে মরে যায়। মোথা মাটির নিচে তাজা অবস্থায় বর্ষাকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এ সময় গাছের অবস্থিতি উপরি ভাগ থেকে দেখা যায়না।

গাছের বৃদ্ধি ও ফুল: গাছে শীতের প্রারম্ভে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফুল আসে। বড় আকারের মোথা লাগানো হলে সে বছরই কিছু গাছে ফুল ফুটতে পারে। শীতকালে গাছের বাড় বাড়ন্ত ভাল হয়। শীত শেষে এ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। গাছের বয়স এক বছর হলে অতিরিক্ত ১টা বা ২টা মোথা পাওয়া যায়। তিন বছর পর রোপিত গাছ থেকে প্রায় ৫টা অতিরিক্ত মোথা পাওয়া যাবে, যা আলাদা করে নিয়ে নূতন ভাবে চাষের জন্য ব্যবহার উপযোগী হবে।

জাফরান পরিচর্যা
জাফরান পরিচর্যা

পরিচর্যা: এ ফসল আবাদ করতে হলে সব সময় জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে হালকা ভাবে মাটি আলগা করে দেয়া হলে মাটিতে বাতাস চলাচলের সুবিধা হবে এবং গাছ ভালোভাবে বাড়বে। শুকনো মৌসুমে হালকা সেচ দেয়া যাবে। তবে অন্য ফসলের তুলনায় সেচের প্রয়োজনীয়তা অনেক কম। বর্ষায় পানি যেন কোন মতে জমিতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানি জমে থাকলে রোপিত বালব পঁচে যাবে।

আপদ ও রোগ বালাই: এক প্রকারের ইঁদুর, চিকা ও খরগোস জাফরানের পাতা, ফুল এমনকি গাছের মোথা খেতে পছন্দ করে, মোথা যত খায় নষ্ট করে তার দ্বিগুণ। এ জন্য এ ধরনের উপদ্রব দেখা গেলে প্রয়োজনীয় ফাঁদ ব্যবহার করে অথবা মারার জন্য ঔষুধ ব্যবহার করে তা দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।

গাছ ঢলে পড়া রোগ: এক ধরনের মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাকের (পিথিয়াম, রাইজোক টোনিয়া) আক্রমণে গাছের গোড়া নরম হয়ে গাছ বাদামী রং ধারন করে গাছ হেলে পড়ে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে লগন/রিডোমিল-গোল্ড অথবা কার্বোন্ডাজিম দলীয় ছত্রাক নাশক (জাষ্টিন/ব্যাভিস্টিন) স্প্রে করে সুফল পাওয়া যাবে।

শিকড় পচা রোগ: এটা জাফরানের খুব ক্ষতিকর রোগ। এ রোগের আক্রমণে শিকড় পঁচে গাছ মারা যায়। এ রোগ যথেষ্ট ছোঁয়াচে, এ জন্য বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা দরকার এবং আক্রান্ত জমিতে দু-এক বছর জাফরান চাষ করা যাবে না। একই বাগানে ৩-৪ বছর ধরে জাফরান আবাদ অব্যাহত রাখা হলে এ রোগের উপদ্রব বাড়ে। এ জন্য তিন বছর ফসল নেয়ার পর চতুর্থ বছর মোথা উঠিয়ে নিয়ে নূতন ভাবে অন্য জমিতে এ ফসল চাষ ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তী ২ বছর এ রোগাক্রান্ত জমিতে আর জাফরান চাষ করা উচিত হবে না।

জাফরান সংগ্রহ
জাফরান সংগ্রহ

জাফরান সংগ্রহ: রোপনের প্রথম বছর সাধারণত ফুল আসে না। তবে জাফরানের রোপিত বালব আকারে বেশ বড় হলে সে বছরই জাফরান গাছ থেকে মাত্র একটা ফুল ফুটতে পারে। পরের বছর প্রতি গাছে পর্যায়ক্রমে ২-৩ টা ফুল আসবে। দু’বছরের গাছে ৪-৫টা এবং তিন বছরের গাছে ৭-৮টা ফুল দিবে। জাফরানের স্ত্রী অঙ্গ ৩টা থাকে এবং পুরুষ অঙ্গ ও ৩’টা থাকে। গাছে অক্টোবর মাস থেকে ফুল দেয়া আরম্ভ করে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।

তবে এ ফুল ফোটা মৌসুমী তাপমাত্রার উপর অনেকটা নির্ভর করে। ফুটন্ত ফুলের গন্ধের মাত্রা কিছুটা তীব্র। ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভদন্ড (ঝঃরমসধ) গাছ থেকে ছেঁটে সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ দন্ডের অগ্রভাগের অংশ তুলনায় চওড়া বেশি বা মোটা হয়। এ অংশের রং গাঢ় লালচে হয়। নীচের অংশ অনেকটা সুতার মত চিকন এবং হালকা হলুদ রঙের হয়। উপরের অংশ জাফরান হিসাবে ব্যবহৃত হয়, নিচের চিকন অংশের গুণাগুণ তেমন ভালো হয় না।

সংরক্ষণের আগে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা ভালোভাবে শুকানো হয়। অন্যথায় জাফরান বেশি দিন রাখা যাবে না, প্রকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের স্টিগমার বা গর্ভদন্ডের প্রয়োজনীয় অংশ কেঁচি দিয়ে বা অন্য ভাবে ছেঁটে নিয়ে তা চওড়া একটা পাত্রে পরিষ্কার কাগজ বিছিয়ে নিয়ে তার উপর সংগৃহীত জাফরান রোদে শুকানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এ সময় রোদে দেয়ার জন্য জাফরান সংরক্ষিত পাত্রটা কিছু উঁচু স্থানে টেবিল/টুলে রাখতে হবে এবং কোন মতেই যেন বাতাস বা অন্য কোন প্রাণীর উপদ্রবে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জাফরান শুকানোর জন্য এক ধরনের যন্ত্র (ডেসিকেটর বা ড্রায়ার) ব্যবহার করা হয়। জাফরান সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজ অতি ধৈর্য্যরে সাথে করতে হয় যা অনেকটা চা সংগ্রহের মত। ফসল সংগ্রহ, পরবর্তীতে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন এ কাজগুলো উৎপাদনকারী সব দেশেই মহিলারা করে থাকে।

এ দেশেও এ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদনের জন্য আগ্রহী মহিলাদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া অতি জরুরী হবে। দু-তিন দিন পড়ন্ত রোদে শুকানোর পর তা আর্দ্রতা রোধক পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। কড়া রোদে বা বৃষ্টিতে ভেজার আশঙ্কা থাকলে বাড়ীর বারান্দায় বা জানালার ধারে সুরিক্ষত স্থানে এ মূল্যবান জাফরান শুকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবধানতা: জাফরান অত্যান্ত দামী ফসল। এ জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা এতে ভেজাল দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করার অহরহ দৃষ্টান্ত আছে। ক্রেতাকে অবশ্যই জাফরান ক্রয় কালে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সব চেয়ে ভাল হয় বাড়ির ছাদে বা সবজী বাগানে কিছু সংখ্যক গাছ লাগিয়ে নিজেই উৎপাদন করা বা উৎপাদনে অন্য কাউকে উৎসাহিত করে সেখান হতে নিজ প্রয়োজন মেটানো।

জাফরান চাষে করণীয়
জাফরান চাষে করণীয়

জাফরান চাষে করণীয়: প্রত্যেক হর্টিকালচার সেন্টারে সুবিধামত স্থানে ২-৩টা স্থায়ী বীজ তলায় এ দামী গুরুত্বপূর্ণ হাইভ্যালু ফসলের আবাদ ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক। পার্শ্ববর্তী যে কোন দেশ থেকে দু-একশত জাফরান বালব সংগ্রহ করে চাষের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। জাফরান বালব সংগ্রহের ক্ষেত্রে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তা প্রত্যেক হর্টিকালচার সেন্টারে বিশেষ করে নূরবাগ জার্মপ্লাজম হর্টিকালচার সেন্টারে চাষ ব্যবস্থা নিয়ে মাতৃ বাগানের উৎস সৃষ্টি করতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

অন্যান্য

মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
ধান চাষ

ধান চাষ

বোরো ধানের পরিচর্যা

  • ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
  • পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
  • ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।

গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ

  • গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
  • উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।
গম চাষ
গম চাষ

গম চাষ

  • গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
  • ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।
ডালশস্য
ডালশস্য

ডালশস্য

  • মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
  • আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।

তৈলবীজ চাষ

সূর্যমুখী এবং সয়াবিন

  • বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
  • সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
সবজি চাষ
সবজি চাষ

সবজি চাষ

গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন

  • লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
  • আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।

শীতকালীন সবজি সংগ্রহ

  • বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।

ফল চাষ

  • আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
মৎস্য চাষ
মৎস্য চাষ

মৎস্য চাষ

  • পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
  • মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
  • পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।
গবাদি পশু পালন
গবাদি পশু পালন

গবাদি পশু পালন

  • গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
  • গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।

মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ফসল

মসুর ডাল চাষের আধুনিক কৌশল

মসুর ডাল চাষের আধুনিক কৌশল
মসুর ডাল চাষের আধুনিক কৌশল

মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। মাছে ভাতে বাঙালী এখন ডালে ভাতে বাঙালী । আর মসুর ডাল হচ্ছে সকলের প্রিয় ডাল। মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে খাদ্যশক্তি ও প্রোটিন রয়েছে।

উপযুক্ত মাটি: সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ মাটি মসুর চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।

জমি তৈরি: জমি ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে সমান করে তৈরি করতে হবে।

মসুর ডাল চাষের উপযুক্ত মাটি ও জমি তৈরি
মসুর ডাল চাষের উপযুক্ত মাটি ও জমি তৈরি

বীজ বপন পদ্ধতি: আমাদের দেশে বেশির ভাগ স্থানে ছিটিয়ে বীজ বপন করে থাকে। তবে সারি করে বীজ বপন করলে ভাল হয়। সারিতে বপন করলে আগাছা দমন, পানি সেচ ও নিষ্কাশণ ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সহজ হয়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দুরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার রাখলে ভাল হয়। প্রতি হেক্টরে ৩০-৩৫ কেজি বীজের দরকার। ছিটিয়ে বীজ বপন করলে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হয়।

বীজ বপনের সময়: কার্তিক মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর মাসের শেষ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ) পর্যন্ত মসুর বীজ বপন করার উত্তম সময়।

সার ব্যবস্থাপনা: জমিতে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ।
সারের নাম হেক্টর প্রতি
১. ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি
২. টিএসপি ৮০-৯০ কেজি
৩. এমপি/পটাশ ৩০-৪০ কেজি
৪. অনুজীব সুপারিশমত।

মসুর ডাল চাষের বীজ বপন পদ্ধতি ও সার ব্যবস্থাপনা
মসুর ডাল চাষের বীজ বপন পদ্ধতি ও সার ব্যবস্থাপনা

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: সম্পূর্ণ সার জমি শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। যে জমিতে পূর্বে মসুর চাষ করা হয় নাই প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অনুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পরিচর্যা: বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানী দ্বারা আগাছা দমন করা যেতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

মসুর ডাল চাষের পোকা-মাকড়, রোগ বালাই ও ফসল সংগ্রহ
মসুর ডাল চাষের পোকা-মাকড়, রোগ বালাই ও ফসল সংগ্রহ

পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই: মসুরের গোড়া পচাঁ রোগ হলে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম (০.২৫%) মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
মসুরের মরিচা রোগ হলে অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী বারি মসুর-৩, বারি মসুর-৪ জাতের চাষ করতে হবে। এছাড়া টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) ১২-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
মসুরের স্টেমফাইলাম ব্লাইটরোগ হলে অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া রোভরাল ডব্লিউপি নামক ছত্রাক নাশক (০.২%) ১০দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ– মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র (মার্চ) মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

বীজ সংরক্ষণ: বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতার পরিমাণ আনুমানিক ১০%এর নিচে রাখতে হবে। তারপর টিনের পাত্র ও পলিথিনের ব্যাগ বা চটের ব্যাগ অথবা আলকাতরার প্রলেফ দেওয়া মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