আবহে আমরা অনেক কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে শিখেছি। রেস্তরাঁর খাবারের বদলে বাড়িতে রান্না পুষ্টিকর খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে একথাও ঠিক। শাক-সব্জিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে সাহায্য করে। পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ক্যাপসিকাম, কাঁচালঙ্কা ও সামান্য পার্সলে দিয়ে মেক্সিকান স্টাইলে রান্না করা গ্রিন রাইস বা সবুজ ভাত একদিকে দারুণ মুখরোচক, অন্যদিকে পুষ্টিতে ভরপুর। সবুজ ভাতের সঙ্গত টকটকে লাল রঙের টোম্যাটো সালসা। ঝটপাট রান্না হবে সেটিও। আসলে মেক্সিকোর অধিবাসীরা যে ভাত খান, তা কিন্তু আমাদের মত সাদা ভাত নয়। নানা সবজি, মশলা, চিকেন বা ডিম দিয়ে বানানো মেক্সিকান রাইস নিজেই এক সম্পূর্ণ খাবার। ডাল, ঝোল বা তরকারি ছাড়াই জমিয়ে খাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ভাতটি নিরামিষ। এক নজরে রইল রেসিপি।
মেক্সিকান গ্রিন রাইস
উপকরণ –
কামিনী আতপ বা গোবিন্দভোগ চাল – ২০০ গ্রাম,
পালং শাক কুঁচি – ১ কাপ,
ধনে পাতা, পার্সলে, কাঁচা লঙ্কা (৪/৬টা) কুঁচি – ১ কাপ,
রসুন – ৮/১০ কোয়া
পেঁয়াজ কুঁচি – বড় কাপের এক কাপ,
অলিভ অয়েল বা সাদা তেল – ৩/৪ চামচ,
চিকেন স্টক বা ভেজিটেবল স্টক – ১ কাপ,
নুন – স্বাদ অনুযায়ী,
চিনি – সামান্য
সাজানোর জন্যে
পাতিলেবুর স্লাইস, পেঁয়াজের রিং, কাঁচা লঙ্কা ও অল্প পার্সলে
প্রণালী -প্যানে সামান্য অলিভ অয়েল গরম করে সামান্য রসুন ও কাঁচালঙ্কা কুঁচি ফোড়ন দিয়ে চাল ভাল করে নেড়ে ভেজে রাখুন। পালং শাক গরম প্যানে নেড়ে সবুজ থাকতে থাকতে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবারে চিকেন স্টক বা ভেজিটেবল স্টক দিয়ে সব শাক একসঙ্গে ব্লেন্ড করে রাখুন। আর একটি প্যানে তেল দিয়ে রসুন ও পিঁয়াজ লালচে করে ভেজে নিন। আগে থেকে ভেজে রাখা চাল দিয়ে আবারও নেড়ে চেড়ে ব্লেন্ড করা শাক ও অল্প জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হয়ে এলে বাকি শাক দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিয়ে নামিয়ে নিন। গ্রিন রাইস রেডি, লেবু, লঙ্কা ও পেঁয়াজের রিং সাজিয়ে সালসা দিয়ে পরিবেশন করুন।
টোম্যাটো সালসা স্বাদে লা জবাব
টোম্যাটো সালসা –
৩/৪ টি লাল টোম্যাটো গোটা অবস্থায় তেলে নেড়ে নিন। ঠান্ডা হলে টুকরো করে কেটে নিয়ে এই ইঞ্চি আদা, ৫/৬ কোয়া রসুন, লাল লঙ্কা, গোলমরিচ, নুন ও চিনি দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। তৈরি টক-ঝাল-মিস্টি টোম্যাটো সালসা। মেক্সিকান রাইস ছাড়াও যে কোনও খাবারের সঙ্গে দারুণ জমে যাবে।
টোম্যাটোতে থাকা লাইকোপেন এবং পালং, ধনেপাতা, পার্সলে, কাঁচালঙ্কা ও রসুনেও আছে অজস্র অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং নানা মিনারেলস। পার্সলে আবার পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এতে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া টোম্যাটো ও শাকে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার। এই সবই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে সাহায্যে করে। আর এই গ্রিন রাইস খেতেও অত্যন্ত স্বাদু। ইচ্ছে হলে গ্রিন রাইসের ওপর ডিমের পোচ সাজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিরামিষ রাখায় ব্যবহার হয়নি ডিম।
শীতকাল এলেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার চল বেড়ে যায়। অনেকে গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকে এই রস চুলায় ফুটিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর বানিয়ে খান। এছাড়া রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরণের পিঠার বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক
খেজুর আরব দেশের প্রচলিত ফল হলেও ওইসব দেশে খেজুর, মূলত ফল উৎপাদননির্ভর, যেখানে কিনা বাংলাদেশের খেজুর গাছ রস উৎপাদননির্ভর।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে।
মূলত খেজুর গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে, ডগার দিকের কাণ্ড চেঁছে তাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি চোঙ বসিয়ে দেয়া হয়। চোঙের শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি মাটির হাড়ি বা কলসি।
সেই চোঙ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রস এসে জমা হতে থাকে মাটির হাড়ি বা কলসিতে। এভাবে একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লিটার রস সংগ্রহ করা যায় বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ্ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
উপকরণ: বাঁধাকপির কুচি ৪ কাপ, কই মাছের টুকরো ৬টি, তেজপাতা ১টি, শুকনো মরিচ ২টি, মেথি অল্প পরিমাণ, মরিচবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো স্বল্প পরিমাণে, হলুদ পরিমাণমতো ও সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: তেলে শুকনো মরিচ ও মেথি ফোড়ন দিতে হবে। ফোড়ন হয়ে এলে হালকা করে ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। ওই তেলেই বাঁধাকপির কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে। তারপর লবণ, মরিচ ও হলুদবাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ বসাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভাজা মাছগুলো দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে এবং মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ নারকেল কোরানো দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: বড় শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, টমেটো টুকরো আধা কাপ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, টমেটোবাটা আধা কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেপাতা আধা কাপ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ অনুসারে ও কাঁচা মরিচ ৭-৮টি (চেরা)।
প্রণালি: শোল মাছ লবণ, হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে ভেজে তুলে রাখতে হবে। আর ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে রসুন, আদা, মরিচের গুঁড়া, হলুদ ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। টমেটোবাটা দিতে হবে, কিছুক্ষণ কষানোর পর প্রয়োজনমতো গরম পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছগুলো দিতে হবে। ঝোল মাখা-মাখা হলে টমেটোর টুকরো আর ধনেপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিতে হবে।
উপকরণ: ছোট টুকরো করে কাটা টাকি মাছ ২ কাপ, ডুমো ডুমো করে কাটা লাউ ৪ কাপ, হলুদ সিকি চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, পেঁয়াজ ১ কাপ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমতো, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, আদাবাটা আধা চা-চামচ ও রাঁধুনি বাটা সিকি চা-চামচ।
প্রণালি: তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর একে একে রসুনবাটা, আদাবাটা ও রাধুনি (গুঁড়া সজ) বাটা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষানো হলে লাউ দিতে হবে। লাউ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে আগে থেকে হালকা করে ভেজে রাখা টাকি মাছ দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে কাঁচা মরিচের ফালি ও সবশেষে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
উপকরণ: চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল পরিমাণমতো, বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ, ক্যাপসিকাম কুচি ১ কাপ, টমেটো কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজপাতা কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচবাটা ১ চা-চামচ, ধনেপাতাবাটা ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো, চিলি সস ২ চা-চামচ, টমেটো সস ২ চা-চামচ, বাঁধাকপির ভেতরের পাতা ৪টি, ভিনেগার ২ চা-চামচ, রসুন ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপির শক্ত অংশ ফেলে দিন। পাতার ভেতরের অংশ একটু ভাপিয়ে রাখুন। মাছ ধুয়ে ভিনেগার মাখিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম হলে তাতে রসুন কুচি দিয়ে মাছগুলো দিন। একে একে কোঁচানো বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও পেঁয়াজপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। এরপর কাঁচা মরিচবাটা, ধনেপাতাবাটা, চিলি সস ও টমেটো সস দিয়ে নেড়ে নিন। পানি শুকিয়ে এলে নামিয়ে বাঁধাকপির পাতায় অল্প করে চিংড়ি মাছ সুতা দিয়ে বেঁধে স্টিমারে ভাপিয়ে নিন। সুতো কেটে পাতা খুলে পরিবেশন করুন।
অনুগ্রহ করে মন্তব্য করতে লগ ইন করুন লগ ইন