শাকসবজি
বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের উপায়
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা বেগুনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি কম বয়সী ডগাকে আক্রমণ করে। আক্রান্ত ডগা তাজা ভাব হারাতে থাকে। আক্রান্ত ডগার আকার নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি আক্রান্ত বেগুন রান্না করলে এর স্বাদ হয় তেতো। মারাত্মক আক্রমণের ফলে পুরো গাছটিই মরে যেতে পারে। বেগুন গাছ লাগানোর পর থেকে বেগুন তোলা পর্যন্ত ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা গাছকে আক্রমণ করে। ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার বিভিন্ন স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন- আলমারা, ডগাভাঙা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকা।
পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি মথ। মথগুলো শেষরাতে ওড়াউড়ি করে। তাই এদেরকে সহজে দেখতে পারবেন না। মথ কম বয়সী ডগার উপরে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ডগায় ঘুরে বেড়ায়। কীড়া ডগা ও ফলের ভেতরে ছিদ্র করে ঢুকে খাবার খায়। এ কারণেই ডগার তাজা ভাব হারিয়ে যায়। কীড়া বড় হয়ে ডগা ও ফল ছিদ্র করে বের হয়ে আসে। এরপর এরা মাটিতে চলে যায় এবং শুকনো, ঝরা পাতার সাথে কোকুন তৈরি করে। এই কোকুনের ভেতর থেকে পূর্ণাঙ্গ মথ বের হয়ে আসে। ডিম দেওয়ার জন্য মেয়ে মথ পুরুষ মথের সাথে মিলিত হয়। একটি মথ সারা জীবনে ২৫০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে-
১. মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করুন।
২. নিশ্চিত হয়ে নিন যে, বীজে যেন কোনো রোগ বা ক্ষতিকর কিছু না থাকে।
৩. দিনে অন্তত দু’বার ক্ষেত পরিদর্শন করুন। কারণ এটি খুব দ্রুত বদলে যেতে পারে।
৪. গাছের নিচের দিকের অপেক্ষাকৃত পুরোনো পাতাগুলো সরিয়ে ফেলুন।
৫. ঝরা পাতাগুলো সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। যাতে পোকা কোকুন তৈরি করতে না পারে।
৬. কোনো আক্রান্ত গাছ আছে কি-না, তা দেখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
৭. সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করুন, কোনো ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে কি-না।
৮. ধারালো ছুরি দিয়ে আক্রান্ত ডগা, ফুল বা ফল কেটে ফেলুন। সেগুলো সরিয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন।
৯. ক্ষেতের ধারে-কাছে আক্রান্ত জিনিসগুলো ফেলবেন না। এতে নতুন মথ জন্ম নিতে পারে।
১০. ক্ষেতের চারপাশে জালের বেড়া দিয়ে মথের প্রবেশ ঠেকাতে পারেন।
১১. অর্ধ সেমি ছিদ্রযুক্ত এবং ৩ মিটার উঁচু জাল ব্যবহার করুন।
১২. মথকে দূরে রাখতে জালটির ছিদ্র ছোট হতে হবে। মথ ৩ মিটারের উপরে উড়তে পারে না।
১৩. সাদা নাইলনের জাল ব্যবহার করুন। সাদা জাল ফসলের উপরে ছায়া দেয় না।
১৪. এতে পাখিরাও বেগুন গাছের ফুল এবং কচি ফল নষ্ট করতে পারে না।
১৫. সূর্য ওঠার আগে খুব সকালে মথগুলো বেগুন গাছের কচি ডগায় উড়ে-উড়ে ডিম পাড়ে।
১৬. খুব সকালে উড়ন্ত মথগুলো দেখে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলুন।
১৭. ক্ষেতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন পোকার বিভিন্ন গন্ধ বা ফেরোমন থাকে।
১৮. স্থানীয় কৃষি ডিলারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকা ধরার ফাঁদ কিনতে পারেন।
১৯. নিশ্চিত হয়ে নিন যে, মথ মারার জন্য আপনি ঠিক ফাঁদটিই কিনেছেন।
২০. ডিলারকে বলুন, আপনি বেগুন গাছের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা মারার ফাঁদ কিনতে চান।
২১. ফাঁদের নিচের দিকে মথেরা ডিটারজেন্ট পানিতে ধরা পড়ে।
২২. ফেরোমন ফাঁদ ১০-১২ মিটার দূরে-দূরে পাতুন।
২৩. প্রতিদিন ফেরোমন ফাঁদ পরখ করুন। দরকার হলে ডিটারজেন্ট পানি রিফিল ও পরিবর্তন করুন।
২৪. স্থাপনের ৪০ দিন পরপর ফেরোমন টোপ বদলান।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান
-
রাঙ্গুনিয়ায় ছাদে সাকিবের বাগানে থোকায় থোকায় পাকা আম
-
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ
-
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
আমের চারা তৈরি, চারা রোপণ,সার ব্যবস্থাপনা, সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা,রোগ ব্যবস্থাপনা, পোকা দমন ব্যবস্থাপনা – দা এগ্রো নিউজ
-
লিচুর চারা তৈরি, চারা রোপণ, সার ব্যবস্থাপনা,অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা – দা এগ্রো নিউজ
-
তাল উৎপত্তিস্থান, পুষ্টিমান, ওষুধিগুণ, উৎপাদন পদ্ধতি, বীজতলা তৈরী ও চারা উৎপাদন – দা এগ্রো নিউজ
-
লটকনের ওষুধিগুণ, চাষ পদ্ধতি, চারা রোপণ, পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ- দা এগ্রো নিউজ
-
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতেই ছাদে বা বারান্দায় ফল,সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ
নানা ধরনের সবজি উৎপাদনের জন্য আমাদের মাটি খুবই উপযোগী। শীত ও গ্রীষ্মকালীন চাষ করা যায় এমন সবজির তালিকাটাও বেশ বড়। কিন্তু নানা কারণে আমাদের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সবজি চাষের জন্য বরাদ্দ থাকে রান্না বা গোয়াল ঘরের পেছনের এক চিলতে জমি। অথচ পুষ্টি চাহিদার কথা মাথায় রাখলে সবজি চাষের কথা ভাবতেই হবে। এজন্য সত্যি বলতে কি কম জমি কাজে লাগিয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণের একমাত্র উপায় সারা বছর সবজির নিবিড় চাষ
আমাদের দেশে বেশির ভাগ সবজি উৎপাদন হয় রবি মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে। খরিফ মৌসুম অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় সবজি চাষ খুব কম হয়। ফলে বাজারে এ সময় সবজির দাম থাকে আকাশ ছোঁয়া। বিশেষ করে মে থেকে জুলাই মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও খরার কারণে সবজির উৎপাদন কম হওয়ার জন্য বাজার মূল্য বেশি থাকে।
টানেল চাষাবাদ কি(Tunnel agriculture):
মৌসুমে বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় চাষি ভাইয়েরা ন্যায্য মূল্য পান না। তাই মৌসুম শুরুর আগেই যদি আগাম সবজি উৎপাদন করে বাজারজাত করা যায়, তাহলে দ্বিগুণেরও বেশি দাম পাওয়া যায়। যে কৌশল অবলম্বন করে সারা বছর সবজি চাষ করা বা আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদন করা যায় তার নাম ‘টানেল টেকনোলজি”(Tunnel technology) ।
প্রকৃত মৌসুম ছেড়ে অন্য মৌসুমে সবজি চাষ করার জন্য এই কৌশলের কোনো জুড়ি নেই। তবে এই কৌশলের মাধ্যমে শীতকালীন সবজিকে গ্রীষ্মকালে চাষ করা কঠিন। কারণ শীতকালীন সবজি চাষের জন্য যে ধরনের তাপমাত্রা প্রয়োজন সেই ধরনের তাপমাত্রা কৃত্রিম পরিবেশে তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। তবে এই কৌশলের মাধ্যমে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন সবজিকে শীতকালে চাষ করা খুবই সহজ। কারণ প্লাস্টিক ছাউনি ব্যবহারের মাধ্যমে শীতকালে খুব সহজেই সৌরশক্তি সঞ্চয় করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে নেয়া যায়, যা শীতকালে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের জন্য যথেষ্ট।
কি কি সবজি উৎপাদন করা যায়(Vegetables farming):
টানেল টেকনোলজি বা ছাউনি পদ্ধতি ব্যবহার করে যেসব সবজি খুব সহজেই চাষ করা যায় সেগুলো হলো- শসাজাতীয় সবজি, টমেটো (Tomato),পালংশাক, পাতাকপি, ফুলকপি, শিম (Bean) ইত্যাদি। এই কৌশলে একজন চাষি আগাম সবজি চাষ করে প্রকৃত মৌসুমের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে আমাদের দেশের অনেক অঞ্চলের চাষি ভাইয়েরা সবজি চাষ করে আসছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
টানেলের প্রকারভেদ(Types of tunnel):
নিচু টানেল তৈরি
এ ধরনের টানেল তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ। টানেলের দৈর্ঘ্য হতে হবে ৯৮.৪ ফুট এবং চওড়ায় হতে হবে ১৪.৭৬ ফুট। টানেলের ভেতরের মাঝ বরাবর উচ্চতা হবে ৭ ফুট এবং পাশের উচ্চতা হবে ৫ ফুট। সেচ ও পানি নিকাশের জন্য দুই বেড বা টানেলের মাঝখানে ৬ ইঞ্চি গভীরতার ২ ফুট চওড়া নালা রাখতে হয়। তারপর স্বচ্ছ কালো বা নীল রঙের পলিথিন দিয়ে টানেলটি নৌকার ছইয়ের মতো ঢেকে দিতে হয়।
উঁচু টানেল তৈরি
এ ধরনের টানেল তৈরির প্রধান উপকরণ স্টিল ফ্রেম বা বাঁশ। টানেলের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১৩০ ফুট এবং চওড়ায় হতে হবে ৩২ ফুট। টানেলের ভেতরের মাঝ বরাবর উচ্চতা হবে ১২ ফুট এবং পাশের উচ্চতা হবে ১০ ফুট। সেচ ও পানি নিকাশের জন্য দুই বেড বা টানেলের মাঝখানে ৬ ইঞ্চি গভীরতার ৩ ফুট চওড়া নালা রাখতে হয়। চারা বা বীজ থেকে বীজের দূরত্ব রাখতে হয় ১.৫ ফুট। এরপর স্বচ্ছ কালো বা নীল রঙের পলিথিন দিয়ে টানেলটি নৌকার ছইয়ের মতো ঢেকে দিতে হয়।
টানেল পদ্ধতিতে চাষের জমি তৈরী(Land preparation):
এই পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য যে জমিটি বাছাই করা হয় তা অবশ্যই উর্বর হতে হয়। মাটির পিএইচ থাকতে হয় ৫ থেকে ৭ এর মধ্যে। টানেল তৈরির পর জমি কোদাল দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে ভালোভাবে চাষ বা কর্ষণ করে প্রতি টানেলে পর্যাপ্ত জৈব সার, ২.৫ কেজি খৈল, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম এবং এমওপি ৭০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা গজানোর দুই সপ্তাহ পরে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এগুলো সম্পন্ন হলে চারা বা বীজ রোপণের আগে বেড তৈরি করে নিতে হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে টানেলপ্রতি ২০০ গ্রাম পালংশাকের বীজ বুনলে ১ মাস পর অর্থাৎ আষাঢ় মাসে ফসল তোলা যায়।
কৃষকদের লাভ(Farmers profit):
টানেল পদ্ধতিতে অমৌসুমে সবজি চাষ করে পৃথিবীর অনেক দেশ বিশেষ করে ভারত প্রতি বছর নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর সবজি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। আমাদের দেশের চাষিদের যদি সবজি চাষের এই কৌশল সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে তাহলে আমাদের দেশও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে কৃষকবন্ধুরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হয়ে থাকেন অনেক
শাকসবজি
পুঁইশাক চাষের আধুনিক পদ্ধতি: সহজ উপায়ে উচ্চ ফলন ও লাভবান হওয়ার সেরা সমাধান!
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিপুঁইশাক চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেনঃ
সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে। আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে। পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিগ্রেড তামপাত্রা প্রয়োজন। তাই শীতে সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকে সেই সময় বীজ বপনকরা ভাল। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়। কখনও কখনও বেডে চারা তৈরি করা হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা হয়। চারা দু সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায় বা ফাঁকা জায়গা পূরণ করা যায়। সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫-২.৫ কেজি বীজ লাগবে।
উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
জমির আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
পুঁইশাক চাষে সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনাঃ
ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারার বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।
পুঁইশাক চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ
বর্ষায় সাধারনত সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে।
পুঁইশাক চাষে আগাছা ও নিড়ানিঃ
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা ২৫-৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে, এতে গাছ ঝোপালো হয়।
পোকামাকড় ও রোগদমনঃ
পুঁইশাকে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়াও আরও কয়েকধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
পুঁইশাক গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাক খাওয়াও হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বের হয়।
পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৮০ কেজি এবং হেক্টোর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টন ।
মেটে আলুর উপকারিতা
মেটে আলু কন্দালজাতীয় ফসল। আমাদের দেশে এটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষবাস তেমনটি দেখা যায় না, তবে প্রতিটি জেলায় বাড়ির চারপাশে, গাছের নিচে, মাচায়, আঙিনায়, বেড়ার ধারে এর চাষাবাদ হতে দেখা যায়। মেটে আলু গরম আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। ঠান্ডায় গাছ বাড়ে না, শীতে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। হালকা দো-আঁশ মাটি বেশি উপযোগী। এ গাছ আংশিক ছায়াতে ভালো হয়। জীবিত গাছের জন্য মাচা, জাংলা, বেড়া এসবের প্রয়োজন কারণ এটি একটি লতানো গাছ। অনেক ক্ষেত্রে জাংলা বা মাচার জন্য অতিরিক্ত খরচ পড়ে না এবং বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত স্থান বা রাস্তার ধারে গাছের নিচেও চাষাবাদ হতে দেখা যায়।এটি ওল, গোল আলু এসব সবজির মতোই ভর্তা, মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। সুতরাং এর চাষ বিষয়ে একটু সচেতন হলে সবজির ঘাটতি মেটাতে, বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই এর চাষ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেটে আলু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের খুবই ভালো উৎস। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে।
গাছ আলুটি একবীজপত্রী লতানো উদ্ভিদ। এই আলু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত লাভ করেছে। যেমন- গড় আলু, মেটে আলু, গুইচ্যা আলু, লেমা আলু, ধুসড়ী আলু, আলতাপাট, চুবডি আলু, হরিণখালি, মাছআলু, হাতি পায়া, মৌ আলু-মঘু আলু ইত্যাদি নামকরণে বেশি হলেও জাত ৪-৫টির মতো আছে বলে জানা যায়। জাতভেদে মাটিরনিচে প্রতিটি আলু ২ কেজি থেকে ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব কোনটি ডিম্বাকৃতি, লম্বাটে, হাতির পায়ের ন্যায়, হরিণের মাথার মতো ইত্যাদি আকারে হয়ে থাকে। জাতভেদে পিংক কালার, ধূসর/মেটে রঙের আলু হয়। মাটির নিচের আলু ছাড়াও লতানো গাছে ডিম্বাকৃতি ও লম্বাটে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের অনেক আলু ঝুলন্ত অবস্থায় ধরে থাকে। লতায় ধরে বলে একে কোনো কোনো এলাকায় পাতাশি নামে পরিচিত। এই পাতাশি বীজ হিসেবে, সবজি হিসেবে এবং পুড়িয়ে বেশ মুখরোচক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সামান্য আঠালো এবং অল্পতেই সিদ্ধ হয় এরূপ জাতের আলু খেতে সুস্বাদু, চাহিদাও বেশি।
যেহেতু মেটে আলু পুরো বর্ষা মৌসুমজুড়ে থাকে বিধায় ভারি বৃষ্টিপাতেও পানি দাঁড়াবে না আবার সেচের সুব্যবস্থা আছে এরূপ জমি/স্থান নির্বাচন করতে হয়।মেটে আলুলাগানোর অনৱত এক মাস আগে ফাল্গুনে চাষ দিয়ে পুরো জমিতে ভালোভাবে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ৩-৪ হাত দূরত্বে ২ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট গভীর গর্ত করে ২০-২৫ দিন ধরে মাটি রোদে শুকানোর পর জৈবসার+ছাই চিটা একত্রে মিশিয়ে প্রতিটি গর্ত ভরাট করতে হবে। প্রতিটি গর্তে রাসায়নিক সার-ফসফেট ৫০ গ্রাম ও পটাশ ৫০ গ্রাম দিয়ে রস না থাকলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ১০-১২দিন পর মেটে আলুর (মাটির নিচের) মুখিকন্দ অথবা লতায় যেটি ধরে ‘পাতাশি’তা বীজ হিসেবে বপন করতে হবে। জীবিত গাছ আশ্রয়দাতা হলে গাছের গোড়ার ২ হাতের মধ্যে মাদা তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের নালার ব্যবস্থা করতে হবে।
মেটে আলু লাগানোর নিয়ম
বীজ শোধন করে লাগালে এর প্রধান এবং একমাত্র রোগ, গোড়া পচা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের অনুমোদিত যে কোনো ওষুধ ২ গ্রাম অথবা ম্যানকোজেব গ্রুপের অনুমোদিত যে কোনো ওষুধ ৩ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩০-৪০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে, বীজ তুলে ছায়ায় শুকিয়ে গর্তে লাগাতে হবে। এছাড়াও কাঁচা গোবর পানিতে গুলে ২ গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম/ম্যানকোজেব দিয়ে তার মধ্যে বীজ/কন্দ ডুবিয়ে তুলে ছায়ায় শুকিয়ে লাগালে তাড়াতাড়ি অঙ্কুরোদগম এবং শোধিত হয়।
মুখী উপরদিকে রেখে মাটির উপরের স্তর থেকে ৪ আঙুল নিচে বীজ/কন্দ লাগাতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে। এক্ষেত্রে লাগানোর স্থানে খড়/কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া যেতে পারে। হাফ কেজি থেকে ২ কেজি ওজনের বীজ/কন্দ লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রথম বছর ফসল না তুলে রেখে দিলে পরবর্তী বছর এ থেকে সুঠাম চারা বের হয় এবং ওই চারা লাগালে ফলনও বেশি হয়। মার্চ এপ্রিল (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে এ আলু বপনের উপযুক্ত সময়।
চারা গজানোর পর থেকেই জমি/গাছের মাদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে গোড়ার মাটি বেশি আলগা না হয় এবং দাওয়ালি/কুরনি বা কোদালের আঘাত যেন গাছে না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ এতে গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা এবং গোড়া পচা রোগে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।চারা লাগানোর এক মাস পর পর ২-৩ বার ইউরিয়া ৫০ গ্রাম এবং পটাশ ৫০ গ্রাম হারে প্রতিটি গাছের গোড়ার চারপাশের মাটিতে ২-৩ আঙুল গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। লতানো গাছের অবলম্বন, মাচা যত ভালো হবে এবং গাছ যত প্রসারিত হতে পারবে মাটির নিচের আলু তত বড় হবে।
মেটে আলুতে রোগ এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে কোনো কোনো ৰেত্রে শোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এক্ষেত্রে কীটনাশক হিসেবে সেভিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগের ৰেত্রে মেটে আলুতে ছত্রাকের কারণে ডাঁটায় /লতায় প্রথমে বাদামি দাগ হয় এবং পরে গোড়া/পাতা পচে ঢলে পড়ে। এক্ষেত্রে কপার অঙিক্লোরাইড গ্রুপের ওষুধ ৪ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শামুকও ক্ষতি করে থাকে। হাত দিয়ে শামুক মেরে এর হাত থেকে সহাজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।মেটে আলু তোলা/সংগ্রহের সঠিক সময় মেটে আলুর জীবনকাল ৮-১০ মাস।
কার্তিক-অগ্রহায়ণে ঠান্ডা পড়তে শুরু করলে পাতা হলদে হয়ে পুরো গাছ শুকিয়ে যায়। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে আলু তোলা উচিত। এতে আলু পরিপক্বতার কারণে বীজের মান উন্নত এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মেটে আলুর গোড়ার মাটি সরিয়ে মুখের অংশ ঠিক রেখে নিচের দিক থেকে খাওয়ার জন্য কিছুটা আলু কেটে নেয়া যায়। এতে গাছ মরে যায় না বরং ওই কাটা অংশে আলু আগের অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে বড় হতে থাকে। উন্মুক্ত জায়গায় চাষ করে মাদাপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত গড় আলু পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও জাংলা/মাচায় চাষেও সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি মেটে আলুর গড় ফলন ৩-৪ টন হয়ে থাকে।
অন্য সবজির তুলনায় এই সবজি উৎপাদনে ঝুঁকি, রোগবালাই অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে মানুষের শারীরিক পুষ্টিহীনতা দূর করতে, সবজির ঘাটতি মেটাতে, পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বিষমুক্ত সবজি পেতে ও আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নে এ সবজিটি বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। আমি একজন চাষি হিসেবে মনে করি মেটে আলু চাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান এবং উৎপাদনমুখী উন্নয়ন করা সম্ভব। মেটে আলু আদি কাল থেকে ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে প্রসার-প্রচার হয়নি বিধায় ব্যাপকভাবে এর চাষের উন্নয়নও ঘটেনি। অথচ একটু সচেতন হলে অতি সহজে কম খরচে সহজলভ্য সবজি মেটে আলু চাষ করা যায় যা কিনা পুষ্টির অভাব পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
পুষ্টিমূল্যঃ শুকনো মরিচে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ থাকে।
ভেষজ গুণঃ নিয়মিতভাবে কাঁচা মরিচ খেলে মুখে ‘ঘা’ হয় না।
ব্যবহারঃ রান্নাবান্না ও মুখরোচক খাবার তৈরি ছাড়াও মরিচ বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে মরিচের আচারও করে থাকেন।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ প্রচুর আলোবাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দোআঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
জাত পরিচিতিঃ ঝাল ও মিষ্টি এ ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কামরাংগা, আকালী ও কালো মরিচ খুব ঝাল।
চারা তৈরিঃ জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে ও আগাছা বাছাই করে ৩Í১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্রআশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুনচৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।
চারা রোপণঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুতির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
চারা রোপণঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুতির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
জীবন চক্রঃ এ পোকা সাধারনত পাতার নিচের দিকে অতি ক্ষুদ্র সাদা ডিম পাড়ে। ডিম পরে বাদামী রং ধারণ করে ও ৩১৭ দিন পর ডিম ফুটে নিম্ফ (বাচ্চা ) বের হয়। বাচ্চা সবুজাভ সাদা, ২৬ সপ্তাহ নিম্ফ অবস্থায় থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। পূর্নাঙ্গ পোকা ১০১৫ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনাঃ হলুদ রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটারের ৫ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবান মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
পোকার নামঃ থ্রিপস
ভূমিকাঃ এটি একটি ক্ষুদ্র পোকা। আক্রমণ বাহির হতে বোঝা যায় না বিধায় ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং মাঝে মাঝে ক্ষেত পরিদর্শন করে ফসলের অবস্থা দেখে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোকা চেনার উপায়ঃ থ্রিপস অতি ক্ষুদ্র একটি পোকা যা খালি চোখে কোন মতে দেখা যায়। এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে অধিক আক্রমণে পাতা কুঁচতে যায় এমনকি গাছ থেকে কোন ফুল ফল নাও আসতে পারে। এ পোকা ভাইরাস রোগও ছড়ায়।
ক্ষতির নমুনা
- নিম্ফ (বাচ্চা) ও পূনাঙ্গ পাতার রস চুষে খায় বলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং অনেকটা নৌকার মত দেখায়।
- পোকার আক্রমনে পাতা বাদামী রং ধারন করে।
- নতুন ও পুরাতন উভয় পাতায় আক্রমন করে।
অনুকুল পরিবেশঃ উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া ।
জীবন চক্রঃ পূর্ণ বয়স্ক পোকা ৪৫৫০টি ডিম পাড়ে। ৫৬ দিনে ডিম থেকে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয় এবং নিম্ফ ৭৮ দিন পর পূর্নাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। র্পূনাঙ্গ পোকা ৩১ দিন পর্যন্ত বাঁচে। পাতা নাড়াচাড়া করলে এরা উড়ে পালায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার
- মাকড়সা এ পোকা খায় বিধায় এর সংখ্যা বাড়ানো গেলে সহজেই থ্রিপস দমন করা যায়।
- অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ ।
পোকার নামঃ জাব পোকা
ভূমিকাঃ র্পূনাঙ্গ ও নিম্ফ (বাচ্চা) পাতা, ফুল, কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। অধিক আক্রমনে গাছের বাড় বাড়তি কমে যায় ও ফলন কম হয়। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
পোকা চেনার উপায়ঃ জাব পোকা অতি ছোট, দেহ নরম ও উজ্জ্বল কাল রংয়ের হয়ে থাকে। পাখাওয়ালা জাব পোকা উড়তে পারে কিন্তু নিম্ফ বা পাখা বিহীন উড়তে পারে না । এরা দল বদ্ধ ভাবে বাস করে।
ক্ষতির নমুনাঃ পূর্নাঙ্গ ও নিম্ফ পাতা, ফুল কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়।
- পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি ও ফুল, ফল ধারণ বাধাগ্রস্থ হয়
- এ পোকা থেকে নিঃসৃত মধুরসে কালো শুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়।
অকুকুল পরিবেশঃ বাতাসে আদ্রতা বেশী ও মেঘলা আকাল
জীবন চক্রঃ এ পোকা কোন যৌন মিলন ছাড়াই ১০১২ দিনের মধ্যে ৮৩০ টি নিম্ফ জন্ম দিতে পারে। নিম্ফ অবস্থা ৫৮ দিন থাকে। পাখা বিহীন জাব পোকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা দিতে পারে। এরা সারা বছর বংশ বিস্তার করে।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমনের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা।
- লেডি বার্ড বিটলের পূর্নাঙ্গ ও কীড়া (গ্লাব) এবং সিরফিড ফ্লাই এর কীড়া জাব পোকা খায় বিধায় এদের সংরক্ষণ ও সংখ্যা বাড়ানো গেলে জাবপোকা অতিদ্রুত খেয়ে ফেলে ।
- অনুমোদিত কীট নাশক ব্যবহার করা
পোকার নামঃ ফলছিদ্রকারী পোকা
ভূমিকাঃ এ পোকার মথ নিশাচর এবং রাতের আলোতে আকৃষ্ট হয়। পোকার কীড়ার আক্রমণে মরিচ ছিদ্র যুক্ত দেখায় ও বাজার মূল্য কমে যায়।
পোকা চেনার উপায়ঃ মা পোকাকে (মথ) সাধারনত রাত ছাড়া দেখা যায় না। কীড়াকে (বাচ্চা) ফলের মধ্যে দেখা যায়। কীড়া লম্বায় প্রায় ২ ইঞ্চি। কীড়ার গায়ের রং কালচে ধূসর থেকে হালকা বাদামী এবং শরীরের উভয় পার্শ্বে লম্বালম্বি হালকা কাল ও বাদামী রংয়ের দাগ দেখা যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ কীড়া ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়।
- একটি পোকা একাধিক ফলে আক্রমন করতে পারে এবং ফলের ভেতর কীড়ার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যায়।
- আক্রান্ত ফল অসময়ে পাকে।
অনুকুল পরিবেশঃ বিকল্প পোষকের উপস্থিতি ।
জীবন চক্রঃ মথ পাতার নিচে ২০০৩০০ ডিম পাড়ে। ৩৪ দিনে ডিম ফোটে কীড়া বের হয়। ছোট কীড়া একত্রে থাকে তবে বড় হলে সারা মাঠ ছড়িয়ে পড়ে। কীড়া ১৪১৬ দিন পর পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলি ২৩ ইঞ্চি মাটির গভীরে থাকে। ১০১৫ দিন পর পুত্তলি হতে পূর্ণাঙ্গ মথ বের হয়। জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ৩০৩৫ দিন লাগে । এরা বছরে ৮বার বংশ বি¯তার করে।
ব্যবস্থাপনাঃ জমি থেকে ডিম ও কীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করা।
- প্রতি বিঘায় ১৫ টি হারে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথ মেরে ফেলা।
- প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরজীবী পোকা; ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ ব্যবহার (প্রতি হেক্টরে ১ গ্রাম ডিম) করা।
- অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
নামঃ চওড়া মাকড়
ভূমিকাঃ এদের পা ৮ টি বলে মাকড় বলে। বালিকণার মত ক্ষুদ্র বলে দেখা যায় না কিন্তু এদের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।
মাকড় চেনার উপায়ঃ মাকড় অতি ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না, রং সাদা বা হলদে। এরা পাতার নিচে মধ্য শিরা ঘিরে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। দেহ নরম, ডিম্বাকৃতির। এরা কাঁকড়ার মত দেখায়।
ক্ষতির নমুনাঃ পাতার নীচে থেকে রস চুষে খায় ফলে পাতার শিরার মধ্যকায় এলাকার বাদামী রং ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়।
- আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং কচি পাতার নীচের দিকে বেঁকে পেয়ালা আকৃতির হয়ে যায় ও পাতা সরু হয়।
- ব্যাপক আক্রমণে পাতা ভেঙ্গে যায়।
- ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।
অনুকুল পরিবেশঃ বিকল্প পোষক।
জীবন চক্রঃ স্ত্রী মাকড় পাতার নীচে ৩০৭৬ টি ডিম পাড়ে। ২৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। ২৩ দিন পর কীড়াগুলো নিম্ফে পরিণত হয় এবং ১ দিন পর পূর্ণাঙ্গ মাকড়ে পরিণত হয়।পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী মাকড় ৮১৩ দিন বাঁচে ও পুরুষ মাকড় ৫৯ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে।
- প্রতি লিটার পানিতে নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিকস্ মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
- পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
- অনুমোদিত মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
রোগের নামঃ ক্ষত, এনথ্রাকনোজ বা ডাইব্যাক
রোগের কারনঃ কলিটোট্রিকাম ক্যাপসিসি নামক ছত্রাক দ্ধারা এ রোগ হয়।
ভূমিকাঃ এ রোগের আক্রমণে গাছ বড় হয় না, পাতায় দাগ পড়ে ও ডগা থেকে শুরু হয়ে পুরো গাছ মরে যেতে পারে। মরিচে আক্রমন হলে মরিচের ফলন কম হয় এবং রং বিবর্ণ হওয়ায় বাজার মূল্য কমে যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের পাতা, ডাল, ফুল ফল আক্রান্ত হয়।
- আক্রান্ত পাতা ঝরে যায় ও ডগা উপর হতে মরতে শুরু করে।
- আক্রান্ত গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে, দুর্বল হয়ে যায় ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- ফলের উপর গোলাকার কাল দাগ পড়ে এবং দাগের চারিদিকে গাঢ় হলুদ রিং বা বলয় থাকে। এ দাগ বৃদ্ধি পেয়ে ফল পঁচিয়ে দেয় ও ঝরে পড়ে।
- আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায।
অনুকুল পরিবেশঃ আদ্র আবহাওয়া ও অধিক বৃষ্টিপাত এ রোগ বিস্তারে সহায়তা করে।
বিস্তারঃ গাছের পরিত্যাক্ত অংশ, বিকল্প পোষক হতে বায়ু, পানি, ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। তাছাড়া বীজের মাধ্যমে ও এ রোগের বিস্তার হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- আক্রান্ত গাছের পরিত্যাক্ত অংশ ধ্বংশ করতে হবে।
- অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্ধারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।
- ক্ষেতে রোগের আক্রমণ দেখা মাত্র অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
রোগের নামঃ পাতা পঁচা
রোগের কারণঃ চুয়ানিফোরা নামক ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়।
ভূমিকাঃ ক্ষেতে আক্রমণ বেশী হলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এ কারনে রোগের আক্রমনের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা প্রশাখা, পাতা ফুল ও ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় পানি ভেজা দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ বৃদ্ধি পায় ও আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারন করে এবং পাতা দ্রুত পঁচে যায়। অনুকুল পরিবেশে ৫৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ মরে যেতে পারে।
অনুকুল পরিবেশঃ উচ্চ তাপ মাত্রা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায় ।
বিস্তারঃ বায়ু, আক্রান্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
ব্যবস্থাপনাঃ ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ নষ্ট করতে হবে।
- গাছ আক্রান্ত হওয়া মাত্রই অনুমোদিত ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ লিফ কার্ল
রোগের কারণঃ একপ্রকার ভাইরাস
ভূমিকাঃ যে কোন বয়সের গাছ আক্রান্ত হতে পারে তবে বয়স্ক গাছই বেশী আক্রান্ত হয়। পাতা কুঁকড়িয়ে যায় বলে গাছের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যহত হয় ও ফলন কমে যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ
- আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যায় ও সাধারণ পাতা অপেক্ষা পুরু হয়।
- গাছের পর্ব মধ্য ছোট হয় ও গাছ খাট আকারের হয়।
- ফুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- ভাইরাস আক্রান্ত গাছ মরে যায় না তবে পুনরায় স্বাভাবিক ও হয় না ।
অনুকূল পরিবেশঃ বিকল্প পোষকের উপস্থিতি
বিস্তারঃ পোকা দ্বারা এ রোগের বিস্তার ঘটে।
দমনঃ আশে পাশের সোলানেসি পরিবারের অন্যান্য পোষক উদ্ভিদ ধ্বংশ করতে হবে।
অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ ফুল আসার পর ১৫২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন কাঁচা ১০১১ টন ও শুকনো ১.৫২.০ টন।
শাকসবজি
লাভজনক সবজি চাষের সেরা পদ্ধতি শিখুন, বদলে দিন আপনার আয় আর সফলতার গল্প!
লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধিসবজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় সবজিকে উদ্যানতাত্বিক ফসল (Horticultural crops) বলা হয়ে থাকে। পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি ফসল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য সবজি চাষের আধুনিক কলাকৌশল জানা জরুরি।
আর আধুনিক কলাকৌশল বলতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে সারাদেশে যেমন সব ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়না ঠিক তেমনি সকল সবজিই আবার সারাবছর উৎপাদিত হয়না। একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে। আবার বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ সবজির জাত উৎপাদন করা যায়।
সারাদেশে সারাবছরই যেসকল সবজি সহজে উৎপাদিত হয়ে থাকে তাদের কিছু শাকসবজির কথা এখানে তুলে ধরছি। লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিআলু শাক, ঢেড়শ, গাজর, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি পরিচিত শাকসবজি। তাছাড়া অপরিচিত বিশেষ কিছু সবজি বিশেষ বিশেষ এলাকার বিশেষত্ব হিসেবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত ফসলগুলোর মধ্যে কিছু শুধু শাক আর বাকীগুলো শাক এবং সবজি উভয় হিসেবেই প্রচলিত রয়েছে।
কৃষিতাত্বিকভাবে রবি (শীতকাল) ও খরিপ (গ্রীষ্মকাল)- এ দুধরনের মৌসুম রয়েছে। খরিপের আবার দুটি ভাগ, যথা- খরিপ-১ (আগাম গ্রীষ্ম) এবং খরিপ-২ (বর্ষাকাল)। তবে শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে বাহারি ও রকমারি বৈচিত্র একটু বেশি। শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- টমেটো, শীতলাউ, ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, সীম, মূলা, ব্রকলি, বাটিশাক, ওলকপি, শালগম, বেগুন, গোল আলু ইত্যাদিই প্রধান। অপরদিকে শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উৎপাদিত হয় এমন ফসলের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের কচু, ওলকচু, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, পটোল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদিই প্রধান।
সবজি ফসল উৎপাদন অন্যান্য ফসলের মতো নয়। সবজি ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ করতে গেলে অল্প পরিমাণ জায়গায় অধিক পরিমাণ ফসল ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। সবজি আবাদেও জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে। সেখানে ভালোভাবে চাষ-মই দিয়ে জমির মাটি জো অবস্থায় ঝুরঝুরে করে সেখানে এক মিটার প্রশস্ত এবং প্রয়োজনমত জমির আকার-আকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে লম্বা বেড তৈরী করে নিতে হবে। প্রতিটি বেডের মাঝখানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে নালা সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ নালার মাটি তুলেই দুইপাশে বেড প্রয়োজনমত উঁচু করতে হবে।
এভাবে বেড তৈরীর একটি বিশেষত্ব হলো শাকসবজি চাষাবাদ অন্য সাধারণ ফসল আবাদের চেয়ে একটু ভিন্ন। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি সতর্কতা ও যত্নের। শাকসবজির চাষাবাদে যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের চাহিদা থাকে অপরদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্যই বেড তৈরী করে মাটি কিছুটা উঁচু করা হয় সেখানে আবার নালা তৈরী করে নিষ্কাষনের ব্যবস্থাও রাখা হয়। কিন্তু বেড এবং নালা তৈরী না করলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদ হয়না। সেঠা হয় সাধারণ শাকসবজি চাষ। এতে ফলন অনেক কমে যায়।
পেপে, কাঁচকলা- এ জাতীয় সবজি বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তা বা পুকুরের ধারে সহজেই আবাদ করা যায়। লালশাক, ডাটা শাক, পাটশাক, মূলাশাক, গাজর, শালগম ইত্যাদি সবজি তৈরীকৃত বেডে ছিটিয়ে বীজ বুনে দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, ঢেড়শ, কচু, ওলকচু ইত্যাদি সবজি এক মিটারের বেডে দুই সারি করে নির্ধারিত দূরত্বে চারা লাগিয়ে আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সেজন্য এসব সবজি উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে নার্সারিতে চারা তৈরী করে নিতে হয়। অপরদিকে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, চাল কুমড়া, পটোল, কাকরোল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, সীম, বরবটি ইত্যাদি লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য উক্ত বেডে দুইটি সারি করে সেখানে জাংলা দিয়ে দিতে হয়। সাধারণত বেডের দুইপাশে খুটি দিয়ে পরে তা ইংরেজি অক্ষর ‘এক্স’ আকৃতিতে বা ‘ভি’ আকৃতিতে বাঁকিয়ে বেঁধে দিতে হয়।
বেড ছাড়াও লতাজাতীয় এসব সবজি অতি সহজেই ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য যেকোন ফসলের তুলনায় এসব সবজি ফসলের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিনা আবাদেই এসব সবজি চাষ করা যেতে পারে। সেজন্য বন্যা পরবর্তীতে পুনর্বাসনের সময় বিনাচাষে এসব আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ জৈবভাবেই এসব সবজি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আবাদের পূর্বে সামান্য পরিমাণ প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাকীটা মেটাতে হবে বাড়িতে উৎপাদিত জৈব সারের মাধ্যমে। তারপর আন্তপরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতেও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তখন এসব উৎপাদিত ফসল সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
কাজেই এভাবেই সারাবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বষ্পপরিসরে শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে তা বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদার একটি বিরাট অংশ শাকসবজি থেকে আসা দরকার। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেটা নিবিড়ভাবে এবং নিরাপদভাবে খেতে হলে নিজের উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম। কাজেই আমাদের সারাবছর অলস সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আসুন নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির বাগান গড়ে তুলি।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন