মৎস্য
পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি: আধুনিক প্রযুক্তিতে লাভজনক মাছ চাষ

পাঙ্গাস মাছ চাষ বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং লাভজনক কৃষি উদ্যোগ। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। চলুন, আধুনিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছের চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পাঙ্গাস মাছ চাষের কারণ ও গুরুত্ব
পাঙ্গাস মাছ চাষের মূল কারণ হলো এর দ্রুত বর্ধনশীলতা এবং বাজারে প্রচুর চাহিদা। এটি একটি স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনযোগ্য মাছ, যা দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখছে।
পাঙ্গাস মাছ চাষের সুবিধাগুলো
দ্রুত বৃদ্ধি: মাত্র ৬-৮ মাসের মধ্যে বিপণনের উপযুক্ত আকারে পৌঁছায়।
বাজার চাহিদা: সারাবছরই পাঙ্গাস মাছের বাজারমূল্য ভালো থাকে।
সহজ পরিচর্যা: কম খরচে ও সহজে চাষ করা যায়।
উচ্চ উৎপাদন: এক একর জমিতে বেশি সংখ্যক মাছ চাষ করা সম্ভব।
পাঙ্গাস মাছ চাষের পদ্ধতি
আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাস মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনও ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
পাঙ্গাস মাছের বিভিন্ন জাত
পাঙ্গাস মাঝের জাতগুলোর মধ্যে দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চলুন এদের পরিচয় সম্পর্কে এখন কিছু তথ্য জেনে নেই
দেশী পাঙ্গাস: দেশী পাঙ্গাসের রূপালী রঙের পিঠের দিকে কালচে এবং পার্শ্ব রেখার ওপরে সামান্য ধূসর। এ মাছের দেহে কোন আঁশ নেই। এখনও আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাঙ্গাস সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, বহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। এরা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীসহ প্রধান নদীগুলোতে এর পোনা পাওয়া যায়।
থাই পাঙ্গাস: এদের আদিবাস থাইল্যান্ডে, কম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দেশে। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সনে বিদেশী এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় নাম। দেশী পাঙ্গাসের চেয়ে এ জাত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ মাছটি সর্বোচ্চ ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি
মাছ চাষের পদ্ধতিটি নির্ভর করে পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশেগত অবস্থা, পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, পুঁজি, মানসম্মত পোনা প্রাপ্তি, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে। এসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাষ পদ্ধতিটি কেমন হবে। আজকে আমরা জানব পাঙ্গাস মাছের একক চাষ বা নিবিড় চাষ সম্পর্কে।
পাঙ্গাস মাছের একক বা নিবিড় চাষাবাদ কি?
এ পদ্ধতিতে কম সময়ে বেশি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করা হয়। এক্ষেত্রে আমিষ সমৃদ্ধ কৃত্রিম খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি মুনাফা করা যায়। উন্নত চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ২০ টন পাঙ্গাস উৎপাদন করা সম্ভব। একক চাষে প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১০ সেমি. আকারের ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিগত বছরের পোনা মজুদ করে অধিক উৎপাদন ও বেশি মুনাফা বাড়ানো সম্ভব।

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
পাঙ্গাস চাষের পুকুর নির্বাচন
- পাঙ্গাস চাষের পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। পুকুরের তলা ভালভাবে সমতল করে নিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার।
- পাঙ্গাস চাষের জন্য দোআঁশ মাটির পুকুর সবেচেয়ে ভাল। জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত পানি দেয়া যায় সেজন্য পুকুরের কাছেই গভীর বা অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
- বর্ষায় বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যাতে করে পুকুর ভেঙ্গে না যায় সেজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে ফেলতে হয়।
- সর্বোপরি এমন জায়গায় পুকুরটি বেছে নিতে হবে যেখানে যোগাযোগের সুবিধা ভাল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

পুকুর প্রস্তুতি
পুকর নির্বাচন করার পরের কাজটি হলো পুকুরকে ভালভাবে প্রস্তুত করে নেয়া। এবার জেনে নেয়া যাক পুকুর প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
- পুকুরে নানা প্রকৃতির ও বৈশিষ্ট্যে জলজ আগাছা থাকলে প্রথমেই সেগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- পাঙ্গাস চাষের পুকুরে অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছ যেমন-শোল, বোয়াল, গজার, টাকি, বাইম, মলা, ঢেলা ইত্যাদি মাছকে পাঙ্গাস চাষের আগেই অপসারণ করতে হবে। বিভিন্নভাবেই এদেরকে অপসারণ করা যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে-
- ঘন ফাঁসের জাল বারবার টেনে সব ধরণের অনাকাক্সিক্ষত মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে;
- পুকুরের পানি পরিষ্কার করে এবং সম্ভব হলে তলার মাটি লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে দিতে হবে;
- অনেক সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলেও অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষুসে মাছদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় মৎস্য অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে এদের দমন করা যেতে পারে।
- পুকুরকে মাছ চাষের উপযুক্ত ও টেকসই করতে চুন প্রয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পুকুরের পানিতে অম্লত্বের সমস্য নেই সেখানে প্রতি হেক্টরের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের আগে গুড়ো করে মিহি করে নিলে এর কার্যকারিতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
- পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জৈব এবং রাসায়নিক সার দুটোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত চুন প্রয়োগের ৪/৫ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। নতুন পুকুর এবং বেলে মাটির পুকুরে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। তবে পুরাতন কাদাযুক্ত পুকুরে রাসায়নিক সার প্রয়োগের হার বেশি হবে। পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে জৈব সার হিসেবে প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর অথবা ৪ থেকে ৫ কেজি মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে। সারের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম টিএসপি জৈব সারের সাথে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের আগে প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে মিশ্রনটি সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর পুকুরের পানির রঙ সবুজ বা বাদামী হলে সাধারণত পোনা মজুদের উপযোগী হয়।

পোনা সংগ্রহ ও পরিবহন
পুকুরের প্রস্তুতি শেষ হলে উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন পাঙ্গাস মাছের পোনা সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য বিশ্বস্ত কোন হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করা উচিত। পোনা পরিবহনের সময় বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে যাতে করে পরিবহনের সময় পোনার কোন ক্ষতি না হয়। পরিবহনের আগেই চৌবাচ্চায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পোনাকে উপোস রেখে টেকসই করে নিতে হবে। পরিবহনের সময় পোনাকে বেশি উত্তেজিত করা উচিৎ নয়।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা
পাঙ্গাস চাষে পুকুরে যে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়, তা মাছের আশানুরূপ ফলনের জন্য যথেষ্ঠ নয়। তাই সুষম খাদ্য প্রয়োগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে চাষ পর্যায়ে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে পাঙ্গাসের উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে। মাছের খাদ্যের পরিমান মাছের বয়স এবং দেহের ওজনের ওপর নির্ভর করে। ১৫ দিন পর পর নমুনা হিসেবে কয়েকটি মাছের ওজন পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ ঠিক মতো বাড়ছে কিনা। নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য পুকুরের আয়তন অনুযায়ী নির্ধারিত ৬ থেকে ৮ টি স্থানে প্রদান করা ভাল। দানাদার জাতীয় খাবার ছিটিং এবং সম্পূরক খাবার বল আকারে নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করতে হয়। খাবার একবারে না দিয়ে ২ থেকে ৩ বারে সমানভাবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে খাদ্যের কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রয়োজনমতো চুন এবং সার প্রয়োগ করাটাও জরুরি।

পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
- নিয়মিত পানি পরিবর্তন: প্রতি ১৫-২০ দিন পর পুকুরের ২০-৩০% পানি পরিবর্তন করুন।
- পানির গুণাগুণ বজায় রাখা: পানির অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এয়ারেটর ব্যবহার করুন।
- রোগব্যবস্থাপনা:
- মাছের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- রোগের লক্ষণ দেখলে মাছ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঔষধ প্রয়োগ করুন।
মাছ সংগ্রহ
বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাছ মজুদের ৫-৬ মাস পর যখন পাঙ্গাসের গড় ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হয়, তখনই মজুদকৃত মাছের ৫০% বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে অবশিষ্ট মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।
- ফসল তোলার সময়: ৬-৮ মাসের মধ্যে মাছ বাজারজাত করার উপযোগী হয়।
- মাছ ধরার পদ্ধতি: নেট বা বিশেষ জাল ব্যবহার করে মাছ সংগ্রহ করুন।
- বাজারজাতকরণ: স্থানীয় ও জাতীয় বাজারে সরবরাহ করে ভালো মূল্য পাওয়া যায়।

পাঙ্গাস মাছ চাষে লাভজনকতা ও বাজার সম্ভাবনা
পাঙ্গাস মাছের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলে এর বিক্রি ভালো হয়।
- খরচ ও আয় বিশ্লেষণ:
- একটি পুকুরে পোনা, খাদ্য ও পরিচর্যার খরচ তুলনামূলক কম হয়।
- ৬-৮ মাসে প্রতি শতাংশে ৭০-১০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
- বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাসের মূল্য ১২০-১৫০ টাকা।
- সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারিপারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছের চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর পুকুর, দীঘি ইত্যাদিসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ হেক্টর জলাশয়ে পরিকল্পিতভাবে পাঙ্গাস মাছের চাষ করলে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুব ও যুব মহিলাদের। প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের ঐতিহ্য ’মাছে ভাতে বাঙ্গালী’-কে পুনরুদ্ধার করতে তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।পাঙ্গাস মাছ চাষ একটি লাভজনক এবং সহজ কৃষি উদ্যোগ। এটি অল্প সময়ে বেশি ফলন দেয় এবং কৃষকের আয় বাড়াতে সাহায্য করে। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ, পরিচর্যা ও বাজারজাত করলে এটি দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস চাষ শুরু করে নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করুন।
মৎস্য
মৎস্য হ্যাচারি ও নার্সারিতে রোগ সংক্রমণে করণীয়

অধুনা বাংলাদেশে আশাতীত দ্রুত গতিতে উন্নত প্রযুক্তির মৎস্য চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে। পাশাপাশি মাছ চাষের জন্য মানসম্পন্ন পোনা প্রাপ্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মর্তব্য যে, নব্বই দশকের শুরু থেকে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে বিপুল সংখ্যক মৎস্য হ্যাচারি গড়ে উঠে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭৬টি সরকারি ও ৮৪৫টি বেসরকারিসহ মোট ৯২১টি মৎস্য হ্যাচারি এবং ১০,৪০২টি নার্সারি রয়েছে। লক্ষণীয় যে, এসব হ্যাচারি ও নার্সারিতে রোগ সংক্রমণ এখন প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে এবং নানা রোগে আক্রান্ত পোনার মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে, যা নিয়ে খামারি ও পোনা চাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অন্যান্য প্রাণির মতোই শরীরের ইমিউনসিস্টেম মাছের রোগ প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ইমিউনসিস্টেম পানিতে বিরাজমান রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ করে মাছকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
হ্যাচারি ও নার্সারিতে পোনা স্বভাবতই নাজুক অবস্থায় থাকে, ফলে অপরিপক্ব ইমিউনসিস্টেমের কারণে তারা অতিসহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া, রোগাক্রান্ত হ্যাচারি থেকে যেসমস্ত পোনা চাষের পুকুরে স্থানান্তর করা হয় তারা সেখানে রোগজীবাণু বহন করে নিয়ে আসে, যা পুকুরে মজুদকৃত মাছের পোনার অনিবার্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মাছের হ্যাচারি ও নার্সারিতে সাধারণত (১) ছত্রাকজনিত রোগ (২) ভাইরাসজনিত রোগ (৩) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ (৪) পরিবেশজনিত রোগ (৫) পরজীবী ঘটিত রোগ (৬) মিক্সো সম্পরিডিয়াসিস (৭) উকুনজনিত রোগ (৮) ট্রাইকোডিনিয়াসিস ও (৯) কৃমিজাতীয় রোগ সংক্রমণ হয়ে থাকে।

ছত্রাকজনিত রোগ : ছত্রাক জনিত রোগে প্রধানত মাছের ডিম ও রেণু আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হ্যাচারিতে ডিম স্ফুটনের সময় ছত্রাকের সংক্রমণ জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমে ছত্রাকগুলো মৃত ও অনিষিক্ত ডিমগুলোর শরীরে পাকা পোক্ত স্থান করে নেয় এবং ধীরে ধীরে সুস্থ সবল ডিমগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে সমুদয় ডিমই ধ্বংস করে দেয়।
ডিম ধৌত করে, নষ্ট ও অনিষিক্ত ডিমগুলো সরিয়ে পানির প্রবাহ বাড়িয়ে এবং ডিমের ঘনত্ব হ্রাস করে হ্যাচারিতে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অ্যালাকাইট গ্রিন হচ্ছে ছত্রাক জনিত রোগের সর্বোত্তম ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা।
হ্যাচারিতে লালনকৃত ডিমগুলোকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দিয়ে ধুয়ে অথবা আক্রান্ত মাছগুলোকে শতকরা ৩-৫ ভাগ ফরমালিন দিয়ে ২-৩ মিনিট গোসল দেয়া যেতে পারে। এছাড়া অ্যালাকাইট গ্রিন ০.১৫-০.২০ পিপি এম হারে পুকুরে প্রতি সপ্তাহে একবার করে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োগ করা হলে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যায়।
ভাইরাসজনিত রোগ : গ্রাস কার্প হেমোরেজিক ভাইরাস চাইনিজ কার্পের পোনার মৃত্যুর জন্য দায়ী এ বিষয়ে নানা সূত্রে নির্ভরশীল তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, টক হারপিস ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাস কমনকার্প ও কৈ কার্পের রোগ সৃষ্টি করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সূত্র থেকে জানা গেছে, ভাইরাস জনিত রোগের মূলত কোনো চিকিৎসা নেই। একমাত্র পরিচ্ছন্নতা ও জৈব নিরাপত্তা পদ্ধতির নিয়মিত অনুসরণই হচ্ছে ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া যেমন, Motile, Aeromonas ও Vibrio প্রায়শ মাছের হ্যাচারি ও নার্সারির পোনার মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু অথবা সুবিধাবোগী অনুপ্রবেশকারী জীবাণু হিসেবে রোগ সৃষ্টি করে। লেজ পচা ও পাখনাপচা জাতীয় রোগগুলো সাধারণত উল্লিখিত বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। কার্পজাতীয় মাছের পোনার জন্য Aeromonas hydrophila ঘটিত ব্যাকটেরিয়াল হেমোরেজিক সেপটি সেমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা।
পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়া, তাপমাত্রার তারতম্য, জৈব দূষণ এবং অধিক মজুদ ঘনত্ব মাছের পোনায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে পোনার পেটফোলা রোগের জন্য আক্রান্ত পুকুরে ৫ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের সাথে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৫০-৬০ মি.গ্রা/ প্রতি কেজি মাছের ওজনের জন্য ১০দিন পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। এ ওষুধ ব্যবহারের ২৫ দিনের মধ্যে মাছ আহরণ করা মোটেই সমীচীন নয়।
পরিবেশজনিত রোগ : পুকুরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের মাত্রাতিরিক্ত দ্রবণ এবং পুকুরের তলায় অধিক জৈব পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাছের পোনা গ্যাস বাবল রোগের কবলে পড়তে পারে। নার্সারি পুকুরে মাঝে মধ্যে হাঁস পোকার আক্রমণ এবং হ্যাচারিতে অজ্ঞাত কারণে ব্যাপক হারে রেণু ও পোনার মৃত্যুর সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এছাড়া কোনো কোনো সময় অত্যধিক ঠাণ্ডা ও অক্সিজেন স্বল্পতায় আকস্মিকভাবে রেণু মৃত্যুর সিকার হতে পারে।
পরজীবী ঘটিত রোগ : ইকবায়োপথিরিয়াসিস নামক এককোষী পরজীবী এ রোগ সৃষ্টি করে। এটিকে সাদা দাগ রোগও বলা হয়। কার্পজাতীয় মাছের পোনার ক্ষেত্রে ও রোগ সংক্রমণের তীব্রতা অধিক। এ রোগের ফলে মাছের পাখনা, ত্বক ও ফুলকায় সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পুকুরে অতিরিক্ত পোনা মজুদ এ রোগের অন্যতম সহায়ক কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত পুকুরে পোনা না ছাড়াই উত্তম। পরজীবী আক্রান্ত পুকুরে ম্যালরাকাইট গ্রিণ, পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্বারা এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। আক্রান্ত মাছকে ম্যালাকাইট গ্রিণের ০.১৫-০.২০ পিপিএম দ্রবণে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে ২/৩ দিন গোসল করালে সুফল পাওয়া যায়।
মিক্সোসম্পারিডিয়াসিস : মিক্সোবোলাস গণের কয়েকটি প্রজাতির সংক্রমণের কারণে এ রোগের উৎপত্তি হয়। পরজীবীগুলোর পূর্ণবয়স্ক স্পোর এ রোগের মূল কারণ হিসেবে মৎস্য বিজ্ঞানীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সাধারণত কার্পজাতীয় মাছের পোনা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা এবং পুকুর জীবাণু মুক্তকরণ এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক ফলপ্রসূ পন্থা। মহুয়া খৈল দ্বারা চিকিৎসা করা হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগে পানির অম্লত্ব দূরীভূত হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক পর্যায়ে পরজীবীগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় এবং মাছে সুস্থতা ফিরে পায়।
উকুনজনিত রোগ : এ জাতীয় পরজীবী আঙ্গুলে ও বড় মাছসহ সব ধরনের মাছেরই ক্ষতিসাধন করে। নার্সারি পুকুর, লালন পুকুর ও মজুদ পুকুরে এ পরজীবীগুলোর ব্যাপক সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। এ জাতীয় বহুকোষী পরজীবী দ্বারা সংঘটিত একটি প্রধান রোগের নাম আরগুলোসিস। এ পরজীবীকে মাছের উকুনও বলা হয়। এ রোগ প্রতিরোধে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পুকুরে পরজীবীটিকে ঢুকতে না দেয়া। এছাড়া আক্রান্ত পুকুরে বাঁশের খুঁটি পুতে রাখা যেতে পারে। যেখানে এরা ডিম নিঃসরণ করবে। কিছু দিন পর পর ডিমগুলো তুলে এনে ধ্বংস করে আরগুলোসিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আক্রান্ত পুকুরে ০.৫ পিপিএস হারে ডিপটারেক্স সপ্তাহে একবার করে পাঁচ সপ্তাহ অথবা সুমিথিয়ন ০.৮ পিপিএস হারে একই মেয়াদে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ট্রাইকোডিনিয়াসিস : এটি একটি এককোষী পরজীবী দ্বারা সংঘটিত রোগ। ধানী পোনা ও আঙ্গুলে পোনার ক্ষেত্রে এ রোগের প্রয়োগ অত্যধিক। অপেক্ষাকৃত ছোট ও অগভীর জলাশয়ে এবং দূষিত পানিবাহিত পুকুরে এ রোগের দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। নার্সারি পুকুরে অধিক সংখ্যক পোনার মজুদ এ রোগের একটি অন্যতম সহায়ক কারণ। এ রোগ প্রতিরোধে পানির গুণাগুণ সমুন্নত রাখার পাশাপাশি পোনার ঘনত্ব হ্রাস করা অত্যাবশ্যক। এছাড়া আক্রান্ত মাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিনে ৩-৫ মিনিট গোসল দেয়া অথবা পুকুরে ৪ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। উপরন্ত মাছকে শতকরা ২-৩ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য গোসল করালে এ রোগে প্রতিকার আশা করা যায়।
কৃমিজাতীয় রোগ : এই পরজীবীগুলো মূলত মাছের পাখনা, ফুলকা ও ত্বকে আক্রমণ করে। নার্সারি পুকুরে এ রোগ অতিদ্রুত বৃদ্ধি পায়।
অপরপক্ষে কৃমির আক্রমণে ত্বক ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ত্বকে বিন্দু বিন্দু রক্তক্ষরণ হয়। কার্পজাতীয় মাছের ৪-৫ গ্রাম ওজনের পোনায় এ রোগের আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যায়।
কৃমিজাতীয় পরজীবী ঘটিত রোগের চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত গাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে গোসল করালে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আক্রান্ত পুকুরে ১০-২০ পিপিএম হারে পটাশ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মাছের হ্যাচারি ও নার্সারিতে মাছের পোনার রোগ প্রতিরোধে করণীয়
(১) উৎপাদনের শুরুতে এবং চলমান সময়ে সব হ্যাচারি ইউনিট এবং সরঞ্জামাদি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করণ।
(২) নার্সারি পুকুর ও ব্রুড রাখার পুকুর নিয়মিত জীবাণূ মুক্ত করণ।
(৩) নিষিক্ত ডিম ও পোনাগুলোকে জীবাণুমুক্ত করণ।
(৪) গুণগতমান সম্পন্ন, দূষণ ও রোগজীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
(৫) সুষম ও জীবাণুমুক্ত খাদ্য সরবরাহ করা।
(৬) রোগের চিকিৎসার জন্য যথেচ্ছ-ড্রাগ ব্যবহার না করা।
(৭) মৃত ও অসুস্থ মাছ যথাশিগগিরর সরিয়ে ফেলা।
(৮) মাছ খাদক রাক্ষুসে প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করা।
উল্লেখ্য যে, রেণু উৎপাদনের প্রায় ৯৯% আসে হ্যাচারি থেকে, পাশাপাশি নার্সারিতে উৎপাদিত হচ্ছে ৮২ হাজার লাখেরও অধিক পোণা। এরই প্রেক্ষাপটে নির্দ্বিধায় আশা করা যায়, হ্যাচারি ও নার্সারিতে উৎপাদিত রেণুও পোণা রোগমুক্ত রাখা সম্ভব হলে মাছের সার্বিক উৎপাদনও বেড়ে যাবে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে।
পরিশেষে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মাছ ও পোনার রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়, সমাজে বহুল প্রচলিত এ প্রবাদ সর্বদাই চাষিদের মন মানসিকতায় লালন করতে হবে।
মৎস্য
মাগুর মাছ চাষ করে বিপুল অর্থ উপার্জন করুন

দেশি মাগুর মাছ সুস্বাদু ও উপাদেয়। দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের পছন্দের মাছ। এছাড়া পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও সর্বত্র দেশি মাগুরের চাহিদা রয়েছে। সর্বোপরি, মাগুর একটি জিওল মাছ | অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের উপস্থিতির ফলে এই মাছ জলের বাইরে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। তাই এই ধরণের মাছগুলিকে জিওল মাছ বলা হয়। এই মাছগুলির বাজারে মূল্য এবং চাহিদাও বেশি | তাই, মাগুর চাষ করে কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়ে থাকেন |

পুকুর নির্মাণ(Pond preparation)
মাছ চাষের প্রথমেই সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচন করতে হবে | পুকুরের আয়তন ১০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ এবং গভীরতা ৮০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার (৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট) হতে হবে। অধিক গভীরতা উৎপাদনের জন্য অসুবিধাজনক। কারণ মাগুর মাছকে শ্বাস নেওয়ার জন্য সবসময় উপরে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত শক্তিক্ষয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি প্রতিক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
তবে, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাড়ের ঊর্ধ্বসীমা অবশ্যই সর্বোচ্চ বন্যার লেভেল থেকে ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) উপরে রাখতে হবে। এতে বৃষ্টির সময় মাছ বুকে হেঁটে বাইরে যেতে পারে না। আবার বাইরে থেকে সাপ-ব্যাঙ ইত্যাদি মৎস্যভুক প্রাণিও পুকুরে প্রবেশের সুযোগ পায় না। এছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড়ের ওপর ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু নেটের বেড়া দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

চুন প্রয়োগ
পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে হাল্কাভাবে চাষ দিয়ে তলার মাটির পিএইচ পরীক্ষা করে প্রতি শতাংশে ১ থেকে দেড় কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের পর পুকুরে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) পরিমাণ জল ঢুকিয়ে সপ্তাহ খানিক ধরে রাখা প্রয়োজন।

সার প্রয়োগ(Fertilizer)
জৈব সার প্রয়োগের ৭ দিন পর জলের উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বজায় থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশ ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমপিও সার ব্যবহার করতে হবে। জলের রং বাদামি সবুজ, লালচে বাদামি, হাল্কা সবুজ, লালচে সবুজ অথবা সবুজ থাকাকালীন অজৈব সার প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই।

পোনা মজুদ
পুকুরে ৫-৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের সুস্থ-সবল পোনা প্রতি বর্গমিটারে ৫০ থেকে ৮০টি ছাড়া যেতে পারে। মে-জুন মাসে মাগুরের পোনা ছাড়ার যথার্থ সময়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা(Food)
মাগুর মূলত জলাশয়ের তলদেশের খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রাকৃতিক এই খাদ্যগুলো হচ্ছে জলাশয়ের তলায় আমিষ জাতীয় পচনশীল দ্রব্যাদি। প্রাণি প্লাঙ্কটন ও কেঁচো জাতীয় ক্ষুদ্রাকার প্রাণি ইত্যাদি।

খাদ্য সরবরাহ
অধিক ঘনত্বে চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। সহজলভ্য দেশীয় উপকরণের মাধ্যমে সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত করা যায়। এ ক্ষেত্রে চালের কুড়া ৪০ শতাংশ, তৈলবীজের খোল ৩০ শতাংশ ও শুঁটকি ৩০ শতাংশ মিশিয়ে গোলাকার বল তৈরি করে মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে। তাছাড়া শামুক ও ঝিনুকের মাংস মাগুরের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৫-১০ শতাংশ হারে দৈনিক খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ সকালে এবং বাকি তিন-চতুর্থাংশ সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হয়।
মৎস্য
জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী

পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। বর্তমানে পাবদা মাছ আমাদের দেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পাবদা মাছ রক্ষা করা সম্ভব। জেনে নিন পাবদা চাষে করণীয় কী?
প্রশ্ন : পাবদা মাছ ইদানিং বাজারে কম পাওয়া যায়। এর কারণ কী? এই মাছ কোথায় থাকে?
উত্তর : মাছটি হারিয়ে যাওয়া মাছের মধ্যে পড়ে। পাবদা আসলে নদীর মাছ। কিন্তু বর্ষার সময় যে সমস্ত নদীর সঙ্গে বড় বড় জলাশয়ের যোগাযোগ রয়েছে সেখানে এসেও পাবদা মাছ ঠাঁই নেয়। আমাদের দেশে কোনও কোনও বিলে ও বড় বড় জলাশয়ে এই মাছ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : পাবদা মাছ কোন ধরনের পুকুরে চাষ করা যায়?
উত্তর : সাইপ্রিনাস ও মৃগেল মাছ বাদ দিয়ে অন্য পোনা মাছের সঙ্গে পাবদা মাছও পুকুরে চাষ করা হয়।
প্রশ্ন : পাবদা মাছের খাদ্য কী?
উত্তর : পাবদা মাছ হচ্ছে মত্স্যভুক মাছ। এরা খায় ছোট চিংড়ি, শামুক, বিভিন্ন জলজ পোকা।
প্রশ্ন : পাবদা মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া কেমন?
উত্তর : পাবদা মাছের স্বাভাবিকভাবেই প্রজনন হয়। এই মাছ ২০ গ্রাম থেকে ৪০ গ্রাম হলেই এরা প্রজননক্ষম হয়ে পড়ে, তখন এরা বিল থেকে পাশের নদীতে জড়ো হয় এবং ডিম পাড়ে।
প্রশ্ন : একটি প্রজননক্ষম পাবদা মাছে কী পরিমাণ ডিম পাওয়া যায়?
উত্তর : প্রতি ১০০ গ্রাম দেহের ওজনে এদের ৩৫,০০০-৪০,০০০ ডিম পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন : চারা তৈরি করার জন্য ধানি পোনার লালন কীভাবে করতে হবে?
উত্তর : প্রথমে অন্যান্য মাছের ডিম পোনা থেকে ধানি করার জন্য যে পদ্ধতিতে আঁতুড় পুকুর তৈরি করা হয়, এখানেও সেই পদ্ধতিতে করা হয়। দেখা গেছে, ১৫-১৮ দিনের মধ্যে ডিম পোনা থেকে ধানি পোনায় রূপান্তরিত হয়।
প্রশ্ন : লালনের সময় পাবদার ধানি পোনা কী খায়?
উত্তর : লালনের সময় পাবদার ধানি পোনা আঁতুড় পুকুরে উত্পাদিত জলজ প্রাণিকণা খেয়ে বড় হয়। ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ধানি চারা পোনায় রূপান্তরিত হয়। এই সময়ই মজুত পুকুরে স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রশ্ন : পাবদা মাছের চাষের পদ্ধতি কী রকম হবে?
উত্তর : পাবদা চাষের জন্য প্রথমেই পোনা মাছ চাষের পদ্ধতি অনুযায়ী পুকুর তৈরি করতে হবে। প্রতি বিঘা পুকুরে ২২৫-২৫০ কিলোগ্রাম গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। ৩-৪ দিনের মধ্যেই খাদ্যকণা উৎপন্ন হলে পাবদার চারাপোনা পুকুরে ছাড়তে হয়।
প্রশ্ন : এ চাষে খরচ এবং লাভ কত হতে পারে?
উত্তর : পোনা মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষে খরচ হয় প্রায় ৩,৫০০ টাকা। পাবদা মাছ থেকে আয় হয় ৪,২০০ টাকা। পোনা মাছ থেকে আয় হয় ৬,০০০ টাকা। মোট আয় হয় ১০ হাজার ২০০ টাকা। মোট লাভ ৬,৭০০ টাকা।
মৎস্য
মাছ রোগাক্রান্ত হলে প্রতিকার করবেন যেভাবে

মাছেরও বিভিন্ন রকম রোগ বালাই আছে। এসব রোগ মাছ চাষের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। বছরে অনেক সময় মাছ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। তাই পুকুর-দীঘির মাছ প্রায়ই নানা রোগের কবলে পড়ে।
আমাদের দেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের স্থানে গভীর ক্ষত হয়। মাছ দ্রুত মারা যায়। চোখ নষ্ট হতে পারে। ক্ষত স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না।
ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ বের হয়। মাছ দুর্বল হয় এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। আক্রান্ত বেশি হলে লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।
দেশে সাধারণত শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, বাইন, কৈ, মৃগেল, কার্পিও এবং পুকুরের তলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

মাছের ক্ষত রোগ সম্পর্কে মৎস্য চাষিরা কম-বেশি সবাই জানেন। এ রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার উপায় আক্রান্ত মাছের গায়ে ক্ষত বা ঘাজনিত লাল দাগ দেখা যায়। এই দাগের আকৃতি ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঘা মাছের লেজের গোড়া, পিঠ ও মুখের দিকেই বেশি হয়ে থাকে। এ রোগ দেখা মাত্র মাছ পুকুর থেকে দ্রুত তুলে ফেলতে হবে। ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম লবণ গুলে লবণমিশ্রিত পানিতে রোগাক্রান্ত মাছ পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
ক্ষত রোগে আক্রমণের আগেই প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে কিংবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও এক কেজি হারে লবণ দিতে হবে। তাহলে সাধারণত আসন্ন শীত মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল থেকে মাছ মুক্ত থাকবে।
মাছের পেট ফোলা রোগে সাধারণত রুই জাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙাশ মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। পেট ফোলা রোগাক্রান্ত মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পেটে পানি জমার কারণে পেট ফুলে থাকে। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে।
বেশির ভাগ সময়ই পানির ওপর ভেসে ওঠে এবং খাবি খায়। আক্রান্ত মাছ খুব দ্রুত মারা যেতে পারে। প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাছের খাদ্যের সঙ্গে ফিশমিল ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
মাছের মধ্যে পাখনা ও লেজ পচা রোগে সাধারণত রুইজাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙাশ মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনাও আক্রান্ত হয়। কোনো কোনো মৎস্যবিজ্ঞানীর বলছেন, অ্যারোমোনাডস ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। পানির ক্ষার স্বল্পতা ও পিএইচ ঘাটতি দেখা দিলেও এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। এরোগ আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে তুলে ০.৫ পিপিএম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩ থেকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পুকুরে সাময়িকভাবে সার দেয়া বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া রোগজীবাণু ধ্বংসের পর মজুতকৃত মাছের সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে হবে। এ অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় মাছেরই উকুন রোগ দেখা দেয়। এরমধ্যে রুই মাছ, কখনো কখনো কাতল মাছও আক্রান্ত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগে মাছের সারা দেহে উকুন ছড়িয়ে দেহের রস শোষণ করে মাছকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।
এতে মাছ ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে। মাছের উকুন রোগের প্রতিকার করার জন্য শতকরা আড়াই ভাগ লবণ দ্রবণে কিছু সময় আক্রান্ত মাছ ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে উকুনগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এ অস্থায় হাত কিংবা চিমটা দিয়ে উকুনগুলো মাছের শরীর থেকে তুলে ফেলতে হবে। অনেক সময় মাছের পুষ্টির অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়।
এ রোগে পুকুরে চাষযোগ্য যে কোনো মাছই আক্রান্ত হতে পারে। ভিটামিন ‘এ ডি এবং কে’-এর অভাবে মাছ অন্ধত্ব এবং হাড় বাঁকা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাছের খাবারে আমিষের ঘাটতি দেখা দিলেও মাছের স্বাভাবিক বর্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত হয়। অচিরেই মাছ নানা রোগের কবলে পড়ে।
মাছ এসব রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো হলে যথা শিগগিরই মাছের শারীরিক অবস্থার উন্নতি সম্ভব। মাছের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ চাষ করে চাষকৃত পুকুরে মাছের রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।
মৎস্য
খাঁচায় বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ

মৎস্য উৎপাদনের বিবেচনায় বাংলাদেশের জলজ সম্পদ একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উৎস হলেও এখনও পর্যন্ত এই জলজ সম্পদকে যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে সুষম উৎপাদনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়নি। উন্মুক্ত জলাশয় প্রধানত ব্যবস্থাপনা নির্ভর সম্পদ হওয়ায় বদ্ধ জলাশয়ের চেয়ে এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত চাষাবাদের বিষয়টিকে পূর্বে সেরূপ গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
ইতোমধ্যে দেশের বদ্ধ জলাশয়সমূহ থেকে চাষাবাদের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও তা দ্রুত বর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর মৎস্য চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয় । এরূপ অবস্থায় সম্ভবনাময় আরও ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে ব্যবহারের আওতায় সহনশীল উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত না করা হলে চাহিদা ও সরবরাহের এই ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলবে ।
মুক্ত জলাশয় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তাই উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করা হলে খাদ্য সরবরাহন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে । এরূপ বিবেচনায় নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ একটি উৎসাহজনক প্রযুক্তি।
অতি সনাতন কাল থেকে বাঁশ বা জালের তৈরি খাঁচায় মাছ লালন পালনের ইতিহাস থাকলেও সে সময়ে এময়ে এসবের লাভ লোকসানের হিসাব এতটা বিবেচ্য ছিল না । তবে চীন সাগরে ও ভারতে মহাসাগরে প্রায় ৩ যুগ পূর্ব থেকেই বাণিজ্যিক বিবেচনায় খাঁচায় মাছ চাষের প্রচলন শুরু হয়েছিল ।
বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশেও বিভিন্ন নদ নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ হচ্ছে । কিন্তু দেশীয় প্রজাতির মাছ যেমন-পাবদা, গুলশা, মাগুর, শিং, ইত্যাদি খাঁচায় চাষের সম্ভাবত্য যাচাইয়েই লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট, স্বাদুপানি কেন্দ্র , ময়মনসিংহ গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে ।
বিগত কয়েক বছর ধারাবাহিক গবেষণার পর খাঁচায় বিলুপ্তপ্রায় গুলশা মাছ চাষের লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে । সহনশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভাসমান খাঁচায় সুস্বাদু উচ্চমূল্যের বিলুপ্তপ্রায় গুলশা মাছ চাষ করা হলে তা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টির অভাব পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করা যায় ।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন