এগ্রোবিজ
করোনার দিনগুলোতে কৃষি ভাবনা
লেখক
প্রথম আলোমহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিদিনের তথ্য আমাদের হতভম্ব করে। একদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থবির জীবনব্যবস্থা অতিষ্ঠ করে ফেলছে। অর্থনীতিবিদেরা হিসাব কষছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। এটা নিশ্চিত যে আগামী বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।
মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা মহামারি বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। করোনা–পরবর্তী জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ, মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ও সরবারহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর দুর্ভিক্ষ হলে মহামারি করোনার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে। তাই এ সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও নতুন নতুন পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বহুল পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সারা দেশে বোরো ধান কাটতে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার দেখতে পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে ধান কাটার যন্ত্র বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে সার, বীজ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সব স্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগকালেই কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছেন। একদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বিতরণ, অন্যদিকে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত কৃষিবিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়নে এই দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদনে নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষক যেমন মাঠে ফসল উৎপাদনে সচেতন, তেমনিভাবে বসতবাড়ির পতিত জমির সঠিক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তবে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাষের আওতায় আসা উচিত। বিষয়টি এমন মনে হতে পারে, সবাইকে কৃষক হতে বলা হচ্ছে। আসলে তা নয়। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করার পাশাপাশি নিজেদের ফসল উৎপাদনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে হবে।
বাংলাদেশের চাষাবাদের জমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের বসতবাড়ি চাষের আওতায় নেই। অন্যদিকে শহরের মানুষ তাদের চাষের জমি নেই বলে চাইলেও চাষাবাদ করতে পারেন না। তবে কৃষিপ্রযুক্তির ধারায় এখন বহু প্রযুক্তি এসেছে, যার মাধ্যমে আমরা বসতবাড়ি, ভবনের ছাদ, দেয়াল, ব্যালকনিতে চাষাবাদ করতে পারি। শহরের ছাদবাগানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে আমরা তা লক্ষ করেছি। একদিকে জমির অপ্রতুলতা, নিরাপদ ফসলের প্রতি মানুষের চাহিদা আমাদের বসতবাড়িতে ফসল চাষাবাদে নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলেছে।
খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে আমাদের নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ইতিপূর্বে আমরা কখনো এমন মহামারির মুখোমুখি হইনি। আশার কথা হলো বাংলাদেশে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উর্বর মাটি, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন আমাদের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখায়। আগামীতে টেকসই কৃষি গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমির সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকপর্যায়ে সঠিক প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হলে অবশ্যই আমাদের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হবে না। এ লক্ষ্য প্রণয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।
১.
খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সব জমির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অঞ্চলভেদে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা, বসতবাড়িতে শাকসবজি ও ফলমূল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। মাঠ ফসলের পাশাপাশি বসতবাড়ির চারপাশ, পুকুরপাড়, পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে হলেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শাকসবজি, ফলমূল চাষাবাদ করতে হবে।
২.
আমদানি–নির্ভর ফসল, বিশেষ করে মসলা, ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জাত ও প্রযুক্তি অধিক হারে কৃষকপর্যায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব ফসল উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অধিক মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার প্রণোদনা আকারে সরবারহ করা যেতে পারে।
৩.
কৃষকের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্নত জাত সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। পতিত ও বসতবাড়ির জমির সঠিক ব্যবহারে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বীজ, সার প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।
৪.
অঞ্চলভিত্তিক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রপ জোনিং গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো ও বিপণনের লক্ষ্যে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের সাম্প্রতিক বাস্তবায়িত অনলাইন মার্কেটে অধিকসংখ্যক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে হবে।
৫.
প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোগী কৃষকদের নিয়ে ফসলভিত্তিক কৃষক গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে। এসব কৃষক গ্রুপকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এসব কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের সুযোগ করে দিতে হবে। রাজধানী শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী, সুপারশপ ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও সঠিক দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
৬.
সম্ভব হলে সুপারশপ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি কৃষক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে ও মূল্য নিশ্চিত করবে। কৃষক সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারক করবে।
৭.
