আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

শাকসবজি

পুঁইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!

🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

পুঁইশাক চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেনঃ

সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে। আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে। পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। তাই শীতে সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকে সেই সময় বীজ বপনকরা ভাল। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়। কখনও কখনও বেডে চারা তৈরি করা হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা হয়। চারা দু সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায় বা ফাঁকা জায়গা পূরণ করা যায়। সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫-২.৫ কেজি বীজ লাগবে।

উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ

জমির আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।

 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

পুঁইশাক চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনাঃ

ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।

 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

পুঁইশাক চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ

বর্ষায় সাধারনত সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে।


পুঁইশাক চাষে আগাছা ও নিড়ানিঃ

আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা ২৫-৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়।

 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

পোকামাকড় ও রোগদমনঃ

পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়াও আরও কয়েকধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
পুঁইশাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাক খাওয়াও হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বের হয়।


পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি এবং হেক্টোর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টন ।

  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

    🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

    🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

    🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

    🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬
  • 🍃পুইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!🥬

এগ্রোটেক

টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন

টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন
টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন

নানা ধরনের সবজি উৎপাদনের জন্য আমাদের মাটি খুবই উপযোগী। শীত ও গ্রীষ্মকালীন চাষ করা যায় এমন সবজির তালিকাটাও বেশ বড়। কিন্তু নানা কারণে আমাদের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সবজি চাষের জন্য বরাদ্দ থাকে রান্না বা গোয়াল ঘরের পেছনের এক চিলতে জমি। অথচ পুষ্টি চাহিদার কথা মাথায় রাখলে সবজি চাষের কথা ভাবতেই হবে। এজন্য সত্যি বলতে কি কম জমি কাজে লাগিয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণের একমাত্র উপায় সারা বছর সবজির নিবিড় চাষ

আমাদের দেশে বেশির ভাগ সবজি উৎপাদন হয় রবি মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে। খরিফ মৌসুম অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় সবজি চাষ খুব কম হয়। ফলে বাজারে এ সময় সবজির দাম থাকে আকাশ ছোঁয়া। বিশেষ করে মে থেকে জুলাই মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও খরার কারণে সবজির উৎপাদন কম হওয়ার জন্য বাজার মূল্য বেশি থাকে।

টানেল চাষাবাদ কি(Tunnel agriculture):

মৌসুমে বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় চাষি ভাইয়েরা ন্যায্য মূল্য পান না। তাই মৌসুম শুরুর আগেই যদি আগাম সবজি উৎপাদন করে বাজারজাত করা যায়, তাহলে দ্বিগুণেরও বেশি দাম পাওয়া যায়। যে কৌশল অবলম্বন করে সারা বছর সবজি চাষ করা বা আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদন করা যায় তার নাম ‘টানেল টেকনোলজি”(Tunnel technology) ।

প্রকৃত মৌসুম ছেড়ে অন্য মৌসুমে সবজি চাষ করার জন্য এই কৌশলের কোনো জুড়ি নেই। তবে এই কৌশলের মাধ্যমে শীতকালীন সবজিকে গ্রীষ্মকালে চাষ করা কঠিন। কারণ শীতকালীন সবজি চাষের জন্য যে ধরনের তাপমাত্রা প্রয়োজন সেই ধরনের তাপমাত্রা কৃত্রিম পরিবেশে তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। তবে এই কৌশলের মাধ্যমে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন সবজিকে শীতকালে চাষ করা খুবই সহজ। কারণ প্লাস্টিক ছাউনি ব্যবহারের মাধ্যমে শীতকালে খুব সহজেই সৌরশক্তি সঞ্চয় করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে নেয়া যায়, যা শীতকালে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের জন্য যথেষ্ট।

কি কি সবজি উৎপাদন করা যায়(Vegetables farming):

টানেল টেকনোলজি বা ছাউনি পদ্ধতি ব্যবহার করে যেসব সবজি খুব সহজেই চাষ করা যায় সেগুলো হলো- শসাজাতীয় সবজি, টমেটো (Tomato),পালংশাক, পাতাকপি, ফুলকপি, শিম (Bean) ইত্যাদি। এই কৌশলে একজন চাষি আগাম সবজি চাষ করে প্রকৃত মৌসুমের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলের চাষি ভাইয়েরা সবজি চাষ করে আসছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।


টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন
টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন

টানেলের প্রকারভেদ(Types of tunnel):

নিচু টানেল তৈরি

এ ধরনের টানেল তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ। টানেলের দৈর্ঘ্য হতে হবে ৯৮.৪ ফুট এবং চওড়ায় হতে হবে ১৪.৭৬ ফুট। টানেলের ভেতরের মাঝ বরাবর উচ্চতা হবে ৭ ফুট এবং পাশের উচ্চতা হবে ৫ ফুট। সেচ ও পানি নিকাশের জন্য দুই বেড বা টানেলের মাঝখানে ৬ ইঞ্চি গভীরতার ২ ফুট চওড়া নালা রাখতে হয়। তারপর স্বচ্ছ কালো বা নীল রঙের পলিথিন দিয়ে টানেলটি নৌকার ছইয়ের মতো ঢেকে দিতে হয়।

উঁচু টানেল তৈরি

এ ধরনের টানেল তৈরির প্রধান উপকরণ স্টিল ফ্রেম বা বাঁশ। টানেলের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১৩০ ফুট এবং চওড়ায় হতে হবে ৩২ ফুট। টানেলের ভেতরের মাঝ বরাবর উচ্চতা হবে ১২ ফুট এবং পাশের উচ্চতা হবে ১০ ফুট। সেচ ও পানি নিকাশের জন্য দুই বেড বা টানেলের মাঝখানে ৬ ইঞ্চি গভীরতার ৩ ফুট চওড়া নালা রাখতে হয়। চারা বা বীজ থেকে বীজের দূরত্ব রাখতে হয় ১.৫ ফুট। এরপর স্বচ্ছ কালো বা নীল রঙের পলিথিন দিয়ে টানেলটি নৌকার ছইয়ের মতো ঢেকে দিতে হয়।

টানেল পদ্ধতিতে চাষের জমি তৈরী(Land preparation):

এই পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য যে জমিটি বাছাই করা হয় তা অবশ্যই উর্বর হতে হয়। মাটির পিএইচ থাকতে হয় ৫ থেকে ৭ এর মধ্যে। টানেল তৈরির পর জমি কোদাল দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে ভালোভাবে চাষ বা কর্ষণ করে প্রতি টানেলে পর্যাপ্ত জৈব সার, ২.৫ কেজি খৈল, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম এবং এমওপি ৭০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা গজানোর দুই সপ্তাহ পরে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এগুলো সম্পন্ন হলে চারা বা বীজ রোপণের আগে বেড তৈরি করে নিতে হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে টানেলপ্রতি ২০০ গ্রাম পালংশাকের বীজ বুনলে ১ মাস পর অর্থাৎ আষাঢ় মাসে ফসল তোলা যায়।

কৃষকদের লাভ(Farmers profit):

টানেল পদ্ধতিতে অমৌসুমে সবজি চাষ করে পৃথিবীর অনেক দেশ বিশেষ করে ভারত প্রতি বছর নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর সবজি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। আমাদের দেশের চাষিদের যদি সবজি চাষের এই কৌশল সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে তাহলে আমাদের দেশও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা  আয় করতে পারে। এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে কৃষকবন্ধুরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হয়ে থাকেন অনেক

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শাকসবজি

মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা

🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔
🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔

মেটে আলুর উপকারিতা

মেটে আলু কন্দালজাতীয় ফসল। আমাদের দেশে এটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষবাস তেমনটি দেখা যায় না, তবে প্রতিটি জেলায় বাড়ির চারপাশে, গাছের নিচে, মাচায়, আঙিনায়, বেড়ার ধারে এর চাষাবাদ হতে দেখা যায়। মেটে আলু গরম আবহাওয়ায় ভালো জন্মে।  ঠান্ডায় গাছ বাড়ে না, শীতে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। হালকা দো-আঁশ মাটি বেশি উপযোগী। এ গাছ আংশিক ছায়াতে ভালো হয়। জীবিত গাছের জন্য মাচা, জাংলা, বেড়া এসবের প্রয়োজন কারণ এটি একটি লতানো গাছ। অনেক ক্ষেত্রে জাংলা বা মাচার জন্য অতিরিক্ত খরচ পড়ে না এবং বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত স্থান বা রাস্তার ধারে গাছের নিচেও চাষাবাদ হতে দেখা যায়।এটি ওল, গোল আলু এসব সবজির মতোই ভর্তা, মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। সুতরাং এর চাষ বিষয়ে একটু সচেতন হলে সবজির ঘাটতি মেটাতে, বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই এর চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেটে আলু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের খুবই ভালো উৎস। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে। 

গাছ  আলুটি একবীজপত্রী লতানো উদ্ভিদ। এই আলু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত লাভ করেছে। যেমন- গড় আলু, মেটে আলু, গুইচ্যা আলু, লেমা আলু, ধুসড়ী আলু, আলতাপাট, চুবডি আলু, হরিণখালি, মাছআলু, হাতি পায়া, মৌ আলু-মঘু আলু ইত্যাদি নামকরণে বেশি হলেও জাত ৪-৫টির মতো আছে বলে জানা যায়। জাতভেদে মাটিরনিচে প্রতিটি আলু ২ কেজি থেকে ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব কোনটি ডিম্বাকৃতি, লম্বাটে, হাতির পায়ের ন্যায়, হরিণের মাথার মতো ইত্যাদি আকারে হয়ে থাকে। জাতভেদে পিংক কালার, ধূসর/মেটে রঙের আলু হয়। মাটির নিচের আলু ছাড়াও লতানো গাছে ডিম্বাকৃতি ও লম্বাটে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের অনেক আলু ঝুলন্ত অবস্থায় ধরে থাকে। লতায় ধরে বলে একে কোনো কোনো এলাকায় পাতাশি নামে পরিচিত। এই পাতাশি বীজ হিসেবে, সবজি হিসেবে এবং পুড়িয়ে বেশ মুখরোচক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সামান্য আঠালো এবং অল্পতেই সিদ্ধ হয় এরূপ জাতের আলু খেতে সুস্বাদু, চাহিদাও বেশি।

🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔
🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔

যেহেতু মেটে আলু পুরো বর্ষা মৌসুমজুড়ে থাকে বিধায় ভারি বৃষ্টিপাতেও পানি দাঁড়াবে না আবার সেচের সুব্যবস্থা আছে এরূপ জমি/স্থান নির্বাচন করতে হয়।মেটে আলুলাগানোর অনৱত এক মাস আগে ফাল্গুনে চাষ দিয়ে পুরো জমিতে ভালোভাবে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ৩-৪ হাত দূরত্বে ২ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট গভীর গর্ত করে ২০-২৫ দিন ধরে মাটি রোদে শুকানোর পর জৈবসার+ছাই চিটা একত্রে মিশিয়ে প্রতিটি গর্ত ভরাট করতে হবে। প্রতিটি গর্তে রাসায়নিক সার-ফসফেট ৫০ গ্রাম ও পটাশ ৫০ গ্রাম দিয়ে রস না থাকলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ১০-১২দিন পর মেটে আলুর (মাটির নিচের) মুখিকন্দ অথবা লতায় যেটি ধরে ‘পাতাশি’তা বীজ হিসেবে বপন করতে হবে। জীবিত গাছ আশ্রয়দাতা হলে গাছের গোড়ার ২ হাতের মধ্যে মাদা তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের নালার ব্যবস্থা করতে হবে।

🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔
🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔

মেটে আলু লাগানোর নিয়ম


বীজ শোধন করে লাগালে এর প্রধান এবং একমাত্র রোগ, গোড়া পচা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের অনুমোদিত যে কোনো ওষুধ ২ গ্রাম অথবা ম্যানকোজেব গ্রুপের অনুমোদিত যে কোনো ওষুধ ৩ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে, বীজ তুলে ছায়ায় শুকিয়ে গর্তে লাগাতে হবে। এছাড়াও কাঁচা গোবর পানিতে গুলে ২ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম/ম্যানকোজেব দিয়ে তার মধ্যে বীজ/কন্দ ডুবিয়ে তুলে ছায়ায় শুকিয়ে লাগালে তাড়াতাড়ি অঙ্কুরোদগম এবং শোধিত হয়। 

মুখী উপরদিকে রেখে মাটির উপরের স্তর থেকে ৪ আঙুল নিচে বীজ/কন্দ লাগাতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে। এক্ষেত্রে লাগানোর স্থানে খড়/কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া যেতে পারে। হাফ কেজি থেকে ২ কেজি ওজনের বীজ/কন্দ লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রথম বছর ফসল না তুলে রেখে দিলে পরবর্তী বছর এ থেকে সুঠাম চারা বের হয় এবং ওই চারা লাগালে ফলনও বেশি হয়। মার্চ এপ্রিল (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে এ আলু বপনের উপযুক্ত সময়।

🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔
🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔

চারা গজানোর পর থেকেই জমি/গাছের মাদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে গোড়ার মাটি বেশি আলগা না হয় এবং দাওয়ালি/কুরনি বা কোদালের আঘাত যেন গাছে না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ এতে গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা এবং গোড়া পচা রোগে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।চারা লাগানোর এক মাস পর পর ২-৩ বার ইউরিয়া ৫০ গ্রাম এবং পটাশ ৫০ গ্রাম হারে প্রতিটি গাছের গোড়ার চারপাশের মাটিতে ২-৩  আঙুল গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। লতানো গাছের অবলম্বন, মাচা যত ভালো হবে এবং গাছ যত প্রসারিত হতে পারবে মাটির নিচের আলু তত বড় হবে। 

মেটে আলুতে রোগ এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে কোনো কোনো ৰেত্রে শোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এক্ষেত্রে কীটনাশক হিসেবে সেভিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগের ৰেত্রে মেটে আলুতে ছত্রাকের কারণে ডাঁটায় /লতায় প্রথমে বাদামি দাগ হয় এবং পরে গোড়া/পাতা পচে ঢলে পড়ে। এক্ষেত্রে কপার অঙিক্লোরাইড গ্রুপের ওষুধ ৪ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ার  মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শামুকও ক্ষতি করে থাকে। হাত দিয়ে শামুক মেরে এর হাত থেকে সহাজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।মেটে আলু তোলা/সংগ্রহের সঠিক সময় মেটে আলুর জীবনকাল ৮-১০ মাস।

🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔
🌱মেটে আলুর চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা🥔

কার্তিক-অগ্রহায়ণে ঠান্ডা পড়তে শুরু করলে পাতা হলদে হয়ে পুরো গাছ শুকিয়ে যায়। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে আলু তোলা উচিত। এতে আলু পরিপক্বতার কারণে বীজের মান উন্নত এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মেটে আলুর গোড়ার মাটি সরিয়ে মুখের অংশ ঠিক রেখে নিচের দিক থেকে খাওয়ার জন্য কিছুটা আলু কেটে নেয়া যায়। এতে গাছ মরে যায় না বরং ওই কাটা অংশে আলু  আগের অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে বড় হতে থাকে।  উন্মুক্ত জায়গায় চাষ করে মাদাপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত গড় আলু পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও জাংলা/মাচায় চাষেও সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি মেটে আলুর গড় ফলন ৩-৪ টন হয়ে থাকে।

অন্য সবজির তুলনায় এই সবজি উৎপাদনে ঝুঁকি, রোগবালাই অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে মানুষের শারীরিক পুষ্টিহীনতা দূর করতে, সবজির ঘাটতি মেটাতে, পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বিষমুক্ত সবজি পেতে ও আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নে এ সবজিটি বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। আমি একজন চাষি হিসেবে মনে করি মেটে আলু চাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান এবং উৎপাদনমুখী উন্নয়ন করা সম্ভব। মেটে আলু আদি কাল থেকে ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে প্রসার-প্রচার হয়নি বিধায় ব্যাপকভাবে এর চাষের উন্নয়নও ঘটেনি। অথচ একটু সচেতন হলে অতি সহজে কম খরচে সহজলভ্য সবজি মেটে আলু চাষ করা যায় যা কিনা পুষ্টির অভাব পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শাকসবজি

মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

পুষ্টিমূল্যঃ শুকনো মরিচে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ থাকে।

ভেষজ গুণঃ নিয়মিতভাবে কাঁচা মরিচ খেলে মুখে ‘ঘা’ হয় না।

ব্যবহারঃ রান্নাবান্না ও মুখরোচক খাবার তৈরি ছাড়াও মরিচ বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে মরিচের আচারও করে থাকেন।

উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ প্রচুর আলোবাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দোআঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

জাত পরিচিতিঃ ঝাল ও মিষ্টি এ ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কামরাংগা, আকালী ও কালো মরিচ খুব ঝাল।

চারা তৈরিঃ জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে ও আগাছা বাছাই করে ৩Í১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্রআশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুনচৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।

চারা রোপণঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুতির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

সার ব্যবস্থাপনাঃ মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি  এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য়   কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।

চারা রোপণঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুতির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি  এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য়   কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।

জীবন চক্রঃ এ পোকা সাধারনত পাতার নিচের দিকে অতি ক্ষুদ্র সাদা ডিম পাড়ে। ডিম পরে বাদামী রং ধারণ করে ও ৩১৭ দিন পর ডিম ফুটে নিম্ফ (বাচ্চা ) বের হয়। বাচ্চা সবুজাভ সাদা, ২৬ সপ্তাহ নিম্ফ অবস্থায় থেকে  পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। পূর্নাঙ্গ পোকা ১০১৫ দিন বাঁচে।

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

ব্যবস্থাপনাঃ হলুদ রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটারের ৫ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবান মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

  • অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

পোকার নামঃ থ্রিপস

ভূমিকাঃ এটি একটি ক্ষুদ্র পোকা। আক্রমণ বাহির হতে বোঝা যায় না বিধায় ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং মাঝে মাঝে ক্ষেত পরিদর্শন করে ফসলের অবস্থা দেখে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকা চেনার উপায়ঃ থ্রিপস অতি ক্ষুদ্র একটি পোকা যা খালি চোখে কোন মতে দেখা যায়। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে অধিক আক্রমণে পাতা কুঁচতে যায় এমনকি গাছ থেকে কোন ফুল ফল নাও আসতে পারে। এ পোকা ভাইরাস রোগও ছড়ায়।

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

ক্ষতির নমুনা

  • নিম্ফ (বাচ্চা) ও পূনাঙ্গ পাতার রস চুষে খায় বলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং অনেকটা নৌকার মত দেখায়।  
  • পোকার আক্রমনে পাতা বাদামী রং ধারন করে।
  • নতুন ও পুরাতন উভয় পাতায় আক্রমন করে।

অনুকুল পরিবেশঃ উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া ।

জীবন চক্রঃ পূর্ণ বয়স্ক পোকা ৪৫৫০টি ডিম পাড়ে। ৫৬ দিনে ডিম থেকে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয় এবং নিম্ফ ৭৮ দিন পর পূর্নাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। র্পূনাঙ্গ পোকা ৩১ দিন পর্যন্ত বাঁচে। পাতা নাড়াচাড়া করলে এরা উড়ে পালায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার

🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
  • মাকড়সা এ পোকা খায় বিধায় এর সংখ্যা বাড়ানো গেলে সহজেই থ্রিপস দমন করা যায়।
  • অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ ।

পোকার নামঃ জাব পোকা

ভূমিকাঃ র্পূনাঙ্গ ও নিম্ফ  (বাচ্চা) পাতা, ফুল, কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। অধিক আক্রমনে গাছের বাড় বাড়তি কমে যায় ও ফলন কম হয়। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

পোকা চেনার উপায়ঃ জাব পোকা অতি ছোট, দেহ নরম ও উজ্জ্বল কাল রংয়ের হয়ে থাকে। পাখাওয়ালা জাব পোকা উড়তে পারে কিন্তু নিম্ফ বা পাখা বিহীন উড়তে পারে না । এরা দল বদ্ধ ভাবে বাস করে।

ক্ষতির নমুনাঃ পূর্নাঙ্গ ও নিম্ফ পাতা, ফুল কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়।

  • পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি ও ফুল, ফল ধারণ বাধাগ্রস্থ হয়  
  • এ পোকা থেকে নিঃসৃত মধুরসে কালো শুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়।

অকুকুল পরিবেশঃ বাতাসে আদ্রতা বেশী ও মেঘলা আকাল

জীবন চক্রঃ এ পোকা কোন যৌন মিলন ছাড়াই ১০১২ দিনের মধ্যে ৮৩০ টি নিম্ফ জন্ম দিতে পারে। নিম্ফ অবস্থা ৫৮ দিন থাকে। পাখা বিহীন জাব পোকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা দিতে পারে। এরা সারা বছর বংশ বিস্তার করে।

ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমনের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা।

  • লেডি বার্ড বিটলের পূর্নাঙ্গ ও কীড়া (গ্লাব) এবং সিরফিড ফ্লাই এর কীড়া জাব পোকা খায় বিধায় এদের সংরক্ষণ ও সংখ্যা বাড়ানো গেলে জাবপোকা অতিদ্রুত খেয়ে ফেলে ।
  • অনুমোদিত কীট নাশক ব্যবহার করা
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

পোকার নামঃ ফলছিদ্রকারী পোকা

ভূমিকাঃ এ পোকার মথ নিশাচর এবং রাতের আলোতে আকৃষ্ট হয়। পোকার কীড়ার আক্রমণে মরিচ ছিদ্র যুক্ত দেখায় ও বাজার মূল্য কমে যায়।

পোকা চেনার উপায়ঃ মা পোকাকে (মথ) সাধারনত রাত ছাড়া দেখা যায় না। কীড়াকে (বাচ্চা) ফলের মধ্যে দেখা যায়। কীড়া লম্বায় প্রায় ২ ইঞ্চি। কীড়ার গায়ের রং কালচে ধূসর থেকে হালকা বাদামী এবং শরীরের উভয় পার্শ্বে লম্বালম্বি হালকা কাল ও বাদামী রংয়ের দাগ দেখা যায়।

ক্ষতির নমুনাঃ কীড়া ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়।

  • একটি পোকা একাধিক ফলে আক্রমন করতে পারে এবং ফলের ভেতর কীড়ার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যায়।
  • আক্রান্ত ফল অসময়ে পাকে।

অনুকুল পরিবেশঃ বিকল্প পোষকের উপস্থিতি ।

জীবন চক্রঃ মথ পাতার নিচে ২০০৩০০ ডিম পাড়ে। ৩৪ দিনে ডিম ফোটে কীড়া বের হয়। ছোট কীড়া একত্রে থাকে তবে বড় হলে সারা মাঠ ছড়িয়ে পড়ে। কীড়া ১৪১৬ দিন পর পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলি ২৩ ইঞ্চি মাটির গভীরে থাকে। ১০১৫ দিন পর পুত্তলি হতে পূর্ণাঙ্গ মথ বের হয়।  জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ৩০৩৫ দিন লাগে । এরা বছরে ৮বার বংশ বি¯তার করে।

ব্যবস্থাপনাঃ জমি থেকে ডিম ও কীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করা।   

  • প্রতি বিঘায় ১৫ টি হারে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথ মেরে ফেলা।
  • প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরজীবী পোকা; ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ ব্যবহার (প্রতি হেক্টরে ১ গ্রাম ডিম) করা।
  • অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

নামঃ চওড়া মাকড়

ভূমিকাঃ এদের পা ৮ টি বলে মাকড় বলে। বালিকণার মত ক্ষুদ্র বলে দেখা যায় না কিন্তু এদের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।  

মাকড় চেনার উপায়ঃ মাকড় অতি ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না, রং সাদা বা হলদে। এরা পাতার নিচে মধ্য শিরা ঘিরে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। দেহ নরম, ডিম্বাকৃতির। এরা কাঁকড়ার মত দেখায়।

ক্ষতির নমুনাঃ পাতার নীচে থেকে রস চুষে খায় ফলে পাতার শিরার মধ্যকায় এলাকার বাদামী রং ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়।

  • আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং কচি পাতার নীচের দিকে বেঁকে পেয়ালা আকৃতির হয়ে যায় ও পাতা সরু হয়।
  • ব্যাপক আক্রমণে পাতা ভেঙ্গে যায়।
  • ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।

অনুকুল পরিবেশঃ বিকল্প পোষক।

জীবন চক্রঃ স্ত্রী মাকড় পাতার নীচে ৩০৭৬ টি ডিম পাড়ে। ২৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। ২৩ দিন পর কীড়াগুলো নিম্ফে পরিণত হয় এবং ১ দিন পর পূর্ণাঙ্গ মাকড়ে পরিণত হয়।পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী মাকড় ৮১৩ দিন বাঁচে ও পুরুষ মাকড় ৫৯ দিন বাঁচে।

ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে।

  • প্রতি লিটার পানিতে নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিকস্ মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
  • পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অনুমোদিত মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।  
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

রোগের নামঃ ক্ষত, এনথ্রাকনোজ বা ডাইব্যাক

রোগের কারনঃ কলিটোট্রিকাম ক্যাপসিসি নামক ছত্রাক দ্ধারা এ রোগ হয়।

ভূমিকাঃ এ রোগের আক্রমণে গাছ বড় হয় না, পাতায় দাগ পড়ে ও ডগা থেকে শুরু হয়ে পুরো গাছ মরে যেতে পারে। মরিচে আক্রমন হলে মরিচের ফলন কম হয় এবং রং বিবর্ণ হওয়ায় বাজার মূল্য কমে যায়।

ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের পাতা, ডাল, ফুল ফল আক্রান্ত হয়।

  • আক্রান্ত পাতা ঝরে যায় ও ডগা উপর হতে মরতে শুরু করে।  
  • আক্রান্ত গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে, দুর্বল হয়ে যায় ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
  • ফলের উপর গোলাকার কাল দাগ পড়ে এবং দাগের চারিদিকে গাঢ় হলুদ রিং বা বলয় থাকে। এ দাগ বৃদ্ধি পেয়ে ফল পঁচিয়ে দেয় ও ঝরে পড়ে।        
  • আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায।

অনুকুল পরিবেশঃ আদ্র আবহাওয়া ও অধিক বৃষ্টিপাত এ রোগ বিস্তারে সহায়তা করে।

বিস্তারঃ গাছের পরিত্যাক্ত অংশ, বিকল্প পোষক হতে বায়ু, পানি, ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। তাছাড়া বীজের মাধ্যমে ও এ রোগের বিস্তার হয়।

ব্যবস্থাপনাঃ সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

  • আক্রান্ত গাছের পরিত্যাক্ত অংশ ধ্বংশ করতে হবে।
  • অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্ধারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে  হবে।
  • ক্ষেতে রোগের আক্রমণ দেখা মাত্র অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

রোগের নামঃ পাতা পঁচা

রোগের কারণঃ চুয়ানিফোরা নামক ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়।

ভূমিকাঃ ক্ষেতে আক্রমণ বেশী হলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এ কারনে রোগের আক্রমনের শুরু থেকেই  সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা প্রশাখা, পাতা ফুল ও ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় পানি ভেজা দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ বৃদ্ধি পায় ও আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারন করে এবং পাতা দ্রুত পঁচে যায়। অনুকুল পরিবেশে ৫৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ মরে যেতে পারে।

অনুকুল পরিবেশঃ উচ্চ তাপ মাত্রা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায় ।

বিস্তারঃ বায়ু, আক্রান্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনাঃ ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ নষ্ট করতে হবে।

  • গাছ আক্রান্ত হওয়া মাত্রই অনুমোদিত ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱
🌶️ মরিচ চাষ: আধুনিক পদ্ধতিতে বেশি ফলন 🌱

রোগের নামঃ লিফ কার্ল

রোগের কারণঃ একপ্রকার ভাইরাস
ভূমিকাঃ যে কোন বয়সের গাছ আক্রান্ত হতে পারে তবে বয়স্ক গাছই বেশী আক্রান্ত হয়। পাতা কুঁকড়িয়ে যায় বলে গাছের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যহত হয় ও ফলন কমে যায়।

ক্ষতির নমুনাঃ

  • আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যায় ও সাধারণ পাতা অপেক্ষা পুরু হয়।  
  • গাছের পর্ব মধ্য ছোট হয় ও গাছ খাট আকারের হয়।
  • ফুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
  • ভাইরাস আক্রান্ত গাছ মরে যায় না তবে পুনরায় স্বাভাবিক ও হয় না ।

অনুকূল পরিবেশঃ বিকল্প পোষকের উপস্থিতি

বিস্তারঃ পোকা দ্বারা এ রোগের বিস্তার ঘটে।

দমনঃ আশে পাশের সোলানেসি পরিবারের অন্যান্য পোষক উদ্ভিদ ধ্বংশ করতে হবে।

অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ ফুল আসার পর ১৫২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন কাঁচা ১০১১ টন ও শুকনো ১.৫২.০ টন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

শাকসবজি

লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প!

🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰
🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰

সবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।

আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।

সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।

🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰
🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰

কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।

সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।

এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰
🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰

পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰
🌱 লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প! 🥬💰

কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি

গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
গ্রামের বাজারে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক, তাঁর এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে

রামের বাজারে প্লাস্টিকের টুলে বসে কচুর লতি বিক্রি করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবু বকর সিদ্দিক (প্রিন্স)। তাঁর এই ছবি একজন ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয় বলে জানালেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের এই সদস্য।

নিজের বৌভাতের জন্য জমানো এক লাখ টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে শ্বশুরবাড়ির এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে খামারের জন্য জমি কিনেছিলেন। পরে ধারদেনাসহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে ২০১৪ সালে সেখানে ‘কৃষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে খামার চালু করেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া তাঁর ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার মতো।

আবু বকরের কৃষিকাজের জন্য মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৮ একর। এর মধ্যে ৩ একর দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা নেওয়া। বিভিন্ন জাতের ছয় হাজার ড্রাগনগাছ রয়েছে তাঁর খামারে। নয়জন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি সেখানে কাজ করছেন অনেক অস্থায়ী শ্রমিক। আবু বকর সিদ্দিক তাঁর নামের আগে ডক্টরেট বা শিক্ষক এসবের চেয়ে ‘শিক্ষিত কৃষক’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন। ড্রাগন চাষের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেই পেয়েছেন ‘ড্রাগন প্রিন্স’ উপাধি।

কৃষি–অন্তঃপ্রাণ আবু বকর সিদ্দিকের ফেসবুকের বেশির ভাগ পোস্টই কৃষিসংক্রান্ত। কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর গত শনিবার ভোরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কেমনে সম্ভব এইভাবে কৃষিকাজ করা?’

নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক
নিজের খামারে আবু বকর সিদ্দিক

ওই ঝড়ের আগের দিন শুক্রবার মুঠোফোনে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। ছবি ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে হাসতে হাসতেই বলেন, ‘আমি তো আর আজ নতুন করে কাজ করছি না। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার কাজ ও ছবি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা হয়েছে। ২০১৬ সালেও একবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাগন ফল বিক্রি করার সময় এমন আলোচনা হয়েছে।’

১৪ মে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে বাবুলের বাজারে প্লাস্টিকের একটি টুলে বসে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। সেই ছবি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরই একজন ছবিটি ফেসবুকে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর আবু বকর যখন ফেসবুকে ঢুকলেন, তখন দেখেন, তাঁকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে
আবু বকর সিদ্দিকের খামার থেকে সংগৃহীত ড্রাগন ফল বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হয়েছে

আবু বকর জানান, কচুর লতি বিক্রির ঘটনার দিন খামারের শ্রমিকদের খাবারের জন্য বাজার করার কথা ছিল। সেই সময় হাতে বাজার করার মতো টাকা ছিল না। যে লোকের কচুর লতি বিক্রি করতে যাওয়ার কথা ছিল, তখন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাই আবু বকর নিজেই স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করার জন্য যান।

তিনি বলেন, ‘আমি বসে থাকলে তো আর কেউ লতি বিক্রি করে দিত না। আমার প্রয়োজনেই আমাকে আমার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ কেজি লতি বিক্রি করে বাজার করে ফিরেছি। কৃষকের জন্য যা স্বাভাবিক কাজ, শিক্ষিত বা নামের আগে ডক্টরেট থাকায় তা যখন আমি করতে গিয়েছি, তখন মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।’

আবু বকরের পৈতৃক বাড়ি ঝালকাঠি। বাবার চাকরি সূত্রে থেকেছেন ঢাকায়। বাবা মারা যাওয়ার আগে গাজীপুরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেই খামার গড়েছেন। আবু বকর ফুলবাড়িয়া ও ঢাকা—দুই জায়গায় যাতায়াতের মধ্যে থাকেন।

আবু বকরের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। তিনি বললেন, ‘চাচা–মামারাও কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাঁরা চাকরি, না হয় ব্যবসা করছেন। বলতে গেলে আমিই প্রথম কৃষিকাজ বেছে নিয়েছি। এ নিয়ে শুরুতে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। তবে এখন পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে ঢাকার উত্তরায় থাকা স্ত্রী মাকসুদা রুমি ও তিন ছেলেমেয়ে এখন আর কোনো আপত্তি করে না।’

এখন খামারের আয় থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি ঢাকায় ভালো স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেশ ভালোভাবেই মেটাতে পারছেন বলে জানান আবু বকর। গত বছর বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে এখানেও তাঁর কৃষি ও খামার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে শুরুতেই বলে নিয়েছেন খামারে যে ছয় মাস কাজ বেশি থাকবে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে (দুই সেমিস্টার) তিনি ক্লাস নেবেন না। আবু বকর জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মানী ভাতা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে দেন।

ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কৃষকদের সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, কৃষিকাজ পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর। কৃষিতে সফল হতে হলে বুদ্ধি ও পরিশ্রম—এ দুটোকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনায় এমএ করেছেন আবু বকর। ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, ২০১৮ সালে কৃষি সাপ্লাই চেইন এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে পিএইচডি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে। তাঁর মতে, কৃষক শিক্ষিত হলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি।

তবে ওই শিক্ষিত কৃষককে লজ্জাটা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কৃষিতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনাই হলো আধুনিক টেকসই কৃষির মূলমন্ত্র।

আবু বকর জানালেন, গত বছর বিভিন্ন জাতের ধান, মাছ, গরুর মাংস, আম, ড্রাগন, মাল্টা, লটকন, লেবু, আনারসসহ প্রায় ২০০ টন কৃষিপণ্য বিক্রি করেছেন। আয় হয়েছিল ৫২ লাখ টাকা। এর বাইরে জৈব সার বিক্রি এবং খামারের মধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে নিজস্ব নার্সারি থেকে ফলের গাছ বিক্রি হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকার মতো। তবে আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতায় আগের তুলনায় কৃষির উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বছরটিতে খামারের মোট খরচ ছিল ৪৭ লাখ টাকা। আস্তে আস্তে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা গেলে লাভের পরিমাণ বাড়বে বলেই আশাবাদী এ কৃষক।

পুরো খামারের কৃষি উৎপাদনে ৮০ শতাংশই জৈব সার ব্যবহার করছেন, আর এ সার নিজেই তৈরি করছেন। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘প্রথমে শতভাগ জৈব সার দিয়েই উৎপাদন শুরু করেছিলাম। কিন্তু এতে করে গাছগুলো ঠিকভাবে পুষ্টি পাচ্ছিল না। তাই সহনীয় মাত্রায় রাসায়নিক ও জৈব সারের সমন্বয়ে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে সব পুষ্টিমান ঠিক রেখে কীভাবে শুধু জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা যায়, তার গবেষণা নিজেই করছি।’ তিনি জানালেন, তাঁর ছোট একটা গবেষণাগারে চারটি জৈব জীবাণু কালচার করছেন। ২০টির বেশি উপাদান দিয়ে উন্নত জৈব সার বানানোর নানা পরীক্ষা চালাচ্ছেন।

আবু বকরের আফসোস, কৃষিকাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁর সময় কম নষ্ট হতো। এখন তাঁকে ঠেকে ঠেকে শিখতে হচ্ছে। আর এই শিখতে আর বুঝতে গিয়েই তাঁর অতিরিক্ত সময় নষ্ট হচ্ছে, টাকা খরচ হচ্ছে। এমবিএ করার পর ভারতের পাঞ্জাবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম করার সুযোগ পেয়েছিলেন আবু বকর। তখন সেখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশেষজ্ঞ-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপের সূত্রে কৃষির প্রতি আগ্রহটা বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০০টি বাণিজ্যিক বাগানের ২০০ জন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন আবু বকর। এই উদ্যোক্তারা আবু বকরের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে চারা নিচ্ছেন। আবু বকরের ভাষায়, এই বাগানমালিকদের অনেকেই তাঁর চেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। এই নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টিতেই তিনি বেশি তৃপ্তি পান।

খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক
খামারে গরুর পরিচর্যায় আবু বকর সিদ্দিক

নতুন কৃষি উদ্যোক্তার জন্য স্বল্প পুঁজির বিষয়টি অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করলেন আবু বকর।

তিনি জানান, শুরুতে কারও কাছে ২০০ টাকা চাইলেও পাওয়া যেত না। আর এখন ওই ব্যক্তিদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাইলেও মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। এ পর্যায়ে আসতে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিজের আরাম–আয়েশ বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা সময়টুকু খামারের পেছনে দিতে হয়েছে।

উত্তরার বাসার বাজারের চেয়ে খামারের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী মেয়ে মুনিবা সিদ্দিক, ১১ বছর বয়সী ছেলে ইয়াফি আবদুল্লাহ সিদ্দিক আর ৫ বছরের ছেলে আদিব আবদুল্লাহকে সামলাচ্ছেন স্ত্রী মাকসুদা।

ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক
ধানখেতে কাজ করছেন আবু বকর সিদ্দিক

আবু বকর বললেন, তাঁর ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্যের লাভের অংশ থেকে একটি তহবিল গঠন করবেন, যা থেকে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।

তিনি বলেন, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান না বলেই অনিশ্চিত কাজে নিজের সন্তানদের তাঁরা কৃষি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান।

আবু বকর জানালেন, গ্রাম্য রাজনীতি মোকাবিলা করেই তাঁকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে। গ্রামের অনেকেই চাননি বা চান না তিনি সেখানে খামার করেন। তবে অনেক নতুন কৃষক তাঁকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।

আবু বকর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে গাছ দেন। নিজের ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা বা যে পরিবারের প্রয়োজন, তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ভবিষ্যৎ খামারে মা ও শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করতে চান। আবু বকরের মতে, এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যাবে, এ ভয় কম থাকে।

জীবনের এই পর্যন্ত আসার পেছনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম চিকিৎসক কবির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা কবিরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। এই পরিবার তাঁকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মানসিকভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে। এই দম্পতির ছেলের বিজ্ঞাপনী ফার্মে আবু বকর কাজ করেছেন। এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন বিয়ের পর বউভাতের খরচের জন্য। তবে বউভাতের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে তখন ওই এক লাখ টাকা এবং শ্বশুরের সহায়তায় জমি কিনে কৃষি নিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এক বছর পর স্বল্প পরিসরে বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছিলেন। তখন স্ত্রী ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের

মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের

টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন

টানেল টেকনোলজির সাহায্যে সব্জি উৎপাদনে ফলন হবে দ্বিগুন

জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান

জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান

মাছের খাবার সংরক্ষণের সঠিক উপায় জেনে নিন

মাছের খাবার সংরক্ষণের সঠিক উপায় জেনে নিন

শাইখ সিরাজ: তাঁর টেলিভিশন অনুষ্ঠান কৃষকদের কাছে নতুন উদ্ভাবন পৌঁছে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখে।

পঞ্চাশে বাংলাদেশ: এক টেলিভিশন তারকা আর দরিদ্র কৃষকের সন্তান এক বিজ্ঞানী যেভাবে পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষি

ছোলার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফসল

ছোলার উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি: পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি অর্থকরী ফসল

🚜🌾জমিতে ড্রাম সিডার যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধা

জমিতে ড্রাম সিডার যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধা

🌼 সহজ উপায়ে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করুন, আপনার বাগানকে রঙিন স্বপ্নে বদলে দিন! 🌸

সহজ উপায়ে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করুন, আপনার বাগানকে রঙিন স্বপ্নে বদলে দিন!

ঈমান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে করণীয়

ঈমান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে করণীয়

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

হিজরতের কঠিন বিপদে যে দোয়া নাজিল হয়েছি

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com