আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

পরিবেশ

মধ্যাকাশে অমত্য আলোর নাচন

ছজনের কামরা। তিনটি করে বাঙ্কবেড, দুই পাশে। আমরা চারজন। দুই কন্যা বিভোর ও রোদেলা, ওদের মা আর আমি। সাড়ে সতেরো ঘণ্টার যাত্রা। স্টকহোম থেকে আবিস্কো অস্ট্রা পর্যন্ত। ঠিক বারো ঘণ্টা পর ট্রেন বদলাতে হবে বোডেনে।

দীর্ঘ ভ্রমণ নিয়ে যতটা নয়, তার চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি ভাবিত আমি, আর দুজন কে আসবেন কামরায়। জেনেভা থেকে ট্রেনে জুরিখ, সেখান থেকে দুই ঘণ্টায় উড়ে এসেছি স্টকহোম, আগের দিন সন্ধ্যায়। বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মোরশেদ মিল্লাতের ভীষণ আন্তরিকতা আর চাপাচাপিতে স্টকহোমে ওর বাসায় উঠেছি। আগেই বলেছি, আমাদের মূল গন্তব্য আবিস্কো। মিশন নর্দার্ন লাইটস বা উত্তুরে আলো। অনেকে বলেন, অরোরা বোরিয়ালিস। সংক্ষেপে শুধু অরোরা।

অরোরা বা মেরুজ্যোতি
অরোরা বা মেরুজ্যোতি

প্রথমে বেটার হাফ রূপার, পরে আমাদের সবার বুনো স্বপ্ন-অরোরা সন্দর্শন। মাঝ আকাশে গভীর রাতে সবুজ, নীল, গোলাপি, লাল আর কমলা আলোর নাচন। গত ক বছরে বই আর পত্রপত্রিকার বর্ণনায় স্বপ্নটাকে বাড়তে দিয়েছি। ভিডিও দেখিনি ইচ্ছা করেই। স্বচক্ষে দেখার আনন্দ মাটি যেন না হয়।বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে জেনেছি, উত্তুরে আলোর জন্য সেরা পীঠস্থান নরওয়ের ট্রমসো। কানাডার ইউকন, আমেরিকার আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড আর সুইডেনের ল্যাপল্যান্ড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শাহীন ট্রমসোতে অধ্যাপনা করছে। ওর আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ারই চিন্তা ছিল। বাদ সাধল মোরশেদের প্রোফাইল পিক-প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল সবুজ জ্যোৎস্না। কদিন আগে ল্যাপল্যান্ড ঘুরে এসেছে ওরা। ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলে প্ল্যান বদলে ফেলি। ট্রমসো নয়, যাচ্ছি সুইডিশ ল্যাপল্যান্ড আবিস্কোতে। তরুণ কূটনীতিকই নিজে ড্রাইভ করে পৌঁছে দিয়েছে স্টকহোম সেন্ট্রাল স্টেশনে। ছাড়ার মিনিট বিশেক আগেই খুঁজে নিই নিজেদের কামরা। কে না কে আসেন, এ আশঙ্কা যেমন ছিল, তেমনি আশাও ছিল। করোনাকালে যাত্রী তেমন থাকার কথা নয়। আমাকে ভুল প্রমাণ করে আমাদের প্রায় পরপরই এলেন, বছর পঁচিশের এক তরুণ। হাই–হ্যালো হয়নি। এসেই আনমনে বসেছিলেন।

স্টেশনে লেখক ও তাঁর পরিবার
স্টেশনে লেখক ও তাঁর পরিবার

নিচের আর মাঝের চারটি বাঙ্ক আমাদের। তরুণ নিশ্চয় ওপরের কোনোটিতে যাবেন। আবার এ–ও হতে পারে, ভিনদেশি পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ, তার জন্য অত আনন্দদায়ী হবে না ভেবে নিজেই অন্য কোনো কামরা খুঁজে নেবেন। ব্যাটা এতই চুপচাপ, আমাদের ইচ্ছা হলো না বরফ গলানোর। আরও একটা ভুল প্রমাণ করে একটু পর নিজেই বিছানা পেতে শুয়ে পড়ল ওর বাঙ্কে। যাক, একজন অন্তত নেই, এই যখন ভাবছি, তখনই সহাস্যে প্রবেশ বিশালদেহী প্রৌঢ়ের। আচরণে আগের জনের উল্টো। এসেই বললেন, ‘তোমরা নিশ্চয় ইন্ডিয়ান, আমি ইন্ডিয়ায় দুবছর ছিলাম। রাজস্থানে। ড্রিলিং কোম্পানির নির্বাহী।’ বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হলো কিছুটা। আমাদের পর্যটন সম্ভাবনা আর তার ফিরে যাওয়া নিয়ে।

আমাদের মিশন শুনে বেশ উৎসাহী হলেন। বললেন, ‘সুইডেনের দেড় কোটি মানুষের অনেকেই অরোরা দেখেনি। তোমরা নিশ্চয় দেখবে! আবিস্কোতে আরেকটা দারুণ জিনিস— আইস হোটেল। বরফ আর তুষারে তৈরি ঘর। তাপমাত্রা শূন্যের নিচে না থাকলে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই দায়। বলাবাহুল্য, এটি স্থায়ী স্থাপনা নয়। প্রতিবছরই শীতকালে নির্মিত হয়। পর্যটকেরা এসব হোটেলে থাকেন, বরফের বিছানায় ঘুমান। পশমের কম্বল, জ্যাকেট—এসব নিয়েই অবশ্য।’

কিরুনা রেলস্টেশন
কিরুনা রেলস্টেশন

গালগল্প গাঢ় হতেই টের পেলাম, ভদ্রলোক একটু পান করেই উঠেছেন ট্রেনে। টের পেয়ে আড্ডায় একটু জল ঢেলে দিই। জানাই যে দুই কন্যার ঘুম পেয়েছে। দূরের পথ। ভদ্রলোক বুঝলেন বলেই মনে হলো। জানালেন, তাঁর নাম জোনাস মিরজেল। এক রকম জোর করেই তাঁর ই–মেইল দিয়ে বললেন, এরপর এলে যেন আগে থেকে জানাই। আমাদের আতিথ্য দিতে পারলে খুশি হবেন তিনি। এ–ও জানালেন, নামবেন ভোরের দিকে। কাজ আছে বলে ঘুমাবেন না। ট্রেনের খাবারঘরে কাজ করবেন ল্যাপটপে।

জোনাস চলে যাওয়ার পরপরই আমরা শুয়ে পড়ি। আমি মাঝের এক বাঙ্কে। মা-কন্যাদ্বয় নিচে বিছানা ভাগাভাগি। ক্লান্তি ছিল, আমি পত্রপাঠ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।বিজ্ঞাপন

সকালে রূপার কাছে শুনেছি এক মজার গল্প। রাত একটার দিকে জোনাস কামরায় ফিরেছিলেন। বিশাল বপু নিয়ে তিনতলা বাঙ্কে ওঠার চেষ্টা করেননি ঈষৎ মদ্যপ ড্রিলিংম্যান। মেঝেতেই শুয়ে পড়েন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নাসিকাগর্জন।

ভোরের আগেই নেমে যান কোনো এক স্টেশনে। সকালে এ গল্প শুনে আমরা হেসেছি অনেক। আবার এই ভয়ও ছিল যে ঘুমের ঘোরে বা অ্যালকোহলের ঘোরে যদি মশায়ের একটি পা উঠে যেত আমাদের বিছানায়!

আবিস্কো  অস্ট্রা রেলস্টেশন
আবিস্কো অস্ট্রা রেলস্টেশন

বেলা এগারোটায় ট্রেন পৌঁছায় বোডেনে, স্টকহোম থেকে সোজা উত্তরে সাড়ে সাত শ কিলোমিটার যাওয়ার পর। ট্রেন বদলে আরও চার শ যেতে হবে, উত্তর-পশ্চিমে।

আবিস্কো অস্ট্রা স্টেশনে যখন নামি, তখন বিকেল পাঁচটা— পড়ুন রাত পাঁচটা। এখানে এ সময়ে সূর্য ডুবে যায় দেড়টার দিকে। হ্যাঁ, আপনারা যাকে বেলা দেড়টা বলে জানেন।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উত্তরাংশে এই মৌসুমে সূর্যোদয় সকাল ১০টায় আর সূর্যাস্ত ১টায়। তিন ঘণ্টার দিন। আর বাকি ২১ ঘণ্টাই দীর্ঘ রাত। দিন-রাতের এই জটিল হিসাবে কখন ব্রেকফাস্ট আর কখনোই–বা লাঞ্চ-ডিনার করব ভাবছি।

স্টেশনের অদূরেই হোটেল। তিন দিন থাকার প্ল্যান আমাদের। রিসেপশনে জানলাম, অরোরা দেখানো নিয়ে বেশ কয়েক রকম প্যাকেজ ট্যুর আছে। অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিও আছে। আমাদের পরামর্শ দেওয়া হলো, ‘১৭ ঘণ্টা ট্রেনে ছিলে, আজ বরং তোমরা বিশ্রামই নাও। ডিনারের পর চাইলে লেকের দিকে যেতে পারো। আর পরদিন সন্ধ্যার জন্য বুক করতে পারো অরোরা কার চেজিং ট্যুর।’

গেস্ট হাউস
গেস্ট হাউস

তাঁর পরামর্শ মেনে সুপারস্টোর থেকে গ্রোসারি নিয়ে আসি। পরমানন্দে রুটি গো-মাংস দিয়ে ভূরিভোজ সেরে ফেলি। ভাগ্যিস, মোর্শেদ আর ফারিয়া ভাবি মাংস রেঁধে দিয়েছিলেন। এখানে খাবারের বন্দোবস্ত তেমন উত্তম নয়। ডিনারের পরই লেকের দিকে রওনা হই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মতো হবে। ঘন অন্ধকার হোটেল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের টর্নেট্রাস্ক লেকে, অন্ধকার, নির্জন। একটু ভয় ভয় করছে। চাঁদের অবছা আলোয় লেক দৃশ্যমান। দিনের আলোয় এখনো দেখা হয়নি টর্নেট্রাস্ক লেক। আবছায়া ধরে কিছুটা সামনে যাই। অন্ধকারেও বেশ টের পাচ্ছি, লেকের বড় এক অংশে পানি জমে রয়েছে।

লোকালয়, হ্রদ আর পাহাড়ে অনিন্দ্য মিতালী
লোকালয়, হ্রদ আর পাহাড়ে অনিন্দ্য মিতালী

অনতিদূরে প্রায় হঠাৎ জ্বলে ওঠে এক চিলতে আলো। একটু চমকে যাই আমরা। এমন পিনপতন নীরবতা! দশাসই কোনো সিরিয়াল কিলার বেরিয়ে এসে সলিলে সমর্পণ করলে চিহ্নই হয়তো থাকবে না আমাদের। নাহ্‌, গাড়ির আবছা আলোয় দুটি শিশুকেও দেখলাম। তার মানে, এরা আমাদেরই মতো অরোরা দেখতে এসেছে। প্রচণ্ড শীতের ভয়ে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। আর আমি কী না কী ভাবছি!

কোথায় অরোরা, কোথায় কী? মিনিট বিশেক কাটিয়ে রাতের মেঘলা আকাশ ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনি।

পরদিন সন্ধ্যায় অরোরা চেজিং। গাড়িতে উঠেই গাইড মেয়েটার কাছে জানতে চাই, অরোরা চেজিং মানে কী? জানালো, ও দিনভর এ নিয়ে গবেষণা করেছে, আজ কখন কোন স্পট থেকে অরোরা দৃশ্যমান হবে। আমাদের নিয়ে সেই সব স্পটে দৌড়াবে। আমাকে বলল, ওই যে পুবের আকাশে তাকাও। দেখতে পাচ্ছ যে এক ফালি মেঘ উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছে, তার মানে, আমরা আরও উত্তরে গেলে মেঘমুক্ত আকাশ পাব।

দূরে ওই দেখা যায় আলপস পর্বতমালা
দূরে ওই দেখা যায় আলপস পর্বতমালা

মিনিট দশেক ড্রাইভ করে একটা খোলা জায়গায় পার্ক করল। আমাদের সবার চোখ ঊর্ধ্বাকাশে অরোরা খুঁজছে। সত্যি বলতে কী, তেমন কোনো রঙের খেলা চোখে পড়ল না। গাইড সান্ড্রা যতই বলল, ওই যে ওখানে, মেঘের একটু বাঁ পাশে, সবুজ আলোর রেখা কি দেখতে পাচ্ছ না? না–সূচক মাথা নাড়ি আমরা। অন্তত এটা তো স্বীকার করবে, আজ আকাশে অনেক তাড়া!

অমনি ওপরের দিকে তাকাই। সত্যিই, অজস্র তারার মেলা আজ। এমন তারকাজ্জ্বল নিঃসীম আকাশ শেষ কবে দেখেছি, মনে করতে পারলাম না।বিজ্ঞাপন

সান্ড্রা বলল, চলো যাওয়া যাক, আরেকটা স্পট আছে, সেখান থেকে হয়তো দেখতে পাবে। যেতে যেতে সান্ড্রার গল্প শুনলাম। মেয়েটা গোথেনবার্গের। জানাল, গোথেনবার্গের সঙ্গে স্টকহোমের প্রতিযোগিতা শতাব্দী পুরোনো। দুই শহরই নিজেদের সেরা মনে করে। সান্ড্রার মত, গোথেনবার্গে ভিড়ভাট্টা কম, মানুষ অনেক বেশি বন্ধুবৎসল, মহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে নিকটবর্তী, জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম, ফুটবল আর সংগীতেও এগিয়ে। পরেরবার তবে ওখানেই বেড়াতে যাব। এই বলে তর্ক থেকে মুক্তি চাইলাম।

হ্রদের ওপাশে তুষার ঢাকা আলপস
হ্রদের ওপাশে তুষার ঢাকা আলপস

সান্ড্রা আর ওর বয়ফ্রেন্ড—দুজনেই এই ট্যুর কোম্পানিতে কাজ করে। তুষার আর অরোরা ভালোবাসে বলে বছরের এ সময়ে ওরা উত্তরাংশে চলে আসে। মাস তিনেক থেকে পয়সা কামিয়ে ফিরে যায়। জানাল, সমস্ত সঞ্চয় উজাড় করে পর্যটনে বিনিয়োগ করেছে ফিনল্যান্ড আর নরওয়েতে। করোনাভাইরাস সর্বনাশ করেছে ওদের। এখন টিকে থাকাই দায়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসা যেসব ছাত্রছাত্রী আটকা পড়েছে, ট্যুরিস্ট বলতে তো শুধু ওরাই। আর আমাদের মতো অল্প কজন, যারা ছুটছে অরোরা স্বপ্নের পেছনে।

৯টার দিকে হোটেলে ফিরে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করল সান্ড্রা। নাহ্‌, অরোরা দেখা তেমন জমল না।

রাত ১০টার দিকে মোরশেদের ফোন, স্যার! সোলার অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে অনেক। এখনই অরোরা শুরু হতে পারে। মোরশেদ লাইটস, ওভার ল্যাপল্যান্ড ওয়েবসাইটে লাইভ দেখেছে। আমিও ওয়েবসাইটে চোখ বুলিয়ে দ্রুত শীতের পোশাক পরে নিলাম। ক্যামেরা আর ট্রাইপড যেন ভুলে না যাই, বলে দিয়েছিলেন ফারিয়া ভাবি। সেলফোনের ক্যামেরা আজকাল এত ভালো হয়েছে, আমরা বেড়াতে গেলে এখন আর ক্যামেরা নেই না। কিন্তু অরোরা ফটোগ্রাফি ভিন্ন জিনিস। ট্রাইপড ছাড়া ভালোভাবে ক্যাচ করা যাবে না।

রোদেলার পেছনে গাঢ় সবুজ দিগন্তরেখা
রোদেলার পেছনে গাঢ় সবুজ দিগন্তরেখা

প্রথম ক্লিকেই বুঝে গেলাম, ক্যামেরার চোখ অন্য। রোদেলার পেছনে গাঢ় সবুজ দিগন্তরেখা। পল্লবশূন্য বৃক্ষ আর মেঘের ওপারে সবুজ তীব্র আলো। খালি চোখে রং তত স্পষ্ট নয়, যতটা ক্যামেরায়। সান্ড্রা বলে দিয়েছিল। শহর থেকে যত দূরে পারো, চলে যেয়ো। তা না হলে শহরের লাইটিং কমলা রঙের স্পায়েলিং এফেক্ট তৈরি করতে পারে। আমরা লেকের দিকে পা চালাতে থাকি। পথের পাশে নির্জন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে থাকি অরোরা বোরিয়ারলিস। আর চলতে থাকে ক্যামেরার ক্লিক। কখনো শহরের লাইটিং, তারার, কখনো গাড়ির আলোয় বদলে দিচ্ছিল। আর অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছিল আসল চেহারা। লেক পর্যন্ত আর গেলাম না।

সস্ত্রীক লেখক
সস্ত্রীক লেখক

ভালোই উপভোগ করেছি মাঝরাতের সবুজ আর ধূসর আকাশ। কিন্তু ঠিক মন ভরল না। আর মাত্র এক দিন বাকি। না হলে এই স্মৃতি নিয়েই ফিরতে হবে।

আবিস্কোতে আমাদের শেষ সন্ধ্যা। কিছুক্ষণ পরপরই বেরিয়ে দেখে আসছি। আর ল্যাপল্যান্ড ওয়েবপেজের লাইভ সম্প্রচারের ওপরও চোখ রাখছি। রাত আটটা থেকেই মনে হচ্ছে একটু একটু করে আকাশের রং বদলাচ্ছে। ডিনার দ্রুতই সেরে নিলাম। যাতে বেরিয়ে পড়তে সময় বেশি না লাগে।

৯টার দিকে প্রায় আচমকা হোটেলে উত্তেজনা। অরোরা, নদার্ন লাইটস, শব্দগুলো কানে আসছিল। দ্রুত তৈরি হয়ে লেকের দিকে যাত্রা করলাম। ততক্ষণে ওখানে অনেকেই পৌঁছে গেছেন। লেকের উত্তর পাশে অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গায় অবস্থান নেই আর তাকাই আকাশের দিকে। মনে হচ্ছে, ধূসর আর সবুজ আলোর রেখা, রংধনুর মতো। ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে আলো। ছড়িয়ে পড়ছে পুরো আকাশে। কখনো পুব থেকে পশ্চিমে। কখনো দিগন্তরেখা ঘেঁষে, কখনো উত্তর থেকে মধ্যাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বর্ণাঢ্য জোৎস্না বা আলোর নাচন দেখছি
লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বর্ণাঢ্য জোৎস্না বা আলোর নাচন দেখছি

লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বর্ণাঢ্য জোৎস্না বা আলোর নাচন দেখছি। কখনো পত্র-পল্লবহীন বৃক্ষশীর্ষে, কখনো উত্তরের দূর আকাশে, কিরুনা শহরের দিকে, কখনো লেকের অন্য পাশে। সবুজ ধনুকাকৃতি জ্যোৎস্নার প্রতিবিম্ব লেকের স্বচ্ছ জলে পড়ছে। কোনো কোনো অংশ শুভ্র তুষাররাজির ওপর পড়ে অপূর্ব আবহ তৈরি করেছে।

দিগন্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছে আলোর কয়েকটি বর্ণিল ছটা
দিগন্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছে আলোর কয়েকটি বর্ণিল ছটা

কখন ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক ভুলে বিভোর আমরা একবার উত্তর, আরেকবার মধ্যাকাশে তাকিয়ে আছি, বলতে পারব না। হঠাৎ মনে হলো, দিগন্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছে আলোর কয়েকটি বর্ণিল ছটা। যেন প্রদীপ থেকে বেরিয়ে এসেছে বর্ণিল দৈত্য। আবার কখনো মনে হচ্ছে বীর সালাহউদ্দিন আইউবির ধনুক। আবার কখনো পরশুরামের কুঠার। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে রং। আর আকৃতিও। কখনো সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতো, কখনো চাররঙা রংধনু-সবুজ, বেগুনি, গোলাপি আর লাল। আলোর তীব্রতা বেড়ে চলেছে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তবে রঙের শেড একের পর অন্য। হালকা থেকে গাঢ়। আবার হালকা। কখনো ঘন সবুজ। কখনো টিয়া পাখি সবুজ। কখনো কলাপাতা সবুজ। সবুজেরই যেন এক শ রকম শেড। সঙ্গে অন্য রং।

এ রং যে আকাশে অচঞ্চল, তা নয়। ভাসছে, খেলছে, নাচছে। অভূতপূর্ব! অনিন্দ্যসুন্দর! কীভাবে বর্ণনায় আনব এই স্বর্গীয় আলোর নাচন!

হঠাৎ মনে হলো, ধ্রুপদি নৃত্য হচ্ছে চোখের সামনে। পুরো আকাশই যেন তার মঞ্চ। কখনো মনে হচ্ছে, শুধু নৃত্য নয়, সংগীতও চলছে যেন। কিংবা সংলাপ। সবুজ-লাল-বেগুনি আলো যেন কথা কইতে চায় বিমুগ্ধ দর্শকের সঙ্গে। আর দর্শক ভাবছে, কী উপায়ে ভাষায় প্রকাশ করবে স্বর্গীয় এই রূপ।

ফিরতি পথে লেখক ও তাঁর পরিবার
ফিরতি পথে লেখক ও তাঁর পরিবার

সৃষ্টিকর্তারকে সর্বান্তকরণে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। আলোর নাচন, বর্ণালি জ্যোৎস্না যেন স্রষ্টার পেলব তুলিস্পর্শে প্রাণ পেয়েছে।

ভাষার কী সাধ্য সেখানে পৌঁছায়?

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

পরিবেশ

ছাদ বাগানের জন্য কয়েকটি টিপস

ছাদ বাগানীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। টবে, ড্রামে গাছ লাগানো হয়। কেউ ফল, কেউবা সবজির গাছ লাগান। কেউ সফল হন। কেউ সফল হন না। ছোট ছোট কিছু ভুল বাগানীরা করে থাকেন। সে কারণে যত্ন নিলেও ফল আসে না। এখানে ছাদ বাগানীদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো, যা মানলে সফলতা পাওয়া সহজ হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, টবে বা ড্রামে গাছ লাগালে তাকে খাবার দিতে হবে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান গাছের মতো সে খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। রোগ-বালাই হলো কিনা সেটাও বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।

১. মাটির সাথে অবশ্যই কিছু কোকোপিট মেশাবেন। গাছের গোড়া স্যাতস্যাতে হতে দিবেন না। স্যাতস্যাতে হলে অসংখ্য রোগ হবে। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাতস্যাতে না। কেকোপিট মেশালে পানি কম দিলেও হবে। কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুড়া) পানি ধরে রাখে। অতি বৃষ্টি হলে গোড়ায় পানি জমতে দেয় না। হালকা হওয়ায় ছাদে ওজনের চাপ পড়ে না। এছাড়া কোকোপিটে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে। যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কোকোপিটে চারা দ্রুত গজায়, বড় হয়। মাটির চেয়ে কোকোপিটে চারা ভালো হয়।

২. গাছের জন্য বিরিয়ানি হলো সরিষার খৈল-পচা পানি। মাটির হাড়িতে খৈল পচাতে হবে। কমপক্ষে ৫ দিন। ৭ দিন কিংবা বা ১৫ দিন হলে উত্তম। অল্প পানিতে পচিয়ে তার সাথে আরো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটু গন্ধ হয়, তাই অল্প একটু গুড় দিতে পারেন। ছাদে হাড়িতে পচালে বাসায় গন্ধ আসবে না। বৃষ্টির সময় খৈল-পচা পানি দেবেন না। পুকুরের নিচে থাকা পাক কাদা গাছের জন্য খুব উপকারী।

৩. আমরা জানি, মাটিতে অসংখ্য ক্ষতিকর ছত্রাক থাকে। যা গাছকে মেরে ফেলার জন্য যথেস্ট। তাই মাটি রেডি করার সময় কিছুটা বায়োডামা সলিট দিবেন। এটি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে ক্ষতিকারক উপাদানগুলো মেরে ফেলে। আবার জৈব সারের কাজও করে। গাছের জন্য মাটি হবে ঝুরঝুরে, হালকা।

৪. যাই লাগান না কেন, ভালো জাতের বীজ কিনা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজে ভালো ফসল হবে। নতুবা যতই যত্ন নেন না কেন, সব পরিশ্রম বেলাশেষে জলে যাবে। বীজ থেকে নিজে চারা করা উত্তম। কারণ বাজার থেকে যে চারা কিনবেন সেটার জাত ভালো হবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নেয়া উত্তম। পদ্ধতি হলো- ছত্রাকনাশক দেয়া পানিতে কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ম্যানসার, মেটারিল দুটি ছত্রাকনাশক।

৫. গাছ বেশি তো ফলন বেশি- এটি ভুল ধারণা। অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগানো যাবে না। গাছ পাতলা করে লাগাতে হবে। বেশি লাগালে গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে না। একটি ফলের ক্রেটে মাত্র দুটি গাছ। একটি টবে একটি গাছ। ক্রেট বা টবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬. ছাদে মাচা দেয়া সমস্যা। কারণ ঘুঁটি থাকে না। এ জন্য ফলের ক্রেটের চারপাশে লাঠি বেঁধে সহজে মাচা দেয়া যায়। লতাপাতা জাতীয় গাছ লাগানোর পাত্র একটু গভীর হলে উত্তম। গাছের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো জৈব সার হলো পাতা-পচা সার, তারপর ভার্মি কম্পোস্ট, তারপর গোবর সার। পাতা-পচা সার সহজলভ্য নয়। দাম বেশি। কিন্তু ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। মাটির সঙ্গে মিনিমাম ৪০% জৈব সার দেয়া উত্তম।
৭. নিম কীটনাশককে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খুব অপছন্দ করে। এটি দিলে তারা বিরক্ত বোধ করে। গাছে বাসা বাঁধতে পারে না। প্রতি সাত দিনে একবার সব গাছের পাতায় নিম কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাসে একবার ইপসম সল্ট স্প্রে করে দেয়া উত্তম। একইভাবে মাসে একবার পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে স্প্রে করা ভালো।

৮. ডাটা, পুইশাক, লালশাক, ধনেপাতা এসব লাগাতে পারেন। মাত্র ২৫ দিনে খেতে পারবেন। লালশাক লাগালে নেট দিয়ে ঘিরে দেবেন। শাকপাতা লাগালে দ্রুত আউটপুট পাবেন। যা আপনাকে প্রেরণা দেবে। পুইশাক গাছের পাতায় দাগ হলে পাতা কেটে দিন। অথবা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেন। অথবা গাছ উঠিয়ে আবার লাগান। ইউরিয়া সার দিলে পুইশাক দ্রুত বাড়বে। শশা গাছের বৃদ্বির জন্য ডিএপি সার দিলে ভালো হবে। শশা গাছে ছাড়া ছাড়া ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। খুব রোদ, গাছের গোড়ায় মালচিং করে দিয়ে উত্তম ফল মিলবে। মালচিং হলো গাছের গোড়ায় বিশেষ পলিথিন কিংবা শুকনো পাতা, খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া।

৯. ফুল আসার পরে প্রানোফিক্স অথবা মিরাকুরান গাছের পাতায় শেষ বিকালে স্প্রে করবেন। বাসায় দুইটি গ্রুপের ছত্রাকনাশক রাখা ভালো। যেমন- ম্যানসার, মেটারিল। ১৫ দিনে একবার স্প্রে করবেন। এগরোমিন্ড গোল্ড অনুখাদ্য বা অন্য কোনো অনুখাদ্য বাসায় রাখতে হবে। মাসে কমপক্ষে একবার স্প্রে করবেন। অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টি, খাদ্যের অভাব, গাছ রোগাক্রান্ত, আবহাওয়া দ্রুত আপডাউন করা ইত্যাদি কারণে ফুল ঝরে পড়তে পারে। আবার পরাগায়ন না হলে ঝরে পড়তে পারে। এ জন্য হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হবে। পুরুষ ফুলের পরাগদণ্ড নারী ফুলে গর্ভে ঘষে দিতে হবে।

১০. ছাদ বাগানে গাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ পানি বেশি বা কম দেয়া। যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু পানি দিতে হবে। কোন গাছের কি চাহিদা, রোগ একটু স্টাডি করলে সহজে সফল হতে পারবেন।

১১. গাছের পাতার নিচে খেয়াল করবেন। বেগুন গাছের পোকা মারার জন্য সেক্স ফোরেমান ফাঁদ লাগাবেন। ডগা ছিদ্র বা ফল ছিদ্র হলে সাইপারমেত্রিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে। একটি বেগুন গাছ অনেক দিন ফল দেয়। ঢেড়স গাছ বেশি রোদ পড়ে এমন জায়গায় লাগাবেন। বেগুন, ঢেড়স, লালশাক, পুইশাক, ধনেপাতা, ডাটা শাক- এসব গাছের খুব যত্ন করতে হয় না।

১২. রসুন আর লবঙ্গ বেটে সেই পানি গাছে স্প্রে করলে পোকা কম আসবে। মরিচ গাছে নেপথলিন বেঁধে দিন, পোকা কম আসবে। পাতা কোকড়ালে ভার্মিটেক কিংবা এবোম কীটনাশক দিন। কোকড়ানো পাতা ফেলে দিন। মরিচ গাছে দশ দিন পর পর ডায়মেথট গ্রুপের (যেমন টাফগর) কীটনাশক দিলে উপকার হবে। সবকিছু করছেন, তারপরও কাজ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে গাছের জায়গা বদল করেন, উঠিয়ে অন্যত্র লাগান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

দৈনন্দিন

নিপাহ্‌ ভাইরাসঃ খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়

নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
নিপাহ্‌ ভাইরাস খেজুরের রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে যা করণীয়
খেজুরের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া।

শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।

আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক

খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।

দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।

মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।

সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্‌ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

জেনে নিন এই মরসুমে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ আপনার জন্য সেরা

দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই বর্ষার (Monsoon 2021) প্রভাবে চলছে বৃষ্টিপাত। এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) বপনে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই খরিফ মরসুমে কৃষকভাইরা সাধারণত অঞ্চলভেদে ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষে মনযোগ দিয়ে থাকেন ৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷

বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷

বর্ষাকালে কোন কোন ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে অথবা এই চাষ কীভাবেই বা করা যাবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷

অশ্বগন্ধা –

বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷

শতমূলী –

শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷

যষ্টিমধু –

জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷

ঘৃতকুমারী –

এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷

অগ্নিশিখা বা কলিহারি –

এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

পরিবেশ

শিখে নিন টবে দারুচিনির চাষের কৌশল

পৃথিবীতে ভোজ্য মসলা যতরকম আছে তারমধ্যে দারুচিনি সবথেকে উল্লেখযোগ্য। এই প্রাচীনতম মসলা বহুদিন ধরে ওষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এছাড়াও খাবারে স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে, পানীয় এবং তরল মশলাদার খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্যও এই দারচিনির ব্যবহার হয়। এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গের সাথে সাথে দারুচিনির নামও মসলা হিসেবে একই পংক্তিতে উচ্চারিত হয়। বহু কৃষক দারুচিনির চাষ করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন। বাজারে এই দারুচিনির চাহিদা প্রচুর পরিমানে থাকায়, এই চাষে ভালো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সৌখিন মানুষেরাও ভালোবেসে দারুচিনির চাষ বাড়িতে করে থাকেন। দারুচিনি গাছের বাকল, ফুল, কুঁড়ি, পাতা, ফল, শেকড় সবকিছুই কাজে লেগে যায়। দারুচিনি গাছ বাড়িতে চাষ করতে গেলে ঘরে ছাদে দুই জায়গাতেই চাষ করা যায়।

মনে রাখতে হবে এই চাষ করতে গেলে উপযুক্ত পরিমানে রোদ দরকার। বাংলার জলবায়ুতে মূলত শীতকালে এই চাষ করা সবথেকে ভালো। জানুয়ারি মাসে দারুচিনি গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে, এবং এই গাছের ফল পাকতে আরম্ভ করে জুলাইয়ে। সেইসময়ই ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বাগানে বা টবে রোপন করে দেওয়া উচিত।

প্রয়োজনীয় রোদ (Sunlight)

কড়া সূর্যালোক দারুচিনি জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায় এমন জায়গায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারুচিনি রোপন করতে গেলে রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান যেমন জানালার ধারে, ব্যালকনি কিংবা ছাদের খালি স্থান ব্যবহার করতে হবে।

উপযুক্ত মাটি (Soil)

দারুচিনি চাষের জন্য ভাল মানের মাটি ব্যবহার করা আবশ্যক। বাগানের মাটি ব্যবহার না করাই ভালো, কেননা এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। অনে সময় আমরা আশেপাশ থেকে মাটি নিয়েই টব ভরে গাছ লাগানো হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল গাছগুলোতে এই উপায় কার্যকরী হয় না। নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল এমন মাটি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা সবথেকে উত্তম। জেনে রাখা ভালো দারুচিনি খরা একদমই সহ্য করতে পারে না। মাটির বিকল্প হিসেবে ১৫% ট্রাইকোকমপোস্টযুক্ত কোকোডাস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাইরে চাষ করার জন্য এক মিটার (৩০ সেন্টিমিটার গভীর) পর্যন্ত গর্ত করে মাটি দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ঘরের ভিতরে বা ছাদবাগানের দারুচিনি চাষের জন্য একটি বড় পাত্র প্রয়োজন হবে।

রোপন (Planting)

দারুচিনির বীজ সংগ্রহও করা যায় অথবা নার্সারি থেকে দারুচিনির গাছ কিনেও আনা যায়।

বাইরে চাষের ক্ষেত্রে

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ মিটার x ১ মিটার এবং ৩০ সেমি গভীরতায় খনন করে মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করতে হবে।

ঘরের মধ্যে টবে রোপনের ক্ষেত্রে

নিচে গর্ত সহ বড় সিরামিক পাত্র (৬০ x ৫০ সেমি) ব্যবহার করতে হবে। পাত্রটি মাটি বা কোকোডাস্ট দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা এবং ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটি গর্ত তৈরি করতে একটি বাগান ট্রোয়েল ব্যবহার করে নেওয়া ভালো। বীজ ব্যবহার করলে  ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে নেওয়া উচিত। এবার গাছটি গর্তের মধ্যে রেখে মাটি দিয়ে চাপা দিতে হবে। বীজ ব্যবহার করলে প্রতি ১.৫ সেমি গর্তে একটি করে বীজ পুঁততে হবে এবং মাটি দিয়ে বীজটি ঢেকে দিতে হবে।

মাটি সবসময় ভেজা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল দিতে হবে। দারুচিনি গাছ পাত্রে রোপন করার পর, টবের নিচের গর্ত থেকে জল বের না হওয়া পর্যন্ত জল দিতে হবে। টবের উপরের ৫ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেলেই আবার গাছটিকে জল দিতে হবে।

গাছের পরিচর্যা (Caring)

দারুচিনি গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৭৫ গ্রাম এমওপি ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবছর ২-৩ কেজি ট্রাইকোকম্পোস্ট ও সার প্রয়োগ শেষে একই হারে টিএসপি, এমওপি ও ইউরিয়া দিতে হবে।

দারুচিনি প্রথম ধরতে দুই থেকে তিন বছর সময় নেয় এবং তার পরে প্রতি দুই বছর পরপরই ফসল দিতে থাকে। দারুচিনি গাছ কম করে ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তাই একে নিয়মিত করে ছোট রাখতে হবে। পাঁচ বছর বয়সী দারুচিনি গাছ থেকে নিয়মিত দারুচিনি সংগ্রহের ডাল পাওয়া সম্ভব। দারুচিনি ব্যবহার করার জন্য যে শাখাগুলি কাটা হবে সেগুলি থেকে বাকল তুলে নিতে হবে, বাকলগুলি ব্যবহার করার আগে জলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

আঙিনা কৃষি

টবে লাগান মিষ্টি তেঁতুল গাছ

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র। চাষবাসের জমিরও সংকুলান ঘটছে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে। গগনচুম্বী বাড়ি ঘিরে ফেলছে সমস্ত ফাঁকা জমিন। শখ করে মানুষ খোলা জায়গায় যে গাছ লাগবে অথবা ফল-ফুলের চারা সেই উপায়ও আর নেই। গাছ লাগানোর জন্য সামান্য জায়গাও ফাঁকা থাকছে না আর। তবে আমাদের করণীয় কী? বৃক্ষরোপন কি তবে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকার জন্য তো গাছ লাগাতে হবেই। বাড়ির একটুকরো বারান্দা অথবা ব্যালকনিতেও সুন্দর ভাবে ইচ্ছা করলে গাছ লাগানো যায়। বাড়ির ছাদেও বানানো যায় সুন্দর বাগিচা। শহরের মানুষদের জন্য ছাদ বাগানের কোনও বিকল্পও নেই। বাড়ির মধ্যেকার ব্যালকনি অথবা ছাদের একটুকরো জমিতেও, ইচ্ছা করলে টবে চাষ করা যায় বিভিন্ন ফুলের ও ফলের গাছ।

শাকসবজি, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি দেশীয় গাছ টবে বাড়তে দেওয়া থেকে শুরু করে বর্তমানে বহু বিদেশী গাছের চারাও মানুষ ব্যালকনি অথবা ছাদে চাষ করছেন। তার মধ্যে থাই মিষ্টি তেঁতুল টবের চাষ পদ্ধতি হিসাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রথমত মিষ্টি তেঁতুলের চাষ করতে গেলে, নার্সারি থেকে এই বিশেষ তেঁতুলের সঠিক বীজ নিয়ে আনতে হবে। তবে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কলম পাওয়া একটু দুষ্কর কাজ। বুঝে সঠিক চারা নিয়ে আসা বাগান মালিকের উপরেই বর্তায়।

থাই মিষ্টি তেঁতুলের ফুল থেকে ফল ধরতে প্রায় ৭ মাস সময় লাগে। বছরে দু’বার থাই মিষ্টি তেঁতুলের গাছে ফল ধরে। প্রথমবার বর্ষাকালে এবং দ্বিতীয়বার শীতকালে। এই গাছের পরিচর্যা আলাদা করে করার কোনও দরকার পড়ে না। গাছের যত্নআত্তি নিতে হয় ঠিকই, কিন্তু তা বলে, আলাদা করে কোনও বিশেষ যত্ন নিতে হয় না।

গাছ লাগানোর পদ্ধতি (Planting):

থাই মিষ্টি তেঁতুল চাষের জন্য আদর্শ মাটি হল, দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি। এই দু’টি মৃত্তিকার মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিন। তারপর বেছে নেওয়া মাটির দুই ভাগ অংশের সাথে গোবর, ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, পটাশ, ২৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়ো এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খোল একসঙ্গে মিশিয়ে ২০ ইঞ্চি মাপের বড় টবে জল মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ দিন পর টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও ৪-৫ দিন রেখে দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ দিন বাদে মিষ্টি তেঁতুলের একটি ভালো চারা ওই টবে লাগান।

পরিচর্যা(Caring):

চারা লাগানোর প্রথম কয়েক মাস তেমন যত্নের দরকার পড়বে না। অবশ্যই গাছে এই সময়টুকু পর্যাপ্ত জলের যোগান, এবং আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে।  ছয় মাস চারা লাগানোর সময়সীমা ফুরোলেই ১ মাস বাদে বাদে গাছে সরষের খোল মিশ্রিত পচা জল দিতে হবে। মনে রাখতে  হবে খোল দেওয়ার আগে গাছের মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।

রোগ দমন (Disease management):

সাধারণত থাই মিষ্টি তেঁতুল গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। কিন্তু বর্ষাকালে অনেক সময় তেঁতুল গাছে ছত্রাক হানা দেয়। এর ফলে তেঁতুল ফেটে যায়। এই অসুবিধার থেকে গাছকে বাঁচাতে হলে, বর্ষাকাল আসার আগেই ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ ১০ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলার বেজায় টক তেঁতুলের সঙ্গে থাই মিষ্টি তেঁতুলের কোনও তুলনাই চলে না। অত্যন্ত মিষ্টি খেতে এই তেঁতুল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চাষ প্রভূত পরিমাণে হলেও, আমাদের রাজ্য এই ফলের চাষ এখনও ততটা গতি পায়নি। কিন্তু আপনি আপনার ব্যালকনি অথবা ছাদে সহজেই এই থাই তেঁতুলের গাছ লাগাতে পারেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com