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ ফসল একটি বিবেচ্য বিষয়। এটি নিশ্চিত করতে জৈব সার, জৈব বালাই ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক আকারে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কৃষকপর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কৃষকেরা নিজে এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছে। বাজারে জৈব সারের সরবারহ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশি জৈব বালাইনাশক উৎপাদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কৃষককে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষককে দক্ষ করতে পারলে তারা সহজে প্রাপ্য নিমপাতা, মেহগনিবীজ, শজনেপাতা, আদা, হলুদ প্রভৃতি দিয়ে সহজে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন উদ্যোগী কৃষককে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার রোধে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অধিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শপত্র ব্যতীত কোনো কীটনাশক ও বালাইনাশক বিক্রয় করা যাবে না, এমন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা জরুরি। এতে করে যেনতেনভাবে অপ্রয়োজনীয় ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাবে। পাশাপাশি বাজারে প্রাপ্য জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি ও পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ফাইল ছবিমহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিদিনের তথ্য আমাদের হতভম্ব করে। একদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্থবির জীবনব্যবস্থা অতিষ্ঠ করে ফেলছে। অর্থনীতিবিদেরা হিসাব কষছেন, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। এটা নিশ্চিত যে আগামী বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।
মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা মহামারি বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। করোনা–পরবর্তী জীবনব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ইতিমধ্যেই মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কারণ, মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ও সরবারহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর দুর্ভিক্ষ হলে মহামারি করোনার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে। তাই এ সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও নতুন নতুন পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বহুল পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সারা দেশে বোরো ধান কাটতে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার দেখতে পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের মধ্যে ধান কাটার যন্ত্র বিক্রি করেছে। এ ছাড়া সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে সার, বীজ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সব স্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগকালেই কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছেন। একদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বিতরণ, অন্যদিকে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত কৃষিবিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়নে এই দপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদনে নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষক যেমন মাঠে ফসল উৎপাদনে সচেতন, তেমনিভাবে বসতবাড়ির পতিত জমির সঠিক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তবে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে চাষের আওতায় আসা উচিত। বিষয়টি এমন মনে হতে পারে, সবাইকে কৃষক হতে বলা হচ্ছে। আসলে তা নয়। কারণ, আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করার পাশাপাশি নিজেদের ফসল উৎপাদনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে হবে।
বাংলাদেশের চাষাবাদের জমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের বসতবাড়ি চাষের আওতায় নেই। অন্যদিকে শহরের মানুষ তাদের চাষের জমি নেই বলে চাইলেও চাষাবাদ করতে পারেন না। তবে কৃষিপ্রযুক্তির ধারায় এখন বহু প্রযুক্তি এসেছে, যার মাধ্যমে আমরা বসতবাড়ি, ভবনের ছাদ, দেয়াল, ব্যালকনিতে চাষাবাদ করতে পারি। শহরের ছাদবাগানগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে আমরা তা লক্ষ করেছি। একদিকে জমির অপ্রতুলতা, নিরাপদ ফসলের প্রতি মানুষের চাহিদা আমাদের বসতবাড়িতে ফসল চাষাবাদে নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলেছে।
ফাইল ছবিখাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে আমাদের নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ইতিপূর্বে আমরা কখনো এমন মহামারির মুখোমুখি হইনি। আশার কথা হলো বাংলাদেশে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উর্বর মাটি, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন আমাদের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখায়। আগামীতে টেকসই কৃষি গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমির সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কৃষকপর্যায়ে সঠিক প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হলে অবশ্যই আমাদের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হবে না। এ লক্ষ্য প্রণয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।
১.
খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সব জমির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অঞ্চলভেদে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা, বসতবাড়িতে শাকসবজি ও ফলমূল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। মাঠ ফসলের পাশাপাশি বসতবাড়ির চারপাশ, পুকুরপাড়, পতিত জমিতে স্বল্প পরিসরে হলেও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শাকসবজি, ফলমূল চাষাবাদ করতে হবে।
২.
আমদানি–নির্ভর ফসল, বিশেষ করে মসলা, ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জাত ও প্রযুক্তি অধিক হারে কৃষকপর্যায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব ফসল উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অধিক মাত্রায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার প্রণোদনা আকারে সরবারহ করা যেতে পারে।
৩.
কৃষকের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্নত জাত সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। পতিত ও বসতবাড়ির জমির সঠিক ব্যবহারে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বীজ, সার প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।
৪.
অঞ্চলভিত্তিক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রপ জোনিং গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো ও বিপণনের লক্ষ্যে টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের সাম্প্রতিক বাস্তবায়িত অনলাইন মার্কেটে অধিকসংখ্যক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাকে যুক্ত করতে হবে।
৫.
প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোগী কৃষকদের নিয়ে ফসলভিত্তিক কৃষক গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে। এসব কৃষক গ্রুপকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এসব কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের সুযোগ করে দিতে হবে। রাজধানী শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী, সুপারশপ ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও সঠিক দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
৬.
সম্ভব হলে সুপারশপ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি কৃষক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে ও মূল্য নিশ্চিত করবে। কৃষক সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া তদারক করবে।
৭.
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপদ ফসল একটি বিবেচ্য বিষয়। এটি নিশ্চিত করতে জৈব সার, জৈব বালাই ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক আকারে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কৃষকপর্যায়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কৃষকেরা নিজে এই জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করছে। বাজারে জৈব সারের সরবারহ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশি জৈব বালাইনাশক উৎপাদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কৃষককে সম্পৃক্ত করতে হবে। কৃষককে দক্ষ করতে পারলে তারা সহজে প্রাপ্য নিমপাতা, মেহগনিবীজ, শজনেপাতা, আদা, হলুদ প্রভৃতি দিয়ে সহজে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন উদ্যোগী কৃষককে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার রোধে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অধিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শপত্র ব্যতীত কোনো কীটনাশক ও বালাইনাশক বিক্রয় করা যাবে না, এমন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা জরুরি। এতে করে যেনতেনভাবে অপ্রয়োজনীয় ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাবে। পাশাপাশি বাজারে প্রাপ্য জৈব সার ও বালাইনাশকের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি ও পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৮.
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি, কৃষিপণ্য বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বাস্তবায়িত কৃষকের বাজারের আদলে কৃষিপণ্য সেল সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। কৃষক গ্রুপ থেকে উদ্যোক্তারা সেল সেন্টার পরিচালনা করবেন। এসব সেল সেন্টার থেকে স্থানীয়ভাবে পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি দূর বাজারে পণ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।
৯.
কৃষকদের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে দক্ষ করে তুলতে হবে। এতে করে বিভিন্ন কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কৃষক গ্রুপ থেকে প্রক্রিয়াজাত পণ্য ক্রয় করতে পারবে। এতে করে বিনষ্ট কৃষিপণ্যের বিশাল অংশ (বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, বেগুন প্রভৃতি) সরাসরি লাভজনক খাতে যুক্ত হবে। অন্যদিকে কৃষক স্বাবলম্বী হবে ও স্থানীয়ভাবে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে।
১০.
কৃষিপণ্য উৎপাদন শেষে পণ্যের মূল্য পাওয়া কৃষকদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। মৌসুমে ফসলের দাম কম থাকে, অন্যদিকে অফ সিজনে কৃষিপণ্যের দাম অত্যধিক থাকে। এতে করে কৃষির মূল উৎপাদনকারী কৃষক প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বিক্রয়মূল্য উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা কম হয়। এতে করে কৃষক নিরুৎসাহী বোধ করে। কৃষির অগ্রযাত্রা টিকিয়ে রাখতে কৃষককে প্রকৃত মূল্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য উৎপাদন পর্যালোচনা করে ফসলের দাম নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টিম গঠন করা যেতে পারে। প্রশাসন মূল্য নির্ধারণ ও তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য পাবে।
এককথায় অগ্রসর কৃষি খাতকে অধিক মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে বহুমুখী পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতিমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে বহুবিধ পরিকল্পনা। কৃষিক্ষেত্রে সমৃদ্ধির উচ্চশিখরে আহরণে আমাদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ হাতে নিতে হবে। কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষকবান্ধব বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আগামীর প্রতিটি পরিকল্পনা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উন্নত হবে দেশের কৃষি।
-
করোনার দিনগুলোতে কৃষি ভাবনা
-
করোনার দিনগুলোতে কৃষি ভাবনা
-
করোনার দিনগুলোতে কৃষি ভাবনা
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
-
লাভজনক সবজি চাষ পদ্ধতি
-
পুইশাক চাষ পদ্ধতি
-
যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে হতে পারে সারের সংকট
-
বিদেশ থেকে খালি হাতে ফিরে ড্রাগন চাষে সাফল্য
-
নাসিরনগরে বন্যায় তলিয়ে গেল কৃষকের বাদামখেত
-
পানি দিতে অতিরিক্ত টাকা
-
‘শিক্ষিত কৃষক’ বলেই তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহটা বেশি
-
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কিনে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত
-
বোরো কাটতে বাড়তি খরচ ঃ হাসি নেই কৃষকের মুখে
-
পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সাথি ফসল বাঙ্গি
চলতি বোরো মৌসুমে সার কিনতে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে। আর সরকারকেও সার বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বাজেটে বরাদ্দের তিন গুণের বেশি—প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ এখন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে সারের সংকট হতে পারে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সারের খুচরা মূল্য বাড়াতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কানাডা থেকে মোট আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে ওই দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক হয়েছে। ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তবে সার বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি বাড়ছে। এই চাপ নিয়েও সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ওই ভর্তুকি দিয়ে যাবে।’
কমানো হয়েছে চাহিদা
বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ওই চার ধরনের সারের চাহিদা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
দেশে প্রয়োজনীয় সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।
প্রসঙ্গত, ওই চারটি প্রধান সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে সরকার প্রাথমিকভাবে সারে ভর্তুকি বাবদ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেশির ভাগ সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করতে হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষের দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে হিসাব করে দেখা হয়েছে, ভর্তুকির পরিমাণ এবার বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা গিয়ে দাঁড়াবে।
জিপসাম, জিংক সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করে থাকেন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সারের কারণে নতুন করে যাতে আর সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সরকারের অন্যান্য খাতের ভর্তুকি কমিয়ে প্রয়োজনে সারে ভর্তুকি বাড়াতে হবে, যাতে সারের দাম কম থাকে। কারণ, কৃষকের হাতে এখন টাকা কম। বিশ্ববাজার থেকেও খাদ্য আমদানি করা সামনের দিনে আরও কঠিন হতে পারে। ফলে দেশের উৎপাদন ঠিক রাখতে সারের দাম ও জোগান ঠিক রাখা উচিত।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৩০ হেক্টর বাদাম চাষের জমি। কয়েক দিন আগে উজানের পানিতে তাঁদের পাকা ধানের জমি তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকেরা বাদাম চাষ করেছিলেন। আবারও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল উপজেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ১৪ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উজানের পানিতে কৃষকের পাকা ধানের জমি তলিয়ে যায়। কৃষকেরা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। উপজেলায় এবার প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ করা হয় আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা তাঁদের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তাঁদের সব ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ওই এলাকার বাদামচাষি মেরাজ মিয়া বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেন। দু-এক দিনের মধ্যে বাদাম তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন সব বাদাম পানির নিচে। এখন এই বাদাম তুলে কোনো লাভ নেই। এগুলো গরুও খাবে না।
মো. রজব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের জামারবালি, সোনাতলা ও মাইজখোলা গ্রামে বাদামখেত আছে। গত তিন দিনে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বাড়ায় সব তলিয়ে গেছে। এখন বাদাম তুলতে কাজের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক ফতু মিয়া বলেন, গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাদাম চাষের জমিগুলো হঠাৎ পানি আসায় তলিয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক দিন আগেও পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। কৃষকদের দাবি, গোয়ালনগরে বাদাম চাষের জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা হয়। চরাঞ্চলের উঁচু জমিতে প্রথমে আলু চাষের পর বাদাম চাষ করা হয়। আগাম বন্যার কারণে নিচু এলাকার কিছু বাদামখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু সাইদ আরও বলেন, ১৫-২০ দিন আগে উপজেলার প্রায় সব বাদাম উঠে গেছে। গোয়ালনগর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এক হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যা হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপের সেচের পানি সরবরাহে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএমডিএর ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে থাকা বিউটি বেগমের স্বামী আকতারুজ্জামান বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি বিঘার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা ও অন্য মৌসুমে ৩০০ টাকা নেন। ১০ বছর ধরে তিনি এভাবেই বাণিজ্য করে আসছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে খেতে সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর ১ হাজার ৪৩১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে সচল ১ হাজার ৪১৮টি। সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি রয়েছে ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর।
* সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের বাইরে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। * সেচের আওতায় ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারের জমি আছে। * কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, কৃষকদের নলকূপের আবেদন পেলে যাচাই করে স্কিম তৈরি করা হয়। এরপর সমবায়ের ভিত্তিতে অংশীদারি ফি বাবদ এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এই নলকূপ পরিচালনার জন্য বিএমডিএ একজন অপারেটর নিয়োগ দেন। প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতিতে কৃষকের নিজ নামে প্রিপেইড কার্ড থাকতে হয়। সেই কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানির জন্য ন্যূনতম ১১০ টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই।
বড় বালিয়া এলাকার কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে বড় বালিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আকতারুজ্জামান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ফি হিসেবে এক লাখ জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কৃষক সেটা দিতে এগিয়ে আসেননি। ফলে আকতারুজ্জামান, দাউদুল ইসলাম ও জোবায়দুর রহমান মিলে অংশীদারি ফি দেন। আকতারুজ্জামানের ৮০ শতাংশ টাকা থাকায় গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রণ তিনিই পান। অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম। যদিও কৃষকেরা আকতারুজ্জামানকেই অপারেটর হিসেবে জানতেন।
সেচের পানি পেতে হয়রানির শিকার হয়ে সদর উপজেলার বড় বালিয়া এলাকার ৫০ জন কৃষক গত ১৭ এপ্রিল বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেন। সেখানে গিয়ে কৃষক ও অপারেটরের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, ২০১২ সালে নলকূপটি চালু হলে আওতাধীন কৃষকের কাছ থেকে আকতারুজ্জামান সেচের পানির জন্য প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন। আর সেই টাকা থেকে তিনি মাঝেমধ্যে অন্য দুই অংশীদারকে কিছু টাকা ভাগ দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. শাহজাহান আলী বলেন, গভীর নলকূপটির আওতায় তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। কার্ডের বাইরে টাকা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও আকতারুজ্জামানকে প্রতি বিঘায় সেচের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে তিনি পানি দেন না।
ওই নলকূপের আওতায় চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন কৃষক মো. হেলাল। তিনি অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় অপারেটর খেতে পানি দেননি। এতে জমি ফেটে যায়। পরে তিনি শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে খেত রক্ষা করেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী মোকলেসুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে সেচের পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসছেন। এখন বিরক্ত হয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও কোনো বিচার পাননি।
এ বিষয়ে মো. আকতারুজ্জামান বলেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর দেখেন গ্রামে কোনো গভীর নলকূপ নেই। পরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নলকূপটি স্থাপন করেন। কৃষকেরা অংশীদারত্বের টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি বিএমডিএকে জানান। সে সময় তাঁরা টাকা দিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পরে আপনি টাকাটা ধীরে ধীরে তুলে নেবেন।’ সেই পরামর্শেই সেচের পানি বাবদ প্রিপেইড কার্ডের অতিরিক্ত কিছু টাকা তিনি নিচ্ছেন। জোর করে কিছু নিচ্ছেন না।
বিএমডিএ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। নলকূপটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এগ্রোটেক
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা এক সঙ্গে কাজ করতে রাজি
লেখক
প্রথম আলোডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন