ফল
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : তৃতীয় পর্ব
লেখক
জাগোনিউজ২৪.কমআখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-
সাথীফসল নির্বাচনে বিবেচ্য
সাথীফসলটি যদি আখের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে সাথীফসল এবং আখের ফলন কমে যেতে পারে। তাই সাথীফসল নির্বাচনে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে। তা হচ্ছে- অবশ্যই ছোট আকৃতির ও খাড়া জাতের হতে হবে। মেয়াদ অবশ্যই চৈত্র-বৈশাখ মাসে শেষ হতে হবে। শিকড়ের গঠন এমন হবে যেন আখের নালায় ছড়িয়ে না পড়ে। ফলন, প্রতিক্রিয়া এবং উভয় ফসলের আয়-ব্যয় বিবেচনায় আনতে হবে। উৎপাদিত সাথীফসলের বাজারজাত ও গুদামজাত করণের সুবিধা থাকতে হবে।
আবাদের নিয়ম
সাফলভাবে সাথীফসল করতে হলে আখের সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩.০-৩.৫০ ফুট হতে হবে এবং সারি করে বপণ বা রোপণ করতে হবে। জোড়াসারি পদ্ধতিতে সাথীফসল করতে হবে। প্রত্যেক ফসলের জন্য অনুমোদিত হারে সার ও কীটনাশক পৃথকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যেক ফসলের পরিচর্যা সঠিক সময়ে করতে হবে এবং সাথীফসল তোলার পর ফসলের অবশিষ্ট অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সাথীফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড়ের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপযোগী সাথীফসল
আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লালশাক, পালনশাক, পেঁয়াজ, রসুন, মশুর, সরিষা ও অন্যান্য শীতকালীন সবজি।
জোড়াসারিতে রোপণ
ভালোভাবে তৈরি করা জমিতে ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে হাত লাঙল বা কোদাল দিয়ে লাইন টেনে ৬-৯ ইঞ্চি গভীর নালা করে মাটি ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে দু’নালার মধ্যবর্তী স্থানে রাখতে হবে। এরপর ৪-৪.৫ ফুট ফাঁকা রেখে একইভাবে আবার দুটো জোড়াসারির নালা করতে হবে। এভাবে নালার মাথায় মাথায় তিন চোখ বিশিষ্ট বীজখণ্ড স্থাপন করে অথবা ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে ব্যাগ বা বেডচারা রোপণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে জমিতে আখের মোট সারির সংখ্যা প্রচলিত পদ্ধতির সমানই থাকে। শুধু আখের সারির ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে সাথীফসল চাষাধীন জমি বাড়ানো যায়। ফলে আখের ফলনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না।
সারির সংখ্যা
সাথীফসলের সাথে সারির যে রকম সংখ্যা হতে পারে। তা হচ্ছে- আলু আগাম জাত-৩, আলু নাবী জাত-২, সরিষা ২-৩, ছোলা-২, পেঁয়াজ/রসুন ৫-৬, মসুর- ৩, কপি-২ সারি।
দ্বিতীয় চাষ
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম সাথীফসল সংগ্রহ করে আরও একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও স্বল্পমেয়াদী সাথীফসল চাষ করা যায়। সম্পূরক সেচ, মাটির রস, মৌসুমী বৃষ্টিপাত, প্রথম সাথীফসলের ধরন ও জমির উর্বরতার ওপর দ্বিতীয় সাথীফসল চাষ ও এর ধরন নির্ভর করে। দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে যে ফসলগুলো চাষ করা যায়, তা হলো-ডাঁটা, পুঁইশাক, মুগ, চিনাবাদাম, কলমিশাক, ঢেঁড়শ, ধৈঞ্চা ও নীল (সবুজসার)। বিশেষ করে প্রথম সাথীফসল হিসেবে আলু ও দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে ডাঁটা, কলমিশাক ও মুগ ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মুড়ি আখের সঙ্গে
আখ কাটার পরপরই শুকনো পাতা পুড়িয়ে আখের গোছা মাটি সমান করে কেটে জমি পরিষ্কার করে দু’সারি আখের মধ্যবর্তী স্থান গভীর করে লাঙল বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিতে হবে। আখের গোছার দু’পাশে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে গোছার দু’পাশের মাটি আলগা ও সার মেশানোর কাজ করে সব জমি মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। এমন দু’সারি আখের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সময় ও জমি উপযোগী সাথীফসল বপন বা রোপণ করতে হবে। সাথীফসলের জন্য অনুমোদিত মাত্রায় সার অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।
সময়ভেদে চাষ
অক্টোবরে কর্তণকৃত আখের জমি: এসব জমিতে পেঁয়াজ, ক্রান্তি জাতের মুগডাল, আগাম আলু, মাসকলাই, পালংশাক, আগাম ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, মুলা ইত্যাদি সাফলভাবে চাষ করা যায়।
নভেম্বরে কর্তণকৃত আখের জমি : যেকোন ধরনের উপযোগী সাথীফসল মুড়ি আখের সাথে ফলানো সম্ভব। বিশেষভাবে উপযোগী কয়েকটি সাথীফসল হলো- আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, মসুর, রসুন, ছোলা, গম এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।
শূন্যস্থান পূরণ
আখ রোপণের পর কখনো কখনো সন্তোষজনক অঙ্কুরোদগম হয় না। জমিতে যে স্থানে বীজ গজায়নি তা নিশ্চিত হয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ফাঁকা স্থানে বীজ রোপণ করা প্রয়োজন। দু’ফুট দূরত্বের মধ্যে কোন চারা দেখা না গেলে সেখানে বীজ গজায়নি বলে ধরে নিতে হবে এবং অবিলম্বে সেখানে সুস্থ-সবল বীজ রোপণ করতে হবে। চারা যে পদ্ধতিতে রোপণ করা হয়েছিল; সে পদ্ধতিতে ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে হবে এবং তা অবশ্যই একই জাতের আখবীজ দিয়ে করতে হবে।
মাটি আলগাকরণ
চারা অবস্থায় ভারি বৃষ্টিপাতের পর জমিতে জো এলে অবশ্যই মাটি আলগা করে দিতে হবে। বীজ রোপণের পরে এবং অঙ্কুরোদগম শেষ হওয়ার আগে বৃষ্টিপাত হলে জমির উপরিভাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। শক্ত স্তরের জন্য বীজের চোখ গজাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ অবস্থায় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ছোট কোদাল দিয়ে জমির উপরিভাগ হালকাভাবে কুপিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে নতুন চারাগুলো মাটি থেকে উঠে আসতে পারে। এসময় সতর্কতা নিতে হবে যেন চারা কেটে না যায়। আখের বৃদ্ধিকালীন সময়ে যতবারই ভারি বৃষ্টিপাত হবে, জো আসার সঙ্গে সঙ্গে ততবারই মাটি আলগা করে দিতে হবে। চারা অবস্থায় মাটি আলগাকরণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন মাটি চারার গোড়ায় পড়ে নালা ভর্তি না হয়। চারার গোড়া মাটি চাপা পড়লে কুশি কম হবে এবং কুশির বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
আগাছা দমন
আগাছা দমন ব্যবস্থা না করলে ফসলের ফলন কমে যায়। কারণ আগাছা পানি ও খাদ্যের জন্য ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। ফসলের তুলনায় আগাছার বৃদ্ধি দ্রুত হয়ে থাকে। তাছাড়া ঘন আগাছা নানা ধরনের পোকামাকড়ের ডিম পাড়ার আকর্ষণীয় স্থান। অনেক মাজরা পোকা ঘাসের জন্য আখের ক্ষেতে আকৃষ্ট হয়।আগাছার বৃদ্ধি, জমির অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করেই আগাছা দমনের উপযুক্ত সময় বেছে নেওয়া ভালো। আগাছা গজানোর পরপরই নিড়ানি দিয়ে সহজেই নির্মূল করা যায়। এসময় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আখের তেমন ক্ষতি হয় না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এরা বেশি পরিমাণ রস ও খাদ্য মাটি থেকে সংগ্রহ করতে থাকে। এ পর্যায়ে আগাছা দমন ব্যবস্থা কষ্টসাধ্য। ফুল ধরার আগে আগাছা দমন ব্যবস্থা না করলে এদের বংশ বিস্তার ঘটবে এবং পরবর্তী বছরে এদের প্রকোপ ব্যাপকতর হবে।
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : তৃতীয় পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : তৃতীয় পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : তৃতীয় পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : তৃতীয় পর্ব
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
কৃষিবিষয়ক কিছু প্রশ্নোত্তর : তৃতীয় পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : শেষ পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : সপ্তম পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : ষষ্ঠ পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : পঞ্চম পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : চতুর্থ পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : দ্বিতীয় পর্ব
-
জেনে নিন আখ চাষের পদ্ধতি : প্রথম পর্ব
আম বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ফলের নাম । আমকে ফলের রাজা বলা হয় । সারা দেশেই এর চাষ হলেও বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হল এই আম । বাংলাদেশে অনেক জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে । তবে এর মধ্যে ভাল জাতের আমের চাষ রাজশাহী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ । শহরের বাসিন্দারা ছাদে দুচারটা আম গাছ লাগিয়ে শখ মিটাতে পারেন ।
ছাদের উপযোগী জাতঃ সব জাতের আমই ছাদে চাষ করা সম্ভব ।
তবে ফলন বেশী হয় ছাদের জন্য এমন কিছু জাত নির্বাচন করা উচিৎ । এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় বারি আম -৩ জাতটি । গাছ ছোট আকৃতি, ফল মাঝারি এবং খেতে বেশ সুস্বাদু । যার আরেক নাম আম্রপালি । মোটামুটি প্রতিবছরই ফল দেয় বিধায় ছাদে লাগানোর ক্ষেত্রে আম্রপালিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ । তাছাড়াও বাউ আম – ১, ২, ৩, ৬, ৭, লতা বোম্বাই ইত্যাদি বামন জাতের আম ছাদের জন্য বেশ উপযোগী । চাষ পদ্ধতিঃ ছাদে আমের কলমের চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে । ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । এবার ২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার, ১ কেজি কাঠের ছাই, ১কেজি হাড়ের গোড়া ও হাফ কেজি সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১৫ দিন ।
অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে । যখন মাটি কিছুটা ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সুস্থ সবল কলমের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । টবের গাছটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রায় সারাদিন রোদ লাগে ।
রাঙ্গুনিয়ায় সাকিবের ছাদে গড়ে তোলা আম বাগানে সুস্বাদু আমের ঘ্রানে চারদিক মৌ মৌ করছে। আম বাগানে উঁকি দিচ্ছে এলাকার লোকজন। পাকা আমে জানান দিচ্ছে মধুমাস সমাগত। উপজেলার রাঙ্গুনিয়া থানার পার্শ¦স্থ সৈয়দ বাড়ী এলাকায় কলেজ পড়–য়া মো. সাকিব ঘরের ছাদে টবে লাগিয়েছে সারি সারি আম গাছ। আমের মুকুল আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে আম। পাকা আমের মৌ মৌ সুঘ্রানে ছুটে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। সবার মাঝে কৌতুহল জাগছে মৌসুম ছাড়া আম গাছে আম ধরার বিষয়টি। সাকিবের আম বাগান দেখে এলাকার অধিকাংশ যুবক ছাদের টবে আম বাগান করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। দীর্ঘদিন আগে থেকে সাকিব আম গাছের পরিচর্যা করে আসছিল। কয়েকটি গাছে আম পাকতেও শুরু করেছে। সে আম গাছের পাশাপাশি লেবু আনারসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা লাগিয়েছে ফলও ধরেছে আশানরুপ।
অপরদিকে মৌসুম বিহীন আম বাগানে আম আসার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, নির্ধারিত সময়ের আগে উন্নত মানের চারা ও সঠিক পরিচর্যা হওয়ায় ছাদে আম ধরার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু না। ছাদে কেউ বানিজ্যিকভাবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিলে সাকিবের মতো আম বাগান করে সফলতা আসবে।
বিশেষ করে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বেশি। সেই সঙ্গে গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
ছাদে আম বাগান করার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্র সাকিব জানায়, ঘরের ছাদে অল্প জায়গায় উন্নত মানের আমের চারা লাগানো হয়। কৃষি কর্মকর্র্তার পরামর্শে আম বাগানের পরিচর্যা করি। আমের ফলনও ভাল হয়েছে। দুয়েকটি গাছে আম পাকতে শুরু করেছে। ঘরের ছাদে অল্প পরিসরে টবে আম বাগান করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করা যাবে ও পরিবারের পুষ্টির যোগান দেওয়া যাবে। আগামী বছরে ব্যাপক ভাবে আম বাগান করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। আমার দেখাদেখিতে অনেকেই ছাদের টবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফরমালিনমুক্ত আম খাওয়ার জন্য ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ঘরের ছাদে যে কেউ আম বাগান অনায়সে করতে পারে।
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।
আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন