আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই শীতে সুন্দরবন ভ্রমনের খুঁটিনাটি

২০০৮ সালের কথা। পুরান ঢাকার একটি পরিবার গেছে সুন্দরবনে ঘুরতে। গিয়ে দেখে নদী আর বন। তাদের নৌযান চলছে তো চলছে। কিন্তু কোনো পশু–পাখির দেখা তারা তখনো পায়নি। তখন মধ্যবয়স্ক একজন বলে উঠলেন, ‘হাতি কই, ঘোড়া কই? কিছুই তো দেখার লাগছি না।’ কথাটি শুনে স্থানীয় গাইড কিছুক্ষণের জন্য থ হয়ে গেলেন।

সুন্দরবনের হরিণ
সুন্দরবনের হরিণ

না, সুন্দরবনে হাতি বা ঘোড়া থাকে না। সুন্দরবনে গেলেই আপনি পশু–পাখি দেখবেন, এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। তবে সুন্দরবনের আছে নিজস্ব নীরবতা। সেটা আপনাকে অনুভূতি দিয়ে বুঝে নিতে হবে। কিন্তু একদম পশু–পাখি দেখবেন না, বিষয়টা তা নয়। চিত্রাহরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর, গুইসাপ, বন্য শূকর এ প্রাণীগুলো প্রায়ই দেখা যায় সুন্দরবনে।বিজ্ঞাপন

বিশ্বের অন্যতম সমুদ্রতীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বৈচিত্র্যময় প্রাণিকুল নিয়ে আমাদের এ বন। বাংলাদেশের আনাচকানাচ থেকে পর্যটক আসেন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের উপস্থিতি এখানে কম নয়। নৌযান ছাড়া সুন্দরবনে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুন্দরবন ভ্রমণ অনেক ব্যয়বহুল। তাই বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা করেছে সুন্দরবন ভ্রমণের। খরচও কম হয়, অনেকের সঙ্গে নতুন পরিচয় হয় ভ্রমণের সময়। সুন্দরবন যাত্রার অন্তত এক সপ্তাহ আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বন বিভাগ থেকে যাত্রার অনুমতি নিতে হয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় আপনি কোনো ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্তত ১৫ দিন আগে আপনার যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলে। অনলাইনে সহজে বুক করতে পারেন এখান থেকে।

জেনে নিন এই শীতে সুন্দরবন ভ্রমনের খুঁটিনাটি

সুন্দরবনের বেশির ভাগ ট্যুর শুরু হয় খুলনা থেকে। তবে ইদানীং ঢাকা থেকেও কিছু ট্যুর শুরু হচ্ছে। ঢাকা থেকে যাত্রার সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে আলাদা করে বাসে খুলনা যেতে হচ্ছে না, বরং ঢাকা থেকেই জাহাজে যাত্রা শুরু করা যায়।

সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারেন সুন্দরবন। সাধারণত ৩ দিন ২ রাতের কিংবা ৪ দিন ৩ রাতের ভ্রমণ প্যাকেজ হয়। ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বা তার অধিক খরচ হয় সুন্দরবনে ঘোরার জন্য। তাতে আপনি পাবেন ৩ বেলা রকমারি খাবার, সঙ্গে ২ বার হালকা নাশতা। একেকটি লঞ্চের ধারণক্ষমতা একেক রকম। লঞ্চের যত বেশি ধারণক্ষমতা, তত খরচ কম পড়ে। বিলাসবহুল লঞ্চ রয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণে। তবে পকেটের টাকা খসবে বেশি। আপনি ৫-৭ জনের দল নিয়ে যেতে পারেন আবার চাইলে পুরো জাহাজ ভাড়া করেও যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট ভ্রমণ তারিখে আপনাকে জাহাজে উঠতে হবে শিমুলিয়া ঘাট থেকে। আর খুলনা থেকে ভ্রমণের জন্য লঞ্চে উঠতে হবে খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চঘাট অথবা জেলখানা ঘাট থেকে। আপনাকে ট্যুর অপারেটর জানিয়ে দেবে সময় ও স্থান। সকালে জেলখানা ঘাট থেকে লঞ্চে উঠলে মধ্যাহ্নভোজ হবে মোংলা বন্দরে। এরপর পশুর নদ ধরে মূলত সুন্দরবন যাত্রা। যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর প্রথম ফরেস্ট স্টেশন করমজল চোখে পড়বে। কিন্তু সেখানে আপনার লঞ্চ থামবে না। দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে রাতে যেখানে আপনার লঞ্চ নোঙর করবে, সেখানে আপনি কিছুই দেখবেন না। রাতে আর কীভাবে দেখবেন বলুন? লঞ্চের আলো হালকা নদীর পানি পেরিয়ে বনের গাছে পড়লেও তা আপনার কাছে দুর্বোধ্য লাগবে। তবে আপনার ভ্রমণ গাইডের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেবেন, ‘আমরা কটকা এসেছি।’

জেনে নিন এই শীতে সুন্দরবন ভ্রমনের খুঁটিনাটি

লঞ্চের জেনারেটরের শব্দে আপনি কিছুটা সচকিত থাকবেন, না হলে সুন্দরবনের নীরবতা আপনাকে রবীন্দ্রনাথ বানিয়ে ফেলবে। রাতে খাওয়ার আগে হয়তো আপনাকে গাইড গিটার বাজিয়ে গান শোনাতে পারেন। এমন যদি হয়, তাঁর সঙ্গে গলা মেলাতে ভুলবেন না। সঙ্গে যদি আরও তিনজন থাকে, তবে রাতে খাবারের শেষে ঘুমের আগে খাতা-কলম নিয়ে একদফা কল–ব্রিজ খেলতে পারেন। কারণ, আপনার প্রিয় মুঠোফোনে নেট পাবেন না। ওহ! বলতে ভুলে গেছি, সুন্দরবনে মোবাইলের নেট পাওয়া যায় না। তাই লঞ্চটা বাদে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ যন্ত্রবিহীন। দৈনন্দিন সব ঝামেলা আপনি দিনের বেলায় হারবাড়িয়া পর্যন্ত রেখে এসেছেন। এবার ঘুমোতে যান, ভোরে উঠতে হবে।বিজ্ঞাপন

ভোর হলো দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে—এমনটাই মনে হবে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যখন আপনাকে গাইড ডেকে ওঠাবেন। কোনো রকমে ব্রাশ করেই আপনি ছুটবেন কটকায় টাইগার পয়েন্ট, অফিস পার দেখতে। ভোরে উঠতে হলো বলে একটু বিরক্ত হবেন, কিন্তু চিত্রাহরিণের পাল দেখে মনে হবে, এমন দৃশ্য দেখতে আপনি প্রতিদিন ভোরে উঠতে রাজি। কখনো কখনো হয়তো বনের হরিণ আপনার কাছে চলে আসবে আর আপনি আহ্লাদে আটখানা হবেন। সারা দিন হরিণ দেখলে হবে?

কটকার টাইগার পয়েন্টে দেখা মিলতে পারে চিত্রাহরিণের পালের
কটকার টাইগার পয়েন্টে দেখা মিলতে পারে চিত্রাহরিণের পালের

সকালে খাওয়া হয়নি তো। তাই আবার লঞ্চে ছুটবেন নাশতা করতে। না বিশ্রাম পাবেন না। নাশতা শেষে আবার ছুটবেন জামতলা সি বিচ দেখতে। লঞ্চের পেছনে বাঁধা ট্রলার আপনাকে যেখানে পৌঁছে দেবে, সেখান থেকে আপনি হাঁটবেন দু–আড়াই কিলোমিটার। মাঝে একটা বড় ফাঁকা মাঠ। যদি নীরবে হাঁটেন, হয়তো দেখবেন সামনে বিশাল হরিণের পাল। সে হরিণ কিন্তু আহ্লাদ দেখায় না। আপনাকে দেখামাত্র ভয়ে বিশাল বিশাল লাফ দিয়ে পালাবে। এরপর হাঁটছেন তো হাঁটছেন, যেন পথ ফুরাতে চায় না। গাইড অবশ্য আপনাকে একটা আপেল আর এক বোতল পানি দিয়েছিলেন। যখন দিয়েছিলেন, তখন বোঝেননি কেন দিলেন। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে তার প্রয়োজনীয়তা আপনার কাছে স্পষ্ট হবে।

জঙ্গল পেরিয়ে জামতলা সি বিচ, এখানকার সৌন্দর্য আপনার এ লম্বা পথ হাঁটার কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। সমুদ্রের গর্জনে প্রথম আপনার শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিলেও বেলাভূমি আর গর্জন ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রাস করবে। ফিরতেই চাইবেন না সেখান থেকে। কিন্তু গাইড আপনাকে তাড়া দিয়ে নিয়ে যাবেন। তখন গাইডকে আপনার ভিলেন মনে হবে। তাঁরই–বা দোষ কী বলুন। সময় আর আপনার সুরক্ষার দিকে তাঁর প্রধান নজর। ফিরে আবার লঞ্চের যাত্রা শুরু। যখন লঞ্চ থামল, আবার সেই রাত। প্রশ্ন করলে গাইড আপনাকে বলবেন, ‘আমরা তিন কোনা আইল্যান্ডে আছি।’

বেলাভূমিতে দূর থেকে দেখা লাল কাঁকড়া কাছে গেলে উধাও হয়ে যাবে। দুবলার চর, সুন্দরবন
বেলাভূমিতে দূর থেকে দেখা লাল কাঁকড়া কাছে গেলে উধাও হয়ে যাবে। দুবলার চর, সুন্দরবন

যথারীতি আবার ভোরে ওঠা। এবার সমুদ্রে আপনার লঞ্চ চলছে পুরোদমে। বড় বড় ঢেউ পেরিয়ে আপনার লঞ্চ যখন দুবলার চরে, তখন আপনার নাশতা করা শেষ। লঞ্চের ট্রলারে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে দুবলার চরে। শীতের এ সময় পাঁচ মাস জেলেরা ঘর বাঁধেন এখানে। একটা গ্রামে পরিণত হয় দুবলার চর। মাছ ধরে তা শুঁটকি করা হয় এখানে। প্রথমে শুঁটকির কটু গন্ধ লাগলেও কিছুক্ষণ পর সয়ে যাবে। জেলেদের কর্মকাণ্ড আর জীবনযাত্রা উপভোগ করবেন। বেলাভূমিতে লাল কাঁকড়া দূর থেকে দেখবেন, কাছে গেলে উধাও।

এখানে সমুদ্রে ডুব দিতে পারেন। অতএব মনে করে গোসলের কাপড় নিয়ে আসবেন লঞ্চ থেকে। এরপর আবার লঞ্চে ফিরবেন। সমুদ্রের মধ্য দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে হিরণ পয়েন্টে। লাইফ জ্যাকেট পরে আবার নেমে পড়ুন ট্রলারে। হিরণ পয়েন্টে দেখার বা উপভোগ করার তেমন কিছু না থাকলেও লঞ্চ থেকে ট্রলারের ভ্রমণের সময়টুকু আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। হিরণ পয়েন্ট দেখা শেষে আবার লঞ্চে দীর্ঘ পথ, দীর্ঘ সময় যাত্রা। এ দীর্ঘ সময়ে একটি উপন্যাসের ২৩৫ পাতা পড়ে শেষ করতে পারেন, গান শুনতে পারেন, প্রিয়জনের কথা ভাবতে পারেন।

গাঙচিলের দল। হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবন
গাঙচিলের দল। হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবন

তবে আমি বলি কী, বাইরে তাকিয়ে থাকুন। গাঙচিল দেখুন। একেকটি চিলের এলাকা কতটুকু দেখুন। আকাশ আর মেঘের কানাকানি দেখুন। ঢেউ দেখুন। আর তখন হাতে থাকুক লাল চায়ের কাপ। লালিমা মাখা সূর্যাস্ত সুন্দরবনের সব থেকে বিখ্যাত। এমন সূর্যাস্ত আগে যে দেখেননি, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।বিজ্ঞাপন

তৃতীয় দিন সকালে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে করমজল। সেখানে আপনাকে স্বাগত জানাবে বানর। তাদের থেকে একটু সাবধান থাকাই ভালো। বনে যদি পশু–পাখি দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে, তা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে করমজলে। হরিণ, কুমির আটকে রাখা হয়েছে করমজল ইকো ট্যুরিজমে। করমজল দেখা শেষে আবার লঞ্চ খুলনার উদ্দেশে রওনা দেবে।

সুন্দরবন গেলে বাঘের দেখা পাবেনই তেমন কোনো কথা নেই
সুন্দরবন গেলে বাঘের দেখা পাবেনই তেমন কোনো কথা নেই

আপনারা ভাবতে পারেন, বাঘের কথা কেন বললাম না। নভেম্বর থেকে বগুড়ার একটি আলোকচিত্রীর দল সুন্দরবনে অবস্থান করছে। তারা এখনো বাঘের দেখা পায়নি। তাই আপনি দেখবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তারপরও যদি দেখেন, ভিডিও করে ফেসবুকে দিলে আমরা সবাই দেখে নেব।

অনলাইনে সবচেয়ে সহজে সুন্দরবন ট্যুর বুক করে ফেলতে পারেন অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি ‘গো যায়ান’-এ। ট্যুরগুলোর বিস্তারিত দেখতে এবং বুক করতে ক্লিক করুন এখানে

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com