আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন

এগ্রোবিজ

করোনার দিনগুলোতে কৃষি ভাবনা

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিদিনের তথ্য আমাদের হতভম্ব করে। একদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থবির জীবনব্যবস্থা অতিষ্ঠ করে ফেলছে। অর্থনীতিবিদেরা হিসাব কষছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। এটা নিশ্চিত যে আগামী বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।

মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা মহামারি বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। করোনা–পরবর্তী জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ, মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ও সরবারহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর দুর্ভিক্ষ হলে মহামারি করোনার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে। তাই এ সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও নতুন নতুন পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বহুল পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সারা দেশে বোরো ধান কাটতে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার দেখতে পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে ধান কাটার যন্ত্র বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে সার, বীজ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সব স্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগকালেই কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছেন। একদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বিতরণ, অন্যদিকে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত কৃষিবিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়নে এই দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদনে নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষক যেমন মাঠে ফসল উৎপাদনে সচেতন, তেমনিভাবে বসতবাড়ির পতিত জমির সঠিক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তবে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাষের আওতায় আসা উচিত। বিষয়টি এমন মনে হতে পারে, সবাইকে কৃষক হতে বলা হচ্ছে। আসলে তা নয়। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করার পাশাপাশি নিজেদের ফসল উৎপাদনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে হবে।

বাংলাদেশের চাষাবাদের জমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের বসতবাড়ি চাষের আওতায় নেই। অন্যদিকে শহরের মানুষ তাদের চাষের জমি নেই বলে চাইলেও চাষাবাদ করতে পারেন না। তবে কৃষিপ্রযুক্তির ধারায় এখন বহু প্রযুক্তি এসেছে, যার মাধ্যমে আমরা বসতবাড়ি, ভবনের ছাদ, দেয়াল, ব্যালকনিতে চাষাবাদ করতে পারি। শহরের ছাদবাগানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে আমরা তা লক্ষ করেছি। একদিকে জমির অপ্রতুলতা, নিরাপদ ফসলের প্রতি মানুষের চাহিদা আমাদের বসতবাড়িতে ফসল চাষাবাদে নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলেছে।

খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে আমাদের নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ইতিপূর্বে আমরা কখনো এমন মহামারির মুখোমুখি হইনি। আশার কথা হলো বাংলাদেশে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উর্বর মাটি, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন আমাদের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখায়। আগামীতে টেকসই কৃষি গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমির সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকপর্যায়ে সঠিক প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হলে অবশ্যই আমাদের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হবে না। এ লক্ষ্য প্রণয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

১.
খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সব জমির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অঞ্চলভেদে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা, বসতবাড়িতে শাকসবজি ও ফলমূল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। মাঠ ফসলের পাশাপাশি বসতবাড়ির চারপাশ, পুকুরপাড়, পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে হলেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শাকসবজি, ফলমূল চাষাবাদ করতে হবে।

২.
আমদানি–নির্ভর ফসল, বিশেষ করে মসলা, ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জাত ও প্রযুক্তি অধিক হারে কৃষকপর্যায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব ফসল উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অধিক মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার প্রণোদনা আকারে সরবারহ করা যেতে পারে।

৩.
কৃষকের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্নত জাত সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। পতিত ও বসতবাড়ির জমির সঠিক ব্যবহারে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বীজ, সার প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

৪.
অঞ্চলভিত্তিক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রপ জোনিং গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো ও বিপণনের লক্ষ্যে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের সাম্প্রতিক বাস্তবায়িত অনলাইন মার্কেটে অধিকসংখ্যক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে হবে।

৫.
প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোগী কৃষকদের নিয়ে ফসলভিত্তিক কৃষক গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে। এসব কৃষক গ্রুপকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এসব কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের সুযোগ করে দিতে হবে। রাজধানী শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী, সুপারশপ ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও সঠিক দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।

৬.
সম্ভব হলে সুপারশপ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি কৃষক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে ও মূল্য নিশ্চিত করবে। কৃষক সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারক করবে।

৭.
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ ফসল একটি বিবেচ্য বিষয়। এটি নিশ্চিত করতে জৈব সার, জৈব বালাই ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক আকারে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কৃষকপর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কৃষকেরা নিজে এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছে। বাজারে জৈব সারের সরবারহ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশি জৈব বালাইনাশক উৎপাদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কৃষককে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষককে দক্ষ করতে পারলে তারা সহজে প্রাপ্য নিমপাতা, মেহগনিবীজ, শজনেপাতা, আদা, হলুদ প্রভৃতি দিয়ে সহজে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন উদ্যোগী কৃষককে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার রোধে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অধিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শপত্র ব্যতীত কোনো কীটনাশক ও বালাইনাশক বিক্রয় করা যাবে না, এমন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা জরুরি। এতে করে যেনতেনভাবে অপ্রয়োজনীয় ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাবে। পাশাপাশি বাজারে প্রাপ্য জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি ও পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।


ফাইল ছবি
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিদিনের তথ্য আমাদের হতভম্ব করে। একদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থবির জীবনব্যবস্থা অতিষ্ঠ করে ফেলছে। অর্থনীতিবিদেরা হিসাব কষছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। এটা নিশ্চিত যে আগামী বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।

মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা মহামারি বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। করোনা–পরবর্তী জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ, মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ও সরবারহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর দুর্ভিক্ষ হলে মহামারি করোনার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে। তাই এ সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও নতুন নতুন পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বহুল পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সারা দেশে বোরো ধান কাটতে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার দেখতে পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে ধান কাটার যন্ত্র বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে সার, বীজ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সব স্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগকালেই কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছেন। একদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বিতরণ, অন্যদিকে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত কৃষিবিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়নে এই দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদনে নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষক যেমন মাঠে ফসল উৎপাদনে সচেতন, তেমনিভাবে বসতবাড়ির পতিত জমির সঠিক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তবে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাষের আওতায় আসা উচিত। বিষয়টি এমন মনে হতে পারে, সবাইকে কৃষক হতে বলা হচ্ছে। আসলে তা নয়। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করার পাশাপাশি নিজেদের ফসল উৎপাদনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে হবে।

বাংলাদেশের চাষাবাদের জমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের বসতবাড়ি চাষের আওতায় নেই। অন্যদিকে শহরের মানুষ তাদের চাষের জমি নেই বলে চাইলেও চাষাবাদ করতে পারেন না। তবে কৃষিপ্রযুক্তির ধারায় এখন বহু প্রযুক্তি এসেছে, যার মাধ্যমে আমরা বসতবাড়ি, ভবনের ছাদ, দেয়াল, ব্যালকনিতে চাষাবাদ করতে পারি। শহরের ছাদবাগানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে আমরা তা লক্ষ করেছি। একদিকে জমির অপ্রতুলতা, নিরাপদ ফসলের প্রতি মানুষের চাহিদা আমাদের বসতবাড়িতে ফসল চাষাবাদে নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলেছে।

ফাইল ছবিখাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে আমাদের নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ইতিপূর্বে আমরা কখনো এমন মহামারির মুখোমুখি হইনি। আশার কথা হলো বাংলাদেশে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উর্বর মাটি, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন আমাদের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখায়। আগামীতে টেকসই কৃষি গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমির সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকপর্যায়ে সঠিক প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হলে অবশ্যই আমাদের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হবে না। এ লক্ষ্য প্রণয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

১.
খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সব জমির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অঞ্চলভেদে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা, বসতবাড়িতে শাকসবজি ও ফলমূল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। মাঠ ফসলের পাশাপাশি বসতবাড়ির চারপাশ, পুকুরপাড়, পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে হলেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শাকসবজি, ফলমূল চাষাবাদ করতে হবে।

২.
আমদানি–নির্ভর ফসল, বিশেষ করে মসলা, ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জাত ও প্রযুক্তি অধিক হারে কৃষকপর্যায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব ফসল উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অধিক মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার প্রণোদনা আকারে সরবারহ করা যেতে পারে।

৩.
কৃষকের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্নত জাত সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। পতিত ও বসতবাড়ির জমির সঠিক ব্যবহারে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বীজ, সার প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

৪.
অঞ্চলভিত্তিক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রপ জোনিং গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো ও বিপণনের লক্ষ্যে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের সাম্প্রতিক বাস্তবায়িত অনলাইন মার্কেটে অধিকসংখ্যক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে হবে।

৫.
প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোগী কৃষকদের নিয়ে ফসলভিত্তিক কৃষক গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে। এসব কৃষক গ্রুপকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এসব কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের সুযোগ করে দিতে হবে। রাজধানী শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী, সুপারশপ ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও সঠিক দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।

৬.
সম্ভব হলে সুপারশপ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি কৃষক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে ও মূল্য নিশ্চিত করবে। কৃষক সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারক করবে।

৭.
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ ফসল একটি বিবেচ্য বিষয়। এটি নিশ্চিত করতে জৈব সার, জৈব বালাই ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক আকারে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কৃষকপর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কৃষকেরা নিজে এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছে। বাজারে জৈব সারের সরবারহ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশি জৈব বালাইনাশক উৎপাদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কৃষককে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষককে দক্ষ করতে পারলে তারা সহজে প্রাপ্য নিমপাতা, মেহগনিবীজ, শজনেপাতা, আদা, হলুদ প্রভৃতি দিয়ে সহজে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন উদ্যোগী কৃষককে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার রোধে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অধিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শপত্র ব্যতীত কোনো কীটনাশক ও বালাইনাশক বিক্রয় করা যাবে না, এমন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা জরুরি। এতে করে যেনতেনভাবে অপ্রয়োজনীয় ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাবে। পাশাপাশি বাজারে প্রাপ্য জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি ও পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ফাইল ছবি

৮.
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি, কৃষিপণ্য বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বাস্তবায়িত কৃষকের বাজারের আদলে কৃষিপণ্য সেল সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। কৃষক গ্রুপ থেকে উদ্যোক্তারা সেল সেন্টার পরিচালনা করবেন। এসব সেল সেন্টার থেকে স্থানীয়ভাবে পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি দূর বাজারে পণ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

৯.
কৃষকদের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে দক্ষ করে তুলতে হবে। এতে করে বিভিন্ন কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কৃষক গ্রুপ থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য ক্রয় করতে পারবে। এতে করে বিনষ্ট কৃষিপণ্যের বিশাল অংশ (বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, বেগুন প্রভৃতি) সরাসরি লাভজনক খাতে যুক্ত হবে। অন্যদিকে কৃষক স্বাবলম্বী হবে ও স্থানীয়ভাবে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে।

১০.
কৃষিপণ্য উৎপাদন শেষে পণ্যের মূল্য পাওয়া কৃষকদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। মৌসুমে ফসলের দাম কম থাকে, অন্যদিকে অফ সিজনে কৃষিপণ্যের দাম অত্যধিক থাকে। এতে করে কৃষির মূল উৎপাদনকারী কৃষক প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা কম হয়। এতে করে কৃষক নিরুৎসাহী বোধ করে। কৃষির অগ্রযাত্রা টিকিয়ে রাখতে কৃষককে প্রকৃত মূল্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য উৎপাদন পর্যালোচনা করে ফসলের দাম নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টিম গঠন করা যেতে পারে। প্রশাসন মূল্য নির্ধারণ ও তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য পাবে।

এককথায় অগ্রসর কৃষি খাতকে অধিক মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে বহুমুখী পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতিমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে বহুবিধ পরিকল্পনা। কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধির উচ্চশিখরে আহরণে আমাদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ হাতে নিতে হবে। কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষকবান্ধব বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আগামীর প্রতিটি পরিকল্পনা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উন্নত হবে দেশের কৃষি।

বিজ্ঞাপন
মন্তব্য করুন

অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন

Leave a Reply

এগ্রোবিজ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।

মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ,  মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ  চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে  সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের  জেসমিন-১,  জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ

সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।

পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার
প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

ইউক্রেন

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট

চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’

কমানো হয়েছে চাহিদা

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম
বাগানে চাষ করা ড্রাগন হাতে মিরাজুল ইসলাম

মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।

মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।

ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।

মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।

মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন

এগ্রোবিজ

নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত

নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে
নাসিরনগরের গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে কৃষকদের বাদামখেত। আজ মঙ্গলবার ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’

ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।

মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’

কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

সম্পূর্ণ খবরটি পড়ুন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: শাইখ সিরাজ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। দা এগ্রো নিউজ, ফিশ এক্সপার্ট লিমিটেডের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৫১/এ/৩ পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থাপথ, ঢাকা -১২০৫
ফোন: ০১৭১২-৭৪২২১৭
ইমেইল: info@agronewstoday.com, theagronewsbd@gmail.com