আখ অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম। আখ থেকে চিনি, গুড় এবং রস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট আবাদকৃত জমির ২.০৫% আখের আবাদ হয় যার পরিমাণ ১.৭০ লাখ হেক্টর। মিলজোনে ০.৮৬ লাখ হেক্টর এবং ননমিলজোনে ০.৮৪ লাখ হেক্টর। আসুন আখ চাষের পদ্ধতি জেনে নেই-
সাথীফসল নির্বাচনে বিবেচ্য
সাথীফসলটি যদি আখের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে সাথীফসল এবং আখের ফলন কমে যেতে পারে। তাই সাথীফসল নির্বাচনে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে। তা হচ্ছে- অবশ্যই ছোট আকৃতির ও খাড়া জাতের হতে হবে। মেয়াদ অবশ্যই চৈত্র-বৈশাখ মাসে শেষ হতে হবে। শিকড়ের গঠন এমন হবে যেন আখের নালায় ছড়িয়ে না পড়ে। ফলন, প্রতিক্রিয়া এবং উভয় ফসলের আয়-ব্যয় বিবেচনায় আনতে হবে। উৎপাদিত সাথীফসলের বাজারজাত ও গুদামজাত করণের সুবিধা থাকতে হবে।
আবাদের নিয়ম
সাফলভাবে সাথীফসল করতে হলে আখের সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩.০-৩.৫০ ফুট হতে হবে এবং সারি করে বপণ বা রোপণ করতে হবে। জোড়াসারি পদ্ধতিতে সাথীফসল করতে হবে। প্রত্যেক ফসলের জন্য অনুমোদিত হারে সার ও কীটনাশক পৃথকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যেক ফসলের পরিচর্যা সঠিক সময়ে করতে হবে এবং সাথীফসল তোলার পর ফসলের অবশিষ্ট অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। সাথীফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড়ের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপযোগী সাথীফসল
আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লালশাক, পালনশাক, পেঁয়াজ, রসুন, মশুর, সরিষা ও অন্যান্য শীতকালীন সবজি।
জোড়াসারিতে রোপণ
ভালোভাবে তৈরি করা জমিতে ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে হাত লাঙল বা কোদাল দিয়ে লাইন টেনে ৬-৯ ইঞ্চি গভীর নালা করে মাটি ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে দু’নালার মধ্যবর্তী স্থানে রাখতে হবে। এরপর ৪-৪.৫ ফুট ফাঁকা রেখে একইভাবে আবার দুটো জোড়াসারির নালা করতে হবে। এভাবে নালার মাথায় মাথায় তিন চোখ বিশিষ্ট বীজখণ্ড স্থাপন করে অথবা ১.৫-২.০ ফুট দূরত্বে ব্যাগ বা বেডচারা রোপণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে জমিতে আখের মোট সারির সংখ্যা প্রচলিত পদ্ধতির সমানই থাকে। শুধু আখের সারির ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে সাথীফসল চাষাধীন জমি বাড়ানো যায়। ফলে আখের ফলনে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না।
সারির সংখ্যা
সাথীফসলের সাথে সারির যে রকম সংখ্যা হতে পারে। তা হচ্ছে- আলু আগাম জাত-৩, আলু নাবী জাত-২, সরিষা ২-৩, ছোলা-২, পেঁয়াজ/রসুন ৫-৬, মসুর- ৩, কপি-২ সারি।
দ্বিতীয় চাষ
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম সাথীফসল সংগ্রহ করে আরও একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও স্বল্পমেয়াদী সাথীফসল চাষ করা যায়। সম্পূরক সেচ, মাটির রস, মৌসুমী বৃষ্টিপাত, প্রথম সাথীফসলের ধরন ও জমির উর্বরতার ওপর দ্বিতীয় সাথীফসল চাষ ও এর ধরন নির্ভর করে। দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে যে ফসলগুলো চাষ করা যায়, তা হলো-ডাঁটা, পুঁইশাক, মুগ, চিনাবাদাম, কলমিশাক, ঢেঁড়শ, ধৈঞ্চা ও নীল (সবুজসার)। বিশেষ করে প্রথম সাথীফসল হিসেবে আলু ও দ্বিতীয় সাথীফসল হিসেবে ডাঁটা, কলমিশাক ও মুগ ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মুড়ি আখের সঙ্গে
আখ কাটার পরপরই শুকনো পাতা পুড়িয়ে আখের গোছা মাটি সমান করে কেটে জমি পরিষ্কার করে দু’সারি আখের মধ্যবর্তী স্থান গভীর করে লাঙল বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ দিতে হবে। আখের গোছার দু’পাশে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে গোছার দু’পাশের মাটি আলগা ও সার মেশানোর কাজ করে সব জমি মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। এমন দু’সারি আখের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সময় ও জমি উপযোগী সাথীফসল বপন বা রোপণ করতে হবে। সাথীফসলের জন্য অনুমোদিত মাত্রায় সার অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।
সময়ভেদে চাষ
অক্টোবরে কর্তণকৃত আখের জমি: এসব জমিতে পেঁয়াজ, ক্রান্তি জাতের মুগডাল, আগাম আলু, মাসকলাই, পালংশাক, আগাম ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, মুলা ইত্যাদি সাফলভাবে চাষ করা যায়।
নভেম্বরে কর্তণকৃত আখের জমি : যেকোন ধরনের উপযোগী সাথীফসল মুড়ি আখের সাথে ফলানো সম্ভব। বিশেষভাবে উপযোগী কয়েকটি সাথীফসল হলো- আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, মসুর, রসুন, ছোলা, গম এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।
শূন্যস্থান পূরণ
আখ রোপণের পর কখনো কখনো সন্তোষজনক অঙ্কুরোদগম হয় না। জমিতে যে স্থানে বীজ গজায়নি তা নিশ্চিত হয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ফাঁকা স্থানে বীজ রোপণ করা প্রয়োজন। দু’ফুট দূরত্বের মধ্যে কোন চারা দেখা না গেলে সেখানে বীজ গজায়নি বলে ধরে নিতে হবে এবং অবিলম্বে সেখানে সুস্থ-সবল বীজ রোপণ করতে হবে। চারা যে পদ্ধতিতে রোপণ করা হয়েছিল; সে পদ্ধতিতে ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে হবে এবং তা অবশ্যই একই জাতের আখবীজ দিয়ে করতে হবে।
মাটি আলগাকরণ
চারা অবস্থায় ভারি বৃষ্টিপাতের পর জমিতে জো এলে অবশ্যই মাটি আলগা করে দিতে হবে। বীজ রোপণের পরে এবং অঙ্কুরোদগম শেষ হওয়ার আগে বৃষ্টিপাত হলে জমির উপরিভাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। শক্ত স্তরের জন্য বীজের চোখ গজাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ অবস্থায় অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ছোট কোদাল দিয়ে জমির উপরিভাগ হালকাভাবে কুপিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে নতুন চারাগুলো মাটি থেকে উঠে আসতে পারে। এসময় সতর্কতা নিতে হবে যেন চারা কেটে না যায়। আখের বৃদ্ধিকালীন সময়ে যতবারই ভারি বৃষ্টিপাত হবে, জো আসার সঙ্গে সঙ্গে ততবারই মাটি আলগা করে দিতে হবে। চারা অবস্থায় মাটি আলগাকরণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন মাটি চারার গোড়ায় পড়ে নালা ভর্তি না হয়। চারার গোড়া মাটি চাপা পড়লে কুশি কম হবে এবং কুশির বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
আগাছা দমন
আগাছা দমন ব্যবস্থা না করলে ফসলের ফলন কমে যায়। কারণ আগাছা পানি ও খাদ্যের জন্য ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। ফসলের তুলনায় আগাছার বৃদ্ধি দ্রুত হয়ে থাকে। তাছাড়া ঘন আগাছা নানা ধরনের পোকামাকড়ের ডিম পাড়ার আকর্ষণীয় স্থান। অনেক মাজরা পোকা ঘাসের জন্য আখের ক্ষেতে আকৃষ্ট হয়।আগাছার বৃদ্ধি, জমির অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করেই আগাছা দমনের উপযুক্ত সময় বেছে নেওয়া ভালো। আগাছা গজানোর পরপরই নিড়ানি দিয়ে সহজেই নির্মূল করা যায়। এসময় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আখের তেমন ক্ষতি হয় না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এরা বেশি পরিমাণ রস ও খাদ্য মাটি থেকে সংগ্রহ করতে থাকে। এ পর্যায়ে আগাছা দমন ব্যবস্থা কষ্টসাধ্য। ফুল ধরার আগে আগাছা দমন ব্যবস্থা না করলে এদের বংশ বিস্তার ঘটবে এবং পরবর্তী বছরে এদের প্রকোপ ব্যাপকতর হবে।
মিরাজুল ইসলাম (৩৩)। ১০ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। আকামা জটিলতায় খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক বছর বেকার থাকার পর ইউটিউবে পতিত জমিতে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখেন। বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে পড়েন ড্রাগন চাষে। দেড় বছরের ব্যবধানে এখন উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগান তাঁর। এ বছর খরচ বাদে আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইন্দুরকানি গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল। উপজেলার টগরা গ্রামে দেড় একর জমিতে তিনি ড্রাগনের বাগান তৈরি করেছেন। তাঁর বাগানে এখন সাড়ে তিন হাজার ড্রাগন ফলের গাছ আছে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক হিসেবে ১০ বছর সৌদিতে কাজ করে ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আকামা সমস্যার কারণে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করবেন বলে ভাবছিলেন। একদিন ইউটিউবে ড্রাগন চাষের ভিডিও দেখতে পান। সেই থেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহ জন্মে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পতিত জমি ড্রাগন চাষের উপযোগী করেন। গাজীপুর থেকে ৬০ টাকা দরে ৬০০ চারা নিয়ে আসেন। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ। পরের বছর জুনে ফল পাওয়া শুরু করেন।
ড্রাগনের বাগান করতে মিরাজুলের খরচ হয়েছিল ছয় থেকে সাত লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ফল বিক্রি করে তাঁর খরচ উঠে গেছে। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাতবার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। এখন পরিপক্ব ও রোগমুক্ত গাছের শাখা কেটে নিজেই চারা তৈরি করেন। ড্রাগন চাষের পাশাপাশি বাগানে চুইঝাল, এলাচ, চায়না লেবুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ড্রাগনের চারাও উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি।
মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগানের বেশির ভাগ গাছে এ বছর ফল ধরেছে। গত মঙ্গলবার বাগান থেকে দেড় টন ফল সংগ্রহ করেছেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি হয়। নভেম্বর পর্যন্ত আরও পাঁচ–ছয়বার বাগান থেকে ফল তোলা যাবে। আশা করছেন, খরচ বাদে এবার আট থেকে নয় লাখ টাকা লাভ থাকবে।
মিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাড়িতে ও ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগনের বাগান করেছেন। আমি এ পর্যন্ত ৪০ টাকায় দেড় হাজার চারা বিক্রি করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ বয়সের একটি ড্রাগনের চারা রোপণের পর ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এর মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কয়েক দিন পরপর সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়। ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সার দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা বলেন, মিরাজুল ইসলামকে ড্রাগন চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। উপজেলায় তাঁর বাগানটি সবচেয়ে বড়। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে ছোট থেকে বাগানটি বড় করেছেন।
ডাচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অনুষ্ঠিত কৃষি খাতের ব্যবসাবিষয়ক এক সম্মেলনে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এগ্রি বিজনেস কনক্লেভে বাংলাদেশের প্রায় ৪০জন উদ্যোক্তা ডাচ কৃষি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্তি সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছে ওয়েগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোচনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি সহযোগিতা দিতে রাজি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ডাচরা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ ছাড়া ডাচ সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বীজ, পশু খাদ্য, পোলট্রি, হর্টিকালচার ও এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেছে, যা ওই দেশের বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করেছে।
আলোচনায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্কয়ার, ইস্পাহানি এগ্রো, একে খান অ্যান্ড কোম্পানি, প্যারাগন গ্রুপ, এসিআই, জেমকন গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ডাচ প্রযুক্তির প্রয়োগ সরেজমিনে দেখতে যাবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের পোল্ট্রিখাতে সহযোগিতার আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে উল্লেখ করে মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের মধ্যে মৎস্য, পশুপালন ও হর্টিকালচারে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে।
কনক্লেভ আয়োজনে প্রথমবারের মতো দূতাবাসের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয়, নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, নেদারল্যান্ডস ফুড পার্টনারশিপ, ডাচ-গ্রিন-হাইজডেল্টা, লারিভ ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী নেদারল্যান্ডসের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কম। ২০২১-এ কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
পাবনার বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম তাঁর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। অথচ পেঁয়াজের জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে লাগানো বাঙ্গি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ করবেন বলে আশা করছেন। এই বাঙ্গি আবাদে তাঁর কোনো খরচ হয়নি। ফলে পেঁয়াজ আবাদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বাঙ্গি আবাদ কইর্যা যে টাকা পাইল্যাম তা হলো আমাগরে ঈদের বোনাস। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আমরা (কৃষকেরা) যে ক্ষতির মধ্যে পড়িছিল্যাম, বাঙ্গিতে তা পুষায়া গেছে। এই কয়েক দিনে ১২ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচছি। সব মিলায়া ৫০ হাজার টাকার বাঙ্গি বেচার আশা করতেছি।’
সাইদুল ইসলামের মতো পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার অনেক কৃষক এবার পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গির আবাদ করেন। কৃষকেরা পেঁয়াজ আবাদ করতে গিয়ে বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। সেই হিসাবে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ কৃষকেরা বিক্রি করতে পেরেছেন প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের এবার ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
কৃষকেরা বলেন, পেঁয়াজের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর পর তা কিছুটা বড় হলে এর ফাঁকে ফাঁকে এসব সাথি ফসল লাগানো হয়। পেঁয়াজের জন্য যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়া হয়, তা থেকেই সাথি ফসলের সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে সাথি ফসলের জন্য বাড়তি কোনো খরচ হয় না।
কৃষকেরা বলেন, বাঙ্গিতেই কৃষকের লাভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রমজান মাস হওয়ায় এখন বাঙ্গির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি।
সাঁথিয়ার শহীদনগর গ্রামের কৃষক আজমত আলী জানান, তাঁর জমিসহ এই এলাকার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ দিন হলো বাঙ্গি উঠতে শুরু করেছে। এবার বাঙ্গির ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বাজারে এসব বাঙ্গি আকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন দাম থাকলে এক বিঘা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তাঁরাও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় ফল কাঁঠালের জ্যাম, চাটনি ও চিপস উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহের প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক। তাঁরা কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মোট ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।
কর্মশালায় ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠাল স্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশ কাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।’
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মুখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও এমওপি সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া কমলা গাছের আগাছা দমন করতে হবে।
ফসল তোলা: মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ মাসে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন