পরিবেশ
যেভাবে শহুরে জীবনে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে প্রাণীরা
কয়েক হাজার বছর ধরে জাপানি শহর সেন্দাইতে কাক সম্প্রদায়কে তাদের প্রিয় একটি খাদ্য আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছিল।
যেহেতু এই বাদামের খোসা ছাড়ানো তাদের জন্য খুবই কঠিন, তাই এই পাখিরা খাবারটিকে অনেক ওপরে নিয়ে যেত এবং আকাশ থেকে বাদামগুলো নিচে ফেলে দিতো।
১৯৭০ সালে স্থানীয় একজন বিজ্ঞানী দেখলেন যে, এই প্রাণীটি তাদের কৌশল বদলে ফেলেছে। তারা এই বাদামগুলোকে রাস্তার মাঝখানে এমন জায়গায় ফেলতে শুরু করলো, যেখানে সেগুলোর ওপর দিয়ে যানবাহন চলে যেতে পারে-যাতে করে বাদামের গায়ের শক্ত আবরণ ভেঙে গিয়ে তা খাওয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়।।
পাখিগুলি গাড়িগুলোকে ব্যবহার করতো বাদাম ভাঙার উপকরণ হিসেবে।
কিভাবে নগরায়ন পশু-প্রাণীর আচার-আচরণ বদলে দেয় এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা তরান্বিত করে (যা করতে অন্যদের মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগে যায়)- সে বিষয়ে গবেষণার অনন্য কেস স্টাডি হয়ে উঠলো সেন্দাই এলাকার কাকগুলো।
শহুরে জীবনে খাপ খাওয়ানো
২০১৮ সালের জাতিসংঘের খতিয়ান অনুসারে, আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন শহরে বসবাস করছে-যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৫%, এবং তা ১৯৬০ সাল থেকে ৩৪% বেড়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের প্রায় ৭০% মানুষই হবে শহরের বাসিন্দা।
আর এই বৃদ্ধির হার বন্যপ্রাণী এবং জীব-বৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কারণ তাদের বাসস্থান কমে গেছে।
তবে বিষয়টি বেশকিছু প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তনের সূচনা করেছে, যারা দ্রুত শহুরে জীবনে বেঁচে থাকার কৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছে।
ডাচ জীববিজ্ঞানী মেন্নো স্কিলথুইযেন এর ব্যাখ্যা অনুসারে,”বন্যপ্রাণীর জীবনের সাথে নগরায়নের সম্পর্ক অনুধাবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
তিনি বলেন “আমরা এমন এক অবস্থার দিকে যাচ্ছি যেখানে অধিকাংশ মানুষ যে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকবে তা হল নগর-প্রকৃতি। আমাদের আরও নিশ্চিত করারতে হবে যে, নগর প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে হবে”।
দ্রুতগতিতে পরিবর্তন
স্কিলথুইযেন এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের যুক্তি যে, কিছু কিছু বিষয় মানব-সৃষ্ট দ্রুত বিবর্তনমূলক পরিবর্তনের উদাহরণ – একটি দ্রুত অভিযোজন যা শতাব্দীর মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তার পরিবর্তে কয়েক দশক বা এমনকি কয়েক বছরের মধ্যে ঘটতে পারে।
ব্রিজ স্পাইডার যা সাধারণত আলো এড়িয়ে চলে, তারা নিজেদের জাল তৈরির জন্য পরিবর্তিত হয়ে মথ-আকর্ষণ করে এমন সড়কবাতির কাছে যায় জীবনের তাগিদে। অনেক শহরে, মথ বাল্বের আলোর হাতছানিতে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ডারউইন কামস টু টাউন গ্রন্থে ডাচ জীববিজ্ঞানী এমনটাই লিখেছেন।
আচরণগত এই ধরনের পরিবর্তনগুলো বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সহজেই লক্ষ্য করা যায় এবং শহরগুলোতে তা চাক্ষুষ করার সেরা জায়গা।
ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর জীববিজ্ঞানী মার্ক জনসন বলেছেন, “সর্বোত্তম এবং বৃহৎ-পরিসরে অনিচ্ছাকৃত বিবর্তন অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্ব করে নগরায়ন”।
নাগরিক অভিযোজনের বিষয়ে ১৯২টি গবেষণা-পরীক্ষা নিয়ে ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞান জার্নালে জনসন ছিলেন সহ-লেখক।
এতে দেখা যায় যে, প্রজাতিগুলি শহুরে পরিবেশের মধ্যে স্বস্তির জায়গা খুঁজে বের করে যা তাদের সঠিকভাবে বিকশিত করে।
অন্যতম উদাহরণ হল, পেরেগ্রিন ফ্যালকন-এই শিকারি বাজ পাখিটি বিংশ শতকের মধ্যভাগে অনেক জায়গায় বিলুপ্ত হওয়ার হুমকিতে পড়েছিল রাসায়নিক কীটনাশকের কারণে।
ফ্যালকন বা বাজপাখিরা যেহেতু অতিথি পাখি শিকার করতো, ফলে তাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর মাত্রায় কীটনাশক প্রবেশ করতো (ডিডিটি নামক কীটনাশক), কারণ অতিথি পাখিরা পোকামাকড় খেত।
ডিডিটি কীটনাশকের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং প্রজনন কর্মসূচি এই প্রজাতিটিকে ফিরিয়ে আনার কাজ করেছে।
এই বাজপাখিগুলি গ্রামীণ আবাস ফেলে রেখে শহরে শহরে চলে গেল, যেখান তারা আকাশচুম্বী ভবন এবং উঁচু উঁচু অবকাঠামোগুলোতে বাসা বানানো রপ্ত করে ফেলে। কারণ বাসস্থানের সংকট তাদের ওপর চরম চাপ তৈরি করেছিল।
তাদের শিকার প্রাপ্তির সহজলভ্যতার দিকেও নির্ভর করতে হয়েছিল: গবেষকদের লিপিবদ্ধ তথ্য অনুসারে, ফ্যালকন শহরের অন্যান্য প্রাণীর খাবারে ভাগ বসাতো, তা হোক কবুতর থেকে বাদুড়।
লম্বা এবং পুরুসূঁচালো ঠোঁট
জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে ডারউইনের ফিঞ্চ পাখির একটি পাকাপোক্ত অবস্থান আছে। যদিও তা সরাসরি সত্যিকার ফিঞ্চপাখির সাথে জড়িত নয়, সেগুলো ছিল গ্যালাপাগোস আইল্যান্ডের একধরনের প্রজাতি। সেগুলো তার ‘ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন’ (বিবর্তনবাদের তত্ত্ব) তত্ত্বের উদ্ভাবনে বিশেষ সহায়তা করেছে।
এই পাখিগুলির ঠোঁটের আকার এবং গঠন ছিল বিভিন্ন রকম, এবং বিভিন্ন দ্বীপ থেকে নির্দিষ্ট খাবার বেছে নিতো তারা।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে টাকসন, অ্যারিজোনার ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে: তাদের ঠোঁট এখন তাদের গ্রামীণ প্রজাতির থেকে লম্বা এবং চওড়া ।
এই আকার সূর্যমুখী ফুলে বীজ খাওয়া সহজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মিউজিয়াম অব সাউথওয়েস্টার্ন বায়োলজির পরিচালক এবং সংরক্ষক ক্রিস্টোফার উইচ বলেন, “আমি মনে করি এটা খুব শক্তিশালী প্রমাণ যে যখন আমরা বণ্য প্রজাতির সম্পর্কে কোন নতুন তথ্যসরবরাহ করি, আমরা বিবর্তনবাদের সাথে মিলিয়ে ফেলি।
ভূ-গর্ভস্থ মশা
কিউলেক্স পাইপেনস এক ধরনের মশা যা বিশ্বজুড়ে দেখা যায়। তারা খুব সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে বলে পরিচিত। কিন্তু লন্ডনের ভূ-গর্ভস্থ মশা বিষয়টিকে আরও একধাপ সামনে নিয়ে গেছে।
যেখানে কিউলেক্স পাইপেন্স মশা মাটির ওপরে বসবাস করে, অনেক সঙ্গী বানায়, কিন্তু কিউলেক্স মলেস্টাস থাকে মানব-নির্মিত এলাকা এবং ভূগর্ভস্থ জায়গাগুলোতে। এটি একজন সঙ্গীর সাথে মিলন ঘটায়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল, যেখানে কিউলেক্স পাইপেন্স পাখিদের কামড়াতে পছন্দ করে , কিউলেক্স মলেস্টাস মানুষের রক্তের স্বাদ গ্রহণে তৈরি হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেসমস্ত মানুষ ব্রিটেনের রাজধানীর বিখ্যাত পরিবহন টানেল নিরাপত্তা শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করতেন তাদের এই মশার মারাত্মকভাবে কামড়ানোর ইতিহাস রয়েছে।
কিউলেক্স মলেস্টাস ভূ-গর্ভস্থ অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল ।
কিন্তু মানবদেহের রক্তের প্রতি তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও লন্ডনের ভূ-গর্ভস্থ মশা বর্তমান ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর অভিযোগের তালিকায় ততটা স্পষ্ট অবস্থানে নেই।
বিস্টন বেতুলারিয়া মানুষের দ্বারা প্রভাবিত অভিযোজনের আরেকটি উদাহরণ। ব্রিটেনে শিল্পায়নের দশকগুলোতে এটি নগর জীবনে ছড়িয়ে পড়ে। চিমনি থেকে নির্গত কালিঝুলি তাদের শিকারিদের চোখ থেকে লুকাতে সাহায্য করেছিল, কেউ কেউ গাছের আড়ালে লুকাতো, ধরা পড়ে যেত এবং তাদের জনসংখ্যা এভাবে হ্রাস পেতো।
১৯৬০ এর দশকের উন্নত বায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিবেশে পরিচ্ছন্নতা দেয় এবং হালকা রং এর মথের পুনরাবির্ভাব দেখা যায়।
মেট্রো ব্যাঙ
মেক্সিকো থেকে উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন পর্যন্ত টুঙ্গারা ব্যাঙ বাস করে এবং চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য মোতাবেক তাদের শব্দের দ্বারা তারা নারী সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করে।
তাদের সঙ্গীত শিকারিরাও তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কাজে লাগায়।
গবেষকরা দেখেছেন যে, যেসব ব্যাঙ শহুরে পরিবেশে বসবাস করে তারা নারী সঙ্গিনীদের আকৃষ্ট করতে গ্রামে বসবাসকারী ব্যাঙ এর চেয়ে আরও জটিল ডাক তৈরি করে। একইসময় ‘মেট্রো ফ্রগ’ বা ‘শহুরে ব্যাঙ’দের নাগরিক পরিবেশে শিকারিদের বিষয়ে কম উদ্বিগ্ন হলেও চলে।
রাতের আঁধারে ব্লাকবার্ড এর গান
সাধারণ প্রজাতির ব্ল্যাকবার্ড (টুর্ডুস মেরুলা) বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি শহুরে প্রাণী। গ্রামীণ এলাকা বা উপশহরে বসবাসকারীদের তুলনায় শহুরে এলাকায় বসবাস এসব প্রাণীর জীবনে নানারকম পরিবর্তন এনেছে।
গবেষক মেন্নো স্কিলথুইযেনের মতে, ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকাতে তাদের সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসেবে বিবর্তন হচ্ছে।
তিনি লেখেন, “এটা জানা দরকার যে, গবেষণাগারে বনের এবং শহুরে ব্ল্যাকবার্ডের অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে যাদেরকে ছানা হিসেবে ঠিক একই পরিস্থিতিতে লালন-পালন করা হয়েছিল”। সুতরাং তারা প্রকৃতিগতভাবে আলাদা ছিল, জীবনের পদ্ধতিগতভাবে নয়।
এইসব শহুরে পাখি লম্বায় খাটো, ছোটা এবং পুরু ঠোঁট, শীতের সময় অভিবাসী হতে দেখা যায় না। শব্দদূষণ তাদের গান গাওয়ার সময়ও বদলে দেয়।
বনের পাখীদের ভোরবেলা সঙ্গীতের কলকাকলির জন্য মুখরিত। শহুরে পাখিদের সূর্যোদয়ে ঘণ্টা-খানেক আগে গাইতে শোনার কথা জানা বিজ্ঞানীরা।
পুয়ের্তোরিকোর অ্যানল লিযার্ড নাগরিক অভিযোজনের পোস্টারবয় হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। পাথর এবং গাছপালা বেষ্টিত পরিবেশ থেকে এসে বাসিন্দারা শহরের দেয়াল এবং জানালার মাঝে খাপ খাওয়ানো চ্যালেঞ্জ ছিল।
“শহরাঞ্চল অন্য আরেক পরিবেশ। সেখানে বসবাসকারী প্রাণীরা কোনভাবেই প্রাকৃতিক সিলেকশনের বিরোধী নয়- ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ক্রিস্টিন উইনচেল বললেন।
তিনি আরও জানান, শহুরে বসবাসকারী প্রাণীগুলোর পায়ের আঙ্গুলগুলোতে বেশি বেশি লোম থাকে এবং পায়ের পাতা তুলতুলে থাকে। শহরের এবং গ্রামীণ এলাকার গিরগিটির চিত্র-ধারণ করে উইনচেল দেখিয়েছেন যে, পিচ্ছিল ভূ-পৃষ্ঠে শহুরে বাসিন্দা স্বচ্ছন্দে হেটে ছাড়িয়ে গেছে।
তার ভাষায়, “এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, এই গিরগিটিগুলো কীভাবে আবাসের সীমাবদ্ধতা এবং মানুষের উপস্থিতির সাথে লড়াই করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে তারা এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় আরও সহনশীল হয়ে উঠেছে”।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে এইসব প্রাণীর অভিযোজন ক্ষমতাকে খাটো করে দেখাটা হবে ভুল।
“এটা এমন নয় যে কোনও প্রজাতি যে বিলুপ্তির হুমকিতে নেই তার অবস্থার শিগগিরই বা বিলম্বে অবস্থার পরিবর্তন হবেনা। এমনকি সাধারণ প্রাণীও বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা দেখা যেতে পারে যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি যে, শহর-নগরের বিকাশও বন্যপ্রাণীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
পরিবেশ
মাটির অম্লতা বেড়েছে, কমেছে ফসলের উৎপাদন
- ৪৫.৬৭ শতাংশ জমির মাটিরই অম্লতা বেশি
- অম্লতা বেশি হলে মিলবে না কাঙ্ক্ষিত ফলন
- দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে
- সমাধানে ডলোচুন প্রয়োগের সুপারিশ
দেশের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। ফসল উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একদিকে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে না, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বেড়ে হুমকিতে পড়বে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রাক্কালে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
অম্ল মাটি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গঙ্গা অববাহিকা ছাড়া দেশের সব অঞ্চলের মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বাড়ছে। অম্লতা যত বাড়বে, ফসলের উৎপাদনও তত কমবে। মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বেশি হলে গম, ভুট্টা, আলু, সবজি, ডালসহ রবি শস্যে কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।’
মাটির গুণগত মান নিয়ে গবেষণা করে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। সংস্থাটির অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আবাদযোগ্য জমিতে অম্লতার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে অধিক অম্ল থেকে অত্যধিক অম্ল জমির পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ, আর ২০২০ সালে অম্লতার পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। মাটিতে অম্লতা বাড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার, ক্যালসিয়ামসহ ক্ষারীয় উপাদান হ্রাস, এক জমিতে অধিক চাষাবাদ, ফসল তোলার পর গাছ খেতের মাটির সঙ্গে মিশতে না দিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি।
গবেষকদের তথ্যমতে, মাটির অম্লত্ব কিংবা ক্ষারীয় অবস্থার ওপর ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন অনেকাংশে নির্ভর করে। অম্লতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয় মাটির পিএইচ নির্ণয়ের মাধ্যমে। পিএইচ মান ৪ দশমিক ৫ এর নিচে হলে সেই মাটিকে অত্যধিক অম্ল, ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ পর্যন্ত অধিক অম্ল, ৫ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ হলে মৃদু অম্ল এবং ৬ দশমিক ৬ থেকে ৭ দশমিক ৩ এর মধ্যে হলে তাকে নিরপেক্ষ মাটি বলা হয়। ফসলের জন্য মাটির আদর্শ পিএইচ ধরা হয় ৬ দশমিক ৫।
এসআরডিআইয়ের গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মোট ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির মাটি অত্যধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ এর নিচে) এবং প্রায় ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমির মাটি অধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ থেকে ৫.৫)। অর্থাৎ মোট আবাদি জমির প্রায় অর্ধেকের (৪৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ) মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। অধিক অম্ল মাটিতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও মলিবডেনামের স্বল্পতা এবং অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজের আধিক্য থাকায় ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং বরেন্দ্র ও মধুপুর গড় অঞ্চলের অধিকাংশ মাটি অধিক থেকে অত্যধিক অম্ল। এসব অঞ্চলের কৃষিজমি থেকে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসআরডিআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অম্ল মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. নূরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জমিতে দিন দিন অম্লতার পরিমাণ বাড়বে। সার ব্যবহারে কৃষকের খরচ বাড়বে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন মিলবে না।
মাটির অম্লতা কমিয়ে আনতে জমিতে ডলোচুন ব্যবহার ভালো সমাধান হতে পারে বলে এই মৃত্তিকাবিজ্ঞানী জানান। তিনি বলেন, এ জন্য সাধারণত প্রতি শতাংশ জমিতে ৪ কেজি থেকে ৮ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে মাটির বুনটের ওপর নির্ভর করে ডলোচুন প্রয়োগের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। তা ছাড়া জমিতে জৈব পদার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।
পরিবেশ
ঢাকায় ঘরের বাতাসও সমান দূষিত
পাঁচ দিন ধরে বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে ঢাকা। ভারতের দিল্লি বা মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর, কোনোটি ঢাকাকে ওই স্থান থেকে টলাতে পারেনি। বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে সংস্থাটি বায়ুর মান পরিমাপ করে মূলত ঘরের বাইরে থেকে। ফলে ঘরের ভেতরের বাতাস কেমন, সে সম্পর্কে ওই পর্যবেক্ষণ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম রাজধানীর ঘরের ভেতরের বায়ুর মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকায় ঘরের ভেতরে ও বাইরের বায়ুর মান প্রায় সমান দূষিত হয়ে পড়েছে।
অধ্যাপক সালাম গত জানুয়ারি মাসের ১৪, ১৯, ২৩ ও ২৮ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ঘরের বাইরে ও ভেতরে বায়ুর মান কেমন ছিল তার পর্যবেক্ষণ নিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, দুদিন ঘরের ভেতরের বায়ুর মান বাইরের চেয়ে খারাপ ছিল। আর বাকি দুদিন বাইরের বায়ু বেশি খারাপ ছিল। ঘরের ভেতরে ও বাইরে বায়ুর মানের পার্থক্য ১০ থেকে ১২ শতাংশ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে গত ২৮ জানুয়ারি ঘরের ভেতরে বায়ুদূষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান ও রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিক চাইল্ড হেলথ নামের দুটি সংস্থা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের যে দেশগুলোর শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামীণ পরিবারে নারীরা গোবর, কাঠ, পাটকাঠি ও খড় পুড়িয়ে রান্না করেন। ওই পোড়ানো থেকে ঘরের ভেতরের বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ে।
অধ্যাপক আবদুস সালামের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকায় ঘরের ভেতরে ও বাইরের বায়ুর মান প্রায় সমান দূষিত হয়ে পড়েছে।
‘দ্য ইনসাইড স্টোরি: হেলথ ইফেক্ট অবইনডোর এয়ার কোয়ালিটি অন চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং পিপল’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঘরের ভেতরে দূষিত বায়ুর কারণে জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে অনেক শিশু মারা যায়। অধিকাংশ শিশু কম ওজন (২ দশমিক ৫ কেজির কম) নিয়ে জন্ম নেয়। যারা বেঁচে থাকে তাদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি কম হয়, দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হয় তারা।
ঘরের বাইরে ও ভেতরে বায়ুর মান একই রকমের খারাপ হওয়ার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে ঘরের ভেতরে মূলত রান্নাঘরে বায়ু অন্য এলাকাগুলোর চেয়ে দূষিত থাকে। কারণ, সেখানে জৈব জ্বালানি পুড়িয়ে রান্না করা হয়। কিন্তু শহরে ঘরের মধ্যে দূষিত বায়ু মূলত বাইরে থেকে আসছে। বাইরে বাতাস চলাচল ও আবহাওয়াগত কারণে অনেক সময় বায়ুর মান ঘরের ভেতরের চেয়ে ভালো থাকে। কারণ, ঘরের মধ্যে দূষিত বায়ু একবার প্রবেশ করলে তা আর বের হতে পারে না। এ ধরনের দূষণের হাত থেকে শিশু ও বৃদ্ধদের রক্ষা করতে হলে তাদের চলাফেরা বাড়ানো উচিত। কারণ, যে কেউ স্থির হয়ে থাকলে, সে দূষণের শিকার বেশি হবে।
এর আগে ২০১৮ সালে অধ্যাপক সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পক্ষ থেকে রাজধানীর ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করেন। সেখানে শ্রেণিকক্ষ ও মাঠের বায়ুতে সূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ওয়ান, পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ ও পিএম টেন) ও উদ্বায়ী জৈব যৌগ উপাদান পরিমাপ করে দেখা গেছে, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক এসব উপাদান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা শিশুদের স্বাস্থ্যেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা জটিলতা খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বায়ুদূষণের সব ধরনের উৎস বন্ধ করা শুরু করেছি। অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণেরও উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া দেশের বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে সভা করেছি। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আরও দূষণবিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করতে যাচ্ছি।’
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালে নিয়মিতভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশের ঘরের ভেতরের (ইনডোর) বায়ুর মান নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সংস্থা থেকে প্রকাশ করা সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ঘরের ভেতরের বায়ুর মান শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ৭০ হাজার ৩৪৫ জন ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের কারণে মারা গেছে। এদের বেশির ভাগই নবজাতক, যারা জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে মারা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে, শিশুদের রান্নার সময় ঘরের বাইরে থাকা ও ধোঁয়ার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে শহরে ঘরের ভেতরে শিশুদের চলাফেরা বাড়িয়ে ও ঘরে বাতাস চলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে ঘরের মধ্যে বাতাস আটকে থাকতে না পারে।
পরিবেশ
আবার সবুজে ভরে উঠল মাঠ
বর্ষায় থাকত থইথই পানি। আর শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটার লোকজনের কর্মচাঞ্চল্যে জমজমাট থাকত পুরো এলাকা। রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় তুরাগ নদের উভয় পাশের এই চিত্র এবার কিছুটা বদলে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ইটভাটার আশপাশের অব্যবহৃত জমিতে এবার দেখা যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। স্থানীয় কৃষকেরা আবাদ করেছেন লাউ, শিম, টমেটো, কপিসহ নানা ধরনের সবজি।
সাভার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তুরাগ নদের পাশে আশুলিয়ার পাড়াগ্রাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এ এলাকার পাশে তুরাগ নদের তীরে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটি ইটভাটা। অথচ একসময় ওই সব জমিতে সব ধরনের ফসলের আবাদ করতেন এলাকার কৃষকেরা। ইটভাটার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান জোরদার হওয়ার পর এলাকার কৃষকেরা আবার আশার আলো দেখছেন।
পাড়াগ্রামের কৃষক মজিবর রহমানের নিজের জমি না থাকলেও তিনি একসময় অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। তবে চাষের জমি ইটভাটা দখল করে নেওয়ার পর তিনি পেশা বদল করেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার তিনি চাষাবাদ শুরু করেছেন। তিনি এবার ইটভাটার আশপাশে অব্যবহৃত পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে লাউ, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন।
মজিবর রহমান জানালেন, পাঁচ বিঘা জমি তিনি এক বছরের জন্য বন্ধক নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকায়। সার, কীটনাশক, বীজ, শ্রমিকের মজুরিসহ চাষ বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে আরও প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই বিঘা জমির ধুন্দুল বিক্রি করে পেয়েছেন তিনি ৮০ হাজার টাকা। লাউ, শিম ও টমেটো থেকে আরও প্রায় দুই লাখ টাকা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
খেত থেকে ফুলকপি তুলছিলেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ইটভাটার পাশে ২৮ শতাংশ জমিতে কপির আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছেন। আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার কপি তাঁর খেতে রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি ওই জমিতে ধুন্দুলের বীজ বপন করতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ইটভাটার কারণে তাঁদের এলাকায় চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এলাকার কৃষকেরা আবার চাষাবাদে ঝুঁকবেন।
স্থানীয় আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও পাড়াগ্রামের বাসিন্দা রুহুল মণ্ডল বলেন, তাঁর এলাকায় একসময় ধান, পাট, গম, সরিষাসহ নানা ধরনের সবজির আবাদ হতো। এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের উৎস ছিল কৃষি, কিন্তু ২০ বছর আগে একের পর এক ইটভাটা গড়ে ওঠায় সব জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। সরকার ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ায় এ এলাকায় আবার চাষাবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়া ভাটার আশপাশে সবজির আবাদ শুরু করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর চারপাশের সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে আশুলিয়াসহ রাজধানীর চারপাশের বেশ কয়েকটি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকেরা আবার ওই সব জমি কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
সাভারের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ইটভাটার কারণে সাভারে কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে কৃষিজমি বাড়বে। ইটভাটার ব্যবহৃত জমি চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বিনা মূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আশুলিয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকটি ভাটার আশপাশে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
পরিবেশ
শাপলার হ্রদে ‘পাখির বাড়ি’
২২ একর জমিজুড়ে আঁকাবাঁকা হ্রদ। পাশঘিরে ছোট ছোট চা-গাছের টিলা। হ্রদভর্তি শাপলা। আর সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাস। জায়গাটি ‘পাখির বাড়ি’ নামেই স্থানীয় মানুষের কাছে পরিচিত। এটি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল চা-বাগানে। উপজেলা সদর থেকে ওই স্থানের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।
সেদিন সকাল সাতটার দিকে বাগানে ঢোকার পর পথে দেখি চার-পাঁচজন নারী চা-শ্রমিক কনকনে শীতে কাজে যাচ্ছেন হেঁটে।
হ্রদটিতে পৌঁছাব কীভাবে, তা জানতে চাইলে তাঁদের একজন হেসে বললেন, ‘পাখির বাড়ি যাইবেন?’
তাঁরা রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।
হ্রদে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির। বাগানের কারখানার পেছনে হ্রদে ফুটেছে শাপলা। টলটলে পানিতে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে বালি হাঁস, চখাচখি, ভুঁতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। মানুষের সাড়া পেলে তারা ঝাঁক বেঁধে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যায়। হ্রদের এক পাড়ে টিলার ওপর একটি বাংলো। শাপলা আর পাখি দেখতে টিলার ঢালে বাঁশ দিয়ে সিঁড়ি ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশে টিনের ছাউনির একটি পাকা ঘর ও বাঁশের তৈরি বেঞ্চ।
জানা গেল, হ্রদে বাগান কর্তৃপক্ষÿ ১৫-২০ বছর ধরে মাছ চাষ করছে। সেখানে শাপলা ও কিছু পাখি সারা বছরই থাকে। তবে শীতের সময় বেশি দেখা যায়। এখানে পাখি শিকার ও ফুল ছেঁড়া নিষিদ্ধ। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসে। তবে বাগান কর্তৃপক্ষেরÿ অনুমতি ছাড়া সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। সকাল ও শেষ বিকেলে হ্রদে পাখি বেশি থাকে।
বাগানের ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার সাহা বলেন, বাগানটি ১৮৩৮ সালে স্থাপিত। ২০১৪ সাল থেকে এটি দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ পরিচালনা করছে। তারা বাগান পরিচালনা শুরুর পর শাপলা ও পাখির আবাসস্থল রক্ষায় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এরপর পাখির সমাগম বাড়তে থাকে। পাখি সেখানে ডিম ফোটায়। বাচ্চা জন্ম দেয়। স্থানটি পাখির অভয়াশ্রম।
হ্রদটি পাহারার জন্য কয়েকজন শ্রমিককে নিয়োজিত করা হয়েছে।
পরিবেশ
নওগাঁয় চালকলের দূষিত পানিতে কৃষকের মাথায় হাত
বছরের পর বছর ধরে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা
নওগাঁ সদর উপজেলায় নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের সাহাপুরে কার্লভার্টের মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চালকল স্থাপন করেছেন বেলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। ওই কল স্থাপনের কারণে কার্লভার্ট দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চালকলের দূষিত পানি সরাসরি ফসলের মাঠে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকবাসীর। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে নওগাঁ-সান্তাহার আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে সাহাপুরে “বেলকন চাউল কল” স্থাপন করা হয়। কিন্তু তার আগেই তৈরি করা হয় কার্লভার্ট। কার্লভার্টের মুখ ঘেঁষে চাউল কল স্থাপন করায় পাশ্ববর্তী ধামকুড়ি, সাহাপুর ও বশিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পানি ওই কার্লভার্ট দিয়ে যেতে পারে না। ফলে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালভার্টটি তাদের কোনো কাজেই আসছে না।
এছাড়া চাউল কল থেকে দূষিত কালো কালভার্টের নালা হয়ে পার্শ্ববর্তী ফসলের ক্ষেতে পড়ছে। এতে করে প্রায় শতাধিক কৃষকের ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঠিকমতো ফসল হয় না এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। চাউলকলের দূষিত পানিতে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমিতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। স্থানীয়রা বিষয়টি চাউল কল মালিককে জানানো পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দোগাছী গ্রামের হান্নান বলেন, চাল কলের লোকেরা আগে গাড়ি দিয়ে দূষিত পানি বাইরে নিয়ে ফেলতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তারা পানি কালভার্টের নালায়ই ফেলছে। কালভার্টের ভেতর দিয়ে নালা হয়ে পানি সরাসরি যাচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। ফলে মাঠেল ফসল পোকা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সাহাপুর গ্রামের মুঞ্জুর রহমান বাবু বলেন, আগে জমিতে যে পরিমাণ ফসল হতো এখন তার অর্ধেকও হয় না।
বেলকন গ্রুপের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, “ক্ষেতে শুধু আমার একাই চাউল কলের পানি যায় না, অন্যান্য চাউল কলের পানিও যায়।”
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, “দূষিত পানি ফসলি জমিতে পড়লে ফসল নষ্ট হবে। যদি ওই চাউল কলের দূষিত পানি ফসলের মাঠে যায় তাহলে ফসল রক্ষার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বীজ পরিচর্যা করবেন কিভাবে: বীজ পরিচর্যার গুরুত্ব ও উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পদ্ধতি – দা এগ্রো নিউজ
মাছ চাষে স্মার্ট প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাংলাদেশি তরুণের – দা এগ্রো নিউজ
স্মার্ট এরিয়েটর এর সাথে অটো ফিডিং সিস্টেম – লাভজনক মাছ চাষ করার প্রযুক্তি – দা এগ্রো নিউজ
ফাতেমা ধান’ চাষে বাম্পার ফলন – দা এগ্রো নিউজ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার – দা এগ্রো নিউজ
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন