ফল
বরগুনায় আমড়ার চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে
লেখক
বাসসআমড়া এদেশের একটি মৌসুমি ফল। সবজি হিসেবেও এটি সমান জনপ্রিয় দেশে। বরগুনা জেলার মাটি ও আবহাওয়া আমড়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বরিশাল অঞ্চলের আমড়ার খ্যাতিও দেশজুড়ে। দেশের আমড়ার চাহিদার ৬০-৭০ ভাগ মেটায় এ অঞ্চলের চাষিরা।
বাণিজ্যিক ভাবে ২০০৫ সালে মূলতঃ এ জেলায় আমড়ার চাষ শুরু হলেও গত কয়েক বছরে বা¤পার ফলনও হয়েছে। সুস্বাদু আর সুখ্যাতির কারণে কৃষকরা ভালো দামও পেয়েছেন। ভালো টাকা আয়ের সুযোগ থাকায় বরগুনার আমড়া চাষির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
লাভজনক এ মৌসুমী ফল আমড়া গাছে রোগ বালাই খুবই কম। আমতলী উপজেলার ঘটখালি গ্রামের মো. আলতাফ হাওলাদার ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২ শ আমড়া চারা লাগিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। প্রথম অবস্থায় তিনি আমড়া বিক্রি করে ৭৫ হাজার টাকা আয় করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর তিনি লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন।
স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, সাধারণত বাড়ির আঙ্গিনায়, সড়কের পাশে আমড়ার চারা রোপণ করেন তারা। ইদানিং শহরাঞ্চলের দালানের ছাদেও অনেকে আমড়া গাছ লাগাচ্ছেন। খুব একটা যতœ করতে হয়না আমড়া গাছের। পরিপক্ক আমড়া গাছ থেকে পেরে ফেলার পর ১০/১২ দিন কোন প্রকার প্রিজারভেটিভ ছাড়াই ভালো থাকে। তাই রপ্তানিতেও আমড়া সুবিধার ফল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানি আমড়া চাষের জন্য বেশ উপযোগী। গাছ বাঁচে ২০ বছর। আমড়া গাছের বয়স একটু বেশি হলে তাতে পোকায় ধরলে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতিকার করা সম্ভব। তাছাড়া কিছু কিছু গাছে বৈশাখের শুরুতে নতুন গজানো পাতায় লেদাপোকা আক্রমণ করে।
এসময় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ছিটালে তা দূর হয়।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক বদরুল হোসেন জানান, বরগুনায় প্রায় ৫ হাজার আমড়া চাষি রয়েছেন। প্রায় ২ হাজার ক্টের জমিতে আমড়ার চাষ হচ্ছে। খরচ খুব কম হওয়াতে এ জেলায় আমড়ার চাষ বাড়ছে। ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার আমড়া পাঠানো হয়। বরিশাল অঞ্চলের আমড়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, মালয়েশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদ
কমলা চাষের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ: স্বাস্থ্যসম্মত এবং লাভজনক ফল উৎপাদনের সহজ উপায়
ছাদে আমের কলমের চারা বাগান
রাঙ্গুনিয়ায় ছাদে সাকিবের বাগানে থোকায় থোকায় পাকা আম
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লাভজনক চায়না তরমুজের চাষ
ফল বাগানে সঠিক স্প্রে যন্ত্রের ব্যবহার
কমলা চাষে পঞ্চগড়ের শেফালির সাফল্য
মাল্টা চাষে সফল হতে চান মোস্তফা
ছাদে সহজে জামরুল চাষের উপায়
যে কারণে রংপুরে বাড়ছে দেশি মাল্টার চাষ
ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি
ফল
কমলা চাষের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ: স্বাস্থ্যসম্মত এবং লাভজনক ফল উৎপাদনের সহজ উপায়
লেখক
তানিয়া চৌধুরীকমলা একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত। এটি কেবল সুস্বাদুই নয়, বরং স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পুষ্টিগুণ, চাহিদা এবং বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য লাভজনক একটি চাষ।
তাই, কমলা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন করলে কমলা চাষ থেকে অধিক ফলন এবং লাভ নিশ্চিত করা যায়।
আজ আমরা জানবো কমলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, ফসল তোলা এবং চাষের মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়।
কমলার পুষ্টিগুণ
কমলা এক ধরনের সাইট্রাস ফল, যা নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ। প্রতিটি কমলায় রয়েছে:
ভিটামিন সি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: দেহের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে।
ফাইবার: হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কম ক্যালোরি: ডায়েটের জন্য উপযুক্ত ফল।
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলায় প্রায়
- ক্যালরি: ৪৭
- কার্বোহাইড্রেট: ১১.৮ গ্রাম
- প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৪ গ্রাম
কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কমলা একটি সুপারফুড হিসেবে কাজ করে এবং এটি নিয়মিত খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কমলায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ঠান্ডা, সর্দি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ত্বক উজ্জ্বল রাখে: কমলায় উপস্থিত ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে।
ওজন কমাতে সহায়ক: কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বাড়ায়: ফাইবার সমৃদ্ধ কমলা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে: কমলায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস দেহে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
কমলা চাষের উপকারিতা
উচ্চ বাজারমূল্য: কমলার চাহিদা সারাবছর থাকায় এটি বিক্রি করে ভালো আয় করা যায়। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে।
সহজ চাষ পদ্ধতি: কমলা চাষে খুব বেশি জটিলতা নেই এবং তুলনামূলক কম শ্রম প্রয়োজন।
দীর্ঘমেয়াদি আয়: একবার গাছ রোপণ করলে দীর্ঘদিন ধরে ফলন পাওয়া যায়।
উচ্চ ফলন: সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এক হেক্টর জমি থেকে প্রচুর পরিমাণ ফলন পাওয়া সম্ভব।
মাটি ও পরিবেশের উপযোগী: বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটি কমলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
অর্থনৈতিক লাভজনকতা: কমলা চাষের খরচ তুলনামূলক কম এবং লাভ বেশি। কৃষকরা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে যেমন- কমলার জুস, জ্যাম, মারমালেড ইত্যাদি বিক্রি করেও বাড়তি আয় করতে পারেন।
সার ব্যবস্থাপনা
কমলার ভালো ফলনের জন্য সঠিক সার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির গুণাগুণ ও গাছের বৃদ্ধির পর্যায় অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
জৈব সার: গাছের গোড়ায় প্রতি বছর গোবর, কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগ করুন। প্রতি গাছের জন্য ১০-১৫ কেজি জৈব সার প্রয়োজন।
রাসায়নিক সার
নাইট্রোজেন (N): গাছের পাতা, ডালপালা বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন সার প্রয়োজন।
ফসফরাস (P): গাছের শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পটাশ (K): ফলের আকার বড় করা ও মিষ্টতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের সময় ও পরিমাণ:
গাছের বয়স | ইউরিয়া (N) | টিএসপি (P) | এমওপি (K) |
১-৩ বছর | ২০০-৩০০ গ্রাম | ১৫০-২০০ গ্রাম | ২০০-২৫০ গ্রাম |
৪-৬ বছর | ৪০০-৫০০ গ্রাম | ৩০০-৩৫০ গ্রাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম |
৭ বছর ও তার বেশি | ৬০০-৭০০ গ্রাম | ৪০০-৫০০ গ্রাম | ৬০০-৭০০ গ্রাম |
সার প্রয়োগের সময়: বর্ষাকালের আগে এবং ফলের মুকুল আসার সময়।
অপপ্রয়োগ এড়িয়ে চলুন: সার বেশি দিলে গাছের ক্ষতি হতে পারে।
সেচ ব্যবস্থাপনা
সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কমলার উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
সেচের সময় ও পরিমাণ: শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে গাছের গোড়ায় বেশি পানি প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সেচ পদ্ধতি: ড্রিপ সেচ পদ্ধতি কমলার চাষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি দেওয়া ভালো। জমিতে পানি জমে থাকা ক্ষতিকর।
পানি সংকটে করণীয়: গাছের গোড়ায় মালচিং করে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখুন।
আগাছা ব্যবস্থাপনা
আগাছা গাছের পুষ্টি ও পানি গ্রহণে বাধা দেয়। ফলে ফলন কমে যায়।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
হাতে তুলে পরিষ্কার: গাছের গোড়া ও চারপাশে আগাছা হাত দিয়ে তুলে ফেলুন।
মালচিং: জৈব মালচ যেমন খড়, পাতা বা কম্পোস্ট দিয়ে গাছের গোড়ায় ঢেকে রাখলে আগাছা কম গজাবে।
যন্ত্রের ব্যবহার: কৃষি যন্ত্র দিয়ে জমি পরিষ্কার করুন।
নির্বাচিত আগাছানাশক ব্যবহার: আগাছা খুব বেশি হলে হালকা মাত্রার আগাছানাশক ব্যবহার করা যায়।
সতর্কতা: আগাছানাশক ব্যবহারের সময় গাছের ক্ষতি যেন না হয় তা নিশ্চিত করুন।
ফসল তোলা
সঠিক সময়ে এবং পদ্ধতিতে কমলা সংগ্রহ করা হলে ফলের মান ভালো থাকে এবং সংরক্ষণে সুবিধা হয়।
ফসল সংগ্রহের সময়: ফুল ফোটার ৭-৮ মাস পর কমলা পরিপক্ক হয়। কমলার রঙ হালকা সবুজ থেকে হলুদ বা কমলা হলে তা সংগ্রহের উপযুক্ত।
ফসল তোলার পদ্ধতি: হাতে অথবা ধারালো কাঁচি দিয়ে কমলা সংগ্রহ করুন। ফলের গায়ে কোনো আঘাত লাগতে দেওয়া যাবে না। ফল সংগ্রহের পর পরিষ্কার করে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুন।
সংরক্ষণ: ফল ভালোভাবে শুকিয়ে ঠাণ্ডা এবং শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করুন। আধুনিক পদ্ধতিতে হিমাগারে কমলা দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায়।
কমলা চাষ একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ, যা সঠিক সার ব্যবস্থাপনা, সেচ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথ ফসল তোলার মাধ্যমে আরও সফল করা সম্ভব। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং রপ্তানির সম্ভাবনার কারণে এটি কৃষকদের জন্য একটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফসল হতে পারে। এখনই পরিকল্পনা করুন, সঠিক পদ্ধতিতে কমলা চাষ শুরু করুন এবং অধিক লাভের দিকে এগিয়ে যান।
আম বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ফলের নাম । আমকে ফলের রাজা বলা হয় । সারা দেশেই এর চাষ হলেও বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হল এই আম । বাংলাদেশে অনেক জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে । তবে এর মধ্যে ভাল জাতের আমের চাষ রাজশাহী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ । শহরের বাসিন্দারা ছাদে দুচারটা আম গাছ লাগিয়ে শখ মিটাতে পারেন ।
ছাদের উপযোগী জাতঃ সব জাতের আমই ছাদে চাষ করা সম্ভব ।
তবে ফলন বেশী হয় ছাদের জন্য এমন কিছু জাত নির্বাচন করা উচিৎ । এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় বারি আম -৩ জাতটি । গাছ ছোট আকৃতি, ফল মাঝারি এবং খেতে বেশ সুস্বাদু । যার আরেক নাম আম্রপালি । মোটামুটি প্রতিবছরই ফল দেয় বিধায় ছাদে লাগানোর ক্ষেত্রে আম্রপালিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ । তাছাড়াও বাউ আম – ১, ২, ৩, ৬, ৭, লতা বোম্বাই ইত্যাদি বামন জাতের আম ছাদের জন্য বেশ উপযোগী । চাষ পদ্ধতিঃ ছাদে আমের কলমের চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে । ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । এবার ২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ৪০-৫০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার, ১ কেজি কাঠের ছাই, ১কেজি হাড়ের গোড়া ও হাফ কেজি সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১৫ দিন ।
অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে । যখন মাটি কিছুটা ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সুস্থ সবল কলমের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । টবের গাছটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে প্রায় সারাদিন রোদ লাগে ।
রাঙ্গুনিয়ায় সাকিবের ছাদে গড়ে তোলা আম বাগানে সুস্বাদু আমের ঘ্রানে চারদিক মৌ মৌ করছে। আম বাগানে উঁকি দিচ্ছে এলাকার লোকজন। পাকা আমে জানান দিচ্ছে মধুমাস সমাগত। উপজেলার রাঙ্গুনিয়া থানার পার্শ¦স্থ সৈয়দ বাড়ী এলাকায় কলেজ পড়–য়া মো. সাকিব ঘরের ছাদে টবে লাগিয়েছে সারি সারি আম গাছ। আমের মুকুল আসার পাশাপাশি কয়েকটি গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে আম। পাকা আমের মৌ মৌ সুঘ্রানে ছুটে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। সবার মাঝে কৌতুহল জাগছে মৌসুম ছাড়া আম গাছে আম ধরার বিষয়টি। সাকিবের আম বাগান দেখে এলাকার অধিকাংশ যুবক ছাদের টবে আম বাগান করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। দীর্ঘদিন আগে থেকে সাকিব আম গাছের পরিচর্যা করে আসছিল। কয়েকটি গাছে আম পাকতেও শুরু করেছে। সে আম গাছের পাশাপাশি লেবু আনারসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা লাগিয়েছে ফলও ধরেছে আশানরুপ।
অপরদিকে মৌসুম বিহীন আম বাগানে আম আসার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, নির্ধারিত সময়ের আগে উন্নত মানের চারা ও সঠিক পরিচর্যা হওয়ায় ছাদে আম ধরার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু না। ছাদে কেউ বানিজ্যিকভাবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিলে সাকিবের মতো আম বাগান করে সফলতা আসবে।
বিশেষ করে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বেশি। সেই সঙ্গে গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
ছাদে আম বাগান করার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ ছাত্র সাকিব জানায়, ঘরের ছাদে অল্প জায়গায় উন্নত মানের আমের চারা লাগানো হয়। কৃষি কর্মকর্র্তার পরামর্শে আম বাগানের পরিচর্যা করি। আমের ফলনও ভাল হয়েছে। দুয়েকটি গাছে আম পাকতে শুরু করেছে। ঘরের ছাদে অল্প পরিসরে টবে আম বাগান করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করা যাবে ও পরিবারের পুষ্টির যোগান দেওয়া যাবে। আগামী বছরে ব্যাপক ভাবে আম বাগান করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। আমার দেখাদেখিতে অনেকেই ছাদের টবে আম বাগান করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফরমালিনমুক্ত আম খাওয়ার জন্য ও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ঘরের ছাদে যে কেউ আম বাগান অনায়সে করতে পারে।
জয়পুরহাটে পাঁচবিবি উপজেলার বিনধারার গ্রামে এবার হচ্ছে মাঠজুড়ে চায়না জাতের তরমুজের চাষ। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম শাহিন এবং কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক বিনধারা মাঠে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের ব্লাকবেবী তরমুজের চাষ করছেন।
আকারে ছোট খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ”ব্লাকবেবী” হিসাবেই পরিচিত। ব্লাকবেবী চাষ অন্য ফসলের তুলনায় বহুগুনে লাভজনক।
মাচা পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ বিবেচিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি কৃষি পণ্য হিসাবে। এই তরমুজের জীবনকাল মাত্র ৬০ দিনের। ১ বিঘা জমির জন্য প্রয়োজন ৫০ গ্রাম বীজ। যার দাম ৩ হাজার ৮’শ টাকা। বিঘাপ্রতি সেড তৈরীর মালসিং পেপার ৭ হাজার ৫’শ, মাচা পদ্ধতিতে শেড তৈরীর বাঁশ আর মজুরী খরচ ১০ হাজার, সার মাটি আর বালাই নাশক স্প্রে বাবদ ৭ হাজার ৫’শ, পরিচর্য্যা মজুরী ৬ হাজার, পরিবহন খরচ ২ হাজার সর্বমোট বিঘা প্রতি তরমুজ চাষে খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
এক বিঘা জমিতে ৬০ দিনে তরমুজ উৎপাদন হয় প্রায় ১২ ’শ থেকে ১৫’শ পিস তরমুজ যার ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ মেট্রিক টন। প্রতিটি তরমুজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে যার বিক্রি মূল্য হয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় নীট লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যা তুলনামূলক অন্যান্য ফসলের চাইতে অনেক লাভজনক। একটি সেড তৈরী হলে সেই শেডে নুন্যতম তিনটি তরমুজের আবাদ করা যায়। ফলে স্থায়ী এই খরচটি পরের দু’বার হয় না। ফলে পরের দু’বারে উৎপাদন খরচ কমে গিয়ে লাভের ভাগ আরো বেশী হয়।আবার বারোমাসই এই তরমুজ পাওয়া যায় বলে এর চাহিদা বেশী। তাইওয়ানের জেসমিন-১, জেসমিন-২ ও ব্লাক প্রিন্স জাতের তরমুজে পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনা মূলক বলে ফসলে মার খাওয়ার ঝুঁকিও কম। গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা ছাড়া এই জাতের উৎপাদন ব্যাহত হবার আর কোন কারন নেই। এই তরমুজ অনেক সুস্বাদু, পুষ্টিকর। সবচেয়ে বড় আশা জাগানিয়া কথা হচ্ছে বোরো ধান কাটার পর প্রায় দু’ আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। দু’টি ধান চাষের মাঝে অনায়াসে একার তরমুজের ফলন সম্ভব। ফলে জমির সঠিক ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হচ্ছে তেমনি বাড়ছে আয়। এ সব কারনে তরমুজ চাষে বাড়ছে কৃষকের সংখ্যা।
সরেজমিনে দেখাযায়, পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বোপনের জন্য বরাবর বেড তৈরী করা হয়েছে। বাশ ও জিআই তারে তৈরী ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিচিত এক বন্ধুর এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে এবং তার কথা শুনেই তিনিও শুরু করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হবে এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি। চায়না তরমুজ ছাড়াও তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজিও চাষ করেছেন।
গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে গেলে চেষ্টা করি শেফালি বেগমের কমলা বাগান ঘুরে আসার। কৃষিক্ষেত্রে হাড়িভাসা ইউনিয়নের শেফালি বেগমের সফলতার কথা কম বেশি অনেকেই জানেন। এমন প্রত্যন্ত গ্রামের এক শিক্ষিত নারী কৃষি কাজকে বেছে নিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন দেখে সত্যিই অবাক লাগে।
গত দশ বছরে শেফালি গড়ে তুলেছেন বিশাল এক কমলার বাগান। আগেও তার সফলতার বিষয়ে লিখেছিলাম। এবারও তিনি নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম শিক্ষিত হয়েও আপনি কৃষি কাজকে বেছে নিলেন এই বিষয়ে কিছু বলুন। তিনি বলেন, আমি যখন দেখলাম গ্রামের মহিলারা বিনা কারণে সময় নষ্ট করছে, এভাবে সময় নষ্ট করাটা আমার মোটেও পছন্দ ছিল না।
তাই আমি ভাবলাম অযথা সময় নষ্ট না করে কিছু একটা শুরু করি। অনেক ভেবে ঠিক করলাম কমলা চাষ করবো, যেহেতু আমার পুরোনো একটি কমলা গাছে বেশ ভালো কমলা ধরছে এবং খেতেও মিষ্টি সুস্বাদু। তাহলে বাগান আকারে করলে মনে হয় সফলতা আসবে। এই ভেবে পঞ্চগড় জেলার কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে কমলা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেয়। অন্যদিকে চারা ও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে এবং উৎসাহ দেয়।
এখন আমার খুবই ভালো লাগে কমলা গাছের যত্ন করতে। আমি সংসারের কাজ-কর্ম এবং সন্তানদের পড়া-লেখা দেখিয়ে বাকি সময়টা কমলা বাগানে কাজ করি। এতে আমার সময়ও ভালো কাটছে আর মনটাও প্রফুল্ল থাকছে। আমার দেখা-দেখি এখন অনেক মহিলারাই অযথা সময় নষ্ট না করে বাড়ির আঙ্গিনাতেই কিছু না কিছু একটা করছে। গত বছর মহামারি করোনার কারণে যেহেতু স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল তাই আমার দুই ছেলে এই দিনগুলোতে অনেক সাহায্য করেছে।
আজ থেকে ১১ বছর পূর্বে আমরা প্রথমে ০.২৫ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ শুরু করি। বর্তমান জমির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করেছি। চারা রোপণের মাত্র এক বছরের মাথায় কমলা চারাগুলো অনেক বৃদ্ধি পায় এবং দ্বিতীয় বছর থেকেই বেশ কয়েকটি গাছে বড় বড় কমলা ধরতে শুরু করে। আর এখন তো বাগানের অধিকাংশ গাছেই ফল ধরছে।
গত বছর যে টাকা আয় করেছিলাম এবছর এর দ্বিগুণ আয় হবে বলে আমরা আশা করছি। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে অনেক ফল ঝরে যাচ্ছে তারপরও আমরা আশা করছি এবছর প্রকৃতিক কোন সমস্যা না হলে অনেক ভালো আয় করতে পারব। বর্তমানে এই কমলা বাগানের আয় থেকে আমাদের সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে।
তিনি বলেন, নভেম্বর মাস থেকে কমলা পাকতে শুরু করবে। আমাদের কমলা বাজারে নিতে হয় না, বাগান থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি হয়ে যায়। এ বছর আমরা কয়েক হাজার কমলার চারা তৈরি করেছি। কেউ কমলার বাগান করতে চাইলে আমাদের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারেন।
শেফালি বেগমের একটি দুঃখ আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, নারী দিবসে নারীদের নিয়ে অনেক আলোচনা হয় ঠিকই কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের অপরিসীম অবদান থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে আমরা অবহেলিত। কৃষাণি হিসেবে এখনো তেমনভাবে আমাদের স্বীকৃতি মেলেনি। অথচ কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের ফলে একদিকে যেমন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ছে অন্যদিকে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদেরকে যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলেই কেবল সামনের দিনে নারীরা কৃষিতে নতুন সবুজ বিপ্লব ঘটাতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
এছাড়া তিনি অনেক আন্তরিক এবং আপ্যায়নপ্রিয়। এখনও যেহেতু কমলা পাকা শুরু হয়নি তাই কাঁচা কমলা দিয়েই শরবত বানিয়ে খাইয়েছেন।
এ অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটি কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় কমলা চাষকে বাস্ততায় রূপ দিয়েছে এ জেলার মানুষ। বর্তমানে পঞ্চগড়ে কমলা এবং মাল্টা চাষের ফলে পাল্টে যাচ্ছে এ জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ধারা। পঞ্চগড়ের চা চাষের সমৃদ্ধি যেমন আমাদের অর্থনীতিতে অনূকুল প্রভাব ফেলেছে তেমনি এই প্রভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি মাত্রা তা হলো রসালো ফল কমলা চাষ।
পঞ্চগড় জেলায় কমলা চাষের বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে কমলা আমদানি হ্রাস ও এর আমদানি বৃদ্ধি, পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কমলা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়।
এ প্রকল্পের অধীনে জেলার চারটি উপজেলায় গ্রামভিত্তিক কমলা গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ও এর আশ পাশে ব্যক্তি পর্যায়ে কমলা চাষের জন্য প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ৮৮ হাজার কমলা চারা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ১৯৫টি দুই বিঘা বাগান গড়ে তোলা হয়, প্রতিটি বাগানে ১৫৬টি করে চারা রোপণ করা হয়।
কমলা গাছ পাঁচ বছরেই ফল ধারণ করে। আট বছর বয়সী একটি কমলা গাছে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০০টি কমলা ধারণ করে। এ পর্যন্ত এ জেলায় ১৪১ হেক্টর জমিতে বাগান আকারে কমলা চাষ করা হয়েছে যা আগামি দুই বছরে পূর্ণ উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আশা করা যায় আগামি ১০ বছরের ভেতরে পঞ্চগড় জেলা কমলা উৎপাদনে দেশের শীর্ষ স্থান দখল করবে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে পঞ্চগড়ের কমলার চাষ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং দেশের কমলার চাহিদা পূরণেও অনেক অবদান রাখবে।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন