লাইভস্টক
স্বল্প পুঁজিতে গাড়ল পালনে হয়ে উঠুন লাভবান
গাড়ল”(ভারতীয় জাতের ভেড়া) পালন খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। দেশে গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের গাড়ল পালন একদিকে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই গাড়ল পালন এবং এর চাহিদাও ব্যাপক।
গাড়ল নির্বাচন পদ্ধতি:
১. চোখ, নাক, মুখ উজ্জল ও পরিস্কার হবে।
২.লোম ও চামড়া মসৃন ও পরিস্কার থাকবে।
৩.মুখের উপরে মাজেলে (কালো জায়গায়) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
৪. ঠিকমত জাবর কাটবে।
৫.চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
৬. কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
৭. খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
৮. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
বাসস্থান:
১.গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
২.পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩.আরামদায়ক হতে হবে।
৪.ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫.বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৬.সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
৭.ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।
খাদ্য:
১. গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
২. ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
৩. শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
৪. এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।
৫. পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
৬. প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
৮. পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।
প্রজনন:
গাড়ল পালনের ক্ষেত্রে প্রজননকালীন ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যে বিষয় গুলকে গুরুত্ব দিবেন |
১. গাড়ল সাধারনত ১৮০ দিন বয়সের মধ্যে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
২. গাড়লের হৃতুচক্র ১৩-১৯ দিন বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
৩. গাড়লের গরমকাল বা হিট প্রিয়ড ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্তু স্থায়ী হয়।
৪. গর্ভধারণ কাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন।
বাচ্চার যত্ন:
বাচ্চা প্রসবের সময় গাড়ল কে শুকনো, পরিচ্ছন্ন ও আলোবাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। বাচ্চার শরীর যাতে মা-গাড়ল চেটে পরিস্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চালুর জন্য সহায়ক হয়। মার যদি দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চার শরীর চাটতে না পারে, তাহলে পরিস্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক-মুখ মুছিয়ে দিতে হবে না হলে শ্বাস রুদ্ধ হবার ঝুকি থাকে। আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে বাচ্চার বুকের পাজরে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর চাপ প্রয়োগ করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজনে নাকে-মুখে ফু দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার জন্মের পর গোসল করানো যাবেনা, এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে।
লাইভস্টক
গরুর শীতকালীন পরিচর্যা করবেন যেভাবে

আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে প্রাণীর অভ্যন্তরীণ বিপাকীয় এবং অভ্যাসগত পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশে সংকরায়ণের ফলে তৈরি জাত শীত সহ্য করতে পারে না। গরুর শীতকালীন পরিচর্যা করবেন যেভাবে।
খাদ্য অভ্যাস : শীতকালে প্রাণী শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে দুধের উৎপাদন ও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাড়তি উৎপাদনের জন্য চাই বাড়তি শক্তি। তাই শীতকালে গরুকে অধিক খাবার দেয়া জরুরি। তবে একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে শীতকালে গরুর শরীরে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের প্রবলতা দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে থেকে রক্ষা করতে গরুকে অধিক আশযুক্ত খাবার যেমন ঘাস খড় দেয়া আবশ্যক।
পানি : শরীরবৃত্তীয় কাজে কম পানি দরকার হওয়ায় এবং অধিক ঠান্ডা হওয়ায় শীতকালে সকল প্রাণী পানি পানের পরিমান কমিয়ে দেয়। এই সমস্যা উত্তরণের জন্য গরুকে ট্যাংকে সংরক্ষিত বাসি ঠান্ডা পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে হবে। গরুর জন্য বিশুদ্ধ ফ্রেশ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাসস্থান : শীতকালে ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি গরুর গায়ে না লাগে এইজন্য ঠান্ডা বাতাস প্রবেশের রাস্তা গুলো চটের বস্তা অথবা পলিথিন বা অন্য কোন উপায়ে বন্ধ করে দিতে হবে। ঠান্ডা বাতাসে গরুর নিউমোনিয়া সহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রয়োজনে গরুকে পুরান কম্বল বা পাটের বস্তা এই জাতীয় জিনিস দিয়ে রাতে জড়িয়ে রাখতে হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ঠান্ডায় গরুর শেডে যেন পানি জমে না থাকে অথবা গরুর প্রস্রাব জমে না থাকে এবং ফ্লোর যেন অধিক শুষ্ক থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দরকার হলে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।
রোগ ব্যাধি : শীতকালে গরু নিউমোনিয়া, কাশি সহ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই রোগের বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে। ঠান্ডা জনিত কোনো সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাতের কাছে বিশুদ্ধ মধু এবং তুলসী গাছ রাখতে হবে।
বাছুরের যত্ন : ঠান্ডায় সবচে বেশি আক্রান্ত হয় নবজাতক বাছুর। যেহেতু বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই ঠাণ্ডাজনিত রোগের শিকার ও সবচে বেশি হয়। তাই শীতকালে অবশ্যই বাছুরকে গরম কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে এবং গরম এবং শুষ্ক জায়গা রাখতে হবে। কোনো প্রকার ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতে আপনার বিশেষ যত্নই আপনার খামারকে শীতকালীন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আপনার সচেতনতা সবচে বেশি জরুরি।
গরুর শীতকালীন পরিচর্যা করবেন যেভাবে সংবাদের তথ্য বাংলাদেশ গবাদি পশু ও পাখি খামারি উন্নয়ন সংগঠন নামক কমিউনিটি সংস্থা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লাইভস্টক
পোলট্রি খামারে শীতকালীন পরিচর্যা

বর্তমানে আমিষের অভাব দূরীকরণে আমাদের দেশে পোল্ট্রি পালনের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকার দেশের যুব সমাজের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ঋণ দিয়ে পোল্ট্রি পালনে উত্সাহিত করছে।
শীতকালে পোল্ট্রি খামারের বিশেষ যত্ন না নিলে কমে যেতে পারে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি, লেয়ার খামারে ডিমের সংখ্যা এবং বেড়ে যেতে পারে মৃত্যু ঝুঁকি। তাই শীতকালে মুরগির বাচ্চার সঠিক তাপমাত্রা সরবরাহ করা একটি প্রধান সমস্যা।
এছাড়াও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খামারিরা মুরগির ঘরে পলিথিন বা মোটা কাপড়ের পর্দা ঝুলিয়ে রাখেন। এ কারণে মুরগির বাচ্চার ঘরে মুক্ত বাতাস বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহে অপ্রতুলতা, এমোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধির কারণে শ্বাসকষ্ট, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়াসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। ফলে প্রতিদিনই বাচ্চা মারা যায়। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিচের বিষয়গুলো ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে:
১. ঘরে অবশ্যই ছালার বা চটের পর্দা ঝুলাতে হবে।
২. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাবল করে চটের পর্দা সেলাই করে তবেই পর্দা ঝুলাতে হবে। অতিরিক্ত শীতে চিক গার্ডের চারদিকে এবং উপরে মশারীর মত করে চটের পর্দা ঝুলানো যেতে পারে।
৩. ব্রুডার বক্সে ২০০ ওয়াটের বাল্ব লাগিয়ে ব্রুডিং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়াও তাপ দেওয়ার ঘরে অতিরিক্ত কিছু বাল্ব রিফ্লেকটারসহ নিচু করে ঝুলানো যেতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে এগুলো জ্বালাতে হবে।
৪. লোডশেডিং এবং তীব্র শীতের সময় তাপ দেয়ার ঘরে চিক গার্ডের চারদিকে প্রয়োজনমত কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে ব্রুডিং তাপমাত্রা ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কেরোসিনের স্টোভের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেগুলো নীলাভ আগুন বের হয় এবং যেগুলো হোটেল রেস্তরাঁয় ব্যবহূত হয়।
৫. ব্রুডিং তাপমাত্রা কম হলে বাচ্চা এক জায়গায় জড়ো হয়ে গাদাগাদি করে থাকে, বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং এতে করে নিচে চাপে পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে অনেক বাচ্চা মরে যেতে দেখা যায়। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘরের তাপমাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে বাচ্চাগুলোকে নাড়িয়ে দিতে হবে যেন অনেকক্ষণ একসাথে গাদাগাদি করতে না পারে।
সবসময় মনে রাখতে হবে ইলেকট্রিক ব্রুডারের মাধ্যমে তাপ সরবরাহ করার চেয়ে গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করাই সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত। কারণ ইলেকট্রিক ব্রুডার ব্যবহারের মাধ্যমে মুরগির ঘরে আলোর কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে শীতকালে ইলেকট্রিক ব্রুডারের পাশাপাশি গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করলে সঠিকভাবে আলোর কর্মসূচি পালন করা যাবে, সেইসাথে ব্রুডিং তাপমাত্রাও যখন যা প্রয়োজন সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যেমন- ১ম সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা:৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইড, ২য় সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা:৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইড, ৩য় সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা:৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইড, ৪র্থ সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা:৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইড, ৫ম সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা: ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইড রাখতে হবে তবে চিক গার্ড খুলে দিতে হবে। ব্রুডিং -এর সময় প্রথম ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত দৈনিক একবেলা প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম করে Electrolyte খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
লাইভস্টক
কোয়েল পাখির খাবার তালিকা এবং কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

বর্তমানে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। হাঁস-মুরগির পরিপূরক হিসেবে কোয়েল পাখি বেশ জনপ্রিয়। এই পাখিটির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং ডিমও খুব উপাদেয়। ফলে এটি প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বেশ ভালোভাবে মেটায়।
সাধারণভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েল দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে। মাত্র ৬ সপ্তাহে বা ৪২ দিনে কোয়েল পাখি ডিম এবং মাংস প্রদানের জন্য দৈহিকভাবে উপযোগী হয়।
স্বল্প জায়গা ও স্বল্প পুঁজিতে কোয়েল পালন করা যায়। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ১টি মুরগির জায়গায় ৮টি কোয়েল পালন করা সম্ভব। ফলে প্রান্তিক চাষীদের কিংবা যারা শখের বসে খামার করে, তাদের কাছে কোয়েল পালনও দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে আমরা কোয়েল পাখির খাবার তালিকা এবং কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি জানব।
এখানে আপনি কোয়েল পাখি পালন ও জাপানি কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোয়েল পাখির বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বিভিন্ন বয়সের জাপানি কোয়েলের কোয়েল পাখির খাবার তালিকা তৈরি করতে পারবেন। কোয়েল পাখির খাবার ও পানির ব্যবস্থাপনা এবং কোয়েল পাখি পালনে আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

কোয়েল পাখি পালন
জাপানি কোয়েল পোল্ট্রি শিল্পের নতুন সদস্য। বাণিজ্যিক জাপানি কোয়েলের অনেকগুলো জাত ও উপজাত রয়েছে, যেমন- ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়ান গোল্ডেন, টুক্সেডো ও ব্রাউন কোয়েল।
মুরগির পরে পোল্ট্রি শিল্পে আরও যেসব পোল্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়, তাদের মধ্যে কোয়েল পাখি পালন, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন অন্যতম। পোল্ট্রি শিল্পে তুলনামূলকভাবে জাপানি কোয়েল বর্তমানে বিকল্প পোল্ট্রি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
জাত ও উপজাতভেদে কয়েল পাখির বিভিন্ন জাত ও উপজাতগুলোর পালকের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার হার ইত্যাদিতে পার্থক্য থাকলেও ডিম ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই।

কোয়েল পাখির বাচ্চা ফোটানো
জাপানি কোয়েল পালনের প্রথম ধাপই হলো ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো।
- বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য প্যারেন্ট স্টকের বয়স ১০-৩০ সপ্তাহের মধ্যে হওয়া ভালো।
- উর্বর ডিম ফোটানোর জন্য স্ত্রীঃপুরুষ অনুপাত ১ঃ২ হওয়া প্রয়োজন।
- কোয়েলের ডিম অত্যন্ত পাতলা খোসাবিশিষ্ট হওয়ায় সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে।
- ডিমের ওজন ৯-১১ গ্রাম হলে ভালো।
- মুরগির ডিমের মতোই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে কোয়েলের ডিম ফোটানো যায়।
- জাপানি কোয়েলের ডিম গড়ে ১৭ দিনে ফোটে।

কোয়েল পাখির বাচ্চা লালন পালন
জাপানি কোয়েলের প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় ৭–৮ গ্রাম।
- ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত কোয়েলের বাচ্চাগুলোকে লিটারে রেখে মুরগির বাচ্চার মতো তাপ প্রদান করতে হবে যাকে ব্রুডিং বলে।
- ঘরটিকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
- ব্রুডারের ভিতরের অর্থ্যাৎ চিকগার্ডের মধ্যে প্রতি বাচ্চার জন্য ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ১২৫-১৪০ বর্গ সেমি জায়গা প্রয়োজন।
- চিকগার্ডের মধ্যে পযার্প্ত বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৪-৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ট্রেতে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
কোয়েল পালনে ব্রুডারের নিচে আদর্শ তাপমাত্রা হলো
বয়স | তাপমাত্রা (সেলসিয়াস) |
০–৭ দিন | ৩৫ সে. |
৮–১৪ দিন | ৩২.২০ সে. |
১৫–২১ দিন | ২৯.৫০ সে. |
২২–২৮ দিন | ২৬.৫০ সে. |

কোয়েল পাখির বাসস্থান
জাপানি কোয়েল মেঝে থেকে খাঁচায় পালন অধিকতর ভালো।
- কোয়েলের বাসস্থানটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঐ ঘরে পর্যপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
- ৫০টি কোয়েল পালনের জন্য ১২০ সেমি দৈর্ঘ্য, ৬০ সেমি প্রস্থ ও ৫ সেমি উচ্চতার একটি খাঁচাই যথেষ্ট।
- খাঁচার মেঝেটি তারের জাল দিয়ে তৈরি হতে হবে।
- খাঁচার মেঝের জালের ফাঁক হবে ৪ মিমি ৪ মিমি।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েলকে ১২ মাস খাঁচায় এবং মেঝেতে পালনে যথাক্রমে ১৩৫.৩ গ্রাম এবং ১৪০.৩ গ্রাম দৈহিক ওজন হয় এবং মাসিক ডিম উৎপাদন বাড়ে যথাক্রমে ৬০% এবং ৫৮%।

কোয়েল পাখির খাবার ও পানির ব্যবস্থাপনা
জাপানি কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুষম কোয়েল পাখির খাবার প্রয়োজন।
- ০-৩ সপ্তাহ বয়সের পাখির জন্য খাদ্যে আমিষের প্রয়োজন শতকরা ২৭%, ৪-৫ সপ্তাহে ২৪% এবং ৬ সপ্তাহ থেকে বাকি সময়ের জন্য ২২% প্রয়োজন।
- সাধারণত একটি পূর্ণ বয়ষ্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
- প্রতিটি বাচ্চার জন্য ১ মাস পর্যন্ত ১ মিমি পানির জায়গা দিতে হবে। খোলা পানি দেয়া যাবে না। এতে বাচ্চা সহজেই পানিতে পড়ে যাবে এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে মারাও যেতে পারে।
- কোয়েল পাখির খাবার ও পানির পাত্র মুরগির খামারে ব্যবহৃত আকারে একটু ছোট হলে ভাল হয়। তবে কোয়েল খুব ঘন ঘন পানি পান করে। তাই কোয়েলের খাচায় কয়েকটি স্থানে পানির ব্যবস্থা খাকতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্রগুলো যেন খাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে। যাতে পানির পাত্র উপচে বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গা ভিজে না যায়।
প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান (%) | পরিমাণ (%) সূত্র–১ | পরিমাণ (%) সূত্র–২ |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ | ৫০.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৭.০০ | ০৬.০০ |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ২০.০০ | ১৮.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০২.০০ | ০২.৪০ |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বৃদ্ধির (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান (%) | পরিমাণ (%) সূত্র–১ | পরিমাণ (%) সূত্র–২ |
১. গম ভাঙ্গা | ৫৩.০০ | ৫৩.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ | ০৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ১৮.০০ | ১৫.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০৩.৫০ | ০৩.৪০ |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
লেয়ার রেশন (৬ সপ্তাহ) বয়সের জাপানি কোয়েল পাখির খাবার তালিকা বা রেশন
খাদ্য উপাদান | পরিমাণ (%) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২৩.০০ |
৪. শুটকি মাছের গুঁড়া | ১২.০০ |
৫. ঝিনুকের গুঁড়া | ০৫.০০ |
৬. মাছের তেল | – |
৭. লবণ | ০০.৪০ |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.৩০ |
কোয়েল পাখির আদর্শ খাবার বা রেশন
খাদ্য উপাদান | ০–৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) | ৪র্থ সপ্তাহ–শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%) |
১. গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৪৮.০০ | ৫০.০০ |
২. চালের কুঁড়া | ৮.০০ | ৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২২.০০ | ২০.০০ |
৪. প্রোটিন কনসেনট্রেট | ৯.০০ | ৮.০০ |
৫. সয়াবিন মিল | ১০.০০ | ১০.০০ |
৬. ঝিনুকের গুঁড়া | ২.৫০ | ৩.৫০ |
৭. লবণ | ০.৫০ | ০.৫০ |
মোট | ১০০.০০ | ১০০.০০ |
কোয়েল পাখির খাবার গ্রহনের আদর্শ গাইড লাইন
বয়স | খাদ্যের পরিমাণ/কোয়েল/দিন |
১ সপ্তাহ | ৩-৪ গ্রাম |
২য় সপ্তাহ | ৭-৯ গ্রাম |
৩য় সপ্তাহ | ১১-১৪ গ্রাম |
৪র্থ সপ্তাহ | ১৫-১৮ গ্রাম |
৫ম সপ্তাহ | ১৮-২০ গ্রাম |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত | ২০-২৪ গ্রাম |
কোয়েল পাখি পালনে আলোর ব্যবস্থাপনা
বয়স | প্রয়োজনীয় আলোক ঘন্টা |
৪র্থ সপ্তাহ | ১২ ঘন্টা |
৫ম সপ্তাহ | ১৩ ঘন্টা |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ | ১৪ ঘন্টা |
৬ষ্ঠ সপ্তাহ হতে শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত | ১৬ ঘন্টা |
কোয়েল পাখির দানাদার খাবার তৈরিকরণ
কোয়েল পাখির আদর্শ খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ০–৩ সপ্তাহ পর্যন্ত (%) | ৪র্থ সপ্তাহ– শেষ ডিম দেয়া পর্যন্ত (%) |
১. গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৪৮.০০ | ৫০.০০ |
২. চালের কুঁড়া | ৮.০০ | ৮.০০ |
৩. তিলের খৈল | ২২.০০ | ২০.০০ |
৪. প্রোটিন কনসেনট্রেট | ৯.০০ | ৮.০০ |
৫. সয়াবিন মিল | ১০.০০ | ১০.০০ |
৬. ঝিনুকের গুঁড়া | ২.৫০ | ৩.৫০ |
৭. লবণ | ০.৫০ | ০.৫০ |
মোট | ১০০.০০ | ১০০.০০ |

বিভিন্ন বয়সের কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ফরমুলা–১: প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) | ফরমুলা–২: প্রারম্ভিক (স্টারটার) (০–৩ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ % | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৭.০০ % | ০৬.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ % | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ২০.০০ % | ১৮.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০২.০০ % | ০২.৪০ % |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ % | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ % | ০০.৩০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বিভিন্ন গ্রোয়ার বা বৃদ্ধি পর্যায়ের কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | ফরমুলা–১: বৃদ্ধি (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) | ফরমুলা–২: বৃদ্ধি (গ্রোয়ার) (৪–৫ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫৩.০০ % | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ % | ০৮.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ১৫.০০ % | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ১৮.০০ % | ১৫.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০৩.৫০ % | ০৩.৪০ % |
৬. মাছের তেল | ০১.০০ % | – |
৭. লবণ | ০০.২৫ % | ০০.৩০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.২৫ | ০০.৩০ |
বিভিন্ন লেয়ার বা ডিম পাড়া কোলের পাখির খাবার তালিকা
খাদ্য উপাদান | লেয়ার রেশন (৬ সপ্তাহ) |
১. গম ভাঙ্গা | ৫০.০০ % |
২. চাউলের মিহি কুঁড়া | ০৯.০০ % |
৩. তিলের খৈল | ২৩.০০ % |
৪. শুটকি মাছের গুড়া | ১২.০০ % |
৫. ঝিনুকের গুড়া | ০৫.০০ % |
৬. মাছের তেল | – |
৭. লবণ | ০০.৪০ % |
৮. ভিটামিন–মিনারেল প্রিমিক্স | ০০.৩০ % |
কোয়েল একটি সৌখিন পাখি বর্তমানে এর মাংস এবং ডিম খুব জনপ্রিয়। কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো, বাচ্চা লালন পালন, খাদ্য এবং পানি ব্যবস্থাপনা রেশন তৈরি করা এবং আলোক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
অন্যান্য
মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ

মার্চ মাস কৃষি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। শীতকালীন ফসলের শেষ পরিচর্যা এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রস্তুতি এ সময়ে শুরু হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এখানে মার্চ মাসে কৃষিতে করণীয় কাজসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ধান চাষ
বোরো ধানের পরিচর্যা
- ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করুন।
- পোকামাকড় যেমন ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Brown Plant Hopper) এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে সঠিক ব্যবস্থা নিন।
- ইউরিয়া এবং পটাশ সারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।
গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ
- গ্রীষ্মকালীন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করুন।
- উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করুন।

গম চাষ
- গম ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- ফসল কাটার পর জমি পরিষ্কার করুন এবং পরবর্তী ফসলের জন্য প্রস্তুত রাখুন।

ডালশস্য
- মুগ, মাসকলাই, এবং ছোলার বীজ বপন করুন।
- আগাছা পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক সময়ে সেচ দিন।


তৈলবীজ চাষ
সূর্যমুখী এবং সয়াবিন
- বীজ বপনের জন্য জমি প্রস্তুত করুন।
- সঠিক সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।

সবজি চাষ
গ্রীষ্মকালীন সবজি বপন
- লাউ, কুমড়ো, করলা, এবং ঢেঁড়স বীজ বপন করুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক সেচ প্রদান করুন।
শীতকালীন সবজি সংগ্রহ
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, এবং মূলা সংগ্রহ করে বাজারজাত করুন।



ফল চাষ
- আম, লিচু, এবং কাঁঠাল গাছের মুকুল রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- নতুন ফলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

মৎস্য চাষ
- পুকুর পরিষ্কার করুন এবং পানি পরিবর্তন করুন।
- মাছের খাবারের পরিমাণ এবং পুষ্টি বাড়িয়ে দিন।
- পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব সার প্রয়োগ করুন।

গবাদি পশু পালন
- গরু এবং ছাগলের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
- গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে টিকা নিশ্চিত করুন।
মার্চ মাসে কৃষি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের আয় বাড়ে। সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে করণীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে সফল কৃষিকাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।
লাইভস্টক
জেনে নিন কবুতর পালনের সহজ উপায়

অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে কবুতর পালন ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কবুতর পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব।
লাভজনক এই পাখি পালনের জন্য বাড়তি জ্ঞান ও শিক্ষার প্রয়োজনও হয় না। শুধু সামান্য নজরদারি আর সতর্ক হলেই কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করা যায়। কবুতর প্রতি মাসে দুটি করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চার বয়স ২১ দিন হলেই বিক্রির উপযোগী হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অন্যান্য পাখির মতো কবুতর খাদ্যের অপচয় বেশি করে না। বরং বলা যায় অপচয়রোধী পাখি কবুতর।
কবুতরের বিভিন্ন জাত রয়েছে। বলা হয় পৃথিবীতে ৬০০ জাতের কবুতর রয়েছে। ‘জালালি কবুতর’ উন্নত জাতের দেশি কবুতর। এ ছাড়াও মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা ও পক্কা উল্লেখযাগ্য কবুতরের জাত।
আমাদের দেশে শখের বশে সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর বেশি চাষ করা হয়। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় ডিগবাজি খেয়ে মানুষের নজরকাড়ে।

কবুতরের জন্য ঘর তৈরি পদ্ধতি আগে জেনে নিতে হবে। ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখি যাতে কবুতরকে খেয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন উঁচু ও শক্ত ঘর তৈরি করতে হবে। হালকা কাঠ, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই, শন, পলিথিন, খড় ইত্যাদি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায় সহজেই।
প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘর হলেই চলে। একই সঙ্গে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে। এক বর্গফুট মাপের ঘরের সামনে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির বারান্দা অবশ্যই রাখতে হবে, যাতে কবুতর সহজে দূর থেকে উড়ে এসে আশ্রয় নিতে পারে আবার খাবারও খেতে পারে। প্রতি ঘরের দরজা রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি।
ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে ঘর পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডিম পাড়ার সময় যাতে সহজেই খড় সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য কবুতরের ঘরের আশপাশে খড় রেখে দিতে হয়। ঘর রাখতে হবে সবসময় শুকনো। কবুতর সাধারণত জোয়ার, ভুট্টা, ধান, চাল, কলাই, কাউন, মটর, খেসারি, সরিষা, গম কবুতরের পছন্দনীয় খাবার। এসব খাদ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটি কবুতরের জন্য ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম খাদ্য প্রয়োজন।

এছাড়া বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় কবুতরের খাবার। তবে সেসব খাদ্যে ১৫% থেকে ১৬ % আমিষের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রতি ঘরের সামনে নিয়ম করে খাবার রেখে দিতে হবে সকাল ও বিকালে, সেই সঙ্গে দিতে হবে পর্যাপ্ত পানির জোগানও। ঘরে কবুতরের সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়।
কবুতরের জন্য প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যে ভুট্টা ভাঙা ৩৫ গ্রাম, গম ভাঙা ২০ গ্রাম, সরিষা দানা ১৫ গ্রাম, ছোলা ভাঙা ২০ গ্রাম, সয়াবিন ভাঙা ৫ গ্রাম, চালের কুঁড়া ৪.৫ গ্রাম, লবণ ০.৫ গ্রাম।
কবুতরের কবুতরের খুব বেশি রোগের প্রকোপ দেখা যায় না। তবে যেসব রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে বসন্ত, কলেরা, রক্ত আমাশয় যাকে বলা হয়ে থাকে ককসিডিওসিস, আরও আক্রমণ করতে পারে কৃমি।
কবুতরের বসন্ত রোগে পালকবিহীন স্থানে ফোস্কা পড়ে। গলার ভেতর ঘা হয়, খেতে পারে না। রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত কবুতরের গুটিতে টিংচার আয়োডিন বা স্যাভলন লাগানো যেতে পারে। কবুতরের বয়স যখন চার সপ্তাহ তখন পিজিয়ন পক্স টিকা বুকে ও পায়ের পালক তুলে সিরিঞ্জ দিয়ে দিলে বসন্ত রোগ হয় না।
কলেরা রোগ হলে অস্বাভাবিকভবে কবুতরের দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। শ্বাসকষ্ট হয়, পিপাসা বাড়ে, সবুজ বা হলুদ রঙের ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে, কবুতরের ওজন কমে যায়। শেষে কবুতর হঠাৎই মারা যায়। কলেরা রোগে আক্রন্ত কবুতরকে রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেরামাইসিন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে। রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রোগে রক্ত পায়খানা হয়। খাবার প্রতি অরুচি বাড়ে ও শরীরে দুর্বলতা দেখা যায়। শেষে পালক ঝুলে পড়ে।
রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গ বা রোগের আশঙ্কা করলে পানিতে মিশিয়ে ই.এস.বি-৩ আ এমবাজিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে প্যাকেটের নির্দেশনা মতো। কৃমি হলে কবুতর দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডায়রিয়া হয়। পানির পিপাসা বাড়ে। রক্তশূন্যতা দেখা যায়। ঠিকমতো কবুতরের যত্ন নিলে এটি পালন করে আনন্দ লাভের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন